Ad-1

Friday, March 23, 2018

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ লেখ

যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয়ের  সঙ্গে পরপদ বিশেষ্যের সমাস হয় এবং অব্যয় পদের অর্থই প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

এ সমাসের পূর্বপদের অব্যয়টির সাধারণত কোনো অর্থ থাকে না। তবে এ সব অব্যয় শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থ দ্যোতনা করে।যেমনঃ-

দিন দিন = প্রতিদিন ; কূলের সমীপে = উপকূল : মিলের অভাব = গরমিল। এই পদগুলিকে ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর’-উপসর্গ বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস হয়েছে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধানরুপে বোঝাচ্ছে; পরপদগুলি বিশেষ্য।

সামীপ্য (নিকট), বীপ্সা (পুন: পুন:), অনতিক্রম, অভাব, পর্যন্ত, যোগ্যতা, সাদৃশ্য, পশ্চাৎ, সাফল্য, অবধি প্রভৃতি নানাপ্রকার অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।

(১)    সামীপ্য: কুলের সমীপে =উপকূল; নগরীর সমীপে = উপনগরী; কাঠের সমীপে = উপকণ্ঠ; অক্ষির সমীপে = সমক্ষ; দুপুরের কাছাকাছি = দুপুর নাগাদ; সকালের কাছাকাছি = সকালনাগাদ।

(২)   বীপ্সা (পুন: পুন: অর্থে):- দিন দিন = প্রতিদিন; গৃহে গৃহে = প্রতিগৃহে; ক্ষণে ক্ষণে = অনুক্ষণ, প্রতিক্ষণ;মণে মণে = প্রতিমণ, মণপিছু; জনে জনে = জনপ্রতি, জনপিছু; জেলায় জেলায় = প্রতিজেলায়; বছর বছর = ফিবছর; রোজ রোজ= হররোজ; মাঠে মাঠে = মাঠকে-মাঠ, সনে সনে = ফি-সন.

(৩)   অনতিক্রমঃ বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবিধি ;উচিতকে অতিক্রম না করে = যথোচিত; এইরকম, যথাশক্তি, যথাসাধ্য, যথেচ্ছ, যথারীতি যথাযোগ্য, যথার্থ, সাধ্যমতো, যথাজ্ঞান, আয়মাফিক।

(৪)    অভাবঃ বিঘ্নের অভাব = নির্বিঘ্ন; মানানের অভাব = বে-মানান; বন্দোবস্তের অভাব = বে-বন্দোবস্ত; ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ; ভাতের অভাব = হাভাত; মিলের অভাব = গরমিল; ঝঞ্ঝাটের অভাব = নির্ঝঞ্ঝাট; লুনের (লবনের) অভাব = আলুনি; টকের অভাব মিষ্টির অভাব = না-টক-না-মিষ্টি; ঘরের অভাব = হা-ঘর; হায়ার অভাব = বেহায়া; মক্ষিকার অভাব = নির্মক্ষিক।

(৫)   সীমা ও ব্যাপ্তি (পর্যন্ত) জীবন পর্যন্ত = আজীবন; সমুদ্র পর্যন্ত = আসমুদ্র; বাল, বৃদ্ধ ও বণিতা পর্যন্ত = আবালবৃদ্ধবণিতা; মূল পর্যন্ত = আমূল; মরণ পর্যন্ত = আমরণ; পাদ (পা) থেকে মস্তক পর্যন্ত = আপাদমস্তক; আদি থেকে অস্ত পর্যন্ত = আদ্যন্ত; কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ; দিন ব্যাপিয়া = দিনভর; রাত ব্যাপিয়া = রাতভর; গলা পর্যন্ত = গলানাগাল। এইরকম-আশৈশব, আসমুদ্রহিমাচল।

(৬)   যোগ্যতাঃ  রুপের যোগ্য = অনুরুপ; কুলের যোগ্য = অনুকূল; গুণের যোগ্য = অনুগুণ।

