Ad-1

Wednesday, August 10, 2022

মহীয়সী বঙামাতার চেতনা , অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা

ভূমিকা:
"হে আমাদের মমতাময়ী বঙ্গমাতা
সর্বাধিক স্নেহময়ী মা,
যার স্নেহ গোলাপের মতো উপাদেয়
তুমি বঙের মা।"
-আল মামুন
বঙামাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এক বিস্ময়ের নাম তাঁর,নিজে না নিয়ে অন্যকে দেওয়ার ক্ষমতাই
ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক বিশাল খুঁটি, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবং মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপ্রধান) -এর স্ত্রী তাঁর জোগানো সাহস ও প্রেরণার ফলেই বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি তাঁর স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আজ বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতো না। তাই, বাঙালি জাতির কাছে তিনি ‘বঙামাতা’ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
"জাতির রক্তে প্রেরণার শিখা
জননী বঙামাতা
মমতাময়ী আজ দীপালোকে
তোমার আসন পাতা ”
জন্ম ও পরিচয়:
বঙামাতার জন্ম ১৯৩০ সালের ৮ই আগস্ট ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের একটি বর্ধিষ্ণু কৃষক পরিবারে।তাঁর পিতার নাম শেখ জহুরুল হক। মাতার নাম হোসনে আরা বেগম।
তাঁর ডাকনাম ছিল রেণু।
“বঙামাতা,তুমি যে অসামান্যা
তোমার জন্ম না হলে,
হতো কিভাবে বাংলার জন্মটা?”

জীবনধারণ:
বঙ্গমাতা মাত্র তিন বছর বয়সে মাতা ও পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান।এই সময় চাচি
বেগম সায়রা খাতুন ( বঙ্গবন্ধুর মা) তাঁকে ঘরে তুলে নেন।কোলে-পিঠে করে নিজ সন্তানদের সঙ্গে মানুষ
করেন।তাঁকে সুন্দর শিক্ষা-দীক্ষা ও গৃহকর্মে বড় করে তোলেন।ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখা-পড়ার প্রতি ছিল অদম্য আগ্রহ।সে সময় মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরোবার নিয়ম না থাকায়,তিনি ঘরে বসেই লেখা-পড়া করেন। তিনি ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন, জ্ঞানী,বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও অসীম ধৈর্যশীল।
“হে বঙ্গজননী,
তুমি ছিলে অসামান্যা,অনন্যা
অনির্বাণ অগ্নিশীখা,”
বিবাহ:
১৯৩৮ সালে বঙামাতা চাচাতো ভাই শেখ মুজিবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৮বছর ও মুজিবের বয়স ছিল ১৮. 
দাম্পত্যজীবন:
দাম্পত্যজীবনে বঙ্গমাতা ছিলেন তিন পুত্র ও দুই কন্যার মাতা।তারা হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল,শেখ রেহানা ও বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বঙ্গমাতা একাই নিজ হাতে সংসার সামলেছেন ও স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুযায়ী ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন। স্বামীর পড়াশোনা ও রাজনীতির কারণে অধিকাংশ সময়ই স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে।তাঁকে স্বামীর কর্মকাণ্ডে কখনো বাধা না হয়ে সাধ্যমতো অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন তিনি। সংসারের সমস্ত ভাবনা থেকে নির্ভার রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে যেন তিনি দেশের জন্য নিশ্চিন্তে কাজ করে যেতে পারেন। 
“ তুমি সাহস জুগিয়েছো
ঘরে-বাইরে
তোমার দোসর হাতের পেলব ছোয়ায়
তাইতো তিনি হতে পেরেছিলেন
বঙ্গবন্ধু
এক নিঃশঙ্ক বিপ্লবী অভিযানে”

বাংলার সংগ্রামজীবনের প্রেরণাদাত্রী:
Old testament-এ বর্ণিত-
A virtuous woman is a Crown to her husband."
এবং
"Behind every greatman, there is a woman."
ঠিক তেমনি জাতির পিতার সেই সংগ্রাম জীবনের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন বঙ্গমাতা, বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।
সেইসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধুকে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন,একের পর এক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের ভাষণ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই প্রতিটি ধাপেই বঙঙ্গবন্ধুর প্রেরণাদাত্রী হিসেবে কাজ করেছেন বঙমাতা।এছাড়াও,বঙ্গবন্ধু যখন জেলে কারাবন্দী ছিলেন,তখন বক্তাবন্ধুর দলের নেতা-কর্মীদের নানা খবরাখবর ও দিক-নির্দেশনা দিতেন এবং লড়াই, সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা
দিতেন তিনি যদি এই প্রেরণা না যোগাতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতো না, পারতো না সার্বভৌমত্ব পেতে।
"কোনো কালেএকা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয় লক্ষী নারী,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের উন্নয়নকারী:
“বিশ্বে যা কিছু আছে মহান সৃষ্টিচিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত হওয়ার পেছনে বঙামাতার অবদান ছিল অবিস্মরণী।তাঁর যোগনো সাহসকে বুকে চাপিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজ চালিয়ে গেছেন এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 
“আমার মা ছিল সবচেয়ে বড় গেরিলা যোদ্ধা,বাবার নেতৃত্বের পেছনে মূল চালিকা- -শক্তি ছিলেন আমার মা”
বঙ্গমাতা বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।তাদের সাহস ও প্রেরণা দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলার উন্নয়নে কাজ করতেন। দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও সর্বদা সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তাঁর সহ্যক্ষমতা, নিজে বঞ্চিত হয়েও হাসি- মুখে ত্যাগ করার ক্ষমতা বাঙালি জাতির প্রেরণা, এই প্রেরণা ধরে রেখে বাঙালিরা কাজ করলে বাংলাদেশ অদম্যভাবে বেড়ে উঠবে।
জীবনাবসান:
১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট, একদল নিম্নপদস্থ সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গমাতা সপরিবারে নিহত হন,
এরপরও বাঙালিরা তাঁকে ভুলে যায়নি। তাঁর অদম্য সাহসের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে
ভূষিত করেন।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
তুমি অনন্যা,অসাধারণ
তোমার স্বপ্নের এ বঙ্গে
আমরাও আছি-
ছিলাম তোমার সঙ্গে।
বাংলার অগ্রযাত্রার প্রেরণা:
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা
মুজিব হয়তো আমাদের সাথে নেই।কিন্তু তিনি যে প্রেরণা দিয়েছেন,চেতনা জাগিয়েছেন তার ভিত্তিতেই
তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই চেতনা বুকে নিয়েই এই
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে,এগিয়েও যাবে অদম্য গতিতে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চেতনাই হবে বাঙালি জাতির প্রেরণা,
তোমার চেতনা বুকে নিয়ে,
পেয়েছি স্বাধীনতা,
তোমার ভেতনা বুকে নিয়েই
চলবে বাঙালির দীর্ঘ......
পথচলা

উপসংহার:
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এক অমর নাম। বঙ্গবন্ধুর জীবনে তিনি যেমন আলোকবর্তিতা তেমনি এদেশের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙামাতার নাম ও চেতনা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

 

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post