Ad-1

Tuesday, August 8, 2017

বাবার স্মৃতি-০১

আরো কিছুদিন যদি বাবা ডাকতে পারতাম....

অনেকদিন আগে, প্রায় কমপক্ষে দশ বছর আগে, ডেল কার্নেগীর " দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন "-পড়েছিলাম।যেখানে পড়েছিলাম, কোন এক দুর্যোগের কারণে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ দুটো ছেলে মেয়েকে হারায়।তার ছোট ছেলেটাই একমাত্র জীবিত ছিল।তো লোকটা খুব বিমর্ষ, হতাশ এবং খুব যন্ত্রণায় একাকি দিন কাটাচ্ছিল।হঠাৎ তার ছেলেটা বাহানা ধরল তাকে একটা কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতে।কিন্তু লোকটা তো কাগজের নৌকা বানাতে পারে না।আর ছেলেটাও ছিল নাছোড়বান্দা।তাই সে ছেলেটাকে কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতে চেষ্টা করল।কিন্তু আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও সে নৌকা বানাতে পারলনা।কিন্তু এ আধা ঘণ্টা সময় পরে সে একটা বিষয় উপলব্ধি করল যে,সে যখন কাগজের নৌকা বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিল তখন তার স্ত্রী ও সন্তান হারানোর বেদনাটা একটু কমই মনে হয়েছিল।সে বুঝল, কাজই আমাকে এ একাকীত্ব আর তীব্র বেদনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।তাই সে কাজে লেগে যাওয়ার মাধ্যমে কিছুটা বেদনা লাগব করার চেষ্টা করল।(ঘটনাটা হুবহু মনে নেই, তবে ভাবটা এরকমই)
কয়েকদিন আগেই বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছেন।সারাদিন চেষ্টা করি কর্মের মধ্যে ডুবে থেকে বাবাকে কিছুটা হলেও  ভুলে থাকতে, কিন্তু পারি না।গাড়ীতে চড়তে চড়তে ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি কোন জায়গায় থেমে থাকলে বাবা তোমার কথা মনে পড়ে যায়,কর্মের ফাঁকে একাকী বসে থাকলে, কিংবা একাকী রাস্তায় চলতে চলতে বাবার কথা মনে পড়ে যায়।আর সবচেয়ে বেদনাটা বাজতে থাকে তখনই,যখন আমি  রাস্তায়, গাড়ীতে কিংবা জীবন চলার পথে চুল, দাঁড়ি পেকে যাওয়া কিছুটা সবল সতেজ সত্তোরোর্ধ কোন বৃদ্ধ মানুষকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গেই বাবার কথা মনে পড়ে যায়।আর মনে মনে বলি, বাবা,তুমি আর কয়েকটা বছর বেশি বেঁচে থাকতে পারনি?তোমাকে আর কিছুদিন বাবা ডাকতে পারলেই যেন বাবা ডাকার প্রকৃত স্বাদ এবং তৃপ্তি মিঠাতে পারতাম।  সংসারের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বচ্ছলতার মধ্যে বাবা ডাকার স্বাদ কী রকম তা মিটানোর আগেই যেন তুমি চলে গেলে।
তোমাকে বাবা বলে ডেকেছি,যখন সংসারে সবসময় অভাবটা লেগেই থাকত তখন।তুমি সারাজীবন আমাদের জন্য ত্যাগ,বিসর্জন, কষ্ট করে গেলে। সংসারে দুটো পয়সা বাঁচানোর জন্য কত কষ্ট তুমি নিজেই করেছ।আর নিজের কাঁধে আধুনগর বাজার থেকে লাকড়ির বোঝা নিয়ে এসে আমাদের ফোনে বলতে রিকসায় করে নিয়ে এসেছ।এমনকি লাকড়ির বোঝা কাঁধে আছে এমন সময় বড় ভাই ফোন করলে তুমি বলেছ," হ্যাঁ বাবা,লাকড়ি রিকসায় করে নিয়ে যাচ্ছি।"
