সফলদের ভাইভা অভিজ্ঞতা
৩৮তম_বিসিএস'র_ভাইভা_অভিজ্ঞতা।
MJ Shohel
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সম্পর
বোর্ডঃ কাজী সালাহউদ্দিন আকবর
তারিখঃ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মৌখিক পরীক্ষার ক্রমঃ ২
আনুমানিক ব্যাপ্তিঃ ৪০-৪৫ মিনিট
সুপারিশঃ পুলিশ ক্যাডার (কোটা নেই)
উল্লেখ্যঃ মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা আগে কোন গ্রুপে ভাগাভাগি করিনি কারণ আমার বাসার লোকজন এমনকি বন্ধুবান্ধবও ঠিকমত জানত না যে আমি বিসিএসে অংশ নিচ্ছি। সেটা জানাতে না চাওয়ার অনেকগুলো একান্ত ব্যক্তিগত কারণ ছিল। আমি মৌখিক পরীক্ষার পুরো সময়ে খুব স্বাভাবিক থেকে কথাবার্তা বলেছি। যা পারিনি তা অকপটে স্বীকার করেছি এবং আমি কোন ধরণের স্নায়ুচাপে ভুগিনি। আমার ৮০ ভাগ প্রশ্নোত্তর ছিল ইংরেজিতে আর বাকি ২০ ভাগ ছিল নিজের লেখালেখি, সাহিত্য, সংগীত, সিনেমা, জীবনদর্শন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বাংলায়। এখানে কিছুটা সংক্ষিপ্ত ও মার্জিত আকারে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা দিকটি তুলে ধরলাম যদি ভবিষ্যতে কারো কাজে লাগে।
#####
১. প্রথম পছন্দ কী?
উঃ ফরেন ( তারপর পুলিশ, এডমিন...)
২. আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন সম্পর্কে বলেন
উঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মডেল ইউ ইন এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট ছিলাম, বিভাগের ব্যাচের ক্রিকেট ও ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম, ৪-৫ টা দেশে ঢাবি কে প্রতনিধিত্ব করেছি, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে ৩ বছর বিভিন্ন কাজ করেছি, অবসরে সিনেমা দেখেছি, গান শুনেছি আর লেখালেখি করেছি ইত্যাদি।
৩. এত কিছু সব কিভাবে করেছেন? [একটু হেসে]
উঃ ইচ্ছা ছিল সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করার। নিজের মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছি, আর নিজের সামর্থ্যের দিকটি খুজে বের করার চেষ্টা করেছি দেখেই সব করার চেষ্টা করেছি। তবে নিজের রেজাল্টটা ঠিক রাখার কথা ভুলিনি।
৪. এখন কী করেন?
উঃ কো-অর্ডিনেটর (ম্যানেজার) হিসেবে গত মাসে ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগ দিলাম। তার আগে ব্র্যাকের (এনজিও) স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ম্যানেজার হিসেবে সাড়ে তিন বছরের মত কর্মরত ছিলাম। পাশাপাশি ঢাকাতে একটা ব্যবসা আর গ্রামে সমন্বিত একটা খামারের কাজ শুরু করেছি।
৫. সিভিল সার্ভিসে তো এত কাজ নেই। আপনি সময় কাটাবেন কিভাবে? [সবাই হেসে]
উঃ নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকব, যা আমি ছাত্রজীবন থেকে করে যাচ্ছি। সিভিল সার্ভিসে গেলে সেই সুযোগ আরো প্রসারিত হবে বলে আশা করি।
৬. একটা দেশে আপনাকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালে কী কী করবেন?
উঃ দেশের সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষা, পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন, ব্যবসায়িক স্বার্থ, বিভিন্ন ফোরামে উভয় দেশের বন্ধুত্ব রক্ষা, আমার দেশে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করব ইত্যাদি।
৭. মিডিয়া কে জানাবেন না?
উঃ জি স্যার। অবশ্যই জানাব৷
৮. নিউজ উইক, টাইমস, এপি, এফপি ইত্যাদি কোথা থেকে প্রকাশিত হয় বলেন।
উঃ বললাম (সব ঠিক মত হয়নি)।
৯. ক্যালিফোর্নিয়া, লসএঞ্জেলেস জায়গাগুলো কোথায়?
উঃ যুক্তরাষ্ট্রে (কোন পাশে ও কী জন্য বিখ্যাত বললাম)।
১০. অবসরে আপনার কী করতে ভাল লাগে?
