Ad-1

Showing posts with label ইসলামী আদর্শে জীবন গঠন. Show all posts
Showing posts with label ইসলামী আদর্শে জীবন গঠন. Show all posts

Sunday, February 11, 2024

ইসরা ও মেরাজ কি?

ইসরা ও মিরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,  নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নিআমত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি তাঁর উচ্চ মর্যদা সম্পর্কে অবগত করেছেন সৃষ্টিজগৎকে। এই ঘটনা যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও সীরাতের সাথে সম্পর্কিত, সেভাবে তা ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাসেরও অংশ। এই ঘটনায় একদিকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা, অন্যদিকে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইলাহী হিকমত ও রহস্য। কিন্তু নবীজীর সশরীরে ইসরা ও মিরাজের বাস্তবতার উপর ঈমান আনার পর মুমিনের জন্য যে প্রয়োজনটি সর্বাগ্রে অনুভূত হয় তা হল কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীসের আলোকে ইসরা ও মিরাজের পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ইলম হাসিল করা।


রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কষ্টের মধ্যে, তখন আল্লাহ তাঁকে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করান। তাঁকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মানুষ ইতোপূর্বে যায়নি।


মিরাজের ঠিক আগে লাগাতার রাসূলুল্লাহর (সা:) জীবনে যেসব দুঃখ আসে:


তাঁর স্ত্রী খাদিজার (রা:) ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো প্রেরণাদাতা।

তাঁর চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো অভিবাবক, যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন।

তায়েফের দিন; যা ছিলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ দিন। (সহীহ বুখারী: ৩২৩১)

মিরাজের রাতের দুটো অংশ। একটি হলো ‘ইসরা’ এবং আরেকটি হলো ‘মিরাজ’। 

ইসরা হলো মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে রাসূলুল্লাহর (সা:) স্বল্পকালীন রাত্রিভ্রমণ। 

মিরাজ হলো- বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বমুখী সিঁড়ি বেয়ে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ। 

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ 

(বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)

মিরাজ নিয়ে হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা আছে। বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) একাধিকবার মিরাজে গিয়েছিলেন। কেউ বলেছেন দুইবার, কেউ বলেছেন তিনবার। 

তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ:) একাধিকবার মিরাজের বক্তব্যগুলো নাকচ করে দিয়ে বলেন: “এসব কথা শুধু অনুমান ভিত্তিক। এগুলো যাহেরী মাজহাবের দুর্বল বর্ণনাকারীদের কাজ। তারা কোনো যখন কোনো ঘটনায় বর্ধিত কোনো শব্দ পেয়েছে, সেটিকেই আলাদা একটি বর্ণনা মনে করেছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধপূর্ণ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিকে তারা আলাদা আলাদা ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে। সঠিক কথা হচ্ছে মক্কাতে নবুওয়াতের পর মাত্র একবার মিরাজ হয়েছে। এটিই মুহাদ্দিসীন ও গ্রহণযোগ্য ইমামদের মত। যারা বলে একাধিক মিরাজ হয়েছে, তাদের জন্য আফসোস।” 

(মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১৪-২১৫)

মিরাজ কবে হয়েছিলো? সীরাত লেখকদের মধ্যে এই নিয়ে নানান মত আছে। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আর-রাহিকুল মাখতূম’ বইয়ে ৬ টি মত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো:

যে বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়্যাত লাভ করেন, সেবছর। এটা ইমাম তাবরানির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। নবুওয়্যাতের ৫ বছর পূর্বে। এটা ইমাম আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম কুরতুবির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। হিজরতের ১৬ মাস পূর্বে। রামাদ্বান মাসে। নবুওয়্যাতের দশম বছর রজব মাসের ২৭ তারিখ। এটা আল্লামা মনসুরপুরীর (রাহিমাহুল্লাহ) মত।

হিজরতের এক বছর দুই মাস পূর্বে। মহররম মাসে।

হিজরতের এক বছর পূর্বে। রবিউল আউয়াল মাসে। 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

খাদিজা (রা:) ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হবার পূর্বে ইন্তেকাল করেন। আর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মিরাজের রাত্রে। সুতরাং, মিরাজ হয়েছিলো খাদিজার (রা:) ইন্তেকালের পর। 

এই তথ্যের আলোকে ৬ টি মতের মধ্যে প্রথম তিনটি মত বাদ পড়ে যায়। বাকি রইলো শেষ তিনটি মত। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহি:) এই সম্পর্কে বলেন: “শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনোটিকে কোনোটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মতো আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।” 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

সংক্ষেপে মিরাজের ঘটনা

রাসুল (সা.) এক রাতে হজরত উম্মেহানি (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। তার অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং তাকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান।

জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জমজমের পাশে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ‘কলব’ (অন্তরাত্মা) বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ স্বর্ণের পাত্রে রেখে আবার বক্ষে স্থাপন করেন। এরপর তার দুই কাঁধের মাঝে নবুয়তের সিলমোহর স্থাপন করেন।

এরপর তারা বুরাক নামক বাহনে করে নবী (সা.)-কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। 

(বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৭)

পথিমধ্যে মহানবী (সা.) মদিনা তায়্যিবা, মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থান সিনাই পর্বত এবং ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহেমে অবতরণ করেন।

ওই স্থানগুলোতে তিনি দুই রাকাত করে নামাজও আদায় করেন। (বাজ্জার : ৮/৪০৯, মুজামে কাবির : ৭১৪২, ফাতহুল  বারি : ৭/১৯৯)

বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন:

অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়েন। তারপর মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) তার সামনে এক পাত্র শরাব ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসেন। রাসুল (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাবজাত ও প্রকৃত জিনিস) গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল মামুরেও রাসুল (সা.)-এর সামনে ওই দুটি পাত্রসহ একটি মধুর পাত্রও আনা হয়েছিল। সেখানেও তিনি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৪)

ধারাবাহিকভাবে আসমান অতিক্রম: 

অতঃপর জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে প্রথম আসমানের কাছে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে রাসুল (সা.)-কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এ সময় যথাক্রমে প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সবাই হুজুর (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুরের কাছে ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। 

বায়তুল মামুর, জিবরাইল (আ.) ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পুনর্বার প্রবেশ করার পালা আসবে না। সপ্তম আসমান থেকে রফরফের (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি) মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের ও বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে তার স্বরূপে দেখেন, তার ছয় শ পাখা ছিল। নিজ চোখে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেন। অতঃপর এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিশেষে আরশে আজিমে গমন করেন। এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব পাওয়া যাবে) বিধান নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৯, ৩৩৪২, ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩ ও ২৬৪; ফাতহুল বারি: ৭/২৫০-২৫৯, মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৫-২৮৬)

ঊর্ধ্বজগতে যেসব নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তারাও বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্য তার সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায়। জিবরাইল (আ.)-এর ইঙ্গিতে নবীজি (সা.)-কে ইমাম বানানো হয়। তিনি নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এরপর বুরাকে সাওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫)

মিরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য

মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) ও তার উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়, 

এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। 

দুই. সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, যেখানে ঈমান-আনুগত্য ও দোয়ার আলোচনা রয়েছে। 

তিন. শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং এর বিনিময়ে ক্ষমার ওয়াদা। 

(মুসলিম, হাদিস নং: ২৭৯, তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৭৬)

মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাত্রে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বর্ণনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বিচিত্র ঘটনাবলি থেকে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল। যেমন

১। এ রাতে নবীজী জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজীকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম, হাদীস ১৬)

২। এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখম-ল ও বক্ষ আচঁড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরীল নবীজীকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গীবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, বরং দুনিয়াতে গীবতকারী এসব লোকদেরকে মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজী। (মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪)

৩। এই মহান রাতে নবীজী এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের স¤পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরীল নবীজীকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়ায করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। 

(মুসনাদে আহমদ, ৩/১৮১)

৪। শবে মেরাজে নবীজী এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সর্পে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরীল জানালেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমদ, ২/৩৫৩,)

৫। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন। 

(তিরমিযী, হাদীস ৩১৪৭)

৬। নবীজী জান্নাতে প্রবেশ করে একপাশে একটি হালকা আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের আওয়াজ? জিবরীল বললেন, মুয়াযযিন বেলালের কণ্ঠ। মিরাজ থেকে ফিরে নবীজী সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বললেন, বেলাল সাফল্য অর্জন করেছে, আমি তার জন্য এমন সব মর্তবা দেখেছি। (আহমাদ ১/২৫৭)

৭। শবে মিরাজে নবীজী এক পবিত্র খোশবুর কাছ দিয়ে গেলেন। তিনি সুধালেন, এটা কীসের  খোশবু? ফেরেশতারা বলল, এটা ফেরাউন-তনয়ার কেশ বিন্যাসকারিনী ও তার সন্তানদের খোশবু। কোনো একদিন চুল আচঁড়াতে গিয়ে তার হাত থেকে চিরুনী পড়ে গেলে সে বিসমিল্লাহ বলেছিল। ফেরাউন-তনয়া বলল আমার পিতা? মহিলা বলল, আমার রব তিনি, যিনি আপনার ও আপনার পিতার প্রতিপালক। ফেরাউন-তনয়া বলল, আমার পিতা ছাড়া কি তোমার অন্য কোনো রবও আছে? মহিলা বলল, হাঁ। এ খবর ফেরাউনের কানে গেলে সে মহিলাকে ডেকে বলল, আমি ছাড়া তোর আরও রব আছে? সে বলল, হাঁ, আমার ও আপনার প্রতিপালক তো মহান আল্লাহ তাআলা। শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ফিরাউন তামায় নির্মিত একটি বড় পাত্রে তেল ভরে খুব গরম করার আদেশ দিল। ওই মহিলা ও তার সন্তানদের এতে নিক্ষেপের হুকুম হল। ফিরাউনের লোকেরা এক এক করে সবাইকে তাতে নিক্ষেপ করতে লাগল। সবার শেষে মায়ের কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশুটির পালা এল। ছোট্ট শিশু মুখ ফুটে মাকে অভয় দিল। বলে উঠল, মা নেমে পড়ো, পিছপা হয়ো না। আখিরাতের আযাবের তুলনায় দুনিয়ার আযাব তো অতি তুচ্ছ। 

(মুসনাদে আহমদ, ১/৩০৯-৩১০)

উল্লেখ্য যে, শবে মেরাজে বিশেষ কোনো ইবাদত-বন্দেগির দিকনির্দেশনা ইসলামে নেই। তাই সম্ভাব্য এই দিনে রোজা রাখা, শবেকদরের মতো এই রাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করা, রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা, এই রাতকে উদ্দেশ করে মসজিদে ভিড় জমানো, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, রাত্রি জাগরণ করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদি শরিয়তসম্মত নয়।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার

আরিফুল হক এনামী

মুহাদ্দিস 

সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসা

খতিব

শাহ ছমিউদ্দিন রহ. জামে মসজিদ

লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম।

Saturday, August 26, 2023

মোনাজাত করার সময় গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

اللهم زدنا ولا تنقصنا واكرمنا ولا تهنا واعطنا ولا تحرمنا واثرنا ولا تؤثر علينا وارض عنا وارضنا.

অর্থ - "হে আল্লাহ, আমাদের বেশি দাও - কম দিও না।আমাদের সম্মান বৃদ্ধি করো-লাঞ্চিত করো না,আমাদের দান করো-বঞ্চিত করো না,আমাদের অন্যের উপর অধিকার দাও-অন্যদের অগ্রাধিকার দিও না এবং আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাক এবং আমাদেরকে তোমার উপর সন্তুষ্ট করো।"

★ নিম্নোক্ত দোয়াটি রাতে পড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় ---

لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو علي كل شيء قدير .سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر ولا حول ولا قوة الا بالله.

যে কোন কাজকে সহজ করে দেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ুন...

اللهم الطف بنا في تيسير كل عسير فان تيسير كل عسير عليك يسير.

অর্থ - হে আল্লাহ, প্রত্যেক কঠিন কাজ সহজ করার ব্যাপারে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন,কেননা প্রত্যেক কঠিন সহজ করে দেওয়া আপনার পক্ষে সহজ।


Tuesday, December 6, 2022

ভালোলাগা কোরানের আয়াত

আল ফাত্‌হঃ আয়াত নং ২৯]

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوٰنًا ۖ سِيمَاهُمْ فِى وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ

অর্থঃ মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন।

[আল মুল্‌কঃ আয়াত নং ২]

الَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيٰوةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

অর্থঃ যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়

Tuesday, November 1, 2022

সুরা ওয়াকিয়াহ ও তা পাঠের ফযিলত

সূরা আল- ওয়াক্বিয়া’র নামের অর্থ, নিশ্চিত ঘটনা।  এটি পবিত্র কোরআন শরীফের ৫৬তম সূরা। সূরা আল-ওয়াকিয়াহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়।

নিয়মিত মাগরিবের নামাজ শেষে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করলে অভাব আসে না। দরিদ্রতা কখনো গ্রাস করতে পারে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন—

আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)

এই সুরার তেলাওয়াত অব্যাহত রাখলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খাদ্যসংকট হয় না। হাদিসের স্পষ্ট ভাষ্য ঠিক এরকমই। একটি ঘটনা, সঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জীবনের শেষ বয়সে অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন। ওই সময় আমিরুল মুমিনিন হজরত ওসমান (রা.) তাঁকে দেখতে যান। তাদের মুখোমুখি কথাবার্তা ছিল এমন- জনাব, আপনার অসুখটা মূলত কী? অসুস্থ সাহাবির জবাব- জীবনে অনেক পাপ করেছি; অসুখ এটাই। প্রশ্ন, আপনার চাহিদা, বাসনা বা শখ কী? চটপট জবাব, শুধুই আল্লাহর রহমত। ফের প্রশ্ন, আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাই, আপনার মত কী? দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিলেন, কোনো প্রয়োজন নেই। ওসমান (রা.) অনুরোধের সুরে বললেন, কিছু উপহার গ্রহণ করুন। ইনতেকালের পর এই উপহার আপনার কন্যাদের কাজে লাগবে। এবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আপনি চিন্তা করছেন, আমার মেয়েরা দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা খেয়ে না খেয়ে, উপবাসে অভাবে জ্বলবে। আমি এমন আশঙ্কা করি না। সব মেয়েকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি, অবশ্যই তোমরা প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে। তিনি বলেন, প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতি রাতে কোনো ব্যক্তি সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করলে সে কখনো খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হবে না। (সূত্র : তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন/মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ), বায়হাকি /ঈমান অধ্যায়, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা-৪৯১)

দেশের প্রতিটি আবাসিক মাদরাসা, পীর-মাশায়েখদের দরবার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই মাগরিব নামাজ শেষে সুরায়ে ওয়াকিয়া তেলাওয়াত হয়। আলেমরা বলেন, এর সুফল কোরআন নাজিলের পর থেকে সবসময় পরীক্ষিত। ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর মেয়েদেরকে প্রতি রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত সুরা ওয়াকিয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। উভয়জাহানে এই সুরা পাঠের উপকার দান করুন। আমিন।










