Ad-1

Showing posts with label ভালোলাগা সংকলন. Show all posts
Showing posts with label ভালোলাগা সংকলন. Show all posts

Tuesday, February 20, 2024

সুখী হওয়ার উপায়

আমরা ব্যক্তি,পরিবার, বন্ধু ও কর্মক্ষেত্র দ্বারা আক্রান্ত হই।তা থেকে........ 

★ মুক্তির উপায় :-----

১. শত্রুকে কাজে লাগানো।

২. সময় চূড়ান্তভাবে মেনে চলা।

৩. সঞ্চয় থাকতে হবে।

৪. কাজের মধ্যে কাজ করতে হবে।(Work in work)


★ সুখী হওয়ার উপায় :-----

১. নিজে না করে কাজ করা/কাজ না করে কাজ করা।

২. টেনশন বিক্রি। 

৩. Minimum investment maximum profit.

৪. খরচ না করে খরচ বাঁচানো।

৫. ভাগ্যের উপর বিশ্বাস। 

৬. পাপ থেকে বিরত থাকা।কথায় আছে,

     "পরিশ্রম ধন আনে,পূণ্য আনে সুখ"

৭. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

৮. প্রতিকারের উপায় না থাকলে সহ্য করতে হয়।


Saturday, November 11, 2023

যেমন পাত্র তেমন শিক্ষা দেওয়া উচিত

জঙ্গলের রাজা বাঘ মশাই ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিলো - "কোনো শিশুকে নিরক্ষর রাখা চলবে না।। সবার জন্য যথাযথ শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে।।" 

সব ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে।। পড়াশুনা শেষ হলে,, সবাইকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।। 

শুরু হলো সর্ব শিক্ষা অভিযান!!

হাতির বাচ্চা স্কুলে এলো।‌। বাঁদর,, মাছ,, কচ্ছপ,, বিড়াল,,উট ,, জিরাফ,, সবার বাচ্চা স্কুলে পৌঁছে গেলো।। 

শুরু হলো ধুমধাম করে পড়াশোনা।‌। 

"ফার্স্ট ইউনিট টেষ্ট" হলো।। হাতির বাচ্চা ফেল।। 

- "কোন সাবজেক্টে ফেল ??" হাতি এসে প্রশ্ন করে।‌। 

-- "গাছে ওঠা" সাবজেক্টে ফেল করেছে।।" 

হাতি পড়লো মহা চিন্তায়।। তার ছেলে ফেল ?? এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।।

শুরু হলো খোঁজাখুঁজি,, ভালো টিউটর পেতেই হবে।। সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।। 

হাতির এখন একটাই টেনশন,, যেভাবেই হোক,, ছেলেকে গাছে চড়া শেখাতে হবে !! "গাছে ওঠা' সাবজেক্টে টপার করে তুলতে হবে।। 

ফার্স্ট সেশন অতিক্রান্ত।। ফাইনাল রেজাল্ট আউট হলো।। দেখা গেলো - হাতি,, উট,, জিরাফ,, মাছ,, সবার বাচ্চা ফেল।। বাঁদরের বাচ্চা টপার হয়ে গেছে।। 

প্রকাশ্য মঞ্চে বিভিন্ন গেষ্টদের আমন্ত্রিত করে,, বিরাট অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো।। সেখানে টপার হিসাবে বাঁদরের বাচ্চার গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হলো।। 

চুড়ান্ত অপমানিত হয়ে হাতি,, উট,, জিরাফ,, নিজ নিজ সন্তানকে দারুণ পিটুনি দিলো।। এতো টিউশন,, এতো খরচ,, এর পরেও চূড়ান্ত অসম্মান!! 

তারা মেনে নিতে পারলো না।। 

-- "ফাঁকিবাজ,, এতো চেষ্টা করেও তোর দ্বারা গাছে চড়া সম্ভব হলো না ?? নিকম্মা কোথাকার।। শিখে নে, বাঁদরের বাচ্চার কাছে শিক্ষা নে,, কিভাবে গাছে চড়তে হয়।।" 

ফেল কিন্তু মাছের ছেলেও হয়ে গেছে।। সে আবার প্রত্যেক সাবজেক্টে ফেল,, কেবলমাত্র "সাঁতার" কাটা ছাড়া।। 

প্রিন্সিপাল বললো -- "আপনার সন্তানের এ্যটেন্ডেন্স প্রবলেম।। পাঁচ  মিনিটের বেশী ক্লাসে থাকতে পারে না।।" 

মাছ নিজের সন্তানের দিকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।। 

বাচ্চা বলে --" মা-গো,, দম নিতে পারি না,, ভীষণ কষ্ট হয়।। আমার জন্য জলের মধ্যে কোনো স্কুল দেখলে হতো না ??"

মাছ বলে -- "চুপ কর বেয়াদব।। এতো ভালো স্কুল আর কোথাও খুঁজে পাবি না।। পড়াশোনায় মন দে,, স্কুল নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।।" 

হাতি,, উট,, জিরাফ,, নিজের নিজের ফেলিওর বাচ্চাকে পিটুনি দিতে দিতে বাড়ি ফিরে চলেছে।। পথিমধ্যে বুড়ো খেঁকশিয়ালের সঙ্গে দেখা।। 

শিয়াল বলে -- "কি হয়েছে সেটা তো বলো ??" 

হাতি বলে -- "এত বড়ো শরীর নিয়ে,, গাছে চড়তে পারলো না।। বাঁদরের ছেলে টপার হলো,, মান ইজ্জত কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না।।" 

শিয়াল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।।

শিয়াল বলো -- "তোমাদের গাছে চড়ার কি প্রয়োজন সেটাই তো বুঝতে পারলাম না‌।। শোনো হাতি,, তুমি নিজের বিশালাকার শুঁড় উঠিয়ে ধরো,, গাছের সবচেয়ে বড়ো ফলটি পেড়ে ভক্ষণ করো।। তোমার গাছে ওঠা লাগবে না।।"

-- "উট ভাই,, তোমার অনেক উঁচু ঘাড় রয়েছে।। ঘাড় বাড়িয়ে দাও,, গাছের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল,, পাতা পেড়ে খাও।।" 

-- "বোন মাছ,, তোমার সন্তানকে নদীর স্কুলে ভর্তি করে দাও।। ওকে মনভরে সাঁতার কাটতে শেখাও।। দেখবে,, একদিন তোমার ছেলে নদী অতিক্রম করে সমুদ্রে পাড়ি দেবে।। সাত সমুদ্র পার করে,, তোমার নাম উজ্জ্বল করে দেবো।। ওকে রাজার স্কুলে মোটেও পাঠিও না।। ও মারা যাবে।।" 

মনে রাখতে হবে,, *শিক্ষা আপনার সন্তানের জন্য,, শিক্ষার জন্য আপনার সন্তান নয়*

 প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু না কিছু স্পেশালিটি আছে।

আমাদের দায়িত্ব হলো, সেটা খুঁজে বের করা। তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া। তাহলেই দেখবেন,, সে নিজেই নিজের গন্তব্য খুঁজে নেবে।

[সংগৃহীত]

Thursday, July 20, 2023

ভার্সিটির এক বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,তুমি কি আহমদ ছফা পড় নাই?

আমি বলেছিলাম,না।

উত্তরে তিনি বলেছিলেন,তাহলে কী পড়লে এতদিন ধরে?

আমি সেদিন লজ্জিত হয়েছিলাম।

আরেকদিন ফেসবুকে পেলাম,কেউ লিখেছে হয়ত মনে নাই ততটা,

" যিনি আহমদ ছফাকে পড়েন নাই,তিনি বাংলা এবং বাংলাদেশকেই চিনেন নাই"

তো প্রথমেই পড়া শুরু করলাম "যদ্যপি আমার গুরু" ব‌ইটা দিয়েই। সত্যি বলতে,ব‌ইয়ের প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেন জ্ঞানমূলক তথ্যে ঠাসা। সবকিছু যেন আমাকে ঘোরের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।এতসব যেন মাথায় ই ধরছে না আমার।

অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকলাম আর অভিভূত হতে থাকলাম। রঙিন কলম দিয়ে আঁকানোর অভ্যেস আছে আমার, কিন্তু,সব পৃষ্ঠাতেই যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা আমি কলম‌ই লাগাতে পারছি না মনে হচ্ছে।

জাতীয় অধ্যাপক স্যার আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে  আহমদ ছফা দেশ-বিদেশের অনেক বিশিষ্ট,বিখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচনা‌ও করেছেন।

এসব কিছুই যেন আমার কাছে মনে হচ্ছে, নতুন জগতে প্রবেশ করলাম - যেন এটা একটা বিশ্বকোষ।

স্যার আবদুর রাজ্জাক সাহেবের পুরান ঢাকার ভাষা বেশি আকৃষ্ট করেছে এবং তাঁর বিষয়ে বেশি কিছু বলার দক্ষতা আমার নেই।

এক কথায় সাধারণভাবে জীবনযাপন করা অসাধারণ একজন মনীষী। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।

স্যার আবদুর রাজ্জাকের ভাষ্যমতে,,,

১. যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন,২ডা বিষয় খেয়াল রাখবেন।ওই জায়গার মানুষ কি খায় আর পড়ালেখা কি করে। কি খায়, কি পড়ে এই ২ডা জিনিস না জানলে একটা জাতির কোনো কিছু জানন যায় না।

২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি প্রধান অবদান হলো- পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন আর বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম। কিন্তু, জ্ঞানচর্চার যে আর‌ও একটা বৈশ্বিক মানদন্ড রয়েছে,তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশেষ কিছু নেই।

৩. বড় লেখক এবং বড় মানুষ এক নয়। বড় লেখকদের মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে।বড় মানুষরা আসলেই বড় মানুষ।

৪. বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভুষা, মুটেমজুর -এরা কথা কয় দেইখ্যাই ত কবি কবিতা লিখতে পারে।

৫. ইতিহাস শেখ সাহেবরে স্টেটসম্যান অইবার একটা সুযোগ দিছিল। তিনি এইডা কামে লাগাইবার পারলেন না।

