Ad-1

Thursday, October 12, 2017

য-ফলা এর উচ্চারণের নিয়ম লেখো ৫টি

য-ফলার উচ্চারণ গুলো নিচে দেওয়া হলঃ

  • শব্দের প্রথমে অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত বর্ণে য -ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণ অ্যা হয়।যেমনঃ ব্যয়, খ্যাত, ব্যাথা, ব্যাকরণ।
  • য-ফলা যুক্ত বর্ণের পর ই-কার থাকলে এ উচ্চারিত হয়। যেমনঃব্যাক্তি
  • শব্দের অন্তে বা মধ্যে য-ফলা থাকলে দ্বিত্ব হবে। যেমনঃ উদ্যান,বিদ্যা, তথ্য।
    মহাপ্রাণ হলে প্রথমটি অল্পপ্রাণ দ্বিতীয়টি মহাপ্রাণ।
  • 'হ' এ- য-ফলা যুক্ত হলে হ লোপ পায়। যেমনঃ সহ্য।
  • যুক্ত ব্যঞ্জনে য ফলা যুক্ত হলে তার উচ্চারণ থাকে না, অ রক্ষিত।যেমনঃ স্বাস্থ্য, কন্ঠ, বন্দ্যোপাধ্যায়।

Wednesday, October 11, 2017

কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ

উদ্যোগ>উদজোগ
উদযাপন >উদজাপোন
দৃঢ়>দৃঢ়ো
গাঢ়> গাঢ়ো
আষাঢ়>আশাড়
রাঢ়>রাড়
শৃগাল>সৃগাল
শ্রম>স্রোম
প্রশ্ন>প্রোসনো
অশ্লীল >অসলিল
প্রায়শ>প্রায়োশো
মূলত>মুলতো
অতঃপর>অতপপোর
ইতঃপূর্বে >ইতপপুর্বে
পুনঃপুন >পুনপপুনো
বহিঃপ্রকাশ >বহিপপ্রোকাশ
রক্ষা >রোকখা
ক্ষমা>খমা
ক্ষতি>খতি
ক্ষুণ্ন>খুননো
অক্ষর>অকখোর
নক্ষত্র > নোকখোতত্রো
পরীক্ষা > পোরিকখা
বৃক্ষ >বৃকখো
জ্ঞান>গ্যাঁন
জ্ঞাত>গ্যাঁতো
প্রজ্ঞা>প্রোগগাঁ
অজ্ঞাত > অগগ্যাঁতো
বিজ্ঞান >বিগগাঁন
সংজ্ঞা >সংগা
অজ্ঞ >অগগোঁ
বিজ্ঞ>বিগগোঁ
অজ্ঞতা>অগগোঁতা
ন্যস্ত>ন্যাসতো
ব্যস্ত>ব্যাসতো
ব্যথা>ব্যাথা
ব্যবহার>ব্যাবহার
ব্যতিব্যস্ত> বেতিবব্যাসতো
ব্যক্তি>বেকতি
ব্যতিক্রম>বেতিকক্রোম
চিহ্ন> চিননো
অপরাহ্ণ> অপোরাননো
মধ্যাহ্ন> মোদধাননো
ব্রাহ্মণ > ব্রামমো
ব্রাহ্ম > ব্রামমো
উহ্য > উজঝো
গ্রাহ্য > গ্রাজঝো
মুহ্যমান> মুজঝোমান
আহ্লাদী > আললাদি
প্রহ্লাদ > প্রোললা
আহ্বান > আওভান
আহ্বায়ক > আওভায়োক
জিহ্বা > জিউভা
বিহ্বল > বিউভল

