★প্রাক আলোচনা : মানব জাতি মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাক্-প্রতঙ্গের সাহায্যে অপরের বোধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমুহ উচ্চারণ করে থাকে তার নাম ভাষা। বাঙালি জাতি যে ভাষার সাহায্যে নিজেদের মধ্যে মনের ভাব আদান-প্রদান করে তার নাম বাংলা ভাষা।
বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে ভারতে আর্য জাতি আগমন করে। তাদের ভাষা ছিল আর্য ভাষা । আর্য ভাষা হচ্ছে বৈদিক ভাষা বা ছান্দস ভাষার প্রাচীনতম নির্দশন। ভাষা পন্ডিতগণের মতে বৈদি ভাষায় ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষাগুলির আদিম উৎস।
আর্য ভাষার বিবর্তনের তিনটি স্তর:
ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা বা বৈদিক সংস্কৃত ভাষা (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ)।
খ. মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা বা প্রাকৃত ভাষা (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্ট্রিয় দশম শতাব্দি পর্যন্ত)।
গ. নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা বা বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি ইত্যাদি(১০০০খ্রিষ্টাব্দ অধুনা)।
খ্রিষ্ট্রিয় দশম শতাব্দির দিকে নব্য ভারতীয় বা আধুনিক আর্য ভাষার উদ্ভব হয়। অধিকাংশ পন্ডিতের মতে, মাগধি প্রাকৃত - অপ্রভ্রংশের ভিতর দিয়েই বাংলা ভাষার উৎপত্তি। তবে ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে, গৌড়ীয় প্রাকৃত অপ্রভ্রংশ থেকেই খ্রিঃ সপ্তম শতাব্দীর দিকে বাংলা ভাষার জন্ম।
হিন্দি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, সিন্ধি প্রভৃতি প্রাদেশিক ভাষাগুলি নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার বিভিন্ন শাখা।
পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত সাড়ে তিন হাজারের অধিক ভাষার একটি বাংলা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলার স্থান পৃথিবীতে ৬ষ্ঠ। পৃথিবীব্যাপী প্রায় পঁচিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। মাতৃভাষার দিক দিয়ে অবিভক্ত ভারতে বাংলা ভাষার কত ছিল - প্রথম।
বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এর আনুমানিক বয়স প্রায় দেড় হাজার বছর। স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন এর মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি - মাগধী প্রাকৃত থেকে। স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সনের এই মতকে সমর্থন দিয়েছেন ড: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। তার মতে বাংলা ভাষার জন্ম হয় ৯৫০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ দশম শতকে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। কিন্তু ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে বাংলা ভাষার জন্ম হয় গৌড়ীয় অপভ্রংশ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীতে।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা ভাষার অবস্থান :
বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারের উপর ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বাংলা অন্যতম। বর্তমানে পৃথিবীতে বাংলা ভাষায় কথা বলে ১৮১ মিলিয়ন লোক। বাংলাদেশ ছাড়াও বাংলায় কথা বলে পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসাম প্রদেশের জনসাধারণ। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহৎ মাতৃভাষা।
ভাষাভাষি (জনসংখ্যার)দিক থেকে বাংলার অবস্থান :
র্যাঙ্ক ভাষা মোট ভাষাভাষি জনসংখ্যা (মিলিয়ন)
দশম জার্মান ৯০.৩
নবম জাপানিজ ১২২
অষ্টম রাশিয়ান ১৪৪
সপ্তম পুর্তগিজ ১৭৮
ষষ্ঠ বাংলা ১৮১
পঞ্চম হিন্দি ১৮২
চতুর্থ আরবি ২২১
তৃতীয় ইংরেজি ৩২৮
দ্বিতীয় স্প্যানিশ ৩২৯
প্রথম মান্দারিন(চীনা) ১২১৩
সূত্র: ইথনোলগ
বর্তমানে পৃথিবীর প্রধান (ভাষাসমুহের) মধ্যে বাংলাভাষার স্থান :
র্যাঙ্ক ভাষা প্রধান দেশ
প্রথম চৈনিক (মেন্ডারিন, বাউ, কেন্টোনেসে) চীন(হংকং),তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া,সিঙ্গপুর, ভিয়েতনাম।
দ্বিতীয় স্প্যানিশ স্পেন, ইতালি,আমেরিকা।
তৃতীয় ইংরেজি ইউকে, ইউ এস এ ,দক্ষিণ আফ্রিকা,অষ্ট্রেলিয়া।
চতুর্থ বাংলা বাংলাদেশ,ভারত।
[বি: দ্র: এই তথ্য পরিবর্তনশীল]
ভাষা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য :
ক্স ভাষার মূল উপাদান কী?