৬. মাওলানা আব্দুল কালাম আজাদের সত্য কথা বলার অভ্যাস আছিল খুব কম,অ্যান্ড হি ওয়াজ এ কনজেনিটাল লায়ার।

৭. আইজকার ইন্ডিয়ার এডুকেটেড মানুষেরা যে ভাষায় পরস্পরের লগে কম্যুনিকেট করেন,হেইডা কোনো ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ না। ব্রিটিশদের চ‌ইল্যা যাইবার পঞ্চাশ বছর পরেও যারা একটা লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা তৈয়ার করতে পারে নাই,তারা একলগে থাকব কি ক‌ইর‌্যা আমি তো চিন্তা করবার পারি না।

৮. যার মনে দয়া নাই,তারে উপরে আনা ঠিক নয়।

৯. আর্যরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করলে বেদে উল্লেখ থাকত।বেদে এক্কেরে জন্মান্তরবাদের ছিটেফোঁটাও নেই।এইডা তারা পরে ড্রেভিডিয়ানদের কাছ থেইক্যা ইনহেরিট করছে।

১০. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করছিলেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কলম ধ‌ইর‌্যা সেই ঋণ শোধ করছিলেন।

১১. যে জাতি যত সিভিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফিস্টিকেটেড।পশ্চিমারা সভ্য অইছে কয়দিন।এই সেদিন‌ও তারা মাছ মাংস কাঁচা খাইত।

১২. আধুনিক বাংলা ভাষাটা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতেরা অভিধান দেইখ্যা দেইখ্যা বানাইছে।

১৩. আধুনিক বাংলা - বঙ্গসন্তানের ঠিক মুখের ভাষা না, লেখাপড়া শিইখ্যা লায়েক অইলে তখন ওই ভাষাটা তার মুখে আসে।

১৪. ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে, ইসলাম ধর্মে পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে, কিন্তু ইহকালের গুরুত্ব‌ও অস্বীকার করা অয় নাই।

১৫. সুরুচিসম্পন্ন সংস্কৃতিবান অধিক মানুষ আমাদের সমাজে সত্যি সত্যি বিরল। এখানে একজন বড় কাজ করলে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।


এরকম স্পষ্টভাষী পন্ডিতের সহচর্য পাবার আকাঙ্ক্ষা সবসময়ই রয়ে যায়। আজ থেকে যেন আহমদ ছফা পড়া চলতেই থাকবে..........,


Sunday, March 27, 2022

ভালো লাগা বিখ্যাত উক্তি

★ Supervision is the touchstone of success.
★ The eyes are useless when the mind is blind.
★ একদিন সোনা লোহা কে  বললো…আমাদের দু'জনেকেই  লোহার হাতুড়ি মারা হয়, কিন্তু তুমি এতো চেঁচামেচি করো কেনো?? লোহা তখন বললো…নিজেকে যখন নিজের কেউ আঘাত করে! তখন  ব্যাথা অসহ্য লাগে😭
★ গ্রামীণ প্রবাদ-প্রবচন,
"টডি নডি ছ আনা
গায়ের জোরে ন আনা
বুদ্ধিয়ে হাজার
কপালে অপার।"

 প্রিয়তমা ওগো, যখনই রাখি ঠোঁট তোমার ঠোঁটে,
লুকায়িত অস্ত্র আমার সহসা কাঁপিয়া উঠে।। [ সংগৃহীত ]

Sunday, November 1, 2020

গদ্য, পদ্য ও কবিতা ময়ুখ চৌধুরী

[কবি ময়ুখ চৌধুরী আশির দশক থেকে সাহিত্যকর্মে নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য সুপরিচিত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ১০টি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চার দশক অধ্যাপনার পর বর্তমানে অবসরে আছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে চবি শিক্ষক লাউঞ্জে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও জনাব নাজেমুল আলম মুরাদ-এর সাথে তিনি গদ্য, পদ্য ও কবিতা নিয়ে খোলামেলা কিছু কথাবার্তা বলেন। এটি সেই আলাপচারিতার পরিমার্জিত অনুলিখন।]

