রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণ ও ইতিহাস ............................
পৃথিবী নামক গ্রহটিতে দুই পরাশক্তির ক্ষমতার, মতাদর্শের লড়াই চলছে সেই 1945 থেকে। সমরের মাঠে সামনাসামনি লড়াই না। লড়াই কাগজে কলমে, ব্লকে ব্লকে, ঠান্ডা মাথায়। লোকে তাই এর নাম দিয়েছে ''ঠান্ডা লড়াই"/ "স্নায়ু যুদ্ধ" (Cold War)।
একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে "ক্যাপিটালিস্ট ব্লক", অন্য দিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে "কমিউনিস্ট ব্লক"। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র দেবে না ছাড়। অবস্থাটা এমন যে,রাষ্ট্রগুলোকে এ পক্ষে, কিংবা ও পক্ষে যেকোনো একদিকে থাকতে হবে। নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না।
1960 এর দশকের দিকে এসে কিছু রাষ্ট্র মনে করলো আমরা কারো সাথে থাকবো না। না সোভিয়েত, না আমেরিকা, কারো সাথে ঐক্যের দরকার নাই. সৃষ্টি হলো NAM (Non Alliance Movement)।
অন্যদিকে পৃথিবীর এ প্রান্তে, ও প্রান্তে Decolonization এর প্রভাবে কলোনি থেকে বের হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে এক একটা নতুন রাষ্ট্র।
কিন্তু ঠিক এ সময়ে গণতান্ত্রিক মায়ানমারে একটা উল্টা পরিবর্তনের হাওয়া বাতাস লাগে। রাষ্ট্র ক্ষমতা হঠাত চলে যায় সেনা শাসনের অধীনে। মাথা মোটা শাসক দলের নানা সময় নানা খায়েশ জাগে। সময়টা তখন 1970 এর দশকের মাঝামাঝি। কথিত আছে বার্মিজরা গনক ও গননায় খুবই বিশ্বাস করে।সামরিক জান্তা গনকদের ডাকলো। বার্মা এবং তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলো। গনকরা বললো, বার্মার পতন বা ক্ষতি সাধন হবে বাংলাদেশ এর দিক থেকে। মায়ানমারের তৎকালীন সামরিক সরকার গণকের কথা খুবই গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করলো। তখন শাসকের খায়েশ হলো মায়ানমারের বিভিন্ন জাতিকূলের নাম্বারিং করবেন। 1,2,3 এমন ট্যাগ দেওয়া আর কি!!! যারা মায়ানমারের প্রকৃত অধিবাসী তারা এক এক করে ট্যাগ পেয়ে যাচ্ছে। 135 এ গিয়ে থামলো সংখ্যাটা। কপালে ট্যাগ জুটলোনা একটা জাতির-তারা ধর্মে মুসলমান, থাকে আরকান রাজ্যে, নাম তাদের রোহিঙ্গা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা মায়ানমারের প্রকৃত অধিবাসী না। তারা নাকি অবাধ চলাচলের যুগে প্রতিবেশী দেশ থেকে ঢুকে পড়েছে তাদের"স্বর্গরাজ্যে"!!!! এসব পাগলামি দেখে বিশ্ববাসী হাসে, আর রোহিঙ্গারা আঁখিজলে ভাসে।
সময়ের কাটায় 1978 সাল। শাসকের ইচ্ছা হলো যারা নম্বর পায়নি (শাসকের চোখে প্রকৃত অধিবাসী নয়) তাদের দেশ থেকে বের করে দিয়ে দেশটাকে ধবধবে ফর্সা করবে!!! শুরু হলো "অপারেশন ড্রাগন কিং" (Operation Dragon King)।
অপারেশনের নামে নিজ ভূমি থেকে দলবেঁধে বিতাড়িত করা হলো 2 লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে। বিতাড়িত হয়ে কেউ নৌকা নিয়ে সাগরে ভাসছে, কেউ ভাসছে বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদীতে, কেউ আবার স্থল সীমান্তে। জাতিসংঘের টনক নড়ে। মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সীমান্ত খুলে দেয়। 2 লক্ষ রোহিঙ্গার বেশিরভাগ ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে।জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (UNHCR) বললো ভাই ওদের আশ্রয় দেও। আমরা ওদের খাওয়া-দাওয়া, যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিবো। আর মায়ানমার সরকার যাতে ওদের ফেরত নেয় সে ব্যবস্থা আমরা করবো। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প খোলা হলো। দেখা গেলো সেখানে আশ্রয় নিয়েছে হাজার পঁচিশেক লোকজন। তাহলে বাংলাদেশে ঢোকা বাকি লোক গেলো কই??? তাইতো কই গেলো সবাই??? খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো স্থানীয় প্রভাবশালী, বিভিন্ন চক্রের হাত ধরে এরা মিশে গেছে ঐ অঞ্চলসহ আশেপাশের অঞ্চলের স্থানীয় জনস্রোতে। বিয়ে করেছে, সংসার পেতেছে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছে নানা অপকর্মে। সুবিধা তাদের একটা-চেহারার ও ভাষার মিল আছে স্থানীয় লোকজনের সাথে। ফলে স্থানীয় না হয়েও বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাদের!!!
