Ad-1

Tuesday, October 6, 2020

সারাংশ / সারমর্ম

 সারমর্ম

১. সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম, মা গো,তোমায় ভালোবেসে ॥
জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রানীর মতন,
শুধু জানি আমার অঙ্গজুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে ॥
কোন্‌ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,
কোন্‌ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,
ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে ।

২. কবি, তবে উঠে এসো যদি থাকে প্রাণ
তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো আজি দান।
বড় দুঃখ, বড় ব্যথা, সম্মুখেতে কষ্টের সংসার
বড়ই দরিদ্র, শূন্য, বড় ক্ষুদ্র, বন্ধ অন্ধকার।
অন্ন চাই প্রাণ চাই আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহস বিস্তৃত বক্ষপট। এ দৈন্য মাঝারে কবি
একবার নিয়ে এসো স্বর্গ হতে বিশ্বাসের ছবি।

৩. পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

৪. হউক সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান,
অসীম ক্ষমতা তার অতুল সম্মান,
হউক বিভব তার সম সিন্ধু জল
হউক প্রতিভা তার অক্ষুণ্ন উজ্জ্বল
হউক তাহার বাস রম্য হর্ম্য মাঝে
থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে
হউক তাহার রূপ চন্দ্রের উপম
হউক বীরেন্দ্র সেই যেন সে রোস্তম
শত শত দাস তার সেবুক চরণ
করুক স্তাবক দল স্তব সংকীর্তন।
কিন্তু যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত
স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ
জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর,
অতীব ঘৃণিত সেই পাষণ্ড বর্বর।

৫. বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।

৬. নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভাল,
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আঁলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে, বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মত থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে,
সাধক জনে নিস্তারিতে তার মত কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ্বমাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুকে সে বেঁচে থাকুক বিশ্ব হিতের তরে;
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।

৭. একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা একজন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ।

৮. কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়ে ঘরে।

৯.  তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর,
ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর।
বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙে লয়,
তরু তবু অকাতর কিছু নাহি কয়।
দুর্লভ মানব জন্ম পেয়েছে যখন,
তরুর আদর্শ কর জীবনে গ্রহণ।
পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন,
তুমি ও হয় গো ধন্য তরুর মতোন।

১০. আসিতেছে শুভ দিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।
হাতুড়ি-শাবল-গাইতি চালায়ে ভাঙ্গিল যারা পাহাড়,
পাহাড় কাটা সে পথের দুপাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে সেবিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগল ধূলি,
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।

১১. বসুমতী কেন তুমি এতই কৃপণা?
কত খোঁড়া খুঁড়ি করে পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা প্রসন্ন সহাস,
কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস?
বিনা চাষে শস্য দিলে কি তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে বসুমতি-
আমার গৌরব তাতে সামান্যই বাড়ে,
তোমার গৌরব তাহে একেবারে ছাড়ে।

সারাংশ

১. জাতিকে শক্তিশালী, শ্রেষ্ঠ, ধন-সম্পদশালী, উন্নত ও সুখী করতে হলে শিক্ষা ও জ্ঞান বর্ষার বারিপাতের মতো সর্বসাধারণের মধ্যে সমভাবে বিতরণ করতে হবে। দেশে সহজ ও সরল ভাষায় নানা প্রকারের পুস্তক প্রচার করলে এ কাজ সিদ্ধ হয়। শক্তিশালী দৃষ্টিসম্পন্ন মহাপুরুষদের লেখনীর প্রভাবে একটি জাতির মানসিক ও পার্থিব অবস্থার পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে সংশোধিত হয়ে থাকে। দেশের প্রত্যেক মানুষ তার ভুল ও কুসংস্কার, অন্ধতা ও জড়তা, হীনতা ও সংকীর্ণতাকে পরিহার করে একটি বিনয়-মহিমোজ্জ্বল উচ্চজীবনের ধারণা করতে শেখে; মনুষ্যত্ব ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করাই ধর্ম মনে করে; আত্মমর্যাদা জ্ঞানসম্পন্ন হয় এবং গভীর দৃষ্টি লাভ করে। তারপর বিরাট জাতির বিরাট দেহে শক্তি জেগে ওঠে।