→ ধ্বনি।
ক্স শব্দের মূল উপাদান কী?
→ বর্ণ।
ক্স বাক্যের মূল উপাদান কী?
→ শব্দ।
ক্স ভাষা ভাষী (জনসংখ্যার) দিক থেকে বাংলার স্থান কত?
→ ষষ্ঠ।
ক্স ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে বাংলার অবস্থান কত?
→ চতুর্থ।
ক্স পৃথিবীর আদি ভাষার নাম কী?
→ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা।
ক্স বাংলা কোন শাখার একটি ভাষা?
→ শতম।
ক্স ভাবের উৎস কী?
→ ভাষা।
ক্স বাংলা ভাষায় কত কোটি লোক কথা বলে?
→ ২৪ কোটি।
ক্স বর্তমানে পৃথিবীতে কতটি ভাষা প্রচলিত আছে?
→ প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশী।
ক্স বাংলাদেশ ছাড়া কোন কোন অঞ্চলের মুখের ভাষা বাংলা?
→ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা,বিহার , উড়িষ্যা ও আসাম।
ক্স বাংলা ভাষায় মোট শব্দ সংখ্যা কত?
→ ১ লক্ষ ২৫ হাজার ।
ক্স বাংলা বর্ণ কখন স্থায়ী রূপ লাভ করেন?
→ উনিশ শতকে মুদ্রন যন্ত্র আবিস্কারের পর।
ক্স বাংলা বর্ণমালা উদ্ভব ঘটে কোন লিপি থেকে?
→ ব্রাহ্মী লিপি।
ক্স ব্রাহ্মী লিপির কয়টি রূপ দেখা যায়?
→ তিনটি (সারদা, নাগর,কুটিল)।
ক্স ব্রাহ্মী লিপির কোন রূপ থেকে বাংলা এসেছে?
→ কুটিল রূপ থেকে।
ক্স কোন সম্রাট ব্রাহ্মী লিপি ব্যবহার করেছেন?
→ সম্রাট অশোক।
ক্স বাংলা লিপির সুসংগঠন কোন আমলে হয়?
→ সেন রাজাদের সময়।
ক্স কে বাংলা লিপিকে ছাপাখানায় মুদ্রণযোগ্য করে তৈরি করেন?
→ পঞ্চানন কর্মকার, (ইংরেজ আমলে)।
ক্স বাংলা ভাষায় তুর্কী শব্দ সংখ্যা কত?
→ প্রায় চার শত।
ক্স স্যার জর্জ গিয়ার্রসন এর মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি কোথায় থেকে?
→ মাগধী প্রাকৃত থেকে।
ক্স স্যার জর্জ গিয়র্রসন এর মতকে সমর্থন দিয়েছেন কে?
→ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
ক্স বাংলা ভাষার আনুমানিক বয়স কত?
→ প্রায় দেড় হাজার বছর।
ক্স ঙভভরপরধষ খধহমঁধমব বা দাপ্তরিক পরিভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার অবস্থান কততম?
→ দশম।
ক্স মাতৃভাষার দিক দিয়ে অবিভক্ত ভারতে বাংলা ভাষার স্থান কত ?
→ প্রথম।
ক্স ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে কিসে?
→ দেশ, কাল ও পরিবেশ ভেদে।
ক্স মৈথিলি ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে কোন ভাষার সৃষ্টি হয়।
→ ব্রর্জবুলি ভাষা।
ক্স বাঙালী না হয়েও বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছে কে?
→ বিদ্যাপতি।
ক্স ভাষার বাহন কী?
→ ধ্বনি বা বর্ণ।
ক্স মানুষের যোগাযোগের বাহন কী?
→ ভাষা।
ক্স ভারতীয় সমস্ত লিপির আদি জননী কে?
→ ব্রাহ্মী লিপি।
ক্স লিপি অর্থ কী?
→ বর্ণমালা।
ক্স বাংলা ভাষার নিকটতম পূর্ববর্তী ভাষা কী?
→ মাগধী অপভ্রংশ।
ক্স পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত ভাষা কতটি?
→ প্রায় তিন হাজারের উপরে।
ক্স ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষা কোথা থেকে এসেছে?
ক্স গৌড়ীয় প্রাকৃত অপভ্রংশ থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে। বাংলা ভাষার জন্ম কোন ভাষা থেকে?
→ বঙ্গকামরূপী।
ক্স পৃথিবীর সবভাষার আদি ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয় কোন ভাষাকে?
→ ইন্দো-ইউরোপীয়কে।
আঞ্চলিক কথ্যভাষার অপর নাম কী?
