Ad-1

Showing posts with label বাংলা (লিখিত পরীক্ষা). Show all posts
Showing posts with label বাংলা (লিখিত পরীক্ষা). Show all posts

Thursday, June 23, 2022

জীবনানন্দ দাশ

সকলেই যার যার অবস্থানকে আলাদা করে চিহ্নিত করে যাবার চেষ্টা করেছেন।সকলে না হলেও অনেকে সফল হয়েছেন।এক্ষেত্রে সবার আগে যার নামটি আগে উঠে আসে তিনি আর কেউ নন - কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি এলেন,দেখলেন এবং জয় করলেন।জীবনানন্দ দাশ শুধু এলেন,দেখলেন ,জয় করলেন - এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলেন না।অন্যকেও দেখালেন কিভাবে জয়ী হতে হয়।রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত দেখালেন গদ্য কবিতার পথ।প্রভাব বিস্তার করলেন রবীন্দ্র চৈতন্যে।বাংলা সাহিত্যে এ এক অভাবনীয় ঘটনা।রবীন্দ্রনাথ সর্বাংশে আধুনিক মানুষ।তিনি জীবনানন্দকে মেনে তো নিলেনই,মনেও নিলেন অবলীলায়।

বুদ্ধদেব বসু জীবনান্দকে বলেছিলেন 'প্রকৃত কবি এবং প্রকৃতির কবি'। 
জীবনানন্দের জগৎ প্রায় সম্পূর্নরুপে চোখে দেখার জগৎ।তাঁর কাব্য বর্ণনাবহুল,তাঁর বর্ণনা চিত্রবহুল,এবং তাঁর চিত্র বর্ণবহুল - এটুকু বললেই জীবনানন্দের কবিতার জাত চিনিয়ে দেয়া সম্ভব হতে পারে।বর্ণনাকে পাঠকের মনে পৌছিয়ে দেওয়ার বাহন তাঁর উপমা।উপমার এমন ছড়াছড়ি আজকাল কোনো কবিতেই দেখা যায় না।তাঁর উপমা উজ্জ্বল, জটিল ও দূরগন্ধবহ।এক-একটি উপমাই এক-একটি ছোটো কবিতা হতে পারে।তিনি যে জাতের কবি তাতে উপমাবিলাসী না হয়ে তাঁর উপায় নেই,অর্থাৎ উপমা তাঁর কাব্যের কারুকার্য মাত্র নয়,উপমাতেই তাঁর কাব্য। মনে পড়ে বহুকাল পূর্বে জীবনানন্দ একবার কোন এক পত্রিকায় লিখেছিলেন, 'উপমাই কবিত্ব' 

জীবনানন্দবাবুর কাব্যরসের যথার্থ উপলব্ধি একটু সময়সাপেক্ষ ; তাঁর কবিতা একটু ধীরে-সুস্থে পড়তে হয়,আস্তে-আস্তে বুঝতে হয়।জীবনানন্দ বাবুর যে সুরটি আগাগোড়া বেজেছে, তাকে ইংরেজ সমালোচকের ভাষায় ''renascence of wonder ' বলা যায়। তাঁর ছন্দ,শব্দযোজনা ও উপমা ইত্যাদিকে চট করে ভালো কি মন্দ বলা যায় না- তবে 'অদ্ভুত' স্বচ্ছন্দে বলা যায়।

এ কথা ঠিক যে তিনি (জীবনানন্দ)  পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত আগাগোড়া রোমান্টিক। এক হিসেবে তাঁকে প্রেমেন্দ্র মিত্রের antithesis বলা যেতে পারে।

'শিকার' কবিতায় বত্রিশটি পংক্তির মধ্যে পাওয়া যাবে চৌদ্দটি উপমা 'মতো' শব্দের তেরো বার ব্যবহার,'হাওয়ার রাত'-'মতো' সংখ্যা আট।


জীবননান্দ দাশের বনলতা সেন(১৯৪২) কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ৩০টি।তার মধ্য থেকে ভালো লাগা কবিতার লাইনগুলো নিম্নরুপ :
১. চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রেরপর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।...........[বনলতা সেন]

২. আমি যদি হতাম বনহংস;
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;

আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রূপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-
তোমার পাখনার আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খই ক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা,।।......[আমি যদি হতাম]

৩.কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়
পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;
....
আমারো ইচ্ছে করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো
গেলাসে-গেলাসে পান করি,........[ঘাস]

৪. হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!................[হায় চিল]

৫. "কান্তারের পথ ছেড়ে সন্ধ্যার আঁধারে
সে কে এক নারী এসে ডাকিল আমারে,
বলিল , তোমারে চাই :"
***চোখে তার
যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!
স্তন তার
করুণ শঙ্খের মতো- দুধে আর্দ্র – কবেকার শঙ্খিনীমালার!
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।।।.............[শঙ্খমালা]

৬. "যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনাদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে".....
ভারতসমুদ্রের তীরে
কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে
অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে
আজ নেই ,কোনো এক নগরী ছিল একদিন,
কোন এক প্রাসাদ ছিল 
মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ....(নগ্ন নির্জন হাত)  

৭.প্রদীপ নিভায়ে র’বো বিছানায় শুয়ে;
অন্ধকারে ঠেস দিয়ে জেগে র’বো।
বাদুড়ের আঁকাবাঁকা আকাশের মতো।
স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বলো তো।
 ....( স্বপ্নের ধ্বনিরা)

Wednesday, March 2, 2022

বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের
১. প্রাচীন যুগ(৬৫০-১২০০)
* চর্যাপদ আবিষ্কার করেন -১৯০৭ সালে।
* করেছেন - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
* 'হাজার বছরের পুরান বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহাকোষ'- নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।
* চর্যাপদের মোট কবি - ২৪ জন।
* মোট গান বা পদ - ৫১ টি।
* পদ পাওয়া যায়নি - ৩টি (২৪,২৫ ও ৪৮)
* শেষাংশ পাওয়া যায়নি - ২৩ নং পদের।
* সর্বোমোট পদ পাওয়া যায় - সাড়ে ছেচল্লিশটি।
* সবচেয়ে বেশি পদ লিখেছেন - কাহ্নপা
* চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
* প্রথম পদটির রচয়িতা - লুইপা

২. মধ্যযুগ(১২০১-১৮০০)
* মধ্য যুগে দুই ধরনের সাহিত্য রচিত হতে দেখা যায়
১. মৌলিক রচনাঃ-
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
বৈষ্ণব পদাবলী।
মঙ্গলকাব্য।
জীবনী সাহিত্য।
লোক সাহিত্য।
২. অনুবাদ সাহিত্যঃ-
সংস্কৃত থেকে অনূদিত[রামায়ণ, মহাভারত, ভগবত]
আরবি-ফারসি-হিন্দি ভাষা থেকে অনূদিত[রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান]

 শ্রীকৃষ্ণকীর্তনঃ-
* মধ্যযুগের প্রথম মহাকাব্য।
* রচয়িতা - বড়ু চণ্ডীদাস।
* ১৩ খণ্ডে লিখিত।
* উদ্ধার করেন- বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ সালে।

 বৈষ্ণব পদাবলীঃ-
* রাধাকৃষ্ণের প্রেম লীলা ও শ্রীচৈতন্যলীলা বিষয়ক কবিতা।
* বিখ্যাত কবি- চণ্ডীদাস,বিদ্যাপতি জ্ঞানদাস,গোবিন্দ দাস।

 মঙ্গল কাব্যঃ-

মঙ্গল কাব্য ৪ ধরনের
মনসা মঙ্গল - কবি কানাহরি দত্ত।
চণ্ডীমঙ্গল - আদি কবি মানিক দত্তশ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
অন্নদামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি - ভারতচন্দ্র রায়।
** চণ্ডী ও অন্নদা অভিন্ন,- একই দেবীর দুই নাম।
ধর্মমঙ্গল -ধারার আদি কবি ময়ূর ভট্ট।


 জীবনী সাহিত্যঃ-
* শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর শিষ্যদের জীবনী নিয়ে লিখিত গ্রন্থ।
* প্রথম জীবনী কাব্য - বৃন্দাবন দাসের 'শ্রীচৈতন্য ভাগবত'
* চৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থকে 'কড়চা' বলে।
* বিখ্যাত জীবনী গ্রন্থ 'চৈতন্য-চরিতামৃত'।লেখক কৃষ্ণদাস কবিরাজ।
* বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে শৈব ধর্ম মিলে হয় 'নাথ ধর্ম'
* বিখ্যাত কবি - শেখ ফয়জুল্লাহ,তার কাব্য 'গোরক্ষবিজয়'


 অনুবাদ সাহিত্যঃ-
*
 রামায়ণের প্রথম অনুবাদক - কৃত্তিবাস ওঝা।
* বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি - চন্দ্রাবতী।
* তিনি রামায়ণ অনুবাদ করেন - সপ্তদশ শতকে।
* মহাভারত মূল রচয়িতা - কৃষ্ণদ্বৈপায়ন।
* ১ম অনুবাদক ষোল শতকে - কবীন্দ্র পরমেশ্বর।
* সতেরো শতকে অনুবাদ করেন - কাশীরাম দাস।

রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানঃ-;
* প্রথম মুসলমান কবি - শাহ মুহাম্মদ সগীর।
* পনের শতকে লিখেন - ইউসুফ-জোলেখা।
* ষোল শতকে লিখেন - দৌলত উজির বাহরাম খান।
* তিনি লিখেন - 'লায়লী মজনু'
* সতের শতকে আব্দুল হাকিম লিখেন - 'নূরনামা' কাব্য।

 আধুনিক যুগঃ-
* 'কল্লোল'- পত্রিকা প্রকাশিত হয় - ১৯২৩ সালে।
* 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ'- প্রতিষ্ঠিত হয় - ১৯২৬।
* এর মুখপত্র ছিল - 'শিখা'


 বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব হলোঃ-
১. জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)
২. অমীয় চক্রবর্তী(১৯০১-৮৭)
৩. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)
৪. বুদ্ধদেব বসু (১৯০৭-৫৬)
৫. বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২)

জীবনে অমিয় সুধা পান করতে হলে বুদ্ধ ও বিষ্ণুর কাছে যাও। 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোধ্যায়ঃ-(১৮৩৮-১৮৯৪)
সাহিত্য সম্রাট, বাংলার স্কট।
ছদ্মনামঃ- কমলাকান্ত, রামচন্দ্র।
হিন্দু ধর্মানুরাগীরা উপাধি দেয় - ' ঋষি' 
দুর্গেশনন্দিনী বিপরীতে লিখেন সৈয়দ ইস্মাইল হোসেন সিরাজী লিখেন - রায়নন্দিনী।
ত্রয়ী উপন্যাস হলোঃ- আনন্দমঠ(১৮৮২),দেবী চৌধুরাণী(১৮৮৪),সীতারাম(১৮৮৭)।
টেকনিকঃ- সীতা দেবীর আনন্দ নেই।
 