২.  মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। বস্তুত চরিত্রবলেই মানুষের জীবনে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, সে শুধু চরিত্রের জন্য। অন্য কোনো কারণে মানুষের সামনে নত হওয়ার দরকার নেই। জগতে যেসব মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের গৌরবমূলে এই চরিত্রশক্তি। তুমি চরিত্রবান লোক, এ কথার অর্থ এই নয় যে তুমি লম্পট নও, তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করো; তুমি পর দুঃখে কাতর, ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতা প্রিয়। চরিত্রবান মানে এই।

৩. অভ্যাস ভয়ানক জিনিস— একে হঠাৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন। মানুষ হওয়ার সাধনাতেও তোমাকে ধীর ও সহিষ্ণু হতে হবে। সত্যবাদী হতে চাও? তাহলে ঠিক কর সপ্তাহে অন্তত একদিন মিথ্যা বলবে না। ছমাস ধরে এমনি করে নিজে সত্য কথা বলতে অভ্যাস কর। তারপর এক শুভদিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা কর, সপ্তাহে তুমি দুদিন মিথ্যা বলবে না। এক বছর পরে দেখবে সত্য কথা বলা তোমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়েছে। সাধনা করতে করতে এমন একদিন আসবে যখন ইচ্ছা করলেও মিথ্যা বলতে পারবে না। নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাৎ জয়ী হতে কখনো ইচ্ছা কর না— তাহলে সব পণ্ড হবে।

৪. নিন্দা না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের গৌরব কি থাকিত? একটা ভালো কাজে হাত দিলাম, তাহার নিন্দা কেহ করে না, সেই ভালো কাজের দাম কী? একটা ভালো কিছু শিখিলাম, তাহার নিন্দুক কেহ নাই, ভালো গ্রন্থের পক্ষে এমন মর্মান্তিক অনাদর কী হইতে পারে? জীবনকে ধর্মচর্চায় উত্সর্গ করিলাম, যদি কোনো মন্দ লোক তাহার মধ্যে মন্দ অভিপ্রায় না দেখিল, তবে সাধুতা যে নিতান্তই সহজ হইয়া পড়িল। মহত্ত্বকে পদে পদে নিন্দার কাঁটা মাড়াইয়া চলিতে হয়। ইহাতে যে হার মানে, বীরের সংগতি সে লাভ করে না। পৃথিবীতে নিন্দা দোষীকে সংশোধন করিবার জন্য আছে তাহা নহে; মহত্ত্বকে গৌরব দেওয়া তাহার একটা মস্ত কাজ।

৫. ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই হলো জ্ঞানীর কাজ। পিঁপড়া, মৌমাছি পর্যন্ত যখন ভবিষ্যতের জন্য ব্যতিব্যস্ত, তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। ফকির-সন্ন্যাসী যে ঘরবাড়ি ছেড়ে আহার-নিদ্রা ভুলে পাহাড়-জঙ্গলে চোখ বুজে বসে থাকে, সেটা যদি নিতান্ত গঞ্জিকার কৃপায় না হয়, তবে বলতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে। সব জীবজন্তুর দুটি চোখ সামনে থাকার মানে হলো ভবিষ্যতের দিকে যেন নজর থাকে। অতীতের ভাবনা ভেবে লাভ নেই। পণ্ডিতেরা তো বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি।’ আর বর্তমান সে তো নেই বললেই চলে। এই যেটা বর্তমান, সে-ই এই কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে গেল। কাজেই তরঙ্গ গোনা আর বর্তমানের চিন্তা করা, সমানই অনর্থক। ভবিষ্যত্টা হলো আসল জিনিস। সেটা কখনো শেষ হয় না। তাই ভবিষ্যতের মানব কেমন হবে, সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত।

৬. বাল্যকাল থেকে শিক্ষার অানন্দ নেই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক, তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি। তেমনি করিয়া কোন মতে কাজ চলে মাত্র, কিন্তু মনের বিকাশ হয় না। হাওয়া খাইলে পেট ভরেনা,আহার করিলে পাট ভরের,ককিন্তু আহারাদি রীতিমত করিবার জন্য হাওয়া আবশ্যক। তেমনি একটি শিক্ষা পুস্তককে রীতিমত হজম করিতে অনেকগুলো অপাঠ্য পুস্তকের সাহায্য আবশ্যক। ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে ডারিবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে।গ্রহণশক্তি, ধারণাশক্তি, চিন্তাশক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে বল লভ করে।

