Ad-1

Monday, September 16, 2024

শত্রুর দৃষ্টি থেকে গোপন থাকার একটি আমল :

হযরত কা'ব বলেন: রসুলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন মুশরিকদের দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করতে চাইতেন, তখন কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করতেন। এর প্রভাবে শত্রুরা তাকে দেখতে পেত না। আয়াতত্রয় এই : এক আয়াত-সূরা কাহাফের
وجَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمَ اكنة أَن يَنْتَهُوهُ وَفِي أَذَانِهِمْ وَقُرًا
দ্বিতীয় আয়াত সুরা নাহলের
أولءك الَّذِينَ طَبَعَ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وسمعهم وابصارهم,
এবং তৃতীয় আয়াত সূরা জাসিয়ার
الهه هوه وَأَضَلهُ اللهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمعهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ
على بصيره غشوة
হযরত কা'ব বলেন ঃ রসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর এই
ব্যাপারটি আমি সিরিয়ার জনৈক ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করি। তিনি কোন প্রয়োজনবশতঃ রোম দেশে গমন করেন। বেশ কিছুদিন সেখানে অবস্থান করার পর তিনি রোমীয় কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়ে পড়লে প্রাণের
ভয়ে সেখান থেকে পলায়ন করেন। শত্রুরা তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করে। এহেন সংকট মুহূর্তে হঠাৎ হাদীসটি তাঁর মনে পড়ে। তিনি কালবিলম্ব না করে আয়াত তিনটি পাঠ করতেই শত্রুদের দৃষ্টির সামনে পর্দা পড়ে যায়। যে রাস্তায় তিনি চলছিলেন, শত্রুরাও সেই রাস্তায় চলাফেরা করছিল; কিন্তু
তারা তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল না ।
ইমাম সা'লাবী বলেন : হযরত কা'ব থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতটি আমি 'রায়' অঞ্চলের জনৈক ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করেছিলাম। ঘটনাক্রমে সায়লামের কাফেররা তাঁকে গ্রেফতার করে। তিনি কিছুদিন কয়েদ থাকার পর সুযোগ পেয়ে পলায়ন করেন। শত্রুরা তাঁকে পেছনে ধাওয়া করে।
তিনি উল্লিখিত আয়াতত্রয় পাঠ করলে আল্লাহ্ তাআলা তাদের চোখের উপর পর্দা ফেলে দেন। ফলে তাদের দৃষ্টি থেকে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান ; অথচ তারা পাশাপাশি চলছিল এবং তাদের কাপড় তাঁর কাপড় স্পর্শ করছিল।
ইমাম কুরতুবী বলেন : উপরোক্ত আয়াতত্রয়ের সাথে সূরা ইয়াসীনের ঐ আয়াতগুলোও মেলানো উচিত, যেগুলো রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হিজরতের সময় পাঠ করেছিলেন। তখন মক্কার মুশরিকরা তাঁর বাসগৃহ ঘেরাও করে রেখেছিলে। তিনি আয়াতগুলো পাঠ করে তাদের মাঝখান দিয়ে চলে যান ;
বরং তাদের মাথায় ধুলা নিক্ষেপ করতে করতে যান : কিন্তু তাদের কেউ টেরও পায়নি। সূরা ইয়াসীনের আয়াতগুলো এই ঃ
يسَ -وَالقُرانِ الْحَكِيمِ -اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ- عَلَى صِرَاطٍ
مُسْتَقِيم -تنزيل العزيز الرَّحِيمِ- لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا انْذِرَ آبَاؤُهُمْ
- فَهُمْ عَقِلُونَ -لَقَد حَقَ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِ فَهُمْ لا يُؤْمِنُونَ
انا جعلنا فى اعناقهم اغلالا فهى الى الاذقان فهم مقمهون-وجعلنا من بين ايديهم سدا ومن خلفهم سدا فاغشيناهم فهم مقمهون-

[সূত্র : তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা -৭৮২]

Friday, September 13, 2024

দাসত্ব ও মানসিক দাসত্ব কী?

দাসের ইংরেজি শব্দার্থ Slave. Oxford Dictionary এর মতে, ঝষধাব হলো 

১) a person who is legally owned and is forced to work for them, 

২) a person who is completely dominated or influenced. 

