অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ:
অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা:
১. সাদৃশ্যমূলক
২. বিরোধমূলক
৩. শৃঙ্খলামূলক
৪. ন্যায়মূলক
৫. গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক।
[কৌশল: একটি পরিবারে সাদৃশ্য,বিরোধ,শৃঙ্খলা,ন্যায়,থাকবে।তবে তার গূঢ়ার্থও আছে।]
১. সাদৃশ্যমূলক :
★ উৎপ্রেক্ষা:
উৎপ্রক্ষা কথাটি এসেছে উৎকট থেকে ; যার অর্থ দাঁড়ায় উদ্ভট,মিথ্যা বা সংশয় বা কল্পনা। কবি তার কবি শক্তির নৈপুণ্যে মিথ্যা বা সংশয় বা কল্পনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে,পাঠক সহজেই তার আবেদনকে গ্রহণ করেন।
মোটকথা; ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্যের কারণে উপমেয়কে উপমান বলে সংশয় হলে উৎপ্রেক্ষা অলঙ্কার বলে।
উৎপ্রেক্ষা দুই প্রকার:
১. বাচ্যোৎপ্রেক্ষা :
যে উৎপ্রক্ষায় সম্ভাবনাবাচক শব্দ (যেন,মনে হয়,বুঝি,মনে ইত্যাদি) উল্লিখিত, তাকে বাচ্যোৎপ্রেক্ষা বলে।
যেমন:
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ(উপমেয়) যেন ঝলসানো রুটি(উপমান)।
২. প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা:
যে উৎপ্রেক্ষায় সম্ভাবনাবাচক শব্দ (যেন,মনে হয় ইত্যাদি) অনুপস্থিত অথচ অর্থ থেকে সম্ভাবনার ভাবটি
প্রতীয়মান হয়ে উঠে, তাকে বলে প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।
★ অতিশয়োক্তি:
আতিশয্যপূর্ণ বা সীমাতিরিক্ত কথা থেকে অতিশয়োক্তি কথাটি প্রচলন।তার অর্থ এখানে আতিশয্যপূর্ণ বা
সীমাতিরিক্ত কিছু থাকবে।মোটকথা, কবি কল্পনায় যখন উপমান উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে উপমানের চরম প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয় এবং সাধারণ উপমেয় উল্লিখিত হয় না,তখন অতিশয়োক্তি অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়।যেমন;
" বন থেকে এল এক টিয়ে মনোহর।
সোনার টোপর শোভে মাথার উপর।"
এখানে উপমেয় ' আনারস'- অবিদ্যমান, 'সোনার টোপর-পরা টিয়ে'- উপমানের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
★★★ উৎপ্রক্ষায় উপমেয়কে উপমান বলে মনে হয়।আর অতিশয়োক্তিতে উপমানই উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে।
২. বিরোধমূলক অলঙ্কার:
★ বিরোধাভাসঃ (বিরোধের আভাস মনে হলেও বিরোধ নেই)
যেখানে দুইটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী মনে হলেও তাৎপর্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এদের মধ্যে প্রকৃত
পক্ষে কোন বিরোধ নেই, তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।যেমন:
১. ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে-
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।"[গোলাম মোস্তফা]
"শিশুদের অন্তরে " শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে,আপাতবিরোধী বক্তব্য।কিন্তু 'Child is the father of man' - এ
সত্য বিরোধের অবসান।
২. হেলা করি চলি গেলা
বীর।বাঁচিতাম, সে মুহূর্তে মরিতাম
যদি..... [রবীঠাকুর ]
অর্জুন পুরুষবেশী-চিত্রাঙ্গদাকে উপেক্ষা করে চলে গেছে বন-অন্তরালে।রূপমুগ্ধা নারী (চিত্রাঙ্গদা) আহত হয়েছেন এ নীরব অবহেলায়।এখানে বাঁচিতাম"- নীরব উপেক্ষার অপমান থেকে মুক্তি পেতাম অর্থে গ্রহণ করলেই বিরোধের অবসান ঘটে।
★. অসঙ্গতি:
কারণ এবং কার্য যদি ভিন্ন স্থানে বা আশ্রয়ে থাকে, তবে অসঙ্গতি অলঙ্কার বলে।
* বিরোধাভাসে পরস্পরবিরোধী বস্তুদ্বয় থাকে একই আশ্রয়ে,
আর অসঙ্গতিতে -- এক আশ্রয়ে কার্য এবং অন্য আশ্রয়ে কারণ থাকে ; এ দুয়ের মৌল পার্থক্য এখানে।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ(উপমেয়) যেন ঝলসানো রুটি(উপমান)।
২. প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা:
যে উৎপ্রেক্ষায় সম্ভাবনাবাচক শব্দ (যেন,মনে হয় ইত্যাদি) অনুপস্থিত অথচ অর্থ থেকে সম্ভাবনার ভাবটি
প্রতীয়মান হয়ে উঠে, তাকে বলে প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা।
যেমন:
* আগে পিছে পাঁচটি মেয়ে - পাঁচটি রঙের ফুল ;
* আগে পিছে পাঁচটি মেয়ে - পাঁচটি রঙের ফুল ;
[জসীম উদদীন]
পাঁচটি মেয়ে তো আর প্রকৃত ফুল নয়,যেন পাঁচটি রঙের ফুল; 'যেন'- অনুক্ত, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না।
