১. মজিদ: কেন্দ্রীয় চরিত্র। সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক। কুসংস্কার, শঠতা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক।
মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করে এবং সেখানে সে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু
করে। ক্রন্দনরতা মেয়ে তার ভালাে লাগে।
২. রহিমা: মজিদের প্রথম স্ত্রী। শক্তিমত্তা তার বাইরের রূপ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঠাণ্ডা ও ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। স্বল্পভাষী ও মজিদের একান্ত অনুগত। গ্রামের লােকেরা তারই অন্যতম সংস্করণ।
৩. জমিলা: মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। প্রথম দেখায় মজিদকে দুলার বাপ মনে করে।মজিদের আচরণ তার কাছে ভালাে লাগতাে না। জিকিরের সময় সে বাড়ির বাইরে চলে আসায়
সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে। মজিদ তাকে ‘ঝি’ সম্বােধন করে তাড়িয়ে দেয়। মজিদের ধারণা
তাকে জ্বীনে আছর করেছে। তাই তাকে মাজারের সাথে বেঁধে রাখে।
৪. খালেক ব্যাপারি: প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। তার কাঁধেই গ্রামের সব দায়িত্ব। মজিদের অন্যতম
সহায়ক।
৫. আমিনা: খালেক ব্যাপারির রূপবতী প্রথম স্ত্রী।১৩ বছর বয়সে তার সঙ্গে বিয়ে হয়।রহিমার মত সেও নিঃসন্তান। তাই আউয়ালপুরের পীরের পানিপড়া খেতে চায়। কিন্তু মজিদ তা জানতে পারে এবং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে খালেক ব্যাপারিকে স্ত্রী তালাক দিতে বাধ্য করে।এবং তিরিশ বছর বয়সে তাকে তালাক দেওয়া হয়।
৬. তানু: খালেকের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রতি বছর আস্ত আস্ত সন্তান জন্ম দেয় বলে আমিনা বিবির সহ্য হয় না।
৭. ধলা মিয়া: খালেক ব্যাপারির দ্বিতীয় বউ।তানু বিবির বড় ভাই। খালেক ব্যাপারি তাকে আওয়ালপুরের পীরের কাছে পানি পড়া আনার জন্য পাঠায় কিন্তু সে ভয় পেয়ে ফেরত আসে
মজিদের কাছে। বুড়াের মতন সে ঢেঙ্গ-লম্বা মানুষ।
মােদাব্বের মিয়া: আক্কাসের বাবা। রাগ উঠলে তােতলায়।
৮. তাহের-কাদের: তাহের,কাদের,রতন ও হাসুনির মা এরা ভাই-বোন। তাদের বুড়াে বাবা বুড়ি মাকে চ্যালা কাঠ দিয়ে মারতে এলে তারা তা প্রতিরােধ করে। দাঁড় নেয়ে তারা মাছ শিকার করে। এদের বুদ্ধি-বিবেচনা থাকলেও এরা স্বার্থের ঘোরে ঢাকা।
৯. হাসুনির মা: তাহের-কাদের-রতনের বােন। রহিমাকে ধান ভানার কাজে সহায়তা করে। তার স্বামী মৃত।
১০. রতন: তাহের-কাদেরর কনিষ্ঠ ভাই।
১১. বুড়াে: তাহের-কাদের-রতন- হাসুনির মার বাবা। ঢেঙ্গা দীর্ঘ মানুষ। হাসুনির মাকে মনের আশা মিটিয়ে প্রহার করে। এর জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। মজিদ এ বিচারে রায় দেয়।
একদিন সন্ধ্যায় কোথায় যেনাে চলে যায়, আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এককালে বুদ্ধিমান লােক
ছিলাে। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরােধ ঘটিয়ে আজ সে নিঃসঙ্গ।
১২. বুড়ি:তাদের মা। যৌবনকালে হাসি-খুশি-ছটফটে মেয়ে ছিলাে। খই এর মত কথা ফুটতাে তার মুখ দিয়ে। কিন্তু এখন তার দেহ-মন পড়ে গেছে। নিজের স্বামী বুড়াে।যখন হাসুনির মাকে প্রহার করতে গেলে সে উঠোনে পা ছড়িয়ে দিয়ে বিলাপ শুরু করে দেয়।
১৩. হাসুনি: রাহিমা তার মােটাতাজা ছেলেকে পুষ্যি রাখতে চায়।
১৪. আক্কাস: গ্রামের শিক্ষিত যুবক। ইংরেজি পড়েছে। এখন গ্রামে স্কুল বানাতে চায়। কিন্তু মজিদ সেটা হতে দেয় না। তার বাবা মােদাব্বের মিয়াও তার বিরােধিতা করে।
১৫. দুদু মিঞা: সাত ছেলের বাপ।মজিদ তাকে কালেমা জানে কি না জিজ্ঞেস করলে মে ঘাড় ঘুরে আধাপাকা মাথা চুলকায়। মুখে তার লজ্জার হাঁসি-চোখ পিটপিট করে। মাথায় যেনাে ছিট। মজিদ তাকে ব্যাপারির মক্তবে কলেমা শিখার আদেশ দেয়। কারণে-অকারণে খেতে না পাওয়ার কথাটি বলা তার অভ্যাস।