বাংলা একাডেমি প্রণীত অভিধানে ঝষধাব বলতে (১) ক্রীতদাস, কেনা গোলাম, 

২) ‘যে ব্যক্তি অন্যোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়’ শব্দার্থ করা হয়েছে।

লেলিন বলেছেন যে, দাসত্ব তিন প্রকার। 

প্রথমত: এক শ্রেণির লোক স্বেচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণ করে বিনিময়ে তার ক্ষুধার জ্বালা নিবারনসহ জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তা মিটাতে পারে, কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকে না। 

দ্বিতীয়ত: এক শ্রেণির লোক রয়েছে, যারা নিজেরা বুঝতেই পারে না যে, তারা দাসত্ব করে যাচ্ছে বিনিময়ে আরাম-আয়াশে দিন কাটাচ্ছে, কিন্তু সত্য-মিথ্যার তারতম্য করতে পারে না। 

তৃতীয়ত: ব্যতিক্রমধর্মী এক শ্রেণির লোক রয়েছে, যারা দাসত্বকে না মেনে প্রতিবাদ করে আসছে। তারাই বিদ্রোহী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে, বিনিময়ে পাচ্ছে জেল-জুলুম, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, এমনকি ফাঁসির দড়ি।

দাসত্ব গ্লানিকর ও অপমানজনক, অন্যদিকে বিদ্রোহী জীবন অনেক কষ্টের, তবে সম্মানজনক। যদিও আইন করে কৃতদাসপ্রথা বা দাসপ্রথা বিলুপ্ত বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের সমাজে কি দাসত্ব বন্ধ হয়েছে? দেখা যাচ্ছে, ‘মানসিক দাসত্বের’ পরিমান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। খেয়ে পরে একটু স্বস্তিতে থাকার জন্য, কোথাও প্রমোশনের জন্য, কোথাও পদ-পদবী পাওয়ার জন্য অনেকেই নির্লজ্জের মতো দাসত্ব করে যাচ্ছে। এমন লোকের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়, যারা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে নিজেদের দেশ মনে করে।

মানসিক দাসত্ব করতে শরীর খাটাতে হয় না, বরং মনমানসিকতা ও বিবেকে বিক্রি করে নিজ স্বত্তাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। নিয়োগকর্তার স্বার্থ রক্ষার্থে সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করে বিনিময়ে শাসক গোষ্ঠির সুদৃষ্টি অর্জন করে নিজ ও পরিবারের জন্য সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আদায় করার নামও মানসিক দাসত্ব। এ ধরনের দাসের সংখ্যা কম হলেও আছে।

Saturday, September 7, 2024

রবীন্দ্রনাথের প্রতি অপবাদ দূর

রবীন্দ্রনাথ নিষ্ঠুর জমিদার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ প্রজাদের সারাজীবন শোষণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ কখনোই এদেশের কৃষকদের, সাধারণ মানুষের কখনো উন্নতি চাননি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছেন, 'মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়'।  এমন কতো অপবাদ কি অবলীলায় চালানো হয় রবীন্দ্রনাথের নামে। কতো মিথ্যাচার শুনতে হয়।

অথচ শিলাইদহ, শাহজাদপুর বাদ দিলাম এক পতিসরেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর জমিদারীতে যা করেছেন বাংলার ইতিহাসে কোন জমিদার তা করেনি। 

পারিবারিক সূত্রে পাওয়া জমিদারী দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে  প্রথম পতিসরে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জমিদারি ভাগ হওয়ায় নওগাঁর কালিগ্রাম পরগণার জমিদারি পেয়েছিলেন  রবীন্দ্রনাথ।

তৎকালীন সময়ে  কালিগ্রাম পরগণা ছিল নিচু এলাকা। এক ফসলি জমি। একটিমাত্র ধানের আবাদ হয়, তাও বন্যায় ষোলো আনা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ প্রজাই দরিদ্র।

 একবেলা খেতেও পারত না। এসব বিষয়গুলো রবীন্দ্রনাথকে ভাবিয়ে তুলতো। মহাজনী সুদ থেকে প্রজাদের বাঁচাতে রবীন্দ্রনাথ স্বজনদের কাছ থকে টাকা ধার নিয়ে ১৯০৫ সাল থেকে প্রথম ‘কৃষি ব্যাংক’ চালু করেছিলেন।

