Ad-1

Showing posts with label অলঙ্কার শাস্ত্র. Show all posts
Showing posts with label অলঙ্কার শাস্ত্র. Show all posts

Sunday, July 9, 2017

অলঙ্কার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?শব্দালঙ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো

অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ
অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে যা দ্বারা সজ্জিত বা ভূষিত করা হয় তা'ই অলঙ্কার।
কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যার দ্বারা কাব্যভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয় তাকে অলঙ্কার বলে। এক কথায় কাব্যদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অলঙ্কার বলে।
সংস্কৃততে আছে,
'বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম'- অর্থাৎ রসাত্মক বাক্যই কাব্য।
ভারতচন্দ্রের ভাষায়ঃ
'যে হৌক সে হৌক ভাষা কাব্য রস লয়ে'- এই কাব্য বা কবিতার শরীর নির্মিত হয় বহু বাক্য নিয়ে।

অলংকার কাব্য শ্রুতি শিল্প বিশেষ।দুইভাবে আমরা কাব্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি, শুনে এবং বুঝে। কাব্যশুনে আমরা তার ধ্বনিরূপ উপলব্ধি করি,আর তার অর্থবুঝে আত্মারুপ অনুধাবন করি।ইংরেজিতে একটি হলো Sound অন্যটি হলো Sence। যার বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে ধ্বনিরূপ এবং অর্থরুপ।ধ্বনিরুপ হয় কর্ণগোচর আর অর্থ রূপ হয় মনোগোচর।
"কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিল মোর প্রাণ"- যেন এই দুইয়ের ওই মিলিত বাণীরুপ। সুন্দর সুমধুর সুসামঞ্জস্যময় ধ্বনিবিন্যাস যেমন আমাদের কানকে মুগ্ধ করে; কাব্যের অর্থের ব্যঞ্জনাও তেমনি আমাকে আমাদের মনকে আকুল করে।এই দুই মিলেই নির্মিত হয় সার্থক কাব্যাত্মা। কাব্যের অলংকার তাই একাধারে শব্দ ও অর্থ মিলিয়ে সামগ্রিক অলঙ্করণ। তাই যে সকল বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ ভূষণ আভরণ কাব্যের তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য সম্পাদন ও বৃদ্ধি এবং রসের উৎকর্ষ সাধন করে থাকে তাকে অলঙ্কার বলা হয়।

<html><script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-6143649439455000"
     crossorigin="anonymous"></script>
<ins class="adsbygoogle"
     style="display:block; text-align:center;"
     data-ad-layout="in-article"
     data-ad-format="fluid"
     data-ad-client="ca-pub-6143649439455000"
     data-ad-slot="1324595818"></ins>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script></html>