১৬. দুদু মিঞার ছেলে: বাপের অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাসে। বাপের মাথা করার ভঙ্গিটা তার কাছে গাধার ভঙ্গির মত মনে হয়।
১৭. নানি-বুড়ি: আগামি বছর যখন তনু বিবির কোলে নতুন এক আগুন্তক টা ট্যাঁ করে উঠবে, তখন তার ডাক পড়বে।
১৮. সলেমানের বাপ: বৃদ্ধা-হাঁপানি রােগী। মজিদের মাজার আবিষ্কারের সময় সে দম খিচে লজ্জায় চোখ নত করে রাখে।
১৯. কানুর বাপ: মজিদকে এক ছিলিম তামাক এনে দেয়।
২০. পীর সাহেব: আউয়ালপুরের পীর। এক সময় তার চোখে আগুন ছিলাে। সে গাছে উঠে বসে থাকে।তার মুরীদদের ধারণা, পীর নাকি সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
২১. মতলব খা: ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট। পীর সাহেবের পুরানাে মুরিদ।
২২. লােকটি: যাকে মজিদ ধানের কথা জিজ্ঞেস করে। সে ঘাড় চুলকিয়ে নিতি-বিতি করে বলে, যা-ই
হয়েছে তা-ই যথেষ্ট। ছেলেপুলে নিয়ে দুই বেলা খেতে পারার কথা বলে সে। তার কোনাে একটা
কথায় মজিদ বৃক্ষের মত দাড়িয়ে থাকে।
২৩. খােনকার মােল্লা শেখ: সমাজে জানাযা পড়ায়। তার বাড়ির সামনে মূর্তি নজরে পড়ে।
২৪. সরকারি কর্মচারী: তিনি বাইরের বিদেশী। কিন্তু ভেতরে আসলে মুসলমান। তিনি গ্রামে পরদাদার আমলের কিছু কবরের কথা বলেন।
২৫. রেহান আলি: গ্রামের মাতব্বর। মজিদ যখন লােকদের গালাগাল করে, তখন সেও ছিলাে।
২৬. জোয়ান মদ্দ কালু মতি: মজিদের গালাগাল শুনে লজ্জায় মাথা হেঁট করে রাখে।
২৭. ছমিরুদ্দিন: কোচবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার রক্তাক্ত দেহ দেখে আবেদ-জাবেদের মনে দানবীয়
উল্লাস হওয়ার কথা কিন্তু তারা পাথর হয়ে যায়।
২৮. আবেদ-জাবেদ: ছমিরুদ্দিনকে দেখে পাথর হয়ে যায়।
২৯. কালু মিঞা: আউয়ালপুরের সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তার মাথা দু’ফাক হয়ে যায়।
৩০. ছুনুর বাপ: মরণরােগে যন্ত্রণা পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
৩১. খেতানির মা: পক্ষাঘাতে কষ্ট পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
৩২. খ্যাংটা বুড়ি: মাথায় শনের মত চুল। মাজারে এসে তীক্ষ্ম আর্তনাদ শুরু করে ছেলের জন্য।
৩৩. জাদু: খ্যাংটা বুড়ির একমাত্র ছেলে। বুড়ি ওর জন্য মাজারে এসে আর্তনাদ করে এবং মজিদের
দিকে পাঁচ পয়সা ছুড়ে মারে।
৩৪. মােদাসের পীর: নাম না জানা পীর। যাকে ঘিরেই মজিদের যত ভণ্ডামি, অভিনয় ও আধিপত্য
বিস্তার।
৩৫. বড় ডাক্তার: হাসপাতালের বড় ডাক্তার। প্রকৃতপক্ষে মজিদ কম্পাউন্ডারকেই ডাক্তার মনে
করেছিলাে।
৩৬. কম্পাউন্ডার: করিমগঞ্জের হাসপাতালে মজিদ তাকে ডাক্তার মনে করে। ভাং-গাজা খাওয়া রস খসশূন্য হাড়গিলে চেহারা তার।দুটো পয়সার লোভে তার চোখ চকচক করে।
Ad-1
Monday, February 5, 2024
লালসালু উপন্যাসের চরিত্র আলোচনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
সুভা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...
Most Popular Post
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
উত্তর 'অ' ধ্বনির উচ্চারণ অ-এর মতো হলে তাকে অ-বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ বলে।অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে ঠোঁট তেমন বাঁকা বা গোল হয় না।যে...
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
উত্তর: অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিম্নরুপ।যথা: ১. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ই-কার বা উ-কার হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ...
-
অর্থালঙ্কার: অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ: অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা: ১. সাদৃশ্যমূলক ২. বিরোধমূলক ৩. শৃঙ্খলামূলক ৪. ন্যায়মূলক ৫. গূঢ়ার্থ...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
No comments:
Post a Comment