 

Tuesday, December 14, 2021

অন্যের ক্ষতি করা সম্পর্কে হাদিস

 চাকরীর ক্ষতি করার জন্য অন্যের বিরুদ্ধে  ষঢযন্ত্র করার পূর্বে অন্তত একবার ভেবে দেখুন আপনার চাকুরীটাই আপনার পরিবারের ভরণ পুষনের একমাত্র অবলম্বন।

অন্যের ক্ষতি করা বিষয়ে রাসুল সঃ বলেচেন

عن ابي بكر الصديق رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلله عليه وسلم "ملعون من ضار مؤمنا او مكربه" 

হযরত আবু বকর রঃ হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল সঃ ইরশাদ করেছেন " যে ব্যাক্তি কোন মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষঢযন্ত্র করে সে অভিশপ্ত" (তীরমিযি ১৯৪২)

Tuesday, September 14, 2021

বিচারক সম্পর্কে হাদীস

হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ক্বাযী (বিচারক) তিন প্রকারের, তার মধ্যে দু’ প্রকার ক্বাযী জাহান্নামী আর এক প্রকার জান্নাতী। যে ক্বাযী সত্য উপলব্ধি করবে এবং তদনুযায়ী ফায়সালাহ করবে সে জান্নাতবাসী হবে, আর এক ক্বাযী সে সত্য উপলব্ধি করবে কিন্তু তদনুযায়ী ফায়সালাহ করবে না, অন্যায়ের ভিত্তিতে ফায়সালাহ করবে সে জাহান্নামী হবে।আর এক ক্বাযী সত্য উপলব্ধি করতে পারবে না, অথচ অজ্ঞতার ভিত্তিতে লোকের জন্য ফায়সালাহ প্রদান করবে সে জাহান্নামী হবে।(তার নীতিভ্রষ্টতা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে)।  আবূ দাউদ 

তিরমিযী

Tuesday, November 3, 2020

ইস্তিগফারের গুরুত্ব

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

"যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার ( তাওবা) করবে, 

আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দিবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দিবেন। 

(আবু দাউদঃ ১৫২০; ইবনে মাজাহঃ ৩৮১৯)।

Wednesday, July 8, 2020

একজন সত্য সন্ধানী সাহাবী হযরত সালমান ফারসী(রা)

এটি একজন সত্য-সন্ধানী এক ব্যক্তির জীবন কথা। তিনি সালমান আল-ফারেসী।সত্যকে জানার জন্য তিনি যে ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন তা পৃথিবীতে অন্য কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই।

সালমান আল-ফারেসীর জবানেই তার সে চমকপ্রদ বর্ননায় তিনি বলেনঃআমি এক পারসী নওজোয়ান। আমার বাবা গ্রামের দাহকান-সর্দার। সর্বাধিক ধনবান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। আমি ছিলাম তার কাছে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তাই তিনি আমাকে মেয়েদের মত ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন। আমার বাবা-মার মাজুসী ধর্মে আমি কঠোর সাধনা শুরু করলাম এবং আমাদের উপাস্য আগুনের তত্ত্বাবধায়কের পদটি খুব তাড়াতাড়ি অর্জন করলাম। রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা উপাসনার সেই আগুন জ্বালিয়ে রাখা আমার দায়িত্ব।

