Ad-1

Showing posts with label স্বরচিত সাহিত্য. Show all posts
Showing posts with label স্বরচিত সাহিত্য. Show all posts

Sunday, October 1, 2023

আজ একটা কোচিং-এ একটা স্টুডেন্টকে ক্লাসে দুষ্টুমি করার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দিলাম।আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখলাম স্টুডেন্টটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায়।আমাকে দেখে কাছে এসে বলল,স্যার এভাবে আপনি সবার সামনে অপমান করলেন?তাও কত গুলো মেয়ে ও ছেলেদের সামনে থেকে???ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছিল।

আমি বললাম,এটাকে তুমি অপমান মনে করছ?এটা তো অপমান না,তুমি যে আচরণ করছ সে আচরণে ভবিষ্যতে তুমি অনেক মানী ও সম্মানী হতে পারবে না বলে আজ তোমাকে অপমান করে বের করে দিলাম।তুমি কি ভবিষ্যতে আজকের চেয়ে ৫০ গুন সম্মানী হতে চাও???

বলল,জী,হ্যাঁ।

কিন্তু আজকের আচরণ তোমাকে ৫০ গুণ সম্মানী  হতে দেবে না।তাই আমি আজ তোমাকে অপমান করে বের করে দিলাম।সে সঙ্গে বললাম,কখনো শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া অপমানকে অপমান মনে করিও না, বরং সেটাকে মানী হওয়ার সোপান মনে করিও।শিক্ষক তোমার মানের আগে যুক্ত হওয়া সম্ভানাময় অপ টাকে দূর করার জন্যই এ ব্যবস্থাগুলো নেয়।

মনে করো,একজন স্টুডেন্ট শত শত মানুষের সামনে শিক্ষককে পায়ে ধরে সালাম করলো,এটা কি ছাত্রের জন্য অপমান????

:না,স্যার।

:এটা যদি অপমান না হয় তাহলে সামান্য কয়েকজন স্টুডেন্টের সামনে থেকে বের করে দেওয়াটাতে অপমান বোধ করছ কেন????

এটা বলার পর দেখলাম,স্টুডেন্টটা মোমের মতো গলে গেল।এতটা বিনয়ী হয়ে গেল যে মনে হলো ওর ঘাড়টা সারা জীবনের জন্য বাঁকা করে দিলাম।এখন প্রশ্ন হলো

#ঘাড়_বাঁকা_করে_দেওয়ার_মানে_কি?

আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার একবার বলেছিলেন,আমার সামনে যদি দশজন বড় বড় অফিসার দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তার মধ্যে আমার স্টুডেন্ট কোনটা আমি তা বেঁচে নিতে পারব।কিভাবে?

ওই যে ঘাড় বাঁকা করে হাত দুটো সামনে এনে ভাঁজ করে বিনয়ের ভঙ্গিতে দাঁড়ানোতে বুঝে যাব ও আমারই স্টুডেন্ট ছিল।

ও....ই যে ঘাড় বাঁকা করেছিল সেটা সে বড় অফিসার হয়েও এখনো সোজা করতে পারেনি এবং পারবেও না।

লেখক 

জহির উদ্দীন 

বি.এ(অনার্স),এম.এ(বাংলা), এলএলবি

তারিখ : ০১/১০/২৩

Saturday, September 19, 2020

দিরিলিস আর্তগ্রুল সমালোচনা


 দিরিলিস আর্তগ্রুল একটি অনবদ্য সিরিজের নাম।এ সিরিজে ৫ টি সিজনে ভাগ করে প্রায় ১৫০ টি ভলিউম বা সিরিজ আছে অর্থাৎ ৫ টি অধ্যায়ে ১৫০ টি পরিচ্ছেদ থাকার মতো।

এ সিরিজ গুলোর মধ্যে কেউ একটি দেখা শুরু করলে আরেকটি দেখার চরম তৃষ্ণা জাগবেই।একটি সিরিজ দেখার পর দর্শকের নিজের কাছে মনে হবে যে,তিনি যেন মরুভূমির ঠিক মাঝখানে চলে এসেছেন এবং নিজেকে খুবই তৃষ্ণার্ত বলে মনে হবে।মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত পথিক যেমন পানির জন্য উৎগ্রীব ও উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে তেমনি একটি ভলিউম শেষ করে আরেকটি দেখার জন্য উদগ্রীব ও উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়বে।

এ সিরিজে যেমন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা হয়,তেমনি কোন চরিত্রের মৃত্যু হতে পারে এই ভাবনাও হৃদয়ে ভয় জাগিয়ে তুলে।যেমনঃ
সাধু,দেশ প্রেমিক ও বিশ্বাসঘাতক আমির সাদেত্তিন কোপেকের মৃত্যু কখন হবে দর্শক যেমন শুধু এ প্রতীক্ষার যেমন প্রহর গুনতে থাকে,তেমনি ভয়ংকর ভিলেন বাইজো নয়ান মৃত্যুর জন্যও দর্শক উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
অপরদিকে আর্তগ্রুলের সহযোগী তুরগুত,বামসীসহ অন্যান্যদের একটু চুট লাগলে বা একটু বিপদে পড়লে দর্শকের হৃদয় প্রকম্পিত হয় তাদের কোন বড় ক্ষতি হবে বা মৃত্যু হবে এই ভেবে।

তিতুশের চেয়ে জঘন্য ছিল কুর্তুগলো।
বাইজু নয়ানের চেয়ে জঘন্য ছিল আমির সাদ উদ্দিন।
যাঙ্গোচ এর চেয়ে ভয়ংকর ছিল বাইবোলাত বে বা আলবাস্তি।
আমির সাদ উদ্দিন এমন একটি চরিত্র যে চরিত্রের মৃত্যু কখন হবে দর্শক শুধু সে অপেক্ষায় থাকে।অন্যদিকে কিছু চরিত্র এমন আছে মনের অজান্তে ঐ চরিত্রের এতটাই ভালোবাসা জন্মে যে,তাদের মৃত্যু মেনে নেওয়া তো যায় না,সে সঙ্গে তারা একটু আঘাত পেলেই মনে হবে দর্শক নিজেই আঘাত পেয়েছে।পরবর্তী এপিসোডে হয়তো ঐ চরিত্রের মৃত্যু হতে পারে ভেবে দুশ্চিন্তায় মন বিমর্ষ হয়ে যায়।তাদের মৃত্যু যেন কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।তাদের মধ্যে অন্যতম তুরগুত আল্প,বামসি,হালিমা সুলতানা,আসলিহান হাতুন,হাইমে হাতুন প্রমুখ ব্যক্তিগণ।তাদের প্রতি একটু আঘাত দর্শকের হৃদয়কে আহত করে।

যতই সিরিজ এগুচ্ছে আর্তগ্রুলের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার থলে ততটাই বড় হচ্ছে এবং পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী ও সার্বিক দিক দিয়ে পরিপূর্ণ ,নৃশংস ভয়ংকর শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হয়েছে।
এ যেন বড় বড় শত্রুরা একজন বড় নায়ক ও বিশ্ব নেতাকে পরিণত করে তৈরি করছে।

সিরিজগুলো দেখে মনে হবে পৃথিবীর তাবৎ ফিল্ম সব বানানো, বানোয়াট ও দর্শকের মন ভোলানো ও দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।কিন্তু এ সিরিজগলো যেন করা হয়েছে দর্শকের মন ভোলানো ও মনোরঞ্জনই উদ্দেশ্য নয়,বরং প্রকৃতি ও ভাগ্যের নিজস্ব গতিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার অনবদ্য ও অতিরঞ্জিতহীন স্বাভাবিক বিবরণ।

হালিমাসুলতানা,এরেস,আসলিহান,আইকিজ,দুমরুল,আলিয়ার বে,হাসাতোরিয়ান উস্তা,দোগান,শামসা,দিলিদিমির,ইসহাক,ওমর এ চরিত্রগুলো দর্শকের হৃদয়ে এতটাই ভালোবাসা সৃষ্টি করেছে যে,তাদের চলে যাওয়াটা দর্শকের হৃদয়কে বেদনায় বিধুর করে তুলেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো আর্তগ্রুলের সঙ্গীদের মধ্যে যারা শহিদ হয়েছে,তাদের শহিদ হওয়ার পিছনে আর্তগ্রুলের এতটুকু দোষ ছিল বলে কেউ মনের মধ্যেও কল্পনা করতে পারবে না।প্রতিটি চরিত্র ও মানুষকে বাঁচানোর আর্তগ্রুল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন।যেমনঃ তুরগুতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে।
বামসিকে আর্তগ্রুলের বন্দীকে ছাড়িয়ে নিয়ে অপরাধ করলেও নিজের ভাইয়ের মতো মুহূর্তে সব অপরাধ ভুলে গিয়ে তাঁকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এসেছিল।
অনেক অনেক ভালোলাগা কিছু ঘটনা ও সংলাপ থেকে একটি ভালো ও বেদনা বিধুর সংলাপ হলো নিম্নরুপঃ
বামসি নিজের ছেলে আইবার্সকে উদ্ধার করে যখন বসতিতে ফিরে আসলে হাফসা তার ছেলে আইবার্সকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলছিল,"তোমার জন্য আমি আমার জীবন কোরবান করে দিতে পারি।"  তখন উসমানের মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে উঠেছিল।প্রথমে তা বুঝতে পারিনি।পরক্ষণে যখন দেখি সে তার মা হালিমার আঁচল নিয়ে লুকিয়ে বলতে থাকে "মা,যার কথা আমি শুনেই গেলাম,যাকে আমি কখনো দেখিনি",তোমার আদর কখনো পাইনি,জানি না তুমি যদি বেঁচে থাকতে তোমার আদর কী রকম হতো।উসমানের এই নীরবে লুকিয়ে কান্না দেখে ফেলে সেলচান হাতুন।পরক্ষণে
তাঁর চাচী সেলচান হাতুনের জিজ্ঞাসু মনের উত্তরে উসমানকে বলতে শুনি....
"সবারই মা আছে,তারা তাদের সন্তানদের বাহুডোরে আশ্রয় দেয়,তাদের দুঃখ ভাগাভাগি করে,কিন্তু আমার কেউ নেই,যখন কেউ মা বলে ডাকে আমার হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হয়,চোখ অশ্রুতে ভরে ওঠে,ভেতর থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।আমার মাও কি হাফসা হাতুনের মতো আত্মোৎসর্গী ও মমতাময়ী ছিলেন?"

