Ad-1

Friday, June 21, 2019

বই পড়া
বই পড়া মানুষের প্রিয় শখ, বই মানুষের চিরন্তন বিশ্বস্ত সঙ্গীও বটে। বই মানুষের জীবনকে করে তোলে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। মানুষের অভ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্কৃষ্ট হচ্ছে বই পড়া। জ্ঞানীর আজন্ম জ্ঞান সাধনার ফসল হচ্ছে বই। নানাকালের মানুষ তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানোপলব্ধি অনাগতকালের মানুষের আনন্দ জোগানোর জন্য লিপিবদ্ধ করে যান বইয়ে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা মুহূর্তেই পরিচিত হতে পারি সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে। তৈরি করে নিতে পারি আমাদের ভবিষ্যত্ চলার পথ। বই পড়ার মাধ্যমে একটি জাতির মনন নির্ভর করে তার আগামীর পথ নির্ধারণের জন্য। একটি ভালো বই মানুষের নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর এবং নির্মল আনন্দলাভের এবং আত্মার পরিশুদ্ধির একমাত্র উপায়। শুধু নিঃসঙ্গতা দূরীকরণ নয়, বই পড়ার মাধ্যমেই বিকাশ ঘটে সভ্যতা ও সংস্কৃতির। উন্নত জাতি গঠনে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই মানুষকে সৃষ্টিশীল ও আনন্দপ্রিয় করে তোলে। পৃথিবীর মহান মানুষের জীবনালেখ্য দেখলে জানা যাবে, তঁাদের সাধনায় বই জিনিসটি ছিল সবার আগে।

নবান্ন উৎসব
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী উত্সবের মধ্যে উলে্লখযোগ্য উত্সব হলো নবান্ন উত্সব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের শস্য উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উত্সব পালিত হয়, নবান্ন উত্সব তারই একটি অংশ। নবান্ন' শব্দের অর্থ নতুন অন্ন'। নবান্ন উত্সব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উত্সব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদ&যাপনের প্রথা রয়েছে। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের একটি বিশেষ লেৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পঁেৌছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে কাকবলি'। অতীতে পেৌষ সংক্রানি্তর দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। একসময় বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে যেন পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যেতো। আমন্ত্রণ জানানো হতো আত্মীয়-পরিজনকে। দেশের নানা জায়গায় আয়োজন করা হতো পিঠামেলার। নবান্ন উত্সব আমাদের জাতীয় চেতনার ফসল। এ উত্সব আজকাল আর শুধুই গ্রামে পড়ে নেই; শহরের নামী-দামি জীবনেও এর প্রভাব রয়েছে। নবান্ন উত্সব বাংলার মানুষের কাছে এক অতি আপন সংস্কৃতি, যা বাঙালি মননের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একটি লোকজ মেলা
বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান উপকরণ লোকজ মেলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ একাকার হয়ে মুখরিত হয় মেলাপ্রাঙ্গণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ লোকজ বিভিন্ন উপাদানের প্রাচুর্য। এখানে দেশীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, মুড়কি, খই, নানা রকমের গুড়, বাতাসা, ছানা, সন্দেশ, মণ্ডা, মিঠাই, দই প্রভৃতি। কুমারদের হাতে বানানো ছোট ছোট নানা ধরনের তৈজসপত্রের মধ্যে উলে্লখযোগ্য নানা রকমের মাটির তৈরি পশুপাখি, মাটির ব্যাংক, লবণের পাত্র, মটকা, নানা রকমের মাটির পুতুল, খেলনাসামগ্রী। এ ছাড়া কামারের তৈরি দা, ছুরি, বঁটি, পানের বাটা থেকে শুরু করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন এমন অনেক কিছু। হস্তজাত বস্ত্রশিল্পের দোকানে পাওয়া যায় সুতি কাপড়, রেশম কাপড়, কাতান, জামদানিসহ নানা রকম শাড়ি, লুঙ্গি, থেকে শুরু করে হাল আমলের থ্রি-পিস, ছেলেদের পাঞ্জাবি সবই। তবে এই দোকানগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো নকশিকঁাথা। আসবাবপত্রের দোকানে পাওয়া যাবে গতানুগতিক ধারার বাইরের নানা রকম ডিজাইনের বা খোদাই করা কাঠের আসবাব। যেমন দরজা, খাট প্রভৃতি। এসব দোকানে নানা রকম অলংকৃত বাদ্যযন্ত্রও পাওয়া যায়। যেমন সারিন্দা, ঢোল প্রভৃতি। মেলায় পুতুল নাচের ব্যবস্থা থাকে। একপাশে বিশাল মঞ্চে বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত যেমন জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি, মুর্শিদি, লোকনৃত্য, লোকনাট্য, যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়। লোকজ মেলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় আধুনিক পণ্যের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় লোকজ সংস্কৃতি, লোকজ গান। এ মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। লোকজ মেলা আমাদের জাতীয় জীবনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শীতের সকাল
ছয়টি ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর মধ্যে শীতের অবস্থান হেমন্তের পর আর বসন্তের আগে। গাছের ঝরা পাতায় ঘটে শীতের আগমন আর বসন্তের নতুন পাতা জাগিয়ে ঘটে শীতের বিদায়। শীতকাল এ দেশের প্রকৃতির অন্য রকম রূপ, যা সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে শীতের সকাল। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর পরিবেশকে করে মনোরম। যখন এই কুয়াশার চাদর ভেদ করে চারদিকে রুপালি আলো ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাড়িঘর, গাছপালা ও প্রকৃতি ঝলমল করে ওঠে। শীতের সকালে নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। সকাল বেলার রোদে পিঠা খাওয়ার যে আনন্দ, তা সব আনন্দকেই ছাড়িয়ে যায়। এই আনন্দ চারপাশে উত্সবের সমারোহ তৈরি করলেও শীতের সকাল বেলাটা মানুষ লেপ-কাঁথার নিচেই কাটাতে ভালোবাসে। শীতের সকাল অলস আর উত্সবের আমেজে উপভোগ্য হলেও গরিবদের জন্য তা ঠিকই কষ্টের। সূর্যের আলোর তীব্রতা বাড়লে দূর হয় শীতের সকালের আমেজ। শীতের সকাল প্রকৃতিকে এক পবিত্র সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে, যা ছড়িয়ে থাকে সারা বেলা।