পাঁচটি মেয়ে তো আর প্রকৃত ফুল নয়,যেন পাঁচটি রঙের ফুল; 'যেন'- অনুক্ত, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না।
★ অতিশয়োক্তি:
আতিশয্যপূর্ণ বা সীমাতিরিক্ত কথা থেকে অতিশয়োক্তি কথাটি প্রচলন।তার অর্থ এখানে আতিশয্যপূর্ণ বা
সীমাতিরিক্ত কিছু থাকবে।মোটকথা, কবি কল্পনায় যখন উপমান উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে উপমানের চরম প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয় এবং সাধারণ উপমেয় উল্লিখিত হয় না,তখন অতিশয়োক্তি অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়।যেমন;
" বন থেকে এল এক টিয়ে মনোহর।
সোনার টোপর শোভে মাথার উপর।"
এখানে উপমেয় ' আনারস'- অবিদ্যমান, 'সোনার টোপর-পরা টিয়ে'- উপমানের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
★★★ উৎপ্রক্ষায় উপমেয়কে উপমান বলে মনে হয়।আর অতিশয়োক্তিতে উপমানই উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে।
২. বিরোধমূলক অলঙ্কার:
★ বিরোধাভাসঃ (বিরোধের আভাস মনে হলেও বিরোধ নেই)
যেখানে দুইটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী মনে হলেও তাৎপর্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এদের মধ্যে প্রকৃত
পক্ষে কোন বিরোধ নেই, তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।যেমন:
১. ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে-
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।"[গোলাম মোস্তফা]
"শিশুদের অন্তরে " শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে,আপাতবিরোধী বক্তব্য।কিন্তু 'Child is the father of man' - এ
সত্য বিরোধের অবসান।
২. হেলা করি চলি গেলা
বীর।বাঁচিতাম, সে মুহূর্তে মরিতাম
যদি..... [রবীঠাকুর ]
অর্জুন পুরুষবেশী-চিত্রাঙ্গদাকে উপেক্ষা করে চলে গেছে বন-অন্তরালে।রূপমুগ্ধা নারী (চিত্রাঙ্গদা) আহত হয়েছেন এ নীরব অবহেলায়।এখানে বাঁচিতাম"- নীরব উপেক্ষার অপমান থেকে মুক্তি পেতাম অর্থে গ্রহণ করলেই বিরোধের অবসান ঘটে।
★. অসঙ্গতি:
কারণ এবং কার্য যদি ভিন্ন স্থানে বা আশ্রয়ে থাকে, তবে অসঙ্গতি অলঙ্কার বলে।
* বিরোধাভাসে পরস্পরবিরোধী বস্তুদ্বয় থাকে একই আশ্রয়ে,
আর অসঙ্গতিতে -- এক আশ্রয়ে কার্য এবং অন্য আশ্রয়ে কারণ থাকে ; এ দুয়ের মৌল পার্থক্য এখানে।
যেমন:
তুই হাসলে সূয্যি হাসে ফুল ফোটে বনেও
নেচে উঠে বিয়ে বাড়ির কনেও
তুই কাঁদলে বিষ্টি নামে মিষ্টি মায়ের মনেও-
তুই হাসলে সূয্যি হাসে ফুল ফোটে বনেও
নেচে উঠে বিয়ে বাড়ির কনেও
তুই কাঁদলে বিষ্টি নামে মিষ্টি মায়ের মনেও-
[বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ]
এখানে তুই 'শিশু'। তার হাসিতে, সূর্যের হাসি (ওঠা), বনের ফুল ফোটা এবং বিয়েবাড়ির কনের আহ্লাদি হওয়া,
- কারণ- কার্যের পৃথক আশ্রয়ে অসঙ্গতি অলঙ্কার।
এখানে তুই 'শিশু'। তার হাসিতে, সূর্যের হাসি (ওঠা), বনের ফুল ফোটা এবং বিয়েবাড়ির কনের আহ্লাদি হওয়া,
- কারণ- কার্যের পৃথক আশ্রয়ে অসঙ্গতি অলঙ্কার।
৩. শৃঙ্খলামূলক অলংকারঃ
যদি একটি কারণের কার্য পরবর্তী কার্যের কারণ হয় এবং একাধিক কার্যকারণ শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চলতে থাকে,তবে তাকে কারণমালা অলঙ্কার বলে।যেমনঃ
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু শাস্ত্রের বচন
অতএব কর সবে লোভ সম্বরণ।
৪. ন্যায়মূলক অলঙ্কারঃ
শিল্পী যখন তার সৃষ্টিতে ন্যায়মূলক সূত্রের আশ্রয়ে অলঙ্কারের আকারে (শৈল্পিক সৌন্দর্যে) প্রকাশ করে, তাকে ন্যায়মূলক অলঙ্কার বলে।
অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত কোন কথাকে অলঙ্কারের সাহায্যে বর্ণনা করাকে বুঝায়।যেমনঃ
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।(রবীন্দ্রনাথ)
৫. গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক অলঙ্কারঃ
কোন কথায় কিংবা কবিতায় যেমন একটা বাচ্যার্থ থাকে,তেমনি থাকে একটা গূঢ়ার্থ। কবি যখন বাচ্যার্থের ছদ্মবেশে, পাঠক কিংবা শ্রোতার কাছে উপস্থিত করেন তার আড়ালে গূঢ়ার্থটি, তাকে গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক অলঙ্কার বলে।
যেমনঃ
কখন মিলন হবে শুধানু যখন
হাসি প্রিয়া লীলাপদ্ম কৈল(রৈল) নিমীলন।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে অনেক কিছু জানতে পারলাম
ReplyDelete