"যখন কেউ মা বলে ডাকে,আমার হৃদয় বিষাদের আগুনে দগ্ধ হয়ে যায়,আর এই দগ্ধ হৃদয়কে শান্ত করা আমার জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়,এই বিষাদ আমার হৃদয়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় আমাকে দগ্ধ করে।এই দগ্ধ হৃদয়কে নদীর উত্তাল ঢেউও শান্ত করতে পারে না,কিন্তু আমি তা কাউকে বলতে পারি না।"
এই করুণ দৃশ্য দেখে কোন দর্শক চোখের পানি আটকে রাখতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।

দিরিলিস আর্তগ্রুল সিরিজের
ঘটনার বিন্যাস,কাহিনীর জটিলতা,গল্প সাজানোর ধরণ,চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা,দ্বিধাদ্বন্দ্ব,কাহিনীর প্লট,ভাষার শিল্প সৌন্দর্য ও মাঝে মাঝে রাজকীয় আভিজাত্যপূর্ণ ভাষার ব্যবহার এসব কিছুই দিরিলিস আর্তগ্রুল- কে এতটাই সৌন্দর্যপূর্ণ করে তুলেছে যে,কোথাও কোন দাগ পড়ে নি।একেবারে নিখুঁত শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে।
এত ভালো সিরিজ তো বিশ্ববিজয়ী ও কালজয়ী সিরিজে পরিণত তো হবেই।

সাহিত্য সমালোচকঃ
জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ,এলএল.বি
শিক্ষক,বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।

Thursday, July 9, 2020

বাংলা বানান জটিলতার সহজ সমাধান



নিচের বানানসমূহ আমাদের সম্মানিত মহা পণ্ডিতদের বানানো শুদ্ধ বানান।
এগুলোকে আমি অতিরঞ্জিত না বলে আর কিছুই বলতে পারছি না।অনেকে এতটুকু পড়ার পর আমাকে মনে মনে মন্দ কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন।এরকম বলার অবশ্যই কিছু কারণও আছে।আসুন একটু আলোচনা করে দেখি.........
আমরা দেখি.....
বাংলা ভাষায় প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার শব্দ আছে।উৎস অনুসারে শব্দকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়।
১. তৎসম।
২. অর্ধ-তৎসম।
৩. তদ্ভব।
৪. দেশি 
৫. বিদেশি। 
আবার বাংলায় বর্ণ আছে ৫০ টি।কোনটা সংস্কৃত থেকে এসেছে কোনটা এসেছে বাংলা ভাষা থেকে।যেমনঃঈ,ঊ,ষ,ণ ইত্যাদি সংস্কৃত থেকে আগত।
আবার বাংলায় মোট ধ্বনি হলো ৩৫ টি।

অন্যদিকে বাংলা ভাষার রুপ হলো দুইটি।একটি হলো লেখ্য,যা বানানকে নির্দেশ করে। আরেকটি হলো কথ্য,যা উচ্চারণকে নির্দেশ করে।
বাংলা বানানে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমি দেখি পণ্ডিতদের মধ্যে।পণ্ডিতরা আমাদেরকে ও ভাষাকে তাদের দেখানো পথেই চালাতে চায়।সাধারণ মানুষের কথা তাঁরা বিবেচনায় করতে চান না।তাই
পণ্ডিতরা বলে থাকেন,
১. তৎসম শব্দে হাত দেওয়া যাবে না।কারণ সেটা সংস্কৃত থেকে এসেছে।
২. অতৎসম শব্দে হাত দেওয়া যাবে।কারণ অতৎসম মানে বাংলা শব্দ।সুতারাং বাংলা আমার মতো হতে হবে।আমার নিজস্ব বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।তাই অতৎসম শব্দে বাংলা বর্ণ ব্যবহার করতে হবে,তৎসম বর্ণ ব্যবহার করা যাবে না।
৩. দেশি শব্দ তো দেশি শব্দই,তাতে কী আর পাণ্ডিত্য দেখাব।
৪. বিদেশি শব্দ যেহেতু আমার অক্ষরে লেখা হচ্ছে সেহেতু আমার মতো করে লিখতে হবে।তাতে বিদেশি শব্দগুলো বিদেশি প্রভাবমুক্ত থাকবে সেসঙ্গে উচ্চারণও বিদেশি প্রভাবমুক্ত থাকবে।তাই অন্তত বিদেশি শব্দটাকে দেশি বানানে লিখে হলেও বিদেশিটারে দেশি বানানোর চেষ্টা করতে হবে।এগুলো পণ্ডিতদের কথা।
কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিদেশি এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো বিদেশি প্রভাবমুক্ত লেখা যাবে,কিন্তু বিদেশি প্রভাবমুক্ত উচ্চারণ করা যাবে না,তা পণ্ডিতরা কোনভাবেই বুঝতে চান না কিংবা বুঝেন না।এটা পণ্ডিতদের ভাষা বিষয়ে সীমাবদ্ধ জ্ঞানকে নির্দেশ করে বলে মনে করি।
কিন্তু আমার কথা হলো তৎসম শব্দে হাত দেওয়া না গেলে বিদেশি ভাষায় হাত দেওয়া যাবে কেন???
অথচ বিদেশি ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো যেমন উচ্চারণ তেমন লেখা না হলে শ্রুতিমাধুর্য যেমন চলে যায় তেমনি অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে যায়।
যেমনঃ আরবি ভাষায় ----
ইদ বলে কোন আরবি শব্দ নেই।এটা ঈদ হবে।
নবি বলে কোন আরবি শব্দ নেই।নবী হবে।
রাসুল বলে কোন আরবি শব্দ নেই।রাসূল হবে।
ফিল বলে কোন আরবি শব্দ নেই।ফীল হবে।যেমনঃসূরা ফীল।
আবার ইংরেজিতে Fill (ফিল),Feel (ফীল)।এখন পণ্ডিতরা বলবেন,,,,Feel এ যে দীর্ঘ-ঈ কার হয়,সেটা প্রতিবর্ণীতে আছে।
আমার কথা হলো feel একটু টান আছে বলে দীর্ঘ-ঈ কার হলে 'ঈদ' শব্দে আরবিতে টান আছে বলে তাতে কেন 'ঈ'- হবে না।
সুরা বলে কোন আরবি শব্দে নেই।সূরা হবে।
৫. ওনারা একবার বলেন যা উচ্চারণ তা বানানে লেখব।ঠ্যালা,গোরু,বারো,তেরো,
তাই যদি হয়,তাহলে এখন থেকে লিখুন 
কলোম,নরোম,জদি,জখন,জুদ্ধ,চলিতো,নমরো,ভদরো,কোবিতা,ওভিধান,প্রোসনো ইত্যাদি।
৬. আবার বলেন কি যা উচ্চারণ তা বানানে হবে না।ব্রাহ্মণ,সূক্ষ্ম,গ্রীষ্ম,যদি,যখন,যুদ্ধ,শ্রেণি।

আমার মতে, সম্পূর্ণ বানান শুদ্ধ করতে গেলে দুইটি নিয়ম অনুসরণ করলেই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি।আর তা'হলোঃ
১. যেহেতু বাংলায় মোট ধ্বনি ৩৫ টি,সেহেতু বাংলায় মোট বর্ণ হবে ৩৫ টি।অবশিষ্ট ১৫ টি বাদ দিতে হবে,তবে ঐ ১৫ টি থেকে সর্বোচ্চ ২ টি রাখা যেতে পারে।সে দুটি হলো ঈ,ঊ,যেহেতু প্রায় সব সব ভাষায় দীর্ঘ স্বর দেখা যায়।যতদিন বাদ দেওয়া হবে না,ততদিন বানান জটিলতাও দূর হবে না।
২. আমরা যা উচ্চারণ করবো,তাই লিখব।
এই দুটো পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে সব বানান অটো শুদ্ধ হয়ে যাবে।
.......
...
..
.
ফেসবুকে বানান নিয়ে এত বেশি পোস্ট দেখতেছি যে,চুপ থাকাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে,তাই একটু লেখার চেষ্টা করলাম,অথচ এই বানানের নিয়ম কানুন ২০১৬ সাল থেকে প্রবর্তিত।এটা তেমন গবেষণামূলক লেখা নয়,আলোচনামূলক লেখা।দিনশেষে আমাকে পণ্ডিতদের দেখানো বানানই বিভিন্ন জায়গায় লিখতে হবে,তা আমি ভালো করেই জানি।কারণ ....


