পৃথিবীকে আলোকিত করেছিল যে আন্দালুস আজ তা কালের গর্ভে অতীত! চাপা পড়ে গেছে ইতিহাসবিকৃতির চাদরে ।
জ্ঞান চর্চায় আধুনিক সভ্যতার ভিত তৈরিতে আন্দালুস ছিল ইতিহাস শ্রেষ্ঠ ।
৪১৯ হিজরি। ১০২৮ খ্রিষ্টাব্দ। আন্দালুসের মসনদে সমাসীন খলিফাতুল মুসলিমিন হিশাম আল-মুআয়্যিদ (তৃতীয় হিশাম)। ইংল্যান্ডের সম্রাট দ্বিতীয় জর্জ এর পক্ষ থেকে খলিফার কাছে একটি পত্র এল। পত্রে ইংল্যান্ড সম্রাট খলিফা হিশামের কাছে অনুমতি চাচ্ছেন--ইংল্যান্ড থেকে আন্দালুসে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করবেন। এ দল আন্দালুসের জ্ঞানবিজ্ঞান, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতিকল্প সম্পর্কে জানবে, অবগত হবে। পরে উপকৃত হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যাবে। খলিফা হিশাম সম্মতি প্রদান করলেন।
ইংল্যান্ড থেকে ২১৫জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি প্রতিনিধিদল আগমন করল আন্দালুসে। তৎকালীন সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার স্বর্গরাজ্যে। তারা গোটা আন্দালুসে ছড়িয়ে পড়ল। আহরণ করতে লাগল মুসলিমদের কাছে জ্ঞানের মধু। বর্ণনায় পাওয়া যায়, ওই প্রতিনিধিদলের আটজন ব্যক্তি ইসলামের সুমহান আদর্শ এবং জ্ঞানশিল্পে আকৃষ্ট হয়ে ইসলামগ্রহণ করে ফেলেন। আন্দালুসের মাটি ও মানুষকে তারা এতোই ভালোবেসে ফেলেন যে, তারা আর ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে চাননি!
আশ্চর্যজনক কথা হলো, প্রতিনিধিদলের ইসলামগ্রহণকারী ওই আটজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন যুবতী। তাদের প্রত্যেকেই আন্দালুসের নামকরা তিনজন আলিমকে বিয়ে করেছিলেন। এভাবেই তারা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত তিনটি সংসার গড়েছিলেন!
ইউরোপের অপরাপর সম্রাটরাও নিজ নিজ প্রতিনিধিদল প্রেরণ করতে লাগলেন। যার যার দেশের ভবিষ্যৎপ্রজন্মকে, জ্ঞানের তীর্থস্থান থেকে জ্ঞানীগুণী করে গড়ে তুলতে। সেই ধারাবাহিতায় সম্রাট উইলস তার ভাতিজির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করলেন। এই প্রতিনিধিদলে ছিল বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ১৮জন যুবতী। তারা একটি চিঠি বহন করে আন্দালুসের মাটিতে পদার্পণ করেছিল। চিঠিটি হলো এই--
"আমরা শুনেছি সেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উন্নত সভ্যতার কথা, যা দ্বারা আপনাদের এই মহান দেশের বিদ্যাপীঠ ও শিল্পকারখানাগুলো সর্বদা উপকৃত হয়ে চলছে। সুতরাং আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এসব জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পের আলো আহরণ করানোর ইচ্ছা করেছি। যাতে করে আপনাদের পদাঙ্ক অন্যসরণ করে এটা একটা সুন্দর উদ্যোগ হতে পারে আমাদের এমন দেশে, যে দেশে চারিদিক থেকে মূর্খতার অন্ধকার ছেয়ে নিয়েছে!"
আজ স্পেন আছে, কিন্তু আমাদের সেই আন্দালুস নেই! নেই আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্গরাজ্য! পশ্চিমারা আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান কুড়িয়ে নিয়ে আজ তারাই বিজ্ঞানী! তারাই সভ্য! আর আমরা...! আমরা তাদের উচ্ছিষ্টভোজী! জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও সভ্যতা শিখতে আজ আমরাই তাদের দেশে পাড়ি জমাই! আহ, আন্দালুস! আমাদের হারানো ফিরদাউস !
------
সূত্র: 📚الأندلس بوابة التواصل الحضاري العربي الإسلامي ـ الأوروبي: ড. নাহলাহ শিহাব আহমাদ, মসুল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাক। গবেষণালব্ধ থিসিস।
Ad-1
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Recent Post
সুভা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...
Most Popular Post
-
বাংলা ছন্দ ছন্দ: কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ...
-
অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে...
-
উত্তর 'অ' ধ্বনির উচ্চারণ অ-এর মতো হলে তাকে অ-বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ বলে।অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে ঠোঁট তেমন বাঁকা বা গোল হয় না।যে...
-
নৌকাডুবি (১৯০৬) চরিত্র ও তথ্য সমূহ ১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/ ২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/ ৩. কমলাঃ ৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ * গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড়...
-
উত্তর: অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিম্নরুপ।যথা: ১. 'অ'অথবা নিহিত 'অ'-ধ্বনির পর ই-কার বা উ-কার হলে, তবে অ-ধ্বনির উচ্চারণ...
-
অর্থালঙ্কার: অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ: অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা: ১. সাদৃশ্যমূলক ২. বিরোধমূলক ৩. শৃঙ্খলামূলক ৪. ন্যায়মূলক ৫. গূঢ়ার্থ...
-
উত্তর: তৎসম শব্দে মূর্ধন্য-ণ এর ব্যবহারের নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলে।নিম্নে এর পাঁচটি নিয়ম বর্ণনা দেওয়া হলো... ১. ঋ,র,ষ এরপর মূর্ধন্য-ণ হয়। ...
No comments:
Post a Comment