প্রমথ চৌধুরীঃ-(১৮৬৮-১৯৩৮)
বাংলা ভাষায় ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক।
চলিত রীতিতে লেখা প্রথম গ্রন্থ- 'বীরবলের হালখাতা'।
'চার ইয়ারি কথা '- গল্পগ্রন্থের মূল কাহিনি 'চার বন্ধুর প্রেমের কাহিনি। 
১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথের ভাতিজী ইন্দিরা দেবী(সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে) বিয়ে করেন। 
 
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়(১৮৭৬-১৯৩৮)
পিতার নামঃ- মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মাতাঃ- ভুবনমোহিনী দেবী।
উপাধিঃ- অপরাজেয় কথাশিল্পী। 
ডাকনামঃ- ন্যাঁড়া।
ছদ্মনামঃ- 
১. অনিলা দেবী    ২. অনুরূপা দেবী   ৩. অপরাজিতা দেবী     ৪. সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়    ৫. পরশুরাম (রাজশেখর বসুর ছদ্মনামও এটা ছিল)  ৬. শ্রীকান্ত শর্মা  ৭. শ্রী চট্টোপাধ্যায়। 
'বড়দিদি'(১৯১৩)- উপন্যাসের পূর্বনাম ছিল 'শিশু'। ১ম উপন্যাস।
দেবদাস'- উপন্যাসটি নিয়ে শরৎচন্দ্রের দ্বিধা ছিল বলে ১৭ বছর প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিল।উপন্যাসটি তিনি রচনা করেছিলেন মাতাল হয়ে এবং বন্ধু প্রমথনাথ ভট্টাচার্যকে ১৯১৩-তে লেখা এক চিঠিতে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, " ওই বইটা একবারে মাতাল হইয়া বোতল খাইয়া লেখা।"
বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিশোর চরিত্র 'ইন্দ্রনাথ'।(শ্রীকান্ত'- উপন্যাস)। 
'পথের দাবী '(১৯২৬)- উপন্যাসের প্রধান চরিত্র 'সব্যসাচী'।
নাটক
'ষোড়শী '- বনাম দেনা-পাওনা উপন্যাসের নাট্যরুপ।
'রমা'- বনাম পল্লী সমাজ উপন্যাসের নাট্যরুপ। 
বিজয়া'- বনাম দত্তা উপন্যাসের নাট্যরুপ।
'বিরাজ বউ'।
অনিলা দেবী ছদ্মনামে লিখেছিলেন- 'নারীর মূল্য' প্রবন্ধটি।
 
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)
শুদ্ধতম কবি'- আখ্যা দিয়েছেন অন্নদাশঙ্কর রায়।
তাঁর সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া উপন্যাস হলো - কল্যাণী।
চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুতে লেখেন 'দেশবন্ধুর প্রয়াণে'।
ছদ্মনাম - 'কালপুরুষ '
পারিবারিক পদবী - 'কালপুরুষ '।
কবিতার কথা - প্রবন্ধটি মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল।
 
অমিয় চক্রবর্তীঃ-(১৯০১-১৯৮৬)
পঞ্চপাণ্ডবের একজন
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 
কাব্যগ্রন্থঃ- 'খসড়া','এক মুঠো',মাটির দেয়াল, ঘরে ফেরার দিন,পুষ্পিত ইমেজ,হারানো অর্কিড ইত্যাদি। 
ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০)-পান-- চলো যাই গদ্যগ্রন্থের জন্য। 
 
শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)
নাগরিক কবি।
তাকে বলা হয় 'সার্বক্ষণিক কবি'।
ডাক নামঃ- বাচ্চু।
ছদ্মনামঃ- মজলুম আদিব, মৈনাক,  সিন্দাবাদ, জনান্তিক, লিপিকার,নেপথ্যে, চক্ষুষ্মান।
'বন্দি শিবির থেকে'- গ্রন্থটি লিখেন 'মজলুম আদিব'- ছদ্মনামে।
বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি হলে যে কবিতাটি লিখেন - টলেমেকাস।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ - 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'
অন্যান্য কাব্য গ্রন্থঃ- প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে,উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ,নিজ বাসভূমে,ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা,এক ধরনের অহংকার।
প্রথম উপন্যাস - 'অক্টোপাস'।
উপন্যাসঃ- অক্টোপাস,নিয়ত মন্তাজ, অদ্ভুত আঁধার এক, এলো সে অবেলায়। 
শিশুতোষ গ্রন্থঃ- এলাটিং বেলাটিং, ধান ভানলে কুঁড়ো দেব,গোলাপ ফুটে খুকির হাতে।
আত্মস্মৃতিঃ- স্মৃতির শহর, কালের ধুলায়ে লেখা।
 
আলাউদ্দিন আল আজাদ(১৯৩২-২০০৯)
উপজাতীয়দের জীবন নিয়ে রচিত লেখা উপন্যাস - কর্ণফুলী(১৯৬২)।(এটার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার পান)
সিলেটের চা-বাগানীদের জীবন কাহিনি নিয়ে লেখা - জমাখরচ।
বিখ্যাত উপন্যাস - 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র'। এটার উপর নির্মিত চলচ্চিত্র - 'বসুন্ধরা '। অভিনয় করেন - ববিতা ও ইলিয়াস কাঞ্চন।এটি কাঞ্চনের অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। 
মুক্তি যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা গ্রন্থের নাম - 'ফেরারি ডায়েরী।
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক - 'নরকে লাল গোলাপ'।
বিখ্যাত উপন্যাসঃ- ক্ষুধা ও আশা,  শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথম দিন।
বিখ্যাত ছোটগল্পঃ- ধানকন্যা,  জেগে আছি, অন্ধকার সিঁড়ি,আমার রক্ত আমার স্বপ্ন। 
বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থঃ- মানচিত্র, লেলিহান পাণ্ডুলিপি। 
 
সুকান্ত ভট্টাচার্য(১৯২৬-১৯৪৭)
বাল্যবন্ধু ছিল - কবি অরুনাচল।
জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত একমাত্র গ্রন্থ সংকলন- আকাল(১৯৪৩)। এটি পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে লেখা।
তাঁকে ''Flower and Fire of Renaissance '' বলা হয়। 
কবির মৃত্যুর তিনমাস পর প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ - ছাড়পত্র(১৯৪৮)।
অন্যান্য কাব্যগ্রন্থঃ- ঘুম নেই, পুর্বাভাস, হরতাল,অভিযান, হরতাল, মিঠেকড়া, গীতিগুচ্ছ।
 
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস(১৯৪৩-১৯৯৭)
ডাকনাম- মঞ্জু।
প্রথম প্রকাশিত ও বিখ্যাত উপন্যাস 'চিলেকোঠার সেপাই'(১৯৮৭)। উপজীব্য বিষয় - ৬৯ এর গণ আন্দোলন। 
এটি একটি - মহাকাব্যোচিত উপন্যাস।
খোয়াবনামা - উপন্যাস শ্রমজীবীদের জীবনালেখ্য।
প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ - 'অন্য ঘরে অন্য স্বর'(১৯৭৩).
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গল্প - 'জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল', 'রেইনকোট', 'মিলির হাতে স্টেনগান'।
প্রবন্ধ সংকলনঃ- 'সংস্কৃতির ভাঙা সেতু'(১৯৯৮)
 
জ্ঞাতব্যঃ
* সংস্কৃতির কথা 
 
আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)
প্রকৃত নামঃ- মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। 
প্রথম উপন্যাসঃ- ডাহুকী। 
শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থঃ- 'লোক লোকান্তর', 'সোনালী কাবিন'। 
'সোনালী কাবিন'- সনেট জাতীয় কাব্য।
অন্যান্য কাব্য গ্রন্থঃ- বখতিয়ারের ঘোড়া, কালের কলস,পাখির কাছে ফুলের কাছে,
উপন্যাসঃ- ডাহুকী, কবি ও কোলাহল, আগুনের মেয়ে,উপমহাদেশ (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)। 
গল্পঃ- পানকৌড়ির রক্ত,সৌরভের কাছে পরাজিত,গন্ধবণিক।
 
জ্ঞাতব্যঃ- 
* 'আগুনের মেয়ে '- উপন্যাসের রচয়িতা - আল মাহমুদ। 
* 'আগুন পাখি'- উপন্যাসের রচয়িতা - হাসান আজিজুল হক
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

Monday, November 23, 2020

উপন্যাস আলোচনা

১. দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)

* দুটি খণ্ড(১ম খণ্ডে-২১,২য় খণ্ডে-২২ টি পরিচ্ছেদ)
* জগৎসিংহঃ মানসিংহের পুত্র/কৃষ্ণপুর থেকে মান্দারন যাচ্ছিলেন।
* তিলোত্তমাঃ গল্পের নায়িকা/জগৎসিংহকে ভালোবাসে/
* বীরেন্দ্র সিং- তিলোত্তমার বাবা/মান্দারনের রাজা/
* বিমলাঃ তিলোত্তমার মা/
* অভিরাম স্বামীঃ বিমলার বাবা/
* আশামনিঃ বিমলার দাসী/
* কতলু খাঁঃ পাঠান নবাব/উৎসবের রাতে নিহত/
*
  আয়েষাঃ কতলু খাঁর মেয়ে/জগৎসিংহকে ভালোবাসে/আত্মহত্যা করতে গিয়ে করেনি/
* ওসমানঃ কতলু খাঁর সেনাপতি/
* শৈলেশ্বর মন্দিরঃ
* ২৩৩ পৃষ্ঠার মধ্যে দুর্গেশনন্দিনী শব্দটি আছে একবার/২৯ পৃষ্ঠায়।

০২. কপালকুণ্ডলা(১৮৬৬)
*
 নবকুমারঃসপ্তগ্রাম নিবাসী/কাঠ আনার ব্যবস্থা/একবার বলো তুমি অবিশ্বাসী নও/
*
 কপালকুণ্ডলাঃপলায়ন করো/পালকিতে ভ্রমণ/মতিবিবি কর্তৃক প্রদত্ত অলংকার  ভিক্ষুককে প্রদান/
* কাপালিকঃনরবলি দেবে নবকুমারকে/একবছর ধরে অনুসন্ধান/ভৈরবীর কাছে কপালকুণ্ডলাকে বলি দিতে চায়/গোপণপত্র/
* অধিকারীঃ
* শ্যামাসুন্দরীঃ কপালকুণ্ডলার ননদ/
*
 মতিবিবিঃআসল নাম পদ্মাবতী/কৈশোরে বিবাহ/বাবার বাড়ি থাকত/রামগোবিন্দ ঘোষালের কন্যা/১৩বছর বয়সে উড়িষ্যা/মুসলমান হওয়ার পর নাম হয় লুৎফুন্নেছা/পরে ছদ্মবেশ ধারণ করেন মতিবিবি নামে/যুবরাজ সেলিমের প্রণয়ভোগিনী ছিল/সাম্রাজ্ঞী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা /খসরুকে সিংহাসনে বসানোর ষড়যন্ত্র/মেহেরুন্নেসার মনের কথা জেনে নেয়/
* মেহেরুন্নিসাঃ যুবরাজ সেলিমের গোপণ প্রণয়িণী/
* বিল্বপত্র
* পন্থশালা

