অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ
অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে যা দ্বারা সজ্জিত বা ভূষিত করা হয় তা'ই অলঙ্কার।
কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যার দ্বারা কাব্যভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয় তাকে অলঙ্কার বলে। এক কথায় কাব্যদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অলঙ্কার বলে।
সংস্কৃততে আছে,
'বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম'- অর্থাৎ রসাত্মক বাক্যই কাব্য।
ভারতচন্দ্রের ভাষায়ঃ
'যে হৌক সে হৌক ভাষা কাব্য রস লয়ে'- এই কাব্য বা কবিতার শরীর নির্মিত হয় বহু বাক্য নিয়ে।
অলংকার কাব্য শ্রুতি শিল্প বিশেষ।দুইভাবে আমরা কাব্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি, শুনে এবং বুঝে। কাব্যশুনে আমরা তার ধ্বনিরূপ উপলব্ধি করি,আর তার অর্থবুঝে আত্মারুপ অনুধাবন করি।ইংরেজিতে একটি হলো Sound অন্যটি হলো Sence। যার বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে ধ্বনিরূপ এবং অর্থরুপ।ধ্বনিরুপ হয় কর্ণগোচর আর অর্থ রূপ হয় মনোগোচর।
"কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিল মোর প্রাণ"- যেন এই দুইয়ের ওই মিলিত বাণীরুপ। সুন্দর সুমধুর সুসামঞ্জস্যময় ধ্বনিবিন্যাস যেমন আমাদের কানকে মুগ্ধ করে; কাব্যের অর্থের ব্যঞ্জনাও তেমনি আমাকে আমাদের মনকে আকুল করে।এই দুই মিলেই নির্মিত হয় সার্থক কাব্যাত্মা। কাব্যের অলংকার তাই একাধারে শব্দ ও অর্থ মিলিয়ে সামগ্রিক অলঙ্করণ। তাই যে সকল বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ ভূষণ আভরণ কাব্যের তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য সম্পাদন ও বৃদ্ধি এবং রসের উৎকর্ষ সাধন করে থাকে তাকে অলঙ্কার বলা হয়।
কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যার দ্বারা কাব্যভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয় তাকে অলঙ্কার বলে। এক কথায় কাব্যদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অলঙ্কার বলে।
সংস্কৃততে আছে,
'বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম'- অর্থাৎ রসাত্মক বাক্যই কাব্য।
ভারতচন্দ্রের ভাষায়ঃ
'যে হৌক সে হৌক ভাষা কাব্য রস লয়ে'- এই কাব্য বা কবিতার শরীর নির্মিত হয় বহু বাক্য নিয়ে।
অলংকার কাব্য শ্রুতি শিল্প বিশেষ।দুইভাবে আমরা কাব্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি, শুনে এবং বুঝে। কাব্যশুনে আমরা তার ধ্বনিরূপ উপলব্ধি করি,আর তার অর্থবুঝে আত্মারুপ অনুধাবন করি।ইংরেজিতে একটি হলো Sound অন্যটি হলো Sence। যার বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে ধ্বনিরূপ এবং অর্থরুপ।ধ্বনিরুপ হয় কর্ণগোচর আর অর্থ রূপ হয় মনোগোচর।
"কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিল মোর প্রাণ"- যেন এই দুইয়ের ওই মিলিত বাণীরুপ। সুন্দর সুমধুর সুসামঞ্জস্যময় ধ্বনিবিন্যাস যেমন আমাদের কানকে মুগ্ধ করে; কাব্যের অর্থের ব্যঞ্জনাও তেমনি আমাকে আমাদের মনকে আকুল করে।এই দুই মিলেই নির্মিত হয় সার্থক কাব্যাত্মা। কাব্যের অলংকার তাই একাধারে শব্দ ও অর্থ মিলিয়ে সামগ্রিক অলঙ্করণ। তাই যে সকল বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ ভূষণ আভরণ কাব্যের তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য সম্পাদন ও বৃদ্ধি এবং রসের উৎকর্ষ সাধন করে থাকে তাকে অলঙ্কার বলা হয়।