Saturday, August 19, 2017

রচনা: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

ভূমিকা:
বাংলার কৃষক-মজুর-শ্রমিকের অতি আপনজন যে মানুষটি, তাঁর নাম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। চিরকাল নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মজলুম মানুষের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন। সংগ্রাম করেছেন। তাই তিনি সবার কাছে মজলুম জননেতা।
জন্ম ও শৈশব:
সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আবদুল হামিদ খানের জন্ম ১৮৮০ সালে। তাঁর বাবার নাম হাজি শরাফত আলী খান। মায়ের নাম মোসাম্মদ মজিরন বিবি। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃ-মাতৃহীন হন। তাঁর এক চাচা ইব্রাহীম খান তাঁকে শৈশবে আশ্রয় দেন। তাঁর কাছে থেকেই তিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।
শিক্ষাজীবন:
গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনাকালীন ইরাক থেকে আগত এক পীর সাহেবের স্নেহদৃষ্টি লাভ করেন আবদুল হামিদ খান। সৈয়দ নাসির উদ্দীন বোগদাদি নামের এই পীর সাহেব তাঁকে পুত্রস্নেহে লালপালন করেন। এই পীর সাহেবের কাছেই তিনি আরবি, ফারসি শেখেন। পরে তিনি আবদুল হামিদ খানকে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। এ সময় তিনি দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হন।
কর্মজীবন:
মাদ্রাসার পড়া শেষ করে আবদুল হামিদ খান কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি টাঙ্গাইলের কাগমারীর এক প্রাইমারি স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। এখানে শিক্ষকতাকালে তিনি জমিদারের অত্যাচার, নির্যাতন দেখতে পান। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রাম শুরু করেন। ফলে জমিদারের বিষ-নজরে পড়ে তাঁকে কাগমারী ছাড়তে হয়।
সংগ্রামী জীবন:
২২ বছর বয়সে কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আবদুল হামিদ খান অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। ১৭ মাস পর তিনি মুক্তি পান। এরপর ১৯২৪ সালে সিরাজগঞ্জে এক সভায় কৃষক সাধারণের ওপর জমিদারের শোষণ, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনি তুলে ধরেন। এ সভায় ভাষণের জন্য তাঁকে নিজের জন্মভূমি ছাড়তে হয়। এবার তিনি চলে যান আসামের জলেশ্বরে।
ভাসানী উপাধি:
১৯২৪ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচরে বাঙালি কৃষকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আবদুল হামিদ খান এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সমাবেশেই সাধারণ কৃষকেরা তাঁকে ভাসানচরের মওলানা তথা মওলানা ভাসানী নামে আখ্যায়িত করেন। আর তখন থেকেই তিনি হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
রাজনৈতিক জীবন:
ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। যুক্তফ্রন্ট এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়।
গণ-অভ্যুত্থানে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা:
মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকেরা ধর্ম ও জাতীয় সংহতির নামে পূর্ববাংলার মানুষকে শোষণ করছে। তাই তাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রের বাঁধনে অবস্থান করা আর সম্ভব নয়। সে কারণে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে পল্টন ময়দানে ভাষণ দানকালে এ কথাটিই বারবার উচ্চারণ করে জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালেও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে, যে বৈষম্যনীতি অনুসরণ করছে, তা চলতে থাকলে পূর্ব পাকিস্তান একদিন স্বাধীন হয়ে যাবে। তাঁর এ কথা বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে দেশব্যাপী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী:
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে মওলানা ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পরও কোনো পদমর্যাদা ও মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি সব সময় জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত লংমার্চ পরিচালনা।
শিক্ষা বিস্তারে মওলানা ভাসানী:
 মওলানা ভাসানী নিজে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করতে পারেননি, কিন্তু এ দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিস্তার প্রসারে ছিল তাঁর অনেক অবদান। তিনি সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরে হাজি মুহম্মদ মুহসীন কলেজ, ঢাকায় আবুজর গিফারি কলেজ ও টাঙ্গাইলে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
মওলানা ভাসানীর মৃত্যু:
হদ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
উপসংহার: মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার। তিনি চিরকাল শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে।