নিজে গরু দিয়ে সারাজীবন চাষাবাদ করেছ।অথচ তুমি কখনো আমাকে চাষ করার জন্য লাঙ্গল ধরতে দাওনি।তাই চাষার ছেলে হয়েও এই হতভাগা এখনও জমি চাষ করতে জানে না।চাষ করতে গিয়ে সব কাজ নিজে করতে পারতেনা বলে ছোট ছোট কাজগুলো আমাদের দিয়ে করাতেন।এরপরও কখনো শখ করে  কোদাল দিয়ে মাটি কাটতে গেলেই কিংবা লাঙ্গল ধরলেই তুমি বলতে,ওগুলো তুমি পারবে না।তোমার গা ব্যাথা ও কোমরে ব্যাথা করবে। আর এটা বলে কোদালটা কেড়ে নিতে।
ধানের বড়ো বড়ো বোঝাগুলো তুমি বহন করতে আর আমাদের দিতে ছোট ছোট বোঝাগুলো।একবার মাথায় ধানের বোঝা তুমি তুলে দিয়েছিলে।কিছুদুর যেতে না যেতেই আমার গাড় ব্যাথা করছিল বলে পুরো ধানের বোঝা ফেলে দিয়েছিলাম ডুবাতে। তাতে তুমি একটুও বকা দাওনি বলে একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম।কিন্তু এখন তা মনে পড়লে অবাক হই।
পড়ালেখা শেষ করে একটা ছোটখাট চাকরি পাই। বড়োভাই মুটামোটি স্বচ্ছল হচ্ছিল।বড় ভাই বাবাকে অনুরোধ করেছিল, বাবা, তুমি আর চাষাবাদ করো না।তোমার আর চাষাবাদ করার আর দরকার নেই।
একথা তুমি আমার সামনে কতবারই না বলেছ।আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বারবার একটা কথাই প্রত্যাশা করেছ।আমিও যেন বড় ভাইয়ের মতো তোমাকে আর চাষ না করতে বলি।কিন্তু ছোটখাট চাকরি,কম মাইনের বেতন পাই বলে বাবা তোমাকে তা বলতে আমি সাহস করতে পারিনি।আর তুমি চাষাবাদও ছাড়নি।
কিন্তু যখন আমি একটু স্বচ্ছল হচ্ছিলাম। একদিন বাবাকে বলছিলাম, বাবা, তুমি আর চাষাবাদ করো না।তোমাকে আর চাষ করতে হবে না।বাড়ির যেটুকু জমি আছে সেটুকু মানুষ দিয়ে করাবে। লাঙ্গল তো দূরের কথা কোদালও ধরবে না।সেদিন তুমি কত খুশি হয়েছিলে,সে অনুভূতি প্রকাশে আমি অনেকটা সক্ষম নয়।আর তুমি সে বছর চাষাবাদ ছেড়েও দিলে।আর মানুষকে খুশি হয়ে বলতে লাগছিলে, আমার ছেলেরা আমাকে চাষ করতে নিষেধ করে দিয়েছে,আমার ছেলেরা আমাকে চাষ করতে নিষেধ করে দিয়েছে।।
আমি একটু হিসেবি ছিলাম।বাবা যখন আমার কাছে টাকা চাইতেন, আমি হিসেব নিতাম আর প্রশ্ন করতাম এত টাকা কেন লাগবে? কী কারণে?  ওখানে অতটাকা লাগে নাকি? এতটাকা দিলে হবে না?তারপর বলতাম, এতটাকা পাঠাব আমি এর বেশি পাঠাব না।তখন তুমি বলতে ঠিক আছে, তুমি যা পার তা পাঠাও, বাকিটা আমি ব্যাবস্থা করে নিব।আর বড় ভাই ছিল আমার ব্যতিক্রম, কখনো জিজ্ঞেস করতো না, এতটাকা কেন লাগবে?
তাই তুমি ভেবেছিলে আমি তোমার জন্য কিছুই করবো না।কিন্তু শেষে তোমার জন্য আমার চিকিৎসা খরচের পরিমাণ দেখে বলছিলে,বাবা আমার জন্য এতটাকা কেন খরচ করতেছ? আমি তো আর বেশিদিন বাঁচবনা।আমি তো তোকে নি:স্ব করে দিচ্ছি। তখন তোমাকে বলছিলাম,বাবা আমার জীবনের সমস্ত উপার্জন দিয়ে যদি তোমাকে  আমি দুটোমাস বেশি বাঁচিয়ে রাখতে পারি এবং দুটোমাস বেশি বাবা বলে ডাকতে পারি তাতেই আমার জীবন আর সমস্ত উপার্জন সার্থক হবে।এরপর তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।
