Ad-1

Sunday, February 11, 2024

ইসরা ও মেরাজ কি?

ইসরা ও মিরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,  নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নিআমত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি তাঁর উচ্চ মর্যদা সম্পর্কে অবগত করেছেন সৃষ্টিজগৎকে। এই ঘটনা যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও সীরাতের সাথে সম্পর্কিত, সেভাবে তা ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাসেরও অংশ। এই ঘটনায় একদিকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা, অন্যদিকে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইলাহী হিকমত ও রহস্য। কিন্তু নবীজীর সশরীরে ইসরা ও মিরাজের বাস্তবতার উপর ঈমান আনার পর মুমিনের জন্য যে প্রয়োজনটি সর্বাগ্রে অনুভূত হয় তা হল কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীসের আলোকে ইসরা ও মিরাজের পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ইলম হাসিল করা।


রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কষ্টের মধ্যে, তখন আল্লাহ তাঁকে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করান। তাঁকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মানুষ ইতোপূর্বে যায়নি।


মিরাজের ঠিক আগে লাগাতার রাসূলুল্লাহর (সা:) জীবনে যেসব দুঃখ আসে:


তাঁর স্ত্রী খাদিজার (রা:) ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো প্রেরণাদাতা।

তাঁর চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো অভিবাবক, যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন।

তায়েফের দিন; যা ছিলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ দিন। (সহীহ বুখারী: ৩২৩১)

মিরাজের রাতের দুটো অংশ। একটি হলো ‘ইসরা’ এবং আরেকটি হলো ‘মিরাজ’। 

ইসরা হলো মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে রাসূলুল্লাহর (সা:) স্বল্পকালীন রাত্রিভ্রমণ। 

মিরাজ হলো- বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বমুখী সিঁড়ি বেয়ে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ। 

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ 

(বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)

মিরাজ নিয়ে হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা আছে। বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) একাধিকবার মিরাজে গিয়েছিলেন। কেউ বলেছেন দুইবার, কেউ বলেছেন তিনবার। 

তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ:) একাধিকবার মিরাজের বক্তব্যগুলো নাকচ করে দিয়ে বলেন: “এসব কথা শুধু অনুমান ভিত্তিক। এগুলো যাহেরী মাজহাবের দুর্বল বর্ণনাকারীদের কাজ। তারা কোনো যখন কোনো ঘটনায় বর্ধিত কোনো শব্দ পেয়েছে, সেটিকেই আলাদা একটি বর্ণনা মনে করেছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধপূর্ণ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিকে তারা আলাদা আলাদা ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে। সঠিক কথা হচ্ছে মক্কাতে নবুওয়াতের পর মাত্র একবার মিরাজ হয়েছে। এটিই মুহাদ্দিসীন ও গ্রহণযোগ্য ইমামদের মত। যারা বলে একাধিক মিরাজ হয়েছে, তাদের জন্য আফসোস।” 

(মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১৪-২১৫)

মিরাজ কবে হয়েছিলো? সীরাত লেখকদের মধ্যে এই নিয়ে নানান মত আছে। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আর-রাহিকুল মাখতূম’ বইয়ে ৬ টি মত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো:

যে বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়্যাত লাভ করেন, সেবছর। এটা ইমাম তাবরানির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। নবুওয়্যাতের ৫ বছর পূর্বে। এটা ইমাম আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম কুরতুবির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। হিজরতের ১৬ মাস পূর্বে। রামাদ্বান মাসে। নবুওয়্যাতের দশম বছর রজব মাসের ২৭ তারিখ। এটা আল্লামা মনসুরপুরীর (রাহিমাহুল্লাহ) মত।

হিজরতের এক বছর দুই মাস পূর্বে। মহররম মাসে।

হিজরতের এক বছর পূর্বে। রবিউল আউয়াল মাসে। 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

খাদিজা (রা:) ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হবার পূর্বে ইন্তেকাল করেন। আর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মিরাজের রাত্রে। সুতরাং, মিরাজ হয়েছিলো খাদিজার (রা:) ইন্তেকালের পর। 

এই তথ্যের আলোকে ৬ টি মতের মধ্যে প্রথম তিনটি মত বাদ পড়ে যায়। বাকি রইলো শেষ তিনটি মত। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহি:) এই সম্পর্কে বলেন: “শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনোটিকে কোনোটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মতো আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।” 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

সংক্ষেপে মিরাজের ঘটনা

রাসুল (সা.) এক রাতে হজরত উম্মেহানি (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। তার অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং তাকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান।

জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জমজমের পাশে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ‘কলব’ (অন্তরাত্মা) বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ স্বর্ণের পাত্রে রেখে আবার বক্ষে স্থাপন করেন। এরপর তার দুই কাঁধের মাঝে নবুয়তের সিলমোহর স্থাপন করেন।

এরপর তারা বুরাক নামক বাহনে করে নবী (সা.)-কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। 

(বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৭)

পথিমধ্যে মহানবী (সা.) মদিনা তায়্যিবা, মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থান সিনাই পর্বত এবং ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহেমে অবতরণ করেন।

ওই স্থানগুলোতে তিনি দুই রাকাত করে নামাজও আদায় করেন। (বাজ্জার : ৮/৪০৯, মুজামে কাবির : ৭১৪২, ফাতহুল  বারি : ৭/১৯৯)

বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন:

অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়েন। তারপর মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) তার সামনে এক পাত্র শরাব ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসেন। রাসুল (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাবজাত ও প্রকৃত জিনিস) গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল মামুরেও রাসুল (সা.)-এর সামনে ওই দুটি পাত্রসহ একটি মধুর পাত্রও আনা হয়েছিল। সেখানেও তিনি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৪)

ধারাবাহিকভাবে আসমান অতিক্রম: 

অতঃপর জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে প্রথম আসমানের কাছে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে রাসুল (সা.)-কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এ সময় যথাক্রমে প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সবাই হুজুর (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুরের কাছে ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। 

বায়তুল মামুর, জিবরাইল (আ.) ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পুনর্বার প্রবেশ করার পালা আসবে না। সপ্তম আসমান থেকে রফরফের (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি) মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের ও বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে তার স্বরূপে দেখেন, তার ছয় শ পাখা ছিল। নিজ চোখে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেন। অতঃপর এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিশেষে আরশে আজিমে গমন করেন। এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব পাওয়া যাবে) বিধান নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৯, ৩৩৪২, ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩ ও ২৬৪; ফাতহুল বারি: ৭/২৫০-২৫৯, মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৫-২৮৬)

ঊর্ধ্বজগতে যেসব নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তারাও বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্য তার সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায়। জিবরাইল (আ.)-এর ইঙ্গিতে নবীজি (সা.)-কে ইমাম বানানো হয়। তিনি নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এরপর বুরাকে সাওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫)

মিরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য

মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) ও তার উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়, 

এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। 

দুই. সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, যেখানে ঈমান-আনুগত্য ও দোয়ার আলোচনা রয়েছে। 

তিন. শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং এর বিনিময়ে ক্ষমার ওয়াদা। 

(মুসলিম, হাদিস নং: ২৭৯, তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৭৬)

মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাত্রে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বর্ণনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বিচিত্র ঘটনাবলি থেকে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল। যেমন

১। এ রাতে নবীজী জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজীকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম, হাদীস ১৬)

২। এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখম-ল ও বক্ষ আচঁড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরীল নবীজীকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গীবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, বরং দুনিয়াতে গীবতকারী এসব লোকদেরকে মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজী। (মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪)

৩। এই মহান রাতে নবীজী এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের স¤পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরীল নবীজীকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়ায করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। 

(মুসনাদে আহমদ, ৩/১৮১)

৪। শবে মেরাজে নবীজী এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সর্পে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরীল জানালেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমদ, ২/৩৫৩,)

৫। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন। 

(তিরমিযী, হাদীস ৩১৪৭)

৬। নবীজী জান্নাতে প্রবেশ করে একপাশে একটি হালকা আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের আওয়াজ? জিবরীল বললেন, মুয়াযযিন বেলালের কণ্ঠ। মিরাজ থেকে ফিরে নবীজী সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বললেন, বেলাল সাফল্য অর্জন করেছে, আমি তার জন্য এমন সব মর্তবা দেখেছি। (আহমাদ ১/২৫৭)

৭। শবে মিরাজে নবীজী এক পবিত্র খোশবুর কাছ দিয়ে গেলেন। তিনি সুধালেন, এটা কীসের  খোশবু? ফেরেশতারা বলল, এটা ফেরাউন-তনয়ার কেশ বিন্যাসকারিনী ও তার সন্তানদের খোশবু। কোনো একদিন চুল আচঁড়াতে গিয়ে তার হাত থেকে চিরুনী পড়ে গেলে সে বিসমিল্লাহ বলেছিল। ফেরাউন-তনয়া বলল আমার পিতা? মহিলা বলল, আমার রব তিনি, যিনি আপনার ও আপনার পিতার প্রতিপালক। ফেরাউন-তনয়া বলল, আমার পিতা ছাড়া কি তোমার অন্য কোনো রবও আছে? মহিলা বলল, হাঁ। এ খবর ফেরাউনের কানে গেলে সে মহিলাকে ডেকে বলল, আমি ছাড়া তোর আরও রব আছে? সে বলল, হাঁ, আমার ও আপনার প্রতিপালক তো মহান আল্লাহ তাআলা। শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ফিরাউন তামায় নির্মিত একটি বড় পাত্রে তেল ভরে খুব গরম করার আদেশ দিল। ওই মহিলা ও তার সন্তানদের এতে নিক্ষেপের হুকুম হল। ফিরাউনের লোকেরা এক এক করে সবাইকে তাতে নিক্ষেপ করতে লাগল। সবার শেষে মায়ের কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশুটির পালা এল। ছোট্ট শিশু মুখ ফুটে মাকে অভয় দিল। বলে উঠল, মা নেমে পড়ো, পিছপা হয়ো না। আখিরাতের আযাবের তুলনায় দুনিয়ার আযাব তো অতি তুচ্ছ। 

(মুসনাদে আহমদ, ১/৩০৯-৩১০)

উল্লেখ্য যে, শবে মেরাজে বিশেষ কোনো ইবাদত-বন্দেগির দিকনির্দেশনা ইসলামে নেই। তাই সম্ভাব্য এই দিনে রোজা রাখা, শবেকদরের মতো এই রাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করা, রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা, এই রাতকে উদ্দেশ করে মসজিদে ভিড় জমানো, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, রাত্রি জাগরণ করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদি শরিয়তসম্মত নয়।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার

আরিফুল হক এনামী

মুহাদ্দিস 

সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসা

খতিব

শাহ ছমিউদ্দিন রহ. জামে মসজিদ

লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post