০৩. চন্দ্রশেখর(১৮৭৫)
১. শৈবলিনীঃ
২. প্রতাপঃ
৩. চন্দ্রশেখরঃ
৪. ফস্টরঃ
 

এটা একটি ঐতিহাসিক রোমান্সধর্মী উপন্যাস।
কেন মরিব? প্রতাপ আমার কে!!!
উপন্যাসের মূল চরিত্র শৈবলিনী।
এই উপন্যাসের চালিকা শক্তি শৈবলিনীর জীবন তৃষ্ণা।
প্রত্যেকটা উপন্যাস দাঁড়িয়ে থাকে একটা প্লটের উপর।প্লটটাকে উপন্যাসের ভিত্তি বলা যেতে পারে।
বঙ্কিমের নীতি প্রিয়তা।বিষবৃক্ষে কুন্দনন্দিনীকে বিষ খেয়ে মরতে হয়েছে,কৃষ্ণকান্তের উইলে রোহিনীকে পিস্তলের সামনে মরতে হয়েছে,চন্দ্রশেখরে শৈবলিনীকে বলপূর্বক বিবাহিত জীবনে ফিরতে হয়েছে।হৃদয়ের উপর নীতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত।বঙ্কিম মনে করতেন সাহিত্য সমাজের জন্য,সমাজের হিতের জন্য,কিন্তু তাই বলে বঙ্কিম সাহিত্যে মানব হৃদয়কে অস্বীকার করতে পারেন নি।
মনের সঙ্গে নীতির লড়াইয়ে বঙ্কিম শেষ পর্যন্ত নীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ পারেননি বিনোদিনী আর বিহারির বিয়ে দিতে।

০৪. কৃষ্ণকান্তের উইলঃ(১৮৭৮)
হরিদ্রা গ্রাম
কৃষ্ণকান্তঃ তিন ছেলে।
* হরলাল (তিন আনা)
* বিনোদলাল (তিন আনা)
* শৌলবতী,মেয়ে (এক আনা)
* স্ত্রী (এক আনা)
রামকান্তঃ কৃষ্ণকান্তের ভাই।
* গোবিন্দলাল (আট আনা)
* ভ্রমর (গোবিন্দলালের স্ত্রী)
*  মাধবীনাথ (ভ্রমরের পিতা)
*  নিশাকর ( মাধবীনাথের বন্ধু)
* শশীকান্ত ( গোবিন্দলালের ভাগিনেয়).
ভ্রহ্মানন্দ ঘোষ(উইল লেখক)
* রোহিনী ( ভ্রহ্মানন্দের ভ্রাতুষ্কন্যা), সে বিধবা ছিল।
কৃষ্ণকান্ত উইল করে।তা মেনে না নিয়ে তার বড় ছেলে হরলাল রোহিনীকে দিয়ে তা চুরি করিয়ে নকল উইল দিয়ে আসে।পরে রোহিনীকে বিয়ে না করলে রোহিনী পুনরায় উইল দিতে গিয়ে ধরা পড়ে।পরে রোহিনীর সঙ্গে প্রেম হয়।একসময় পালিয়ে যায়।সেখানে নিশাকরের ছলনায় শিকার হলে গোবিন্দলাল তাকে হত্যা করে।পরে ভ্রমরের কাছে ফিরে আসে।।

০৫. চোখেরবালি(১৯০৩)মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসঃ
* মহেন্দ্রঃ গল্পের নায়ক।
* আশালতাঃ মহেন্দ্রর স্ত্রী।
* বিনোদিনীঃ বিধবা
* বিহারীঃ মহেন্দ্রের কাকাতো ভাই।
* রাজলক্ষ্মীঃ মহেন্দ্র এর মা।
* অন্নপূর্ণাঃ মহেন্দ্র এর চাচী।
বিয়ে করবে না বলেও বিয়ে করেছে আশাকে।পরে বিধবা বিনোদিনীর প্রেমে পড়ে যায় মহেন্দ্র।অন্যদিকে বিনোদিনীর ভালো লাগে বিহারিকে।আবার বিহারির ভালো লাগে আশাকে।একটা জটিল প্রেমের কাহিনি হলো চোখের বালি উপন্যাস।

০৬. নৌকাডুবি (১৯০৬)

চরিত্র ও তথ্য সমূহ
১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/
২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/
৩. কমলাঃ
৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ
* গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড় 

০৭. শেষের কবিতা (গ্রন্থাকারে প্রকাশ-১৯২৯)
* উপন্যাসের পূর্বনাম 'মিতা'।প্রথম প্রকাশিত হয় 'প্রবাসীতে। উপন্যাসটি লেখার সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ৬৮ বছর।শিলং পাহাড়ের পথে বিপরীতমুখী দুটি গাড়ির পরস্পর আকস্মিক দুর্ঘটনায় পরিচয় হয় বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় ও লাবণ্যর।
অমিতরায়ঃ ব্যারিস্টার/পড়াশোনার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই/ জীবন-জীবিকার চিন্তা নেই/ নিজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চায়/রোমান্টিক/ কথা দিয়ে চমক লাগা/মেয়েদের সম্পর্কে আগ্রহ নেই,কিন্তু উৎসাহ আছে/রুচির তৃষ্ণা মেটানো/নিরাপত্তা বা দায়িত্ব সচেতনতা ছিল না/ব্যক্তি লাবণ্যকে ভালোবাসেনি কথা ও রুচির লাবণ্যকে ভালোবেসেছে/
---মেয়েদের সম্বন্ধে ওর মন তর্কই করে, মীমাংসায় আসে না।
---
লাবণ্যলতাঃ পিতার বিবাহ দেন/ ব্যক্তিত্য এবং চরিত্রে ছিল বলিষ্ঠ/অমিত কথা দিয়ে তাকে গড়েছে রুচির তৃষ্ণা মেটানোর জন্য/ কথা পুরালে লাবণ্য পুরাবে/
* অবনীশদত্তঃ লাবণ্যের বাবা/কলেজের অধ্যক্ষ/
* শোভনলালঃজোরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করাতে পারেনি নিজেকে/
* কেতকীরায়ঃ
* যোগমায়াঃ
* সিসি-লিসিঃ
* জ্ঞানদাশংকর,বরদাশংকর,যতিশংকরঃ
* শিলং পাহাড়/চেরাপুঞ্জি /
 রুচির তৃঞ্চা মিটিয়ে কত সুন্দরী মেয়েদের পাশ কাটিয়ে এসেছে এতকাল।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনের মিল,পছন্দের মিল, রুচির মিল গুরুত্বপূর্ণ।
কলসির জল আর দিঘির জল।উনবিংশ শতকের গোড়ায় অনন্য উক্তি।
  ‘ফ্যাশনটা হলো মুখোশ, স্টাইল মুখশ্রী।

*** রবীন্দ্রনাথ যে চির নতুন চির আধুনিক তা শেষের দেখলেই বুঝা যায়।(বুদ্ধদেব বসু)
** বাঙালি রোমান্টিকতার কারণে 'শেষের কবিতা'- থেকে বের হয়ে আসতে পারে না।
*** শিলঙ পাহাড়ে অমিত ও লাবণ্য যখন একসঙ্গে ঘুরতে গেলো তখন অমিত লাবণ্যকে একটা ছ্যাৎলা পড়া পাথরের মধ্য বসতে অনুরোধ করলে লাবণ্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু সময় যে অল্প। ’

অমিত বলল, ‘জীবনে সেটাই তো শোচনীয় সমস্যা লাবণ্যদেবী, সময় অল্প। ... সময় যাদের বিস্তর তাদের পাঙ্কচুয়াল হওয়া শোভা পায়। দেবতার হাতে সময় অসীম; তাই ঠিক সময়টিতে সূর্য ওঠে, ঠিক সময়ে অস্ত যায়। আমাদের মেয়াদ অল্প, পাঙ্কচুয়াল হতে গিয়ে সময় নষ্ট করা আমাদের পক্ষে অমিতব্যয়িতা। ’

*** দ্বৈত প্রেমের আবেশে আবিষ্ট অমিত।তার প্রমাণ অমিতের উক্তি,
"কেতকীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালবাসারই। কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল, প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যের ভালবাসা, সে রইল দীঘি। সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।"
অথবা, ‘যে ভালবাসা ব্যাপ্তভাবে আকাশে থাকে অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ; যে ভালবাসা বিশেষভাবে প্রতিদিনের সব-কিছুতেই যুক্ত হয়ে থাকে সংসারে সে দেয় আসঙ্গ। দুটোই আমি চাই।"
পাঁচ বছর পূর্বেকার ভালো-লাগা পাঁচ বছর পরেও যদি একই জায়গায় খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে তা হলে বুঝতে হবে, বেচারা জানতে পারে নি যে সে মরে গেছে। ’ 
*** কেতকীর সম্পর্কে বলতে গিয়ে লাবণ্য বললো, ‘অন্তত হপ্তাখানেকের জন্য তোমার দলকে নিয়ে তুমি চেরাপুঞ্জিতে বেড়িয়ে এসো। ওকে (কেতকি) আনন্দ দিতে নাও যদি পারো, ওকে আমোদ দিতে পারবে।
*** তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়,
হে বন্ধু বিদায়।

০৮. রক্তকরবী (১৯২৬),নাটক
* রাজা
* নন্দিনী
* যক্ষপুরী 

০৯. গৃহদাহ(১৯২০ সালে প্রকাশ,৪৪ টি পরিচ্ছেদ)
* মহিমঃ চব্বিশ পরগণা জেলার।সিটি কলেজে এফএ পাশ।দুইশত টাকা ও অচলার গহনা আগুন থেকে বাঁচায়।রাজপুত্রের টিউটর হিসেবে মহিম ছাত্রের সাথে ডেহরিতে বেড়াতে আসে।
* সুরেশঃ ডাক্তারি পড়ে।ব্রাহ্মকে ঘৃণা করে।মাঝুলিতে প্লেগ রোগে আক্রান্ত।
* অচলাঃ ১৭-১৮ বছর।
* মৃণালঃ ২০-২১ বছর।মহিমের দূর সম্পর্কের বোন।স্বামী ভবানী ঘোষাল নিউমোনিয়ায় মারা যায়।
* রাক্ষসীঃ আরেক নাম বীণাপানি।ট্রেনেই অচলার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়।
* কেদার মুখুজ্জেঃ অচলার বাবা।পটলডাঙার স্থায়ী বাসিন্দা।
* রামচরণ লাহিড়ীঃ রাক্ষসীর বাবা।
* নিশীথঃ সুরেশের বন্ধু।
* বিকাশবাবুঃ কেদারবাবু থেকে তিন-চার হাজার টাকা পেত।
১০. দেবদাস(লিখেছেন ১৯০০,কিন্তু প্রকাশিত হয়-১৯১৭)

