আমি যখন পিএইচডির শেষ পর্যায়ে, তখন আমার কাছে খ্রিস্টান পাদ্রীরা আসতে শুরু করলো। তারা মনে করলো একজন বিধর্মীকে তাদের ধর্মে নিয়ে যেতে পারলে তাদের জন্য সুবিধা। আমি দেখলাম, ওরা প্রচুর পড়াশোনা করে, জানে। ওদের ধর্ম বিষয়টা যেমন প্রচুর জানে, আমাদের ধর্ম নিয়ে তেমনি। আমি আমাদের প্রফেটকে হাইলাইট করার জন্য এক পাদ্রীকে বললাম যে, শোনো, আমাদের প্রফেট ছিলেন এমনই একজন মানুষ, তিনি যখন কারো সাথে কথা বলতেন, তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে কথা বলতেন না, তিনি পুরো বডিটা তার দিকে টার্ন করতেন, যাতে সে মনে করে তাকে ফুল অ্যাটেনশন দেয়া হচ্ছে।
শুনে পাদ্রী বললেন, দেখুন, 'স্পন্ডিলাইটিস' বলে একটা ডিজিজ আছে, যে ডিজিজে ঘাড়ের চামড়া শক্ত হয়ে যায়, আপনাদের প্রফেটের ছিল সেই ডিজিজ। উনি ঘাড় ফেরাতে পারতেন না বলে পুরো শরীর অন্যের দিকে ফেরাতেন। তাহলে তোমরা একটা ডিজিজকে হাইলাইটস করছো কোন দুঃখে?
হঠাৎ করে আমার এমনই মন খারাপ হলো যে ভাবলাম, আসলেই তো, একটা ডিজিজের জন্য তিনি এটা করতেন বলে আমরা মানছি। তখন গড আমাকে হেল্প করলো। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একটা লজিক দিয়ে দিলেন এবং লজিকটা আমার তাৎক্ষানিক আসা। পাদ্রী তখনো বসা ওখানে, চা খাওয়া শেষ করেননি, আমি বললাম, আপনার কথাটা ভুল। আমাদের নামাজ পড়ার একটা সিস্টেম আছে, সিস্টেমে মাথা ফেরাতে হয়। আমাদের প্রফেটের যদি 'স্পন্ডিলাইটিস' ডিজিজ থাকতো, তাহলে উনি পুরো শরীর ফেরাতেন, উনি তো তা করেন না। তার এই ডিজিজ ছিলো না, তিনি যেটা করতেন রমতা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে করতেন। তারপর আমি তাকে বললাম, আমি কিন্তু ঈশা ( আ.) সম্পর্কে এজাতীয় কথা বলিনি। তিনি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং বললেন, তোমার লজিক খুব পরিষ্কার, আসলেই তো তোমরা নামাজের সময় দুইদিকে মাথা ফেরাও।
~হুমায়ূন আহমেদ
তথ্যসূত্রঃ [ শিলালিপি (দৈনিক কালের কন্ঠ), ২৭ জুলাই ২০১২ ]
হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ- হুমায়ূন আহমেদের ধর্মচেতনা ( মোহাম্মদ হান্নান)
No comments:
Post a Comment