Friday, August 11, 2017

দালালের খপ্পরে মানবতা

দালালের খপ্পরে মানবতা.......
জানতাম,মানবতা মানে এক স্রষ্টাতে বিশ্বাস।
জানতাম,মানবতা মানে,
"সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় মন্দির কোন কাবা গৃহ নেই।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"জাতের কিরুপ দেখলাম না এ নজরে।"
জানতাম,মানবতা মানে,
"শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা।"
জানছি, মানবতা মানে, সুবিধাবাদী।
মানবতা মানে,এক প্রকার দালালী।
যারা সবচেয়ে বেশি দেখত,
আজ তারা সবচেয়ে বেশি অন্ধ।
যারা সবচেয়ে বেশি বলত কথা
তারা আজ সবচেয়ে বোবা।
মানবতা আইলানকে ১০০ ডিগ্রি
পাওয়ারি চশমা দিয়ে দেখে।
কিন্তু করিমকে দেখে না।
মানবতা আজ বন্য পশুকে (হাতি) দেখে
কিন্তু নিস্পাপ শিশুকে দেখে না।
"বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসা
নদীতে ফানার মতো লাশ ভাসা"
এসব আজ,বিশ্বে শুধু কবিতার লাইন।
তাই,
মানবতা আজ অন্ধ।
মানবতা আজ বোবা।
মানবতা আজ বধির।
মানবতা আজ ভাসছে সাগরে,
মানবতা আজ পুড়ছে আগুনে,
মানবতা আজ তীব্র রক্তাক্ত,
মানবতা আজ ক্ষত বিক্ষত,
মানবতা আজ........
মানবতা আজ........
মানবতা আজ আর্তনাদ.....
মানবতা আজ ত্রাহি ত্রাহি রব করছে
আকাশে বাতাসে।
জানতাম, দেওয়ালের এক প্রান্তে আঘাতে
অন্য প্রান্ত আহত হতো।
তবে কি আজ দেওয়ালের একতা নেই???
নাকি দেওয়ালের অনুভূতিও আজ নষ্ট???
নাকি সবকিছু আজ নষ্ট দালালের খপ্পরে
আর নষ্টদের দখলে?
(৩০.১১.২০১৬ খ্রি:)

Wednesday, August 9, 2017

বাবার স্মৃতি -০২

বাবা,তুমি আছ শ্রদ্ধায় হৃদয়ে আমার...
তখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি।ছোট চাচার বিয়ের দিন ধার্য হলো।ঐদিকে বিয়ের দিন আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার একটা পরীক্ষাও ছিল।আর ছোটবেলা থেকেই পড়া-লেখার প্রতি আমার একটু বেশিই ঝুঁক ছিল।কাজের প্রতি অনীহা দেখালে বা কাজ না করতে চাইলে বাবা ঠাট্টা করে বলতেন,"তুই পন্না ছাড়া কিছু গরিত ন পারিবি।"(তুই পড়া-লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবি না)।
তো বিয়ের দিন বিকেল দুইটা থেকে আমার পরীক্ষা শুরু।চাইলে সকালে গিয়ে বিয়ে খেয়ে আসতে পারতাম,কিন্তু পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিতে হবে বলে তা আমি করিনি।একটা ঘরের মধ্যে  প্রবেশ করে ভিতর থেকে হুক দিয়ে আমি পরীক্ষার পড়া রিভিশন দিয়েছিলাম। তো যথাসময়ে প্রায় একটার দিকে চলে গিয়েছিলাম পরীক্ষার হলে।দুইটা থেকে পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছিল।পরীক্ষার মাঝখানে মনে মনে ভাবছিলাম,ছোট চাচার শখের বিয়ে আর আমার দ্বারা খাওয়া হলো না।সবাই গেল বিয়েতে, আর আমি গেলাম পরীক্ষা দিতে।এমনকি কাজিনদের মধ্যে যাদের পরীক্ষা ছিল,তারাও পরীক্ষা না দিয়ে চলে গেলো।
তারপর তিনঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হলাম।হল থেকে বের হয়ে স্কুলের সামনে একটা দোকান ছিল,যখন সে দোকান পর্যন্ত আসলাম অবাক না হয়ে পারলাম না,দেখলাম,বিদ্যালয়ের সামনের দোকানটাতে বাবা একা বসে আছে।আমি তো রীতিমত অবাক হয়েছিলাম,বাবা এখানে কি করে?বাবা না চাচার বিয়েতে গেছে?
আমাকে দেখার পর বাবা বললেন...
:পরীক্ষা শেষ হলো?
: হ্যাঁ,শেষ।
:তো পরীক্ষা কেমন হলো?
: ভালো হয়েছে।তারপর জিজ্ঞেস করলাম,তো তুমি এখানে কি করছ?বিয়েতে যাওনি?
: গেছি তো।কিন্তু তোকে ছাড়া কি বিয়ে খেতে পারি?তাই বিয়ে থেকেই তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে আসলাম।কথাগুলো হাটতে হাঁটতে বলেছিলেন।পরে বললেন,চলো,এবার দুজনে বিয়েতে যাই।কলম,বোর্ড(তখন পরীক্ষার হলে খাতার নিচে দেওয়ার জন্য একধরনের বোর্ড ব্যবহার করা হতো,এখনও মনে আছে আমারটা ছিল সবুজ কালারের) এগুলো ঘরে রেখে আস।
এটা বলে একটা রিকসা নিয়ে দুজনেই কনের বাড়িতে পৌছলাম,তখন সময় ছিল আছর শেষে প্রায় মাগরিবের কাছাকাছি।ততক্ষণে বরসহ সবাই খাবার খেয়ে ফেলেছে।পুরো বিয়ে বাড়িতে খাবার খাইনি শুধু আমি আর বাবা।
যেহেতু বাবা বরের ভাই ছিল, তাই অনেকে অনেকটা খুব আন্তরিকভাবেই বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল,আপনি হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলেন?আমরা আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম,এত খুঁজাখুঁজির পরও আপনাকে কোথাও পেলাম না।বাবা বললেন,আমার মেঝো ছেলেটা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল,তাই ওকে পরীক্ষার হল থেকে আনতে গিয়েছিলাম।
ততক্ষণে কিছু বিয়েতে কিছু তরিতরকারি শর্ট পড়েছিল,কিছু তরকারি অবশিষ্ট ছিল। তারপর শুধু বাবা আর আমি বস্তির পেন্ডেলে বসে যা বেঁচে গিয়েছিল সে অবশিষ্ট তরকারি দিয়েই দুজনে এক সঙ্গে বসেই বিয়ের খাবার খেয়েছিলাম।

