Ad-1

Wednesday, July 10, 2019

বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন বা প্রভাব

কবিতায়ঃ

১. "আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি তখন তেরোশত নদী
গেয়ে ওঠে আমার সোনার বাংলা,
সহস্র পাখির কণ্ঠে জয় বাংলা ধ্বনিত হতে থাকে;
 
আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি তখন সাতই মার্চ
জেগে ওঠে,
 
শেখ মুজিব ঘোষণা করেন স্বাধীনতা।"[মহাদেব সাহা]


২.
 আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত,সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।


৩.
 স্বাধীনতা –আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা


শামসুর রাহমানের মুক্তিযুদ্ধের কবিতার মধ্যে বহুল প্রচারিত দুটো কবিতা হচ্ছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ এবং ‘স্বাধীনতা তুমি’। কবিতাদ্বয় যুগল কবিতা নামে পরিচিত। 

৪.
 তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র


৫.
 তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।


৬.
  আমরা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতাম। সব সময় মনে হতো কেউ যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। ঘুমের ভেতর চিৎকার করে উঠতাম কোনো কোনো রাতে। বধ্যভূমির ধারে বেঁধে রাখা জীবজন্তুর অনুরূপ আমরা আতঙ্কে জেনেছি নিত্যসঙ্গী বলে। এমন কোনো দিনের কথা মনে করতে পারি না, যেদিন হত্যা কিংবা ধরপাকড়ের কোনো না কোনো খবর কানে না আসতো।’ এই ছিল যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের বাসত্মবচিত্র। এই বিভীষিকাময় সময়ে লেখা তাঁর একটি কবিতায় যুদ্ধের চিত্র প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। যেমন –

কখনো নিঝুম পথে হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে কেউ গুলির আঘাতে।
মনে হয়, ওরা গুলিবিদ্ধ করে স্বাধীনতাকেই
দিন দুপুরেই জীপে একজন তরম্নণকে কানামাছি করে
নিয়ে যায় ওরা।
মনে হয়, চোখ বাঁধা স্বাধীনতা যাচ্ছে বধ্যভূমিতে। বেয়নেটবিদ্ধ লাশ বুড়িগঙ্গায় কি শীতলক্ষ্যায় ভাসে, মনে হয়, স্বাধীনতা লখিন্দর যেন,
বেহুলা বিহীন,
জলেরই ভেলায় ভাসমান।


৭. ঘাতকদের বর্বরতা দেখে আমাদের কবিরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কবিতার পঙ্ক্তিতে সেই ক্ষোভ ও ঘৃণা আরো তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা কাব্যগ্রন্থের ‘রক্তসেচ’ কবিতায় তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। 


‘টিক্কার ইউনিফর্মে শিশুর মগজ
যুবকের পাঁজরের গুঁড়ো।
নিয়াজীর টুপিতে রক্তের প্রস্রবণ
ফরমান আলীর টাইএর নীচে ঝুলন্ত তরম্নণী…
তুমি কি তাদের কখনো করবে ক্ষমা?’ (‘রক্তসেচ’)


৮. . শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জন সমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতা খানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।


০৯. স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।


১০. স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।


উপন্যাসে

আনোয়ার পাশা --- 'রাইফেল রুটি আওরাত'(১৯৭৩)

শওকত ওসমান লিখেছেন ৪টি  উপন্যাস ---জাহান্নাম হইতে বিদায়(১৯৭১),নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩),দুই সৈনিক (১৯৭৩),জলাঙ্গী (১৯৭৬)

সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন --- নীল দংশন(১৯৮১),নিষিদ্ধ লোবান(১৯৮১).

সেলিনা হোসেন লিখেছেন -- হাঙর নদীর গ্রেনেড (১৯৮৭).

রশীদ হায়দারের লিখেছেন --- 'নষ্ট জোছনায় এ কেমন অরণ্য (১৯৮২)।

হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন -- শ্যামল ছায়া(১৯৭৩), সৌরভ (১৯৮৪)

ইমদাদুল হক মিলন লিখেছেন -- 'ঘেরাও(১৯৮৪)।

শামসুর রাহমান লিখেছেন -- ' অদ্ভুত আঁধার এক(১৯৮৫).

আবু জাফর শামসুদ্দিন লিখেছেন -- 'দেয়াল (১৯৮৬)

হারুন হাবিব লিখেছেন - 'প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম(১৯৮২).

 

নাটকেঃ

১৯৭১ সালেই মমতাজ উদদীন আহমদ লিখেছেন ৪টি নাটক

* স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা,এবারের সংগ্রাম,স্বাধীনতার সংগ্রাম,বর্ণচোর।

সবগুলো নিয়ে গঠিত ও প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ " স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা"

এছাড়াও তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে ধরা যায়ঃ 

'বিবাহ', ও 'কি চাহ শঙ্খচিল'।

আলাউদ্দিন আল আজাদ লিখেছেন --'নিঃশব্দ যাত্রা(১৯৭২), নরকে লাল গোলাপ(১৯৭৪).

জিয়া হায়দার লিখেছেন -- ' সাদা গোলাপে আগুন(১৯৮২),

নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছেন --- 'যে অরণ্যে আলো নেই(১৯৭৪),আমি বীরাঙ্গনা বলছি(১৯৯৬)

সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন -- 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়(১৯৭৬)।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post