প্রমথ চৌধুরী থেকে একরাম চৌধুরী
ইংরেজি পরীক্ষা।
Ray শব্দের অর্থ পারছে না সবুজ । খুব বাজে ওয়ার্ড।সে তার সামনের টুলে বসা মিনহাজকে বলল, রে অর্থ কীরে?
উত্তর বঙ্গের ছেলে মিনহাজ বলল, রশ্মি (রোশশিঁ)। সিলটি পোলা সবুজ মনে করল অ আ ই; সে লিখল, Ray অর্থ ‘ই’ (হ্রস্ব-ই)। বাসায় গিয়ে দেখল ঠিক হয়নি। সবুজ বেটা রশমি-কে ‘রোশশিঁ’ বলে তার একটা নাম্বার কমিয়ে দিয়েছে। যত গন্ডগোল শালার ওই ম-তে। ম- মানে মরণ।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখকের নাম কিছুতেই মনে করতে পারছিল না সবুজ। বলল, এই মিনহাজ, ‘বীরবলের হালখাতা’ কে লিখেছে রে?
মিনহাজ বলল, “প্রমথ চৌধুরী”। প্রমথ চৌধুরী কারো নাম হতে পারে না, সবুজ ভাবল। নিশ্চয় ইংরেজি পরীক্ষার মতো শালা ‘ম’-টাকে উলটে দিয়েছে। সিলটি পোলার বুদ্ধি একটু বেশি কিনা। সবুজ প্রমথ চৌধুরী লিখল না। লিখল, বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক ‘প্রথম চৌধুরী’।
সবুজের পিছনে সুনামগঞ্জের পোলা রাকিব। সেও প্রশ্নটা পারছিল না। উঁকি দিয়ে দেখে নিল সবুজের খাতা। সবুজ লিখেছে, বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক “প্রথম চৌধুরী”।কিন্তু একই রকম লেখা যাবে না। সনৎ স্যার বলেছেন, “মেট্রিক পরীক্ষায় দুজনের উত্তর মিলে গেলে গোল্লা দেবে একজামিনার।” প্রথম চৌধুরী লিখলে একজামিনার মনে করবেন - নকল করে লিখেছে। অত বোকা নয়, রাকিব। সে লিখল বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক “১ম চৌধুরী”।
রাকিবের পেছনে ছিল, চাটগাঁইয়া পোঁয়া সাঈদ। সে রাকিবের খাতা দেখে নিল; রাকিব লিখেছে ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক ১ম চৌধুরী। কিন্তু সে একই রকম লিখে নকলের ফাঁদে পড়তে চায় না। নকল করলে গোল্লা। চাটগাঁইয়া পোঁয়া, মেডিত পইল্যে লোয়া। সাঈদ লিখল, ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক এক ম চৌধুরী। সাঈদের পিছনে কক্সবাজারের মাইয়ো পোঁয়া রাজিয়া উঁকি দিয়ে দেখল, কিন্তু ভালোভাবে বুঝতে পারল না। ছেলেদের সঙ্গে তখন কথা বলা ছিল নিষিদ্ধ।রাজিয়া লিখল ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক একরাম চৌধুরী।
এই খাতাগুলো ঘটনাচক্রে মেট্রিক পরীক্ষার তৎকালীন প্রধান এক্সামিনার প্রমথ চৌধুরীর হাতে গিয়ে পড়ল। তিনি সিলটি ও চাটগাঁইয়া পোলাপানদের হাতে নিজের নামের এমন দুরবস্থা দেখে রাগে-ক্ষোভে মাথার সামনের সবগুলো চুল তুলে ফেলতে শুরু করেন।কিয়দংশ টাকু হবার পর বউ এসে বললেন, এমন পাগলামি করছ কেন? এমন করলে তোমাকে তো তোমার দেশের বাড়ি পাবনা পাঠিয়ে দিতে হবে।
না, আমি পাবনা যাব না, চিৎকার দিয়ে বললেন প্রমথ চৌধুরী, “আমি রবীন্দ্রনাথের বড়ো ভাই উপমহাদেশের প্রথম আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীর স্বামী, আশুতোষ চৌধুরী আমার বড়ো ভাই, আমি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক, আমি ব্যারিস্টার, আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম-- আমাকে কিনা; ছি ছি ছি!” আমার সঙ্গে বিদ্রুপ?
বউ বললেন, তুমি বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধের রচয়িতা। হয়তো এজন্য বিদ্রূপ করে তোমার স্বীকৃতি দিয়েছে।
অমন স্বীকৃতি আমি চাই না, আবার চুল ছিড়তে শুরু করেন প্রমথ চৌধুরী।
বউ বললেন, তুমি বাংলায় চলিত রীতির প্রবর্তক, তাই ওরা তোমার নামকেও চলিত ভাষায় অনুবাদ করেছে। তোমার তো খুশী হওয়ার কথা।এটা তোমার উপহার গো।
এমন উপহার আমি চাই না, চাই না; এ উপহার আমার নাহি সাজে- - -।
কী হয়েছে গো, বলো না?
প্রমথ চৌধুরী ব্যথাকাতর গলায় বললেন, “বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে আর নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে।”
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Ad-1
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
সুভা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...
Most Popular Post
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
উত্তর 'অ' ধ্বনির উচ্চারণ অ-এর মতো হলে তাকে অ-বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ বলে।অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে ঠোঁট তেমন বাঁকা বা গোল হয় না।যে...
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
উত্তর: অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিম্নরুপ।যথা: ১. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ই-কার বা উ-কার হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ...
-
অর্থালঙ্কার: অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ: অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা: ১. সাদৃশ্যমূলক ২. বিরোধমূলক ৩. শৃঙ্খলামূলক ৪. ন্যায়মূলক ৫. গূঢ়ার্থ...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
No comments:
Post a Comment