(৭)    পশ্চাৎ : গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন; তাপের পশ্চাৎ = অনুতাপ; করণের পশ্চাৎ = অনুকরণ; ইন্দ্রের পশ্চাৎ = উপেন্দ্র; গৃহের পশ্চাৎ = অনুগৃহ।

(৮)   সাদৃশ্য:-  দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ; কথার সদৃশ= উপকথা; ভাষার সদৃশ = উপভাষা; মুর্তির সদৃশ = প্রতিমুর্তি, বনের সদৃশ = উপবন; কিন্তু (হীন দেবতা = উপদেবতা); মন্ত্রীর সদৃশ = উপমন্ত্রী; রাষ্ট্রপতির সদৃশ = উপরাষ্ট্রপতি; দানের সদৃশ = অনুদান; ধ্বনির সদৃশ = প্রতিধ্বনি; লক্ষের সদৃশ = উপলক্ষ।

(৯)   ক্ষুদ্রতাঃ উপ (ক্ষুদ্র) গ্রহ = উপগ্রহ; ক্ষুদ্র বিভাগ = উপবিভাগ, ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ; ক্ষুদ্র শাখা = প্রশাখা; ক্ষুদ্র সাগর = উপসাগর; ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি; ক্ষুদ্র নদী = উপনদী।

(১০) সাকল্যঃ  বাল বৃদ্ধ ও বণিতা সকলে = আবালবৃদ্ধবণিতা; পামর জনসাধারণ সকলে = আপামর জনসাধারণ।

(১১) বৈপরীত্য : কূলের বিপরীত = প্রতিকূল; দানের বিপরীত = প্রতিদান; শোধের বিপরীত = প্রতিশোধ; পক্ষের বিপরীত = প্রতিপক্ষ।

(১২) সম্মুখ :  অক্ষির সম্মুখে = প্রত্যক্ষ।

(১৩) নিপাতনে সিদ্ধ : অক্ষির অগোচর = পরোক্ষ; আত্নাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম; মুখের অভিমুখে = সম্মুখ; দৈবকে অধিকার করে = অধিদৈব;  দুঃ (দু:খকে) গত = দুর্গত; দক্ষিণকে প্রগত = প্রদক্ষিণ; বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল; বাস্তু থেকে উৎখাত = উদ্বাস্তু ; শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল; হীন দেবতা = অপদেবতা; ঝুড়িকে বাদ না দিয়ে = ঝুড়িসুদ্ধ; দস্ত্তর অনুযায়ী =  দস্ত্তর মতো; প্রত্যাশার আধিক্য = হাপিত্যেশ।