যানজট
যানজট হচ্ছে গাড়ি বা যানবাহনের জট। রাস্তার যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পেরে যে অস্বাভাবিক জটের সৃষ্টি হয়, তা-ই যানজট। যানজট বাংলাদেশের শহরগুলোর এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়েছে দেশের রাজধানী ঢাকায়। যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার ঢাকার প্রতিটি মানুষ। ঢাকা বাংলাদেশের মূল কেন্দ্র। তাই দেশের সব শ্রেণির মানুষ ঢাকা শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ছে, যা তৈরি করছে যানজট। এ ছাড়া রাস্তার স্বল্পতা, অপ্রশস্ততা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর ট্রাফিক আইন অমান্য করাই হচ্ছে ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ। আর যানজটের ফলে প্রায়ই মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রয়োজনীয় কাজ নির্ধারিত সময়ে করা সম্ভব হয় না, যা ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনসহ রাষ্ট্রীয় জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যানজট দূর করার জন্য সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইন, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে পালন করাই হতে পারে এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ। রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে যানজট সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের কুটির শিল্প
বাংলাদেশের কুটির শিল্পের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। কম মূলধনে কিছুসংখ্যক মানুষের শ্রমে ঘরে বসে উত্পাদিত পণ্যকে কুটির শিল্প বলে। এর উত্পত্তি গৃহ বা পরিবারকেন্দ্রিক এবং অবসর সময়ে কম অর্থ ব্যয়ে পরিচালিত। যদিও বর্তমান সময়ে অনেক কুটির শিল্পজাত পণ্য কারখানায় উত্পাদিত হচ্ছে। এ দেশের কুটির শিল্পের অতীতের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। ইউরোপে আঠারো শতকে শিল্প-বিপ্লবের আগে কুটির শিল্পই ছিল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। এ দেশে ইংরেজ আমলের আগে কুটির শিল্প বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। ঢাকাই মসলিনের খ্যাতি পৃথিবীজুড়ে ছিল। আমাদের দেশে এখনো মৃিশল্প, তাঁতশিল্প, অলংকার শিল্পসহ বাঁশ, বেত, কাঠ ও পিতল-কাঁসার তৈজসপত্র ইত্যাদি কুটির শিল্পজাত পণ্য উত্পাদিত হয়। এ ছাড়া পাটের তৈরি সামগ্রীসহ রেশম শিল্প ও খাদি শিল্প উল্লেখযোগ্য। কিন্তু শিল্প-বিপ্লবের প্রবল আধিপত্যে কুটির শিল্প এখন হুমকির মুখে। অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামিনের বাসনপত্র মৃিশল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পিতল-কাঁসার জিনিসপত্র এখন লোকে ব্যবহার করে না। এ ছাড়া বিদেশি পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং কলকারখানায় উত্পাদিত পণ্য তুলনামূলক কম দামের কারণে মানুষ এখন কুটির শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাই কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এই শিল্প রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি ও সংরক্ষণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই কুটির শিল্পের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে আসবে।


No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post