***
ময়ূখ চৌধুরী: আমি যেটা বলছি, এটা নিছক কোনো বই পড়া বিদ্যা নয়। দীর্ঘদিনের অধ্যয়ন, অনুশীলন, তৎপরতা— এগুলোর মাধ্যমে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সে অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলছি। আমি যে কথা বলবো সেগুলো কোনোদিন লিখিত হবে, সেগুলো পড়ে কেউ জানবে। আবার কেউ লিখে গিয়েছিল, সেটা পড়ে আমি জেনেছি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার, আমরা জানতে চেয়েছিলাম, পদ্য এবং কবিতার মধ্যে পার্থক্য কী?
ময়ূখ চৌধুরী: পদ্যের মধ্যে একটা য-ফলা দেখছেন না? এই য-ফলাটা একটা প্রত্যয়। প্রকৃতি-প্রত্যয়। প্রকৃতি মানে হচ্ছে গাছ। প্রত্যয় হচ্ছে করাত। সাধিত শব্দ হচ্ছে জানালা। গাছ আর কাঠ এক জিনিস নয়। গাছ থেকে যে কাঠ হলো, নিশ্চয় কোনো একটা প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে তার সঙ্গে। এ প্রত্যয় কোনো একটা ইন্সট্রুমেন্ট হতে পারে। করাত হতে পারে, হাতুড়ি হতে পারে। কাঠটা যে টেবিল হলো, রূপান্তরিত হলো, প্রতিটি রূপান্তরের পিছনে কিছু না কিছু যুক্ত হচ্ছে। যেমন, শ্রম। এই শ্রম উপকরণ যোগে অথবা উপকরণ ছাড়া, উপাদান যোগে বা উপাদান ছাড়া যুক্ত হচ্ছে। গাছ ® কাঠ ® টেবিল।
একটা গাছ কখনো নিজে নিজে টেবিল হতে পারে না। তার সঙ্গে মানবগুণের প্রত্যয় যুক্ত হয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় তখন সেটি অর্থনীতির ভাষায় ‌‘পণ্য’ হয়। তাহলে পদ্যের মধ্যে য-ফলা যুক্ত হয়ে যে পদ্য হলো, রূপায়ন হলো, সেখান থেকে য-ফলাটা তুলে নিলে থাকে পদ। পদ মানে হচ্ছে পা। এই আলোচনায় ব্যাকরণের পদ পরে আসবে। কারণ, ব্যাকরণ সৃষ্টি হয়েছে ভাষা সৃষ্টির বহুকাল বাদে। আইন সৃষ্টি হয়েছে বহু পরে। আগে মানব সমাজ তৈরি হয়েছে। সমাজের নর্মস, টেস্ট, টেম্পারমেন্ট, অ্যাটিচিউড সবকিছু মিলিত হয়ে যখন একটা মৌখিক সংবিধান তৈরি হয়, সেটা হচ্ছে কালচার। কালচারটাকে আরো সঙ্গতি দিয়ে আইন তৈরি করা হয়।
তাহলে যেদিন আমাদের সমাজে একটা শব্দ তৈরি হলো ‘পদ’, তখন পদ মানে ছিল পা। মানুষ প্রথমে যা দেখে তার নামকরণ করে। এটা সবুজ, সবুজ থেকে সবজি হয়েছে। এটা কী রং? হলুদ রং। নিশ্চয় হলুদের মতো রং। তাহলে হলুদ তো আগে প্রকৃতিতে থাকতে হবে। কোনো কিছু কমলা রং হওয়ার জন্য কমলা আগে প্রকৃতিতে থাকতে হবে। তারপর আমরা কমলা রং বলবো। কোনো কিছু খয়েরী রং হওয়ার জন্য আগে পানের সঙ্গে যে খয়ের মিশায়, ওটা থাকতে হবে। তারপর বলবো যে খয়েরী রং। এই যে শব্দগুলো তৈরি হচ্ছে সেটি আগে বস্তুগতভাবে জন্ম নিচ্ছে। তারপর তার নামকরণ করা হচ্ছে। যেমন আমার একটি কবিতা আছে—
হরিণকে যে হরিণ বলি
হরিণ কি তা জানে?
পদ্মা নদী ভেসে গেলো
চর্যাপদের টানে।
হরিণ জানে না যে আমরা তাকে হরিণ নামে নামকরণ করেছি।
প্রশ্ন: প্রাণীটা কী রকম?
উত্তর: হরিণের মতো সুন্দর।
তারমানে হরিণ নয়, হরিণের মতো।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার, পদের কথা বলছিলেন।
ময়ূখ চৌধুরী: প্রথমত, পদ মানে পা। তাহলে এই পদের কাজ কী? এর মাধ্যমে আমি দাঁড়াতে পারি, হাঁটতে পারি। এইবার ব্যাকরণবিদরা ব্যাকরণের কোনো একটা অধ্যায়ের নাম দিচ্ছেন ‘পদ’। নিশ্চয় তারা জানেন যে এর আগে পদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে পা অর্থে। তাহলে বাক্যের অন্তর্গত বিভক্তিযুক্ত প্রত্যেকটি শব্দকে যে পদ বলছে, কেন বলছে? পরে দেখলাম, শব্দ বিভক্তিযুক্ত হয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে। হাঁটা শেষ হয় দাঁড়িতে গিয়ে। তখন সে একটা ভাব প্রকাশ করে। এই পদনির্ভর অন্ত্যমিল যুক্ত যে ম্যাসেজ বা ভাবনা, সেটাই পদ্য। কিন্তু পদ্যের একটা সীমাবদ্ধতা হচ্ছে পদ্য প্রতিটি শব্দকে ব্যবহার করে অভিধানে নির্দেশিত অর্থ অনুযায়ী। অথবা অভিধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ অর্থ অনুযায়ী। সেটা পদ্য।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: পদ্যের মধ্যে অন্ত্যমিল থাকলেও সেটা কবিতা হবে না। যদি সেটাতে কোনো দূরবর্তী অর্থবোধকতা না থাকে।
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ। অন্ত্যমিল থাকলেও সেটা কবিতা হবে না। এবার একটা পদ্যের উদাহরণ দিই। তত্ত্ব না বলে আগে উদাহরণ দেয়া ভালো। তারপর বিশ্লেষণ করা ভালো। বাল্যশিক্ষার মধ্যে একটা পদ্য আছে, যেটাকে আমরা দীর্ঘদিন কবিতা বলে জেনেছি, পড়েছি, শ্রদ্ধা করেছি:
“পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।”
এটি লিখেছেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। তিনি বুদ্ধিমান। ভালো কাজ করেছেন। তথাকথিত কবিতাটা বা পদ্যটার নাম দিয়েছেন ‘প্রভাত বর্ণনা’। Just a description or statement. Not creation. এবার “পাখি সব করে রব রাতি পোহাইলো”— এই পাখির নিচে আন্ডারলাইন করি। এটার ইংরেজি মিনিংটা কী? বার্ড। পাখিসব আওয়াজ করছে সকালবেলা, রাত শেষ হয়ে গেছে। আর কাননে কুসুমগুলো প্রস্ফূটিত হয়েছে। এটি হলো পদ্যের সুস্পষ্ট উদাহরণ।
এবার আরেকটা রচনায় আমরা ‘পাখি’ শব্দটার ব্যবহার দেখি:
“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়।
ধরতে পারলে মনবেড়ি
দিতাম পাখির পায়।”
এবার এখানে পাখির নিচে যে আন্ডারলাইন করলেন, এটার ইংরেজি মিনিং কী?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এখানে তো স্যার সিমিলিটা চলে আসছে। এটা ডিস্ট্যান্ট মিনিংয়ে চলে গেছে। গ্রামাটিক্যাল মিনিং আর নাই।
ময়ূখ চৌধুরী: দিস ইজ কারেক্ট। আমরা বুঝতে পারছি, এখানে পাখি বলতে আত্মার কথা বুঝানো হচ্ছে। দেহ-খাঁচার ভেতর ঢুকছে আর বেরুচ্ছে কীভাবে? আই ডোন্ট নো। কেমনে আসে যায়। এটা একটা বিরাট বিস্ময়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এখানে স্যার পাখিটা অচিনের সাথে মিলে অর্থটা তৈরি করেছে।
ময়ূখ চৌধুরী: অচিন পাখি। মানে আত্মা, soul। পৃথিবীর কোনো ডিকশনারিতে কি আছে, পাখি মানে soul? তাহলে লালন ফকির ‘অশিক্ষিত’ হয়েও, অর্থাৎ আমাদের ভাষায় ইউনিভার্সিটির ছাত্র না হয়েও পাখিটাকে নিজের অর্থে ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকে আরেকটা মিনিং বের করে দিয়েছেন। কীভাবে? ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। তার কবিতার লাইনে এমনভাবে তিনি শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন, তখন সেটি ডিকশনারির অর্থ থেকে কই মাছের মতো লাফ দিয়ে বাইরে চলে গেছে, এস্কেপ করেছে। এই যে অভিধানে নির্দেশিত অর্থ থেকে মুক্ত হয়ে ভিন্ন অর্থে যখন এক বা একাধিক কিংবা ততোধিক শব্দ প্রকাশ করবে, তখন সেটা কবিতার শব্দ হবে। এ রকম শব্দ যদি না থাকে তাহলে সেটা কবিতা হবে না
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে স্যার অন্ত্যমিলের ব্যাপারটা?
ময়ূখ চৌধুরী: অন্ত্যমিলের কোনো প্রয়োজন নাই। নামতার মধ্যেও তো অন্ত্যমিল আছে।
এক একে এক
দুই দুগুণে চার
চার দুগুণে আট
দশ দুগুণে বিশ।
এখানে ছন্দ মিলছে তো! (কিন্তু সেটি তো কবিতা হয়ে উঠছে না।)
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার, আপনি কবিতার ব্যাপারে যেটা বললেন, এই ধরনের অর্থবোধক, ডিস্ট্যান্ট মিনিং…
ময়ূখ চৌধুরী: ডিস্ট্যান্ট মিনিং না। অভিধানের শাসনমুক্ত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: রূপক?
ময়ূখ চৌধুরী: রূপকও না। রূপক নিয়ে পরে আলোচনা করবো। অভিধান শাসিত অর্থ থেকে মুক্ত হয়ে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা। ডিফারেন্ট মিনিং। ডিসট্যান্ট বলবেন না, ডিফারেন্ট।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ডিফারেন্ট। আচ্ছা, ঠিক আছে। ডিফারেন্ট এবং ডিসট্যান্ট এক নয় স্যার। ঠিক আছে। ডিফারেন্ট মিনিং নিয়ে আসলে তখন সেটা…
ময়ূখ চৌধুরী: (তখন সেটা) কবিতার শব্দ হবে। আর এরকম শব্দ সংবলিত যেকোনো রচনা— ছন্দ থাক বা না থাক, অন্ত্যমিল থাক বা না থাক— ওটা কবিতা হবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আরেকটা জিনিস আমরা দেখি যে কবিতার বাক্যগুলো ডায়লগের মতো ভাঙা ভাঙা হয়।
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ, হতে পারে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: যদি কেউ ডায়ালগের মতো না ভাঙলো, কিন্তু লেখার মধ্যে একটা রিদম আছে এবং…
ময়ূখ চৌধুরী: না, টানা গদ্য। ক্লোজড ভার্স। আমি গদ্যের মাধ্যমে বললাম।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: গদ্যের মাধ্যমে কি কবিতা হয়, স্যার?
ময়ূখ চৌধুরী: হয়। ২০০ বছর আগে ফ্রান্সে হয়ে গেছে। ফ্রি ভার্স।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ফ্রি ভার্স?
ময়ূখ চৌধুরী: আমার যে বইটি বেরুলো ‘চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন’ (এটি গদ্যকবিতার বই)।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আচ্ছা স্যার, আমাদের পাঠ্যবইয়ের মধ্যে যে ভাগ করা হতো— প্রোজ অ্যান্ড পয়েট্রি…
ময়ূখ চৌধুরী: ওটা মোটাদাগে বলা হতো। প্রোজ মানে কী? ফিকশন? শর্ট স্টোরি? নভেল? অ্যাসে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: না।
ময়ূখ চৌধুরী: তাহলে? মোটাদাগে বলা হয়েছে প্রোজ। মোটাদাগে বলা হয়েছে পয়েট্রি।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে পয়েট্রির মধ্যে পদ্য ইনক্লুডেড?
ময়ূখ চৌধুরী: ইনক্লুডেড। ওটা(ভাগাভাগি) সিলেবাসওয়ালারা করেছেন। সিলেবাস তো আমাদের কাছে মাননীয় না৷ কারণ, পৃথিবীর প্রথম কাব্য যারা লিখেছেন তাদের কোনো সিলেবাস ছিলো না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটা নিয়ে ঐদিন রাতে কথা বলেছিলেন। মহাকাব্য কীভাবে লেখা হয়েছে সে অনুসারে এখন আমরা মহাকাব্যের হদিস বের করছি কীভাবে কী হয়েছে। কিন্তু প্রথম মহাকাব্য যিনি লিখেছেন…