<html><script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-6143649439455000"
crossorigin="anonymous"></script>
<ins class="adsbygoogle"
style="display:block; text-align:center;"
data-ad-layout="in-article"
data-ad-format="fluid"
data-ad-client="ca-pub-6143649439455000"
data-ad-slot="1324595818"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script></html>
বাংলা অলঙ্কার প্রধানত দুই প্রকার।
১.শব্দালঙ্কার
২.অর্থালঙ্কার।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান অলঙ্কার রয়েছে যেমন: বিরোধমূলক অলঙ্কার, শৃঙ্খলামূলক অলঙ্কার,
ন্যায়মূলক অলঙ্কার, গূঢ়ার্থমূলক অলঙ্কার ইত্যাদি।
শব্দালঙ্কার:
শব্দের ধ্বনিরূপকে আশ্রয় করে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় শব্দালঙ্কার। অর্থাৎ শব্দকে ঘিরে এ
অলঙ্কারের সৃষ্টি। এর মূল সৌন্দর্য টুকু ফুটে উঠে শব্দের ধ্বনিরূপে। মনে রাখতে হবে শব্দালঙ্কারের অলঙ্কার
নির্ভর করে শব্দের ওপর। তাই ইচ্ছে মতো তাকে বদলে দেয়া যায় না।
প্রধান কয়েকটি শব্দালঙ্কার:
শব্দালঙ্কারের সংখ্যা কম নয়, তবে বাংলায় ব্যবহার উপযোগিতার দিক দিয়ে প্রধান হচ্ছে চারটি।
১.অনুপ্রাস(ধ্বনি বা বর্ণের বারবার আসা)
২.যমক(একই শব্দের বারবার উল্লেখ,ভিন্নার্থে ব্যাবহার)
৩.শ্লেষ(একই শব্দের একবার উল্লেখ,দুইটি অর্থে ব্যাবহার)
৪.বক্রোক্তি(বক্তা এক বলবে শ্রোতা অন্যটা বুঝবে)
১.অনুপ্রাস:
অনু শব্দের অর্থ পরে বা পিছনে আর প্রাস শব্দের অর্থ বিন্যাস, প্রয়োগ বা নিক্ষেপ। একই ধ্বনি বা ধ্বনি
গুচ্ছের একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে সুন্দর ধ্বনিসাম্যের সৃষ্টি হয় তার নাম অনুপ্রাস।
এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
★এতে একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ একাধিক বার ব্যবহৃত হবে।
★একাধিক বার ব্যবহৃত ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ যুক্ত শব্দগুলো যথাসম্ভব পরপর বা কাছাকাছি বসবে।
★এর ফলে সৃষ্টি হবে একটি সুন্দর ধ্বনি সৌন্দর্যের।
অনুপ্রাস প্রধানত তিন প্রকার।
অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্ত্যনুপ্রাস এবং ছেকানুপ্রাস।
অন্ত্যানুপ্রাস:
কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তারই পুনরাবৃ্ত্তিতে যে অনুপ্রাস অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম অন্ত্যানুপ্রাস। অর্থাৎ কবিতার দু’টি চরণের শেষে যে শব্দধ্বনির মিল থাকে তাকেই
অন্ত্যানুপ্রাস বলে। একে অন্ত্যমিলও বলা হয়ে থাকে।
যেমন: কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
দাড়ি মুখে সারি গান লা-শরীক আল্লাহ।
বৃত্তানুপ্রাস:
একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে যে
অনুপ্রাসের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস।
যেমন: কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ।
ছেকানুপ্রাস:
দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে একইক্রমে মাত্র দু’বার ধ্বনিত হলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়
