★'কর্মধারয়' শব্দের অর্থ :'কর্ম' বা 'বৃত্তি' ধারণকারী |
যে সমাসে পূর্বপদ পরপদের
বিশেষণ রূপে বসে এবং পরপদের অর্থ ই প্রধানভাবে প্রকাশ পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে |
যেমন: নীল যে কমল = নীলকমল, এখানে পূর্বপদ নীল হচ্ছে পরপদ কমলের বিশেষণ এবং 'নীলকমল' শব্দে কমলেরই অর্থপ্রাধান্য। কারণ নীলকমল বলতে এক
প্রকার কমলকেই বোঝায়।
তৎপুরুষ সমাসের সাথে কর্মধারয়
সমাসের প্রধান পার্থক্য হল পূর্ব পদের বিভক্তি লোপের ক্ষেত্রে। কর্মধারয় সমাসের
পূর্ব পদে বিভক্তি থাকে না (শূন্য বিভক্তি থাকে), তাই লোপ পাওয়ার প্রশ্ন নেই।
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ
খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
গ) উপমান কর্মধারয় সমাস
ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস
ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস
১. সাধারণ কর্মধারায়:
* বিশেষ্য+ বিশেষ্য :-- পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে | যেমন:--
যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ
যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি
** বিশেষণ + বিশেষণ :-- একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে | যেমন--
কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )
অম্ল অথচ মধুর = অম্লমধুর (বিশেষণে বিশেষণে)
** বিশেষণ + বিশেষ্য ::- পূর্বপদ - পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে | যেমন:-
পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি
প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ
নীল যে আকাশ = নীলাকাশ (বিশেষণে বিশেষ্যে)
২. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস:
তবে মনে রাখতে হবে, এই মধ্যপদটি কী হবে তা ঠিক করতে হয় সাধারণ বিচারবুদ্ধি দিয়ে; এর কোনো নিয়ম নেই।
যেমনঃ-
জীবনহানির আশঙ্কায় বীমা =জীবনবীমা
ছাত্র থাকাকালীন জীবন = ছাত্রজীবন
সিঁদুর রাখিবার কৌটা = সিঁদুরকৌটা
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন (মধ্যপদ 'লাঞ্ছিত' বললেও হয়)
পল মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন
গঙ্গা নাম্নী নদী = গঙ্গানদী (নদী স্ত্রীলিঙ্গ বলেই নাম্নী)
সিন্ধু নামক নদ = সিন্ধুনদ (নদ পুংলিঙ্গ)
ঘরজামাই = ঘরে পালিত জামাই।
একাদশ = এক অধিক দশ।
দ্বাদশ = দ্বি অধিক দশ।
৩. উপমান কর্মধারয় সমাস:
আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান।
আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম
** উপমানের ( যার সাথে তুলনা করা হয় ) সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাসকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে |
♡মনে রাখার বিষয়:-
উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ + সাধারণ ধর্মবাচক পদ = উপমান কর্মধারয় সমাস
যেমন:--
শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র
বজ্রের মতো কঠিন = বজ্রকঠিন
আলতার মতো রাঙা = আলতারাঙা
দুধের মতো সাদা = দুধসাদা
তুষারের মতো শুভ্র = তুষার শভ্র
হিমের মতো শীতল = হিমশীতল
শালের ন্যায় প্রাংশু = শালপ্রাংশু (প্রাংশু মানে লম্বা)
কম্বুর ন্যায় গম্ভীর = কম্বুগম্ভীর (কম্বু মানে শাঁখ)
জলদের ন্যায় গম্ভীর = জলদগম্ভীর
শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র
শশের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত
সিঁদুরের মতো রাঙা = সিঁদুররাঙা
৪. উপমিত কর্মধারয় সমাস :
♡ মনে রাখার বিষয়:--এই সমাসে কোনো সাধারণ ধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না |
উপমেয় + উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ = উপমিত কর্মধারয় সমাস |
যেমন:--
নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল
অধর বিম্বের ন্যায় = বিম্বাধর
কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত
সিংহের মতো পুরুষ = পুরুষসিংহ (পরনিপাত ঘটেছে)
চাঁদের মতো মুখ = চাঁদমুখ (পরনিপাত হয়নি)
ঋষভের ন্যায় নর = নরর্ষভ (পরনিপাত ঘটেছে)
৫. রূপক কর্মধারয় সমাস::
♡ মনে রাখার বিষয়:--
এখানে উপমেয় আর উপমান এর মধ্যে 'রূপ' শব্দটি বসে |
উপমেয় + রূপ + উপমান = রূপক কর্মধারয় সমাস। যেমন:--
যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম
প্রাণ রূপ প্রবাহিণী = প্রাণপ্রবাহিণী
জীবন রূপ যুদ্ধ = জীবনযুদ্ধ
সুখ রূপ দীপ = সুখদীপ |
প্রাণ রূপ পাখি = প্রাণপাখি
নিমাই রূপ চাঁদ = নিমাইচাঁদ (উদয় হলো নিমাইচাঁদ)
দেহ রূপ খাঁচা = দেহখাঁচা
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
জীবন রূপ তরী = জীবনতরী
আঁখি রূপ পাখি = আঁখিপাখি
মোহ রূপ রজ্জু = মোহরজ্জু
আশা রূপ লতা = আশালতা
শোক রূপ সাগর = শোকসাগর
জীবন রূপ নদী = জীবননদী
**উপমান ও উপমিত কর্মধারয়
সমাসের পার্থক্য
অপরদিকে উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয় থাকে।
২: উপমান কর্মধারয় সমাসে সমস্তপদটি বিশেষণ পদ হয়। যেমন: হিমশীতল - একটি বিশেষণ পদ।
উপমিত কর্মধারয় সমাসের সমস্তপদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন: চরণকমল - একটি বিশেষ্য পদ।
৩: উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমেয় অনুপস্থিত থাকে।
উপমিত কর্মধারয় সমাসে সাধারণ ধর্ম অনুপস্থিত থাকে।
উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাসের
পার্থক্য
রূপক কর্মধারয় সমাসে উপমেয় ও উপমানের অভেদ কল্পনা করা হয়।
২: উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদটির প্রাধান্য হয়। যেমন: পুরুষসিংহ বললে একজন পুরুষকে বোঝায়।
রূপক কর্মধারয় সমাসে অভেদ কল্পনার ফলে উপমানের অর্থ প্রধান হয়ে ওঠে। 'জীবননদী' বললে বাস্তবে কোনো নদী না বোঝালেও জীবনকে একটি নদী রূপে কল্পনা করা হয়, ফলে উপমান 'নদী'-র অর্থ প্রাধান্য পায়
No comments:
Post a Comment