লেখক,
জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ(বাংলা) 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 
শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।         


Sunday, November 17, 2019

এক বন্ধুর আসমানে ঘুরা আরেক বন্ধুর বিরানি খাওয়া

হিন্দু, মুসলিম,খ্রিষ্টান ওরা তিনজন বন্ধু।একরাতে ওরা একটা বিরিয়ানি পেল।কিন্তু কে সেটা খাবে সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল তারা রাতে ঘুমিয়ে পড়বে এবং রাতে যে সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখবে সেই ভোরে ওঠে সেই বিরিয়ানিটা খেয়ে ফেলবে।তারা ঘুমিয়ে পড়ল।

রাত তিনটার সময় মুসলমান বন্ধু হঠাৎ ঘুম থেকে ওঠে দেখে ওরা দুইজন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।তাদের ঘুমানোর ফাঁকে সে বিরিয়ানিটা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

ভোরে তিনজনেই ঘুম থেকে উঠল।এবার একজন আরেকজনের স্বপ্ন বলতে লাগল।আসলে কেউ সত্যিকারের কোন স্বপ্ন দেখেনি।কিন্তু মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে স্বপ্ন বলতে লাগল।

প্রথমে খ্রিষ্টান বলল;আমি রাতে স্বপ্ন দেখলাম,স্বয়ং যিশু এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে পুরো পৃথিবীসহ সমস্ত আসমান ভ্রমণ করেছি।

হিন্দুজন বলল;আমি স্বপ্ন দেখেছি,স্বয়ং কৃষ্ণ এসে আমাকে বৃন্দাবনে নিয়ে গেছে আর আমি রাধার সঙ্গে বসে লুডু খেলতে দেখছি।

ওরা দুজনেই বলল,ভাই এবার তোমারটা বলো তুমি কী দেখেছ?
আমি বলতে চাচ্ছি না,কারণ আমি একটা খুব ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছি।ওরা বলল,তবুও বল,আমরা শুনতে চাচ্ছি।

এবার বলল; আমি স্বপ্ন দেখেছি,একটা সুবিশাল দৈত্য এসে আমাকে বলতেছে তুই বিরানিটা খেয়ে ফেল না হয় তোরে মেরে ফেলব।তাই আমি রাতেই ওঠে বিরানিটা খেয়ে ফেললাম।
ওরা দুইজন বলল,তো তুই তখন আমাদের ডাকিস নাই কেন???
আমরা ওঠে তোকে সাহস দিতাম।
মুসলিম বন্ধু বলল,তোদের ডাকতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তোদের পায়নি তোরা তো একজন চলে গেছস আসমানে আরেকজন চলে গেছস বৃন্দাবনে।তো তোদের পাব কেমনে???

Friday, November 1, 2019

পরীক্ষায় ফেইল নিয়ে ভাবনা।

আজ থেকে প্রায় পাঁচ সাত বছর আগে মহেশখালি গিয়েছিলাম।রবীন্দ্রনাথের 'ছুটি' গল্পের নায়ক 'ফটিক' এর সমবয়সী এক ছেলেকে দুপুরের প্রচণ্ড তাপদাহে লবণের মাঠে কাজ করতে দেখে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,"আপনার ছেলে পড়া-লেখা করে না?"
বলল; পড়ত।এখন পড়ে না।আষ্ট কেলাস পর্যন্ত পইরগে।আষ্ট ক্লাসর সরকারি পরীক্ষায় (মানে জে এস সি পরীক্ষায়) অংকে ফেল করার পর আমার সঙ্গে মাঠে নিয়ে এসেছি।আর কি পড়া লেখা করবো।তখন থেকে ভাবছি এটা নিয়ে লিখব,কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনা।মাঝখানে ভুলেই গিয়েছি লিখতে,আজ হঠাৎ মনে পড়লো।
তারপর ভাবছি,,,,,,
এভাবে হয়তো একজন রিকশা ওয়ালার ছেলে জে এস সি পরীক্ষা দিল,সে সব সাবজেক্টে পাশ করেছে শুধু গণিতে ফেইল করেছে।তার ফলে রেজাল্টের পরের দিন বাবা ছেলেকে ডেকে বলেছে তোকে দিয়ে আর পড়া লেখা হবে না,চল তোরে রিকশা চালানো শিখায়।আর বাবা জেলে হলে বলে, চল মাছ ধরানো শিখায়।ড্রাইভার হলে বলবে,গাড়ি চালানো শিখায়।কৃষক হলে বলবে,চল আমাকে সাহায্য করতে ফসলের মাঠে ।কিংবা বলবে, আমি তো এই রকম কাজ করে জীবনটা শেষ করে দিলাম,চল তুই আমার চেয়ে সামন্য একটু উঁচু মানের ভাল কাজ শিখে নেয়।এভাবে একটা ছেলের পড়া লেখার জীবন শেষ হয়ে যায় এবং এভাবে আমাদের সমাজ ওকে পড়া লেখা থেকে বঞ্চিত করে দিল।
অথচ সেই ছেলেটি ক্লাস Nine/Ten/eleven /twelve এ গিয়ে কোন এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে যে গণিত সাব্জেক্টে এত খারাপ করলো সে গণিত সাব্জেক্টিকে এত ভালো করে বুঝা শুরু করে দিল যে,গণিতই তার একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠল।অনুরূপভাবে গণিত ছাড়া অন্য সাবজেক্টেও একই রকম হতে পারে।যেমন :কেউ বাংলায় ফেল করে,কেউ ইংরেজিতে, কেউ বা বিজ্ঞানে ফেইল করে।আসলে জীবন কখন, কীভাবে যে কার সংস্পর্শে এসে জীবনের mood পাল্টে যায় সেটা কেউ জানে না।কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা জীবনের mood পাল্টে দেওয়ার আগে জীবনটাকে পাল্টে দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।সে জন্য আমি মনে PECE,JSC,SSC,HSC পরীক্ষায় ফেইল বলে কিছু থাকবে না।কেউ যদি একটা সাব্জেক্টে ১০ নাম্বারও পায় সে যেন সে ক্যাটাগরির গ্রেড বিশিষ্ট সার্টিফিকেট পায়।যেমন:
৮০-১০০ =A+
৭০-৭৯ =A
৬০-৬৯ =A-
৫০-৫৯ =B
৪০-৪৯ =C
৩০-৩৯ =D
২০-২৯ =E
১০-১৯ = F(এ গ্রেডটা না দেওয়া ভালো,যেহেতু এ গ্রেডের উপর মানুষের নেগেটিভ ভাব আছে) or Z grade.
এভাবেই ব্যাবস্থা করাই সরকারের উচিত বলে মনে করি।প্রয়োজনে তাকে F বা Z গ্রেড বিশিষ্ট সার্টিফিকেট যেন দেওয়া হয়।এতে করে একজন ছেলে F/Z গেডে হলেও যে HSC পাস করেছে তার একটা ডকুমেন্ট হলেও থাকবে।অন্তত ফেইল করে আত্মহত্যা করা থেকেও অনেকের জীবন বাঁচবে এবং নিজেকে কিছুটা হলেও শিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।এতে সমাজে শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়বে,সমাজ আরো আলোকিত হবে।হয়তো তারাই একদিন তার PECE/JSC ফেইল করা সাব্জেক্টের জন্য জগদ্বিখ্যাত হয়ে যাবে।
তবে HSC পর্যন্ত সব গ্রেড মিলিয়ে যদি সে কম গ্রেড বা মানসম্মত গ্রেড না পায় সে আর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে না।যেমন: PECE+JSC+SSC+HSC মিলে মোট ১২/১৫ পয়েন্ট বা আলোচনা সাপেক্ষ কোন পয়েন্ট না পায় সে আর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে না।আগামী বছর থেকে CGPA পদ্ধতিতে রেজাল্ট হবে তাতে ৪০ মার্ক্সে পাস, তাতে তো আরও কঠিন হবে পাস করা।ঝরে পড়বে অসংখ্য শিক্ষার্থী,অজ্ঞতার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন,শিশুর মেরুদণ্ড গড়ে ওঠার আগে পাস পরিমাপের মাপকাঠি দিয়ে ভেঙে দিব তার মেরুদণ্ড।তবে আমি CGPA এর বিপক্ষে নয় ফেইলের বিপক্ষে।
কিছু ছবি কথা বলে....



লেখক ও শিক্ষাবিদ
জহির উদ্দীন।
বি.এ(অনার্স),এম.এ(বাংলা),এলএল.বি।

Wednesday, July 31, 2019

অংকে ১০০ তে ১০০ পাওয়ার কাহিনী :