চরিত্র ও তথ্য সমূহ
১. দেবদাস(দেবদা)/দেবদাস মুখার্জিঃ
২. পার্বতী (পারো)-ঃ
৩. হরিমতিঃ- দেবদাসের মা/
৪. নারায়ণ মুখার্জিঃ দেবদাসের বাবা/
৫. নীলকন্ঠ চক্রবর্তীঃ পার্বতীর বাবা/
৬. ভুবন চৌধুরীঃ পার্বতীর স্বামী / হাতিপুতা গ্রামের জমিদার/পূর্বের স্ত্রী মারা যায়/তিন সন্তান প্রায় পার্বতীর সমবয়সী/
৭. চুনিলালঃ দেবদাসের কলকাতার বন্ধু
৮. চন্দ্রমুখীঃ বাঈজী ছিল/

উপন্যাসে দেবদাস (সম্পুর্ন নাম দেবদাস মুখার্জি) বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মন জমিদার বংশের সন্তান, পার্বতী(পারো) এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে৷ বাংলার তালসোনাপুর গ্ৰামে এই দুই পরিবারের পাশাপাশি বাস। ছোটবেলা থেকেই দেবদাস ও পার্বতীর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব যা পরবর্তীতে প্রেমের রূপ নেয়। দেবদাস বয়সে পার্বতীর চেয়ে কিছু বড়ো। দেবদাস ও পার্বতী একে অপরকে 'পারো' ও 'দেবদা' বলে ডাকে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেকে পুকুরে মাছ ধরা পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাজ‌ই তারা এক সঙ্গে করত৷ পার্বতী কিছু ভুল করলে দেবদাস তাকে মারতো, তবুও এদের সম্পর্ক বন্ধুর মতই ছিল৷

ঘটনা পরম্পরায় দেবদাসকে কলকাতা শহরে পাঠানো হয় পড়াশোনা করার জন্য। কয়েক বছর পর ছুটির সময় সে তার গ্ৰামে ফিরে আসে। কৈশোরে উত্তীর্ণ দুজন হঠাৎই অনুভব করে, তাদের বাল্যকালের বন্ধুত্ত্ব আর‌ও গভীর কিছুতে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেবদাস দেখে যে তার ছোটবেলার পারো বদলে গেছে। পার্বতী তাদের কৈশোরের প্রেম বিবাহবন্ধনে পরিস্ফুটনের কথা ভাবে। প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী, পার্বতীর বাবা-মাকে দেবদাসের বাবা-মায়ের কাছে তাদের বিবাহের প্রস্তাব আনতে হবে।

পার্বতীর মা দেবদাসের মা হরিমতির কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনলে তিনি আনন্দিত হলেও পাশের বাড়ির সাথে এই সম্পর্ক রাখতে তিনি বিশেষ উৎসাহী হননা। তাছাড়া পার্বতীর পরিবারে দীর্ঘকাল থেকে বরের পরিবার থেকে 'পণ' গ্ৰহনের প্রথা চলে আসছে। দেবদাসের মা তাই পার্বতীর পরিবারকে "বেচা-কেনা ছোটঘর" মনে করে এই সম্পর্কে অসম্মত হন। দেবদাসের বাবা, নারায়ণ মুখার্জিও এই যুক্তি সমর্থন করেন। এতে পার্বতীর পিতা নীলকন্ঠ চক্রবর্তী অপমানিত বোধ করেন ও পার্বতীর জন্য আরও ধনী গৃহে বিয়ে ঠিক করেন।

পার্বতী একথা জানলে দেবদাস অন্তত তাকে গ্ৰহন করবে এই আশায় রাতের অন্ধকারে তার সাথে দেখা করে। দেবদাস মনস্থির করে তার বাবাকে বললে, তিনি অরাজি হন।
বিভ্রান্ত অবস্থায়, দেবদাস বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে যায়। সে চিঠি লিখে পার্বতীকে জানায় যে সে এই সম্পর্ক আর রাখতে চায় না।

পার্বতী বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। এরপর দেবদাস বললেও আর সে ফিরে যেতে চায় না ও কাপুরুষতার জন্য তাকে ধিক্কার জানায়। তবুও, সে দেবদাসকে বলে যে তার মৃত্যুর আগে যেন সে দেবদাসকে অন্তত একবার দেখতে পায়। দেবদাস এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
দেবদাস কলকাতায় ফিরে যায় ও পার্বতীর হাতিপোতা গ্ৰামে ভুবন চৌধুরী নামে এক জমিদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুবন চৌধুরীর পূর্বের স্ত্রী মারা গেছেন ও তার তিনজন সন্তান রয়েছে, যারা পার্বতীর প্রায় সমবয়সী বা তার চেয়ে বড়ো।
কলকাতায় গিয়ে দেবদাসের চুনীলালের সাথে বন্ধুত্ব হয় ও তার মাধ্যমে সে চন্দ্রমুখী নামে এক বাঈজীর সাথে পরিচিত হয়। সে দেবদাসের প্রেমে পড়ে, যদিও দেবদাস তাকে ঘৃণা করতে থাকে। হতাশাগ্ৰস্ত দেবদাস অত্যধিক মদ্যপান শুরু করলে তার শরীর ক্রমশ ভে‌‌ঙে পড়ে। চন্দ্রমুখী তার দেখভাল করতে থাকে। দেবদাস তার মনে প্রতিনিয়ত পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর তুলনা করতে থাকে ও চন্দ্রমুখীকে সে পারোর কথা বলে। দুঃখ ভুলতে দেবদাস ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে ও তাতে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। চন্দ্রমুখী বুঝতে পারে যে দেবদাসের ভিতরের আসল মানুষটির আজ পতন ঘটেছে। লক্ষ্যশূন্য দেবদাস শেষপর্যন্ত চন্দ্রমুখীর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়।

শীঘ্র আসন্ন মৃত্যুর কথা অনুভব করতে পেরে দেবদাস, পারোকে দেওয়া তার পূর্বের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হাতিপোতা গ্ৰামে পার্বতীর কাছে র‌ওনা হয়। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে, এক অন্ধকার শীতের রাতে দেবদাসের মৃত্যু হয়। দেবদাসের মৃত্যুর খবর শুনে পার্বতী সেখানে ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই, বাড়ির লোকজন তাকে বাড়ির চৌকাঠ অতিক্রম করতে দেয়না।

শরৎচন্দ্র তার অন্যান্য অনেক উপন্যাসগুলির মতো এটিতেও তৎকালীন বঙ্গসমাজের নিষ্ঠুরতার চিত্র কঠোরভাবে তুলে ধরেছেন, যে সমাজব্যবস্থা এক সত্যিকারের প্রেমের শুভ পরিনতির এক বৃহৎ বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

* দেবদাস
* পার্বতী
* চন্দ্রাবতী
১১. বড়দিদি
সুরেন্দ্রনাথ
প্রমিলাঃ ৭ বছরের মেয়ে।
মাধবীঃ ১৬ বয়সী। ১১ বছরে বিয়ে হয়।
শান্তিঃ সুরেন্দ্রনাথের স্ত্রী।
১২. মেঝদিদিঃ
* কেষ্টঃ ১৪ বছর।
* কাদম্বিনীঃ কেষ্টর সৎ বোন।
* বিপিনঃ কাদম্বিনীর স্বামী।
* পাঁচুগোপালঃ কাদম্বিনীর সন্তান।
* হেমাঙ্গিনীঃ কাদম্বিনী এর জা।
* নবীনঃ বিপিন এর ভাই।
* উমা আর ললিত হেমাঙ্গিনীর সন্তান।
বাবা মা হারিয়ে কেষ্ট আশ্রয় নেয় সৎ বোন কাদম্বিনীর কাছে।কাদম্বিনী লোকলজ্জার ভয়ে কেষ্টকে নিজের কাছে রাখলেও তাকে মোটেও আদর করত না।কেষ্টর কাছে মা-বোনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ওঠে মেঝদিদি হেমাঙ্গিনী।
[  ] অরক্ষণীয়া. 

১৩. পুতুল নাচের ইতিকথা(১৯৩৬)
* শশীঃ ডাক্তার/
* বিন্দুঃরক্ষিতা/বাইজি করে রেখেছে/
* নন্দলালঃবিন্দুর স্বামী/
* গোপালদাসঃ মহাজন/
* হারুঘোষঃমৃত/
* পরানঃ হারুঘোষের ছেলে/
* কুসুমঃ পরানের স্ত্রী/
* মতিঃকুসুমের ননদ/কুমুদের বউ/
* কুমুদঃ শশীর বন্ধু / মতির স্বামী /
* যাদবপণ্ডিতঃ আফিমখেয়ে আত্মহত্যা/৪০০০০ টাকা/ হাসপাতাল/
* সেনদিদিঃ যামিনী কবিরাজের স্ত্রী/
* গাওদিয়া গ্রামঃ

১৪. হাঁসুলী বাঁকের উপকথাঃ ছয়টি পর্ব আছে/
* সুচাঁদ বুড়িঃ সকলের পিসি/সংস্কৃতি ধরে রাখা/
বানোয়ারিঃ কোশকেঁদে/কাহারপাড়া মাতব্বর/সামন্তবাদের প্রতিক/খুব শক্তিশালী কালা পাহাড়ের মতো শরীর/
* গোপালিবালাঃবানোয়ারির কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রী/
কালোশশীঃ আটপৌরে পাড়ার/ এবং পরম ডাকাতের স্ত্রী/বানোয়ারির ভালোবাসার মানুষ/
করালিঃপ্রতিবাদী,বিদ্রোহী,যুক্তিবাদী,বিজ্ঞান মনস্ক,ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী চরিত্র/পাকা বাড়ি তৈরি/পুঁজিবাদের প্রতিক/চন্দনপুরে বা চন্নপুরের রেলস্টেশনে কুলির কাজ করত/
সুবাসিঃ করালি ওকে বিয়ে করেছে/বানোয়ারি তার মধ্যে কালোশশিকে দেখতে পায়/
পাখিঃ সুচাঁদের নাতনি/করালির স্ত্রী/দুরন্ত স্বভাবের/প্রেমের অপমৃত্যু/
* নসুবালাঃ তৃতীয় লিঙ্গের ধরা যায়/করালির সমর্থক/
* বাঁশবাদি গ্রামঃ হাসুলি গয়নার মতো কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত/
* কাহারপাড়াঃ
* চন্দ্রবোড়া সাপঃ
যার সঙ্গে মিলে মন সে আমার আপনজন
নিচু প্রজাতিরা সতী হলে ভদ্র সমাজের পাপ ধারণ করবে কে?