→ উপভাষা।
বাংলাভাষা কোন দুটি অনার্য ভাষা দ্বারা প্রভাবিত?
→ দ্রাবিড় ও কোল।
কাকে খাঁটি বাংলা শব্দ বলা হয় ?
→ তদ্ভব শব্দকে।
প্রাচীনকালের ভারতের শ্রেষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী কে?
→ পাণিনি।
পাণিনি রচিত ব্যাকরণের নাম কী?
→ অষ্ট্যাধায়ী(৪০০০ সূত্রের সমষ্টি, ৭টি অধ্যায়)।
পাণিনি ছাড়া ভারতবর্ষের কয়েকজন বৈয়াকরণের নাম লিখ?
→ পতঞ্জলি, যাস্ক, কাত্যায়ন।
বাংলা ভাষার আনুমানিক জন্ম কবে?
→ দশম শতাব্দীতে।
বঙ্গ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কোন গ্রন্থে?
→ ‘ঐতরের আরণ্যক’ গ্রন্থে।
বাংলা ভাষার আদি উৎস কী?
→ মাগধী প্রাাকৃত।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সংস্কৃতকে কি বলেছেন?
→ বাংলা ভাষার দুহিতা।
বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম :
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ (৬৫০-১২০০)
বাংলা ভাষার আদি কবি লুইপা (অষ্টম শতক)
প্রথম বাঙ্গালি কবি মীননাথ বা মৎসেন্দ্রনাথ (সপ্তম শতক)
পদাবলির প্রথম কবি চন্ডিদাস (চতুর্দশ শতক)
বাংলা ভাষার প্রথম মহাকবি বডু চন্ডিদাশ (আনুমানিক ১৩৭০-১৪৩৩)
প্রথম ব্যাকরণ রচনাকারী (অবাঙালি) ম্যানুয়েল দ্য অ্যাসসুম্প সাঁও
প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনাকারী (অবাঙালি) এন বি হেলহেড
প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনাকারী (বাঙালি) রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩)
প্রথম সংস্কৃত ব্যাকরণ রচনাকারী পানিনি
পদ্যে যতি চিহ্নের প্রথম সার্থক প্রয়োগকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১
বাংলা ভাষার প্রথম কাহিনীধর্মী গ্রন্থ বেতালপঞ্চবিংশতি (ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)
প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচয়িতা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর(১৮২০-১৮৯১)
প্রথম বাংলা অক্ষর খোদাইকারী (অবাঙালি) চার্লস উইলকিন্স (১৭৪৯-১৮৩৬)
প্রথম বাংলা অক্ষর খোদাইকারী (বাঙালি) পঞ্চানন কর্মকার
প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পন (১৮১৮)
প্রথম বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৬৬)
প্রথম সার্থক মহাকাব্য মেঘনাদত্ত কাব্য (১৮৬১)
প্রথম সার্থক মহাকাব্য রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)
প্রথম মৌলিক নাটক ভদ্রার্জুন (১৮৫২)
মনসামঙ্গলের প্রথম কবি কানা হরিদত্ত (চতুর্দশ শতক )
প্রথম রোমান্টিক কবি /গীতিকবি বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪)
কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৫-১৯১০)
বাংলা ভাষায় প্রথম ইসলামি গান ও গজল রচনাকারী কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)
এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী (সাহিত্যে) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
মধ্যযুগের প্রথম সাহিত্য নিদর্শন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য (১৩৪০-১৪৪০)
বাংলা ভাষার প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহাম্মদ সগীর (চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতক)
দোভাষী পুঁথি সংগ্রহকারী কবি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৮৭১-১৯৫৩)
বাংলা কবিতায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রয়োগকারী মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)
বাংলা সাহিত্যে প্রথম চলিত রীতির সার্থক ব্যবহারকারী প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬)
প্রথম বাংলা উপন্যাস রচয়িতা প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩)
প্রথম বাংলা উপন্যাস (বাঙ্গালী) আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৭)
প্রথম সার্থক উপন্যাস রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪)
প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)
প্রথম গণমুখী বাংলা নাটক/ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ নীলদর্পন (১৮৬০)
প্রথম মুসলমান নাট্যকার মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)
প্রথম বাংলা নাটক (মুসলমান রচিত) বসন্তকুমারী (১৮৭৩)
প্রথম মৌলিক ট্র্যাজেডি নাটক কীর্তিবিলাস (১৮৫২)
প্রথম সার্থক ট্র্যাজেডি নাটক কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)
বাংলা ভাষার প্রথম আধুনিক নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)
প্রথম আধুনিক বাংলা নাটক শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯)
বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী (ষোড়শ শতক)
বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৫-১৯৩২)
ছাপার অক্ষরে প্রথম বাংলা বই কৃপাশাস্ত্রের অর্থভেদ
বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুদ্রিত বই কথোপকথন (১৮০১)
বাংলাদেশে মঞ্চায়িত প্রথম নাটক বাকি ইতিহাস