বাবা ছিলেন বিরাট ভূ-সম্পত্তির মালিক। তিনি নিজেই তা দেখাশুনা করতেন। একদিন কোন কারণবশত তিনি বাড়িতে আটকে গেলেন,তাই আমাকে সেখানকার কাজকর্ম তদারক করতে যেতে বললেন।’ আমি খামারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথে খৃষ্টানদের একটি গীর্জার পাশ দিয়ে যাবার সময় তাদের কিছু কথার আওয়াজ আমার কানে ভেসে এলো। ভেতরে ঢুকে দেখি তারা তখন প্রার্থনা করছিলো। এ আওয়াজই আমাকে সচেতন করে তোলে।
দীর্ঘদিন ঘরে আবদ্ধ থাকার কারণে খৃষ্টান বা অন্য কোন ধর্ম সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞানই ছিল না। গভীরভাবে তাদেরকে আমি নিরীক্ষণ করলাম। তাদের প্রার্থনা পদ্ধতি আমার খুবই ভালো লাগলো এবং আমি তাদের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। মনে মনে বললামঃএ ধর্ম অতি উত্তম। আমি খামারে না গিয়ে সে দিনটি তাদের সাথেই কাটিয়ে দিলাম। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলামঃ – এ ধর্মের মূল উৎস কোথায়? – পবিত্রভূমি আস শ্যাম। ফিলিস্তিন।। সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম। সারাদিন আমি কি কি করেছি,তা জিজ্ঞেস করলে আমি যা যা দেখেছি সব বললাম। তিনি বললেনঃ ‘বেটা, সে ধর্মে কোন কল্যাণ নেই, তোমার ও তোমার পিতৃপুরুষের ধর্ম তা থেকেও উত্তম।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর শপথ, কখনো তা নয়। তাদের ধর্ম আমাদের ধর্ম থেকেও উত্তম।’ আমার কথা শুনে বাবা ভীত হয়ে পড়লেন এবং আমি আমার ধর্ম ত্যাগ আশংকায় তিনি আমার পায়ে বেড়ী লাগিয়ে ঘরে বন্দী করে রাখলেন। আমি সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই সে সুযোগ এসে গেল। গোপনে খ্রিস্টানদের কাছে এই বলে সংবাদ পাঠালাম যে, শাম অভিমুখী কোন কাফিলা তাদের কাছে এলে তারা যেন আমাকে খবর দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই শাম অভিমুখী একটি কাফিলা তাদের কাছে এলো। তারা আমাকে সংবাদ দিল। আমি আমার বন্দীদশা থেকে পালিয়ে গোপনে তাদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম। তারা আমাকে শামে পৌঁছে দিল। শামে পৌঁছে আমি জিজ্ঞেস করলামঃএ ধর্মের সর্বোত্তম ও সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি কে? তারা বললোঃ বিশপ, গীর্জার পুরোহিত। আমি তার কাছে গেলাম। বললামঃ আমি খ্রিষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। আমার ইচ্ছা, আপনার নিকট থেকে শিক্ষালাভ ও আপনার সাথে প্রার্থনা করা। তিনি বললেনঃ ভেতরে এসো। আমি তার সাথে থাকতে লাগলাম। বুঝতে পারলাম লোকটি অসৎ। কারণ সে তার সংগী সাথীদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেয়,কিন্তু যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য তার হাতে কিছু তুলে দেয়, তখন সে নিজেই তা আত্মসাত করে এবং নিজের জন্য পুঞ্জিভূত করে রাখে। গরীব মিসকীনদের সে কিছুই দেয় না। এভাবে সে সাত কলস স্বর্ণ পুঞ্জিভূত করে। চারিত্রিক অধপতন দেখে আমি তাকে ঘৃণা করতাম। কিছু দিনের মধ্যেই লোকটি মারা গেল। এলাকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায় তাকে দাফনের জন্য সমবেত হলো। তাদেরকে আমি বললামঃ তোমাদের এ বন্ধুটি খুবই অসৎ প্রকৃতির লোক ছিল। তারা ক্ষ্রিপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ তুমি তা কেমন করে জানলে। আমি তাদেরকে গোপন ভাণ্ডারটি দেখিয়ে দেই।এ দেখে তারা বললোঃ – আল্লাহর কসম আমরা তাকে দাফন করবো না। তাকে তারা শুলিতে লটকিয়ে পাথর মেরে তার দেহ জর্জরিত করে দিল। কিছুদিনের মধ্যেই অন্য এক ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করলো। আমি তারও সাহচর্য গ্রহণ করলাম।লোকটি দুনিয়ার প্রতি উদাসীন এবং আখিরাতের প্রতি অনুরাগী। একটা দীর্ঘ সময় তার সাথে আমি কাটালাম। যখন তার মরণ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, আমি তাকে বললামঃ – জনাব, আপনার মৃত্যুর পর কার সাহচর্যে কাটাবার উপদেশ দিচ্ছেন আমাকে? বললেনঃ এখানে সে সত্যের ধারক কেউ নেই । তবে মাওসেলে এক ব্যক্তি আছে, তিনি এ সত্যের এক বিন্দুও পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করেননি। তুমি সেখানে যাবে।তার মৃত্যুর পর মাওসেলে গিয়ে তার বর্নিত লোককে সব খুলে বললে তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থাকো। এই লোকটিও ভালো।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার মরণ সময় নিকটবর্তীহলে আমি তাকে বললামঃ – জনাব, আপনার মৃত্যুর পর কার কাছে যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন? বললেনঃ বেটা, এ সত্যের ধারক এখানে কেউ নেই, তবে ‘নাস্‌সিবীনে’ অমুক নামে এক ব্যক্তি আছেন, তুমি তার সাথে মিলতে পার। তার মৃত্যুর পর আমি নাস্‌সিবীনের সেই লোকটির সাথে সাক্ষাত করে সব খুলে বললে তিনি তার কাছে থাকতে বলেন এবংঅল্পদিনের মধ্যে অন্তিম সময় আসলে তাঁকে আমি বললামঃ আমার সম্পর্কে আপনি মোটামুটি সব কথা জানেন। এখন আমাকে কার কাছে যেতে বলেন? তিনি বললেনঃ অমুন নামে ‘আম্মুরিয়াতে’ এক লোক আছেন, তুমি তারই সুহবত অবলম্বন করবে। তার মৃত্যুর পর সেখানে উপস্থিত হয়ে আমি আমার সব কথা বললাম।
আমার কথা শুনে তিনি বললেনঃ আমার কাছে থাক। আল্লাহর কসম, তার কাছে থেকে আমি দেখতে পেলাম তিনি তার পূর্ববর্তী সংগীদের মত একই মত ও পথের অনুসারী। তার কাছে থাকাকালেই আমি অনেকগুলি গরু ও ছাগলের অধিকারী হয়েছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই তার জীবনের অন্তিম সময়ে হলে আমি তাকে বললামঃ আমার অবস্থা তো আপনি ভালোই জানেন। এখন আমাকে কি করতে বলেন, কার কাছে যেতে পরামর্শ দেন? বললেনঃ বৎস! আমরা যে সত্যকে ধরে রেখেছিলাম, সে সত্যের ওপর ভূ-পৃষ্ঠে জন্য কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট আছে বলে আমার জানা নেই। তবে, অদূর ভবিষ্যতে আরব দেশে একজন নবী আবির্ভূত হবেন। তিনি ইবরাহীমের দ্বীন নতুনভাবে নিয়ে আসবেন।তিনি তার জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বড় বড় কালো পাথরের যমীনের মাঝখানে খেজুর উদ্যানবিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরাত করবেন। দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট কিছু নিদর্শনও তার থাকবে। তিনি হাদিয়ার জিনিস তো খাবেন; কিন্তু সাদকার জিনিস খাবেন না। তার দু’কাঁধের মাঝখানে নুওয়াতের মোহর থাকবে। তুমি পারলে সে দেশে যাও। এরপর তিনি মারা গেলেন।একদিন সেখানে ‘কালব’ গোত্রের কিছু আরব ব্যবসায়ী এলো। আমি তাদেরকে বললামঃ আপনারা যদি আমাকে সংগে করে আরব দেশে নিয়ে যান, বিনিময়ে আমি আপনাদেরকে আমার এ গরু ছাগলগুলি দিয়ে দেব। তারা বললেনঃ ঠিক আছে। আমি তাদেরকে গুরু-ছাগলগুলি দিয়ে দিলাম। তারা আমাকে সংগে নিয়ে চললেন। যখন মদীনা ও শামে’র মধ্যবর্তী ‘ওয়াদী আল-কুরা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে এক ইহুদীর কাছে আমাকে বিক্রি করে দিল। আমি তার দাসত্ব শুরু করে দিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই বনী কুরাইজা গোত্রের তার এক চাচাতো ভাই আমাকে খরীদ করে এবং আমাকে ‘ইয়াসরিবে’ (মদীনা) নিয়ে আসে। এখানে আমি আম্মুরিয়ার বন্ধুটির বর্ণিত সেই খেজুর গাছ দেখতে পেলাম এবং তিনি স্থানটির যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী শহরটিকে চিনতে পারলাম। এখানে আমি আমার মনিবের কাছে কাটাতে লাগলাম। নবী (স.) তখন মক্কায় দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু দাস হিসাবে সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকায় তার সম্পর্কে কোন কথা বা আলোচনা আমার কানে পৌঁছেনি। কিছুদিনের মধ্যে রাসূল (স.) থেকে হিজরাত করে ইয়াসরিবে এলেন। আমি তখন একটি খেজুর গাছের মাথায় উঠে কি যেন কাজ করছিলাম, আমার মনিব গাছের নীচেই বসে ছিলো এমন সময় তার এক ভাতিজা এসে তাকে বললোঃ আল্লাহ বনী কায়লাকে (আউস ও খাজরাজ গোত্র) ধ্বংস করুন। কসম খোদার, তারা এখন কুবাতে মক্কা থেকে আজই আগত এক ব্যক্তির কাছে সমবেত হয়েছে, যে কিনা নিজেকে নবী বলে মনে করে। তার কথাগুলি আমার কানে যেতেই আমি ভীষণভাবে কাঁপতে শুরু করলাম।ভয় লাগলো গাছের নীচে বসা আমার মনিবের ঘাড়ের ওপর ধপাস করে পড়ে না যাই। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে সেই লোকটিকে বললামঃতুমি কি বললে? কথাগুলি আমার কাছে আবার বলো তো। আমার কথা শুনে আমার মনিব রেগে ফেটে পড়লো এবং আমার গালে সজোরে এক থাপ্‌পড় বসিয়ে দিয়ে বললোঃ এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি? যাও, তুমি যা করছিলে তাই কর। সেদিন সন্ধ্যায় আমার সংগৃহীত খেজুর থেকে কিছু খেজুর নিয়ে রাসূল (স.) যেখানে অবস্থান করছিলেন সেদিকে রওয়ানা হলাম। রাসূল (স.)নিকট পৌঁছে তাকে বললামঃ – আমি শুনেছি আপনি একজন পূর্ণবান ব্যক্তি। আপনার কিছু সহায়-সম্বলহীন সঙ্গী-সাথী আছেন। এ সামান্য কিছু জিনিস সদকার উদ্দেশ্যে আপনাকে দিলাম। এ কথা বলে খেজুরগুলি তার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি সঙ্গীদের বললেনঃ তোমরা খাও। কিন্তু তিনি নিজের হাতটি গুটিয়ে নিলেন, কিছুই খেলেন না। মনে মনে আমি বললামঃ এ হলো একটি। সেদিন আমি ফিরে এলাম। আমি আবারও কিছু খেজুর জমা করতে লাগলাম। রাসূল (স.) কুবা থেকে মদীনায় এলেন। আমি একদিন খেজুরগুলি নিয়ে তার কাছে গিয়ে বললামঃ ‘আমি দেখেছি, আপনি সদকার জিনিস খাননা। তাই এবার কিছু হাদিয়া নিয়ে এসেছি, আপনাকে দেয়ার উদ্দেশ্যে।’ এবার তিনি নিজে খেলেন এবং সঙ্গীদের আহ্‌বান জানালেন তারাও তার সাথে খেলেন। আমি মনে মনে বললামঃ এ হলো দ্বিতীয়টি। তারপর অন্য একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কাছে গেলাম। তিনি তখন ‘বাকী আল-গারকাদ’ গোরস্থানে তার এক সঙ্গীকে দাফন করছিলেন। আমি দেখলাম, তিনি গায়ে ‘শামলা’ (এক ধরনের ঢিলা পোশাক) জড়িয়ে বসে আছেন। আমি তাকে সালাম দিলাম। তারপর আমি তার পেছনের দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে লাগলাম। আমি খুঁজতে লাগলাম, আমার সেই আম্মুরিয়ার বন্ধুটির বর্ণিত নবুয়্যাতের মোহরটি। রাসূল (স.) আমাকে তার পিঠের দিকে ঘন ঘন তাকাতে দেখে বুঝতে পারলেন। তিনি তার পিঠের চাদরটি সরিয়ে নিলেন এবং আমি মোহরটি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। আমি তখন পরিষ্কারভাবে তাকে চিনতে পারলাম এবং হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাকে চুমুতে ভরে দিলাম ও কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসালাম। আমার এ অবস্থা দেখে রাসূল (স.)জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার খবর কি? আমি সব কাহিনী খুলে বললাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং আমার মুখ দিয়েই এ কাহিনীটা তার সংগীদের শোনাতে চাইলেন। আমি তাদেরকে শোনালাম। তারা অবাক হয়ে গেলেন, খুবই আনন্দিত হলেন। সালমান ইসলাম গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সালমান! তোমার মনিবের সঙ্গে মুক্তিপণের চুক্তি করে আজাদ হওয়ার ব্যবস্থা করো।’ তিনি বলেন, ‘মনিবের সঙ্গে আমার চুক্তি হলো, ৩০০ খেজুরগাছের চারা লাগিয়ে দেব এবং ৪০ উকিয়া স্বর্ণও দেব। এর বিনিময়ে মুক্তি লাভ করব। এই চুক্তির কথা আমি রাসুল (সা.)-কে জানালাম।’ তিনি সাহাবিদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের এ ভাইকে সাহায্য করো।’ তাঁরা প্রত্যেকে ১০, ২০, ৩০, যাঁর পক্ষে যা সম্ভব খেজুরের চারা দিয়ে সালমানকে সাহায্য করলেন। এভাবে তাঁর ৩০০ চারার ব্যবস্থা হয়ে গেল। মনিবের নির্ধারিত স্থানে চারাগুলো লাগানোর কাজে খোদ রাসুল (সা.) তাঁর সঙ্গে গেলেন।
কিছুদিন যেতে না যেতে এক লোক ডিমের মতো এক টুকরা স্বর্ণ নিয়ে উপস্থিত হলো রাসুল (সা.)-এর কাছে। রাসুল (সা.) সালমান (রা.)-কে ডেকে বলেন, ‘যাও এটা দ্বারা তোমার মুক্তিপণ পরিশোধ করো।’ এভাবে তিনি দাসত্বের জিঞ্জির থেকে মুক্তি লাভ করেন।