  একটাসময় পর তোমার রোগটা  আরও বেড়ে যায়।একসময় যে মানুষটা দিনে এক পোয়া বা আধা কেজি চালের ভাত খেত সে মানুষটা এখন সারাদিনে দুমোটো ভাতও খেতে পারে না। তারপর ডাক্তার অনুরোধ করল পাখির মতো করে হলেও যেন দুটো দুটো করে সারাদিন ভাত খেতে।কিন্তু সেটুকুও তুমি খেতে পারছিলে না। তখন আমি তোমাকে বলেছিলাম,বাবা, তুমি দুটো দুটো হলেও খাওয়ার চেষ্টা করিও।তুমি না খেলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর আমি, আমরা বাবা বলে কাকে ডাকব? বাবা।তোমার খেতে ইচ্ছে না হলে আমার ও আমাদের  কথা স্মরণ করবে। তারপর তুমি খাওয়ার চেষ্টা করবে।একথা মোবাইলে বলার পর তোমার চোখে পানি এসেছিল কিনা জানি না? কিন্তু আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি বাবা।কারণ, বাবাকে এভাতে খেতে অনুরোধ করা অনেকটা বাবাকে বেঁচে থাকার জন্য আরো কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু না।তারপর আমার এ কথা শুনে তুমি হাজারো চেষ্টা করতে দুটো ভাত খাওয়ার জন্য।আর আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করলে তুমি বলতে, হ্যাঁ বাবা খেয়েছি।অনেক কষ্টে তোদের কথা মনে করে করে দুটো খেয়েছি।খেতে পারছিনা এরপরও তোদের জন্যই খেয়েছি।
শেষের দিকে মাকে নাকি তুমি বলেছ,,,,,,যে ছেলে আমার প্রত্যেকটি টাকার হিসেব নিতে চাইতো, এ ছেলে আমার জন্য ও আমাকে একটু বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং একটু সুস্থ রাখার জন্য এত্তকিছু করবে তা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।তখন মনে মনে বলি,বাবা তুমি পড়া লেখা না করার কারণে যেমন পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর আছে তা জান না।সেই সঙ্গে তোমার ছেলের বুকেও যে তোমার জন্য আরেকটা আলাদা মহাসাগর আছে তাও তুমি জানতে না,বাবা।
অবশেষে তুমি চলে যাওয়ার কয়েকদিন আগের ঘটনা। তুমি বিছানায় শুয়ে আছ,আর আমি তোমার পাশে, হাতে  হাতে তোমার মুষ্টা ধরে বসে আছি। হঠাৎ তুমি আমার দিকে তাকিয়ে শুয়ার মধ্যেই দুটো হাত প্রসারিত করে আমাকে তোমার বুকে একটু জড়িয়ে ধরতে কাছে ডাকলে। আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরলে তুমি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে আমাকে বললে,"অবা আইতো আর ন পারীর" (বাবা আমি তো আর পারছি না)।তখন দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম।কারো মুখে কোন কথা নেই,ভাষা নেই,চারপাশে নিস্তব্ধতা। আছে  শুধু নিস্তব্ধতার মধ্যে দুজনের বুকফাঁটা অঝর নিস্তব্ধ কান্না।