অব্যয়ীভাব সমাসের অতিরিক্ত উদাহরণ

অনুতাপ = তাপের পশ্চাৎ                অনুগমন = গমনের পশ্চাৎ
আকর্ণ = কর্ণ পর্যন্ত                       আমৃত্যু = মৃত্যু পর্যন্ত
আমরণ = মরণ পর্যন্ত                    আনত = ঈষৎ নত
উপগ্রহ = গ্রহের সদৃশ/ক্ষুদ্র                উপাধ্যক্ষ = অধ্যক্ষের সদৃশ্য
উপকূল = কূলের সমীপে                 প্রতিক্ষণ = ক্ষণে ক্ষণে
প্রতিজন = জনে জনে                     প্রতিবার = বার বার
প্রতিকূল = কূলের বিপরীত              প্রতিবাদ = বাদের বিপরীত
প্রতিকৃতি = কৃতির সদৃশ                প্রতিধ্বনি = ধ্বনির সদৃশ
প্রতিচ্ছবি = ছবির সদৃশ                  যথারীতি = রীতি অতিক্রম না করে
যথাশক্তি = শক্তিকে অতিক্রম না করে           দুর্ভিক্ষ = ভিক্ষার অভাব
যথানিয়ম = নিয়মকে অতিক্রম না করে
যথাসময়ে = নির্দিষ্ট সময়ে               অনুসরণ = সরণের পশ্চাৎ
অধ্যাত্ম = আত্মাকে অধিকার করে       আজানু = জানু পর্যন্ত
আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত     আজন্ম = জন্ম পর্যন্ত
আরক্তিম = ঈষৎ রক্তিম                 উপভাষা = ভাষার সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপজাতি = জাতির সদৃশ/ ক্ষুদ্র          উপসাগর = সাগরের সদৃশ/ ক্ষুদ্র
উপবৃত্তি = বৃত্তির সদৃশ                   উপপত্নী = পত্নীর সদৃশ
উপবন = বনের সদৃশ/ক্ষুদ্র                উপশহর = শহরের সমীপে
প্রতিদিন = দিন দিন                     প্রতিমন = মন মন
প্রতিমুহূর্ত = মুহূর্ত মুহূর্ত                  প্রতিদান = দানের বিপরীত
প্রত্যুত্তর = উত্তরের বিপরীত             প্রতিচ্ছায়া = ছায়ার সদৃশ
প্রতিমূর্তি = মূর্তির সদৃশ                 প্রতিবিম্ব = বিম্বের সদৃশ
যথাবিধি = বিধি অতিক্রম না করে     যথাসাধ্য = সাধ্যকে অতিক্রম না করে
যথাস্থানে = নির্দিষ্ট স্থানে                 যথার্থে = নির্দিষ্ট অর্থে
অতিদীর্ঘ = দীর্ঘ কে অতিক্রান্ত           অতিপ্রাকৃত = প্রাকৃতকে অতিক্রান্ত
অপবাদ = অপকৃষ্ট বাদ                   অপকীর্তি = অপকৃষ্ট কীর্তি
দুর্গন্ধ = মন্দ গন্ধ                          দুর্দিন = মন্দ দিন
দুর্বাক্য = মন্দ বাক্য                      দুরতিক্রম্য = দুঃখ-কষ্টে অতিক্রম্য
পরিজন =পরিগত/আপন জন            বিতৃষ্ণা = বিগত তৃষ্ণা
বিমিশ্র = বিশেষ ভাবে মিশ্র             হররোজ = রোজ রোজ
ঘোলাটে = ঈষৎ ঘোলা                   ফিকানীল = ঈষৎ নীল
হা-ঘর = ঘরের অভাব                    বেহায়া = হায়ার অভাব
নিরামিষ = আমিষের অভাব             অতিমানব = মানবকে অতিক্রান্ত
অতীন্দ্রিয় = ইন্দ্রিয়কে অতিক্রান্ত         অতিপ্রিয় = অত্যধিক প্রিয়
দুর্জন = মন্দ জন                          দুর্বুদ্ধি = মন্দ বুদ্ধি
দুর্নীতি = মন্দ নীতি                      বিনম্র = বিশেষভাবে নম্র
বিপথ = নিকৃষ্ট পথ                       ফি বছর = বছর বছর
গরমিল = মিলের অভাব                 লম্বাটে = ঈষৎ লম্বা
ফিকালাল = ঈষৎ লাল                   হা-ভাত = ভাতের অভাব
 

Thursday, March 22, 2018

দ্বিগু সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ লেখো

 যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ করেতাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়।এ সমাসের পরপদ সাধারণত নামপদ হয়। যেমন : সপ্তাহ (সপ্ত অহের সমষ্টি)ত্রিফলা (তিন ফলের সমহার)শতাব্দী (শত অব্দের সমষ্টি) প্রভৃতি।

*** এ সমাসের বাস্যবাক্যে সমাহার’ শব্দটি আসে। যেমন: চৌমুহনী = চৌ মোহনার সমাহারপঞ্চবটী=পঞ্চবটের সমাহার।

দ্বিগু সমাসের উদাহরণ :