বাংলাদেশের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র স্টপ জেনোসাইড (১৯৭১)
একুশের প্রথম সাহিত্য সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৫৩)
একুশের প্রথম নাটক কবর (১৯৫৩)
একুশের প্রথম কবিতা কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি (১৯৫২)
একুশের প্রথম উপন্যাস আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯)
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস রাইফেল রুটি আওরাত
প্রথম উপন্যাস (অবাঙ্গালী কতৃক) ফুলমনি ও করুনার বিবরন (১৮৫২)
প্রথম বাংলা ব্যাকরন ভোকাবুলারিও ইম ইদিওমা বেনগল্লাই পর্তুগীজ (১৮৪৩)
প্রথম প্রবন্ধ বেদান্ত (১৮১৫)
প্রথম বাংলা আধুনিক কাব্য পদ্বিনী উপাখ্যান (১৮৫৮)
প্রথম বাংলা ছাপাখানা বাংলা প্রেস (১৮৬০)
প্রথম বাংলা সাময়িক দিকদর্শন (১৮১৮)
প্রথম বাংলা উপাখ্যান ইউসুফ জোলেখা (১৪০০-১৫০০ শতাব্দীর মধ্যে)
প্রথম বাংলা সামাজিক নাটক কুলীনকুল সর্বস্ব (১৮৫৪)
প্রথম বাংলা প্রহসন একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০)
প্রথম বাংলা রোমান্টিক উপন্যাস কপালকুন্ডলা (১৮৬৬)
বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত প্রথম নাটক কাঠ- ঠোকরা (বুদ্ধদেব বসু)
বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম নাটক একতলা দোতলা
বাংলা সাহিত্যের প্রথম জীবনী কাব্য শ্রীচৈতন্য ভগবত
প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ
প্রথম বাংলা সনের প্রবর্তক সম্রাট আকবর
ভাষারীতির রূপান্তর :
বাংলা ভাষার রূপভেদ ছকের সাহায্যে নিচে দেখানো হলো :
সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য
সাধু ভাষা চলিত ভাষা
১. সাধু ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য লেখার ভাষা। ১. চলিত ভাষা সর্বজনবোধ্য মুখের ভাষা ও লেখার ভাষা।
২. সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলিল-দস্তাবেজে সাধু ভাষার ব্যবহার প্রচলিত। ২. বর্তমানে চলিত ভাষাও সাহিত্য ও চিঠিপত্রে ব্যবহৃত হয়।
৩. নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার জন্যে সাধু ভাষা উপযোগী নয়। ৩. নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার জন্যে চলিত ভাষা উপযোগী।
৪. সাধু ভাষার নিয়ম পদ্ধতি অপরিবর্তনীয়। ৪. চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল। এ ভাষা নতুন নতুন ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম মেনে চলে।
৫. সাধু ভাষা অনেকটা কৃত্রিম। তবে এর গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য আছে। ৫. চলিত ভাষা স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। এ ভাষা চটুল ও জীবন্ত।
৬. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। এতে বিদেশী শব্দের ব্যবহারও দেখা যায়। ৬. চলিত ভাষায় তদ্ভব, অর্ধ-তৎসম, দেশী ও বিদেশী শব্দের ব্যবহার বেশি।
৭. সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: করিয়াছি, খাইয়াছি। ৭. চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদের সঙ্কুচিত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: করেছি, খেয়েছি।
৮. সাধু ভাষায় সর্বনামের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন : তাহারা, ইহারা। ৮. চলিত ভাষার সর্বনামের সঙ্কুচিত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: তারা, এরা।
৯. সাধু ভাষায় অব্যয়ের প্রাচীন ও পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: অধিকস্তু, বরঞ্চ, তথাপি। ৯. চলিত ভাষায় অনুসর্গের আধুনিক সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: আরো, বরং, তবুও।
১০. সাধু ভাষায় অনুসর্গের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: হইতে, দিয়া, অপেক্ষা। ১০. চলিত ভাষায় অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন: হতে, দিয়ে, চেয়ে।
প্রশ্নোত্তরে বাংলা ভাষা ও এর ইতিহাস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
প্রশ্ন ঃ মনের ভাব প্রকাশের প্রধান বাহন কোনটি? - উত্তর- ভাষা।
প্রশ্ন ঃ পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার সংখ্যা কত? - উত্তর- সাড়ে তিন হাজার ।
প্রশ্ন ঃ বাংলার আদি অধিবাসীগণ কোন ভাষাভাষী ছিল? - উত্তর- অস্ট্রিক ।
প্রশ্ন ঃ বাংলাভাষা কোন ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত? - উত্তর- ইন্দো ইউরোপীয়।
প্রশ্ন ঃ ইন্দোÑইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী কয়টি প্রধান শাখায় বিভক্ত? - উত্তর- ২টি।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষা ইন্দোইউরোপীয় ভাষার কোন শাখা থেকে উৎপত্তি লাভ করে? - উত্তর- শতম।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষার আনুমানিক বয়স কত? - উত্তর- দেড় হাজার বছর।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে নিম্নোক্ত কোন ভাষা থেকে?- উত্তর- প্রাকৃত ভাষা থেকে ।
প্রশ্ন ঃ স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন এর মতে কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভোব হয়েছে ?