বাংলা অলঙ্কার প্রধানত দুই প্রকার।
১.শব্দালঙ্কার
২.অর্থালঙ্কার।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান অলঙ্কার রয়েছে যেমন: বিরোধমূলক অলঙ্কার, শৃঙ্খলামূলক অলঙ্কার,
ন্যায়মূলক অলঙ্কার, গূঢ়ার্থমূলক অলঙ্কার ইত্যাদি।
শব্দালঙ্কার:
শব্দের ধ্বনিরূপকে আশ্রয় করে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় শব্দালঙ্কার। অর্থাৎ শব্দকে ঘিরে এ
অলঙ্কারের সৃষ্টি। এর মূল সৌন্দর্য টুকু ফুটে উঠে শব্দের ধ্বনিরূপে। মনে রাখতে হবে শব্দালঙ্কারের অলঙ্কার
নির্ভর করে শব্দের ওপর। তাই ইচ্ছে মতো তাকে বদলে দেয়া যায় না।
প্রধান কয়েকটি শব্দালঙ্কার:
শব্দালঙ্কারের সংখ্যা কম নয়, তবে বাংলায় ব্যবহার উপযোগিতার দিক দিয়ে প্রধান হচ্ছে চারটি।
১.অনুপ্রাস(ধ্বনি বা বর্ণের বারবার আসা)
২.যমক(একই শব্দের বারবার উল্লেখ,ভিন্নার্থে ব্যাবহার)
৩.শ্লেষ(একই শব্দের একবার উল্লেখ,দুইটি অর্থে ব্যাবহার)
৪.বক্রোক্তি(বক্তা এক বলবে শ্রোতা অন্যটা বুঝবে)
১.অনুপ্রাস:
অনু শব্দের অর্থ পরে বা পিছনে আর প্রাস শব্দের অর্থ বিন্যাস, প্রয়োগ বা নিক্ষেপ। একই ধ্বনি বা ধ্বনি
গুচ্ছের একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে সুন্দর ধ্বনিসাম্যের সৃষ্টি হয় তার নাম অনুপ্রাস।
এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
★এতে একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ একাধিক বার ব্যবহৃত হবে।
★একাধিক বার ব্যবহৃত ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ যুক্ত শব্দগুলো যথাসম্ভব পরপর বা কাছাকাছি বসবে।
★এর ফলে সৃষ্টি হবে একটি সুন্দর ধ্বনি সৌন্দর্যের।
অনুপ্রাস প্রধানত তিন প্রকার।
অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্ত্যনুপ্রাস এবং ছেকানুপ্রাস।
অন্ত্যানুপ্রাস:
কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তারই পুনরাবৃ্ত্তিতে যে অনুপ্রাস অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম অন্ত্যানুপ্রাস। অর্থাৎ কবিতার দু’টি চরণের শেষে যে শব্দধ্বনির মিল থাকে তাকেই
অন্ত্যানুপ্রাস বলে। একে অন্ত্যমিলও বলা হয়ে থাকে।
যেমন: কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
            দাড়ি মুখে সারি গান লা-শরীক আল্লাহ।
বৃত্তানুপ্রাস:
একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে যে
অনুপ্রাসের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস।
যেমন: কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ।
ছেকানুপ্রাস:
 দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে একইক্রমে মাত্র দু’বার ধ্বনিত হলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়
তার নাম ছেকানুপ্রাস। একে শ্রুত্যনুপ্রাস, লাটানুপ্রাস, মালানুপ্রাস, গুচ্ছানুপ্রাস, আদ্যানুপ্রাস বা সর্বানুপ্রাস
হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মনে রাখা দরকার যে একক ব্যঞ্জনে কোন ক্রমেই ছেকানুপ্রাস হয় না।
উল্লেখ্য যে, এ ধরণের অনুপ্রাসের বাস্তব ব্যবহার বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না।
যেমন:
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (সুধীনদত্ত)
২.যমক:
একই শব্দ একই স্বরধ্বনিসমেত একই ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম যমক। যমক শব্দের অর্থ হল যুগ্ম বা দুই। লক্ষনীয় যে, একই শব্দ দুই বা ততোধিক বার
ব্যবহৃত হওয়া এবং ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা এর বৈশিষ্ট্য।
যমক তিন প্রকার। যথা:
১.আদ্যযমক: চরণের শুরুতে যমক থাকলে তা আদ্য যমক।যেমন:
                       ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে।(ভারতচন্দ্র)
২.মধ্যযমক:  মাঝে থাকলে তা মধ্য যমক।যেমন: তোসার এ বিধি,বিধি, কে পারে বুঝিতে।(মধুসূ)
৩.অন্তযমক: শেষে থাকলে তা অন্ত্য যমক হয়। যেমন:
                       কবির রমণী বাঁধি কেশপাশ
                        বসি একাকিনী বাতায়ন পাশ।(রবি)
৩.শ্লেষ:
একটি শব্দ একাধিক অর্থে একবার মাত্র ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম শ্লেষ। শ্লেষ শব্দের অর্থ শ্লিষ্ট-মিলিত বা আলিঙ্গিত। এতে একবার মাত্রই শব্দটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু তাতে ভিন্ন অর্থের ব্যঞ্জনা থাকে। এই শ্লেষ শব্দকেন্দ্রিক বলে কেউ কেউ একে শব্দ-শ্লেষ বলেন।যেমন:

শ্লেষকে কেউ কেউ দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা
১.অভঙ্গ শ্লেষ: শব্দকে না ভেঙ্গে অখণ্ড অবস্থায় রেখেই যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তা-ই অভঙ্গ শ্লেষ।যেমন:
মাথার উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে (নজরুল)
এখানে কবি ‘রবি' বলতে সূর্য ও রবীন্দ্রনাথকে বুঝিয়েছেন।
২.সভঙ্গ শ্লেষ: অখণ্ড অবস্থায় শব্দের শ্লেষ প্রকাশ না পেয়ে শব্দকে ভাঙ্গলে যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তার নাম
সভঙ্গ শ্লেষ। যেমন:
শ্রীচরণেষু
‘শ্রীচরণেষু’ একটা জুতোর দোকানের নাম। ক্রেতার ‘শ্রীচরণ ভরসা করে জুতোর দোকানদারকে জীবনযাত্রা
নির্বাহ করতে হয়, তাই শ্রীচরণ শব্দের শেষে সপ্তমীর বহুচবন যুক্ত করে ‘শ্রীচরণেষু’ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু
শব্দটা ভাঙলে আরো গভীর তাৎপর্য উদ্ঘাটিত হয়- অর্থাৎ ‘শ্রীচরণে ‘ষু’(shoe বা জুতো পরার আহ্ববান), যা
শব্দ ভাঙায় পাওয়া গেল।
৪.বক্রোক্তি:
বক্রোক্তি এর অর্থ – বাঁকা কথা।বক্তা বা প্রশ্নকারী যদি কোনো কথাকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেন --- অথচ
শ্রোতা বা উত্তরদাতা সে অর্থ গ্রহণ না করে কথাটিকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন কিংবা সে অনুসারে উত্তর দেন,
তবে সেখানে বক্রোক্তি অলংকার হয়।যেমন:
বক্রোক্তি দুই প্রকারের।
১. শ্লেষবক্রোক্তি। যেমন:
আপনার ভাগ্যে রাজানুগ্রহ আছে
---তিন মাস জেল খেটেছি ; আর কতদিন খাটব।
২.কাকু-বক্রোক্তি। যেমন:
আমি কি ডরাই, সখি,ভিখারি রাঘবে? রচনায় ও সম্পাদনায় জহির উদ্দীন বি.এ (অনার্স) এম.এ (বাংলা) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক,বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।

Sunday, May 7, 2017

ছন্দ কাকে বলে?কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর


বাংলা ছন্দ
ছন্দ:
কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে।
(বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়)
অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান
করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ
সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত,
বানানের সঙ্গে নয়।
অক্ষর
(বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই
অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত।
যতি বা ছন্দ-যতি :
 কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়,
তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত ২ প্রকার-
হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি।
অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়।
আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।
পর্ব
বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়।
পর্ব: কয়েকটা মাত্রা নিয়ে একটা পর্ব হয়।আর কয়েকটা পর্ব মিলে একটা চরণ হয়। চরণের শেষের পর্বটা
অপূর্ণ থাকতে পারে।যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ - হ্রস্ব যতি ও ∣∣ - দীর্ঘ যতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে
পর্ব।
মাত্রা:
একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়,
একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর
ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে।
শ্বাসাঘাত:
প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়।
এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন-
আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣
আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা
জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।
পদ ও চরণ:
দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির
মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ।
যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)
পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ।
এরকম-
যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥
করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
স্তবক:
অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়।
মিল:
একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে।
বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ:
বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩টি-
স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ।
তবে বিংশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস না
থাকলেও ধ্বনিমাধুর্যটুকু অটুট রয়ে গেছে, যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়।
নিচে সংক্ষেপে ছন্দ ৩টির বর্ণনা দেয়া হল।
স্বরবৃত্ত ছন্দ :
ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।
• মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়
• প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে
• সব অক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়
• দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়তে হয়
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়;
আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে  ২ মাত্রা হয়
• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত
উদাহরণ-
এইখানে তোর ∣ দাদির কবর ∣ ডালিম-গাছের ∣ তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর ∣ ভিজায়ে রেখেছি ∣ দুই নয়নের ∣ জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
(কবর; জসীমউদদীন)
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :




• মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়।
• মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়।
• বদ্ধাক্ষর শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে  থাকলে ১ মাত্রা হয়।
• একাক্ষর বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরটি  মাত্রা ২ হয়।
• কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি বদ্ধাক্ষর থাকে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে
• কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়
উদাহরণ-
হে কবি, নীরব কেন ∣ ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)
বসন্তে বরিয়া তুমি ∣ লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)
(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ :
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে-
পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-
সনেট :
• বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ
চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ
• ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়
• দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে
• সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)
• প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষটক বলে
• এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী,
তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে
• নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে
• দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা
অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই
সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়
• সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়
• সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট;
এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য
আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)।
নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-
পেত্রার্কীয় রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক
চ+ছ+জ চ+ছ+জ
শেক্সপীয়রীয় রীতি
ক+খ+ক+খ
গ+ঘ+গ+ঘ
চ+ছ+চ+ছ
জ+জ
ফরাসি রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক
গ+গ চ+ছ+চ+ছ
অমিত্রাক্ষর ছন্দ :





• বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে
একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে
প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে
• বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য
• অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না।
• মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট
(সাধারণত ৮++৬)
গদ্যছন্দ:
• এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম।
• গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার
জন্ম হয়।
• পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না।
• পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়;
এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়।
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়
উদাহরণ-
আমার পূর্ব-বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতে
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি।
(আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান)

Recent Post

সুভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর   জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...

Most Popular Post