তেমাথা = তে মাথার সমাহার

চতুষ্পদী = চার পায়ের সমাহার

চতুরঙ্গ = চতুঃ (চার) অঙ্গের সমাহার

চৌপদী = চৌ (চার) পদের সমাহার

ত্রিপদী =ত্রি (তিন) পদের সমাহার

ত্রিফলা = ত্রি (তিন) ফলের সমাহার

ত্রিলোক =ত্রি (তিন) লোকের সমাহার

পঞ্চনদ = পঞ্চ (পাঁচ) নদের সমাহার

পঞ্চবটী=পঞ্চ (পাঁচ) বটীর সমাহার

দশচক্র=দশচক্রের সমাহার 

দুকূল=দুই কূলের সমাহার

পঞ্চভূত = পঞ্চ (পাঁচ) ভূতের সমাহার

ত্রিকূল = ত্রিকূলের সমাহার

ত্রিকোণ = ত্রিকোণের সমাহার

ত্রিভুবন = ত্রিভুবনের সমাহার

ত্রিরত্ন = ত্রিরত্নের সমাহার

পঞ্চমুখ = পঞ্চমুখের সমাহার

পঞ্চইন্দ্রিয় = পঞ্চইন্দ্রিয়ের সমাহার

দুআনা=দু (দুই) আনার সমাহার

চৌমুহনী = চৌ (চার) মোহনার সমাহার

Wednesday, March 21, 2018

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ লেখো।

যে সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ পায় এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।  যেমন : সুখকে প্রাপ্ত = সুখপ্রাপ্ত, রাজার পুত্র = রাজপুত্র ইত্যাদি।
এখানে সুখকে (সুখ+কে) কে, রাজার (রাজা+র) র বিভক্তি লোপ পেয়ে ‘সুখপ্রাপ্ত’  ‘রাজপুত্র’ হয়েছে।
তৎপুরুষ সমাস প্রধানত ৯ প্রকার। যথা :
১। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ;
          ২। তৃতীয়া তৎপুরুষ;
৩। চতুর্থী তৎপুরুষ;
            ৪। পঞ্চমী তৎপুরুষ;
৫। ষষ্ঠী তৎপুরুষ;
              ৬। সপ্তমী তৎপুরুষ;
৭। অলুক তৎপুরুষ;
            ৮। নঞ তৎপুরুষ;
৯। উপপদ তৎপুরুষ;
১।
    দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) লোপ পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন: গা কে  ঢাকা =  গাঢাকা; জল কে তোলা = জলতোলা ইত্যাদি।

গা-ঢাকা = গাকে ঢাকা।
রথ দেখা = রথকে দেখা।
বীজবোনা = বীজকে বোনা।
ভাত রাঁধা = ভাতকে রাঁধা।
ছেলে-ভুলানো = ছেলেকে ভুলানো।
নভেল-পড়া = নভেলকে পড়া।

২।    তৃতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক) লোপ পেয়ে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা; লাঠি দ্বারা পেটা = লাঠিপেটা ইত্যাদি।
হীরকখচিত = হীরক দ্বারা খচিত।
চন্দনচর্চিত = চন্দন দ্বারা চর্চিত।
রত্নশোভিত = রতন দ্বার শোভিত।
৩।
    চতুর্থী তৎপুরুষ:  পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি (কে, রে, জন্যে, নিমিত্তে, উদ্দেশ্যে) লোপ পেয়ে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস হয়। সাধারণত এই সমাসে ‘নিমিত্ত’ ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দেব কে দত্ত = দেবদত্ত; বসতের নিমিত্তে বাড়ী = বসতবাড়ী ইত্যাদি।

ছাত্রাবাস = ছাত্রদের জন্য আবাস।
ডাকমাশুল = ডাকের জন্য মাশুল।
চোষকাগজ = চোষার জন্য কাগজ।
শিশুমঙ্গল = শিশুদের জন্য মঙ্গল।
মুসাফিরখানা = মুসাফিরদের জন্য খানা।
হজযাত্রা = হজের নিমিত্ত যাত্রা।
মালগুদাম = মাল রাখার জন্য গুদাম।
রান্নাঘর = রান্নার জন্য ঘর।
মাপকাঠি = মাপের জন্য কাঠি।
মেয়েস্কুল = মেয়েদের জন্য স্কুল।
বালিকা-বিদ্যালয়=বালিকাদের জন্য বিদ্যালয়।
পাগল-গারদ = পাগলদের জন্য গারদ।