ময়ূখ চৌধুরী: তিনি তো জানতেন না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল রিসার্চ মেথডলজি। আমরা কাজ করি হিউম্যান রিলেশন নিয়ে, কনসেপ্ট নিয়ে। আমাদের (রিসার্চে) তো কোনো এম্পেরিক্যাল ডাটা নাই।
ময়ূখ চৌধুরী: ফিলসফির চিন্তা মাত্র দুইটা জিনিস নিয়ে। এক হচ্ছে জীবন কী, দুই হচ্ছে জগৎ কী। খুব ছোট সিলেবাস। কেউ বলতে পারেন, এগুলোকে ‘ছোট’ বলছেন কেন? (আমার উত্তর হলো) কিন্তু এরমধ্যে তো সবই আছে। ফিলসফির বাইরে কী আছে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি তখন বলেছিলেন, রিসার্চ মেথডলিজর কথা যারা বলছেন, সেই রিসার্চ মেথডলজি তৈরি হওয়ার আগে রিসার্চ কীভাবে হয়েছে? আর রিসার্চ মেথডলজি একটা হওয়ার পরে কেন পরবর্তীতে আরো কয়েকটা হয়েছে?
ময়ূখ চৌধুরী: পৃথিবীতে যিনি প্রথম পিএইচডি করেছেন তিনি কি কোনো পিএইচডি হোল্ডারের আন্ডারে পিএইচডি করেছেন?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি তখন বলেছিলেন, কিছু হচ্ছে মৌলিক রচনা। সেগুলোতে উদ্ধৃতি দেয়া, মেথডলজি ফলো করা ইত্যাদি থাকে না, দরকার হয় না। তার মানে কি স্যার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মই করি দিয়েছি ‘‌‌‌তোমাকে মিডিওকার হতে হবে? তুমি প্রাইমারি হতে পারবে না! হলে তুমি ডিগ্রি পাবে না! তোমার লেখায় যদি উদ্ধৃতি না থাকে, কোনো ফরম্যাট না থাকে তাহলে তোমার লেখাটা লেখাই হয় নাই!’ অথচ মৌলিক লেখা, কথার কথা রবীন্দ্রনাথের লেখায়, কী মেথডলজি ফলো করা হয়েছে? আমরাই বের করছি মেথডলজি কী…।
ময়ূখ চৌধুরী: আমরাই রবীন্দ্রনাথের লেখাকে উদ্ধৃতিতে নিয়ে আসছি। রবীন্দ্রনাথ তো কোনো উদ্ধৃতি চিহ্ন দেননি। এমন আরেকজন হচ্ছেন হুমায়ুন কবির। পশ্চিম বাংলার। তিনি ‘বাংলার কাব্য’ নামে ছোট একটা বই লিখেছেন। কোনো উদ্ধৃতি চিহ্ন নেই। সব তাঁর নিজের কথা।
নাজেমুল আলম মুরাদ: হুমায়ুন কবির বলতে ‘নদী ও নারী’ যিনি…
ময়ূখ চৌধুরী: ‘নদী ও নারী’ লিখেছেন। তো, কবিতা হচ্ছে মানুষের অনুভূতির একেবারে মোস্ট পারফেক্ট অংশটাকে শব্দে রূপ দেওয়া। সুরে রূপ দিলে মিউজিক হবে, শব্দে রূপ দিলে কবিতা হবে, রঙে রূপ দিলে পেইন্টিং হবে। সবগুলোই একই জিনিস। মানুষের যে উপলব্ধি, অনুভূতি, পর্যবেক্ষণ, কল্পনা এবং সর্বশেষ ইনটুইশান(স্বজ্ঞা)…। ইনটুইশান হচ্ছে ‘ফানাফিল্লাহ’। এরপরে আর নাই। এইসবগুলোকে একেবারে জমাট করে মিনিমাম কথার মধ্যে বেশি কথা বলতে পারে কবিতা। আর এটাকে ইলাবোরেট করলে তা ফিলসফি হয়ে ওঠে।
নাজেমুল আলম মুরাদ: তাহলে স্যার আপনার কবিতা হচ্ছে দর্শনের কাব্যিক রূপ?
ময়ূখ চৌধুরী: দর্শন তো সবাই করে। এটা তো দার্শনিকরাই বলেন, সবাই কমবেশি নিজে নিজে দার্শনিক। যেমন, আমি বলি। আমার গায়ে এখন উত্তাপ আছে। মাপলে কত দাঁড়াবে? নাইনটি এইট পয়েন্ট এক্স, আমি পরিষ্কার জানি না কত। এর সঙ্গে মাত্র ১ ডিগ্রি যোগ করলাম। ডাক্তার এসে বলবে জ্বর কত? তখন আমার ঘরের লোকজন বলবে ৯৯ ডিগ্রি। ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর! আচ্ছা ৯৯ ডিগ্রি জ্বর হলে ঐ জ্বর থেকে ১ ডিগ্রি মাইনাস করো। ৯৮ ডিগ্রি। তখন কী হবে? বলবে যে উত্তাপ। এতক্ষণ বলছে উত্তাপ, ১ ডিগ্রি যোগ করলে বলছে জ্বর। তার মানে, আমরা সবাই ফিলসফার ৯৮ পর্যন্ত।
নাজেমুল আলম মুরাদ: (মোজাম্মেল) স্যারের কথা একটা মনে পড়ছে…
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: Everyone does philosophy, but only a few are aware of doing this!
নাজেমুল আলম মুরাদ: স্যার আপনি ক্লাসে একবার বলেছিলেন, কতটুকু হলে আমি ঠাণ্ডা বলবো, কতটুকু হলে আমি গরম বলবো, তা আমার মনে আছে স্যার। আপনি এসির তাপমাত্রা নিয়ে কথা বলেছিলেন।
ময়ূখ চৌধুরী: তাপমাত্রার একটা প্যারামিটার তৈরি করে দিয়েছে সায়েন্স। ৯৮ ডিগ্রি বা এত পর্যন্ত উত্তাপ, ১ ডিগ্রি যোগ করলে আমরা বলছি জ্বর।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমার শিক্ষকতা জীবনের যেসব প্রাপ্তি তার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে আমি ময়ূখ চৌধুরীর একজন প্রিয়-মানুষ হতে পেরেছি এবং কাছাকাছি হতে পেরেছি। স্যারের মত হতে চাই। এবং এরকম মানুষ ছিল প্রফেসর ওয়াহেদুর রহমান স্যার। আমাদের ওয়াহেদুর রহমান স্যার এরকম জাত শিক্ষক ছিলেন। উনি যখন ক্লাস নিতেন তখন উনি সবকিছু হারিয়ে ফেলতেন। উনি আমাদেরকে বলতেন, “শুনো, আমি দুইটা সময়ে জীবনের দুঃখ সব ভুলে যাই। যখন আমি নামাজ পড়ি এবং যখন আমি ক্লাস নিই।” মিডিওকার স্টুডেন্টরা উনাকে বুঝতে পারতো না।
ময়ূখ চৌধুরী: যা হোক, কবিতার ব্যাপার হচ্ছে, সমকালে প্রচুর কবিতা লেখা হবে। কিন্তু ১০ থেকে ২০ বছর পরে অনেকে লেখা বন্ধ করে দিবেন। আজকের দুর্বল কবিতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত কবিদের ভালো কবিতার তুলনা করে আমরা বলি, ‌’এগুলো কি কবিতা নাকি?’
আমিও তো বলছি এগুলো কবিতা না। রবীন্দ্রনাথের সময়ে কেউ কবিতা লেখেনি? সেগুলো কই? সবকালে কিছু কবিতা লেখা হবে পাতার মত। কিন্তু ফুল ফুটবে কম। একটা গাছের সবগুলো ফুল হয় না। পাতা হয় বেশি। ঐ পাতাগুলোর দরকার আছে ফুলকে ঝড়ঝাপটা, অতিবৃষ্টি, অতিরোদ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। ফুল কম ফুটবে, ফল আরো কম হবে। রবীন্দ্রনাথের আমলে যারা লিখেছেন, নজরুলের আমলে যারা লিখেছেন তারা কোথায়? কেউ নাই। ইতিহাস হচ্ছে নির্মম ঝাড়ুদার। সে ঝাড়ু দিয়ে সব পরিস্কার করে দিবে। কিছু রেখে দিবে।
নাজেমুল আলম মুরাদ: ঝাড়ু দেয়ার জন্য পাতা তো লাগবেই।
ময়ূখ চৌধুরী: লাগবে। আজকের দুর্বল কবিতাগুলো সামনে রেখে ‌‘হোয়াট ইজ পোয়েট্রি’ বিচার করবেন না। আজকে যারা ভালো লিখছে, জিজ্ঞেস করেন, আপনি যদি না জানেন এক্সপার্ট একজনকে জিজ্ঞেস করেন, কারগুলো পড়বো, কারগুলো পড়বো না। তখন দেখবেন যে আপনার সিলেবাস ছোট হয়ে আসছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার আপনার কথাটা যদি একটু রিপিট করেন যে, আজকেরগুলোর প্রেক্ষাপটে আমরা অতীতেরগুলোকে…। এখন থেকে ১০-২০ বছর পরে এখনকার লোকেদের লেখা কতটুকু টিকবে সেটা অনুসারে বুঝা যাবে এটা আসলে কবিতা হয়ে উঠছে কিনা। তাই তো?
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ। যেমন ’৩০ এর কবিতার মধ্যে জীবনানন্দ দাশ টিকে রয়েছেন। ৮ দশক আগের এক ‌‘বনলতা সেন’ মাস্টারপিস দিয়ে। সুধীন দত্ত টিকে আছেন ‌‘উটপাখি’র জন্য। বুদ্ধদেব বসু কবি হিসেবে না, অন্য হিসেবে টিকে আছেন। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক হিসেবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার আপনি যেটা বললেন, এটা কি একজন কবির জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে যে, তিনি অনেক লিখবেন, কিন্তু তাঁর সবলেখা…?
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ, অনেক লিখবেন, সবলেখা ততটা মানসম্পন্ন হবে না। আমি তো বলছি, আমি পাতার মত অনেক লিখি, পাতার মত অনেক ছাপি। কিন্তু বই করার সময় আমি ফুলগুলো বেছে বেছে ‌‘দেবতাকে পূজা দিই’, ওখানে পাতা দেই না। এটাই নিয়ম। আপনি কোনো একটা ভালো অনুষ্ঠানে গেলে চুজি হয়ে থাকেন আপনার পোষাকের ব্যাপারে। স্যুট-টাই কমপ্লিট পরে তারপর আপনি যান।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার আরেকটা হলো, যারা লিখেন, আপনিসহ, আমরা বিশেষ করে নজরুলের অনেক পাণ্ডুলিপি দেখি, বা অনেকেরই, সেখানের মধ্যে অনেক কাটাকাটি দেখি।
ময়ূখ চৌধুরী: রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ সবাই কাটাকাটি করেছেন। সবচেয়ে বেশি কাটাকাটি করেছেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আপনি একটা কথা একবার আমাকে বলেছিলেন। আমি এক্সাক্টলি স্মরণ করতে পারছি না। ভুল হলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং সংশোধন করে দিবেন। আপনি বলেছিলেন, ‌‘আমার পাণ্ডুলিপি আমি কাউকে দেখাই না, কারণ আমার কাটাগুলো যাতে লোকেরা না দেখে এবং আমাকে আন্ডারমাইন যাতে না করে।’
ময়ূখ চৌধুরী: আমার অপ্রকাশিত লেখাগুলো, যেগুলো ছাপাইনি, সেগুলো আমি পুড়িয়ে ফেলবো। আমার দুর্বলতার চিহ্ন রাখবো না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: তাহলে স্যার আমার স্মরণটা ঠিক আছে!
ময়ূখ চৌধুরী: কিন্তু আবার কেউ কেউ বলেছেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা।” রবীন্দ্রনাথ এইজন্য সবগুলো ছাপিয়ে দিয়েছেন। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ২৬৩৮টা গান তাঁর পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা ঘুরেফিরে ৩৮টা গানই শুনি। আপনি রবীন্দ্রনাথের গানের অনুষ্ঠান দেখলে খেয়াল করবেন এই গান আপনি আগে শুনেছেন। তারমানে, ঘুরেফিরে ৩৮টা গানই শুনছেন। আর ২৬০০টা গান গেল কোথায়? “জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা”— এটা রবীন্দ্রনাথের তত্ত্ব। আমি এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, ‘বেছে বেছে রাখো, বাকিগুলো ফেলে দাও!’
নাজেমুল আলম মুরাদ: তাহলে স্যার আমি সমকালীন কোন কবির লেখা পড়বো? আমি আগেরগুলো পড়বো? নাকি, বর্তমানগুলো?
ময়ূখ চৌধুরী: এটার প্রসেস হচ্ছে, একটা কবিতার আপনি ফার্স্ট লাইন পড়েন, লাস্ট লাইন পড়েন। যদি দেখেন আপনাকে টানছে তখন পুরোটা পড়ে ফেলবেন। তখন ষোল লাইন পাবেন, বারো লাইন পাবেন, আঠারো লাইন পাবেন, বাইশ লাইন পাবেন, তখন পুরোটা পড়ে ফেলবেন। দেড় মিনিট করে দৈনিক যদি একটা কবিতার জন্য সময় দেন, আপনার দেড় বছর বাদে কয়টা কবিতা পড়া হলো? চিন্তা করেছেন? এক বছর বাদে ৩৬৫টা কবিতা! এবার আপনার নিজে থেকেই সেন্সটা ডেভেলপ করবে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কবিতার ব্যাপারে আমার আরেকটা কথা আছে স্যার। সুকান্তের “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”। এখানে উনি নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন যে কিসের সাথে কী তুলনা করছেন।