সালমান ফারসী থেকে ৬০ টি সহীহ্ হাদিস বর্ণিত আছে।কারো কারো মতে তিনি ২৫০ বছর বেচে ছিলেন, আবার কারো মতে ৩৫০ বছর।

তিনি মারা যাওয়ার পর তার ঘরে একটি বড় পেওলা,একটা থালা আর একটি পানির পাত্র ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।আল্লাহু আকবার। সত্যের ধর্ম গ্রহণের জন্য মাজুসি ধর্ম থেকে খ্রিষ্ট ধর্ম তারপর ইসলাম। এমন আর কোনো সত্যান্বেষী পৃথিবীতে আছেন বলে আমার জানা নেই।

সোর্সঃ
উইকিপিডিয়া,
মিশকাত(আসমাউর রিজাল),পৃষ্ঠা ৫৯৭।
আসহাবে রাসূলের জীবনকথা ১/১৭১,১৭২।

Sunday, June 28, 2020

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য

সূরা আল মু'মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১১৫

اَفَحَسِبۡتُمۡ اَنَّمَا خَلَقۡنٰکُمۡ عَبَثًا وَّاَنَّکُمۡ اِلَیۡنَا لَا تُرۡجَعُوۡنَ 

উচ্চারণঃ আফাহাছিবতুম আন্নামা-খালাকনা-কুম আবাছাওঁ ওয়া আন্নাকুম ইলাইনা-লা-তুরজা‘ঊন।

অর্থঃ তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?

Friday, March 27, 2020

কেউ কোন সংবাদ দিলেই তা যাচাই করা উচিত

সুরা হুজরাত, আয়াত ৬

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا اَنۡ تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ نٰدِمِیۡنَ
হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।

Thursday, October 3, 2019

ইসলামে অমুসলিমদের সুরক্ষাঃ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫২

তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।’ –সহিহ বোখারি : ৩১৬৬

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ -সুনানে নাসাঈ : ৪৭৪৭

রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না।’ -মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪

Thursday, May 16, 2019

স্ত্রী সহবাস করে গোসল না করে সেহরী খাওয়া

স্ত্রী সহবাস করে গোসল না করে সেহরী খাওয়া ও সেহরীর পর স্ত্রী সহবাস করা ৷

প্রশ্নঃজনাব স্ত্রী সহবাসের পর গোসল না করে কি সেহরী খাওয়া যাবে? আর সেহরী খাওয়ার পর যদি আযানের পুর্বে স্ত্রী সহবাস করা হয় তাহলে কি রোযার কোনো ক্ষতি হবে? অনুগ্রহপুর্বক জানাবেন ৷

উত্তরঃ ফরজ গোসল অবস্থায় পানাহার করা বৈধ ৷ তবে অযু করে নেয়া সুন্নত ৷ অতএব স্ত্রী সহবাসের পর গোসল না করে সেহরী খাওয়া যাবে ৷ তবে উত্তম হল, সময় থাকলে আগে গোসল করে নেয়া, তারপর সেহরী খাওয়া ৷
আর রমযানে সুবহে সাদেকের পুর্ব পর্যন্ত খানাপীনা, স্ত্রী-সহবাস সবকিছু বৈধ। যদিও সেহরী খাওয়ার পর হয়। তবে অবশ্যই নামাযের আগে গোসল করে মসজিদে জামাতের সহিত নামায আদায় করতে হবে ৷

-মেশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৭৪; ফতোয়ায়ে দারুল
উলুম। ৬/৪৯৬; মাসায়েলে রোজা ৫৭৷
#সংগৃহীত