৪।    পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হইতে, থেকে, চেয়ে) লোপ পেয়ে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।  যেমন: বিলাত থেকে ফেরত = বিলাত ফেরত; পদ থেকে চ্যুত = পদচ্যুত ইত্যাদি।

জেলখালাস = জেল হতে খালাস।
আগাগোড়া = আগা হতে গোড়া।
শাপমুক্ত = শাপ হতে মুক্ত।
ঋণমুক্ত = ঋণ হতে মুক্ত।

৫।    ষষ্ঠী তৎপুরুষ: পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি (র,এর) লোপ পেয়ে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: রাজার পুত্র = রাজপুত্র; কূপের মন্ডক = কূপমন্ডক ইত্যাদি।
৬।
    সপ্তমী তৎপুরুষ: পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ,য়,তে) লোপ পেয়ে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: বনে বাস = বনবাস, দিবায় স্বপ্ন=দিবাস্বপ্ন, বাক্সে বন্দী = বাক্সবন্দী ইত্যাদি।

বাকপটু = বাকে পটু।
গোলাভরা = গোলায় ভরা।
তালকানা = তালে কানা।
অকালমৃত্যু = অকালে মৃত্যু।
বিশ্ববিখ্যাত = বিশ্বে বিখ্যাত।
ভোজনপটু = ভোজনে পটু।
দানবীর = দানে বীর।
বাক্সন্দী = বাক্সে বন্দী।
রাস্তাপচা = রাস্তায় পচা।
রাতকানা = রাতে কানা।
মনমরা = মনে মরা।

৭।   অলুক তৎপুরুষ: ‘অলুক’ শব্দের অর্থ লুপ্ত না হওয়া। অর্থাৎ পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন: তেলে ভাজা = তেলেভাজা; কলুর

বলদ = কলুরবলদ ইত্যাদি।
ঘিয়েভাজা = ঘিয়ে ভাজা।
কলে ছাঁট = কলে ছাঁটা।
কলের গান = কলের গান।
গরুর গাড়ি = গরুর গাড়ি।

৮।    নঞ তৎপুরুষ: ‘নঞ’ শব্দের অর্থ ‘না’। অর্থাৎ পূর্বপদে না বোধক অব্যয় যুক্ত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন: ন জানা = অজানা; ন হাজির = গরহাজির ইত্যাদি।

অভাব = ন ভাব।
বেতাল = ন তাল।
অনাদর = ন আদর।
নাতিদীর্ঘ = ন অতি দীর্ঘ।
নাতিখর্ব = ন অতি খর্ব।
আধোয়া = ন ধোয়া।
নামঞ্জুর = ন মঞ্জুর।
অকেজো = ন কেজো।
অজানা = ন জানা।
অচেনা = ন চেনা।
অনাবাদী = ন আবাদী।
নাবালক = ন বালক।
অমানুষ = ন মানুষ।
অসঙ্গত = ন সঙ্গত।
অভদ্র = ন ভদ্র।
অনন্য = ন অন্য।
অগম্য = ন গম্য।

৯।    উপপদ তৎপুরুষ: পূর্বপদে নামপদ এবং পরপদে কৃদন্ত শব্দ (ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু + কৃৎ প্রত্যয় = কৃদন্ত শব্দ) থেকে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। যেমন : পকেট মারে যে = পকেটমার;  ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল দেয় যে =জলদ ইত্যাদি।