উত্তর- মাগধী প্রাকৃত থেকে।
প্রশ্ন ঃ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে কোন সময় কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভোব হয়েছে? উত্তর- মাগধী অপভ্রংশ থেকে খ্রিস্টীয় দশম শতকের ।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ের নাম কী ?
উত্তর- ঙৎরমরহ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ইবহমধষর খধহমঁধমব (ঙউইখ)।
প্রশ্ন ঃ কোন সময় কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভোব হয়েছে বলে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন?
উত্তর- গৌড়ীয় অপভ্রংশ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীতে।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষার ভগ্নী সম্পর্কীয় কোনটি? - উত্তর- আসামি।
প্রশ্ন ঃ ভাষার জগতে বাংলার স্থান কততম? - উত্তর- ৬ষ্ঠ।
প্রশ্ন ঃ পৃথিবীতে প্রায় কত কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে? - উত্তর- ২৫ কোটি।
-বাংলা ভাষার রূপ-
পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় সাধারণত দুটি রূপ পরিলক্ষিত হয়। ঠিক তেমনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষায় সাধারণত দু’টি রূপ বিদ্যমান।
ক. মৌখিক বা কথ্য রূপ
খ. লৈখিক বা লেখ্য রূপ
মৌখিক ও লৈখিক উভয় রূপেরই দুটি করে রীতি প্রচলিত রয়েছে।
লৈখিক বা লেখ্য রূপ- সাধু রীতি/ সর্বজন স্বীকৃত লেখ্যরূপ/ ও চলিত রীতি/ সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ/ প্রমিত চলিত রীতি ।
মৌখিক বা কথ্য রূপ- আঞ্চলিক কথ্যরীতি/ উপভাষা/ ও চলিত রীতি/ সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ/ প্রমিত চলিত রীতি ।
সাধু রীতি : সাধুভাষায় ক্রিয়া পদের রূপ পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট। জানিলেন, বলিলেন, জানিয়া, বলিয়া ইত্যাদি।
চলিত রীতি : চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদের রূপ সংক্ষিপ্ত। যেমন: জানলেন, বললেন, জেনে, বলে ইত্যাদি।
বাংলাভাষার সাধু ও চলিতরীতির সংমিশ্রণকে - গুরুচ-ালী দোষ বলে ।
প্রশ্নোত্তরে বাংলা ভাষার রূপ
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষা ব্যবহারের রীতি কয়টি? - উত্তর- দুইটি। (১) কথ্য ও (২) লেখ্য।
প্রশ্ন ঃ আঞ্চলিক ভাষার আরেকটি নাম কী? - উত্তর- উপভাষা।
প্রশ্ন ঃ উপভাষার ইংরেজি কী হবে? - উত্তর- উরধষবপঃ.