(বাবা,আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিক.........)।
লেখক: জহির উদ্দীন
বি.এ(অনার্স),এম.এ (বাংলা),চ.বি।
বাংলা শিক্ষক,
বিএএফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।[০৮/০৮/২০১৬]

রচনাঃ টেলিভিশন


ভূমিকা :
 ‘টেলিভিশন’ এমনই এক জাদুর বাক্স, যা বর্তমান পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মধ্যে বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। বেতার যন্ত্র ও চলচ্চিত্রের পর টেলিভিশনই হচ্ছে অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার।
নামকরণ :
ল্যাটিন শব্দ ‘টেলি’ (ঞবষব) এবং ‘ভিসিও’ (ঠরংরড়) থেকে টেলিভিশন শব্দটি এসেছে। ‘টেলি’ শব্দের অর্থ দূরত্ব এবং ‘ভিসিও’ শব্দের অর্থ দেখা। অর্থাৎ যে যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে দূরের কোনো দৃশ্যকে দেখতে পাওয়া যায়, তাকে টেলিভিশন বলে।
আবিষ্কার :
জার্মান বিজ্ঞানী পল নিপকও সর্বপ্রথম টেলিভিশন যন্ত্রের উদ্ভাবন সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। এর ওপর ভিত্তি করে ১৯২৫ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৪৫ সালে এ যন্ত্রটি পূর্ণরূপ লাভ করে।
সম্প্রচার :
সর্বপ্রথম ব্যবসায়িক ভিত্তিতে টেলিভিশন চালু করে লন্ডনের ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। আমাদের বাংলাদেশে টেলিভিশন চালু হয়েছে ১৯৬৫ সালে। প্রথমে ঢাকার ডিআইটি (রাজউক) ভবন থেকে টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহে উপকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় সমগ্র বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচারের আওতায় এসেছে। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন ভবন নির্মিত হয়েছে এবং সেখানে একটি পৃথক কেন্দ্র চালু হয়েছে।
টেলিভিশনের ব্যবহার :
টেলিভিশন প্রায় সব দেশেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত। আমাদের দেশে টেলিভিশন মূলত খবর ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই কাজ করছে। স্যাটেলাইট টিভি ও ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে এ দেশের টিভি দর্শকরা বিনোদনের অনেক সুযোগ পাচ্ছে।
টেলিভিশনে শিক্ষা :
শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি, ভাষা শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে টেলিভিশন শিক্ষকের মতো ভূমিকা পালন করছে। দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার ক্ষেত্রে টেলিভিশনের কার্যকারিতা অনেক।
জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম :
বর্তমান বিশ্বের প্রচারমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তথ্যের পাশাপাশি ছবি ও সংলাপ সরাসরি প্রচার করে এটি। সারা বিশ্বের মানুষ বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম হিসেবে এ যন্ত্রের ওপর ক্রমে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
উপকারিতা :
 টেলিভিশন থেকে আমরা বহু উপকার পেয়ে থাকি। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির মান উন্নয়নে টেলিভিশন রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের জনগণকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের টেলিভিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। জনসংখ্যা ও বেকার সমস্যা মোকাবেলা করায় টেলিভিশন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কেও প্রদান করছে বিশেষ জ্ঞান। দেশ-বিদেশের খবর প্রচার ছাড়াও সাংস্কৃতিক চেতনা বিকাশে যেমন—সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, বিতর্ক, নাটক ইত্যাদিতে রাখছে অনন্য ভূমিকা।
অপকারিতা :
 সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে যদি টেলিভিশনকে পরিচালিত না করা হয়, তাহলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এর কুফল দেখা দেয়। কুরুচিপূর্ণ নাচ, গান, নাটক ইত্যাদি জনগণের নৈতিক চরিত্রের স্খলন ঘটায়। অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখলে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার যথেষ্ট ক্ষতি হয় এবং দৃষ্টিশক্তিরও অপচয় সাধিত হয়।
উপসংহার :
 বর্তমানে টেলিভিশন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রচারমাধ্যম। তাই আমাদের টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের মান আরো বাড়াতে হবে।