কথা হচ্ছিল একটা স্টুডেন্টের সঙ্গে আরেকটা স্টুডেন্টের অংকে ১০০ তে ১০ মার্কস পাওয়া নিয়ে।
স্টুডেন্ট:স্যার, অমুক নাকি অমুক স্কুলে থাকা অবস্থায় ১০০তে ১০০ বা ৯০ বা ৯৫ পেত।অথচ আমাদের স্কুলে এসে ১০০ তে সে ১০ ও পাচ্ছে না।এটা কিভাবে সম্ভব?
আমি:এত ছোট বাচ্চা, তুমি ওগুলো বুঝবে না।
স্টুডেন্ট: স্যার,বুঝায়ে বলেন না,স্যার? বুঝবো তো।
আমি : আচ্ছা বলছি,ওগুলো হলো কিছু কিছু বেসরকারি স্কুলে ঐ রকম নাম্বার দিয়ে দেয়।কারণ,মার্ক্স কম দিলে ঐ প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি ও বদনাম।তাই বেশি বেশি করে নাম্বার দিয়ে দেয়।
স্টুডেন্ট : (স্টুডেন্ট নাছোড় বান্দা) কি রকম ক্ষতি স্যার।
আমি : তুমি এত প্রশ্ন কর যে,তোমার যন্ত্রণা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।আচ্ছা বলছি তাহলে,শুন,
ঐ ছেলেটা যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল সেখানকার ক্লাস টু- থ্রি-ফোরের ভর্তি ফি প্রায় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আরও কম বা বেশি হতে পারে।এরপর প্রতি মাসে বেতন দশ থেকে বার হাজার টাকা।যাতায়াত ভাড়া ৫০০০ টাকা।বাসায় টিচার রাখলে তার বেতন ৬০০০-৭০০০ টাকা।সব মিলিয়ে ঐ ছেলেটার পিছনে প্রতি মাসে প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা খরচ হয়।অবশেষে সেই ছেলেটা যখন ছয় মাস পর মিড টার্ম পরীক্ষায় কয়েকটা সাবজেক্টে ফেল করে বা কম মার্ক্স পায়,তখন সর্বপ্রথম সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় তার বাবা-মা।আক্ষেপ করে মা-বাবা প্রথমেই বলতে থাকে,তোর জন্য প্রতি মাসে এত টাকা খরচ করছি, আর তুই পরীক্ষায় এ নাম্বার আমাদের উপহার দিলি।বুঝছি তোর এই স্কুলে কোন উন্নতি হচ্ছে না।ফলে অভিভাবকরা অনেক সময় তার সন্তানকে ঐ স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে যায় অন্য স্কুলে।এরপর তার এ নাম্বার প্রাপ্তিতর অখুশি হয় হাউস টিউটর,তার আত্মীয় স্বজন সর্বোপরি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কারণ শিক্ষার্থী চলে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের।তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ খুঁজ নেয়, এ স্টুডেন্টার ফেইল করার প্রধান কারণ কী?কেন সে ফেইল করছে? সর্ববোপরি এই ফেইল করাচ্ছেটা কে?
খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পায়,এর জন্য দায়ী ঐ স্কুলের সাব্জেক্ট টিচার।তখন কর্তৃপক্ষ ঐ টিচারকে বিভিন্নভাবে প্রেসার দেয় স্টুডেন্টকে পরীক্ষায় বেশি বেশি নাম্বার দেওয়ার ও বেশি বেশি পাস করানোর।ফলে সাব্জেক্ট টিচার চিন্তা করে কী দরকার আমার এতো রিস্ক নেওয়ার? নাম্বার তো আর আমি আমার দাদার সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছি না।বরং নাম্বার দিলে দাদার সন্দুকে আরও সম্পদ বেড়ে যাবে।তাই নিজের বিবেকটাকে এক পাশে রেখে ঐ টিচার স্যকারাইনযুক্ত নাম্বার দিয়ে দেয়।
স্যাকারাইন যুক্ত এ জন্য বললাম যে,ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের যে পণ্যে বেশি চিনির প্রয়োজন সে পণ্যে সে পরিমাণ চিনি দিতে গেলে ব্যবসায়ীকে সে পণ্যের কমপিটেটিভ ব্যবসায় লস গুণতে হবে।তখন সে ব্যবসায়ীরা নাকি তাতে স্যাকারাইন ব্যবহার করে,কারণ ১০০ কেজি চিনির সমান ১ কেজি স্যাকারাইন।
তাই শিক্ষক স্টুডেন্টকে স্যাকারাইন যুক্ত নাম্বার দিয়ে ১০ পাওয়ার উপযুক্ত স্টুডেন্টকে ৯০/১০০ নাম্বার করে দিয়ে দেয়।কিভাবে দিয়ে দেয়,সেটা সে শিক্ষক ছাড়া অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও অন্য কারো জানার কথা নয়।ফলশ্রুতিতে সাব্জেক্ট টিচার খুশি,কর্তৃপক্ষ খুশি,অভিভাবক খুশি,আত্মীয়-স্বজন খুশি,সর্বোপরি হাউস টিউটরও খুশি।এই খুশি চক্রের কবলে স্টুডেন্ট তো আরও খুশি।
কিন্তু সে স্টুডেন্ট যখন বড় হয়ে ক্লাস ফাইভ বা কোন বোর্ড পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে চায় তখন তার অবস্থা বারটা বেজে যায়।তখন অভিভাবক মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, স্যার, ছেলেটা এখন অঙ্কে বা অমুক সাব্জেক্টে খুবই কম মার্কস পাচ্ছে কেন? ও তো আগে বা ছোট বেলায় খুব ভালো ছিল,জানেন স্যার, ও ছোট বেলায় বা অমুক স্কুলে থাকতে অঙ্কে বা অন্য সাব্জেক্টে ১০০ তে ১০০/৯০/৯৫ পেত।
তখন স্যার মনে মনে স্যাকারাইন যুক্ত নাম্বারের কথা ভাবে,আর মুখে বলে,ও তো আগে ছোট ছিল,ক্লাসও ছোট ছিল,এখন বড় ক্লাস বড় অংক,তাই হয়তো মাথায় কম ডুকতেছে বা বুঝতেছে।তাই বড় ক্লাসে গেলে নাম্বার একটু স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।এই বলে অভিভাবকদের সান্ত্বনা পুরস্কার দিয়ে দেওয়া হয়।ইতোমধ্যে যে, তাকে স্যাকারাইন নাম্বার খাওইয়া তার মাথা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে,তা কেউ এক বিন্দুও স্বীকার করবে না।
তো এখন কেন শিক্ষক সেই স্যাকারাইন নাম্বার দিচ্ছেন না?
কারণ সামনে যে বোর্ড পরীক্ষা ওখানে যে স্যাকারাইন নাম্বারের কোন মূল্য নেই।।
এ লেখার উদ্দেশ্য হলো,আপনার সন্তানের স্যাকারাইন নাম্বারে আপনি স্যাকারাইন খুশি না হয়ে সন্তান আসলে অত নাম্বার পাচ্ছে কিনা কিংবা উপযুক্ত কিনা তা বিবেচনা করুন।এবং তার যথাযথ গ্রোথ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করুন।বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ভেজাল মার্কা স্যাকারাইন নাম্বার নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রকৃত পক্ষে সে কত মার্ক্স পাওয়ার উপযুক্ত তা বিচার করুন।প্রয়োজনে পরীক্ষার খাতায় শিক্ষককে বলুন কম নাম্বার দিতে। বেশি স্যাকারাইন নাম্বার পেয়ে ও খেয়ে যেন তার মাথা নষ্ট না হয় সে দিকে লক্ষ রাখুন।সে সঙ্গে লক্ষ রাখুন,সন্তান আসলে বুঝে বুঝে পড়তেছে নাকি তোতা পাখির মতো মুখস্থ করতেছে।তাহলেই আপনার সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বলে আমি মনে করি।

Friday, April 26, 2019

সরকার চাইলে দিতে পারে আপনার বেড় রুমেও নিরাপত্তা;কিন্তু কীভাবে???

গাড়িতে করে টেম্পুতে চড়ে নিউ মার্কেট থেকে আসছিলাম নতুন ব্রিজের দিকে।জনৈক বলল;"একটা বাড়িতে খুন হয়েছে,সেটা সরকারের দোষ।"
আরেকজন বলল সেটা সরকারের দোষ নয়,সরকার কি আপনার বেড় রুমে নিরাপত্তা দেবে নাকি?
আরেকজন বলল; প্রশাসন ঠিক থাকলে সব অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে।দেশের অভিভাবক ঠিক নেই;আপনি আর আমি কি করবো?যে সবচেয়ে বেশি অন্যায় করে ক্ষমতায় আসে,মানুষ তার কাছেই ন্যায় বিচার চায়।এটাই হলো দেশ,আমাদের বাংলাদেশ।
এবার আসি নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু কথা বলি।
আসলে সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার বা পাওয়ার আগে নিজেকে নিজের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা প্রথমে রাখতে হবে।কথায় আছে ; Self help is the best help.তাই নিজেকেই প্রথমে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে হবে।সেই নিরাপত্তা ভেঙ্গে কেউ যদি কোন অন্যায় করে সে অপরাধের শাস্তি প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব।যেমন;
শহরের কোন বাসায় বা কোন এক অন্ধকার রাস্তার মধ্যে একজন আরেকজনকে হত্যা করে সেখানে পৃথিবীর কোন সরকারের পক্ষে সঠিক বিচার করে শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।কারণ কাকে,কিভাবে,দোষী সাব্যস্ত করবে সেটা অনেক দীর্ঘ সূত্রিতার বিষয়।অপরাধীকে ধরা কোন মতেই সম্ভব নয়।সম্ভব হলেও নি:সন্দেহে সে অপরাধী তা বিচার করে রায় প্রকাশ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।এত কথা বলার কারণ হলো,তার একটি সুন্দর সমাধান বের করা।
সমাধান কী?
আমাকে যদি এক মাসের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দেওয়া হয়,কিংবা একটা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র করে দেওয়া হয়,আমি প্রতিটি পরিবাররের, প্রতিটি ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারব এবং দেব।অনেকেই এটা পড়ে হয়তো হাঁসবেন বা পড়ে মনে মনে হাঁসছেন।হাঁসার কিছু নেই,আমি ব্যক্তির বেড়রুমেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেব।
কিন্তু কীভাবে?
১. প্রথম কাজ হবে,দেশের ডিজিটাল ডিভাইস তথা সিসিটিভি ক্যামেরার সরঞ্জামের দাম কমিয়ে দেব।এর শুল্ক কমিয়ে দেব।প্রয়োজনে তাতে ভর্তুকি দেব।
২. সকল নাগরিকের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো বাধ্য করে দেব।বিশেষ করে সকল বাড়িওয়ালাদের বাধ্য করবো,তারা যেন এক মাসের মধ্যে বিল্ডিংয়ের গেটে ও সিঁড়ি বেয়ে ওঠার পথে যেন তারা সিসি ক্যামেরা লাগায়।
৩. যে সকল বাড়ির মালিক তা লাগাবে তাদের বাড়ির এক বছরের হোল্ডিং টেক্সের ৫% ছাড় দেওয়া হবে।এটা গেল বাড়ির নিরাপত্তার কথা।
এবার আসি রাস্তায় কিভাবে নিরাপত্তা দেবে?
১. যে দোকান মেইন রোড়ের পাশে থাকবে কিংবা যে কোন অলিতে গলিতে থাকবে প্রতিটি দোকান যেন সিসি ক্যামেরা লাগায় তা নিশ্চিত করবো।
২. এই সিসি ক্যামেরার একটা থাকবে দোকানের ভিতরে,আরেকটা থাকবে দোকানের বাইরে রাস্তার দিকে।এখন প্রশ্ন আসতে পারে দোকানে বেচা-কেনা নেই অত।সিসি ক্যামেরা লাগাবো কি করে?সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে দুই বা তিন দোকান মিলে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে।এতে তাদের সিটি কর্পোরেশনে টেক্স থেকে মোটের উপর ১০% কম দিতে পারবে ১ বা ২ মাস পর্যন্ত।
৩. দোকানের ট্রেড লাইসেন্স করতে গেলে পূর্ব শর্ত হিসেবে থাকবে দোকানের বাইরে ও ভিতরে এবং দোকান রাস্তার পাশে থাকলে রাস্তার দিকে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে কি না তা যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করব।
সুতারাং উপর্যুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করিলে বাড়ির ভিতরে যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে বাড়ির বাইরেও নিশ্চিত ধাকবে,দোকানে যেমন নিশ্চিত থাকবে দোকানের বাইরে যে কোন অলি-গলির মধ্যেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।এরপরও কেউ অপরাধ করে থাকলে, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ভিড়িও ফোটেজ থেকে একটিতেও হলে ধরা পড়বে।সরকারের দায়িত্ব হলো, সত্যিকারের অপরাধী শাস্তি নিশ্চিত করা।যা সরকার সহজে করতে পারবে, এবং মানুষের বেড় রুমেও নিরাপত্তা দিতে পারবে।এভাবে আমার স্বপ্ন সার্থক হবে।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা,
বাংলার ভুবন