ময়ূখ চৌধুরী: এটা গরীবের পক্ষে লেখা। উনি মার্ক্সবাদী ছিলেন। কিন্তু মার্ক্সবাদের আগে, কার্ল মার্ক্সের জন্মের আগেও তো পৃথিবীতে পেটে ক্ষুধা লাগতো, কৃষক ছিল, শ্রমিক ছিল, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছে। তাহলে মার্ক্সবাদের আগেই মার্ক্সবাদের উপজীব্য, সাবজেক্ট ম্যাটার পৃথিবীতে তৈরি ছিল, তিনি এসে সেগুলোকে দর্শনটা দিয়েছেন।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আমি বলতে চাচ্ছি, আপনি বললেন যে এমন শব্দের ব্যবহার হবে যেটা আভিধানিক অর্থ থেকে ডিফারেন্ট হবে। এখন ডিফারেন্সটা উনি নিজে বলেও দিয়েছেন কবিতার মধ্যে। তাহলে ওটা কবিতা হয়ে উঠলো কিনা, এটাই প্রশ্ন।
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ, হবে। উপমা নামক অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন তিনি। একটু সাজিয়ে দিয়েছেন। মনে করেন, একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে কি আপনি জিজ্ঞেস করেন, কনে কে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: না। এটা বুঝা যায়।
ময়ূখ চৌধুরী: কীভাবে?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সাজ দেখে।
ময়ূখ চৌধুরী: রাইট৷ এখানে সাজগোজ দেখে আপনি বুঝবেন এটাকে কবিতা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”, এটা কিন্তু খুব উৎকৃষ্ট কবিতার উদাহরণ নয়। তবে প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে, দেয়াল লিখন হিসেবে, লালসালুতে লেখার জন্য এটার দরকার ছিল। সুকান্তকে যারা পপুলার করেছে, রাজনৈতিক প্রয়োজনে তাঁকে আপডেট করা হয়েছে।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কেউ যদি স্যার এমন একটা লেখে যে, ‌‘তোমাকে ভালোবাসি এটার মত’। ঐযে আপনি ‘স্বাধীনতা তুমি’ সম্বন্ধে বলেছিলেন যে এটা ইলাস্টিক কবিতা। এখন স্যার ‌‘তোমাকে ভালোবাসি এটার মত, ওটার মত’ ইত্যাদি, তাহলে এটাও তো “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”র মত হলো। তাহলে এটা কি কবিতা হবে না, যদি সেখানে হৃদয়ের একটা আবেগ প্রকাশ পায়?
ময়ূখ চৌধুরী: হবে। শব্দের ক্ষেত্রে যেটা বললাম। অভিধানের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ডিফারেন্ট মিনিং দিচ্ছে, শব্দ। যদি বাক্য দিয়ে থাকে এরকম? তখন কী করবেন?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: সেই বাক্যটা কি কবিতা হয়ে উঠবে?
ময়ূখ চৌধুরী: হ্যাঁ। ঐ বাক্যটা যদি ডিকশনারি থেকে মুক্ত হয়ে অন্যদিকে চলে যায়, ব্যাকরণ থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে চলে যায় তখন ঐটা কবিতার লাইন হবে। এবার টোটাল কবিতাটা যদি প্রথাগত মিনিং থেকে জাম্প করে তাহলে কবিতা হয়ে যাবে। কথা হচ্ছে, যা বললো তাই (যদি মিনিং হয়), তাহলে তা গদ্য। A prose says something, means the same one. One the other hand, a poetry says something, but means something else. যেমন: ‘বাসস্টপে তিন মিনিট’। ঠিকই আছে তিন মিনিট বাসস্টপে। আবার:
“বাসস্টপে তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ।”
কিছুই বলে নাই, ক্রিয়াপদ ইত্যাদি কিছুই বলে নাই। আরেক জায়গায় বলছে:
“তোমাকে যখন দেখি,
তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখি না”
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটা কার লেখা?
ময়ূখ চৌধুরী: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: চমৎকার!
ময়ূখ চৌধুরী: “বাসস্টপে তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ”। কোনো ক্রিয়াপদ দেয়নি। এটা সাহসের ব্যাপার! আবার পরেরটাতে ক্রিয়াপদ দিয়ে, ‘দেখা’ শব্দটাকে নিয়ে খেলছে। “তোমাকে যখন দেখি তারচেয়ে বেশি দেখি যখন দেখি না”। এবার নাড়া দিচ্ছে না ভিতরে? এবার ঐ আগের অর্থগুলো মিনিংফুল হয়ে উঠেছে না? ইট ইজ পয়েট্রি! ছন্দ ভাঙা কিন্তু কঠিন। ছন্দবদ্ধ কবিতা লেখা সহজ, গদ্য ছন্দ লেখা কঠিন। গদ্য কবিতা সবাই লিখতে পারে না। আলী আহসান লিখেছেন, আব্দুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন। আপনি ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু ধোঁয়াকে ধরতে পারবেন না। কিছু কবিতা আছে ধূমায়িত কবিতা। কবিতা লেখা হয় উপলব্ধি করবার জন্য। গদ্য লেখা হয় বুঝবার জন্য। গোলাপ যে সুন্দর আপনি বুঝলেন কী করে? আরেকটা কবিতা শুনাই। “একটাই মোমবাতি” কবিতার নাম। এটা ছন্দে আছে।
“একটাই মোমবাতি, তুমি তাকে কেন দু’দিকে জ্বেলেছ?
খুব অহঙ্কারী হলে তবেই এমন কাণ্ড করা যায়।
তুমি এত অহঙ্কারী কেন?
চোখে চোখ রাখতে গেলে অন্য দিকে চেয়ে থাকো,
হাতে হাত রাখলে গেলে ঠেলে দাও,
হাতের আমলকী-মালা হঠাৎ টান মেরে তুমি ফেলে দাও,
অথচ তারপরে এত শান্ত স্বরে কথা বলো, যেন
কিছুই হয়নি, যেন
যা কিছু যেমন ছিল, ঠিক তেমনি আছে।
খুব অহঙ্কারী হলে তবেই এমন কাণ্ড করা যায়।
অথচ এমন কাণ্ড করবার এখনই কোনো দরকার ছিল না।
অন্য কিছু না থাক, তোমার
স্মৃতি ছিল; স্মৃতির ভিতরে
ভুবন-ভাসানো একটা নদী ছিল; তুমি
নদীর ভিতরে ফের ডুবে গিয়ে কয়েকটা বছর
অনায়াসে কাটাতে পারতে। কিন্তু কাটালে না;
এখনই দপ করে তুমি জ্বলে উঠলে ব্লাউজের হলুদে।
খুব অহঙ্কারী হলে তবেই এমন কাণ্ড করা যায়।
তুমি এত অহঙ্কারী কেন?
একটি মোমবাতি, তবু অহঙ্কারে তাকে তুমি দু’দিকে জ্বেলেছ।”
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটা তো স্যার আপনার লেখা।
ময়ূখ চৌধুরী: না। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কিন্তু আপনার কাছ থেকে এটা আমি শুনেছি একাধিক বার।
ময়ূখ চৌধুরী: এটা আমার প্রিয় কবিতার মধ্যে একটা। আচ্ছা, পাখির ইংরেজি বার্ড। কিন্তু নাজেমুল আলম মুরাদ তো soul করে দিল। এবার আপনার মুখ থেকে অন্য আরেকটা মিনিং করবো। এটা এই গরীবের লেখা। কিন্তু ছাপা হয়নি। এটা আমি দীর্ঘকাল মুখে মুখে রেখেছি।
বুকের ভিতর একটি পাখি
দিবস রাত্রি নড়নচড়ন।
দানাপানি খায়না কিছু
কেবল তোমার পিছু পিছু।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: শেষ?
ময়ূখ চৌধুরী: শেষ। আমি আর প্রয়োজন বোধ করিনি। এটা আমি ছাপাবোও না। কিন্তু উদাহরণ দেয়ার জন্য আমার দরকার।… পাখি মানে বার্ড, পাখি মানে সৌল, এই পাখি মানে কী? এইভাবে কবিরা আপনাকে বাধ্য করবে অভিধান নির্দেশিত অর্থকে ‌‘বেয়াদবের’ মতন অস্বীকার করে আরেকটা মিনিং খুঁজতে। আরেকটা মিনিং, সেকেন্ড মিনিং, থার্ড মিনিং, অ্যানাদার মিনিং…
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: স্যার, আপনার কাছ থেকে আরেকটা কথা জেনে নিই। আপনাকে এই মুডে আবার কখনো পাবো কিনা সন্দেহ। সেটা হচ্ছে, আমাদের ফিলসফিতে, ওয়েস্টার্ন ফিলসফিতে বিশেষ করে এনালাইটিক ট্রেন্ডে বলা হয়, আবেগের কোনো জ্ঞানগত মূল্য নাই। কিন্তু আমি আমার অনেকগুলো লেখায় ইতোমধ্যে বলেছি, Emotion is the spawning ground of knowledge। আবেগ থেকেই সবজ্ঞান উৎপন্ন হয়। আবেগ হচ্ছে মানুষের শুদ্ধ ঠিকানা। আমি যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পড়াই সেখানে বলি, আবেগ আসে সাবজেক্টিভিটি থেকে এবং এটা মানুষ ও যন্ত্রের মূল পার্থক্য। আদমও (আ.) আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে গিয়ে। কবিতা এবং জ্ঞান বা আমাদের ফিলসফিক্যাল নলেজ যদি বলি, এই দুইটাই তো আসে মানুষের আবেগের মূল জায়গা থেকে।
ময়ূখ চৌধুরী: আবেগ তো আমরা নিয়েই জন্মাই। এটা আমাদের ইন্সটিংক্টের মধ্যে আছে। এটা আমি অর্জন করি না।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: না। কোনো কিছু করার জন্য তো আপনার একটা প্রাথমিক জিনিস লাগবে যেটা দিয়ে আপনি ধরবেন। যেমন: মাছ ধরার জন্য ছাইটা তো লাগবে।
ময়ূখ চৌধুরী: কিন্তু আমার ভিতরে মনে করেন যে, আমি একটা বর্ণনা দিই- বাজারে গেলাম। যেখানে পান সুপারি বিক্রি করে সেখানে গেলাম। তার পাশে আরেকটা দোকান আছে, মুদি দোকান। সেখানে পাকা তেঁতুল বিক্রি করছে। উপরে আবার সয়াবিন তেল দিয়ে চকচকে করে রেখেছে। ওখান থেকে দাড়িগোঁফ বেরিয়েছে, শলা। একটা টোকাইমার্কা ছেলে গিয়ে আস্তে করে নখ দিয়ে এমনি করে… উমমম! তেঁতুল, তেলাপোকার মতন রঙ, পা-কা তেঁতুল! আপনার জিহ্বার তলা দিয়ে একটু ভিজা ভিজা লাগছে না এখন? কই, এখানে তেঁতুল কোথায়?
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আইডিয়াটা পপ-আপ করছে মাথার মধ্যে।
ময়ূখ চৌধুরী: তেঁতুলটা খেলে আপনার যে রিয়েকশনটা হতো, সেটা কিন্তু এই বর্ণনার দ্বারা হয়ে যাচ্ছে। এরকম প্রতিটা কিছুর বর্ণনা যদি সেরকম গাঢ় এবং গভীর হয় তাহলে আপনার ইন্সটিংক্টের মাধ্যমে আপনার ইন্দ্রিয়কে নির্ভর করে, আছড় করে আপনাকে ভাবিত করবে। তখন আপনি রিয়েক্ট করবেন। এই যে এখন তেঁতুলের কথা বললাম আমার জিহ্বার তলা ভিজা। কই এখানে তেঁতুল আমরা খাইনি, দেখিওনি। শুধু বর্ণনা।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: বর্ণনাটা আমাদের ব্রেইনের মধ্যে একটা গ্রাফিক্যাল…
ময়ূখ চৌধুরী: এ যে আমাদের জিহ্বার মধ্যে ঐ ‌‘মেশিন’টা আছে এটা তেঁতুল, এটা রসগোল্লা বুঝার জন্য। তাহলে আমরা জিহ্বা, ত্বক, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছি। কোনটা হাসনাহেনা, কোনটা গোলাপ ডিফারেন্সিয়েট যে আমরা করতে পারছি তা এই যন্ত্র দিয়ে। যেটা নিয়ে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। ওই যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে আমার যন্