রচনাঃ শহীদ তিতুমীর

ভূমিকা :
 ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যাঁর নামটি জড়িত, তিনি হলেন সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর।
জন্ম পরিচয় :
 তিতুমীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে হায়দারপুর) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৭৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
তিতুমীর নামকরণ :
 সৈয়দ মীর নিসার আলীর শিশুকালে একবার কঠিন অসুখ হয়। রোগ সারানোর জন্য তাঁকে দেওয়া হয় ভীষণ তেতো ওষুধ। সেই তেতো ওষুধ শিশুটি আনন্দের সঙ্গে ১০-১২ দিন খায়। এ জন্য ওর ডাকনাম রাখা হয় তেতো। তেতো থেকে তিতু। তার সঙ্গে মীর লাগিয়ে হলো তিতুমীর।
শিক্ষাজীবন :
তিতুমীর তাঁর গ্রামের মাদ্রাসায় পড়তেন। সেখানে পড়াকালে অল্প সময়েই তিনি ধর্ম শিক্ষক হাফেজ নেয়ামত উল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন।
স্বদেশ চেতনা :
তিতুমীরের জন্মলগ্নে পরাধীন ভারতবর্ষে একদিকে ইংরেজ, অন্যদিকে দেশীয় জমিদাররা অত্যাচার চালাত। তিতুমীর ছোটবেলা থেকেই এসব দেখতেন আর অত্যাচারীদের হাত থেকে দেশের মানুষের মুক্তির উপায় খুঁজতেন।
শারীরিক শক্তি অর্জন :
 সেকালে গ্রামে গ্রামে ডন কুস্তি ও শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো। শেখানো হতো মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া আর অসিচালনা। উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ তাড়ানোর জন্য গায়ে শক্তি সঞ্চয় করা। তিতুমীর একে একে সবই শিখে নেন।
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব :
 তিতুমীর একবার ওস্তাদের সঙ্গে বিহার সফরে গিয়ে মানুষের দুরবস্থা দেখে মনে মনে দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা করেন। তাই তিনি মুসলমানদের সত্যিকার মুসলমান হতে আর হিন্দুদের অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। উভয় পক্ষই তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়।
মক্কা গমন :
মাত্র ৪০ বছর বয়সে ১৯২২ সালে তিতুমীর মক্কায় যান হজ পালন করতে। সেখানে পরিচয় ঘটে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ধর্মপ্রাণ সংগ্রামী পুরুষ শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর সঙ্গে। তিতুমীর তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা :
 তিতুমীর দেশে ফিরে মুক্তিকামী জনসাধারণকে নিয়ে ঘোষণা দিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে, নীলকরদের রুখতে আর নিজেদের সংগঠিত হতে।
বাঁশের কেল্লা স্থাপন :
 তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রথম বাধা পান জমিদারদের কাছ থেকে। তখন তিনি নিজ গ্রাম ছেড়ে বারাসাতের নারিকেল বাড়িয়ায় গিয়ে একটি দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ নির্মাণ করেন, যার নাম নারিকেল বাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’। তাঁর এ কেল্লায় সৈন্যসংখ্যা ছিল চার-পাঁচ হাজার। আর তাঁর দখলে ছিল চব্বিশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলা। ইংরেজদের কোনো কর্তৃত্বই ছিল না এসব অঞ্চলে।
ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ :
 তিতুমীর তাঁর দুর্গে শিষ্যদের ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ কৌশল শিক্ষা দেন। এ খবর ইংরেজ শাসকদের কানে পৌঁছলে ১৮৩০ সালে তিতুমীরকে দমন করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয়। কিন্তু আলেকজান্ডার তাঁর সিপাহি বাহিনী নিয়ে পরাস্ত হন। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর আবার সেনাপতি কর্নেল স্টুয়ার্ড বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করেন। স্টুয়ার্ডের হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্য আর গোলা-বারুদের বিরুদ্ধে মাত্র চার-পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে পেরে উঠলেন না তিতুমীর। ইংরেজদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় তাঁর বাঁশের কেল্লা, আর প্রাণপণ যুদ্ধে শহীদ হলেন তিতুমীরসহ অসংখ্য মুক্তিকামী বীরসৈনিক।
উপসংহার :
 আজ থেকে প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ।