Thursday, July 5, 2018

চায়ের চুমুতে তোমার অনুভব

চায়ের চুমুতে তোমার অনুভব
বিবাহের প্রথম বছর,
স্বামী অফিসের টিফিন আওয়ারে
স্ত্রীকে ফোন করলে.........
স্ত্রী রিসিভ করে বলে...
:hello..আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?
: ওয়ালাইকুমুস সালাম,ভালো আছি,তুমি?
: ভালো,কি করছেন?
: এই তো কিছু না,বসে আছি।তোমার পাশে কি কেউ আছে?
: হ্যাঁ,আছে তো, কেন?
: একটা কথা বলতাম।
: কি কথা?বলুন না।
: না, বলছিলাম কি।আমি এখন কি করছি জানো?
: কি ? বলুন।
: আচ্ছা, বলছি,আমি এখন উষ্ণ চায়ের কাপে চুমু দিচ্ছি।আর তোমার কথা ভাবছি।
: হা হা হা,,,,,তাই?

Monday, June 4, 2018

ভালো না বাসলেই বরং বেশি ভালো....


ভালো না বাসলেই বরং
একটি বেশি ভালো,
ভালোবাসলে মানুষ ছলনাময়ী হয়ে যায়।।
বন্ধুত্বই ঠিকে থাকে আজীবন
বন্ধু হয়ে থাকাই যেন বেশি চিরন্তন।।

: না, এটা ভুল কথা,ভালোবাসলে মানুষ ছলনাময়ী হয় না।
:কিন্তু ভালোবাসার কথা বললেই মানুষ
স্বার্থ নিয়ে ভাবে,
ভালোবাসার কথা বললেই
সে সময় নেবে,
ভালোবাসবে কি না?
ভালোবাসার কি না?
ভালোবাসলে সুখী হবে কি না?
কিংবা সুখে রাখতে পারবে কি না?
কিন্তু বন্ধুত্বে নেই অতো স্বার্থপরতা,
তাই বলি, তুমি বরং আমায়
ভালো না বাসলেই ভালো।
হাসি, কথা,আর মিষ্টি
আলাপনে কেটে যাক না
না হয় এভাবে......

Monday, May 28, 2018

স্বপ্ন ও প্রাপ্তি

স্বপ্ন ও প্রাপ্তি
তখন সবে মাত্র এস এস সি দিয়েছিলাম
এক পুলিশের বাসায় টিউশন করতে গিয়ে,
সেই লাল টুকটুকে ছাত্রীর
প্রতিই আমার কৈশোর জীবনের
প্রথম ভালোলাগা আর
ভালোবাসার জন্ম হয়,
অতপর তার মা মেয়ের মতি গতি বুঝে,
আমাকে খুবই ভদ্রভাবে বিদায় করে দেয় ।
তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেলো,
কিন্তু সে আর এলো না।।

তারপর ভালোবেসে ফেলি
গ্রামের এক চঞ্চলা ছাত্রীকে,
তার জীবনের ভালোবাসার শূন্যস্থান
কেউ পূরণ করেছিল বলে
আমাকে আর জায়গা দেয়নি
তার হৃদয়ের শূন্যস্থানে।।
অবশেষে তার বিয়ে হয়ে গেল
বাবার সুমতে
এক অচেনা যুবকের সাথে।।

তারপর শপথ নিলাম
জীবনে আর কাউকে ভালোবাসবো না,
কিন্তু মনের কি আর
মনের মানুষ ছাড়া
একা ভালো লাগে?
তারপর হঠাৎ একদিন দেখি
মন ভালোবেসে ফেলে
এক দূরাত্মীয়াকে।

তিন কিলোমিটার রাস্তায় হেটে
পকেটের পয়সা বাঁচিয়ে
যার সঙ্গে কথা বলতাম।।
যার মুখ থেকে "ভালোবাসি"
শব্দটা শুনে ভার্সিটির এক
বান্ধবীকে ট্রীট দিয়েছিলাম।
মাত্র তিনমাস
তারপর তারও হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেলো,
প্রবাসী পয়সা ওয়ালা এক যুবকের সাথে।।

তারপর কঠিন শপথ,
কখনো কাউকে আর ভালোবাসবো না,
তারপর থেকে যখন যেখানে যাকেই ভালো লাগে,
স্বপ্ন দেখেছি তাকে নিয়ে কিংবা
তারমতো কাউকে জীবনসঙ্গী করার।
কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে
হবু শ্বশুরের জীবনে প্রাপ্তির
নিক্তিতে কম হওয়ায় অনেক স্বপ্ন
মনের মধ্যেই মরে গেছে।
ভেবেছিলাম জীবনে কোকিলা কণ্ঠের
কোন এক রুপসী নারীকেই বিয়ে করবো,
তা আর হলো না,
অবশেষে জীবন সঙ্গী হলো
গ্যানগেনে আওয়াজের কোন এক রুপসী রমণী।

Tuesday, February 13, 2018

ভালোবাসি,তাই পাপিষ্ঠা জেনেও ভালোবেসে যাই...

সুখান্তরদাহ ভালোবাসার সংসার-০১
নিশাত খুবই সুন্দরী একটা মেয়ে।১০০ জনকে যদি তার সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ৯৯ জনই বলবে মেয়েটি আসলে সুন্দরী।নিশাতের বিয়ে হয়েছে এখন প্রায় পনের বছর।কিন্তু এখনও থ্রি পিচ পরলে মনে হয় মাত্র এক ছেলের মা কিংবা অবিবাহিত কোন নারী।অবশ্য নিশাত এখন দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা।বড় মেয়েটা ক্লাস এইটে পড়ে।স্বামী থাকে বিদেশে।আজ তিন বছর চলছে স্বামী বিদেশে গেছে।বাড়িতে থাকে বড় ভাসুর।নাম তার নি:শব্দ।স্বামীর অনুপস্থিতিতে বাড়ির বাজারসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেন নি:শব্দ।নি:শব্দের নিজস্ব সংসার আছে।স্ত্রী,ছেলে - মেয়ে নিয়ে সাতজন ওরা।ওরা যৌথ পরিবার।নি:শব্দের স্ত্রী অনেকটা 'লালসালু'- উপন্যাসের রহিমার চেয়েও ঠাণ্ডা স্বভাবের।এ যেন এক জীবন্মৃত কোন নারী।নিশাত কিন্তু বিপরীত স্বভাবের।একটু চঞ্চল,বুদ্ধিমতী,লাস্যময়ী।আজকাল নিশাত প্রায় সময় বারবার যে গানটা শুনে,তা হলো......