 

Saturday, October 31, 2020

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দুর্লভ কিছু তথ্য


 ১. রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় স্থাপিত হচ্ছে ?
- সিরাজ গঞ্জের শাহাজাদ পুরে । তবে কুষ্টিয়ার কুটিবাড়িতে ও নওগাঁর পতিসরেও আলাদা ক্যাম্পাস থাকবে। দেশের ৩৮তম বিশ্ববিদ্যালয় এটি।
২. বিবিসির বাংলা বিভাগ পরিচালিত জরিপে ( ২০০৪) সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায়
৩. রবীন্দ্রনাথের স্থান কততম ?-------------- ২য় (প্রথম বঙ্গবন্ধু )
৪. রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন কয়বার ?----------- ২বার । ১৮৯৮ ও ১৯২৬।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন -----------১৯২৬সালে
৬. রবীন্দ্রনাথ কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কবে ডি.লিট উপাধী দেয় ?--------১৯১৩সালে
৭. রবীন্দ্রনাথ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবে ডি.লিট উপাধী দেয় ?-------- ১৯৩৬সালে
৮.রবীন্দ্রনাথ কেঅক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কবে ডি.লিট উপাধী দেয় ?--------১৯৪০সালে 
৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ কোন গীতিকবিতা রচনা করেছিল?
--বাসন্তিকা (প্রথম পঙক্তি>>>> এই কথাটি মনে রেখো /তোমাদের এই হাসি খেলায় / আমি এ গান গেয়েছিলেম/ জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়। )
১০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়টি ছদ্মনাম ছিল?
-৯টি। ভানুসিংহ ঠাকুর, অকপটচন্দ্র, আ্ন্নাকালী পাকড়াশী; দিকশূন্য ভট্টাচার্য ; নবীন কিশোর শর্মণ:; ষষ্ঠীচর দেবশর্মা ;বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ; শ্রীমতি কনিষ্ঠা , শ্রীমতি মধ্যমা।
১১. কোন বাঙালি প্রথম গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন ?
- রবীন্দ্রনাথ (এ জন্য তিনি পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকার আরবানায় ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান কৃষি ও পশুপালন বিদ্যায় প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে)
১২.১৮৯২সালে রবীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ আসেন এবং একটি কাব্য রচনা করেন তার নাম কি?
- সোনার তরী
১৩. লালনের গান কে সর্বপ্রথম সংগ্রহ করেন ?-----------রবীন্দ্রনাথ (২৯৮টি)
১৪. রবীন্দ্রনাথের চৈনিক নাম কি?--------------- চু চেন তান
১৫. রবীন্দ্রনাথ নিজের আঁকা ছবিগুলোকে কী বলেছেন?--------------- শেষ বয়সের প্রিয়া ।
১৬. আর্জেটিনার কোন মহিলা কবিকে রবীন্দ্রনাথ বিজয়া নাম দেন ?
- ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো (তাঁকে উত্সর্গ করেন পূরবী কাব্য।
১৭. হিন্দু -মুসলমানদের মিলনের লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ কোন উত্সবের সূচনা করেন ?------ রাখিবন্ধন ।
১৮. ‘’ফ্যাশনটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী’ উক্তিটি কার ?-------------- রবীন্দ্রনাথের।
১৯. রবীন্দ্রনাথ তাঁর কতটি নাটকে অভিনয় করেন ?--------------- ১৩টি।
২০.রবীন্দ্রনাথের পরিবারের বংশের নাম কি ছিল ?---------------- পিরালি ব্রাহ্মণ
২১. পারিবারিক উপাধী ?---------------------- কুশারী
২২. ১৯০৫সালের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধাচারণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গান >> ‘বাংলার মাটি বাংলার জল।’
২৩. আমার সোনার বাংলা -------- রচনা করেন গগণ হরকরার সুরের অনুকরণে।
২৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রথম উপন্যাস-------------- করুণা, ১৮৭৭-৭৮
২৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ------------ বৌঠাকুরাণীর হাট( ১৮৮৩)
২৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ--------------- ‘কবিকাহিনী(১৮৭৮)
২৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত গীতিনাট্য-------------- ‘বাল্মীকি প্রতিভা(১৮৮১)
২৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রথম গদ্যগ্রন্থ-------------- য়্যুরোপ প্রবাসীর পত্র(১৮৮২)
২৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ------------- ‘বিবিধপ্রসঙ্গ(১৮৮৩)
৩০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধ্বনিবিজ্ঞানের উপর লেখা গ্রন্থের নাম--------------- ‘শব্দতত্ত্ব
                            প্রথম ছোট গল্প ---ভিখারিনী
                            প্রথম উপন্যাস--- করুণা
৩১. কারাগারে বন্দিদের উদ্দেশ্যে উত্সর্গ করেন----------------- ‘চার অধ্যায়
৩২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘গুরুদেব’ সম্মানে ভূষিত করেন---------- মহাত্ম গান্ধী
৩৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘কবিগুরু’ উপাধিতে ভূষিত করেন---------- ক্ষিতিমোহন সেন।
৩৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘ভারতের মহাকবি’ উপাধিতে ভূষিত করেন------চীনা কবি চি-সি-লিজন।
৩৫. রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীতে বহির্বিশ্বের প্রথম কোন দেশ তাকে নিয়ে ডাকটিকেট প্রকাশ করে----------------- ব্রাজিল
৩৬. রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চলচ্চিত্র করেছে---------- --চীন ।
৩৭. বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে ডাক টিকিট প্রকাশ করে--------- ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে, ৭আগস্ট, ১৯৯১সালে।

Friday, August 14, 2020

প্রশ্ন:অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম লেখো পাঁচটি।

উত্তর:

অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিম্নরুপ।যথা:
১. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ই-কার বা উ-কার হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।যথা: অলি>ওলি,কবিতা>কোবিতা,বধু>বোধু ইত্যাদি।

২.'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ঋ-কার হলে,তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।যথা:কর্তৃপক্ষ>কোর্তৃপকখো ইত্যাদি।

৩. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির সঙ্গে র-ফলা হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।যথা:প্রমা>প্রোমা,প্রশ্ন>প্রোসনো ইত্যাদি।

৪.'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর য-ফলা হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।যথা:অদ্য>ওদদো,পদ্য>পোদদো ইত্যাদি।

৫.'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনি পর 'জ্ঞ' বা 'ক্ষ' হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।যথা:বক্ষ>বোকখো ইত্যাদি।

***এক বাক্যে সহজে মনে রাখার উপায়:
★অ'-বা নিহিত'অ' ধ্বনির পর ি/ু/ৃ/্র/্য/জ্ঞ/ক্ষ হলে, অ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়।এবার এটাকে ভেঙ্গে পাঁচটা নিয়ম বের করো।
উল্লেখ্য: নিহিত 'অ'- মানে ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে লুকায়িত 'অ' - কে বুঝায়।যেমন: ন=ন্+অ,প=প্+অ ইত্যাদি।

Wednesday, October 16, 2019

রবীন্দ্রনাথের 'নৌকাডুবি '- উপন্যাসের সার সংক্ষেপ

নৌকাডুবি (১৯০৬)
চরিত্র ও তথ্য সমূহ
১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/
২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/
৩. কমলাঃ
৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ
* গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড় 
Oh what a climax! ধীরে ধীরে চরম উত্তেজনায় পৌঁছে দিতে রবী ঠাকুর অনবদ্য।নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের সামাজিক উপন্যাস নৌকা ডুবি(১৯০৬)।
.
উপন্যাসের নায়ক রমেশ কলকাতায় Law পড়তে গিয়ে পরিচয় ঘটে নায়িকা হেমনলিনীর সাথে। সংস্কৃতিমনা, শিক্ষিত, রুচিশীল মাতৃহীনা নারী হেম বাবার অতি আশকারার দুলালী।রবীন্দ্রনাথ হেমের বাবাকে বন্ধুর আসনে বসিয়ে তৎকালিন মার্জিত পিতার চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
.
হঠাৎ বাবার চিঠি পেয়ে নায়ক রমেশ বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো অশিক্ষিত দরিদ্র্য এক গ্রাম্য মেয়ের সাথে তার বিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। হেমকে ভালবাসে এমন কথা রমেশ তার বাবাকে বললেও, পরিস্থিতি অতটাই জটিল হলো যে রমেশ ঐ নিরক্ষর মেয়েকেই বিয়ে করতে বাধ্য হলো। উপন্যাসের ক্লাইমেক্স শুরু এখান থেকেই। বিয়ে শেষে বরযাত্রী যখন কনে নিয়ে গঙ্গার পার হচ্ছিলো তখনই গঙ্গার প্রবল করাল ঘূর্ণিপাকে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। রমেশ নিজেকে এবং পাশে তীরে পরে থাকা এক নববধূকে আবিষ্কার করে কলকাতায় গিয়ে সংসার শুরু করলো।
.
নায়কের নবপরিণীতার নাম কমলা। স্বল্পভাষী কমলার দাবি সে সংসারে রমেশের কাছ থেকে কখনো ভালবাসা পায়নি, পেয়েছে স্নেহ। সংসার জগতে ভালবাসা আর স্নেহের পার্থক্য উপন্যাসকে এক রহস্যের দিকে ধাবিত করে।
রমেশের হৃদয়পটে হেমের উপস্থিতি এতটাই গভীর যে কমলার সংসারে মনোযোগী হতে পারছিল না। রমেশ এক সময় বুঝতে পারে কমলা তার বাবার ইচ্ছেতে বিয়ে করা সে গ্রাম্য মেয়েটি না। গঙ্গার সেদিনের উত্তাল ঝড়ে সবাই ভেসে যায়।কমলারও সেদিন এক ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়েছিল।
.
কমলা রমেশের সাতপাকে বাধা স্ত্রী নয় বুঝতে পেরে চাতকের ন্যায় প্রহর কাটানো হেমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং কমলার কথা গোপন রাখে। এদিকে হেমকে পছন্দ করা তার ভাইয়ের বন্ধু জানতে পারে রমেশ বিবাহিত। এই সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে রমেশ কমলাকে নিয়ে কলকাতা ত্যাগ করে। এমন সংবাদে হেম বাকরুদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
.
কমলা এক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানতে পারলো রমেশ তার স্বামী নয়। নিজের জীবন উৎসর্গে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলে জেলেরা তাকে উদ্ধার করে এক বাড়িতে দাসী হিসেবে রেখে আসে।
.
হেমনলিনীকে তার ভাই বন্ধুর সাথে বিয়ে দিতে চেষ্টা করলে বাবা হেমের পক্ষাবলম্বন করেন। আসাধারণ সব যুক্তির সমাবেশ রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ এই অংশে। হেমকে নিয়ে বাবা সফরে বের হলে পরিচয় ঘটে ডাক্তার নলিনাক্ষের সাথে। রমেশের জন্য হেমের প্রাণ অতিসয় বিয়োগগ্রস্ত। এদিকে ডা: নলীনাক্ষ হেমের অশান্ত মনে কিছুটা প্রণয়ের সুর তুলে। হেমের বিষাদ অসুস্থ মনের দায়িত্ব নিতে ডাক্তারবাবুকে হেম সম্মতি দেয়। উপন্যাসের এমত ক্ষণে পাঠক হৃদয়ে ভালোবাসার ভগ্ন চিত্র দৃশ্যত হয়। বিয়ের কথাও পাকাপাকি হয়ে গেল ডাক্তার আর হেমের। কি হবে রমেশের!
.
কি নিয়তি! কমলা আজ দাসী তার নিজ স্বামীর ঘরে। আর এদিকে রমেশ ব্যাকুলে হেমের জন্যে। রমেশ হঠাৎ করেই হেমের গৃহে হাজির হলে হেম সব কিছু ত্যাগ করে ভালবাসাকে নিরবধি চিত্তে সম্মান দেখিয়ে রমেশের পাণিগ্রহণ করে। রমেশ ডাক্তারবাবুকে কমলার পরিচয় দিলে বুঝতে পারে কমলাই ডাক্তারের সেই গঙ্গায় হারিয়ে যাওয়া বউ।
.
এক নৌকা ডুবি মানুষকে সামাজিকভাবে কতটা বৈচিত্রময় করে তুলে তার নিদারুণ কাহিনীই জায়গা করে নিয়েছে রবী ঠাকুরের এই নৌকা ডুবি উপন্যাসে।