তার নাম ছেকানুপ্রাস। একে শ্রুত্যনুপ্রাস, লাটানুপ্রাস, মালানুপ্রাস, গুচ্ছানুপ্রাস, আদ্যানুপ্রাস বা সর্বানুপ্রাস
হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মনে রাখা দরকার যে একক ব্যঞ্জনে কোন ক্রমেই ছেকানুপ্রাস হয় না।
উল্লেখ্য যে, এ ধরণের অনুপ্রাসের বাস্তব ব্যবহার বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না।
যেমন:
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (সুধীনদত্ত)
২.যমক:
একই শব্দ একই স্বরধ্বনিসমেত একই ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম যমক। যমক শব্দের অর্থ হল যুগ্ম বা দুই। লক্ষনীয় যে, একই শব্দ দুই বা ততোধিক বার
ব্যবহৃত হওয়া এবং ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা এর বৈশিষ্ট্য।
যমক তিন প্রকার। যথা:
১.আদ্যযমক: চরণের শুরুতে যমক থাকলে তা আদ্য যমক।যেমন:
ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে।(ভারতচন্দ্র)
২.মধ্যযমক: মাঝে থাকলে তা মধ্য যমক।যেমন: তোসার এ বিধি,বিধি, কে পারে বুঝিতে।(মধুসূ)
৩.অন্তযমক: শেষে থাকলে তা অন্ত্য যমক হয়। যেমন:
কবির রমণী বাঁধি কেশপাশ
বসি একাকিনী বাতায়ন পাশ।(রবি)
৩.শ্লেষ:
একটি শব্দ একাধিক অর্থে একবার মাত্র ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম শ্লেষ। শ্লেষ শব্দের অর্থ শ্লিষ্ট-মিলিত বা আলিঙ্গিত। এতে একবার মাত্রই শব্দটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু তাতে ভিন্ন অর্থের ব্যঞ্জনা থাকে। এই শ্লেষ শব্দকেন্দ্রিক বলে কেউ কেউ একে শব্দ-শ্লেষ বলেন।যেমন:
শ্লেষকে কেউ কেউ দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা
১.অভঙ্গ শ্লেষ: শব্দকে না ভেঙ্গে অখণ্ড অবস্থায় রেখেই যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তা-ই অভঙ্গ শ্লেষ।যেমন:
মাথার উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে (নজরুল)
এখানে কবি ‘রবি' বলতে সূর্য ও রবীন্দ্রনাথকে বুঝিয়েছেন।
২.সভঙ্গ শ্লেষ: অখণ্ড অবস্থায় শব্দের শ্লেষ প্রকাশ না পেয়ে শব্দকে ভাঙ্গলে যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তার নাম
সভঙ্গ শ্লেষ। যেমন:
শ্রীচরণেষু
‘শ্রীচরণেষু’ একটা জুতোর দোকানের নাম। ক্রেতার ‘শ্রীচরণ ভরসা করে জুতোর দোকানদারকে জীবনযাত্রা
নির্বাহ করতে হয়, তাই শ্রীচরণ শব্দের শেষে সপ্তমীর বহুচবন যুক্ত করে ‘শ্রীচরণেষু’ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু
শব্দটা ভাঙলে আরো গভীর তাৎপর্য উদ্ঘাটিত হয়- অর্থাৎ ‘শ্রীচরণে ‘ষু’(shoe বা জুতো পরার আহ্ববান), যা
শব্দ ভাঙায় পাওয়া গেল।
৪.বক্রোক্তি:
বক্রোক্তি এর অর্থ – বাঁকা কথা।বক্তা বা প্রশ্নকারী যদি কোনো কথাকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেন --- অথচ
শ্রোতা বা উত্তরদাতা সে অর্থ গ্রহণ না করে কথাটিকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন কিংবা সে অনুসারে উত্তর দেন,
তবে সেখানে বক্রোক্তি অলংকার হয়।যেমন:
বক্রোক্তি দুই প্রকারের।
১. শ্লেষবক্রোক্তি। যেমন:
আপনার ভাগ্যে রাজানুগ্রহ আছে
---তিন মাস জেল খেটেছি ; আর কতদিন খাটব।
২.কাকু-বক্রোক্তি। যেমন:
আমি কি ডরাই, সখি,ভিখারি রাঘবে? রচনায় ও সম্পাদনায় জহির উদ্দীন বি.এ (অনার্স) এম.এ (বাংলা) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক,বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।