Monday, November 12, 2018

ঈদের নামাযের নিয়ম

ঈদের নামাযের নিয়ম:
বছরে মাত্র দুইবার ঈদের নামায পড়তে হয়।তাই অনেকে আমরা ঈদের নামাযের নিয়ম জানা সত্ত্বেও ভুলে যাই এবং ভুল করি।নিম্নে এর নিয়ম দেওয়া হলো::::
অনেকের ধারণা নামাজের নিয়ত আরবিতে করা জরুরি। এমনটি ঠিক নয়। যে কোনো ভাষাতেই নামাজের নিয়ত করা যায়। নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট। ঈদের দিন ইমামের পেছনে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে মনে এই নিয়ত করে নিবে—‘আমি অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।’ এরপর
১. উভয় হাত কান বরাবর ওঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেধে নিবে। হাত বাঁধার পর ছানা অর্থাত্ ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’ শেষ পর্যন্ত পড়ে নেবে।
২. এরপর আল্লাহু আকবার বলে হাত কান পর্যন্ত ওঠিয়ে ছেড়ে দেবে।
৩. দ্বিতীয়বারও একই নিয়মে তাকবির বলে হাত ছেড়ে দেতে হবে।
৪. ইমাম সাহেব তৃতীয়বার তাকবির বলে হাত বেঁধে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য যে কোনো সূরা তিলাওয়াত করবেন। এ সময় মুক্তাদিরা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
৫. এরপর ইমাম সাহেব নিয়মমত রুকু-সিজদা সেরে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। মুক্তাদিরা ইমাম সাহেবের অনুসরণ করবেন।
৬. দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব প্রথমে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা পড়বেন।
৭. এরপর আগের মতো তিন তাকবির বলতে হবে। প্রতি তাকবিরের সময়ই উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
৮. চতুর্থ তাকবির বলে হাত না ওঠিয়েই রুকুতে চলে যেতে হবে।
৯. এরপর অন্যান্য নামাজের নিয়মেই নামাজ শেষ করে সালাম ফেরাতে হবে।
১০. ঈদের নামাজ শেষে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করবেন। জুমার খুতবার মতো এই খুতবা শোনা মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
১১. কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই।
১২. তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।
বি:দ্র: জানাযা ও ঈদের নামাযের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হলো ঈদের নামাযে তকবির বলার সময় হাত উঠাতে হয়,জানাযায় হাত উঠাতে হয় না।

Saturday, July 28, 2018

ইমানের ভিতর ও বাইরের শর্ত


ঈমানের আরকান ও আহকাম


সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আশা করি আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার অসিম রহমতে সুস্থ আছেন।আজ আপনাদের সম্মুখে একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উপস্থিত হলাম।বন্ধুরা আমরা মুসলিমরা সবাই কমবেশি নামাযের ফরয ও অজুর ফরয কি কি জেনে থাকি। কিন্তু এর পূর্বে যে ঈমানের আরকান ও আহকাম কি কি তা জানা অত্যাবশ্যক ছিল যার সম্পর্কে আমরা বেশিরভাগই গাফেল বললেই চলে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
এখন প্রশ্ন হলো,ঈমানের আরকান ও আহকাম কি?
জ্বী, আহকাম হচ্ছে ঈমান আনয়নের পূর্বের শর্তাবলী এবং আরকান হচ্ছে ঈমান আনার পরবর্তী শর্তাবলী।
আসুন,সেগুলো কি কি জেনে নিই।

ঈমানের আহকাম হচ্ছে- ৯টি
১/ইলম- সর্বপ্রথম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জ্ঞান অর্জন করা।
২/এয়াকিন- অর্থ; দৃঢ় বিশ্বাস, সন্দেহ না থাকা।
৩/আল কবুল- ঈমানকে কবুল করে নেওয়া অর্থাৎ ঈমানের জন্য বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হওয়া।
৪/আল ইনকিয়াত- সবকিছু মাথা পেতে নেওয়া।
৫/সত্যবাদিতা - সাদেক্বিন হয়ে যাওয়া।
৬/আল এখলাছ - একনিষ্ঠ হওয়া।
৭/আল এছতাকামত - ইবাদতে অটল থাকা।
৮/ মহব্বত - আল্লাহ ও রাসূলকে সর্বাধিক মহব্বত করা।
৯/তাগুদকে অস্বীকার করা - অর্থাৎ কুফরের বিরোধীতা করা।

ঈমানের আরকান হচ্ছে - ৬টি
১/আল্লাহর উপর ঈমান আনা
২/ফেরাশতাদের উপর ঈমান আনা
৩/কিতাব সমূহের উপর ঈমান আনা
৪/রাসূলগণের উপর ঈমান আনা
৫/কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনা ও
৬/তাকদ্বীর এর উপর ঈমান আনা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক:মোহাম্মদ আবুল কাশেম।
শিক্ষার্থীঃ আইয়ুব ফাউন্ডেশন টেকনিক্যাল কলেজ,পশ্চিম আমিরাবাদ, লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম।
গ্রামঃ আধুনগর,কাজির পাড়া।
লোহাগাড়া,চট্টগ্রাম।

Friday, January 26, 2018

মৃত ব্যক্তির হক ও জানাযার নামাযের নিয়ম

কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার উপর জীবিত ব্যক্তিদের চারটি কাজ ফরয হয়ে যায়।আর তা'হলো....
১. দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা।
২. অসিয়্যত পুরণ করা।
৩. ঋণ পরিশোধ করা।
৪. এবং তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা
। নিম্নে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো...

১.দাফন-কাফনের ব্যবস্থা :

কারও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশী মুসলমান মারা গেলে ওই এলাকার জীবিত পুরুষদের কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায় করা। জানাযার নামাজের মাধ্যমে তার জন্য দোয়া করা। পরকালীন মুক্তি কামনা করা করা। জানাযার নামাজ পড়লে নিজের মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়। স্মরণ হয় পরকালের কথা। এতেকরে পরবর্তীসময়ে অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা কমে যায়। বেশি বেশি ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তাই, সুযোগ থাকলে মৃতু ব্যক্তির জানাযায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হওয়া চাই।
জানাযার নামাজ শুরুর আগে পবিত্রা অর্জন করা আবশ্যক। অপবিত্র অবস্থায় জানাযা শুদ্ধ হবে না। ওজু কিংবা গোসল (যদি প্রয়োজন হয়) করে জানাযার নামাজে দাঁড়াতে হবে। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে।
আর জানাযার নামায চার তকবিরের সাথে পড়তে হয়।তকবির বলার সময় হাত উত্তোলন করা যাবে না এবং হাত ছেড়েও দেওয়া যাবে না।মনে রাখতে হবে,জানাযার নামায ঈদের নামাযের বিপরীত অর্থাৎ ঈদের নামাযে হাত তুলে ছেড়ে দিতে হয়।সংক্ষেপে জানাযার নামায..
১ নং তকবিরের পর ছানা পড়া।
২ নং তকবিরের পর দরুদ পড়া।
৩ নং তকবিরের পর দোয়া করা।
৪ নং তকবিরের পর সালাম ফিরাতে হবে।