Friday, October 30, 2020

we_love_mohammad_ﷺ_challenge

 আমি যখন পিএইচডির শেষ পর্যায়ে, তখন আমার কাছে খ্রিস্টান পাদ্রীরা আসতে শুরু করলো। তারা মনে করলো একজন বিধর্মীকে তাদের ধর্মে নিয়ে যেতে পারলে তাদের জন্য সুবিধা। আমি দেখলাম, ওরা প্রচুর পড়াশোনা করে,  জানে। ওদের ধর্ম বিষয়টা যেমন প্রচুর জানে, আমাদের ধর্ম নিয়ে তেমনি। আমি আমাদের প্রফেটকে হাইলাইট করার জন্য এক পাদ্রীকে বললাম যে, শোনো, আমাদের প্রফেট ছিলেন এমনই একজন মানুষ, তিনি যখন কারো সাথে কথা বলতেন, তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে কথা বলতেন না, তিনি পুরো বডিটা তার দিকে টার্ন করতেন, যাতে সে মনে করে তাকে ফুল অ্যাটেনশন দেয়া হচ্ছে। 


শুনে পাদ্রী বললেন, দেখুন, 'স্পন্ডিলাইটিস' বলে একটা ডিজিজ আছে, যে ডিজিজে ঘাড়ের চামড়া শক্ত হয়ে যায়, আপনাদের প্রফেটের ছিল সেই ডিজিজ। উনি ঘাড় ফেরাতে পারতেন না বলে পুরো শরীর অন্যের দিকে ফেরাতেন। তাহলে তোমরা একটা ডিজিজকে হাইলাইটস করছো কোন দুঃখে?


হঠাৎ করে আমার এমনই মন খারাপ হলো যে ভাবলাম, আসলেই তো, একটা ডিজিজের জন্য তিনি এটা করতেন বলে আমরা মানছি। তখন গড আমাকে হেল্প করলো। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একটা লজিক দিয়ে দিলেন এবং লজিকটা আমার তাৎক্ষানিক আসা। পাদ্রী তখনো বসা ওখানে, চা খাওয়া শেষ করেননি, আমি বললাম, আপনার কথাটা ভুল। আমাদের নামাজ পড়ার একটা সিস্টেম আছে, সিস্টেমে মাথা ফেরাতে হয়। আমাদের প্রফেটের যদি 'স্পন্ডিলাইটিস' ডিজিজ থাকতো, তাহলে উনি পুরো শরীর ফেরাতেন, উনি তো তা করেন না। তার এই ডিজিজ ছিলো না, তিনি যেটা  করতেন রমতা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে করতেন। তারপর আমি তাকে বললাম, আমি কিন্তু ঈশা ( আ.) সম্পর্কে এজাতীয় কথা বলিনি। তিনি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং বললেন, তোমার লজিক খুব পরিষ্কার, আসলেই তো তোমরা নামাজের সময় দুইদিকে মাথা ফেরাও। 


~হুমায়ূন আহমেদ 


তথ্যসূত্রঃ [ শিলালিপি (দৈনিক  কালের কন্ঠ),  ২৭ জুলাই ২০১২ ] 

হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ- হুমায়ূন আহমেদের ধর্মচেতনা ( মোহাম্মদ হান্নান)




Wednesday, May 6, 2020

জ্ঞানের অভিজাত স্থান স্পেনের আন্দালুস

পৃথিবীকে আলোকিত করেছিল যে আন্দালুস আজ তা কালের গর্ভে অতীত! চাপা পড়ে গেছে ইতিহাসবিকৃতির চাদরে ।
জ্ঞান চর্চায় আধুনিক সভ্যতার ভিত তৈরিতে আন্দালুস ছিল ইতিহাস শ্রেষ্ঠ ।

৪১৯ হিজরি। ১০২৮ খ্রিষ্টাব্দ। আন্দালুসের মসনদে সমাসীন খলিফাতুল মুসলিমিন হিশাম আল-মুআয়্যিদ (তৃতীয় হিশাম)। ইংল্যান্ডের সম্রাট দ্বিতীয় জর্জ এর পক্ষ থেকে খলিফার কাছে একটি পত্র এল। পত্রে ইংল্যান্ড সম্রাট খলিফা হিশামের কাছে অনুমতি চাচ্ছেন--ইংল্যান্ড থেকে আন্দালুসে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করবেন। এ দল আন্দালুসের জ্ঞানবিজ্ঞান, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতিকল্প সম্পর্কে জানবে, অবগত হবে। পরে উপকৃত হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যাবে। খলিফা হিশাম সম্মতি প্রদান করলেন।

ইংল্যান্ড থেকে ২১৫জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি প্রতিনিধিদল আগমন করল আন্দালুসে। তৎকালীন সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার স্বর্গরাজ্যে। তারা গোটা আন্দালুসে ছড়িয়ে পড়ল। আহরণ করতে লাগল মুসলিমদের কাছে জ্ঞানের মধু। বর্ণনায় পাওয়া যায়, ওই প্রতিনিধিদলের আটজন ব্যক্তি ইসলামের সুমহান আদর্শ এবং জ্ঞানশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে ইসলামগ্রহণ করে ফেলেন। আন্দালুসের মাটি ও মানুষকে তারা এতোই ভালোবেসে ফেলেন যে, তারা আর ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে চাননি!

আশ্চর্যজনক কথা হলো, প্রতিনিধিদলের ইসলামগ্রহণকারী ওই আটজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন যুবতী। তাদের প্রত্যেকেই আন্দালুসের নামকরা তিনজন আলিমকে বিয়ে করেছিলেন। এভাবেই তারা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত তিনটি সংসার গড়েছিলেন!

ইউরোপের অপরাপর সম্রাটরাও নিজ নিজ প্রতিনিধিদল প্রেরণ করতে লাগলেন। যার যার দেশের ভবিষ্যৎপ্রজন্মকে, জ্ঞানের তীর্থস্থান থেকে জ্ঞানীগুণী করে গড়ে তুলতে। সেই ধারাবাহিতায় সম্রাট উইলস তার ভাতিজির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করলেন। এই প্রতিনিধিদলে ছিল বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ১৮জন যুবতী। তারা একটি চিঠি বহন করে আন্দালুসের মাটিতে পদার্পণ করেছিল। চিঠিটি হলো এই--

"আমরা শুনেছি সেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উন্নত সভ্যতার কথা, যা দ্বারা আপনাদের এই মহান দেশের বিদ্যাপীঠ ও শিল্পকারখানাগুলো সর্বদা উপকৃত হয়ে চলছে। সুতরাং আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এসব জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পের আলো আহরণ করানোর ইচ্ছা করেছি। যাতে করে আপনাদের পদাঙ্ক অন্যসরণ করে এটা একটা সুন্দর উদ্যোগ হতে পারে আমাদের এমন দেশে, যে দেশে চারিদিক থেকে মূর্খতার অন্ধকার ছেয়ে নিয়েছে!"