"আর কত রাত একা থাকবো
আর কত রাত একা থাকবো
ফুলের গন্ধ ভরা বাতাস এসে
আমাকে পাগল করে বইবে
মুখ বুঝে মন কত সইবে...
এমন লগ্ন পেয়ে কি করে বলো
নিজেকে সরিয়ে আমি রাখবো...
চোখ মেলে দেখবো না তোমাকে
স্বপ্নের রঙে ছবি আঁকবো...
আর কত রাত একা থাকবো"

তার সে গানের কলিগুলো নি:শব্দও শুনে।কিন্তু কখনো গানের গভীরতা নিয়ে কোন চিন্তা করেনি সে।এদিকে নিশাত সে গান শুনে যতটা না স্বামী বিরহে কাতর তার চেয়ে বেশি শিহরিত হয়।এ দিকে সে গানের কথা নি:শব্দের কানে আসলেও তেমন একটা খেয়াল সে করে না।কিন্তু কয়েকবার শুনার পর আপনা-আপনি নি:শব্দের মুখ দিয়ে সে গানের কলিগুলো চলে আসে।
সে গান শুনতে গিয়ে একদিন নি:শব্দ নিজে নিজে চিন্তা করে যে,সত্যিই গানটির মধ্যে যেমন বিরহ আছে তেমনি আছে একা থাকার এক নীরব অস্ফুট যন্ত্রণা।সে বুঝতে পারে নিশাতের নাদুশ-নুদুশ নরম দেহ,উঁচু নিতম্ব,উর্বর বক্ষসহ প্রতিটি অঙ্গই যেন নীরবে কাঁদছে স্বামী বিরহের যন্ত্রণায়।

মুহূর্তে নি:শব্দের স্মৃতিতে ভেসে উঠে, নিশাতের সে দিনের পুকুর থেকে স্নান সেরে সিক্ত শরীরে কাপড় পাল্টানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি সে ফেরার দৃশ্যটা।কী চমৎকার! কী মোহনীয়! কী লাজুকময় ছিল সে দিনের সেই দৃশ্যটা!
সে দিন হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে সিক্ত পেটিকোটের উপর ভেসে ওঠা নরম নিতম্বের চঞ্চলতা,কিংবা উতাল - পাতালতা,ব্লাউজ আর ব্রা বিহীন শুধু সিক্ত ওড়নার উপর ভেসে উঠা পেঁপের মতো ঝুলানো,রসালো আমের বড়ো বড়ো স্তনযুগল ও তার বোটার দৃশ্য।কী আবেদনীই না ছিল সে দৃশ্যপট।

আবার মুহূর্তে ভেসে ওঠে অন্য দিনের আরেক আবেদনী দৃশ্য।গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম।দুপুর বেলা বাড়ির সবাই একটা বিয়েতে যায়।বাসায় অবস্থান করছিল শুধু নিশাত।
সেদিন নি:শব্দের একটা কাজ সেরে বাসায় ফিরতে প্রায় আড়াইটা বেজে গেল।বাসায় কেউ নেই, তাই এরমধ্যে নিশাত খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচন্ড গরমের দরুণ নিশাত গায়ের ব্লাউজ খুলে ফেলে ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ আসায় ফ্যানের বাতাসে তার বুকের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে পড়ে।আর নিচের দিকে শাড়িটা হাটুর উপর উঠে এসেছে।নিশাত এমনি ফর্সা সুন্দর।তার উপর কাপড় বিহীন অনাবৃত বক্ষ,এ অবস্থায় তাকে ফাঁক হওয়া পর্দার আড়াল থেকে দেখে নি:শব্দ যেন নিজেকে সামলে রাখতে পারছিল না।তবুও সে সেদিন নিজেকে সামলে নিয়েছিল।কিন্তু আজ এ বিরহের গান শুনে নি:শব্দের সে দিনগুলোর দৃশ্যপট যেন বারবার স্মৃতিতে মনে পড়ছে।নিশাত যেন এ গানের মধ্য দিয়ে স্বামীকে নয় তাকেই খুঁজে।কিন্তু এ যেন এক ভয়ঙ্কর অস্ফুট,অব্যক্তভাবে নিজেকে নিবেদন করা।নি:শব্দ না পারছে সইতে না পারছে কিছু করতে।নি:শব্দ ভাবে,নিশাতের কি আমার মনের মতো অবস্থা??? পরক্ষণে ভাবে, ধ্যাৎ,এগুলো কিছুই না,আসলে এটা আমারই মনের ভুল।তারপর........
[(চলবে), তাই ভালো লাগলে সঙ্গে থাকুন,কিছুটা বাস্তবতা মিশ্রিত,একটু অশ্লীল মনে হতে পারে,কিন্তু লেখক শিশুর জন্য সাহিত্য লিখতে বসেনি,একথা মনে রাখবেন]

Monday, February 12, 2018

যারা কম করে,তারাই বেশি সমালোচনা করে।

একদিন একটি প্রতিষ্ঠানের একজন লোককে দেখলাম খুব গর্ব করে বলতে,"এখানে এমন অনেক লোক আছে যারা সবসময় নিজের ভাড়াটা দেয়,কখনো সঙ্গে যাওয়া বন্ধুর গাড়ি ভাড়াটা পর্যন্ত দেয় না,অথচ ওই বন্ধুটা একই গাড়িতে করে তার সঙ্গেই গেল।"

তারপরে লোকটা এও বলছে,"এখানে এমনও অনেক লোক আছে যারা নিজেরা নাস্তা করে,কিন্তু জীবনে কখনো অন্য কাউকে নাস্তা করায় নি।এমনকি এমনও লোক আছে,যারা অন্যকে নাস্তা করাতে হবে বলে নিজেরাও নাস্তা না করে বসে থাকে।"
অথচ যে লোকটা এ কথাগুলো বলছে,তাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।সে জীবনে কখনো কাউকে নাস্তা করিয়েছে কিংবা বন্ধুর গাড়ি ভাড়া দিতে পকেট থেকে আগে মানি ব্যাগ বের করেছে,কিংবা গাড়ি ভাড়া দিয়েছে এরকম কখনো দেখিনি ।

যে কখনো কাউকে দাওয়াত দিয়ে দুটো ভাত খাওয়াইনি কিংবা খাওয়াতে পারেনি,সেই কিন্তু অন্যের দাওয়াত খেয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে।গরুর মাংসে তেমন লবণ হয়নি,মাছের টুকরোগুলো এত ছোট হয় তা আমি এই জীবনে প্রথম দেখলাম,আজকের দাওয়াতে না? আইটেম একটু কম ছিল, মাত্র দশটা আইটেম,এরকম আরো কত না কমেন্ট করে!!!এমন ভাব যে,"ওরা যেন আইটেমে সন্তুষ্ট আপ্যায়নে নয়।"
যাঁরা খুঁত ধরে,তাদের স্বভাবই হচ্ছে খুঁত ধরা।ওদেরকে ভালোবেসে হার্টটা বের করে দিলেও ওরা বলবে," হার্ট তো দিলে, কিন্তু ওটা হাতে করে দিলে কেন?ধুয়ে মুছে সুন্দর প্লেটে করে দিতে পারনি?"
কিন্তু এটা কখনো চিন্তা করে না যে,যে লোকটা হার্ট বের করে দিয়েছে, তার যে সক্ষমতা আর নেই।সে যে এখন জীবন্মৃত।।

কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে, আয়োজককে কত না কষ্ট করতে হলো।স্টেজ বা মঞ্চ সাজানো,প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া,সব কিছুর সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে তার দিন রাত কত না খাটুনি বা পরিশ্রম, কিন্তু সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,অথচ যে কিছুই করেনি,সে কিন্তু মঞ্চের এক পাশে বসে সমালোচনা করছে,স্টেজটা আর একটু সুন্দর হলে ভালো হতো,এখানে এ জায়গায় খুঁত ঐ জায়গায় খুঁত,আরও কত না সমালোচনা!!!

মনে হয় পৃথিবীটাই এরকমই যে,
"যারা কম করে,
তারাই যেন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে।"

Friday, August 11, 2017

দালালের খপ্পরে মানবতা

দালালের খপ্পরে মানবতা.......
জানতাম,মানবতা মানে এক স্রষ্টাতে বিশ্বাস।
জানতাম,মানবতা মানে,
"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় মন্দির কোন কাবা গৃহ নেই।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"জাতের কিরুপ দেখলাম না এ নজরে।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা।"
জানছি, মানবতা মানে, সুবিধাবাদী।
মানবতা মানে,এক প্রকার দালালী।
যারা সবচেয়ে বেশি দেখত,
আজ তারা সবচেয়ে বেশি অন্ধ।
যারা সবচেয়ে বেশি বলত কথা
তারা আজ সবচেয়ে বোবা।
মানবতা আইলানকে ১০০ ডিগ্রি
পাওয়ারি চশমা দিয়ে দেখে।
কিন্তু করিমকে দেখে না।
মানবতা আজ বন্য পশুকে (হাতি) দেখে
কিন্তু নিস্পাপ শিশুকে দেখে না।
"বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসা
নদীতে ফানার মতো লাশ ভাসা"
এসব আজ,বিশ্বে শুধু কবিতার লাইন।
তাই,
মানবতা আজ অন্ধ।
মানবতা আজ বোবা।
মানবতা আজ বধির।
মানবতা আজ ভাসছে সাগরে,
মানবতা আজ পুড়ছে আগুনে,
মানবতা আজ তীব্র রক্তাক্ত,
মানবতা আজ ক্ষত বিক্ষত,
মানবতা আজ........
মানবতা আজ........
মানবতা আজ আর্তনাদ.....
মানবতা আজ ত্রাহি ত্রাহি রব করছে
আকাশে বাতাসে।
জানতাম, দেওয়ালের এক প্রান্তে আঘাতে
অন্য প্রান্ত আহত হতো।
তবে কি আজ দেওয়ালের একতা নেই???
নাকি দেওয়ালের অনুভূতিও আজ নষ্ট???
নাকি সবকিছু আজ নষ্ট দালালের খপ্পরে
আর নষ্টদের দখলে?
(৩০.১১.২০১৬ খ্রি:)