মহাজনরা অখুশি হলেও গ্রামে-গ্রামে প্রজাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই ব্যবস্থা। কৃষকদের বাঁচাতে আরো টাকা প্রয়োজন।

নিজের নোবেল পুরস্কারের ১ লাখ ৮ হাজার টাকা কৃষি ব্যাংকে দিয়েছিলেন  রবীন্দ্রনাথ। তিনি এতোটাই নিষ্ঠুর জমিদার ছিলেন ঋণ আদায় করতে না পারায় অর্থ সংকটে পড়ে ব্যাংকটি।  এমতাবস্থায় ১৯৩৭ সালে জুডিশিয়াল বোর্ড গঠন করলে ঋণ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।  তখন প্রজাদের কাছে থাকা ঋণের সব অর্থই আটকে যায়। 

১৯১০ সালে  পতিসরের কাছারি বাড়ির একটি কক্ষে হোমিও দাতব্য চিকিত্সালয় স্থাপন করেছিলেন রবীন্দ্রনার। কিন্তু হোমিও ওষুধ দিয়ে সব রোগের চিকিত্সা হতো না। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই অঞ্চলে প্রথম আধুনিক চিকিত্সা সেবা শুরু করেন।

 পরে সার্টিফিকেটধারী চিকিত্সক নিয়োগ দিয়ে প্রজাদের চিকিত্সা সেবা দিতেন। তখন নার্সও নিয়োগ দেয়া হয়। তিন-চারটি বেড রাখা হয়েছিল। এই চিকিত্সাসেবা ১৯২০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।

এলাকার কৃষকদের বাঁচাতে ধর্মগোলা স্থাপন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ধর্মগোলা মানে শস্যভান্ডার। যে বছর আবাদ ভালো হতো সে বছর প্রজাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্য নিয়ে রেখে দেয়া হতো ধর্মগোলায়। 

যখন আবাদ হতো না তখন সেই গোলা থেকে কৃষকদের মধ্যে দেয়া হতো। আবার আবাদ হলে সে শস্য আবার ধর্ম গোলায় জমা করতেন কৃষকেরা। 

 সে সময় কোনো মহাজনদের কাছ থেকে এক মণ খাদ্য নিলে দেড় গুণ বা দুই গুণ খাদ্য দিতে হতো মহাজনকে। এজন্য দরিদ্র প্রজাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এই ধর্মগোলা।

 হতদরিদ্র প্রজাদের গাভী পালনে প্রশিক্ষণ ও ধানচাষের বাইরে অন্য পেশায় আয় বাড়াতে তাঁতব্যবস্থা, অন্য ফসলের দিকে যেন মানুষ  আকৃষ্ট হয় সে ব্যবস্থাও করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 

এ জন্য কয়েকজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে্য শ্রীনিকতনেও। সেখানে তাঁদের কৃষি প্রশিক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন পতিসরে। এক ফসলি জমিতে অন্য ফসল চাষ করাতে জমির আইলে খেজুর গাছ, আমগাছ, পেঁপে চাষ শুরু করান তিনি। 

এ ছাড়াও বাস্তুভিটাতে ফলের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এসময়ে এলাকায় অপ্রচলিত ভুট্টা, আলুর চাষ শুরু করেন। 

প্রজাদের মহাজনদের সুদের বেড়াজাল থেকে বাঁচাতে ঋণ সালিশী সংস্থা কালিগ্রাম হিতৈষীসভা গঠন করেন রবীন্দ্রনাথ

সে সময় কালিগ্রাম কাছারিবাড়ি থেকে কালিগ্রাম পরগণায় জমিদারির কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। কালিগ্রাম পরগণার আওতায় প্রায় ৬শ’ গ্রাম ছিল। 

এই ‘হিতৈষীসভা’ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে কালিগ্রাম হিতৈষীসভা, ভান্ডারগ্রাম হিতৈষীসভা ও পতিসর হিতৈষীসভা। কাছারি বাড়ির আওতায় থাকা প্রতিটি গ্রাম থেকে একজন গ্রাম প্রধান ও কাছারি বাড়ির একজন ও জমিদারের প্রতিনিধি একজন করে পঞ্চায়েত গঠন করা হয়েছিলো। 