উঃ লেখালেখি করতে, গান শুনতে ও ঘুরে বেড়াতে।
১১. ফেসবুকেই লেখেন নাকি বই আছে?
উঃ ২০১৬ সালে বইমেলায় একটা কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ম্যাগাজিনে কবিতা ও ছোট গল্প লিখি।
১২. প্রপকাশিত বইয়ের নাম কী, বাংলায় বলেন?
উঃ অন্তর্দাহ।
১৩. কী ধরনের গান শোনেন?
উঃ প্রায় সব ঘারানার তবে ক্ল্যাসিকাল ও গজল বেশি ভাল লাগে। আর এখন শুনি ইন্সট্রুমেন্টাল; পার্সিয়ান নাই, টারকিশ ও এরাবিক বাদ্যযন্ত্র, আর্মেনিয়ান দুদুক, ইয়ান্নি ইত্যাদি।
১৪. আর্মেনিয়ান দুদুক- সেটা আবার কী?
উঃ এক ধরনের বাশি যা প্রায় সহস্র বছর পুরাতন যেটা আর্মেনিয়া ও তার আশেপাশের দেশে প্রচলিত।
১৫. 'ইয়ান্নি' মানে যে পিয়ানো বাজায়?
উঃ জি।
১৬. ব্রেক্সিট নিয়ে বলেন?
উঃ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক সহ বিস্তারিত বললাম।
১৭. ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নাম কী বললেন?
উঃ বরিসন ( উনারা একটু ভড়কে গেছে এবং হেসে ফেলেছিলেন। পরে শুধরে নিয়ে বললাম যে স্যার অনেক্ষণ থাকায় একটু হঠাৎ করে ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গেছি। পরে কাজী স্যার বলে দিলেন যে বরিস জনসন)।
১৮. গ্রেট ব্রিটেন ও ইউকে'র পার্থক্য বলেন।
উঃ গ্রেট ব্রিটেন- ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস্ এবং
ইউকে- গ্রেট ব্রিটেন প্লাস নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড।
১৯. ইয়েমেনে কী হচ্ছে?
উঃ বিদ্রোহ (বিস্তারিত আলোচনা করলাম)।
২০. প্রেসিডেন্টের নাম কী লেখেন।
উঃ Mansoor Hadi ( হবে Mansur Hadi)।
২১. কোথায় তিনি এখন?
উঃ সৌদি আরবে।
২২. হুতিদের প্রধানের নাম কী?
উঃ আলি আল হুতি (পারিনি)।
২৩. রাজধানী কাদের নিয়ন্ত্রণে?
উঃ হুতিদের।
২৪. আল কায়েদা কি হুতিদের সাথে?
উঃ না (বিস্তারিত বললাম)।
২৫. এখন বিশ্বে কি কোথাও 'ঘোষিত যুদ্ধ' চলছে?
উঃ পারিনি।
২৬. আপনি কার বই পড়েন?
উঃ জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তলস্তয়, দস্তোয়েভস্কি, নেরুদা, গার্সিয়া মার্কেজ, পাউলো কুয়েলহো ইত্যাদি।
২৭. শেষ কোন বইটি পড়েছেন?
উঃ দ্যা আলকেমিস্ট।
২৮. 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে"- কার লেখা?
উঃ কুসুম কুমারী দাস
২৯. উনার আর কোন পরিচয় আছে?
উঃ জি। জীবনানন্দ দাসের মা।
৩০. 'আলোকিত মানুষ' কিসের স্লোগান?
উঃ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের। আমি স্কুল জীবনে প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত ছিলাম।
৩১. মানুষ হয়ে জন্মালেই 'মানুষ' হওয়া যায় না'কি? বাংলায় বলেন। আপনার দর্শন কী এক্ষেত্রে
উঃ বিস্তারিত বললাম (উনারা পছন্দ করলেন)।
৩২. দুই জন কবিও এই নিয়ে বলেছেন। কী বলেছেন তারা?
উঃ কাজী নজরুল ইসলাম এবং...... বড়ু চন্ডীদাস (এটা বলে দিলেন)।
৩৩. এমিগ্র্যান্ট আর ইমিগ্র্যান্ট এর পার্থক্য বলেন।
উঃ যে দেশ থেকে যায় ও যে দেশে যায় তার উপরে নির্ভর করে এমিগ্র্যান্ট ও ইমিগ্র্যান্ট বলা হয় (বিস্তারিত বললাম)।
৩৪. অভিবাসীদের সমস্যার জন্য কী করবেন যদি রাষ্ট্রদূত হন?
