Ad-1

Monday, February 19, 2024

জমি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

. বে-দখলী সম্পত্তি কী হেবা/দান করা যায়?
উত্তর :করা যায় তবে শর্ত হল তা দখল করে গ্রহীতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে অন্যথায় হেবা/দান সিদ্ধ হবে না

২. স্বামী স্ত্রীর অনুকূলে হেবা করেছেন অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ,এক্ষেত্রে স্বামী কী হেবা প্রত্যাহার করতে পারেন?
উত্তরঃ প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই


৩. মৃত্যুশয্যা অবস্থায় হেবা/দান করলে এটার পরিণতি কী হবে?-
উত্তর:মৃত্যুশয্যায় হেবা/দান করলে এটি হেবা/দান হিসেবে গন্য না হয়ে উইল বা অছিয়তের ন্যায় কার্যকর হবে

৪. হেবা-বিল-এওয়াজ(বিনিময়)কখন প্রত্যাহারযোগ্য?
উত্তরঃযতক্ষণ পর্যন্ত বিনিময় আদায় না হবে ততক্ষণ, বিনিময়ের পর অপ্রত্যাহারযোগ্য।

৫. নাবালক হস্তান্তর দলিলে গ্রহীতা হতে পারলেও পাওয়ার অব এটর্নিতে কী নাবালক গার্ডিয়ানমাধ্যমে গ্রহীতা হতে পারে?
উত্তরঃ পারবে না

৬. জমিদার ও ডেভলপমেন্ট চুক্তির পর ডেভলপমেন্টের অংশ বন্ধক দিতে পারে এক্ষেত্রে ব্যাংকে অ.পাওয়ার দিতে হবে কিনা?
উত্তর : হবে না

৭. কোন তারিখ থেকে জমিদার ও প্রজার মধ্যকার সম্পর্ক কিংবা পাট্টা-কবুলিয়তের অবসান ঘটে?
উত্তর :১৪/৪/১৯৫৬
উক্ত তারিখের পর কোন  পাট্টা-কবুলিয়ত হলে তা অকার্যকর।

৮. খতিয়ানে আপোষ বেস্থিত লিখাটির মর্মার্থ কী?
উত্তরঃ আপোষ বেস্থিতঃ
যার পাশে আপোষ বেস্থিত লিখা থাকবে তিনি অন্যান্য শরীকদের সাথে এই খতিয়ানের তার স্বত্ব আপোষে বুঝ প্রবোদ নিয়ে ত্যাগ করে ভিন্ন দাগে ভিন্ন খতিয়ানে চলে গেছে অর্থাৎ এই খতিয়ানে তার স্বত্ব ত্যাগ করে অন্য খতিয়ানে চলে গেছে

৯. অনুমতি দখলকারের কী ঐ জমিতে বিরুদ্ধ দখল জনিত স্বত্ব সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ সৃষ্টি হয় না।

১০. অনুমতির মেয়াদ যতদিন হোক না কেন মুল মালিক চাওয়া মাত্রই কী দখল ফেরত দিতে বাধ্য কিনা?
উত্তরঃ বাধ্য।

১১. যথাযথ প্রক্রিয়ায় বন্ধক মুক্ত না করিলে ৬০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর কী বন্ধকী কবলা ছাপ কবলায় পরিণত হয়?
উত্তর : পরিণত হয়

১২. বায়নানামায় নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ না থাকলে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে বায়নানামার মেয়াদ কতদিন থাকবে?
উত্তরঃ ৬ মাস

১৩.  বিধবা যদি অন্যত্র বিবাহ করে এক্ষেত্রে পূর্বের স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কিনা?
উত্তর :স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর যে উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয় তা কোন অযুহাতে না দেয়ার সুযোগ নেই,মৃত্যুর পর ইদ্দত পালন শেষে স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করার ক্ষেত্রে সে স্বাধীন
বিয়ের অযুহাতে কোনভাবেই উত্তরাধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সুযোগ নেই আর কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বিধবা আদালতে যেতে পারেন।

১৪. বায়নানামা মেয়াদ অতিক্রান্ত এবং গ্রহীতা রেজিঃ নিতে গড়িমসি প্রকাশ পেলে বায়নানামা দাতার করণীয় কী?
উত্তর :দাতা এক্ষেত্রে গ্রহীতাকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করবেন, এরপর বায়নানামা বাতিলের মামলা করতে হবে