এই পঞ্চায়েতের কাজ ছিলো গ্রামের সাধারণ মানুষদের বিরোধ মিটিয়ে দেয়া, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ করা, পাঠশালা নির্মাণ করা। ম্যালেরিয়া হওয়ায় গ্রামের জঙ্গল কেটে ফেলা ইত্যাদি। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, পাঠশালা নির্মাণ, গ্রামের জঙ্গল কেটে ফেলতে তো টাকা লাগবে। 

কিন্তু সে টাকা কোথা থেকে আসবে? তখন সিদ্ধান্ত হলো রবীন্দ্রনাথ অর্ধেক টাকা দিবেন, আর বাকি অর্ধেক টাকা হিতৈষীসভা  দিবে।

 এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে তখন ১১ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছিল। এরপর শুরু হয় রাস্তাঘাট নির্মাণ, পাঠশালা নির্মাণ।

 ৬শ’ গ্রামের মধ্যে প্রায় ২০০ টি গ্রামে পাঠশালা নির্মাণ করে পাঠদান শুরু হয়।  এই পাঠশালার মাস্টারদের বেতন ও দিতেন রবীন্দ্রনাথ।  একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ   তিনটি মাইনর স্কুল চালু করেন। একটি পতিসরে, অপর দুটি রাতোয়াল ও ভান্ডারগ্রামে।

 নিজের প্রজাদের জন্যে চাষ ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো জন্যে ১৯০৬ সালে  রবীন্দ্রনাথ নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও  শিরিষ চন্দ্র মজুমদারের ছেলে সন্তোষ চন্দ্র মজুমদারকে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষির উপর পড়াশুনার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। অথচ তিনি চাইলেই ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্য কিছু পড়াতে পারতেন! 

 রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সন্তোষ চন্দ্র মজুমদার যখন কৃষির উপর পড়তে আমেরিকা গেলেন তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁদের চিঠিতে লিখেছিলেন, 

. ‘তোমরা দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজার অন্ন গ্রাসের অংশ নিয়ে বিদেশে কৃষি শিখতে গেছ। ফিরে এসে এই হতভাগ্যদের অন্ন গ্রাস কিছু পরিমাণেও যদি বাড়িয়ে দিতে পার তাহলে মনে সান্ত্বনা পাব। মনে রেখো, জমিদারের টাকা চাষির টাকা এবং এই চাষিরাই তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার নিজেরা আধপেটা খেয়ে এবং না খেয়ে বহণ করছে। এদের ঋণ সম্পূর্ণ শোধ করবার দায় তোমাদের উপর রইল। নিজেদের সংসারিক উন্নতির চেয়েও এইটেই তোমাদের প্রথম কর্তব্য হবে।’

 ১৯০৯ সালে পড়াশোনা শেষে  দেশে ফিরে এলেন রথীন্দ্রনাথ ও সন্তোষ মজুমদার।  কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গে না রেখে নিজের ছেলেকে  পতিসরে নিয়ে এলে রবীন্দ্রনাথ। তখন  রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলের লাঙ্গলে চাষ করে আধুনিক পদ্ধতি শিখিয়েছেন প্রজাদের।    আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য পতিসরে ৭টি বিদেশি কলের লাঙল এনেছিলেন  কলকাতা থেকে। সঙ্গে আনিয়ে ছিলেন বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার।

আধুনিক চাষাবাদ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, খামার ব্যবস্থাপনা, হস্ত ও কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, রেশমশিল্পের বিকাশ ঘটানো ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য রবীন্দ্রনাথ পতিসরে যা করেছিলেন তাতে পতিসর কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় দারিদ্র শূন্য হয়ে গিয়েছিলো। 

পতিসরকে মডেল হিসেবে তুলে ধরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,  ‘তোমরা যে পার ‍এবং যেখানে পার এক-একটি গ্রামের ভার গ্রহণ করিয়া সেখানে গিয়া আশ্রয় লও। গ্রামগুলিকে ব্যবস্থাবদ্ধ করো। শিক্ষা দাও, কৃষিশিল্প ও গ্রামের ব্যবহার‍সামগ্রী সম্বন্ধে নূতন চেষ্টা প্রবর্তিত করো।'