গৃহস্থ = গৃহে থাকে যে।
সত্যবাদী = সত্য কথা বলে যে।
ইন্দ্রজিৎ = ইন্দ্রকে জয় করে যে।
ছেলেধরা = ছেলে ধরে যে।
ধামাধরা = ধামা ধরে আছে যে।
পটেকমার = পকেট মারে যে।
পাতাচাটা = পাতা চাটে যে।
মাছিমারা = মাছি ধরে যে।
ঘরপোড়া = ঘর পুড়েছে যার।
বর্ণচোরা = বর্ণ চুরি করেছে যে।
গলাকাটা = গলা কাটে যে।
পা-চাটা = পা চাটে যে।
পাড়াবেড়ানী = পাড়া বেড়ায় যে।
ছা-পোষা = ছা পুষেছে যে।
 

Tuesday, March 20, 2018

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ বিস্তারিত লেখো

'কর্মধারয়' শব্দের অর্থ :'কর্ম' বা 'বৃত্তি' ধারণকারী |

যে সমাসে পূর্বপদ পরপদের বিশেষণ রূপে বসে এবং পরপদের অর্থ ই প্রধানভাবে প্রকাশ পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে |

যেমন: নীল যে কমল = নীলকমল, এখানে পূর্বপদ নীল হচ্ছে পরপদ কমলের বিশেষণ এবং 'নীলকমল' শব্দে কমলের‌ই অর্থপ্রাধান্য। কারণ নীলকমল বলতে এক প্রকার কমলকেই বোঝায়।

তৎপুরুষ সমাসের সাথে কর্মধারয় সমাসের প্রধান পার্থক্য হল পূর্ব পদের বিভক্তি লোপের ক্ষেত্রে। কর্মধারয় সমাসের পূর্ব পদে বিভক্তি থাকে না (শূন্য বিভক্তি থাকে), তাই লোপ পাওয়ার প্রশ্ন নেই।

কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ

ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস
খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
গ) উপমান কর্মধারয় সমাস
ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস
ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস

১. সাধারণ কর্মধারায়:

ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস :
* বিশেষ্য+ বিশেষ্য :-- পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে যেমন:--
যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ
যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি 
** বিশেষণ + বিশেষণ :-- একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে যেমন--
কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )
অম্ল অথচ মধুর = অম্লমধুর (বিশেষণে বিশেষণে)
** বিশেষণ + বিশেষ্য ::- পূর্বপদ - পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে যেমন:-
পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি
প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ
নীল যে আকাশ = নীলাকাশ (বিশেষণে বিশেষ্যে)

২. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যে একটি মধ্যপদের  আগমন ঘটে এবং এই মধ্যপদটি সমস্তপদে লোপ পায়।
তবে মনে রাখতে হবে, এই মধ্যপদটি কী হবে তা ঠিক করতে হয় সাধারণ বিচারবুদ্ধি দিয়ে; এর কোনো নিয়ম নেই।
যেমনঃ-
জীবনহানির আশঙ্কায় বীমা =জীবনবীমা
ছাত্র থাকাকালীন জীবন = ছাত্রজীবন
সিঁদুর রাখিবার কৌটা = সিঁদুরকৌটা
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন (মধ্যপদ 'লাঞ্ছিত' বললেও হয়)
পল মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন
গঙ্গা নাম্নী নদী = গঙ্গানদী (নদী স্ত্রীলিঙ্গ বলেই নাম্নী)
সিন্ধু নামক নদ = সিন্ধুনদ (নদ পুংলিঙ্গ)
ঘরজামাই = ঘরে পালিত জামাই।
একাদশ = এক অধিক দশ।
দ্বাদশ = দ্বি অধিক দশ।

৩. উপমান কর্মধারয় সমাস:

কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়
আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান
আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম 
** উপমানের ( যার সাথে তুলনা করা হয় ) সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাসকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে |
♡মনে রাখার বিষয়:-
উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ + সাধারণ ধর্মবাচক পদ = উপমান কর্মধারয় সমাস
যেমন:--
শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র
বজ্রের মতো কঠিন = বজ্রকঠিন
আলতার মতো রাঙা = আলতারাঙা
দুধের মতো সাদা = দুধসাদা
তুষারের মতো শুভ্র = তুষার শভ্র
হিমের মতো শীতল = হিমশীতল
শালের ন্যায় প্রাংশু = শালপ্রাংশু (প্রাংশু মানে লম্বা)
কম্বুর ন্যায় গম্ভীর = কম্বুগম্ভীর (কম্বু মানে শাঁখ)
জলদের ন্যায় গম্ভীর = জলদগম্ভীর
শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র
শশের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত
সিঁদুরের মতো রাঙা = সিঁদুররাঙা