১৫. দিয়ারা জরিপ কি?এই জরিপ কেন ও কোথায় হয়?
উত্তরঃদরিয়া বা সাগর থেকে দিয়ারা
উপকুলে নদী ভাংগনে সিকস্থি পরে পলি জমে পয়স্থি হয় ঐসব জমি সরকার জরিপ পরিচালনা করে খাস জমির রেকর্ড সৃষ্টি করে।

১৬.  নদী ভাংগনে সিকস্থি পয়স্থি ভূমির ব্যক্তিস্বত্ব ও উত্তরাধিকারবিহীন জমিদারের স্বত্ব কার উপর বর্তায়?
উত্তরঃসরকারের উপর বর্তায় অর্থাৎ সরকারের মালিকানায়।

১৭. মৌজা নকশা বা শীট এবং খতিয়ানের দাগের মধ্যে বিভ্রান্তি কিংবা অস্পষ্টতা দেখা দিলে কোনটা প্রাধান্য পাবে?
উত্তরঃ নকশা বা শীট

১৮.  অনেকে শীট নিলে বিভ্রান্তিতে পড়ে দাগ খুঁজে পায় না,নকশায় দাগ কোন কোণা দিয়ে শুরু,কোন কোণায় শেষ?
উত্তর :উত্তর - পশ্চিম কোণা দিয়ে শুরু
দক্ষিণ -পুর্ব কোণায় শেষ

১৯. সিএস খতিয়ানে দাগের চৌহদ্দি  স্পষ্ট কিন্তু আরএস খতিয়ানে ও কী দাগের চৌহদ্দি স্পষ্ট থাকে?
উত্তর :থাকে না,
শুধুমাত্র উত্তর সীমানার দখলকার উল্লেখ থাকে।

২০. খতিয়ানের স্বত্বের কলামে জরিপ চলাকালীন সাং-নিজ লিখার মর্মার্থ কী?
উত্তরঃজরিপের সময়ে জমির মালিকের বাড়ী ও জমির ঠিকানা একই মৌজার সীমানায় অবস্থিত।

২১. জমিদার বাড়ী ছেড়ে গিয়ে ৩ বছর এবং অকৃষক(ওয়ারিশী)৫ বছর জমি অনাবাদী ফেলে রাখলে ব্যক্তিস্বত্ব কি থাকে?
উত্তরঃথাকে না,সরকারের উপর বর্তায়।

২২. খতিয়ান ও খাজনা দাখিলা কী স্বত্বের প্রমাণ বহন করে নাকী দখলের প্রমাণ বহন করে?
উত্তরঃ দখলের।

২৩. কোন কারনে শুধুমাত্র খাজনা পরিশোধে ব্যর্থতায় কী প্রজার স্বত্ব নষ্ট হয়?
উত্তরঃ স্বত্ব নষ্ট হয় না।

২৪. খতিয়ানের স্বত্বের কলাম ও মন্তব্য কলামের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কোনটি প্রাধান্য পাবে?
উত্তরঃ স্বত্বের কলাম।

২৫.  সি এস খতিয়ানে ২টি অংশ উপরিস্থ স্বত্ব ও অধিনস্থ স্বত্বের মর্মার্থ কী?
উত্তরঃ উত্তর :
উপরিস্থ স্বত্ব :
তখনকার সময়ে জমিদারী প্রথা ছিল জমিদারই খাজনা আদায় করত তারাই উপরিস্থ মালিক ছিল,কিন্তু জমিদার স্বয়ং কোন সম্পত্তি ভোগ করলে তখন উপরিস্থ স্বত্বের মালিক সরকার
অধিনস্থ স্বত্ব :
জমিদার উপরিস্থ মালিক হলে প্রজারা অধিনস্থ স্বত্বের মালিক
সরকার উপরিস্থ স্বত্বের মালিক হলে জমিদার হবে অধিনস্থ স্বত্বের মালিক