রথীন্দ্রনাথ ঠাকু্র তাঁর পিতৃ স্মৃতি গ্রন্থে বাবা রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি তুলে এনেছিলেন।  রবীন্দ্রনাথ সেই চিঠিতে ছেলেকে লিখেছিলেন, 

'পতিসরে পৌঁছে গ্রামবাসীদের অবস্থার উন্নতি দেখে মন পুলকিত হয়ে উঠলো। পতিসরের হাইস্কুলে ছাত্র আর ধরছে না। দেখলুম– নৌকার পর নৌকা নাবিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ছেলের দল স্কুলের ঘাটে। এমনকি, আট-দশ মাইল দূরের গ্রাম থেকেও ছাত্র আসছে। পড়াশুনার ব্যবস্থা প্রথম শ্রেণীর কোন ইস্কুলের চেয়ে নিকৃষ্ট নয়। পাঠশালা, মাইনর স্কুল সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। হাসপাতাল ও ডিস্পেনসারিতে কাজ ভালো চলছে। যে সব জোলা আগে এক সময় গামছা বুনতো তাঁরা এখন ধুতি, শাড়ী, বিছানার চাদর বুনতে পারছে। কুমোরদেরও কাজের উন্নতি হয়েছে। গ্রামবাসীর আর্থিক দুরবস্থা আর নেই। শুধু চাষীরা অনুযোগ জানালো তাদেরকে চাষের জন্য আরও ট্রাক্টর এনে দেওয়ার জন্য।'

রবীন্দ্রনাথ ১৯১১ সালের উইলে নিজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি দান করেছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথকে। এক চিঠিতে

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়কে  রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,  'জমিদারি সম্পত্তির আয় নিজের ভোগে না লাগাইয়া প্রজাদের হিতার্থে যাহাতে নিযুক্ত করেন রথীকে সে সম্বন্ধে বার-বার উপদেশ দিয়াছি। তদনুসারে এইরূপ মঙ্গল অনুষ্ঠানে সে যদি তাহার পৈত্রিক সম্পত্তি প্রসন্নচিত্তে উৎসর্গ করিতে পারে তবে আমার বহুকালের একান্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়..'

পতিসরের জমিদারী ছেড়ে দিলেও রবীন্দ্রনাথ পতিসরকে কিংবা পরিসরের মানুষ রবীন্দ্রনাথকে কখনোই ভুলতে পারেনি। 

 তাইতো  প্রজাদের প্রবল  অনুরোধে মৃত্যুর চার বছর আগে  ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই শেষবারের মতো পতিসরে এসেছিলেন কথিত নিষ্ঠুর ও বর্বর জমিদার রবীন্দ্রনাথ। 

ছবি-  সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন জমিদার রবীন্দ্রনাথ।




Tuesday, September 3, 2024

মাঝে নিজের অধিকার নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করতে হয়

বাপের বাড়ী যাচ্ছি বা বাপের বাড়ী।

এ জুতসই কথা না।

বলবেন, আমার নিজের বাড়ী যাচ্ছি। 

স্বামীর ঘর বা উনার ঘর বলবেন না।

বলবেন নিজের ঘর। 

শশুডর বাড়িটাতেও স্বামীর রুমটা নিজেরই রুম বলবেন। 

নিজেরটা নিজে না বললে, পরেরা পর করেই রাখবে। 

তাই সব আজ থেকে বলবেন।

এ অধিকার আল্লাহতায়ালা আপনাকে দিয়েছেন। 


শাশুড়ী যদি বলেন তাঁর বাড়ী, মনে মনে বলে দিবেন যদি এটা আপনার স্বামীর অধিকারে আপনার বাড়ী হয়

আমার ও নয় কি? 