প্রশ্ন ঃ কোন ভাষার সাহিত্যে গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য প্রকাশ পায়? - উত্তর- সাধু ভাষায়।
প্রশ্ন ঃ কোনটি সাধু ভাষার নিজস্ব বিশেষ বৈশিষ্ট্য? - উত্তর- তৎসম শব্দবহুলতা।
প্রশ্ন ঃ চলিত ভাষার রীতি চালু করেন কে? - উত্তর- প্রমথ চৌধুরী।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষায় যতি চিহ্নের প্রবর্তন করেন কে? - উত্তর- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
প্রশ্ন ঃ সাধু ভাষায় কোন পদ বিশেষ রীতি মেনে চলে? - উত্তর- সর্বনাম ও ক্রিয়া।
প্রশ্ন ঃ ভাষার কোন রীতি পরিবর্তনশীল? - উত্তর- চলিত রীতি।
প্রশ্ন ঃ বাংলা ভাষার মৌলিক অংশ কয়টি? - উত্তর- ৪টি। (১) ধ্বনি, (২) শব্দ, (৩) বাক্য ও (৪) অর্থ।
বিরামচিহ্ন
আমাদের মনে ভাব পুরোপুরি ভাবে প্রকাশ করার মাধ্যম হচ্ছে বাক্য। একই সঙ্গে অনেকগুরো বাক্য আমরা না থেমে বলতে পারি না বা বললেও অনেক সময় তা অর্থের বিভ্রান্তি ঘটায়। এতে বাক্যের অর্থ ও সৌন্দর্য থাকে না। বিশেষ করে লেখার সময় বাক্যের মধ্যে অথবা একটি বাক্যের সুচনালগ্নে আমাদের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ফলে বাক্যের অর্থও সুন্দরভাবে প্রকাশ পায় এবং তা শ্রুতিমধুর হয়। অন্যথায় পড়তেও অসুবিধা হয়। সুতরাং লেখা কিংবা বলার সময বাক্যের অর্থ ঠিক রাখার জন্য এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করার জন্য যেসব চিহ্ন দ্বারা বিরাম বা বিশ্রাম নেয়া হয়, সেসব চিহ্নকে বিরামচিহ্ন বা যতিচিহ্ন বলে। একে আবার ছেদচিহ্ন নামেও অভিহিত করা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় প্রথম যতিচহ্ন ব্যবহার করেন। তাই তাকে যতিচিহ্ন ব্যবহারের সার্থক রূপকার বলা যেতে পারে।
বিরাম চিহ্নের কাজ মূলত শ্বাস বিরতি দেখিয়ে দেয়া। বাক্যের কোথায় কি পরিমাণ থামতে হবে, বাক্যের অর্থানুযায়ী কোথায় হর্ষ, বিষাদ, আনন্দ বা বিস্ময় প্রকাশ করা হবে ইত্যাদি সম্বলিত নিয়মকে যতিচিহ্ন বা বিরামচিহ্ন বলে।
বাংলা ভাষায় নানা ধরনের যতিচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। নিচে চিহ্নসহ সেগুলোর সময় উল্লেখ করা হলো :
বিরাম চিহ্নের নাম চিহ্নের
আকৃতি বিশ্রামের সময়
১. দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (। ) ১ সেকেন্ড
২. কমা বা পাদচ্ছেদ ( , ) এক বলতে যে সময় লাগে
৩. সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (;) এক দুইবার বলতে যে সময় লাগে
৪. প্রশ্নবোধক বা জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) ১ সেকেন্ড
৫. বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!) ১ সেকেন্ড
৬. হাইফেন চিহ্ন (-) থামার প্রয়োজন নেই
৭. ড্যাস (Ñ) ১ সেকেন্ড
৮. কোলন (:) ১ সেকেন্ড
৯. কোলন ড্যাস (:-) ১ সেকেন্ড
১০. উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন (“ ”) এক বলতে যে সময় লাগে
১১. বিলুপ্তি বা লোপ চিহ্ন ( ’ ) এক বলতে যে সময় লাগে
১২. বন্ধনী চিহ্ন (){} [] থামার প্রয়োজন নেই
১৩. জোড় দাঁড়ি ॥ ১ সেকেন্ড
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (। ) : বাক্যের শেষ বুঝাতে দাঁড়ি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- এখন চৈত্র মাস। তুমি বাড়ি যাও।
কমা বা পাদচ্ছেদ (,) : বাক্যের মধ্যে যেখানে অল্প বিরতির প্রয়োজন হয় সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। কোন কোন স্থানে কমা বসে তা দেখানো হলো :
এক জাতীয় একাধিক পদ পরপর থাকলে শেষ পদটি ছাড়া অন্যান্যগুলোর পর কমা বসে। যেমন-নজরুল অনেক গান, কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন।
সম্বোধন পদের পরে কমা বসে। যেমন- কবিতা, শুনে যাও।
জটিল বাক্য অর্থাৎ অসমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত বাক্যাংশের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন-আফজাল এখন কি করে, কোথায় থাকে, নাকি অন্য কোথাও থাকে, নাকি অন্য কোথাও চলে গেছে, তা আমার জানা নেই।
উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্নের পূর্ববর্তী পদের শেষে কমা বসে। যেমন- বিউটি বলল, ‘আমার বড্ড মাথা ধরেছে।
তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসে। যেমন-২১ মাঘ, রোজ বুধবার, ১৪১১ বঙ্গাব্দ। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সাল।
ঠিকানা লিখতে বাড়ি ও রাস্তার নম্বরের পর কমা বসে। যেমন- ৪০/৫ ডি.আই.টি প্লট, গোন্ডারিয়া, ঢাকা।
নামের পর ডিগ্রিসূচক পরিচয় লিখতে কমা বসে। যেমন-গাজী শামসুর রহমান, এম,এ., এল.এল.বি।
সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (;) : বাক্যে কমার চেয়ে একটু বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে দুটি বাক্যের মাঝে সেমিকোলন বসে। যেমন- আমার বন্ধু কবির, যে একজন ভালো লেখক; কিন্তু লেখার উৎসাহ দেখি না।
সেমিকোলনের ব্যবহার নিম্নরূপ :
একাধিক বাক্য সংযোজন অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন বসে। যেমন- আগে পাঠ্য বই পড়া; পরে গল্প, উপন্যাস।
যে জন্য, তবু, তথাপি, তারপর, সুতরাং ইত্যাদি যেসব অব্যয় অনুমান প্রকাশ করে তাদের আগে বা দুটি সন্নিহিত হলে সেমিকোলন বসে। যেমন- সে ফের করেছে; সেজন্য সে মুখ দেখায় না। মনোযোগ দিয়ে পড়; তাহলে পাস করবে।
যেমন বাক্যে ভাব সাদৃশ আছে তাদের মধ্যে সেমিকোলন বসে। যেমন- দিনটা ভালো নয়; মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে।
ছোট ছোট বিতর্কিত অংশ নির্দেশ করার জন্য সেমিকোলন বসে। যেমন- মেয়েটি যে প্রথম হয়েছে, একটি পুরস্কার পেয়েছে; এবার আশা করা যায়, সে আরো ভালো করবে।
একাকি স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে। যেমন- শিক্ষা একেবারে পোড়া হইয়া আছে; এখন শুধু ইংরেজকে কষিয়া গালিগালাজ করিতে পারিলেই দেশটা উদ্ধার হইয়া যায়।
প্রশ্নবোধক বা জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) : বাক্যে কোনো কিছু জানতে চাইলে বা বিজ্ঞাসা বুঝালে সে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক বা জিজ্ঞাসা চিহ্ন বসে। যেমন- বাহ্! কি সুন্দর! ছি! ছি! কি লজ্জা!
বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার নিম্নরূপ :
যেসব পদে বা বাক্যে বিস্ময়, ভয়, হর্ষ, ঘৃণা, আবেগ ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, সেসব পদ বা বাক্যের শেষে বিস্ময় চিহ্ন বসে। যেমন- মরি! মরি! কি সুন্দর প্রভাতের রূপ!
ভাবের বিশেষ অভিব্যক্তি বুঝাতে হলে সম্বোধন পদের পরে বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসে। যেমন- মহারাজ! আজ্ঞা করুন।
সবিস্ময়ে প্রশ্নের জায়গায় প্রশ্নচিহ্নের পরিবর্তে শুধু বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসে। যেমন- তার হৃদয় কি দিয় গড়া!
হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে বিস্ময় চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-) : যৌগিক বা সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো পৃথকভাবে দেখাতে হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন-মা-বাবা, হাত-পা, জলে-ডাঙ্গায়।
হাইফেনের আরো ব্যবহার নিম্নরূপ :
দিক বা স্থান বুঝাতে হাইফেন বসে। যেমন- উত্তর-পশ্চিম কোণে কালো মেঘ দেখা যায়।
বিভক্তি চিহ্নের পরিবর্তে হাইফেন বসে। যেমন- ছেলে-ভুলানো ছড়া।
অনুষ্ঠান বুঝালে হাইফেন বসে। যেমন- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
সংখ্যা বা প্রতি সংখ্যা বুঝাতে হাইফেন বসে। যেমন- ৬-১১ বছরের ছেলেরা।
ড্যাস (Ñ) : জটিল বা যৌগিক বাক্যে দুই বা ততোধিক বাক্যের সংযোগ বুঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন- নিজের কাজ নিজে করতে শেখো- এতে তোমার মান যাবে না- বাড়বে।
ড্যাস- এর ব্যবহার নিম্নরূপ :
বাক্যের গঠনে আকস্মিক পরিবর্তন চিহ্নিত করার জন্য ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন- সে বলল- হায়! আমার একি হলো।
বাক্যের মধ্যে উদ্ধৃতি, দৃষ্টান্ত ইত্যাদি যুক্ত করার প্রয়োজনে ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন- আমি সব পেয়েছি- বাড়ি, গাড়ি, মান-সম্মান।
ইতস্তত বা দ্বিধা প্রকাশের জন্য ড্যাস বসে। যেমন- আমি পরীক্ষায় ফেল করিনি।