২৬. পাট্টা এবং কবুলিয়ত দলিল কী?
উত্তরঃ পাট্রা দলিল:
জমিদার কর্তৃক প্রজা বরাবর সম্পাদিত দলিল। জমিদার কোন কবুলিয়তের প্রেক্ষিতে অথবা অন্য কোন যথোপযুক্ত কারণে প্রজা বরাবর সম্পত্তি (জমি) বন্দোবস্ত দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তা পাট্টা দলিলের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারতেন।
এরুপ দলিলের বৈশিষ্ট্য ছিল-
১. উভয়পক্ষ তথা জমিদার ও প্রজার সম্মতিতে পাট্টার সৃষ্টি হতো।
২. পাট্টায় খাজনার পরিমাণ নির্ধারিত থাকতো।
৩. জমির চৌহদ্দির/তফসিলের উল্লেখ থাকতো।
৪. কোন কোন পাট্টায় ভোগদখলের মেয়াদ উল্লেখ থাকতো।
৫. পাট্টা বাতিলের অধিকারও জমিদার কর্তৃক সংরক্ষিত হতো।
৬. পাট্টা রেজিস্টার্ড বা নন রেজিস্টার্ড উভয় প্রকার হতে পারত।

ফেরত পাট্রা দলিল:

ক্রেতা ক্রয়মূল্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে জমি ফেরত দিবেন বা নির্ধারিত সময় ভোগদখলের পর জমি ফেরত দিবেন এরুপ অঙ্গীকার কোন দলিলে করা থাকলে ঐ দলিলকে একবারনামা বা ফেরত পাট্টা বলা হয়। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ আইনের ৯৫ (ক) ধারা প্রবর্তিত হবার পর এরুপ দলিলের প্রচলন এখন আর নেই। এরুপ অঙ্গীকার সম্পন্ন দলিল সৃষ্টি হলে তা খাই-খালাসি বন্ধক হিসাবে গণ্য হবে (৯৫ ‘ক’ ধারা মতে)।
উত্তর :
পাট্টা:
জমিদার খাজনার শর্তে পনের বিনিময়ে কোন প্রজার অনুকুলে জমি বন্দোবস্তি প্রদানের দলিল

কবুলিয়ত:
জমিদারকে স্বীকারপুর্বক বন্দোবস্তি গ্রহনের পর জমিদারের অনুকুলে প্রজা যে দলিল সম্পাদন করে

দলিল রেজিস্টেশন এর সময় আমাদের যে যে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবেঃ

১. দলিল করার কমপক্ষে ৩-৪ দিন আগে দলিলের ড্রাফট/খসড়া নিয়ে নিবেন।
২. দাতা- গ্রহিতার নাম, ঠিকানা, টিন নাম্বার, জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিক আছে কিনা দেখে নিবেন।
৩. দাগ নাম্বার, খতিয়ান নাম্বার ঠিক আছে কিনা দেখে নিবেন।
৪. চৌহদ্দি ঠিক আছে কিনা
৫. সঠিক স্টেম্পে দলিল লেখা হয়েছে কিনা
৬. দলিলের কৈফিয়ত কলামে কিছু লেখা আছে কিনা
৭. এলটি নোটিশে জমির পরিমান ঠিক আছে কিনা দেখে নিবেন।
৮. ব্যাংক পে অর্ডারের ফটোকপি করে রাখুন
৯. দলিল লেখকের লাইসেন্স নাম্বার ঠিকমত লেখা হয়েছে কিনা
১০. দলিল লেখকের খরচের রশিদ বুঝে নিন
১১.দলিলের রেজিস্টেশন হলে ৫২ ধারার রশিদ বুঝে নিবেন।
১২. দলিলের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করে রাখবেন
১৩. মনে রাখবেন দলিল একবার রেজিস্টেশন হয়ে গেলে তা সংসোধন করা সময় ও ব্যয়সাধ্য তাই সব দেখে, শুনে ও পড়ে দলিলে টিপসই দিবেন।

Sunday, February 11, 2024

ইসরা ও মেরাজ কি?