Thursday, September 12, 2019

বলাকা কবিতা ও তার সমালোচনা

বলাকা -
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হল–যেন খাপে-ঢাকা
বাঁকা তলোয়ার;
দিনের ভাঁটার শেষে রাত্রির জোয়ার
এল তার ভেসে-আসা তারাফুল নিয়ে কালো জলে;
অন্ধকার গিরিতটতলে
দেওদার তরু সারে সারে;
মনে হল সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে,
বলিতে না পারে স্পষ্ট করি,
অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছেগুমরি।
সহসা শুনিনু সেই ক্ষণে
সন্ধ্যার গগনে
শব্দের বিদ্যুৎছটা শূন্যের প্রান্তরে
মুহূর্তে ছুটিয়া গেল দূর হতে দূরে দূরান্তরে।
হে হংস-বলাকা,
ঝঞ্ঝা-মদরসে মত্ত তোমাদের পাখা
রাশি রাশি আনন্দের অট্টহাসে
বিস্ময়ের জাগরণ তরঙ্গিয়া চলিল আকাশে।
ওই পক্ষধ্বনি,
শব্দময়ী অপ্সর-রমণী
গেল চলি স্তব্ধতার তপোভঙ্গ করি।
উঠিল শিহরি
গিরিশ্রেণী তিমির-মগন
শিহরিল দেওদার-বন।
মনে হল এ পাখার বাণী
দিল আনি
শুধু পলকের তরে
পুলকিত নিশ্চলের অন্তরে অন্তরে
বেগের আবেগ।
পর্বত চাহিল হতে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ;
তরুশ্রেণী চাহে, পাখা মেলি
মাটির বন্ধন ফেলি
ওই শব্দরেখা ধরে চকিতে হইতে দিশাহারা,
আকাশের খুঁজিতে কিনারা।
এ সন্ধ্যার স্বপ্ন টুটে বেদনার ঢেউ উঠে জাগি
সুদূরের লাগি,
হে পাখা বিবাগী।
বাজিল ব্যাকুল বাণী নিখিলের প্রাণে–
“হেথা নয়, হেথা নয়, আর কোন্‌খানে।”
হে হংস-বলাকা,
আজ রাত্রে মোর কাছে খুলে দিলে স্তব্ধতার ঢাকা।
শুনিতেছি আমি এই নিঃশব্দের তলে
শূন্যে জলে স্থলে
অমনি পাখার শব্দ উদ্দাম চঞ্চল।
তৃণদল
মাটির আকাশ-’পরে ঝাপটিছে ডানা,
মাটির আঁধার-নীচে কে জানে ঠিকানা
মেলিতেছে অঙ্কুরের পাখা
লক্ষ লক্ষ বীজের বলাকা।
দেখিতেছি আমি আজি
এই গিরিরাজি,
এই বন, চলিয়াছে উন্মুক্ত ডানায়
দ্বীপ হতে দ্বীপান্তরে, অজানা হইতে অজানায়।
নক্ষত্রের পাখার স্পন্দনে
চমকিছে অন্ধকার আলোর ক্রন্দনে।
শুনিলাম মানবের কত বাণী দলে দলে
অলক্ষিত পথে উড়ে চলে
অস্পষ্ট অতীত হতে অস্ফষ্ট সুদূর যুগান্তরে!
শুনিলাম আপন অন্তরে
অসংখ্য পাখির সাথে
দিনেরাতে
এই বাসাছাড়া পাখি ধায় আলো-অন্ধকারে
কোন্‌ পার হতে কোন্‌ পারে।
ধ্বনিয়া উঠিছে শূন্য নিখিলের পাখার এ গানে–
“হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোন্‌খানে।”