উদ্ধৃতি চিহ্নের পরিবর্তে ড্যাস বসতে পারে। যেমন-মা বললেন, দেখ ছেলের কা-।
ছড়ানো ব্যক্তি বা বিষয়গুলোকে বাক্যের প্রারম্ভে গচ্ছিত করতে ড্যাস বসে। যেমন- ধন, জন, মান-সবই গেল।
কোলন (:) :
কোনো উদাহরণ দিতে, কারো বক্তব্য রচনাংশ তুলে ধরতে কোলন ব্যবহৃত হয়।
বাক্যে কোনো প্রসঙ্গ অবতারণার আগের কোলন বসে। যেমন-শপথ নিলাম : পাস করবই।
দৃষ্টান্ত দিতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- পদ পাঁচ প্রকার : বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।
ও, রা এবং এসব অব্যয় ব্যবহার না করে কোলন ব্যবহার করা যায়। যেমন- বাংলা নাটক : উৎস ও ধারা।
কোনো উদ্ধৃতির আগে কোলন বসে। যেমন- ‘কবি বলেছেন : বাংলার মাটি দুর্জয় খাঁটি’।
কোলন ড্যাস (:-) : উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত দিতে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন- কাল বা সময় তিন প্রকার :- বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ।
উদ্ধারণ/ উদ্ধৃতি চিহ্ন (“ ”) :
অন্যের লেখা অবিকল উদ্ধৃতি অথবা উক্তির ক্ষেত্রে উদ্ধৃতি বা উক্তির শুরুতে ও শেষে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন- ‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না’।
উদ্ধৃতি বা উক্তির মধ্যে অন্য উদ্ধৃতি বা উক্তি থাকলে ভিতরের অংশের শুরুতে বা শেষে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন- শিক্ষক বললেন, “কখনো বলবে না, পারব না।”
কোনো বিশেষ্য শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বা গ্রন্থের নাম লিখতে উদ্ধৃতি চিহ্ন বসে। যেমন- ‘আরেক ফাল্গুন’ জহির রায়হানের উপন্যাস।
বিলুপ্তি বা লোপ চিহ্ন (’) : কোনো পদ বা শব্দের মধ্যে একটি বর্ণ লেখা না হলে বা লোপ পেলে এ চিহ্ন বসে। একে ঊর্ধ্ব কমাও বলে। যেমন- হইল = হ’ল, যাইবে = যা’বে, উপরে = ’পরে।
বন্ধনী চিহ্ন ( () {} [] ) : বাক্যের মধ্যে কোনো শব্দের ব্যাখ্যা করতে, কিংবা অর্থ স্পষ্ট করে দেখাতে হলে অথবা বিকল্প হিসেবের জন্য প্রসঙ্গে অবতারণা করতে হলে বন্ধনী চিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন- কুমিল্লা (সাবেক ত্রিপুরার অংশ) চট্টগ্রাম বিভাগে পড়েছে।
জোড় দাঁড়ি (॥) : মাঝে মাঝে পদ্যের দ্বিতীয় চরণের শেষে জোড় দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। যেমন-
“আমি ভালোবাসি আমার
নদীর বালুচর
শরৎকালে যে নির্জনে
চকাচকির ঘর ॥” - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ব্যাকরণিক চিহ্ন : ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলো বিশেষভাবে ব্যবহার হয়। যথা :
- ধাতু বুঝাতে (√) চিহ্ন। যেমন- √স্থা = স্থা ধাতু।
- পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বুঝাতে (<) চিহ্ন : পাকা < পক্ক।
- পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বুঝাতে (>) চিহ্ন : পক্ক > পাকা।
- সমানবাচক বা সমস্তবাচক বুঝাতে (=) চিহ্ন : মা ও বাবা = মা-বাবা।
Ad-1
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
সুভা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...
Most Popular Post
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
উত্তর 'অ' ধ্বনির উচ্চারণ অ-এর মতো হলে তাকে অ-বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ বলে।অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে ঠোঁট তেমন বাঁকা বা গোল হয় না।যে...
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
উত্তর: অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিম্নরুপ।যথা: ১. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ই-কার বা উ-কার হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ...
-
অর্থালঙ্কার: অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ: অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা: ১. সাদৃশ্যমূলক ২. বিরোধমূলক ৩. শৃঙ্খলামূলক ৪. ন্যায়মূলক ৫. গূঢ়ার্থ...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
No comments:
Post a Comment