Wednesday, August 9, 2017

বাবার স্মৃতি -০২

বাবা,তুমি আছ শ্রদ্ধায় হৃদয়ে আমার...
তখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি।ছোট চাচার বিয়ের দিন ধার্য হলো।ঐদিকে বিয়ের দিন আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার একটা পরীক্ষাও ছিল।আর ছোটবেলা থেকেই পড়া-লেখার প্রতি আমার একটু বেশিই ঝুঁক ছিল।কাজের প্রতি অনীহা দেখালে বা কাজ না করতে চাইলে বাবা ঠাট্টা করে বলতেন,"তুই পন্না ছাড়া কিছু গরিত ন পারিবি।"(তুই পড়া-লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবি না)।
তো বিয়ের দিন বিকেল দুইটা থেকে আমার পরীক্ষা শুরু।চাইলে সকালে গিয়ে বিয়ে খেয়ে আসতে পারতাম,কিন্তু পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিতে হবে বলে তা আমি করিনি।একটা ঘরের মধ্যে  প্রবেশ করে ভিতর থেকে হুক দিয়ে আমি পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিয়েছিলাম। তো যথাসময়ে প্রায় একটার দিকে চলে গিয়েছিলাম পরীক্ষার হলে।দুইটা থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছিল।পরীক্ষার মাঝখানে মনে মনে ভাবছিলাম,ছোট চাচার শখের বিয়ে আর আমার দ্বারা খাওয়া হলো না।সবাই গেল বিয়েতে, আর আমি গেলাম পরীক্ষা দিতে।এমনকি কাজিনদের মধ্যে যাদের পরীক্ষা ছিল,তারাও পরীক্ষা না দিয়ে চলে গেলো।
তারপর তিনঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হলাম।হল থেকে বের হয়ে স্কুলের সামনে একটা দোকান ছিল,যখন সে দোকান পর্যন্ত আসলাম অবাক না হয়ে পারলাম না,দেখলাম,বিদ্যালয়ের সামনের দোকানটাতে বাবা একা বসে আছে।আমি তো রীতিমত অবাক হয়েছিলাম,বাবা এখানে কি করে?বাবা না চাচার বিয়েতে গেছে?
আমাকে দেখার পর বাবা বললেন...
:পরীক্ষা শেষ হলো?
: হ্যাঁ,শেষ।
:তো পরীক্ষা কেমন হলো?
: ভালো হয়েছে।তারপর জিজ্ঞেস করলাম,তো তুমি এখানে কি করছ?বিয়েতে যাওনি?
: গেছি তো।কিন্তু তোকে ছাড়া কি বিয়ে খেতে পারি?তাই বিয়ে থেকেই তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে আসলাম।কথাগুলো হাটতে হাঁটতে বলেছিলেন।পরে বললেন,চলো,এবার দুজনে বিয়েতে যাই।কলম,বোর্ড(তখন পরীক্ষার হলে খাতার নিচে দেওয়ার জন্য একধরনের বোর্ড ব্যবহার করা হতো,এখনও মনে আছে আমারটা ছিল সবুজ কালারের) এগুলো ঘরে রেখে আস।
এটা বলে একটা রিকসা নিয়ে দুজনেই কনের বাড়িতে পৌছলাম,তখন সময় ছিল আছর শেষে প্রায় মাগরিবের কাছাকাছি।ততক্ষণে বরসহ সবাই খাবার খেয়ে ফেলেছে।পুরো বিয়ে বাড়িতে খাবার খাইনি শুধু আমি আর বাবা।
যেহেতু বাবা বরের ভাই ছিল, তাই অনেকে অনেকটা খুব আন্তরিকভাবেই বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল,আপনি হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলেন?আমরা আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম,এত খুঁজাখুঁজির পরও আপনাকে কোথাও পেলাম না।বাবা বললেন,আমার মেঝো ছেলেটা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল,তাই ওকে পরীক্ষার হল থেকে আনতে গিয়েছিলাম।
ততক্ষণে কিছু বিয়েতে কিছু তরিতরকারি শর্ট পড়েছিল,কিছু তরকারি অবশিষ্ট ছিল। তারপর শুধু বাবা আর আমি বস্তির পেন্ডেলে বসে যা বেঁচে গিয়েছিল সে অবশিষ্ট তরকারি দিয়েই দুজনে এক সঙ্গে বসেই বিয়ের খাবার খেয়েছিলাম।

বাবা এখন বেঁচে নেই।আমার বয়স এখন উনত্রিশ বছর।তখন আমার বয়স ছিল বার তের বছর।আজ এতো বছর হয়ে গেলো বাবার সে ত্যাগ,আমার জন্য বাবার হৃদয়ে এত্ত মমতা তা এখনও ভুলতে পারিনি।আসলে পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে প্রতিটি বাবাই সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।কিন্তু আমার কাছে আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই, যিনি শুধু তার নিজের নামটা কাঁপা কাঁপা হাতে দস্তখত করতে পারতেন,যিনি সেই দস্তখতে কী লিখেছে তা হয়তো আন্দাজে পড়তে পারলেও অক্ষরগুলো ঠিকভাবে চিনতেনই না,যাকে ছোটবেলায় কেউ হয়তো শিখিয়ে দিয়েছিল তার দস্তখতটা এরকমই হবে,এবং তা তিনি সারা জীবন মনে রেখে দিয়েছিলেন।আর বাবা এই রকম দস্তখত করতে পারে বলেই মাঝে মাঝে গর্ব করে বলতেন,আমি দস্তখত দিতে জানি,আমার বয়সের অনেকে তাও দিতে পারে না,আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর বাবা।বাবা আজও তোমাকে মিস করি ভীষণ।
বাবা,আজ তুমি যেখানে আছ,তুমি জান্নাতের সুখে সুখেই থেকো।দোয়া করি,আল্লাহ যেন তোমাকে কোনভাবেই সামান্য কষ্টও না দেয়।এই প্রার্থনাই আছে তোমার জন্য আমার হৃদয়ে সবসময়।।

Tuesday, August 8, 2017

বাবার স্মৃতি-০১

আরো কিছুদিন যদি বাবা ডাকতে পারতাম....

