একটা শিশু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।একদিন সে ফোরকানিয়া থেকে আসার পর জিজ্ঞেস করলাম,তুমি এখন ফোরকানিয়ায় কি পড়ো?
সে বললঃ আম পারা।
আমপারা কতবার পড়েছ?
সে বললঃ- দুইবার পড়ে শেষ করেছি।আবার পড়তেছি।
আমি তাকে আমপারার ভিতর থেকে কয়েকটা লাইন পড়তে দিলাম।দেখলাম,ভালো করে রিডিংও সে পড়তে পারে না।
আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি, কিন্তু মনে মনে চিন্তা করলাম,আমি যখন ক্লাস 3-4 এ পড়তাম। তখন হুজুরের সামনে কয়েকবার কোরআন খতম করে ফেলেছিলাম।
আর এ ছেলে ক্লাস ফাইভেও কোরান শেষ করতে পারেনি।শেষ করা তো দূরের কথা কোরান পড়াই তো শুরু করেনি।
আচ্ছা ধরে নিলাম সে এ বছরের মধ্যে আমপারা আবার শেষ করে কোরান পড়া শুরু করবে।কিন্তু আমার মনে হয় না, সে এ বছরেও আমপারা শেষ করতে পারবে অথবা শেষ করতে পারলেও আবার কোরান শুরু করতে পারবে অথবা কোরান পড়া শুরু করলেও কোরান শুদ্ধভাবে রিডিং পড়তে পারবে?
যা হোক ধরে নিলাম সে এ বছর শেষে মানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে কোরান পড়া শুরু করল মানে আলিফ-লাম-মীম থেকে পড়া শুরু করল।সে হিসেবে তার ৩০ পারা কোরান শেষ করতে হলে তাকে দশম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায়ও ফোরকানিয়ায় গিয়ে কোরান শেষ করতে হবে।
প্রশ্ন হলো দশম শ্রেণি বললাম কেন?
কারণ- কোরান ৩০ পারা,হাফেজি কোরানে ২০ পৃষ্ঠায় এক পারা।সে হিসেবে ৩০ পারাতে হয় ৬০০ পৃষ্ঠা।এক পৃষ্ঠা ২ দিন করে পড়লে লাগবে ১২০০ দিন।আর ১২০০ দিনে ফোরকানিয়ার কার্যদিবস হিসেব করলে প্রায় ৬ বছর চলে যাবে।৬ বছর না ধরে ৫ বছর ধরলাম, তাহলে হয় ক্লাস ten.
কিন্তু কথা হলো এ ছেলে আর এক বা দুই বছর পর ফোরকানিয়ায় যাওয়া বন্ধ করে দেবে।কারণ তখন সে ফোরকানিয়ায় যেতে লজ্জা পাবে।এটারও কারণ হলো সেখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা যাবে,আর সে গা-গতরে একটু বড় হয়ে যাবে।আর আশপাশের মানুষ যখন তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ- তুমি এখনও ফোরকানিয়ায় পড়ো? বা এখনও ফোরকানিয়ায় কি পড়ো?
সে বলবে,কোরান শরীফের ৩/৫ পারা।
জিজ্ঞাসু লোকটা হয়তো বলবে,"তুই এয তিন পারা পরদ্দে না,তোরা ফান থাকতে আঁরা তিনবার ফোরকানিয়ায় কোরান খতম দিইয়ি"।(এখনও তিন পারা? তোমাদের সময় থাকতে আমরা তিন খতম ফোরকানিয়ায় শেষ করেছি।)
এরকম করতে করতে এক সময় তার লজ্জা এসে যাবে।এদিকে তার স্কুলের বা মাদ্রাসার বড় ক্লাসের পড়াও ভারি হয়ে যাবে।তারপর সে লজ্জায় অথবা পড়ার চাপের অজুহাতে ফোরকানিয়ায় যাওয়া বন্ধ করে দেবে।এদিকে তার আর কোরান পড়া হলো না,ফোরকানিয়ায়ও কোন খতম করাও হলো না।এর ফলে সে আর সারা জীবনেও আর কোরান খতম করতে পারবে না।কারণ তার মনের মধ্যে ভয় ও দুর্বলতা কাজ করবে।আর সে মনে মনে ভাববে,আমার কোরান পড়াতে মনে হয় অনেক ভুল আছে।এ ভয়ে সে আর কোরান পড়া হবে না এবং এ দুর্বলতার কথা সে লজ্জায়ও কাউকে বলতে না।
আমার কথা হয়তো কারো কাছে ভালো লাগবে না,কিংবা বানোয়াট বলেও মনে হতে পারে,অথবা মনে হতে পারে আমি একজনকে দিয়ে সবাইকে বিচার করছি। কিন্তু আপনার পাশে থাকা কিংবা আপনার তত্ত্বাবধানে থাকা ফোরকানিয়ায় একটু খবর নেন,এক বছরে কত জন ছেলে-মেয়ে সম্পূর্ণ কোরান শেষ করে বের হয়েছে?যারা বের হয়েছে তাদের প্রত্যেকজন কি কমপক্ষে দুইবার করে খতম দিয়েছে?
এখন এর সমাধান কী হতে পারে?
আমার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে এ সমস্যার তিন ধরনের সমাধান হতে পারে বলে মনে করি।আর নিম্নরুপঃ-
১. নূরানী খানার মাধ্যমে ফোরকানিয়ার ব্যবস্থা করা।
২. সেটা না হলে বা না পারলে নূরানী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ফোরকানিয়ায় পড়ানোর ব্যবস্থা করা।
৩. তাও সক্ষম না হলে যা আছে তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অথবা যথাযথ মাধ্যমে মাঝে মাঝে পড়ার তদারক করা।তবে ১ বা ২ নং পদক্ষেপ থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভালো হয়।
এখনই যদি আমরা সচেতন না হই,ভবিষ্যত যে প্রজন্মটা আসবে তাদের অধিকাংশই কোরান শুদ্ধ করে পড়তে সক্ষম হবে না।
লেখকঃ-
জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ,এলএল.বি
শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।
No comments:
Post a Comment