Ad-1

Wednesday, July 31, 2019

অংকে ১০০ তে ১০০ পাওয়ার কাহিনী :

কথা হচ্ছিল একটা স্টুডেন্টের সঙ্গে আরেকটা স্টুডেন্টের অংকে ১০০ তে ১০ মার্কস পাওয়া নিয়ে।
স্টুডেন্ট:স্যার, অমুক নাকি অমুক স্কুলে থাকা অবস্থায় ১০০তে ১০০ বা ৯০ বা ৯৫ পেত।অথচ আমাদের স্কুলে এসে ১০০ তে সে ১০ ও পাচ্ছে না।এটা কিভাবে সম্ভব?
আমি:এত ছোট বাচ্চা, তুমি ওগুলো বুঝবে না।
স্টুডেন্ট: স্যার,বুঝায়ে বলেন না,স্যার? বুঝবো তো।
আমি : আচ্ছা বলছি,ওগুলো হলো কিছু কিছু বেসরকারি স্কুলে ঐ রকম নাম্বার দিয়ে দেয়।কারণ,মার্ক্স কম দিলে ঐ প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি ও বদনাম।তাই বেশি বেশি করে নাম্বার দিয়ে দেয়।
স্টুডেন্ট : (স্টুডেন্ট নাছোড় বান্দা) কি রকম ক্ষতি স্যার।
আমি : তুমি এত প্রশ্ন কর যে,তোমার যন্ত্রণা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।আচ্ছা বলছি তাহলে,শুন,
ঐ ছেলেটা যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল সেখানকার ক্লাস টু- থ্রি-ফোরের ভর্তি ফি প্রায় পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আরও কম বা বেশি হতে পারে।এরপর প্রতি মাসে বেতন দশ থেকে বার হাজার টাকা।যাতায়াত ভাড়া ৫০০০ টাকা।বাসায় টিচার রাখলে তার বেতন ৬০০০-৭০০০ টাকা।সব মিলিয়ে ঐ ছেলেটার পিছনে প্রতি মাসে প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা খরচ হয়।অবশেষে সেই ছেলেটা যখন ছয় মাস পর মিড টার্ম পরীক্ষায় কয়েকটা সাবজেক্টে ফেল করে বা কম মার্ক্স পায়,তখন সর্বপ্রথম সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় তার বাবা-মা।আক্ষেপ করে মা-বাবা প্রথমেই বলতে থাকে,তোর জন্য প্রতি মাসে এত টাকা খরচ করছি, আর তুই পরীক্ষায় এ নাম্বার আমাদের উপহার দিলি।বুঝছি তোর এই স্কুলে কোন উন্নতি হচ্ছে না।ফলে অভিভাবকরা অনেক সময় তার সন্তানকে ঐ স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে যায় অন্য স্কুলে।এরপর তার এ নাম্বার প্রাপ্তিতর অখুশি হয় হাউস টিউটর,তার আত্মীয় স্বজন সর্বোপরি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কারণ শিক্ষার্থী চলে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের।তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ খুঁজ নেয়, এ স্টুডেন্টার ফেইল করার প্রধান কারণ কী?কেন সে ফেইল করছে? সর্ববোপরি এই ফেইল করাচ্ছেটা কে?
খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পায়,এর জন্য দায়ী ঐ স্কুলের সাব্জেক্ট টিচার।তখন কর্তৃপক্ষ ঐ টিচারকে বিভিন্নভাবে প্রেসার দেয় স্টুডেন্টকে পরীক্ষায় বেশি বেশি নাম্বার দেওয়ার ও বেশি বেশি পাস করানোর।ফলে সাব্জেক্ট টিচার চিন্তা করে কী দরকার আমার এতো রিস্ক নেওয়ার? নাম্বার তো আর আমি আমার দাদার সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছি না।বরং নাম্বার দিলে দাদার সন্দুকে আরও সম্পদ বেড়ে যাবে।তাই নিজের বিবেকটাকে এক পাশে রেখে ঐ টিচার স্যকারাইনযুক্ত নাম্বার দিয়ে দেয়।