বাবা এখন বেঁচে নেই।আমার বয়স এখন উনত্রিশ বছর।তখন আমার বয়স ছিল বার তের বছর।আজ এতো বছর হয়ে গেলো বাবার সে ত্যাগ,আমার জন্য বাবার হৃদয়ে এত্ত মমতা তা এখনও ভুলতে পারিনি।আসলে পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে প্রতিটি বাবাই সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।কিন্তু আমার কাছে আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই, যিনি শুধু তার নিজের নামটা কাঁপা কাঁপা হাতে দস্তখত করতে পারতেন,যিনি সেই দস্তখতে কী লিখেছে তা হয়তো আন্দাজে পড়তে পারলেও অক্ষরগুলো ঠিকভাবে চিনতেনই না,যাকে ছোটবেলায় কেউ হয়তো শিখিয়ে দিয়েছিল তার দস্তখতটা এরকমই হবে,এবং তা তিনি সারা জীবন মনে রেখে দিয়েছিলেন।আর বাবা এই রকম দস্তখত করতে পারে বলেই মাঝে মাঝে গর্ব করে বলতেন,আমি দস্তখত দিতে জানি,আমার বয়সের অনেকে তাও দিতে পারে না,আমার সেই অশিক্ষিত বাবাই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর বাবা।বাবা আজও তোমাকে মিস করি ভীষণ।
বাবা,আজ তুমি যেখানে আছ,তুমি জান্নাতের সুখে সুখেই থেকো।দোয়া করি,আল্লাহ যেন তোমাকে কোনভাবেই সামান্য কষ্টও না দেয়।এই প্রার্থনাই আছে তোমার জন্য আমার হৃদয়ে সবসময়।।

Recent Post

মিষ্টি আলুর উপকারিতা

মিষ্টি আলুঃ "বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়ানোর সেরা খাবার"  বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য মিষ্টি আলু একটি বিশেষ খাবার। এটি শুধু বাচ্চ...

Most Popular Post