Ad-1

Monday, June 22, 2020

সপ্তম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ০১


(১) বৃক্ষ রোপণ

কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন এক-চতুর্থাংশ বনভূমি। কিন্তু বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ।দেশের ভৌগোলিক আয়তনের তুলনায় এ বনভূমির পরিমাণ নিতান্তই অপ্রতুল। এ ছাড়া বংলাদেশের বনগুলো দ্রুত উজাড় হচ্ছে।ফলে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে, দেখা দিয়েছে অনাবৃষ্টি। গোটা দেশ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রমের মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ সর্বনাশ থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হলে দ্রুত বনায়ন কর্মসূচি বা বৃক্ষরোপণ শুরু করতে হবে। কারণ, দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বৃক্ষের প্রয়োজন।সবুজ গাছ-গাছালি বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং আবহাওয়াকে শীতল রাখে। এর ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।বৃক্ষ জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি, অধিক উত্পাদনে সহায়তা, ভূমির ক্ষয় রোধ, নদীর ভাঙন ও জলস্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে মাটির স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।সর্বোপরি আমাদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রাণিকুলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে বৃক্ষ প্রাণিজগেক জোগায় খাদ্য।বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু।এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মানুষ আপ্লুত হয়। জীবন রক্ষাকারী বৃক্ষের এই প্রয়োজনীয়তার কথা ভুলে গিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বনভূমিকে উজাড় করে দেশকে যে মরুকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তা কঠোরভাবে দমন করে সবুজে সবুজে দেশকে ছেয়ে দিতে হবে।এ কাজে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। গাছ লাগানোর জন্য জনমনে সচেতনতার সঞ্চার করতে হবে।বাংলাদেশের বন বিভাগের গুরুদায়িত্ব হবে বৃক্ষের চারা উত্পাদন করে তা বিনা মূল্যে জনগণের মধ্যে সরবরাহ করা।এ অভিযান যদি সার্থক হয়, তাহলে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে বিপন্নতার হাত থেকে।

(২)বিজয় দিবস

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় লাভ আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্বর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে এ দিনটিতে আমরা বিজয় অর্জন করি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ হয়েছিল হানাদার মুক্ত। আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ। একটি নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ঠিকানা। এ বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন। কিন্তু এ বিজয় সহজে আসেনি। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে এ বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করে। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে। বীর বাঙালিও পাকিস্তানিদের এ বর্বর আক্রমণ রুখে দেয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তাই এ দিনটিকে বিজয় দিবস বলা হয়। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটি পালন করা হয়। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। তাই বিজয় দিবসের চেতনাকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বিজয় দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হব। বিজয় দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একযোগে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।

(৩) বইমেলা

বই  মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। বই মানুষকে পূর্ণতা দেয়; জীবনকে করে সমৃদ্ধ। বইমেলা প্রতিটি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। মানুষের মধ্যে বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি, বই পাঠের ব্যাপক প্রসার এবং মননশীলতা বৃদ্ধিতে বইমেলা অর্থবহ ভূমিকা পালন করে থাকে।বিশ্ব ইতিহাসে ১৮০২ সলে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে।

১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ জন প্রকাশক মিলে নিউ ইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার। ওই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বই। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।বর্তমানে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ১৯৭২ সালে মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা নিজের উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলার নাম দেওয়া হয় 'একুশে বইমেলা'। এই মেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। লেখক, প্রকাশক ও লাখ লাখ পাঠক সমাজ এ মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। প্রতিবছর ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই বইমেলা।বইমেলা নিছক একটি আনন্দ মেলা নয়। এ মেলা লেখক-লেখিকা ও প্রকাশক-বিক্রেতার মধ্যে অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন ঘটায়। কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক ইত্যাকার মননশীল মানুষ তৈরিতেও বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ মেলায়ই মিলন ঘটে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের। বইমেলার উৎসবে যোগ দিয়ে পাঠক পরিচিত হন নিত্যনতুন বইয়ের সঙ্গে। বিচিত্র লেখকের, বিচিত্র বর্ণের, বিচিত্র বিষয়ের উন্নতমানের বই মন কেড়ে নেয় পাঠকদের। বইয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়ে; তৈরি হয় বই কেনার মানসিকতা। সর্বসাধারণকে পাঠমুখী করা এবং মননশীল জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।

(৪) পরিবেশ দূষণ

আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ । এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে । যেমন বায়ু দূষিত হচ্ছে কার্বন-ডাই অক্সাইড, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানি পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে। এ দুষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হতে হচ্ছে ।জল দূষিত হচ্ছে কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত জল নদীর জলে মিশে। ফলে  জলবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।মাটি দূষিত হচ্ছে জমিতে নানা প্রকারের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে।এর ফরে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে ।পরিবেশ দূষণের মতো এই বিরাট সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে । সব রকম দূষণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র উদ্ভিদ । সবুজ উদ্ভিদ বা গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয় । যে অক্সিজেন প্রাণীজগতের বাঁচার জন্য অপরিহার্য্য । তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে । শব্দদূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে ।এই গভীর সংকটের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে এবং নজর দিতে হবে যাতে পরিবেশের দুষণের মাত্রা না বাড়ে ।

(৫) অতিথি পাখি

হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর শীতকালে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথি পাখি এদেশে আসে আশ্রয়ের সন্ধানে।এসব পাখি একদিকে যেমন আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে বর্ধিত করে, অন্যদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যেমন অতিথিদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করি, তেমনি এ পাখিগুলো আমাদের অতিথি বলে এদের সাথেও আমাদের সোহার্দ্য পূর্ণ আচরণ করা উচিত। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু পক্ষীমাংস লোভী লোক এবং ব্যবসায়ী নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য এইসব অতিথি পাখি শিকার করে খায় এবং বিক্রি করে। ভাবতে অবাক লাগে যে, হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে যে পাখিরা আসে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, তারাই তাদের অস্তিত্বকে বিসর্জন দেয় হৃদয়হীন লোকদের খাবার টেবিলে। অথচ মানুষের কর্তব্য অতিথি পাখিদের অভ্যর্থনা জানানো। তাদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা। তাদের আশ্রয় কালীন সময়টুকুকে নিরাপদ ও আনন্দময় করে তোলা। এজন্য মানুষকে তার লোভ এবং রচনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিচিত্র ধরনের এসব পাখি যেন কারো লালসার শিকার হতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য মানুষের প্রয়োজন আরো সজাগ এবং সচেতন হওয়া। পাখিরা পাখনায় ভর করে যে সুদূরের গন্ধ নিয়ে আসে তাতে স্তব্ধ করার অধিকার কোন সভ্য মানুষের নেই। তাই শীতের অতিথি পাখিদের সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। একই সাথে শিকারীদের দমন করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 


No comments:

Post a Comment

Recent Post

সুভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর   জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...

Most Popular Post