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মায়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও জাতিসংঘ লেভেল থেকে আলোচনা চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সেখানকার সামরিক শাসকের এক কথা ফেরত নিবে না একজনকেও!!! বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। 1989 সালে সমগ্র মায়ানমার জুড়ে আদমশুমারি হলো। এবার প্রকৃত নাগরিকের ট্যাগ পেলো রোহিঙ্গারা।
এভাবে দৃশ্যপটে কড়া নাড়লো 1992। আবার অস্থির সময়। আবার অত্যাচার চললো রোহিঙ্গাদের উপর, বিতাড়িত হলো নিজ ভূমি থেকে। এবার অভিযোগ তারা নাকি মায়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়!! তারা নাকি হাত মিলিয়েছে "কারেন" বিদ্রোহীদের সাথে। আবার সীমান্ত খুলে দিল প্রতিবেশী বাংলাদেশ। এবারও আশ্রয় পেলো দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। দুয়ে দুয়ে চার লাখ শরণার্থী আশ্রয় পেলো বাংলাদেশে। ফেরত নেবার কথা থাকলেও ফেরত নেওয়া আর হচ্ছে না। তিন চার বছর আগে কিংবা ২০১৬ সালে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে আবার শুরু হলো রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা। কিন্তু এবার আর সীমান্ত খুলতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ। মানবতা হয়তো বিবেককে নাড়া দেয় কিন্তু বাংলাদেশের ভাষ্য নিজের ক্ষতি করে আর কত আশ্রয় দেওয়া যায়?? জাতিসংঘতো আগে আশ্রয় দেওয়া মানুষ জনকে ফেরত পাঠানো কিংবা Third Party Settlement এর ব্যবস্থা করতে পারেনি।
এ যখন অবস্থা তখন "মানবতা নাকি বাস্তবতা" কোনটা প্রাধান্য পায় সেটা দেখার বিষয় ছিল। গত বছর বাস্তবতা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ বছর এসে আবার রোহিঙ্গা নিধন। এবার মানবতার কাছে হার মেনেছে বাংলাদেশ। আশ্রয় দিয়েছে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদেরকে।
[Collected from Facebook]
Ad-1
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
"শাকেই এত লাড়া, ডাল হলে ভাঙত হাঁড়ি, ভাসত পাড়া-পাড়া।" এই কথা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
এই প্রবাদটি বোঝাতে চায় যে ছোটোখাটো বিষয়ে যদি এত ঝামেলা বা উত্তেজনা হয়, তাহলে বড় কোনো বিষয়ে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। "শাকেই এত লাড়া&...
Most Popular Post
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
১। উপন্যাসের আখ্যানভাগ কী ? ------- Plot বা কাহিনি-সমগ্র। ২। কাকতাড়ুয়া ’ উপন্যাসের মিঠুর ভাইয়ের নাম কী ? ------- মধু। ৩। বু...
-
ভূমিকা : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যাঁর নামটি জড়িত, তিনি হলেন সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর। জন্ম পরিচয় : তিতুমীর ভারতের পশ্চিমবঙ...
-
পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত বিপরীত শব্দগুলোর একত্রে সন্নিবেশিত করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পার..... প্রদত্ত শব্দ ------------...
No comments:
Post a Comment