Monday, August 7, 2017

রচনাঃ সুন্দরবনের প্রাণী

সূচনা : সুন্দরবন আমাদের জাতীয় বন। পৃথিবীর আশ্চর্য স্থানগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। আর এ বনের প্রাণীগুলো আরো আশ্চর্য রকমের। আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার এ বনের প্রাণী।

সুন্দরবনের অবস্থান : বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বেশির ভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশজুড়ে এর বিস্তৃতি। এর দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। সুন্দরবনে প্রচুর সুন্দরী গাছ রয়েছে বলে এ বনের নাম সুন্দরবন।

সুন্দরবনের প্রাণী : সুন্দরবনে নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জলে রয়েছে কুমির, হাঙর প্রভৃতি। স্থলে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, সজারু, শেয়াল, নানা ধরনের পাখি, মৌমাছি, বন মোরগ ইত্যাদি।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার : রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গায়ের ডোরাকাটা দাগ আর গাম্ভীর্য সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে আরো সুন্দর করেছে। বিশ্বের কোনো কোনো প্রাণীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশ বা অঞ্চলের নাম। রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামটির সঙ্গেও অঞ্চলের নাম যুক্ত। বেঙ্গল বলতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গকে বোঝায়।

হরিণ : হরিণ সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরা নিরীহ প্রাণী। এ প্রাণী তৃণভোজী। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রিয় খাদ্য হরিণ।

বানর : সুন্দরবনে প্রচুর বানর রয়েছে। এরা হরিণের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। হরিণকে যখন বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ধাওয়া করতে আসে, তখন বানর গাছ থেকে চেঁচামেচি করে হরিণকে সতর্ক করে দেয়।

মৌমাছি : সুন্দরবনে প্রচুর মৌচাক রয়েছে। মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী : নানা রকম প্রাণীর জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত। তবে একসময় সুন্দরবনে আরো অনেক জাতের প্রাণী ছিল।

শিকারিদের অত্যাচার, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো আজ প্রায় বিলুপ্ত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য :

ক. গণ্ডার : গণ্ডারের মাথায় লোম দ্বারা আবৃত একটি শিং থাকে। গণ্ডার ৩০ থেকে ৪০ মাইল বেগে ছুটতে পারে। একসময় সুন্দরবনে প্রচুর গণ্ডার দেখা যেত, কিন্তু এখন তা সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত। ইংরেজ শাসক ও দেশীয় কর্মচারী এবং স্থানীয় দক্ষ শিকারি সবাই মিলে ক্রমান্বয়ে গণ্ডারের বংশ ধ্বংস করেছে।

খ. হাতি : হাতি খুব পরিচিত প্রাণী, একসময় সুন্দরবনে হাতি ছিল, এখন একটিও নেই। একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতি দেখা যায়।

গ. অন্যান্য বাঘ : একসময় চিতাবাঘ, ওলবাঘ নামে আরো কিছু বাঘ সুন্দরবনে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর দেখা যায় না।

আমাদের দায়িত্ব : প্রাণিবিদরা বলেছেন, সব প্রাণীই সুন্দরবনের জন্য প্রয়োজন।

বাঘ, গণ্ডার, হাতি ছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে বলে এখন তাঁরা চিন্তিত। এ ব্যাপারে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সতর্ক হতে হবে এবং সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