ইসরা ও মিরাজের ঘটনা নবী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,  নবীজীর রিসালাতের অনেক বড় মুজিযা আর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নিআমত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা যেমন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি তাঁর উচ্চ মর্যদা সম্পর্কে অবগত করেছেন সৃষ্টিজগৎকে। এই ঘটনা যেভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও সীরাতের সাথে সম্পর্কিত, সেভাবে তা ইসলামী আক্বীদা ও বিশ্বাসেরও অংশ। এই ঘটনায় একদিকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা, অন্যদিকে সেখানে লুকিয়ে রয়েছে অসংখ্য ইলাহী হিকমত ও রহস্য। কিন্তু নবীজীর সশরীরে ইসরা ও মিরাজের বাস্তবতার উপর ঈমান আনার পর মুমিনের জন্য যে প্রয়োজনটি সর্বাগ্রে অনুভূত হয় তা হল কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীসের আলোকে ইসরা ও মিরাজের পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ইলম হাসিল করা।


রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কষ্টের মধ্যে, তখন আল্লাহ তাঁকে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করান। তাঁকে এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মানুষ ইতোপূর্বে যায়নি।


মিরাজের ঠিক আগে লাগাতার রাসূলুল্লাহর (সা:) জীবনে যেসব দুঃখ আসে:


তাঁর স্ত্রী খাদিজার (রা:) ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো প্রেরণাদাতা।

তাঁর চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল; যিনি ছিলেন ঘরের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড়ো অভিবাবক, যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন।

তায়েফের দিন; যা ছিলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ দিন। (সহীহ বুখারী: ৩২৩১)

মিরাজের রাতের দুটো অংশ। একটি হলো ‘ইসরা’ এবং আরেকটি হলো ‘মিরাজ’। 

ইসরা হলো মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে রাসূলুল্লাহর (সা:) স্বল্পকালীন রাত্রিভ্রমণ। 

মিরাজ হলো- বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বমুখী সিঁড়ি বেয়ে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ। 

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ 

(বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)

মিরাজ নিয়ে হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা আছে। বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) একাধিকবার মিরাজে গিয়েছিলেন। কেউ বলেছেন দুইবার, কেউ বলেছেন তিনবার। 

তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ:) একাধিকবার মিরাজের বক্তব্যগুলো নাকচ করে দিয়ে বলেন: “এসব কথা শুধু অনুমান ভিত্তিক। এগুলো যাহেরী মাজহাবের দুর্বল বর্ণনাকারীদের কাজ। তারা কোনো যখন কোনো ঘটনায় বর্ধিত কোনো শব্দ পেয়েছে, সেটিকেই আলাদা একটি বর্ণনা মনে করেছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর বিরোধপূর্ণ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিকে তারা আলাদা আলাদা ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে। সঠিক কথা হচ্ছে মক্কাতে নবুওয়াতের পর মাত্র একবার মিরাজ হয়েছে। এটিই মুহাদ্দিসীন ও গ্রহণযোগ্য ইমামদের মত। যারা বলে একাধিক মিরাজ হয়েছে, তাদের জন্য আফসোস।” 

(মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১৪-২১৫)

মিরাজ কবে হয়েছিলো? সীরাত লেখকদের মধ্যে এই নিয়ে নানান মত আছে। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আর-রাহিকুল মাখতূম’ বইয়ে ৬ টি মত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো:

যে বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়্যাত লাভ করেন, সেবছর। এটা ইমাম তাবরানির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। নবুওয়্যাতের ৫ বছর পূর্বে। এটা ইমাম আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম কুরতুবির (রাহিমাহুল্লাহ) মত। হিজরতের ১৬ মাস পূর্বে। রামাদ্বান মাসে। নবুওয়্যাতের দশম বছর রজব মাসের ২৭ তারিখ। এটা আল্লামা মনসুরপুরীর (রাহিমাহুল্লাহ) মত।

হিজরতের এক বছর দুই মাস পূর্বে। মহররম মাসে।

হিজরতের এক বছর পূর্বে। রবিউল আউয়াল মাসে। 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

খাদিজা (রা:) ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হবার পূর্বে ইন্তেকাল করেন। আর ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মিরাজের রাত্রে। সুতরাং, মিরাজ হয়েছিলো খাদিজার (রা:) ইন্তেকালের পর। 

এই তথ্যের আলোকে ৬ টি মতের মধ্যে প্রথম তিনটি মত বাদ পড়ে যায়। বাকি রইলো শেষ তিনটি মত। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী (রাহি:) এই সম্পর্কে বলেন: “শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনোটিকে কোনোটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মতো আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।” 

(আর-রাহিকুল মাখতূম, পৃষ্ঠা ১৫৪)

সংক্ষেপে মিরাজের ঘটনা

রাসুল (সা.) এক রাতে হজরত উম্মেহানি (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। তার অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং তাকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান।

জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জমজমের পাশে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ‘কলব’ (অন্তরাত্মা) বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ স্বর্ণের পাত্রে রেখে আবার বক্ষে স্থাপন করেন। এরপর তার দুই কাঁধের মাঝে নবুয়তের সিলমোহর স্থাপন করেন।

এরপর তারা বুরাক নামক বাহনে করে নবী (সা.)-কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। 

(বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৭)

পথিমধ্যে মহানবী (সা.) মদিনা তায়্যিবা, মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থান সিনাই পর্বত এবং ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহেমে অবতরণ করেন।

ওই স্থানগুলোতে তিনি দুই রাকাত করে নামাজও আদায় করেন। (বাজ্জার : ৮/৪০৯, মুজামে কাবির : ৭১৪২, ফাতহুল  বারি : ৭/১৯৯)

বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন:

অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়েন। তারপর মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) তার সামনে এক পাত্র শরাব ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসেন। রাসুল (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাবজাত ও প্রকৃত জিনিস) গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, বায়তুল মামুরেও রাসুল (সা.)-এর সামনে ওই দুটি পাত্রসহ একটি মধুর পাত্রও আনা হয়েছিল। সেখানেও তিনি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৮৭, মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৪)

ধারাবাহিকভাবে আসমান অতিক্রম: 

অতঃপর জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে প্রথম আসমানের কাছে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে রাসুল (সা.)-কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এ সময় যথাক্রমে প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সবাই হুজুর (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুরের কাছে ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। 

বায়তুল মামুর, জিবরাইল (আ.) ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পুনর্বার প্রবেশ করার পালা আসবে না। সপ্তম আসমান থেকে রফরফের (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি) মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের ও বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে তার স্বরূপে দেখেন, তার ছয় শ পাখা ছিল। নিজ চোখে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেন। অতঃপর এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিশেষে আরশে আজিমে গমন করেন। এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব পাওয়া যাবে) বিধান নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৯, ৩৩৪২, ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩ ও ২৬৪; ফাতহুল বারি: ৭/২৫০-২৫৯, মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৫-২৮৬)

ঊর্ধ্বজগতে যেসব নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তারাও বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্য তার সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায়। জিবরাইল (আ.)-এর ইঙ্গিতে নবীজি (সা.)-কে ইমাম বানানো হয়। তিনি নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এরপর বুরাকে সাওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫)

মিরাজের শিক্ষা ও তাৎপর্য

মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) ও তার উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়, 

এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। 

দুই. সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, যেখানে ঈমান-আনুগত্য ও দোয়ার আলোচনা রয়েছে। 

তিন. শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং এর বিনিময়ে ক্ষমার ওয়াদা। 

(মুসলিম, হাদিস নং: ২৭৯, তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৭৬)

মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাত্রে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বর্ণনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বিচিত্র ঘটনাবলি থেকে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল। যেমন

১। এ রাতে নবীজী জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজীকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম, হাদীস ১৬)

২। এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখম-ল ও বক্ষ আচঁড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরীল নবীজীকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গীবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, বরং দুনিয়াতে গীবতকারী এসব লোকদেরকে মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজী। (মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪)

৩। এই মহান রাতে নবীজী এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের স¤পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরীল নবীজীকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়ায করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। 

(মুসনাদে আহমদ, ৩/১৮১)

৪। শবে মেরাজে নবীজী এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সর্পে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরীল জানালেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমদ, ২/৩৫৩,)

৫। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন। 

(তিরমিযী, হাদীস ৩১৪৭)

৬। নবীজী জান্নাতে প্রবেশ করে একপাশে একটি হালকা আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের আওয়াজ? জিবরীল বললেন, মুয়াযযিন বেলালের কণ্ঠ। মিরাজ থেকে ফিরে নবীজী সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বললেন, বেলাল সাফল্য অর্জন করেছে, আমি তার জন্য এমন সব মর্তবা দেখেছি। (আহমাদ ১/২৫৭)