আজ স্পেন আছে, কিন্তু আমাদের সেই আন্দালুস নেই! নেই আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্গরাজ্য! পশ্চিমারা আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান কুড়িয়ে নিয়ে আজ তারাই বিজ্ঞানী! তারাই সভ্য! আর আমরা...! আমরা তাদের উচ্ছিষ্টভোজী! জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও সভ্যতা শিখতে আজ আমরাই তাদের দেশে পাড়ি জমাই! আহ, আন্দালুস! আমাদের হারানো ফিরদাউস !
------
সূত্র: 📚الأندلس بوابة التواصل الحضاري العربي الإسلامي ـ الأوروبي: ড. নাহলাহ শিহাব আহমাদ, মসুল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাক। গবেষণালব্ধ থিসিস।

Sunday, February 23, 2020

কলম্বাস যদি বিবাহিত হতেন


তিনি কখনওই আমেরিকা আবিষ্কার করতে পারতেন না। কারণ
তাকে আগে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হতোঃ
১. তুমি কোথায় যাচ্ছ?
২. কার সাথে যাচ্ছ?
৩. কেন যাচ্ছ?
৪. কিভাবে যাচ্ছ?
৫. কী আবিষ্কার করতে যাচ্ছ?
৬. এত লোক থাকতে তোমাকে কেন যেতে হবে?
৭. তুমি যখন এখানে থাকবে না, আমি কিভাবে থাকব?
৮. আমি কি তোমার সাথে যেতে পারি?
৯. তুমি ফিরবে কখন তাই বলো।
১০. রাতে বাসায় ফিরে খাবে তো?
১১. আমার জন্য কী আনবে বলো?
১২. তুমি আমাকে ছাড়া একা একা নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই পরিকল্পনা করেছ।
১৩. পরবর্তীতে তুমি এরকম প্রোগ্রাম আরো করতে যাচ্ছ…
১৪. উত্তর দাও, কেন?
১৫. আমি আমার বাপের বাড়ি চললাম।
১৬. তুমি আমাকে আগে সেখানে পৌঁছে দাও।
১৭. আমি আর কোন দিন ফিরে আসব না।
১৮. আচ্ছা? আচ্ছা বলতে তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছ?
১৯. তুমি আমাকে ঠেকাচ্ছও না… কেন?
২০. আমি বুঝতে পারছি না, এই আবিষ্কারটা আসলে কিসের আবিষ্কার।
২১. তুমি সব সময় এরকম কর।
২২. গতবারও তুমি একই কাজ করেছিলে।
২৩. এখন থেকে তুমি এ ধরনের ছন্নছাড়া কাজ করতেই থাকবে।
২৪. আমি এখনও বুঝতে পারছি না, এখনও এমন কি আছে যে, আবিষ্কার করা হয়নি।
শিক্ষাঃ নিজের জীবনে কোন বড়
আবিষ্কার করার সম্ভাবনা থাকলে বিবাহ পরিত্যাগ করুন
collected

Saturday, January 4, 2020

“টমাস আলভা এডিসন"



পিতৃহারা ৭-৮ বছর বয়সের ছেলেটি স্কুল হতে বাড়ীতে এসে মাকে বলল,
"মা, প্রিন্সিপাল আমাকে আদর করে কিছু ক্যান্ডি দিয়েছে। আর,তােমার জন্য এই চিঠিটা।"
মা চিঠিখানা খুলে পড়ে কেঁদে ফেললেন।
মায়ের চোখে জল দেখে ছেলেটি বলল, "মা,
কাঁদছ কেনাে?"
চোখ মুছতে মুছতে মা বললেন, 'বাবা, এটা আনন্দের কান্না!"বলেই ছেলেটিকে চুমু দিয়ে বললেন, "আমার জিনিয়াস বাবা, তােকে চিঠিটা পড়ে শােনাই।"
মা আনন্দের সাথে চিৎকার করে স্যারের লেখার ভাষা বদলে নিজের মত করে পড়তে লাগলেন, "ম্যাম,
আপনার ছেলেটি সাংঘাতিক জিনিয়াস।আমাদের ছােট্ট শহরে ওকে শিক্ষা দেওয়ার মত শিক্ষক আমাদের নেই।তাই, যদি পারেন আপনার ছেলেকে বড় শহরে কোনাে স্কুলে ভর্তি করে দিলে ভালাে হয়। এই ছেলেটি একদিন বিশ্বে প্রচুর সুনাম অর্জন করবে।"
পত্রখানা পড়েই মা, ছেলেটিকে চুমু দিয়ে বললেন, "এই জিনিয়াস ছেলেটিকে আমি নিজেই পড়াব।"
মা নিজেই শিক্ষা দিয়ে ছেলেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের তথা সমগ্র পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক বানালেন।
"টমাস আলভা এডিসন"
বৈদ্যুতিক বাল্ব, শব্দ রেকর্ডিং, মুভি ক্যামেরা বা চলমান ছবি ইত্যাদি সহ হাজারাে আবিষ্কার তাঁর।
মায়ের মৃত্যুর পর টমাস এডিসন একদিন সেই ছােট্ট গ্রামে মায়ের সেই ছােট্ট বাড়ীতে গিয়ে ঘর পরিষ্কারের সময় স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের দেয়া চিঠিটা পেল। চিঠিখানা পড়ে টমাস কেঁদে দিল।
তাতে লেখা ছিল,
"ম্যাডাম,আপনার ছেলে টমাস এডিসন একজন মেন্টালি রিটার্ডেড।সে এতটাই নির্বোধ যে, তাকে শিক্ষা দেওয়ার মত ক্ষমতা আমাদের নেই।
কার'ও আছে বলেও আমাদের জানা নেই। আপনার ছেলের কারণে আমাদের স্কলটির সুনাম ক্ষুন্ন হবে।তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার ছেলেকে স্কুল থেকে ঙংস্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হল।"
শিক্ষনীয়ঃ-
সন্তানের সাথে সর্বদাই পজিটিভ আচরন করবেন। বাসস্থান হল সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
(Collected)

Friday, November 8, 2019

যারা মূল্যায়ন করবে তাদের কাছে যাবে

মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও! এই ঘড়িটা আজ আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে'।

ছেলেটা বললো, 'কি কাজ?'

- 'এই ঘড়িটা নিয়ে রাস্তার পাশের ঘড়ির দোকানে যাবে। তাদের বলবে যে এই ঘড়ি তুমি বিক্রি করতে চাও'।

ছেলেটা তা-ই করলো। ঘড়িটা রাস্তার পাশের একটা ঘড়ির দোকানে বিক্রি করতে নিয়ে গেলো। সে ফিরে এলে তার বাবা বললো, 'ঘড়ির দোকানদার কতো টাকা দিতে চাইলো ঘড়িটার বিনিময়ে?'

ছেলেটা বললো, 'একশো টাকা মাত্র। ঘড়িটা নাকি অনেক পুরাতন, তাই'।

বাবা বললেন, 'এবার পাশের কফি শপে যাও। তাদেরকে বলো যে তুমি এই ঘড়ি বিক্রি করতে চাও'।

ছেলেটা তা-ই করলো। ঘড়িটা নিয়ে পাশের এক কফি শপে গেলো৷ ফিরে এলে তার বাবা জানতে চাইলো, 'কি বললো ওরা?'

- 'ওরা তো এটা নিতেই চাইলো না। বললো, এতো পুরোনো, নোংরা ঘড়ি দিয়ে আমাদের কি হবে?'

বাবা হাসলেন। বললেন, 'এবার তুমি এই ঘড়ি নিয়ে জাদুঘরে যাও। তাদের বলো যে এই ঘড়িটা আজ থেকে দুই'শতো বছর আগের'।

ছেলেটা এবারও তা-ই করলো। সে ঘড়িটা নিয়ে জাদুঘরে গেলো। ফিরে এলে তার বাবা বললো, 'কি বললো ওরা?'

- 'ওরা তো ঘড়িটা দেখে চমকে উঠেছে প্রায়! তারা এই ঘড়ির দাম বাবদ এক লক্ষ টাকা দিতে চাইলো আমাকে'।

ছেলের কথা শুনে বাবা হাসলেন। বললেন, 'আমার সন্তান! আমি তোমাকে এটাই শিখাতে চাচ্ছিলাম যে, যারা তোমার মূল্য বুঝবে তারা ঠিকই তোমাকে জীবনে মূল্যায়ন করবে। আর যারা তোমার মূল্য বুঝবে না, তারা কোনোদিনও তোমাকে মূল্যায়ন করবে না।

তাই, যারা তোমাকে মূল্যায়ন করবে না, তাদের আচরণে কিংবা কথায় কখনো হতাশ হয়ে পড়ো না। এমনকি জোর করে তাদের নিজের মূল্য বুঝাতে যেও না। কেননা তারা তোমার মূল্য বুঝতে অক্ষম।
তুমি তাদের কাছেই যাবে, যারা তোমার সত্যিকার মূল্য বুঝবে, সম্মান করবে, ভালোবাসবে !