বিস্তারিত নিয়মঃনামাজের তাকবির বলার আগে নিয়ত করতে হবে। যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন তাদের জন্য আরবিতে নিয়ত করা-ই ভালো। আরবি নিয়তটি হলো
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন, উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা, আরবাআ তাকরিরাতি ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতি, ওয়াচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবিয়্যি, ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যিতি ইকতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আকবার।
তবে ইমাম সাহেব ‘ইকতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম’ এর বদলে ‘আনা ইমামু লিমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু’ বলবে। আর ‘লিহাযাল মাইয়্যিতে’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের ক্ষেত্রে বলতে হবে। মহিলা লাশ হলে ওই শব্দটির স্থলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যিত’ বলবে।
আর যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন না, তারা মনে মনে বা উচ্চস্বরে বাংলায় বলবে ‘আমি অতিরিক্ত চার তাকবিরে জানাযা নামাজ ফরজে কেফায়া ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম।’ তারপর আল্লাহু আকবার বলে ইমামের সাথে হাত বাঁধবে।
প্রথমেই ইমাম সাহেব ও মুক্তাদিগণ ছানা পড়বে। আরবি ছানা
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
ছানা পড়া শেষে ২য় তাকবির বলে দুরুদ শরিফ পড়বে। আরবি দুরুদ শরিফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দুরুদ শরিফ শেষে ৩য় তাকবির বলে জানাযার দোয়া পড়বে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়বে
اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
আর লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে এই দোয়া পড়বে
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে এই দোয়া পড়বে
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
দোয়া শেষে ৪র্থ তাকবির বলে ইমাম সাহেব ডান ও বাম পাশে সালাম ফিরাবেন। সঙ্গে মুক্তাদিগণও সালাম ফিরাবেন। নামাজ শেষ করেই হাত উঠিয়ে দোয়া করা মাকরূহ। কারণ জানাযার নামাজ-ই মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোয়া। তবে দাফন সম্পন্ন করার পর দোয়া করতে পারবে। নবীজি (স) ও সাহাবীগণ এমনটা করতেন।

কবরে মাটি দেওয়ার সময় পড়ার দোয়া
রাসূল(সা) মেয়ে উম্মে কুলসুম রাঃ কে কবরে রাখার সময় এ দুআ পড়েছেন।হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ ابْنَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” {مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ، وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى} [طه: 55
সকল মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসকে জঈফ বলে মন্তব্য করলেও কেউ একে জাল বা বানোয়াট বলে মন্তব্য করেননি। তাই এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে রাসূল সাঃ থেকে সুনিশ্চিত প্রমাণিত সুন্নত না মনে করে এমনিতে আমল করাতে কোন সমস্যা নেই। এ আমলকে বিদআত বলা দ্বীনী বিষয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।

রচনায় ও সম্পাদনায়
জহির উদ্দীন

Sunday, July 16, 2017

আত্মীয়দের সঙ্গে ভাল ব্যবহার

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنِ الْعَلَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونَ، وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ، وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ، قَالَ: «لَئِنْ كَانَ كَمَا تَقُولُ كَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ، وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ»

হযরত আবু   হুরায়রা (রাঃ) হতে  বর্ণিত
তিনি বলেন,

এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে। আমি তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে, কিন্তু আমি তা সহ্য করি। তিনি বলেনঃ যদি তোমার বক্তব্য সঠিক হয়, তবে তুমি যেন তাদের মুখে উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছে। তোমার কারণে তাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী তাদের মোকাবিলায় তোমার সাথে থাকবেন ।
(মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)।

আদাবুল মুফরাদ,

Thursday, May 11, 2017

শবে বরাতের ফজিলত


শবে বরাতের ফজীলত ও আমল:-
বছরের একটি ফজীলতপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুন মিন নিসাফি শা’বান তথা লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। এ লাইলাতুল বরাতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলিমের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে বলা হয়েছে লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। 
অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসকে বলা হয়েছে রমজান শরীফের প্রস্তুতির মাস।
লাইলাতুল বারাআতের অনেক তাৎপর্য, ফযীলত ও বরকত রয়েছে। মহানবী ( সা ) এরশাদ করেনঃ শাবান মাস হল আমার মাস আর পবিত্র রমজান মাস হল মহান আল্লাহ তাআলার মাস। তিনি আরও বলেন, তোমরা শাবানের চাঁদ সঠিকভাবে হিসাব রাখ।কেননা শাবানের চাঁদের হিসাব ঠিক হলে, রমজানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে। ( মিশকাত শরীফ-১১৫পৃ )

শা’বান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে- লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত। লাইলাতুল বারাআত হচ্ছে-গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের রাত্রি। অর্থাৎ, এ রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করার মাধ্যমে মুমিন-মুসলামনদের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে থেকে।

শা’বান এবং শবে বারাআতের করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সা ) এরশাদ করেন,
শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। যখন তোমাদের নিকট শাবানের রাত্রি ( শবে বারাআত ) উপস্থিত হবে, তখন তোমরা সেই রাতটি জাগ্রত থাক ( নামাজ পড়ে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাসবীহ পড়ে, যিকির করে, দুআ করে ) এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কারণ, এ রাতে মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ আনেন এবং তিনি ঘোষণা করেন- আছে কি এমন কোন ব্যক্তি যে, তার গুনাহ মাফীর জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিব। আছে কি এমন কোন রিযিক প্রার্থনাকারী, যে আমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করবে? আমি তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দিব। আছে কি এমন কোন বিপদগ্রস্ত, যে আমার নিকট বিপদ থেকে মুক্তি চাইবে? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে পূর্ণ রাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে এবং বান্দাদের উপর রহমত বৃষ্টির ন্যায় নাজিল হতে থাকে।( ইবনে মাজাহ শরীফ )
হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রা ) বর্ণনা করেন, মহানবী ( সা ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন। মহানবী ( সা ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়।

হযরত আয়েশা ( রা ) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে মহানবী ( সা ) বলেন, আমি এক রাতে মহানবী ( সা )-কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আ ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ, লাইলাতুল বারাআত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও। ( মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃ )

হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রা ) বলেন, রাসূলে করীম ( সা ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে ( শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে ) সৃষ্টির দিকে ( রহমতের ) দৃষ্টি দেন এবং মুশরীক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

উক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকে।

যদি শবে বরাতের ব্যাপারে অন্য কোন হাদীস নাও থাকত, তবুও এ হাদীসটিই এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণ করার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। তদুপরি দশজন সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফজীলত, মর্যাদ ও আমল সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এর কোন কোনটির সনদ দূর্বল। আর এই সনদগত দূর্বলতার কারণে কেউ কেউ বলে দিয়েছেন, এ রাতের ফজীলত ভিত্তিহীন। 

কিন্তু মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণের ফয়সালা হল, কোন একটি হাদীস যদি সনদগতভাবে দূর্বল হয়, তারপর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা তা সমর্থিত হয়, তাহলে এ সমর্থনের কারণে তার দূর্বলতা দূর হয়ে যায়।
(ফাতহুল কাদীর, ১ম খন্ড-৪৬৭পৃ, ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খন্ড-২৬৬ পৃ )

ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে শবে বরাতঃ (মাসিক পত্রিকা- আদর্শ নারী থেকে সংগৃহীত )ফিকহে হানাফীঃ
আল্লামা শামী, ইবনে নুজাইম, আল্লাম শরমবুলালী, শাইখ আব্দুল হক দেহলভী, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, মাওলানা আব্দুল হক লাখনভী, মুফতী মুহাম্মদ শফী, মুফতী তাকী উসমানীসহ উলামায়ে হানাফীয়ার রায় হল, শবে বরাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী জাগ্রত থেকে একাকীভাবে ইবাদত করা মুস্তাহাব। তবে এর জন্য জামাআত বদ্ধ হওয়া যাবে না।
( আদ-দুররুল মুখাতার, ২য় খন্ড-২৪-২৫পৃ, আল বাহরুর রায়িক, ২য় খণ্ড-৫২ পৃ, মা সাবাতা বিসসুন্নাহ-৩৬পৃ, মারাকিল ফালাহ-২১৯পৃ )

ফিকহে শাফেয়ীঃ ইমাম শাফেয়ী ( র)-এর মতে, শাবানের ১৫তম রাতে অধিক অধিক দুআ কবুল হয়ে থাকে। ( কিতাবুল উম্ম, ১ম খণ্ড-২৩১পৃ )