স্যাকারাইন যুক্ত এ জন্য বললাম যে,ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের যে পণ্যে বেশি চিনির প্রয়োজন সে পণ্যে সে পরিমাণ চিনি দিতে গেলে ব্যবসায়ীকে সে পণ্যের কমপিটেটিভ ব্যবসায় লস গুণতে হবে।তখন সে ব্যবসায়ীরা নাকি তাতে স্যাকারাইন ব্যবহার করে,কারণ ১০০ কেজি চিনির সমান ১ কেজি স্যাকারাইন।
তাই শিক্ষক স্টুডেন্টকে স্যাকারাইন যুক্ত নাম্বার দিয়ে ১০ পাওয়ার উপযুক্ত স্টুডেন্টকে ৯০/১০০ নাম্বার করে দিয়ে দেয়।কিভাবে দিয়ে দেয়,সেটা সে শিক্ষক ছাড়া অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও অন্য কারো জানার কথা নয়।ফলশ্রুতিতে সাব্জেক্ট টিচার খুশি,কর্তৃপক্ষ খুশি,অভিভাবক খুশি,আত্মীয়-স্বজন খুশি,সর্বোপরি হাউস টিউটরও খুশি।এই খুশি চক্রের কবলে স্টুডেন্ট তো আরও খুশি।
কিন্তু সে স্টুডেন্ট যখন বড় হয়ে ক্লাস ফাইভ বা কোন বোর্ড পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে চায় তখন তার অবস্থা বারটা বেজে যায়।তখন অভিভাবক মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, স্যার, ছেলেটা এখন অঙ্কে বা অমুক সাব্জেক্টে খুবই কম মার্কস পাচ্ছে কেন? ও তো আগে বা ছোট বেলায় খুব ভালো ছিল,জানেন স্যার, ও ছোট বেলায় বা অমুক স্কুলে থাকতে অঙ্কে বা অন্য সাব্জেক্টে ১০০ তে ১০০/৯০/৯৫ পেত।
তখন স্যার মনে মনে স্যাকারাইন যুক্ত নাম্বারের কথা ভাবে,আর মুখে বলে,ও তো আগে ছোট ছিল,ক্লাসও ছোট ছিল,এখন বড় ক্লাস বড় অংক,তাই হয়তো মাথায় কম ডুকতেছে বা বুঝতেছে।তাই বড় ক্লাসে গেলে নাম্বার একটু স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।এই বলে অভিভাবকদের সান্ত্বনা পুরস্কার দিয়ে দেওয়া হয়।ইতোমধ্যে যে, তাকে স্যাকারাইন নাম্বার খাওইয়া তার মাথা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে,তা কেউ এক বিন্দুও স্বীকার করবে না।
তো এখন কেন শিক্ষক সেই স্যাকারাইন নাম্বার দিচ্ছেন না?
কারণ সামনে যে বোর্ড পরীক্ষা ওখানে যে স্যাকারাইন নাম্বারের কোন মূল্য নেই।।
এ লেখার উদ্দেশ্য হলো,আপনার সন্তানের স্যাকারাইন নাম্বারে আপনি স্যাকারাইন খুশি না হয়ে সন্তান আসলে অত নাম্বার পাচ্ছে কিনা কিংবা উপযুক্ত কিনা তা বিবেচনা করুন।এবং তার যথাযথ গ্রোথ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করুন।বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ভেজাল মার্কা স্যাকারাইন নাম্বার নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রকৃত পক্ষে সে কত মার্ক্স পাওয়ার উপযুক্ত তা বিচার করুন।প্রয়োজনে পরীক্ষার খাতায় শিক্ষককে বলুন কম নাম্বার দিতে। বেশি স্যাকারাইন নাম্বার পেয়ে ও খেয়ে যেন তার মাথা নষ্ট না হয় সে দিকে লক্ষ রাখুন।সে সঙ্গে লক্ষ রাখুন,সন্তান আসলে বুঝে বুঝে পড়তেছে নাকি তোতা পাখির মতো মুখস্থ করতেছে।তাহলেই আপনার সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বলে আমি মনে করি।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post