Ad-1

Thursday, July 9, 2020

বাংলা বানান জটিলতার সহজ সমাধান



নিচের বানানসমূহ আমাদের সম্মানিত মহা পণ্ডিতদের বানানো শুদ্ধ বানান।
এগুলোকে আমি অতিরঞ্জিত না বলে আর কিছুই বলতে পারছি না।অনেকে এতটুকু পড়ার পর আমাকে মনে মনে মন্দ কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন।এরকম বলার অবশ্যই কিছু কারণও আছে।আসুন একটু আলোচনা করে দেখি.........
আমরা দেখি.....
বাংলা ভাষায় প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার শব্দ আছে।উৎস অনুসারে শব্দকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়।
১. তৎসম।
২. অর্ধ-তৎসম।
৩. তদ্ভব।
৪. দেশি 
৫. বিদেশি। 
আবার বাংলায় বর্ণ আছে ৫০ টি।কোনটা সংস্কৃত থেকে এসেছে কোনটা এসেছে বাংলা ভাষা থেকে।যেমনঃঈ,ঊ,ষ,ণ ইত্যাদি সংস্কৃত থেকে আগত।
আবার বাংলায় মোট ধ্বনি হলো ৩৫ টি।

অন্যদিকে বাংলা ভাষার রুপ হলো দুইটি।একটি হলো লেখ্য,যা বানানকে নির্দেশ করে। আরেকটি হলো কথ্য,যা উচ্চারণকে নির্দেশ করে।
বাংলা বানানে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমি দেখি পণ্ডিতদের মধ্যে।পণ্ডিতরা আমাদেরকে ও ভাষাকে তাদের দেখানো পথেই চালাতে চায়।সাধারণ মানুষের কথা তাঁরা বিবেচনায় করতে চান না।তাই
পণ্ডিতরা বলে থাকেন,
১. তৎসম শব্দে হাত দেওয়া যাবে না।কারণ সেটা সংস্কৃত থেকে এসেছে।
২. অতৎসম শব্দে হাত দেওয়া যাবে।কারণ অতৎসম মানে বাংলা শব্দ।সুতারাং বাংলা আমার মতো হতে হবে।আমার নিজস্ব বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।তাই অতৎসম শব্দে বাংলা বর্ণ ব্যবহার করতে হবে,তৎসম বর্ণ ব্যবহার করা যাবে না।
৩. দেশি শব্দ তো দেশি শব্দই,তাতে কী আর পাণ্ডিত্য দেখাব।
৪. বিদেশি শব্দ যেহেতু আমার অক্ষরে লেখা হচ্ছে সেহেতু আমার মতো করে লিখতে হবে।তাতে বিদেশি শব্দগুলো বিদেশি প্রভাবমুক্ত থাকবে সেসঙ্গে উচ্চারণও বিদেশি প্রভাবমুক্ত থাকবে।তাই অন্তত বিদেশি শব্দটাকে দেশি বানানে লিখে হলেও বিদেশিটারে দেশি বানানোর চেষ্টা করতে হবে।এগুলো পণ্ডিতদের কথা।
কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিদেশি এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো বিদেশি প্রভাবমুক্ত লেখা যাবে,কিন্তু বিদেশি প্রভাবমুক্ত উচ্চারণ করা যাবে না,তা পণ্ডিতরা কোনভাবেই বুঝতে চান না কিংবা বুঝেন না।এটা পণ্ডিতদের ভাষা বিষয়ে সীমাবদ্ধ জ্ঞানকে নির্দেশ করে বলে মনে করি।
কিন্তু আমার কথা হলো তৎসম শব্দে হাত দেওয়া না গেলে বিদেশি ভাষায় হাত দেওয়া যাবে কেন???
অথচ বিদেশি ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো যেমন উচ্চারণ তেমন লেখা না হলে শ্রুতিমাধুর্য যেমন চলে যায় তেমনি অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে যায়।
যেমনঃ আরবি ভাষায় ----
ইদ বলে কোন আরবি শব্দ নেই।এটা ঈদ হবে।
নবি বলে কোন আরবি শব্দ নেই।নবী হবে।
রাসুল বলে কোন আরবি শব্দ নেই।রাসূল হবে।
ফিল বলে কোন আরবি শব্দ নেই।ফীল হবে।যেমনঃসূরা ফীল।
আবার ইংরেজিতে Fill (ফিল),Feel (ফীল)।এখন পণ্ডিতরা বলবেন,,,,Feel এ যে দীর্ঘ-ঈ কার হয়,সেটা প্রতিবর্ণীতে আছে।
আমার কথা হলো feel একটু টান আছে বলে দীর্ঘ-ঈ কার হলে 'ঈদ' শব্দে আরবিতে টান আছে বলে তাতে কেন 'ঈ'- হবে না।
সুরা বলে কোন আরবি শব্দে নেই।সূরা হবে।
৫. ওনারা একবার বলেন যা উচ্চারণ তা বানানে লেখব।ঠ্যালা,গোরু,বারো,তেরো,
তাই যদি হয়,তাহলে এখন থেকে লিখুন 
কলোম,নরোম,জদি,জখন,জুদ্ধ,চলিতো,নমরো,ভদরো,কোবিতা,ওভিধান,প্রোসনো ইত্যাদি।
৬. আবার বলেন কি যা উচ্চারণ তা বানানে হবে না।ব্রাহ্মণ,সূক্ষ্ম,গ্রীষ্ম,যদি,যখন,যুদ্ধ,শ্রেণি।

আমার মতে, সম্পূর্ণ বানান শুদ্ধ করতে গেলে দুইটি নিয়ম অনুসরণ করলেই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি।আর তা'হলোঃ
১. যেহেতু বাংলায় মোট ধ্বনি ৩৫ টি,সেহেতু বাংলায় মোট বর্ণ হবে ৩৫ টি।অবশিষ্ট ১৫ টি বাদ দিতে হবে,তবে ঐ ১৫ টি থেকে সর্বোচ্চ ২ টি রাখা যেতে পারে।সে দুটি হলো ঈ,ঊ,যেহেতু প্রায় সব সব ভাষায় দীর্ঘ স্বর দেখা যায়।যতদিন বাদ দেওয়া হবে না,ততদিন বানান জটিলতাও দূর হবে না।
২. আমরা যা উচ্চারণ করবো,তাই লিখব।
এই দুটো পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে সব বানান অটো শুদ্ধ হয়ে যাবে।
.......
...
..
.
ফেসবুকে বানান নিয়ে এত বেশি পোস্ট দেখতেছি যে,চুপ থাকাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে,তাই একটু লেখার চেষ্টা করলাম,অথচ এই বানানের নিয়ম কানুন ২০১৬ সাল থেকে প্রবর্তিত।এটা তেমন গবেষণামূলক লেখা নয়,আলোচনামূলক লেখা।দিনশেষে আমাকে পণ্ডিতদের দেখানো বানানই বিভিন্ন জায়গায় লিখতে হবে,তা আমি ভালো করেই জানি।কারণ ....


লেখক,
জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ(বাংলা) 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 
শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।         


No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post