ফিকহে হাম্বলীঃ শাইখ ইবনে মুফলী হাম্বলী ( র ), আল্লাম মনসুর আল বাহুতী, ইবনে রজর হাম্বলী প্রমুখ হাম্বলী উলামায়ে কেরামের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ( আল মাবদা, ২য় খণ্ড-২৭পৃ, কাশফুল কিনা,১ম খণ্ড-৪৪৫পৃ, লাত্তায়িফুল মাআরিফ-১৫১পৃ )

ফিকহে মালেকীঃ ইবনে হাজ্ব মালেকী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন, সালফে সালেহীনগণ এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ( আল মাদখাল,১ম খণ্ড-২৯২পৃ )

শবে বরাতের আমল:-
রাতে ইবাদত করা
হযরত আলা ইবনে হারিস ( র ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়িশা ( রা ) বলেন,একবার রাসূল ( সা ) নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা বা ও হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, তা নয়, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা। নবীজী ( সা ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সা ) ভাল জানেন। রাসূল ( সা ) বললেন, এটা হল অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানে তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। ( বায়হাকী, ৩য় খন্ড-৩৮২পৃ )

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া উত্তম, যাতে সিজদাও দীর্ঘ হবে। এছাড়াও এ রাতে কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার ইত্যাদি আমল করা যায়।

পরদিন রোযা রাখা
হযরত আলী ( রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন,পনেরো শাবানের (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন।
( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪, বাইহাকী-শুআবুল ঈমান, হাদীস-৩৮২৩ )
এই রিওয়াতটির সনদ যইফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যইফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ( ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খন্ড-২৬৬পৃ )

ইবাদত করতে হবে নির্জনে
এ বিষটি মনে রাখতে হবে, এ রাতের আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে সম্মিলিত নয়; নির্জনে একাকীভাবে করণীয়। পুরুষদের জন্য তো ফরয নামাজ অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। তারপর তারা এবং মহিলারা যা কিছু নফল পরার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বেন। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীসে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম,২য় খন্ড-৬৩১পৃ, মারাকিল ফালাহ-২১৯পৃ )

শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসিমানী ( দামাম বারকাতুম ) বলেন, ইমাম আযম আবু হানীফা ( র ) বলেছেন, নফল ইবাদত এমনভাবে করবে যে, সেখানে কেবল তুমি আছ, আর আছেন আল্লাহ। তৃতীয় কেউ নেই। সুতরাং, যে কোন নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেই শরীয়তের অন্যতম মূলনীতি হল, তাতে জামাআত করা মাকরুহে তাহরীমী ও নিষিদ্ধ। ( ইসলাহী খুতুবাত, ৪র্থ খণ্ড-২৬৮পৃ )

হযরত আশরাফ আলী থানভী ( র )-এর মতঃ তিনি বলেন হাদীসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নত মত করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে।
প্রথমতঃ পনেরো তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সাথে সাথে গরীব মিসকীনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ঐ মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভাল হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত।

দ্বিতীয়তঃ রাত জেগে একা একা বা বিনা আমন্ত্রণে জড়ো হয়ে যাওয়া দু চারজনের সাথে ইবাদতে মশগুল থাকা।

তৃতীয়তঃ শাবানের পনেরো তারিখ নফল রোযা রাখা।এ রাতের কিছু ভিত্তিহীন কাজকর্ম (মাসিক আদর্শ নারী থেকে সংগৃহীত )

ইসলামে এ রাতের নামাজের বিশেষ কোন নিয়মনীতি নির্ধারিত নেই। কিন্তু কেউ কেউ শবে বরাতের জন্য আলাদ পদ্ধতির নামাজ আছে বলে মনে করেন। কিন্তু এ বিশেষ পদ্ধতির নামাজ সম্পর্কে যে রেওয়াতগুলো আছে, তা সবই অমূলক ও মওযু। হাদীস শরীফের কোন কিতাবে এসব রিওয়াতের নাম নিশানা পর্যন্ত নেই।

এছাড়া, এ রাতে খিচুড়ি বন্টন, হালুয়া রুটি প্রথা, মসজিদ ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি নাজায়িয ও বিদআত কাজ। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তান এসব অযথা কাজ-কর্মে মানুষকে লাগিয়ে দেয়। এসব থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে।

আর খেয়াল রাখতে হবে, এ রাতে জাগ্রত থাকতে গিয়ে ফজরের নামাজ ফওত না হয়ে যায়। কেননা, এ সারারাত বিশেষ আমলও ফজরের ফরজ নামাজের বিকল্প বা সমতুল্য হতে পারবে না। যেহেতু, ফজরের নামাজ হচ্ছে ফরজ আর এ রাতের বিশেষ ইবাদত বন্দেগী হচ্ছে নফল।

তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে অনেকে এ শবে বরাত নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিতর্ক করতেছে।অত বিতর্কে না জড়ানোটা খুব ভালো।
শবে বরাতের ব্যাপারে যে হাদিসগুলো আছে সেগুলোর সনদ একটু দুর্বল।কিন্তু দুর্বল হলেও যেহেতু হাদিসের বিপরীত আমল না করার কোন হাদিস নেই,সেহেতু এ হাদিসগুলোর ওপর আমল করা যায়। এ ব্যাপারে পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে দুর্বল হাদিস আছে।গুরুত্ব নেই এরকম তো কোন হাদিস কোন হাদিস পাইনি।তাই এ রাতে ইবাদত করা উত্তম।

তবে শবে বরাত বলে কোন নামায নেই।অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন: নফল নামায,জীবনের কাযা নামায,অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কোরান তেলাওয়াত,বা শুধু কোরান পড়া,যিকির আযকার করা যেতে পারে এবং তা এ রাতে করাও উত্তম।না করলে গুনাহ হবে তা নয়।আবার বলছি,এশা ও ফজরেরর নামায জামাতে আদায় করার চেষ্টা করুন।

অনেকেই বলে এ রাতে ইবাদত করা বিদআত হবে,
বেদআত হোক তাতে সমস্যা কি?
বেদআত দুই প্রকার,
১. ভালো বিদআত বা বিদআতে হাসানাহ।
২.খারাপ বিদআত বা বিদআতে সাইয়্যাহ।
ভালোটা ভালো,,,
খারাপটা খারাপ
যেহেতু এটা ভাল,, সেহেতু এটা করলে সমস্যা কি?
আবার খট্টররা বলবে,,,বেদআত বেদআতই,,, এটা আবার প্রকার হবে কেন?
আরে ভাই এত দাত বা বেদআত করে লাভ নেই,এ রাতে ইবাদত করলে গুনাহ হবে,এরকম কোন দলিল আছে??
উত্তর যদি হয় : না,,,,,
তা হলে আমি ইবাদত করবো,আগামিকাল রোযা রাখব। আপনার সমস্যা আছে?

অত তর্ক বুঝি না,ইবাদত বুঝি,তাই ইবাদত করবো।গুনাহ হলে বলো,কোথায় লেখা আছে।

সুতারাং তর্ক না করে ইবাদত করো।।

সঠীক নিয়মে এ রাতে আমল করেই কেবল উপরোক্ত ফজীলতের অধিকারী হওয়া যাবে। আর বিশেষ করে সারা জীবনের গুনাহ থেকে তওবা করে এ রাতে আত্মশুদ্ধির প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী সারাজিবন চলা আমাদের কর্তব্য।
[আল্লাহ সকলকে তাঁর ইবাদত বা গোলামী করার তৌফিক দান করুন।আ...মীন...

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post