৭. কিসে হয় মর্যাদা? দামি কাপড়ে, গাড়িঘোড়া, না ঠাকুর-দাদার কালের উপাধিতে? না, মর্যাদা এসব জিনিসে নেই। আমি দেখতে চাই তোমার ভিতর, তোমার বাহির, তোমার অন্তর। আমি জানতে চাই, তুমি চরিত্রবান কি না, তুমি সত্যের উপাসক কি না? তোমার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোয়, তোমায় দেখলে দাস-দাসী দৌড়ে আসে, প্রজারা তোমায় দেখে সন্ত্রস্ত হয়, তুমি মানুষের ঘাড়ে চড়ে হাওয়া খাও, মানুষকে দিয়ে জুতা খোলাও, তুমি দিনের আলোতে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করো। বাপ-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি তোমায় আদর করেন, আমি তোমায় অবজ্ঞায় বলব—যাও।

৮. অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও—আমি বলতে চাই নে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর করো। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বলো। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুণ চাহনি নিক্ষেপ করো, তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান মানবতাসম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন।পরের দুঃখ ঢেকে রাখতে গৌরব বোধ করেন।

৯. তুমি জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করিতে চাও? কিন্তু সে জন্য তোমাকে প্রাণান্ত পরিশ্রম করিতে হইবে। মহত্ কিছু লাভ করিতে হইলে কঠোর সাধনার দরকার। তোমাকে অনেক দুঃখ সহ্য করিতে হইবে। অনেক বিপদ-আপদের সম্মুখীন হইতে হইবে। এইসব তুচ্ছ করিয়া যদি তুমি লক্ষ্যের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হইতে পার, তবে তোমার জীবন সুন্দর হইবে। আরো আছে। তোমার ভিতরে এক ‘আমি’ আছে। সে বড় দুরন্ত। তার স্বভাব পশুর মতো বর্বর ও উচ্ছৃঙ্খল। সে কেবল ভোগ-বিলাস চায়। সে বড় লোভী। এই ‘আমি’কে জয় করিতে হইবে। তবেই তোমার জীবন সুন্দর ও সার্থক হইয়া উঠিবে।

১০. জাতি শুধু বাইরের ঐশ্বর্যসম্ভার, দালান-কোঠার সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা সামরিক শক্তির অপরাজয়তায় বড় হয় না, বড় হয় অন্তরের শক্তিতে, নৈতিক চেতনায় আর জীবনপণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতায়। জীবনের মূল্যবোধ ছাড়া জাতীয় সত্তার ভিত কখনো শক্ত আর দৃঢ়মূল হতে পারে না। মূল্যবোধ জীবনাশ্রয়ী হয়ে জাতির সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লেই কেবল জাতি অর্জন করে মহত্ত আর মহত্ কর্মের যোগ্যতা। সবরকম মূল্যবোধের বৃহত্তম বাহন হচ্ছে ভাষা তথা মাতৃভাষা আর তা ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব লেখক আর সাহিত্যিকদের।

১১. শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর। কালি-ধুলার মাঝে, রৌদ্র-বৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও।বাবু হয়ে ছায়ায়, পাখার তলায় থাকার কোনো দরকার নেই। এ হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন। কাজের ভেতর কুবুদ্ধি, কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না। কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে, স্বাস্থ্য, শক্তি, আনন্দ, স্ফূর্তি সবই লাভ হয়। পরিশ্রমের পর যে অবকাশ লাভ হয় তা পরম আনন্দের অবকাশ। তখন কৃত্রিম আয়োজন করে আনন্দ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু চিন্তা দ্বারা জগতের হিতসাধন হয় না। মানব সমাজে মানুষের সঙ্গে কাজে, রাস্তায়, কারখানায়, ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে।

১২ . অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামী দিনের বোঝা অতীতের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যেকও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। আজই ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়। তাই অতীতের ও ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও আর শুরু করো দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে।



No comments:

Post a Comment

Recent Post

"শাকেই এত লাড়া, ডাল হলে ভাঙত হাঁড়ি, ভাসত পাড়া-পাড়া।" এই কথা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?

এই প্রবাদটি বোঝাতে চায় যে ছোটোখাটো বিষয়ে যদি এত ঝামেলা বা উত্তেজনা হয়, তাহলে বড় কোনো বিষয়ে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। "শাকেই এত লাড়া&...

Most Popular Post