#সংগৃহীত

Thursday, October 31, 2019

ফজিলাতুন্নেসা জোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী।।।

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছিলো, একটা ছেলে যদি একজন মেয়ের সাথে কথা বলতে চায়, তবে তাকে প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রক্টর অনুমতি দিলেই সে কথা বলতে পারবে। এছাড়া নয়। এমনকি তার ক্লাসের কোন মেয়ের সাথেও না।

ডিসেম্বর ১৯২৭, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছর পর। একদিন কোলকাতা থেকে একজন যুবক এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখবেন। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে সে ঘুরতে বের হলো। তখন কার্জন হল ছিলো বিজ্ঞান ভবন। ঘুরতে ঘুরতে যখন কার্জন হলের সামনে এসে পড়লো তারা, সে যুবক দেখলো দূরে একটা থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর সুতির শাড়ি পরা এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে? তখন তার বন্ধুরা বলল, এ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। তখন সেই যুবক বলে, সত্যি? আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলব। তখন সে যুবক মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য একটু এগিয়ে গেলে তার বন্ধুরা তাকে বাঁধা দেয়। বলে, না তুমি যেওনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলার অনুমতি নেই। তুমি যদি ওর সাথে অনুমতি ছাড়া কথা বলো তবে তোমার শাস্তি হবে। সেই যুবক বলল, "আমি মানি নাকো কোন বাঁধা, মানি নাকো কোন আইন।"সেই যুবক হেঁটে হেঁটে গিয়ে সেই মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। তারপর তাকে বলল, আমি শুনেছি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। কি নাম আপনার? মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল, ফজিলাতুন্নেছা। জিজ্ঞাসা করলো, কোন সাবজেক্টে পড়েন? বলল, গণিতে। গ্রামের বাড়ি কোথায়? #টাঙ্গাইলের_করটিয়া। ঢাকায় থাকছেন কোথায়? সিদ্দিকবাজার। এবার যুবক বললেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী, আপনার সাথে কথা বলে আমি খুব আপ্লুত হয়েছি। আজই সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। মেয়েটি চলে গেলো। এই সব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর স্যার দেখছিলেন। তার ঠিক তিনদিন পর। ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৭, কলা ভবন আর বিজ্ঞান ভবনের নোটিশ বোর্ডে হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হলো যুবকের নামে। তার নাম লেখা হলো, তার বাবার নাম লেখা হলো এবং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলো, এই যুবকের আজীবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

তারপরে এই যুবক আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। সেইদিনের সেই যুবক, বৃদ্ধ বয়সে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেন। যে যুবকটা আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করেননি, তার মৃত্যুর পরে তার কবর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সেই যুবকের নাম, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

পুনশ্চ: মেয়েটি
ফজিলাতুন্নেসা জোহা,
কবি নজরুল ওনাকে নিয়ে 'বর্ষা বিদায়' কবিতা লেখেন।

টাঙ্গাইলের সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে জন্ম নেয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোক উদ্ভাসিত কারি, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ।

বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯৪৮-৫৭)। তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্রী যিনি উচ্চ শিক্ষার্থে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান।
বেগম ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায় কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে....
“ বেগম ফজিলতুন্নেসা অসামান্য সুন্দরীও ছিলেন না অথবা বীনানিন্দিত মঞ্জুভাষিণীও ছিলেন না। ছিলেন অঙ্কের এম এ এবং একজন উচুঁদরের বাক্‌পটু মেয়ে ”জন্ম
বেগম ফজিলতুন্নেসার জন্ম ১৮৯৯ সালে টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে। পিতার নাম ওয়াজেদ আলী খাঁ, মাতা হালিমা খাতুন।।
ওয়াজেদ আলী খাঁ মাইনর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।

শিক্ষা

মাত্র ৬ বছর বয়সে ওয়াজেদ আলী খাঁ
ফজিলতুন্নেসাকে করটিয়ার প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিনি ১৯২১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক ও ১৯২৩ সালে প্রথম বিভাগে ইডেন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ফজিলাতুন্নেছা ১৯২৫ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে
প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে গণিত শাস্ত্রে এমএ-তে ফার্স্ট ক্লাশ
ফার্স্ট (গোল্ড মেডালিস্ট) হয়েছিলেন।
অতঃপর তিনি ১৯২৮ সালে বিলেতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য গমন করেন।
নিখিল বঙ্গে তিনিই প্রথম মুসলিম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। উপমহাদেশে মুসলিম মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলাত থেকে ডিগ্রি এনেছিলেন। তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে করটিয়ার জমিদার মরহুম ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (চাঁদ মিয়া) বিশেষ উৎসাহ ও অর্থ সাহায্য করেন।
বিলেতে তাঁর অবস্থান কালীন সময়ে
ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে প্রথম ডিপিআই।

পরিবার
-------------

বিদেশে পড়ার সময় ফজিলতুন্নেসার সাথে খুলনা নিবাসী আহসান উল্ল্যাহর পুত্র জোহা সাহেবের সাথে ফজিলাতুন্নেছার পরিচয় হয়। পরে উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
কর্মজিবনে তার অসামান্য ‍অবদান
লন্ডন থেকে ফিরে ১৯৩০ সালে তিনি কলকাতায় প্রথমে স্কুল ইন্সপেক্টরের চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালের আগস্টে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ-সেবক-সংঘে’র বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে তাঁর বক্তব্যটি নারী
জাগরণের মাইল ফলক হয়ে আছে।
এই অধিবেশনে তিনি বলেন ‘নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন ও বলেন। নারী সমাজের অর্ধাঙ্গ, সমাজের পূর্ণতালাভ কোনোদিনই নারীকে বাদ দিয়ে সম্ভব হতে পারে না।
সেই জন্যেই আজ এ সমাজ এতোটা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন,
The highest form of society is one in which every man and woman is free to develop his or her individuality and to enrich the society what is more characteristic of himself or herself.

কাজেই এ সমাজের অবনতির প্রধান কারণ নারীকে ঘরে বন্দি করে রেখে তার Individuality বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রাখা। নারী-শিক্ষা সম্বন্ধে এতোটা কথা আজ বলছি তার কারণ সমাজের গোড়ায় যে-গলদ রয়েছে সেটাকে দূরীভূত করতে
না-পারলে সমাজকে কখনই সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারা যাবে না।’
তিনি ১৯৩৫ সালে বেথুন কলেজে গণিতের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।
বেথুন কলেজে চাকুরিরত অবস্থায় দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে এসে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ১৯৪৮ সালে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষা ছিলেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক বিভাগসহ ইডেন কলেজ ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়।১৯৫২ সালে ইডেন কলেজের মেয়েরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কলেজের অভ্যন্তর থেকে মিছিল বের করার প্রস্ত্ততি নিলে উর্দুভাষী এক দারোগা হোস্টেলে ঢুকে মেয়েদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করার এক পর্যায়ে
খবর পেয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা কলেজে এসে তার বিনানুমতিতে কলেজ প্রাঙ্গণে ঢোকার জন্য দারোগাকে ভৎসনা করে হোস্টেল থেকে বের করে দেন নিজের দৃঢ়তা ও প্রশাসনিক ক্ষমতার বলে।
নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি সম্পর্কে সওগাতসহ অনেক পত্রিকায় তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প প্রকাশিত হয়।

মৃত্যু

এই বিদুষী নারী ১৯৭৭ সালে ২১ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। এই মহীয়সী নারীর স্মৃতি রক্ষার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮৭ সালে ফজিলাতুন্নেছার
নামে হল নির্মাণ করা হয়।

#সংগৃহীত

Wednesday, August 28, 2019

ভালোবাসা রং বদলায়

সুবর্ণা মুস্তফার সাথে একবার হুমায়ুন ফরিদীর প্রচণ্ড ঝগড়া হলো, রাগ করে সুবর্ণা অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পড়লেন।

সুবর্ণা সকালে উঠে দরজা খুলে দেখেন, যেই রুমে ঝগড়া হয়েছিল, সেই রুমের মেঝে থেকে ছাদের দেয়াল পর্যন্ত একটি কথাই লিখে পুরো রুমকে ভরে ফেলা হয়েছে, কথাটি হল- 'সুবর্ণা, আমি তোমাকে ভালোবাসি'|

এতো ভালোবাসাও তাদের বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেনি, ২০০৮ সালে ডিভোর্স হয়। কারণ ভালোবাসা রং বদলায়..!

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন-
'প্রেম ধীরে মুছে যায়; নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।'

এই জীবনানন্দকে একবার দেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে লাবণ্যপ্রভা। সাহিত্যের ছায়া থেকে একশ হাত দূরে থেকেও সাহিত্যের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এই লাবণ্য।

সেও কিছুকাল পরে টের পায় তার স্বাধীনতা হারিয়ে যাচ্ছে। মুক্তির জন্য ছটফট করতে থাকে। দুর্বিষহ হয়ে উঠে দুজনের জীবন। প্রেম সত্যি একসময় মুছে যায়।

গুলতেকিন নামের ক্লাস টেনের সেই কিশোরী হুমায়ুনের প্রেমে অন্ধ হয়ে বিয়ে করে ফেলে।

বিয়ের পরে সে জানতে পারে যে লেখক হুমায়ুন আহমেদ মানুষ হিসেবে খুবই সাধারণ। বাস্তব জীবনে সে চাঁদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে না, কবিতা আওড়ায় না। তার মধ্যে আলাদা কিছু নেই। সে আর দশটা মানুষের মতোই সাধারণ।

স্বপ্ন ভঙ্গের মতো ব্যাপার"
গুলতেকিন বারবার বলতে থাকে- 'তোমার লেখাই ভালো, অন্যকিছু ভালো না।'

আসলেই ভালোবাসা রং বদলায়!
নন্দিতা রায়ের 'বেলাশেষে' সিনেমায় এই কঠিন ব্যাপারটা খুব সহজভাবে বুঝানো হয়েছে-

'হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ,
সারাজীবন বইতে পারা সহজ নয়!'

সহজ না হওয়ার কারণ ঐ একটাই-
'ভালোবাসা রং বদলায়' 🙃

আসলে প্রেম ভালবাসার সহজলভ্যতার এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিরল দুটি জিনিস-
"মনের মানুষ" এবং "মানুষের মন"।

এই দু'টোর উপর বিশ্বাস থাকা ভাল এবং উচিতও বটে। তবে সেটা কেবলই নিজের মধ্যে। কখনোই এগুলো নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী বড়াই দেখানোও উচিত নয়।

কারণ হাওয়ার দিক পরিবর্তন হয়ে কখন কোনদিকে বয়ে যায় সেটা সর্বদাই অনিশ্চিত। হোক সেটা প্রকৃতির হাওয়া অথবা মনের।
আসলেই ভালবাসা রং বদলায়।
[কৃতজ্ঞতা স্বীকার: কুটিবাড়ি নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ]

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post