Ad-1

Saturday, March 24, 2018

বহুব্রীহি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ লেখো

যে সমাসে দুই পদের অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায়তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমন : দশ আনন যার = দশানন। এখানে দশ’ ও আনন’ এই দুটি পদের সমাস হয়েছেকিন্তু সমাস-নিষ্পান্ন পদটি এই পদ দুটির কোনটির অর্থ প্রকাশ করছে না। সমাসবদ্ধ পদে দশ আনন (মুখ) বিশিষ্ট ব্যক্তিকে (রাবন) বোঝানো হয়েছে। বহুব্রীহি’ পদটিই বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্নবহু (অনেক)  ব্রীহি (ধান) আছে যারসে বহুব্রীহি (ধনী লোক)। এখানে বহু’ এবং ব্রীহি’ সমস্যমান পদ দুটির যোগে সমস্ত পদটির দ্বারা একটি তৃতীয় পদের (এখানে ধনী ব্যক্তির) প্রাধান্য পেয়েছে। এই রকম সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণী বিভাগ :

  1. সামানাধিকরণ বহুব্রীহি : পূর্বপদ বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য হলে তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন: নীলকণ্ঠ = নীল কণ্ঠ যারপোড়াকপাল = পোড়া কপাল যারপক্ব কেশ যার = পক্বকেশ ইত্যাদি।
  2. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি : উভয়পদ (পূর্বপদ,পরপদ) বিশেষ্য হলে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি হয়। যেমন : বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণিগোঁফে খেঁজুর যার = গোঁফ-খেঁজুরে ইত্যাদি।
  3. ব্যতিহার বহুব্রীহি : পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়াকরণ বোঝালে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি বলে। এই সমাসে পূর্বপদ আ-কারান্ত ও পরপদ ই-কারান্ত হয়। যেমন: লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ= লাঠালাঠিপরস্পর গালি বর্ষণ করে যুদ্ধ = গালাগালিহেসে হেসে যে আলাপ = হাসাহাসি।
  4. মধ্যপদলোপী  বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের ব্যাখ্যানমূলক মধ্যপদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বা ব্যাখ্যাত্নক বহুব্রীহি বলে। এই সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বে উপমান পদ থেকে তুলনা বোঝায় বলে একে উপমাত্মক বহুব্রীহি ও বলে। যেমন: মৃগের নয়নের ন্যায় চঞ্চল নয়ন যার = মৃগনয়নাচন্দ্রের মতো স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখ যে নারীর = চন্দ্রমুখীবিম্বের মতো রঞ্জিত অধর যার = বিম্বাধর ইত্যাদি।
  5. নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস : নঞর্থক অব্যয় পদের সাথে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: নাই উপায় যার = নিরুপায়নাই অন্ন যার= নিরন্ননাই তার যার = বেতারনাই হুঁশ যার= বেহুঁশ ইত্যাদি।
  6. অলুক বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় নাতাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমনগায়েহলুদ = গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানেহাতেখড়ি = হাতেখড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে ।
  7. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক হয়তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন : দশ আনন যার = দশাননদশ ভুজ (হাত) যার = দশ ভুজা ।
  8. সহার্থক বহুব্রীহি সমাস : সহার্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: বান্ধবের সহিত বর্তমান = সবান্ধবস্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক ইত্যাদি।
  9. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যেমন: এক দিকে চোখ (দৃষ্টি) যার =একচোখা (চোখ+আ)ঘরের দিকে মুখ যার =ঘরমুখো (মুখ +ও)ঊন পাঁজুর যার = ঊনপাঁজুরে (পাঁজুর+এ) ইত্যাদি।
  10. নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাস কোন নিয়মের অধীনে নয় তাকে নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি বলা হয়। যেমন : দুদিকে অপ যার=দ্বীপঅন্তর্গত অপ যার = অন্তরীপ ইত্যাদি।

 

বহুব্রীহি সমাসের অতিরিক্ত উদাহরণ:

মন্দভাগ্য = মন্দভাগ্য যার                বিগতপ্রাণ = গত প্রাণ যার

উচ্চশির = উঁচু শির যার                  কদাকার = কদ (মন্দ) আকার যার

পুণ্যাত্মা = পুণ্য আত্মা যার                পোড়াকপাল = পোড়া কপাল যার

নীলাম্বর = নীল অম্বর যার                বদমেজাজী = বদ মেজাজ যার

কানকাটা = কান কাটা যার              ন্যায়নিষ্ঠ = ন্যায় নিষ্ঠ যে

বীণাপাণি = বীণা পাণিতে যার          খড়গহস্ত = খড়গ হস্তে যার

এলোকেশী = এলো কেশী যে             বিপত্নীক = পত্নী বিগত যার

ঊর্ণনাভ = ঊর্ণ নাভিতে যার             চন্দ্রচূড় = চন্দ্র চূড়ায় যাহার

যুবজানি = যুবতী জায়া (স্ত্রী) যার        রত্নখচিত = রত্ন খচিত যাতে

স্বল্পায়ু = স্বল্প আয়ু যার                   হতভাগ্য = হত ভাগ্য যার

নতশির = নত শির যার                 নীলকণ্ঠ = নীল কণ্ঠ যার

পূর্ণবয়স্ক = পূর্ণ বয়স যার                গৌরাঙ্গ = গৌর অঙ্গ যার

মতিচ্ছন্ন = মতি ছন্ন যার                রাশভারি = রাশ ভারি যার

শূলপাণি = শূল পাণিতে যার            নদীমাতৃক = নদী মাতা যার

কমলমুখ = কমল মুখে যার              রত্নগর্ভা = রত্ন গর্ভ যার

ভার্যাপ্রিয় = ভার্যা প্রিয় যার               সতীর্থ = সমান তীর্থ যার

বিশালাক্ষ = বিশাল অক্ষি যার           সলজ্জ = লজ্জার সাথে বর্তমান

সপরিবার = পরিবারের সাথে বর্তমান       কানাকানি = কানে কানে যে কথা

হাতাহাতি = হাতে হাতে যে লড়াই       চোখাচোখি = চোখে চোখে যে দেখা

মাতামাতি = মেতে মেতে যে আনন্দ         বেতার = তার নাই যার

বেহিসাবী = হিসাব নেই যার             অপয়া = পয় নেই যার

বেআব্রু = আব্রু নেই যার                  অবোধ = বোধ নেই যার

একমণে = এক মণ ওজন যার           চতুষ্কোণ = চার কোন যার

দশগজি = দশগজ পরিমাণ যার         চৌচালা = চৌচালা আছে যার

আয়তলোচন = আয়ত লোচন যার       গজানন = গজের ন্যায় আনন যার

মীনাক্ষি = মীনের ন্যায় অক্ষি যার       হাতেখড়ি = হাতে খড়ি দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

গায়ে হলুদ = গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে 

চুলাচলি = চুলে চুলে যে লড়াই

গলাগলি = গলে গলে যে ভাব            দলাদলি = দলে দলে বিভক্তি

তর্কাতর্কি = তর্কে তর্কে যে লড়াই       বেয়াদব =- আদব নেই যার

নির্মম = মমতা নেই যার                অনন্ত = অন্ত নেই যার

নির্লজ্জ = লজ্জা নেই যার                 নিষ্ককলঙ্ক = কলঙ্ক নেই যার

অনুসূয়া = নেই অসূয়া (ঈর্ষা)             দুপেয়ে = দু পায়া যার

শতমূলী = শতমূল যার                   পঞ্চানন = পঞ্চ আনন যার

ক্ষুরধারা = ক্ষুরের মতো ধার যা         বিশগজি = বিশ গজ পরিমাণ যার

সবান্ধব = বান্ধবের সাথে বর্তমান        সজল = জলের সাথে বর্তমান

সফল = ফসলসহ বর্তমান যে            সভক্তি = ভক্তি সাথে বর্তমান

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post