উঃ বিস্তারিত আলাপ করলাম।
৩৫. পালেরমো কোথায়?
উঃ পারিনি (বলে দিলেন ইতালি)।
৩৬. তার মানে আপনি ভাইভার জন্যই এখন এত পড়েছেন, আগে খুব একটা পড়েন নি?
উঃ জি স্যার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সট্রা কারিকুলামে খুব বেশি যুক্ত ছিলাম দেখে খুব একটা পড়ালেখা করিনি। বিসিএস এর ভাইভার জন্যই এই ধরণে
৩৭. আই.আর কী পেয়েছেন তাই পড়েছেন?
উঃ না। মেডিকেলে পড়ার সুযোগ ছিল, ডি-ইউনিট এর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিজনেস ফ্যাকাল্টির সাবজেক্ট নেবার সুযোগ ছিল কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি আমার ভাল লাগত তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় আমি এই বিষয়ে (IR) পড়েছি।
৩৮. কেন আই.আর নিলেন খুলে বলেন?
উঃ ভাল লাগার একটা বিষয় ছিল আর আমার ইচ্ছা- হয় পররাষ্ট্রে নয় জাতিসংঘে চাকুরী করব।
৩৯. মা-বাবা আর ভাই-বোন কী করে?
উঃ মা গৃহিনী, বাবা শিক্ষক ছিলেন, ভাই ঢাকা মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক, দুই বোন শিক্ষক আর এক বোন গৃহিনী।
৪০. ফ্রেন্স ভাষায় কিছু বলেন।
উঃ অল্প একটু বলে জানালাম আমি স্প্যানিশ ও চাইনিজের কোর্সও করেছি।
৪১. স্প্যানিশ কেন শিখেছেন?
উঃ ফরেন ক্যাডার বা জাতিসংঘে চাকুরী করার জন্য।
৪২. ডিপ্লোম্যাটের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার?
উঃ সবিস্তারে বললাম।
৪৩. বিদেশে গিয়ে কিভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন?
উঃ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছি; কখনো প্রতিনিধি হিসেবে আবার কখনো বিচারক হিসেবে।
৪৪. লাহোর প্রস্তাব নিয়ে বলেন।
উঃ বিস্তারিত বললাম।
৪৫. কেন 'দেশ সমূহ' থেকে 'দেশ' হয়ে গেল?
উঃ রাজনীতির দিকটি বেশি করে উল্লেখ করে উত্তর দিলাম।
৪৬. ভারত ভাগ হয় কিসের ভিত্তিতে? তত্ত্বটা কী?
উঃ Two Nations Theory (দ্বি-জাতি তত্ত্ব)
৪৭. আপনি আসলে কী করতে চান, আপনার জীবনের লক্ষ্য কী?
উঃ আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই তা সে যে পেশাতেই থাকি না কেন।
৪৮. আপনার বিভাগের চেয়ারম্যান কে আর আপনার সময় কে ছিলেন?
উঃ বললাম।
৪৯. কোন হলে থাকতেন?
উঃ শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল।
৫০. প্রথমবার এলেন না'কি আগেও এসেছেন?
উঃ আগেও একবার ভাইভা দিয়েছি। কিন্তু নন-ক্যাডারে যোগদান করিনি।
৫১. কী হয়েছিল আর কার বোর্ডে ছিলেন সেবার?
উঃ আনোয়ারা ম্যাডামের বোর্ডে ছিলাম এবং ভাইভাতে একটু এলোমেলো বলে ফেলেছিলাম। ( সে আরেক ইতিহাস ভাই!)
৫২. এক্সটার্নালঃ আপনি সব ভাসা ভাসা জানেন, আর একটু ভাল করে পড়লেই আরো ভাল করতে পারতেন। ব্যস্ততার জন্য কম পড়েন?
উঃ জি স্যার।
এরপর কাজী সালাহউদ্দিন স্যার বোর্ডের বাকিদের দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, "Civil Service needs people like you. Jack of all trades." বাকি সবার দিকে তাকিয়ে ও সম্মতি নিয়ে আবার বললেন, "You may go now."
সবাইকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
No comments:
Post a Comment