ইতিহাসের প্রথম আইনজীবীকে খুঁজতে হলে একশত দুইশত বছর আগে নয় পাক্কা ২৫০০ বছর আগে চলে যেতে হবে । প্রাচীন ইরাকের বিখ্যাত শহর সেই ব্যবিলনে । যা শাসিত হতো আসিরীয় সম্রাট নেবুচাঁদনেজারের হাতে । তাদের লোকাল বিচার ব্যবস্থা ছিল অনেকাংশে আমাদের মতই । গ্রাম্য পঞ্চায়েত বা ইউনিয়ন পরিষদ মতো ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে বিচার কার্য চালানো হতো ‘কাউন্সিল অব এল্ডার্স’ তথা স্থানীয় মুরব্বীদের দিয়ে ।
.
এই নগরীর এক অংশে সুজানা নামক এক অপূর্বা রমণীর বসবাস । যার রূপ , সৎচরিত্র ও ধার্মিকতা ছিল সর্বজনবিদিত । তাঁর স্বামী , মাতা-পিতা , শ্বশুর- শাশুড়ি নিয়ে তার সুখের সংসার । ঘটনাক্রমে তাঁর উপর দুই কাউন্সিল অব এল্ডার্সের সদস্যের কুদৃষ্টি পড়ে । ঘটনাক্রমে সুজানা পার্শ্ববর্তী এক বাগানবাড়িতে স্নান করছিলেন । তার ব্যক্তিগত দাসীর অনুপস্থিতিতে তারা তাকে কুপ্রস্তাব দেন । সুজানা স্বাভাবিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন । ফলে তারা তাকে ধর্ষণে উদ্যত হলে সুজানা চিৎকার করলে তারা পালিয়ে যান এবং পরে তাকে দেখে নেওয়া হবে হুমকি দেওয়া হয় ।
.
পরবর্তীতে 'কাউন্সিল অব এল্ডার্স' সুজানার বিরুদ্ধে নিজেদের আদালতে ব্যভিচারের অভিযোগ আনে এবং উক্ত দুই সদস্য নিজেরাই মামলার চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে বলেন, সুজানা জনৈক যুবকের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হবার দৃশ্যটি তারা স্বচক্ষে দেখেছেন এবং তাতেই সুজানাকে দোষী মর্মে রায় প্রচার করা হয় । ব্যস আর যায় কই ! এতদিন যারা সুজানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আজ তারই বিনা প্রশ্নে সুজানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে । সে যুগে নারীদের ব্যভিচারের শাস্তি ছিল পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা (এই যুগে ব্যভিচারের শাস্তি হয় কেবল পুরুষের) । সেদিন পুরো ব্যাবিলন নগরী চলে এসেছিল তাদের কথিত (!) সৎ-ধার্মিক সুজানার মৃত্যু দেখতে । সেদিন কেউ কোন প্রশ্ন তুলেনি । সুজানার স্বামীও কোন প্রতিবাদ করেনি । জনতার উল্লাসধ্বনির মাঝে হঠাতই দানিয়েল নামক এক যুবক চিৎকার করে বললেন -'আমি বিশ্বাস করি না সুজানা অপকর্মটি করেছেন ।' জনতার উল্লাসধ্বনি থেমে গেল । দানিয়েল এই দুই 'কাউন্সিল অব এল্ডার্স'-এর সদস্যকে পৃথকভাবে কিছু প্রশ্ন করার অনুমতি চান । জনগণ অনুমতি দিল ।
.
দানিয়েল উভয় জনকে পৃথকভাবে দুটো প্রশ্ন করলেন । তারা সুজানাকে কখন এবং কোথায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে দেখেছেন। উত্তরে একজন জানালেন 'তিনি চাঁদনী রাতে একটি গাছের নিচে সুজানাকে অপকর্ম করতে দেখেছেন । এরপর দ্বিতীয়জন জানালেন 'দিনের আলোতে ফসলের মাঠে অপকর্মটি হয়েছিল। যথারীতি উপস্থিত জনতা ক্ষোভ ফেটে পড়ল। জনগণের চাপে উক্ত দুই বৃদ্ধকেই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয় । এইভাবেই দুই চরিত্রহীন এবং লম্পট বৃদ্ধের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সাক্ষ্যগ্রহণের পদ্ধতি ।
.
সর্বশেষঃ এই বিখ্যাত ঘটনাটি লিখা আছে বাইবেলে ।
ঐতিহাসিকগণ তাকে একজন সাহসী যুবক হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাঁকে স্রষ্টা প্রেরিত বিশেষ মানব বলে এবং মুসলমানেরাও তার অবদান স্বীকার করেন।
অন্যদিকে আইন বিজ্ঞানের শিক্ষক,আইন পেশার লোকজন এবং বিচারাঙ্গনের বিচারকগণ তাকে লিখিত ইতিহাসের নির্ভীক মানবিক সাহস সম্পন্ন একজন স্পষ্টভাষী বাকপটু মানুষরূপে মানব জাতির প্রথম আইনজীবী হিসেবে সম্মান দেন।
.
💜ভালোবাসা রইলো পৃথিবীর প্রথম আইনজীবী দানিয়েলের প্রতি💜
#সংগৃহীত_পোস্ট
Ad-1
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
মিষ্টি আলুর উপকারিতা
মিষ্টি আলুঃ "বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়ানোর সেরা খাবার" বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য মিষ্টি আলু একটি বিশেষ খাবার। এটি শুধু বাচ্চ...

Most Popular Post
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
-
অর্থালঙ্কার: অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ: অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা: ১. সাদৃশ্যমূলক ২. বিরোধমূলক ৩. শৃঙ্খলামূলক ৪. ন্যায়মূলক ৫. গূঢ়ার্থ...
-
উত্তর 'অ' ধ্বনির উচ্চারণ অ-এর মতো হলে তাকে অ-বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ বলে।অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে ঠোঁট তেমন বাঁকা বা গোল হয় না।যে...
-
১. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ , ৪ নং ক্রমিকের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের দেশের সরল মানুষ কামার , কুমার , জেলে-চ...
No comments:
Post a Comment