Ad-1

Friday, November 1, 2019

পরীক্ষায় ফেইল নিয়ে ভাবনা।

আজ থেকে প্রায় পাঁচ সাত বছর আগে মহেশখালি গিয়েছিলাম।রবীন্দ্রনাথের 'ছুটি' গল্পের নায়ক 'ফটিক' এর সমবয়সী এক ছেলেকে দুপুরের প্রচণ্ড তাপদাহে লবণের মাঠে কাজ করতে দেখে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,"আপনার ছেলে পড়া-লেখা করে না?"
বলল; পড়ত।এখন পড়ে না।আষ্ট কেলাস পর্যন্ত পইরগে।আষ্ট ক্লাসর সরকারি পরীক্ষায় (মানে জে এস সি পরীক্ষায়) অংকে ফেল করার পর আমার সঙ্গে মাঠে নিয়ে এসেছি।আর কি পড়া লেখা করবো।তখন থেকে ভাবছি এটা নিয়ে লিখব,কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনা।মাঝখানে ভুলেই গিয়েছি লিখতে,আজ হঠাৎ মনে পড়লো।
তারপর ভাবছি,,,,,,
এভাবে হয়তো একজন রিকশা ওয়ালার ছেলে জে এস সি পরীক্ষা দিল,সে সব সাবজেক্টে পাশ করেছে শুধু গণিতে ফেইল করেছে।তার ফলে রেজাল্টের পরের দিন বাবা ছেলেকে ডেকে বলেছে তোকে দিয়ে আর পড়া লেখা হবে না,চল তোরে রিকশা চালানো শিখায়।আর বাবা জেলে হলে বলে, চল মাছ ধরানো শিখায়।ড্রাইভার হলে বলবে,গাড়ি চালানো শিখায়।কৃষক হলে বলবে,চল আমাকে সাহায্য করতে ফসলের মাঠে ।কিংবা বলবে, আমি তো এই রকম কাজ করে জীবনটা শেষ করে দিলাম,চল তুই আমার চেয়ে সামন্য একটু উঁচু মানের ভাল কাজ শিখে নেয়।এভাবে একটা ছেলের পড়া লেখার জীবন শেষ হয়ে যায় এবং এভাবে আমাদের সমাজ ওকে পড়া লেখা থেকে বঞ্চিত করে দিল।
অথচ সেই ছেলেটি ক্লাস Nine/Ten/eleven /twelve এ গিয়ে কোন এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে যে গণিত সাব্জেক্টে এত খারাপ করলো সে গণিত সাব্জেক্টিকে এত ভালো করে বুঝা শুরু করে দিল যে,গণিতই তার একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠল।অনুরূপভাবে গণিত ছাড়া অন্য সাবজেক্টেও একই রকম হতে পারে।যেমন :কেউ বাংলায় ফেল করে,কেউ ইংরেজিতে, কেউ বা বিজ্ঞানে ফেইল করে।আসলে জীবন কখন, কীভাবে যে কার সংস্পর্শে এসে জীবনের mood পাল্টে যায় সেটা কেউ জানে না।কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা জীবনের mood পাল্টে দেওয়ার আগে জীবনটাকে পাল্টে দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।সে জন্য আমি মনে PECE,JSC,SSC,HSC পরীক্ষায় ফেইল বলে কিছু থাকবে না।কেউ যদি একটা সাব্জেক্টে ১০ নাম্বারও পায় সে যেন সে ক্যাটাগরির গ্রেড বিশিষ্ট সার্টিফিকেট পায়।যেমন:
৮০-১০০ =A+
৭০-৭৯ =A
৬০-৬৯ =A-
৫০-৫৯ =B
৪০-৪৯ =C
৩০-৩৯ =D
২০-২৯ =E
১০-১৯ = F(এ গ্রেডটা না দেওয়া ভালো,যেহেতু এ গ্রেডের উপর মানুষের নেগেটিভ ভাব আছে) or Z grade.
এভাবেই ব্যাবস্থা করাই সরকারের উচিত বলে মনে করি।প্রয়োজনে তাকে F বা Z গ্রেড বিশিষ্ট সার্টিফিকেট যেন দেওয়া হয়।এতে করে একজন ছেলে F/Z গেডে হলেও যে HSC পাস করেছে তার একটা ডকুমেন্ট হলেও থাকবে।অন্তত ফেইল করে আত্মহত্যা করা থেকেও অনেকের জীবন বাঁচবে এবং নিজেকে কিছুটা হলেও শিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।এতে সমাজে শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়বে,সমাজ আরো আলোকিত হবে।হয়তো তারাই একদিন তার PECE/JSC ফেইল করা সাব্জেক্টের জন্য জগদ্বিখ্যাত হয়ে যাবে।
তবে HSC পর্যন্ত সব গ্রেড মিলিয়ে যদি সে কম গ্রেড বা মানসম্মত গ্রেড না পায় সে আর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে না।যেমন: PECE+JSC+SSC+HSC মিলে মোট ১২/১৫ পয়েন্ট বা আলোচনা সাপেক্ষ কোন পয়েন্ট না পায় সে আর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে না।আগামী বছর থেকে CGPA পদ্ধতিতে রেজাল্ট হবে তাতে ৪০ মার্ক্সে পাস, তাতে তো আরও কঠিন হবে পাস করা।ঝরে পড়বে অসংখ্য শিক্ষার্থী,অজ্ঞতার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন,শিশুর মেরুদণ্ড গড়ে ওঠার আগে পাস পরিমাপের মাপকাঠি দিয়ে ভেঙে দিব তার মেরুদণ্ড।তবে আমি CGPA এর বিপক্ষে নয় ফেইলের বিপক্ষে।
কিছু ছবি কথা বলে....



লেখক ও শিক্ষাবিদ
জহির উদ্দীন।
বি.এ(অনার্স),এম.এ(বাংলা),এলএল.বি।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post