Ad-1

Wednesday, August 9, 2017

বাবার স্মৃতি -০২

বাবা,তুমি আছ শ্রদ্ধায় হৃদয়ে আমার...
তখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি।ছোট চাচার বিয়ের দিন ধার্য হলো।ঐদিকে বিয়ের দিন আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার একটা পরীক্ষাও ছিল।আর ছোটবেলা থেকেই পড়া-লেখার প্রতি আমার একটু বেশিই ঝুঁক ছিল।কাজের প্রতি অনীহা দেখালে বা কাজ না করতে চাইলে বাবা ঠাট্টা করে বলতেন,"তুই পন্না ছাড়া কিছু গরিত ন পারিবি।"(তুই পড়া-লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবি না)।
তো বিয়ের দিন বিকেল দুইটা থেকে আমার পরীক্ষা শুরু।চাইলে সকালে গিয়ে বিয়ে খেয়ে আসতে পারতাম,কিন্তু পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিতে হবে বলে তা আমি করিনি।একটা ঘরের মধ্যে  প্রবেশ করে ভিতর থেকে হুক দিয়ে আমি পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিয়েছিলাম। তো যথাসময়ে প্রায় একটার দিকে চলে গিয়েছিলাম পরীক্ষার হলে।দুইটা থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছিল।পরীক্ষার মাঝখানে মনে মনে ভাবছিলাম,ছোট চাচার শখের বিয়ে আর আমার দ্বারা খাওয়া হলো না।সবাই গেল বিয়েতে, আর আমি গেলাম পরীক্ষা দিতে।এমনকি কাজিনদের মধ্যে যাদের পরীক্ষা ছিল,তারাও পরীক্ষা না দিয়ে চলে গেলো।
তারপর তিনঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হলাম।হল থেকে বের হয়ে স্কুলের সামনে একটা দোকান ছিল,যখন সে দোকান পর্যন্ত আসলাম অবাক না হয়ে পারলাম না,দেখলাম,বিদ্যালয়ের সামনের দোকানটাতে বাবা একা বসে আছে।আমি তো রীতিমত অবাক হয়েছিলাম,বাবা এখানে কি করে?বাবা না চাচার বিয়েতে গেছে?
আমাকে দেখার পর বাবা বললেন...
:পরীক্ষা শেষ হলো?
: হ্যাঁ,শেষ।
:তো পরীক্ষা কেমন হলো?
: ভালো হয়েছে।তারপর জিজ্ঞেস করলাম,তো তুমি এখানে কি করছ?বিয়েতে যাওনি?
: গেছি তো।কিন্তু তোকে ছাড়া কি বিয়ে খেতে পারি?তাই বিয়ে থেকেই তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে আসলাম।কথাগুলো হাটতে হাঁটতে বলেছিলেন।পরে বললেন,চলো,এবার দুজনে বিয়েতে যাই।কলম,বোর্ড(তখন পরীক্ষার হলে খাতার নিচে দেওয়ার জন্য একধরনের বোর্ড ব্যবহার করা হতো,এখনও মনে আছে আমারটা ছিল সবুজ কালারের) এগুলো ঘরে রেখে আস।
এটা বলে একটা রিকসা নিয়ে দুজনেই কনের বাড়িতে পৌছলাম,তখন সময় ছিল আছর শেষে প্রায় মাগরিবের কাছাকাছি।ততক্ষণে বরসহ সবাই খাবার খেয়ে ফেলেছে।পুরো বিয়ে বাড়িতে খাবার খাইনি শুধু আমি আর বাবা।
যেহেতু বাবা বরের ভাই ছিল, তাই অনেকে অনেকটা খুব আন্তরিকভাবেই বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল,আপনি হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলেন?আমরা আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম,এত খুঁজাখুঁজির পরও আপনাকে কোথাও পেলাম না।বাবা বললেন,আমার মেঝো ছেলেটা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল,তাই ওকে পরীক্ষার হল থেকে আনতে গিয়েছিলাম।
ততক্ষণে কিছু বিয়েতে কিছু তরিতরকারি শর্ট পড়েছিল,কিছু তরকারি অবশিষ্ট ছিল। তারপর শুধু বাবা আর আমি বস্তির পেন্ডেলে বসে যা বেঁচে গিয়েছিল সে অবশিষ্ট তরকারি দিয়েই দুজনে এক সঙ্গে বসেই বিয়ের খাবার খেয়েছিলাম।

বাবা এখন বেঁচে নেই।আমার বয়স এখন উনত্রিশ বছর।তখন আমার বয়স ছিল বার তের বছর।আজ এতো বছর হয়ে গেলো বাবার সে ত্যাগ,আমার জন্য বাবার হৃদয়ে এত্ত মমতা তা এখনও ভুলতে পারিনি।আসলে পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে প্রতিটি বাবাই সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।কিন্তু আমার কাছে আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই, যিনি শুধু তার নিজের নামটা কাঁপা কাঁপা হাতে দস্তখত করতে পারতেন,যিনি সেই দস্তখতে কী লিখেছে তা হয়তো আন্দাজে পড়তে পারলেও অক্ষরগুলো ঠিকভাবে চিনতেনই না,যাকে ছোটবেলায় কেউ হয়তো শিখিয়ে দিয়েছিল তার দস্তখতটা এরকমই হবে,এবং তা তিনি সারা জীবন মনে রেখে দিয়েছিলেন।আর বাবা এই রকম দস্তখত করতে পারে বলেই মাঝে মাঝে গর্ব করে বলতেন,আমি দস্তখত দিতে জানি,আমার বয়সের অনেকে তাও দিতে পারে না,আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর বাবা।বাবা আজও তোমাকে মিস করি ভীষণ।
বাবা,আজ তুমি যেখানে আছ,তুমি জান্নাতের সুখে সুখেই থেকো।দোয়া করি,আল্লাহ যেন তোমাকে কোনভাবেই সামান্য কষ্টও না দেয়।এই প্রার্থনাই আছে তোমার জন্য আমার হৃদয়ে সবসময়।।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post