৭। শবে মিরাজে নবীজী এক পবিত্র খোশবুর কাছ দিয়ে গেলেন। তিনি সুধালেন, এটা কীসের  খোশবু? ফেরেশতারা বলল, এটা ফেরাউন-তনয়ার কেশ বিন্যাসকারিনী ও তার সন্তানদের খোশবু। কোনো একদিন চুল আচঁড়াতে গিয়ে তার হাত থেকে চিরুনী পড়ে গেলে সে বিসমিল্লাহ বলেছিল। ফেরাউন-তনয়া বলল আমার পিতা? মহিলা বলল, আমার রব তিনি, যিনি আপনার ও আপনার পিতার প্রতিপালক। ফেরাউন-তনয়া বলল, আমার পিতা ছাড়া কি তোমার অন্য কোনো রবও আছে? মহিলা বলল, হাঁ। এ খবর ফেরাউনের কানে গেলে সে মহিলাকে ডেকে বলল, আমি ছাড়া তোর আরও রব আছে? সে বলল, হাঁ, আমার ও আপনার প্রতিপালক তো মহান আল্লাহ তাআলা। শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ফিরাউন তামায় নির্মিত একটি বড় পাত্রে তেল ভরে খুব গরম করার আদেশ দিল। ওই মহিলা ও তার সন্তানদের এতে নিক্ষেপের হুকুম হল। ফিরাউনের লোকেরা এক এক করে সবাইকে তাতে নিক্ষেপ করতে লাগল। সবার শেষে মায়ের কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশুটির পালা এল। ছোট্ট শিশু মুখ ফুটে মাকে অভয় দিল। বলে উঠল, মা নেমে পড়ো, পিছপা হয়ো না। আখিরাতের আযাবের তুলনায় দুনিয়ার আযাব তো অতি তুচ্ছ। 

(মুসনাদে আহমদ, ১/৩০৯-৩১০)

উল্লেখ্য যে, শবে মেরাজে বিশেষ কোনো ইবাদত-বন্দেগির দিকনির্দেশনা ইসলামে নেই। তাই সম্ভাব্য এই দিনে রোজা রাখা, শবেকদরের মতো এই রাতকে ফজিলতপূর্ণ মনে করা, রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা, এই রাতকে উদ্দেশ করে মসজিদে ভিড় জমানো, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, রাত্রি জাগরণ করা, হালুয়া-রুটির আয়োজন করা ইত্যাদি শরিয়তসম্মত নয়।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার

আরিফুল হক এনামী

মুহাদ্দিস 

সীতাকুণ্ড কামিল মাদ্রাসা

খতিব

শাহ ছমিউদ্দিন রহ. জামে মসজিদ

লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম।

Monday, February 5, 2024

লালসালু উপন্যাসের চরিত্র আলোচনা

. মজিদ: কেন্দ্রীয় চরিত্র। সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক। কুসংস্কার, শঠতা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক।
মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করে এবং সেখানে সে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু
করে। ক্রন্দনরতা মেয়ে তার ভালাে লাগে।
. রহিমা: মজিদের প্রথম স্ত্রী। শক্তিমত্তা তার বাইরের রূপ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঠাণ্ডা ও ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। স্বল্পভাষী ও মজিদের একান্ত অনুগত। গ্রামের লােকেরা তারই অন্যতম সংস্করণ।
. জমিলা: মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। প্রথম দেখায় মজিদকে দুলার বাপ মনে করে।মজিদের আচরণ তার কাছে ভালাে লাগতাে না। জিকিরের সময় সে বাড়ির বাইরে চলে আসায়
সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে। মজিদ তাকে ‘ঝি’ সম্বােধন করে তাড়িয়ে দেয়। মজিদের ধারণা
তাকে জ্বীনে আছর করেছে। তাই তাকে মাজারের সাথে বেঁধে রাখে।
. খালেক ব্যাপারি: প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। তার কাঁধেই গ্রামের সব দায়িত্ব। মজিদের অন্যতম
সহায়ক।
. আমিনা: খালেক ব্যাপারির রূপবতী প্রথম স্ত্রী।১৩ বছর বয়সে তার সঙ্গে বিয়ে হয়।রহিমার মত সেও নিঃসন্তান। তাই আউয়ালপুরের পীরের পানিপড়া খেতে চায়। কিন্তু মজিদ তা জানতে পারে এবং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে খালেক ব্যাপারিকে স্ত্রী তালাক দিতে বাধ্য করে।এবং তিরিশ বছর বয়সে তাকে তালাক দেওয়া হয়।
. তানু: খালেকের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রতি বছর আস্ত আস্ত সন্তান জন্ম দেয় বলে আমিনা বিবির সহ্য হয় না।
. ধলা মিয়া: খালেক ব্যাপারির দ্বিতীয় বউ।তানু বিবির বড় ভাই। খালেক ব্যাপারি তাকে আওয়ালপুরের পীরের কাছে পানি পড়া আনার জন্য পাঠায় কিন্তু সে ভয় পেয়ে ফেরত আসে
মজিদের কাছে। বুড়াের মতন সে ঢেঙ্গ-লম্বা মানুষ।
মােদাব্বের মিয়া: আক্কাসের বাবা। রাগ উঠলে তােতলায়।
. তাহের-কাদের:  তাহের,কাদের,রতন ও হাসুনির মা এরা ভাই-বোন। তাদের বুড়াে বাবা বুড়ি মাকে চ্যালা কাঠ দিয়ে মারতে এলে তারা তা প্রতিরােধ করে। দাঁড় নেয়ে তারা মাছ শিকার করে। এদের বুদ্ধি-বিবেচনা থাকলেও এরা স্বার্থের ঘোরে ঢাকা।
৯. হাসুনির মা: তাহের-কাদের-রতনের বােন। রহিমাকে ধান ভানার কাজে সহায়তা করে। তার স্বামী মৃত।
১০. রতন: তাহের-কাদেরর কনিষ্ঠ ভাই।
১. বুড়াে: তাহের-কাদের-রতন- হাসুনির মার বাবা। ঢেঙ্গা দীর্ঘ মানুষ। হাসুনির মাকে মনের আশা মিটিয়ে প্রহার করে। এর জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। মজিদ এ বিচারে রায় দেয়।
একদিন সন্ধ্যায় কোথায় যেনাে চলে যায়, আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এককালে বুদ্ধিমান লােক
ছিলাে। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরােধ ঘটিয়ে আজ সে নিঃসঙ্গ।
. বুড়ি:তাদের মা। যৌবনকালে হাসি-খুশি-ছটফটে মেয়ে ছিলাে। খই এর মত কথা ফুটতাে তার মুখ দিয়ে। কিন্তু এখন তার দেহ-মন পড়ে গেছে। নিজের স্বামী বুড়াে।যখন হাসুনির মাকে প্রহার করতে গেলে সে উঠোনে পা ছড়িয়ে দিয়ে বিলাপ শুরু করে দেয়।
৩. হাসুনি: রাহিমা তার মােটাতাজা ছেলেকে পুষ্যি রাখতে চায়।
৪. আক্কাস: গ্রামের শিক্ষিত যুবক। ইংরেজি পড়েছে। এখন গ্রামে স্কুল বানাতে চায়। কিন্তু মজিদ সেটা হতে দেয় না। তার বাবা মােদাব্বের মিয়াও তার বিরােধিতা করে।
৫. দুদু মিঞা: সাত ছেলের বাপ।মজিদ তাকে কালেমা জানে কি না জিজ্ঞেস করলে মে ঘাড় ঘুরে আধাপাকা মাথা চুলকায়। মুখে তার লজ্জার হাঁসি-চোখ পিটপিট করে। মাথায় যেনাে ছিট। মজিদ তাকে ব্যাপারির মক্তবে কলেমা শিখার আদেশ দেয়। কারণে-অকারণে খেতে না পাওয়ার কথাটি বলা তার অভ্যাস।