কবিতাটির ব্যাখ্যা ও সমালোচনা

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গতির উপাসক। তিনি ছিলেন নবপ্রবণ ও নবগতির জয়ঘোষক। কবি-মনের সেই গতির সুরই সুস্পষ্ট হয়ে ফুটেছে ‘বলাকা’ কাব্যে। বলাকার প্রতিটি কবিতায় কবি গতির জয়গান গেয়েছেন।
বীজ থেকে অঙ্কুরে, অঙ্কুর থেকে বৃক্ষে, বৃক্ষ থেকে ফুলে, ফুল থেকে ফলে, আবার ফল থেকে বীজে চলেছে প্রাণের যাত্রা। জীবন ও মৃত্যুর প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই গতির লীলা বিরাজমান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই বলেছেন, “আমার ‘বলাকা’র কবিতাগুলোতেও সেই গতির কথাই বলেছি। গতির ছন্দেই বিশ্বের সৌন্দর্য। গতি নিয়েই সৃষ্টি। এই চরাচর সেই সৃষ্টি বা গতির প্রবাহ। কি অপূর্ব ছন্দে এ সৃষ্টির প্রবাহ চলছে তা দেখলে বিস্মিত হতে হয়।”
বলাকা-কাব্য সৃষ্টির যুগে কবির অবস্থাও বিশেষ অনুধাবনযোগ্য। তিনি নিজেই বলেছেন, ইউরোপের দম্ভ ও লোভ যে সর্বজাতির কল্যাণ যাত্রার পথকে রুদ্ধ করে জগদ্দল পাথরের মতো সবার বুকে চেপে বসে থাকবে তা কখনও বিধাতার অভিপ্রায় হতে পারে না। এতে সারাজগতের অন্তরাÍা প্রপীড়িত।
নিপীড়িত জাতিদের যে মুক্তির প্রয়োজন সেই মুক্তি ইউরোপেও চাই। সবাইকে মুক্তি না দিলে তারও তো মুক্তি নেই। যে অকল্যাণ সে অন্যের ওপর চাপাতে চাইছে সেই অকল্যাণের চাপেই সে মরবে। তারই হাতের আগুনে তারই ঘর দগ্ধ হয়ে ছারখার হয়ে যাবে। কবিগুরু এসব কিছুই দেখতে চান না। ভাবীকালের সবারই মঙ্গল হোক, কল্যাণ হোক এই তো কবির কামনা। তাই কবি ভাবীকালের পক্ষ নিয়েছেন। প্রতিনিয়তই তিনি কল্যাণের জয়ঘোষণা করে চলেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, সৃষ্টিকর্তা তাকে (কবিকে) মৈত্রী ও কল্যাণবার্তা বহনের ভার দিয়েছেন। কবি তাই সেই বার্তাকে বহন করে নিয়ে চলেছে কবিতার ছন্দে ছন্দে। আর চলার সেই ছন্দেই ‘বলাকা’র সৃষ্টি। গতির সৃষ্টি।
কাশ্মীরের এক সন্ধ্যাকালে ঝিলাম নদীতে বসে যখন কবি ভাবনায় বিভোর সেই ক্ষণে একঝাঁক বলাকা উড়ে যেতে দেখলেন কবিগুরু। চলার গতির একটা বেগ যেন কবির নয়নের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। সেই যাত্রার ধ্বনি শুনে সমগ্র বিশ্বের সর্বত্র যেন জেগেছে একটা যাত্রার বেগ। সবখানেই এক ব্যাকুলতা,
‘হেথা নয়, অন্য কোথা,
অন্য কোনখানে।’-বলাকা যেন কবি প্রাণের গতির বাহন।
‘বলাকা’ তাই সমগ্র রবীন্দ্র সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। পূর্ববর্তী কাব্যে কবি প্রকৃতি, মানব ও জীবের সঙ্গে আÍস্থ হওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। কিন্তু তার পরে এসেই তার সুর পরিবর্তিত হয়ে গেল। আর এ নতুন সুরই ‘বলাকা’র সুর। গতির নিত্য স্রোত ও তার ছন্দে পরিবর্তন এ কাব্যে প্রধানভাবে লক্ষণীয়। এ কাব্য পরিচয়দৃষ্ট হয় যে, জগতে কোনো কিছুই স্থির হয়ে নেই। সব কিছুই বন্ধন থেকে মুক্তির পানে ধাবমান। এ নিরবচ্ছিন্ন চলাতেই তার আনন্দ। আর এ চলার যেন কোনো বিরাম নেই। শেষ নেই। কেন না, এ গতি প্রবাহের গতি যেদিন রুদ্ধ বা বন্ধ হয়ে যাবে সেদিনই জড়ত্ব ও পঙ্গুতায় মৃত্য এসে উপস্থিত হবে।
গতির ছন্দ রূপ পেল ‘বলাকা’ কবিতায়। কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর আকাশে তখন সন্ধ্যা। ঝিলামের জল অন্ধকার। প্রকৃতি নিথর। কবি লিখেছেন,
‘সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলামের
স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হল, যেন
খাঁপে-ঢাকা বাঁকা তলোয়ার;
সহসা শুনিনু সেই ক্ষণে
সন্ধ্যার গগনে
শব্দের বিদ্যুৎছটা শূন্যের প্রান্তরে
মুহূর্তে ছুটিয়া গেল দূর হতে
দূরান্তরে।’
প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে একঝাঁক বুনো হাঁস পাখা মেলে উড়ে গেল ঝিলাম নদীর বুকে, বোটে উপবিষ্ট কবির মাথার ওপর দিয়ে। মুহূর্তের মধ্যে কোন্ দূর থেকে দূরান্তরে উধাও হয়ে চলে গেল। কবির লেখনী হতে বের হয়ে এলো,
‘হে হংস বলাকা
ঝঞ্ঝা মদরসে মত্ত
তোমাদের পাখা
...
গিরি শ্রেণী তিমির মগন
শিহরিল দেওদার বন।’
মুহূর্তের নীরবতা ভেঙে একটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি কারল হংসের ডানা ঝাপটা। সুপ্তমগ্ন আকাশ আচমকা আঘাত পেয়ে জেগে উঠল।
স্তব্ধতার মৌনতা ভেঙে গেল। রোমাঞ্চিত মনে প্রশ্ন জাগিল, একী হল! তিনি কবিতায় লিখলেন,
‘মনে হল এই পাখার বাণী
দিল আনি
শুধু পলকের তরে
পুলকিত নিশ্চলের অন্তরে অন্তরে
বেগের আবেগ।
...
বাজিল ব্যাকুল বাণী লিখিলেন প্রাণে
হেথা নয়, হেথা নয়,
আর কোনখানে।’
সন্ধ্যার নীরবতায় এই পাখার বাণী যেন এক মুহূর্তে পুলকিত বেগের আবেগ জাগিয়ে দিল। মন উš§না হল। চিত্তে জাগল চলার বাসনা। আকাশে সুদূরে হারিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তর আকুল হল। উদাসী পাখির পাখায় শব্দে যেন বিবাগী সুর প্রতিধ্বনিত হল। সেই উদাসী পাখার ব্যথিত বাণীতে পৃথিবীর প্রাণেও জাগল এক আকুলতা। অজানা এক ব্যাকুলতা। সেই বাণী যেন মুখর হয়ে উঠল ব্যথা আর বেদনার সুরে।
‘হেথা নয়, হেথা নয়,
আর কোনখানে।’
কবির লেখনী এগিয়ে চলল। তিনি লিখলেন,
‘হে হংস বলাকা,
আজ রাত্রে মোর কাছে
খুলে দিলে স্তব্ধতার ঢাকা।
ধ্বনিয়া উঠেছে শূন্য
লিখিলেন পাখার এ গানে
হেথা নয়, অন্য কোথা,
অন্য কোথা, অন্য কোনখানে।’
কবি উপলব্ধি করলেন তার মনের তলের বেগ ও বাণী। হংস বলাকা তার গতি দিয়ে কবির অন্তরের আবরণের দ্বার খুলে দিল। নিশ্চল হয়ে উঠল সচল। পেল গতি। সবকিছুই যেন ব্যাকুল হয়ে সন্ধ্যাকাশের উড়ে যাওয়া বলাকার মতো উড়ে যেতে চাইছে অজ্ঞাত পানে। মানুষের ভাবনা, আশা-আকাক্সক্ষাও উড়ে চলেছে। ভবিষ্যতের গর্ভে কি আছে জানা নেই তবু আশা-আকাক্সক্ষার মোহে নিরুদ্দেশের পানে ছুটে চলেছে। কোথায় সব চলেছে কে জানে?
কবি বসে বসে নিখিলের সব পাখার ঝাপটায় একই বাণীর সুর ধ্বনিত হতে শুনছেন। যেন সব কিছুই সুর তুলেছে,
‘হেথা নয়, হেথা নয়,
আর কোনখানে।’
কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে, হেথা নয়তো কোথায়?
‘বলাকা’ কাব্যে তাই যে সুর বেজে উঠেছে সে সুর হল গতির। গতিবাদই হল বলাকা’র মর্মকথা। বলাকার বিমানগতি এবং তার পাখার শব্দ কবির অন্তরে অদ্ভুত কল্পনা জাগিয়েছে। সে কল্পনা গতি বা যাত্রার কল্পনা। প্রকৃতির একটা উপযুক্ত পরিবেশে কবির গতি-অনুভূতি বিস্ময়কর সমগ্রতা লাভ করেছে। এ অনুভূতি কবির একান্ত নিজস্ব। এ অনুভূতির গতির সঙ্গে একাÍ কবিমানসের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তের বহিঃপ্রকাশ।
‘বলাকা’ কবিতার বিভিন্ন পঙ্ক্তিতে বিশ্বের গতি-চাঞ্চল্যের সুর এত অনায়াসে মিলিত হয়ে পড়েছে যে, কি উপায়ে কবি একটি থেকে অপরটিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন তা বোঝার অবকাশ থাকে না। ছন্দে, ভঙ্গিতে, অলংকারে এবং প্রথম থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত উৎসারিত তীব্র আবেগে কবিতাটি কবির আÍলীনতার শ্রেষ্ঠ পরিচায়ক হয়েছে। কবিতাটির শেষ অংশ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কবি শুধু নৈর্ব্যক্তিকভাবে গতিস্পন্দিত বিশ্বকে দেখেননি, বরং সেই সঙ্গে তিনি আÍদর্শনের ইচ্ছুকও।

[কৃতজ্ঞতা স্বীকার;মোবারক হোসেন খান,বিশ্লেষণ ও সমালোচনা ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে সংগৃহীত]

Thursday, August 22, 2019

বাংলা গদ্যে বিদ্যাসাগরের অবদান


পুণ্যশ্লোক মহাপুরুষ বিদ্যাসাগর গত শতাব্দীর একটি প্রচন্ড বিস্ময়রুপে আমাদের মাঝে প্রতিভাত হয়েছেন। তার বিচিত্র জীবন কথা, অসাধারণ মেধা,তীক্ষ্ম বিচারবুদ্ধি এই সমস্ত আজ প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষা, বিশেষত শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং স্ত্রী শিক্ষা প্রসারে তার দান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। বিধবা বিবাহ প্রচার, বহু বিবাহ নিরোধ প্রভৃতি ব্যাপারে তিনি যে বীর্যবান পৌরুষ ও হৃদয়বান ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছেন গোটা বাংলাদেশে তার সমতুল্য কোন দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না।
প্রেমের সঙ্গে বীর্য, আবেগের সঙ্গে পৌরুষ, জ্ঞানের সঙ্গে কর্ম---এর আশ্চর্য মিলন তার মধ্যে সার্থক হয়েছে।
বাংলা গদ্যের জনক নিয়ে প্রায় সুধীমহলে খর তর্কের ঝড় তুফান উঠে থাকে।
কেউ বলেন, রামমোহন বাংলা গদ্যের জনক।
কারো মতে, সে গৌরব বিদ্যাসাগরের প্রাপ্য।
কেউ বা বলেন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপকেরা সেই গৌরব দাবি করতে পারেন, কারণ তারাই সর্বপ্রথম গদ্য গল্প কাহিনী ও ইতিহাস রচনা করেন এবং সেগুলি হচ্ছে প্রথম মুদ্রিত গদ্য সাহিত্য।

কিন্তু ভালো করে ভেবে দেখলে দেখা যাবে, উনিশ শতকের বহুপূর্বে বাংলা গদ্যের জন্ম হয়েছিল, চিঠিপত্রাদিতে বাংলা গদ্যের ব্যবহার সুদূর ষোড়শ শতাব্দীতে পাওয়া যাবে। সুতরাং উল্লেখিত কেউই বাংলা গদ্যের জনকত্ব দাবি করতে পারে না, তাদের পোস্টা( প্রতিপালক) বলা যেতে পারে। তবে এরই মধ্যে আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের জনক না হলেও শিল্পসম্মত গদ্য রীতির উদ্ভাবয়িতা, তাহার মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ গুলির ভাষা দেখলেই বোঝা যাবে। 

তাকে আবার কেউ কেউ অনুবাদক বলে কিঞ্চিত কৃপা করে থাকেন। এই কথাও হাস্যকর। তার অনুবাদ গ্রন্থ মৌলিক সাহিত্যের মত এক প্রকার নতুন সৃষ্টি। এছাড়াও তার মৌলিক পুস্তিকা গুলিতে গদ্যরীতির সার্থক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বাঙালির গদ্যসাহিত্যের দ্রুত উন্নতি ও শিক্ষা প্রচারকল্পে মৌলিক রচনাশক্তিতে সংহরণ করে তারঁ সমস্ত প্রতিভাকে অনুবাদকার্যে নিয়োগ করতে হয়েছিল। 

অলস সাহিত্যচিন্তা এই কর্মযোগী মহাপুরুষ আদৌ রুচিকর ছিল না। সম্ভবত তিনি 'art for art's sake' নীতিতে ততটা বিশ্বাসী ছিলেন না। জনকল্যাণ সাহিত্য রচনার মূল উদ্দেশ্য--- গান মতো জনহিত ব্রতীর এরকম অভিলাষ থাকাই সম্ভব।

বিদ্যাসাগর কর্তৃক অনুদিত গ্রন্থ
বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ রচনা অনুবাদ মূলক সংস্কৃত, ইংরেজি ও হিন্দুস্থানীয থেকে স্বাধীনভাবে ভাষান্তর।১৮৪৭ থেকে ১৮৯১ সালের মধ্যে তিনি অনেক গ্রন্থের অনুবাদ করেছিলেন।
১. 'বেতাল পঞ্চবিংশতি'(১৮৪৭) সংস্কৃত গ্রন্থ থেকে নয়, হিন্দি 'বৈতাল পচ্চীসী' থেকে অনুবাদ। তখন তিনি হিন্দি ভাষা শিখেছিলেন, সেই ভাষা জ্ঞান পরীক্ষা করেছেন এই অনুবাদে।
২. 'শকুন্তলা'(১৮৫৪) কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তল'- নাটকের স্বচ্ছন্দ গদ্যানুবাদ।
৩. 'সীতার বনবাস'(১৮৬০) ভবভূতির 'উত্তরচরিত' এবং বাল্মিকী রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের আখ্যানের অনুসরণ।
৪. 'ভ্রান্তিবিলাস'(১৮৬৯) শেক্সপীয়রের 'Comedy of Errors' এর গদ্যে অনুবাদ -- অবশ্য শেক্সপীয়রীয় বিদেশি কাহিনীটিকে দেশীয় পরিচ্ছদ দেবার জন্য নাটকের পাত্র পাত্রীর নাম পাল্টে তিনি ভারতীয় নাম দিয়েছেন,ফলে বিদেশি কাহিনী একেবারে এদেশী রুপ ধরেছে। এগুলি হল বিশুদ্ধ সাহিত্য গ্রন্থের অনুবাদ। কাব্য বা নাটকের অনুবাদে তিনি কিন্তু গদ্য আখ্যানের রীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে এ গুলিতে এক প্রকার নতুন স্বাদ সঞ্চারিত হয়েছে। এছাড়া তিনি কয়েকখানি পাঠ্য গ্রন্থেরও অনুবাদ করেছিলেন। যথা:
মার্শম্যানের History of Bengal এর কয়েক অধ্যায়ে অবলম্বনে' 'বাঙ্গালার ইতিহাস'( ১৯৪৮),
চেম্বার্সের 'Biographies' অবলম্বনে 'জীবনচরিত'(১৯৪৯) ও 
Rudiments of knowledge'-অবলম্বনে 'বোধোদয়'(১৮৫১) এবং ঈশপের গল্প ফেবলস অবলম্বনে 'কথামালা'(১৮৫৬) রচনা করেন। 

