Ad-1

Thursday, July 20, 2023

ভার্সিটির এক বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,তুমি কি আহমদ ছফা পড় নাই?

আমি বলেছিলাম,না।

উত্তরে তিনি বলেছিলেন,তাহলে কী পড়লে এতদিন ধরে?

আমি সেদিন লজ্জিত হয়েছিলাম।

আরেকদিন ফেসবুকে পেলাম,কেউ লিখেছে হয়ত মনে নাই ততটা,

" যিনি আহমদ ছফাকে পড়েন নাই,তিনি বাংলা এবং বাংলাদেশকেই চিনেন নাই"

তো প্রথমেই পড়া শুরু করলাম "যদ্যপি আমার গুরু" ব‌ইটা দিয়েই। সত্যি বলতে,ব‌ইয়ের প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেন জ্ঞানমূলক তথ্যে ঠাসা। সবকিছু যেন আমাকে ঘোরের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।এতসব যেন মাথায় ই ধরছে না আমার।

অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকলাম আর অভিভূত হতে থাকলাম। রঙিন কলম দিয়ে আঁকানোর অভ্যেস আছে আমার, কিন্তু,সব পৃষ্ঠাতেই যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখা আমি কলম‌ই লাগাতে পারছি না মনে হচ্ছে।

জাতীয় অধ্যাপক স্যার আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে  আহমদ ছফা দেশ-বিদেশের অনেক বিশিষ্ট,বিখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচনা‌ও করেছেন।

এসব কিছুই যেন আমার কাছে মনে হচ্ছে, নতুন জগতে প্রবেশ করলাম - যেন এটা একটা বিশ্বকোষ।

স্যার আবদুর রাজ্জাক সাহেবের পুরান ঢাকার ভাষা বেশি আকৃষ্ট করেছে এবং তাঁর বিষয়ে বেশি কিছু বলার দক্ষতা আমার নেই।

এক কথায় সাধারণভাবে জীবনযাপন করা অসাধারণ একজন মনীষী। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।

স্যার আবদুর রাজ্জাকের ভাষ্যমতে,,,

১. যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন,২ডা বিষয় খেয়াল রাখবেন।ওই জায়গার মানুষ কি খায় আর পড়ালেখা কি করে। কি খায়, কি পড়ে এই ২ডা জিনিস না জানলে একটা জাতির কোনো কিছু জানন যায় না।

২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি প্রধান অবদান হলো- পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন আর বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম। কিন্তু, জ্ঞানচর্চার যে আর‌ও একটা বৈশ্বিক মানদন্ড রয়েছে,তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশেষ কিছু নেই।

৩. বড় লেখক এবং বড় মানুষ এক নয়। বড় লেখকদের মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে।বড় মানুষরা আসলেই বড় মানুষ।

৪. বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভুষা, মুটেমজুর -এরা কথা কয় দেইখ্যাই ত কবি কবিতা লিখতে পারে।

৫. ইতিহাস শেখ সাহেবরে স্টেটসম্যান অইবার একটা সুযোগ দিছিল। তিনি এইডা কামে লাগাইবার পারলেন না।

৬. মাওলানা আব্দুল কালাম আজাদের সত্য কথা বলার অভ্যাস আছিল খুব কম,অ্যান্ড হি ওয়াজ এ কনজেনিটাল লায়ার।

৭. আইজকার ইন্ডিয়ার এডুকেটেড মানুষেরা যে ভাষায় পরস্পরের লগে কম্যুনিকেট করেন,হেইডা কোনো ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ না। ব্রিটিশদের চ‌ইল্যা যাইবার পঞ্চাশ বছর পরেও যারা একটা লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা তৈয়ার করতে পারে নাই,তারা একলগে থাকব কি ক‌ইর‌্যা আমি তো চিন্তা করবার পারি না।

৮. যার মনে দয়া নাই,তারে উপরে আনা ঠিক নয়।

৯. আর্যরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করলে বেদে উল্লেখ থাকত।বেদে এক্কেরে জন্মান্তরবাদের ছিটেফোঁটাও নেই।এইডা তারা পরে ড্রেভিডিয়ানদের কাছ থেইক্যা ইনহেরিট করছে।

১০. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মুহসিন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করছিলেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে কলম ধ‌ইর‌্যা সেই ঋণ শোধ করছিলেন।

১১. যে জাতি যত সিভিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফিস্টিকেটেড।পশ্চিমারা সভ্য অইছে কয়দিন।এই সেদিন‌ও তারা মাছ মাংস কাঁচা খাইত।

১২. আধুনিক বাংলা ভাষাটা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতেরা অভিধান দেইখ্যা দেইখ্যা বানাইছে।

১৩. আধুনিক বাংলা - বঙ্গসন্তানের ঠিক মুখের ভাষা না, লেখাপড়া শিইখ্যা লায়েক অইলে তখন ওই ভাষাটা তার মুখে আসে।

১৪. ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে, ইসলাম ধর্মে পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে, কিন্তু ইহকালের গুরুত্ব‌ও অস্বীকার করা অয় নাই।

১৫. সুরুচিসম্পন্ন সংস্কৃতিবান অধিক মানুষ আমাদের সমাজে সত্যি সত্যি বিরল। এখানে একজন বড় কাজ করলে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।


এরকম স্পষ্টভাষী পন্ডিতের সহচর্য পাবার আকাঙ্ক্ষা সবসময়ই রয়ে যায়। আজ থেকে যেন আহমদ ছফা পড়া চলতেই থাকবে..........,


No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post