উপসংহার : সুন্দরবনের বিস্ময়কর জীবজন্তু ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাণিজগৎ বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এদের বাঁচিয়ে রাখা

Sunday, August 6, 2017

বীরের রক্তে প্রতিষ্ঠিত দেশ

সংকেত :[★ সূচনা ও যাদের রক্তে দেশ স্বাধীন হলাে ★ সিপাহি মােহাম্মদ মােস্তফা কামাল ★ হামিদুর রহমান
★ মুন্সি আবদুর রউফ ★ নুর মােহাম্মদ শেখ ও মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ★ রুহুল আমিন ★ মতিউর রহমান।
★উপসংহারঃ]

সূচনা : ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। ঐ
ঘােষণার পরই বাংলাদেশের মানুষ তখন সারাদেশ প্রতিরােধ গড়ে তােলে। অবশেষে ১৯৭১ সালের
১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর অবরােধ থেকে আমরা মুক্ত হলাম। দেশ স্বাধীন হলাে।

যাদের রক্তে দেশ স্বাধীন হলাে : স্বাধীনতা আমরা লাভ করলাম ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বীরশ্রেষ্ঠ শহিদদের ত্যাগের বিনিময়ে।
সিপাহি মােহাম্মদ মােস্তফা কামাল :(মােস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভােলা জেলার
দৌলতখান থানার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাবিবুর রহমান ও মাতার নাম
মােসাম্মৎ মালেকা বেগম। তিনি ৮ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল
যশাের সীমান্তে সম্মুখ যুদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অভিযান প্রতিহত করতে গিয়ে শহিদ
হন।

সিপাহি মােহাম্মদ হামিদুর রহমান : হামিদুর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার
মহেশপুর থানার খােরদা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আক্কাস আলী ও মাতার
নাম কায়দাছুন্নেসা। তিনি ৪ নং সেক্টরের অধীনে মৌলভীবাজারস্থ কমলগঞ্জের ধলইতে যুদ্ধ করে।
পাকহানাদার বাহিনীর সাথে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদাৎ বরণ করেন।

ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ : মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৬ সালের ১লা মে ফরিদপুর জেলার
বােয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে জনুগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল রাঙামাটি ও
মহালছড়ির সংযােগ পথ বুড়িঘাট এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং শহিদ হন।

ল্যান্স নায়েক নূর মােহাম্মদ শেখ : নূর মােহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬শে এপ্রিল নড়াইল জেলার
সাহেবখােলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ৮ নম্বর সেক্টরে স্থায়ী টহলে
নিয়ােজিত থাকার সময় পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পড়েন। এবং সঙ্গীদের
বাঁচাতে গিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাৎ বরণ করেন।।

ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর : মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৭৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার
রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে তিনি শহিদ হন।

ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার রুহুল আমীন : রুহুল আমিনের জন্ম ১৯৩৪ সালে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনির
জাহাজ বি এন এস পদ্মার স্কোয়াডন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১০ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনির বিমান হামলায় জাহাজের ইঞ্জিনে আগুন লেগে শাহাদাৎ বরণ করেন।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান : মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ১৯ই অক্টোবর নরসিংদী জেলার
রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত অবস্থায় সুযােগ বুঝে
টি-৩৩ জঙ্গী বিমান ছিনিয়ে নেন এবং বাংলাদেশের পথে রওয়ানা দেন। কিন্তু সিন্ধু প্রদেশের মরু অঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন।

Recent Post

মিষ্টি আলুর উপকারিতা

মিষ্টি আলুঃ "বাচ্চার ওজন দ্রুত বাড়ানোর সেরা খাবার"  বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য মিষ্টি আলু একটি বিশেষ খাবার। এটি শুধু বাচ্চ...

Most Popular Post