অনুবাদ গুলি যথার্থ মৌলিক গ্রন্থের মত মর্যাদা পেয়েছে --কোন কোনটি প্রায় ক্লাসিক সাহিত্যের পর্যায়ে উঠে গেছে। অনুবাদ ভিন্ন অতি দ্রুত গদ্যসাহিত্যের উন্নতি করা যায় না। সেই জন্য নিছক রূপচর্চার ছেড়ে দিয়ে শাশ্বত প্রতিভাকে অনুবাদ কর্মে নিয়োগ করেছিলেন।

বিদ্যাসাগরের মৌলিক পুস্তিকাঃ

বিদ্যাসাগরের মৌলিক পুস্তিকার সংখ্যাও কিছু কম নয়।
'সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃতি সাহিত্য শাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব'(১৮৫৩) বাঙালির লেখা সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস।
'বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব'(১ম খন্ড -১৮৫৫,২য় খন্ড --ঐ) এবং
'বহুবিবাহ রচিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব'(১ম --১৮৭১,২য়-১৮৭৩) শীর্ষক পুস্তিকা গুলিতে তাঁর অভ্রান্ত যুক্তি তথ্যের এবং তীক্ষ্ম বিশ্লেষণ যথার্থ প্রাবন্ধিকের প্রতিভা সুপ্রমাণিত হয়েছে। যাঁরা তাঁকে শুধু অনুবাদক বলে তার সাহিত্য- প্রচেষ্টাকে লঘু করবার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা এই মৌলিক প্রবন্ধ পুস্তিকা গুলি পড়ে দেখেননি।
তাঁর স্বরচিত জীবনচরিত'বিদ্যাসাগরচরিত'(১৮৯১) এবং 'প্রভাবতী সম্ভাষণ'(আনুমানিক -১৮৬৩) বিশুদ্ধ সাহিত্যকর্ম হিসেবে অতীব সুখপাঠ্য হয়েছে।তাঁর আত্মজীবনীটি বাংলা জীবনী সাহিত্যের সম্পদবিশেষ।
এছাড়া 'অতি অল্প হইল'(১৮৭৩),'আবার অতি অল্প হইল'(১৮৭৩) এবং ' ব্রজবিলাস'(১৮৮৪) তিনখানি পুস্তিকা 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য' এই ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়।
'রত্নপরীক্ষা'(১৮৬৬) 'কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য' ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে প্রত্যক্ষভাবে তার নাম না থাকলেও অন্যান্য প্রমাণের বলে এগুলো তার রচনা বলেই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে।

বাংলা গদ্যে যদি সন্নিবেশ করে, পদবন্ধে ভাগ করে এবং সুললিত শব্দ বিন্যাস করে বিদ্যাসাগর তত্ত্বের ভাষাকে রসের ভাষায় পরিণত করেছেন। বাংলা গদ্যের মধ্যেও এরকম ধ্বনিঝংকার ও সুরবিন্যাস সম্ভব, তা তারঁ আগে কেউ-ই জানতেন না।তাঁর পরিকল্পিত সাধু ভাষাই প্রার্ দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির লেখনীর মুখে ভাষা বের...............
জুগিয়েছে। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন," বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য ভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত,সুবিন্নস্ত,সুপরিচ্ছন্ন এবং সুসংযত করিয়া তাহাকে সহজগতি এবং কার্যকূশলকা দান করিয়াছেন।"
উল্লিখিত দৃষ্টান্ত থেকেই এ কথা সহজেই বোঝা যাবে যে, বাংলা গদ্যের কায়া নির্মাণে যারা দায়ী থাকুক না কেন, এর শ্রী ও হ্রী --- বিদ্যাসাগরের দান। শতাধিক বৎসর ধরে বাঙালি জাতি তার গদ্যরীতি অবলম্বন করে আসছে। আধুনিককালে গদ্যের অনেক বৈচিত্র দেখা গেছে, কিন্তু পদান্বয় ও যতি বন্ধনে এখনো আমরা বিদ্যাসাগরকে ছাড়িয়ে নতুন কোন পদ আবিষ্কার করতে পারিনি-- যদি কেউ সেরকম দুঃসাধ্য চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেও থাকেন, তবু সে রীতি এখনও-- জনসমর্থন লাভ করতে পারেনি, জনবল্লভতা তো দূরের কথা।

Wednesday, July 10, 2019

বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন বা প্রভাব

কবিতায়ঃ

১. "আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি তখন তেরোশত নদী
গেয়ে ওঠে আমার সোনার বাংলা,
সহস্র পাখির কণ্ঠে জয় বাংলা ধ্বনিত হতে থাকে;
 
আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি তখন সাতই মার্চ
জেগে ওঠে,
 
শেখ মুজিব ঘোষণা করেন স্বাধীনতা।"[মহাদেব সাহা]


২.
 আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত,সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।


৩.
 স্বাধীনতা –আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা


শামসুর রাহমানের মুক্তিযুদ্ধের কবিতার মধ্যে বহুল প্রচারিত দুটো কবিতা হচ্ছে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ এবং ‘স্বাধীনতা তুমি’। কবিতাদ্বয় যুগল কবিতা নামে পরিচিত। 

৪.
 তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র


৫.
 তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।


৬.
  আমরা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতাম। সব সময় মনে হতো কেউ যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। ঘুমের ভেতর চিৎকার করে উঠতাম কোনো কোনো রাতে। বধ্যভূমির ধারে বেঁধে রাখা জীবজন্তুর অনুরূপ আমরা আতঙ্কে জেনেছি নিত্যসঙ্গী বলে। এমন কোনো দিনের কথা মনে করতে পারি না, যেদিন হত্যা কিংবা ধরপাকড়ের কোনো না কোনো খবর কানে না আসতো।’ এই ছিল যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের বাসত্মবচিত্র। এই বিভীষিকাময় সময়ে লেখা তাঁর একটি কবিতায় যুদ্ধের চিত্র প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। যেমন –

কখনো নিঝুম পথে হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে কেউ গুলির আঘাতে।
মনে হয়, ওরা গুলিবিদ্ধ করে স্বাধীনতাকেই
দিন দুপুরেই জীপে একজন তরম্নণকে কানামাছি করে
নিয়ে যায় ওরা।
মনে হয়, চোখ বাঁধা স্বাধীনতা যাচ্ছে বধ্যভূমিতে। বেয়নেটবিদ্ধ লাশ বুড়িগঙ্গায় কি শীতলক্ষ্যায় ভাসে, মনে হয়, স্বাধীনতা লখিন্দর যেন,
বেহুলা বিহীন,
জলেরই ভেলায় ভাসমান।


৭. ঘাতকদের বর্বরতা দেখে আমাদের কবিরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কবিতার পঙ্ক্তিতে সেই ক্ষোভ ও ঘৃণা আরো তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা কাব্যগ্রন্থের ‘রক্তসেচ’ কবিতায় তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। 


‘টিক্কার ইউনিফর্মে শিশুর মগজ
যুবকের পাঁজরের গুঁড়ো।
নিয়াজীর টুপিতে রক্তের প্রস্রবণ
ফরমান আলীর টাইএর নীচে ঝুলন্ত তরম্নণী…
তুমি কি তাদের কখনো করবে ক্ষমা?’ (‘রক্তসেচ’)


৮. . শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জন সমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতা খানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।


০৯. স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।


১০. স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।


উপন্যাসে

আনোয়ার পাশা --- 'রাইফেল রুটি আওরাত'(১৯৭৩)

শওকত ওসমান লিখেছেন ৪টি  উপন্যাস ---জাহান্নাম হইতে বিদায়(১৯৭১),নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩),দুই সৈনিক (১৯৭৩),জলাঙ্গী (১৯৭৬)

সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন --- নীল দংশন(১৯৮১),নিষিদ্ধ লোবান(১৯৮১).

সেলিনা হোসেন লিখেছেন -- হাঙর নদীর গ্রেনেড (১৯৮৭).

রশীদ হায়দারের লিখেছেন --- 'নষ্ট জোছনায় এ কেমন অরণ্য (১৯৮২)।

হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন -- শ্যামল ছায়া(১৯৭৩), সৌরভ (১৯৮৪)

ইমদাদুল হক মিলন লিখেছেন -- 'ঘেরাও(১৯৮৪)।

শামসুর রাহমান লিখেছেন -- ' অদ্ভুত আঁধার এক(১৯৮৫).

আবু জাফর শামসুদ্দিন লিখেছেন -- 'দেয়াল (১৯৮৬)

হারুন হাবিব লিখেছেন - 'প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম(১৯৮২).

 

নাটকেঃ

১৯৭১ সালেই মমতাজ উদদীন আহমদ লিখেছেন ৪টি নাটক

* স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা,এবারের সংগ্রাম,স্বাধীনতার সংগ্রাম,বর্ণচোর।

সবগুলো নিয়ে গঠিত ও প্রকাশিত নাট্যগ্রন্থ " স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা"

এছাড়াও তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে ধরা যায়ঃ 

'বিবাহ', ও 'কি চাহ শঙ্খচিল'।

আলাউদ্দিন আল আজাদ লিখেছেন --'নিঃশব্দ যাত্রা(১৯৭২), নরকে লাল গোলাপ(১৯৭৪).

জিয়া হায়দার লিখেছেন -- ' সাদা গোলাপে আগুন(১৯৮২),

নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছেন --- 'যে অরণ্যে আলো নেই(১৯৭৪),আমি বীরাঙ্গনা বলছি(১৯৯৬)

সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন -- 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়(১৯৭৬)।

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post