৪. উপমিত কর্মধারয় সমাস :

উপমেয় ( যাকে তুলনা করা হয় ) -র সাথে উপমান এর যে সমাস হয় , তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে |
♡ মনে রাখার বিষয়:--এই সমাসে কোনো সাধারণ ধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না |
উপমেয় + উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ = উপমিত কর্মধারয় সমাস |
যেমন:--
নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল
অধর বিম্বের ন্যায় = বিম্বাধর
কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত
সিংহের মতো পুরুষ = পুরুষসিংহ (পরনিপাত ঘটেছে)
চাঁদের মতো মুখ = চাঁদমুখ (পরনিপাত হয়নি)
ঋষভের ন্যায় নর = নরর্ষভ (পরনিপাত ঘটেছে)

৫. রূপক কর্মধারয় সমাস::

যে সমাসে উপমেয় ও উপমান এর মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয় , তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে |
♡ মনে রাখার বিষয়:--
এখানে উপমেয় আর উপমান এর মধ্যে 'রূপ' শব্দটি বসে |
উপমেয় + রূপ + উপমান = রূপক কর্মধারয় সমাস। যেমন:--
যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম
প্রাণ রূপ প্রবাহিণী = প্রাণপ্রবাহিণী
জীবন রূপ যুদ্ধ = জীবনযুদ্ধ
সুখ রূপ দীপ = সুখদীপ |
প্রাণ রূপ পাখি = প্রাণপাখি
নিমাই রূপ চাঁদ = নিমাইচাঁদ (উদয় হলো নিমাইচাঁদ)
দেহ রূপ খাঁচা = দেহখাঁচা
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
জীবন রূপ তরী = জীবনতরী
আঁখি রূপ পাখি = আঁখিপাখি
মোহ রূপ রজ্জু = মোহরজ্জু
আশা রূপ লতা = আশালতা
শোক রূপ সাগর = শোকসাগর
জীবন রূপ নদী = জীবননদী
 

**উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য

১: উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমান ও সাধারণ ধর্ম থাকে। 
অপরদিকে উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয় থাকে। 
২: উপমান কর্মধারয় সমাসে সমস্তপদটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন: হিমশীতল - একটি বিশেষণ পদ।
উপমিত কর্মধারয় সমাসের সমস্তপদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন: চরণকমল - একটি বিশেষ্য পদ।
৩: উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমেয় অনুপস্থিত থাকে।
উপমিত কর্মধারয় সমাসে সাধারণ ধর্ম অনুপস্থিত থাকে।

উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাসের পার্থক্য

১: উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমেয় ও উপমানের তুলনা বোঝায়।
রূপক কর্মধারয় সমাসে উপমেয় ও উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয়।
২: উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদটির প্রাধান্য হয়। যেমন: পুরুষসিংহ বললে একজন পুরুষকে বোঝায়।
রূপক কর্মধারয় সমাসে অভেদ কল্পনার ফলে উপমানের অর্থ প্রধান হয়ে ওঠে। 'জীবননদী' বললে বাস্তবে কোনো নদী না বোঝালেও জীবনকে একটি নদী রূপে কল্পনা করা হয়, ফলে উপমান 'নদী'-র অর্থ প্রাধান্য পায়
 

Recent Post

মিষ্টি আলুর উপকারিতা

মিষ্টি আলুঃ "বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়ানোর সেরা খাবার"  বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য মিষ্টি আলু একটি বিশেষ খাবার। এটি শুধু বাচ্চ...

Most Popular Post