৬. দুদু মিঞার ছেলে: বাপের অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাসে। বাপের মাথা করার ভঙ্গিটা তার কাছে গাধার ভঙ্গির মত মনে হয়।
৭. নানি-বুড়ি: আগামি বছর যখন তনু বিবির কোলে নতুন এক আগুন্তক টা ট্যাঁ করে উঠবে, তখন তার ডাক পড়বে।
১৮. সলেমানের বাপ: বৃদ্ধা-হাঁপানি রােগী। মজিদের মাজার আবিষ্কারের সময় সে দম খিচে লজ্জায় চোখ নত করে রাখে।
৯. কানুর বাপ: মজিদকে এক ছিলিম তামাক এনে দেয়।
০. পীর সাহেব: আউয়ালপুরের পীর। এক সময় তার চোখে আগুন ছিলাে। সে গাছে উঠে বসে থাকে।তার মুরীদদের ধারণা, পীর নাকি সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১. মতলব খা: ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট। পীর সাহেবের পুরানাে মুরিদ।
২. লােকটি: যাকে মজিদ ধানের কথা জিজ্ঞেস করে। সে ঘাড় চুলকিয়ে নিতি-বিতি করে বলে, যা-ই
হয়েছে তা-ই যথেষ্ট। ছেলেপুলে নিয়ে দুই বেলা খেতে পারার কথা বলে সে। তার কোনাে একটা
কথায় মজিদ বৃক্ষের মত দাড়িয়ে থাকে।
৩. খােনকার মােল্লা শেখ: সমাজে জানাযা পড়ায়। তার বাড়ির সামনে মূর্তি নজরে পড়ে।
৪. সরকারি কর্মচারী: তিনি বাইরের বিদেশী। কিন্তু ভেতরে আসলে মুসলমান। তিনি গ্রামে পরদাদার আমলের কিছু কবরের কথা বলেন।
৫. রেহান আলি: গ্রামের মাতব্বর। মজিদ যখন লােকদের গালাগাল করে, তখন সেও ছিলাে।
২৬. জোয়ান মদ্দ কালু মতি: মজিদের গালাগাল শুনে লজ্জায় মাথা হেঁট করে রাখে।
৭. ছমিরুদ্দিন: কোচবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার রক্তাক্ত দেহ দেখে আবেদ-জাবেদের মনে দানবীয়
উল্লাস হওয়ার কথা কিন্তু তারা পাথর হয়ে যায়।
৮. আবেদ-জাবেদ: ছমিরুদ্দিনকে দেখে পাথর হয়ে যায়।
৯. কালু মিঞা: আউয়ালপুরের সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তার মাথা দু’ফাক হয়ে যায়।
৩০. ছুনুর বাপ: মরণরােগে যন্ত্রণা পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
১. খেতানির মা: পক্ষাঘাতে কষ্ট পাচ্ছে। রহিমা তার জন্য দোয়া করে।
২. খ্যাংটা বুড়ি: মাথায় শনের মত চুল। মাজারে এসে তীক্ষ্ম আর্তনাদ শুরু করে ছেলের জন্য।
৩. জাদু: খ্যাংটা বুড়ির একমাত্র ছেলে। বুড়ি ওর জন্য মাজারে এসে আর্তনাদ করে এবং মজিদের
দিকে পাঁচ পয়সা ছুড়ে মারে।
৪. মােদাসের পীর: নাম না জানা পীর। যাকে ঘিরেই মজিদের যত ভণ্ডামি, অভিনয় ও আধিপত্য
বিস্তার।
৫. বড় ডাক্তার: হাসপাতালের বড় ডাক্তার। প্রকৃতপক্ষে মজিদ কম্পাউন্ডারকেই ডাক্তার মনে
করেছিলাে।
৬. কম্পাউন্ডার: করিমগঞ্জের হাসপাতালে মজিদ তাকে ডাক্তার মনে করে। ভাং-গাজা খাওয়া রস খসশূন্য হাড়গিলে চেহারা তার।দুটো পয়সার লোভে তার চোখ চকচক করে।



প্রভাষক পদে নিয়োগের আবেদনপত্র

তারিখ-০১/০১/২০২৪ খ্রিঃ
বরাবর
অধ্যক্ষ
বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ।
বান্দরবান সেনানিবাস, বান্দরবান।

বিষয়ঃ বাংলা বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।

জনাব
যথাবিহীত সম্মান পূর্বক নিবেদন এই যে, গত ১২ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে “দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বিষয়ে একজন প্রভাষক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে সদয় বিবেচনার জন্য আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত ও আনুষাঙ্গিক তথ্যাদি সংযুক্ত করছি।

অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত প্রার্থনা আমার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা পূর্বক উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান করলে আমি আমার শ্রম,মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকব।

বিনীত নিবেদক
নিজের নাম হবে
মোবাইল:

সংযুক্তিঃ

১। পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি ৩ কপি।
২। সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩। অভিজ্ঞতার সত্যায়িত সনদপত্র।
৪। ৭০০ টাকার পে-অর্ডার।

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post