মনে মনে বলবেন। 

অভিমান আর নয় 

ডাবল খাবেন আজ থেকে। জা ননাসদের ব্যবহার যদি ছাড়া ছাড়া হয় আপনিও পানখা হয়ে যাবেন। 

মনে রাখবেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মানে টা আপনি বুঝে রক্ষা করবেন। বাবার দিকের সব আত্মীয় আপনার হকের। 

তাদের খোজ খবর নিন। 

স্বামীর দিকের গুলা জরুরী না মেইনটেইন করা, ওরা যদি রেসপেক্ট বা আন্তরিকতা দেখায় তখন ভেবে দেখবেন। ওখানে পর্দার নিয়ম বড্ড কড়া। নরম গলায় কথাও বলা যাবে না নন-মাহরাম এর সাথে। 

আপনি সস্তা না, আপনার জন্য আল্লাহ্পাক নিজে অপেক্ষা করছেন ৫ ওয়াক্ত। আপনি আসল কাজ না করে হুদাই গাল ফুলায়ে খানা না খেয়ে শরীর অসুস্থ করবেন না। 

স্বামীর সাথে ভীষন সুন্দর রিলেশন build up করুন। রিলেশন build up মানে হুদাই এর-ওর নামে গীবত করা না। রাজনৈতিক আলাপ করতে পারেন। 

যাদের জন্য অভিমান করছেন তারা কেউ ই পাশে থাকবে না। 

ঘনঘন ঘুরতে যান। ফুচকা খাবার জন্য হলেও বাসা থেকে বের হোন। পরে আর শরীর সময় কিছুই থাকবে না। 

ড. ইউনুস ও পানখা হয়ে গেছেন।

আপনি কেনো বাদ থাকবেন। যান ঘুরে আসুন বিকেলে ইচ্ছা মতো দৌড়ান হাসুন।



নীতিশ রায় এর বিখ্যাত ছবি



কিংবদন্তী ফটোগ্রাফার নীতিশ রায়ের তোলা এই ছবিটি গত কয়েকদিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার ঘুরপাক খাচ্ছে, কেউ বলছে ছবিটি দেশের কেউ বা বলছে বিদেশের কিন্তু মর্মস্পর্শী এই ছবিটির আসল রহস্য কি..... 

১৯৭১সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়। জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলের আসাম-মেঘালয় গাড়ো পাহাড় সীমান্তবর্তী হাজং সম্প্রদায়ের রমণীর চিত্র।  ছবি ক্যাপশন: 'তৃষ্ণার্ত এক নারীর নদীর জল পান আর মায়ের কোলে তৃষার্ত শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান।' জলে ভাসমান সাদা রাঙের বস্তুগুলো হচ্ছে মানুষের মৃতদেহ।

নীতিশ রায় ১৯৪৪ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের  শেরপুর শহরের নয়আনী বাজার এলাকায় প্রয়াত নন্দহরি রায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি সৌখিন আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে আলোকচিত্র জগতে তিনি ছিলেন একজন নক্ষত্র। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। ওই বছরের ১৬ জুন মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে যোগদান করেন। সত্তর থেকে আশির দশক পর্যন্ত ইত্তেফাক, সংবাদ ও মাসিক পত্রিকা ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও তার ছবি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিশ্বের অনেক দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এবং পুরস্কার পেয়েছে। ১৯৮২ সনে জাপানে অনুষ্ঠিত সপ্তম এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় নীতিশ রায়ের ছবি ‘তৃষ্ণা’ ইয়াকুল্ট পুরস্কার লাভ করে।

 শিল্প-চেতনা সমৃদ্ধ আলোকচিত্রী নীতিশ রায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কৃষ্টি প্রবাহ ও ত্রিসপ্তক নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এবং অভিনয়ে অংশগ্রহণ করতেন। নিঃসন্তান সাংবাদিক নীতিশ রায় এর স্ত্রী কবি সন্ধ্যা রায়। নীতিশ রায় ৭৫ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ৮ জুন তিনি পরলোকগোমন করেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা আল আমিন হোসাইন মৃধা।

Recent Post

"শাকেই এত লাড়া, ডাল হলে ভাঙত হাঁড়ি, ভাসত পাড়া-পাড়া।" এই কথা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?

এই প্রবাদটি বোঝাতে চায় যে ছোটোখাটো বিষয়ে যদি এত ঝামেলা বা উত্তেজনা হয়, তাহলে বড় কোনো বিষয়ে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। "শাকেই এত লাড়া&...

Most Popular Post