অনেকদিন আগে, প্রায় কমপক্ষে দশ বছর আগে, ডেল কার্নেগীর " দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন "-পড়েছিলাম।যেখানে পড়েছিলাম, কোন এক দুর্যোগের কারণে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ দুটো ছেলে মেয়েকে হারায়।তার ছোট ছেলেটাই একমাত্র জীবিত ছিল।তো লোকটা খুব বিমর্ষ, হতাশ এবং খুব যন্ত্রণায় একাকি দিন কাটাচ্ছিল।হঠাৎ তার ছেলেটা বাহানা ধরল তাকে একটা কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতে।কিন্তু লোকটা তো কাগজের নৌকা বানাতে পারে না।আর ছেলেটাও ছিল নাছোড়বান্দা।তাই সে ছেলেটাকে কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতে চেষ্টা করল।কিন্তু আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও সে নৌকা বানাতে পারলনা।কিন্তু এ আধা ঘণ্টা সময় পরে সে একটা বিষয় উপলব্ধি করল যে,সে যখন কাগজের নৌকা বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিল তখন তার স্ত্রী ও সন্তান হারানোর বেদনাটা একটু কমই মনে হয়েছিল।সে বুঝল, কাজই আমাকে এ একাকীত্ব আর তীব্র বেদনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।তাই সে কাজে লেগে যাওয়ার মাধ্যমে কিছুটা বেদনা লাগব করার চেষ্টা করল।(ঘটনাটা হুবহু মনে নেই, তবে ভাবটা এরকমই)
কয়েকদিন আগেই বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছেন।সারাদিন চেষ্টা করি কর্মের মধ্যে ডুবে থেকে বাবাকে কিছুটা হলেও  ভুলে থাকতে, কিন্তু পারি না।গাড়ীতে চড়তে চড়তে ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি কোন জায়গায় থেমে থাকলে বাবা তোমার কথা মনে পড়ে যায়,কর্মের ফাঁকে একাকী বসে থাকলে, কিংবা একাকী রাস্তায় চলতে চলতে বাবার কথা মনে পড়ে যায়।আর সবচেয়ে বেদনাটা বাজতে থাকে তখনই,যখন আমি  রাস্তায়, গাড়ীতে কিংবা জীবন চলার পথে চুল, দাঁড়ি পেকে যাওয়া কিছুটা সবল সতেজ সত্তোরোর্ধ কোন বৃদ্ধ মানুষকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গেই বাবার কথা মনে পড়ে যায়।আর মনে মনে বলি, বাবা,তুমি আর কয়েকটা বছর বেশি বেঁচে থাকতে পারনি?তোমাকে আর কিছুদিন বাবা ডাকতে পারলেই যেন বাবা ডাকার প্রকৃত স্বাদ এবং তৃপ্তি মিঠাতে পারতাম।  সংসারের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বচ্ছলতার মধ্যে বাবা ডাকার স্বাদ কী রকম তা মিটানোর আগেই যেন তুমি চলে গেলে।
তোমাকে বাবা বলে ডেকেছি,যখন সংসারে সবসময় অভাবটা লেগেই থাকত তখন।তুমি সারাজীবন আমাদের জন্য ত্যাগ,বিসর্জন, কষ্ট করে গেলে। সংসারে দুটো পয়সা বাঁচানোর জন্য কত কষ্ট তুমি নিজেই করেছ।আর নিজের কাঁধে আধুনগর বাজার থেকে লাকড়ির বোঝা নিয়ে এসে আমাদের ফোনে বলতে রিকসায় করে নিয়ে এসেছ।এমনকি লাকড়ির বোঝা কাঁধে আছে এমন সময় বড় ভাই ফোন করলে তুমি বলেছ," হ্যাঁ বাবা,লাকড়ি রিকসায় করে নিয়ে যাচ্ছি।"
নিজে গরু দিয়ে সারাজীবন চাষাবাদ করেছ।অথচ তুমি কখনো আমাকে চাষ করার জন্য লাঙ্গল ধরতে দাওনি।তাই চাষার ছেলে হয়েও এই হতভাগা এখনও জমি চাষ করতে জানে না।চাষ করতে গিয়ে সব কাজ নিজে করতে পারতেনা বলে ছোট ছোট কাজগুলো আমাদের দিয়ে করাতেন।এরপরও কখনো শখ করে  কোদাল দিয়ে মাটি কাটতে গেলেই কিংবা লাঙ্গল ধরলেই তুমি বলতে,ওগুলো তুমি পারবে না।তোমার গা ব্যাথা ও কোমরে ব্যাথা করবে। আর এটা বলে কোদালটা কেড়ে নিতে।
ধানের বড়ো বড়ো বোঝাগুলো তুমি বহন করতে আর আমাদের দিতে ছোট ছোট বোঝাগুলো।একবার মাথায় ধানের বোঝা তুমি তুলে দিয়েছিলে।কিছুদুর যেতে না যেতেই আমার গাড় ব্যাথা করছিল বলে পুরো ধানের বোঝা ফেলে দিয়েছিলাম ডুবাতে। তাতে তুমি একটুও বকা দাওনি বলে একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম।কিন্তু এখন তা মনে পড়লে অবাক হই।
পড়ালেখা শেষ করে একটা ছোটখাট চাকরি পাই। বড়োভাই মুটামোটি স্বচ্ছল হচ্ছিল।বড় ভাই বাবাকে অনুরোধ করেছিল, বাবা, তুমি আর চাষাবাদ করো না।তোমার আর চাষাবাদ করার আর দরকার নেই।
একথা তুমি আমার সামনে কতবারই না বলেছ।আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বারবার একটা কথাই প্রত্যাশা করেছ।আমিও যেন বড় ভাইয়ের মতো তোমাকে আর চাষ না করতে বলি।কিন্তু ছোটখাট চাকরি,কম মাইনের বেতন পাই বলে বাবা তোমাকে তা বলতে আমি সাহস করতে পারিনি।আর তুমি চাষাবাদও ছাড়নি।
কিন্তু যখন আমি একটু স্বচ্ছল হচ্ছিলাম। একদিন বাবাকে বলছিলাম, বাবা, তুমি আর চাষাবাদ করো না।তোমাকে আর চাষ করতে হবে না।বাড়ির যেটুকু জমি আছে সেটুকু মানুষ দিয়ে করাবে। লাঙ্গল তো দূরের কথা কোদালও ধরবে না।সেদিন তুমি কত খুশি হয়েছিলে,সে অনুভূতি প্রকাশে আমি অনেকটা সক্ষম নয়।আর তুমি সে বছর চাষাবাদ ছেড়েও দিলে।আর মানুষকে খুশি হয়ে বলতে লাগছিলে, আমার ছেলেরা আমাকে চাষ করতে নিষেধ করে দিয়েছে,আমার ছেলেরা আমাকে চাষ করতে নিষেধ করে দিয়েছে।।
আমি একটু হিসেবি ছিলাম।বাবা যখন আমার কাছে টাকা চাইতেন, আমি হিসেব নিতাম আর প্রশ্ন করতাম এত টাকা কেন লাগবে? কী কারণে?  ওখানে অতটাকা লাগে নাকি? এতটাকা দিলে হবে না?তারপর বলতাম, এতটাকা পাঠাব আমি এর বেশি পাঠাব না।তখন তুমি বলতে ঠিক আছে, তুমি যা পার তা পাঠাও, বাকিটা আমি ব্যাবস্থা করে নিব।আর বড় ভাই ছিল আমার ব্যতিক্রম, কখনো জিজ্ঞেস করতো না, এতটাকা কেন লাগবে?
তাই তুমি ভেবেছিলে আমি তোমার জন্য কিছুই করবো না।কিন্তু শেষে তোমার জন্য আমার চিকিৎসা খরচের পরিমাণ দেখে বলছিলে,বাবা আমার জন্য এতটাকা কেন খরচ করতেছ? আমি তো আর বেশিদিন বাঁচবনা।আমি তো তোকে নি:স্ব করে দিচ্ছি। তখন তোমাকে বলছিলাম,বাবা আমার জীবনের সমস্ত উপার্জন দিয়ে যদি তোমাকে  আমি দুটোমাস বেশি বাঁচিয়ে রাখতে পারি এবং দুটোমাস বেশি বাবা বলে ডাকতে পারি তাতেই আমার জীবন আর সমস্ত উপার্জন সার্থক হবে।এরপর তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।
  একটাসময় পর তোমার রোগটা  আরও বেড়ে যায়।একসময় যে মানুষটা দিনে এক পোয়া বা আধা কেজি চালের ভাত খেত সে মানুষটা এখন সারাদিনে দুমোটো ভাতও খেতে পারে না। তারপর ডাক্তার অনুরোধ করল পাখির মতো করে হলেও যেন দুটো দুটো করে সারাদিন ভাত খেতে।কিন্তু সেটুকুও তুমি খেতে পারছিলে না। তখন আমি তোমাকে বলেছিলাম,বাবা, তুমি দুটো দুটো হলেও খাওয়ার চেষ্টা করিও।তুমি না খেলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর আমি, আমরা বাবা বলে কাকে ডাকব? বাবা।তোমার খেতে ইচ্ছে না হলে আমার ও আমাদের  কথা স্মরণ করবে। তারপর তুমি খাওয়ার চেষ্টা করবে।একথা মোবাইলে বলার পর তোমার চোখে পানি এসেছিল কিনা জানি না? কিন্তু আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি বাবা।কারণ, বাবাকে এভাতে খেতে অনুরোধ করা অনেকটা বাবাকে বেঁচে থাকার জন্য আরো কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু না।তারপর আমার এ কথা শুনে তুমি হাজারো চেষ্টা করতে দুটো ভাত খাওয়ার জন্য।আর আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করলে তুমি বলতে, হ্যাঁ বাবা খেয়েছি।অনেক কষ্টে তোদের কথা মনে করে করে দুটো খেয়েছি।খেতে পারছিনা এরপরও তোদের জন্যই খেয়েছি।
শেষের দিকে মাকে নাকি তুমি বলেছ,,,,,,যে ছেলে আমার প্রত্যেকটি টাকার হিসেব নিতে চাইতো, এ ছেলে আমার জন্য ও আমাকে একটু বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং একটু সুস্থ রাখার জন্য এত্তকিছু করবে তা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।তখন মনে মনে বলি,বাবা তুমি পড়া লেখা না করার কারণে যেমন পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর আছে তা জান না।সেই সঙ্গে তোমার ছেলের বুকেও যে তোমার জন্য আরেকটা আলাদা মহাসাগর আছে তাও তুমি জানতে না,বাবা।
অবশেষে তুমি চলে যাওয়ার কয়েকদিন আগের ঘটনা। তুমি বিছানায় শুয়ে আছ,আর আমি তোমার পাশে, হাতে  হাতে তোমার মুষ্টা ধরে বসে আছি। হঠাৎ তুমি আমার দিকে তাকিয়ে শুয়ার মধ্যেই দুটো হাত প্রসারিত করে আমাকে তোমার বুকে একটু জড়িয়ে ধরতে কাছে ডাকলে। আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলে তুমি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে আমাকে বললে,"অবা আইতো আর ন পারীর" (বাবা আমি তো আর পারছি না)।তখন দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম।কারো মুখে কোন কথা নেই,ভাষা নেই,চারপাশে নিস্তব্ধতা। আছে  শুধু নিস্তব্ধতার মধ্যে দুজনের বুকফাঁটা অঝর নিস্তব্ধ কান্না।

(বাবা,আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিক.........)।
লেখক: জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ (বাংলা),চ.বি।
বাংলা শিক্ষক,
বিএএফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।[০৮/০৮/২০১৬]

Thursday, July 6, 2017

ভীতু আমি, সাহসী রিকসা !!!!

ভীতু আমি,সাহসী রিকসা....

উর্বশী বুক উঁচু করে,
বিকেলের কমলা রঙের রোদ
যখন তোমাকে আরো কমল করে তুলছিল,
মৃদু বাতাসে উড়ছিল তোমার সোনালী চুল
দীর্ঘদেহী তুমি
একা যখন হেঁটে আসছিলে সেদিন।।
কী করে বুঝাই,কত্ত ভালো লাগছিল
তোমাকে সেদিন।।
কাছে আস,চোখে চোখ রাখো,
মাঝে মাঝে কথা হয়,
কখনো বা পাশেও বসো,
সকালে তোমার এক চিলতে মিষ্টি হাঁসি
আমার সারা দিনের সুখ,স্বপ্ন ও কল্পনার
তৃপ্ত খোরাক।।
এত কাছে এসেও
কখনো আঁচল ধরে টানার সাহস করিনি।
কিন্তু সেদিন.....
রিকসার পাশ দিয়ে যেতে না যেতেই
রিকসাওয়ালা নয়,
অচেতন রিকসাটাই তোমার আঁচল
ধরে টান দিল!!!!!!!!!
তাই তো বলি
ভীতু আমি, সাহসী রিকসা।।

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post