Ad-1

Wednesday, May 30, 2018

মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের গুরুত্ব

মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের গুরুত্ব (রচনা)- পার্ট -০১


"শ্যামল মেঘের প্রসাদ আজ বর্ষিত হোক
ফলে শস্যে সুন্দর হোক
পুষ্পে পল্লবে মাতৃভাষার অপমান দূর হোক।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ভূমিকা:
শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ডস্বরুপ।যে জাতির জীবনে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটবে সে জাতির চিৎ প্রকর্ষ ও সর্বাঙ্গীন
প্রগতির তত বেশি উজ্জ্বল সম্ভাবনা।শিক্ষার বিস্তার যত বেশি,জাতীয় জীবনে প্রাগ্রসরতা সেখানে তত বেশি।শিক্ষাকে জাতীয় জীবনে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োগ।মাতৃভাষার মাধ্যমে ভাব প্রকাশের যেভাবে সুযোগ ঘটে,তা অন্য কোনভাবে সাধিত হতে পারে না।শিশু মনের বোধ শক্তি ও ধারণ শক্তিকে মাতৃভাষার মাধ্যমে যেভাবে জাগানো যায়,তা অন্য কোন বিদেশি ভাষা আংত্ত করা সম্ভব নয়।
মাতৃভাষা কী:
সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাকে বুঝায়য়।একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে।এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ যে ভাষায় তার মনের ভাব প্রকাশ করে,সেটাই হলো সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা।মাতৃভাষা মায়ের মুখের বুলি মাত্র নয়।মাতৃভাষা হলো একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাষা,যা তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে।মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শতধারায় প্রবাহমান।বাঙালির মাতৃভাষা হলো বাংলা।বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের বেচে থাকার অবলম্বন,বাংলা আমাদের অহংকার।তাই কবি অতুল প্রসাদ সেনের ভাষায়
"মোদের গরব মোদের আশা
আ,মরি বাংলা ভাষা।"
মাতৃভাষার গুরুত্ব:
মাতৃভাষা কেবল ভাবের বাহন নয়,শিক্ষারও বাহন।আর কোন দেশের মূল উন্নতির চাবিকাটি হল শিক্ষা।শিক্ষা ছাড়া কোন দেশর উন্নয়ন সম্ভব নয়।এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রতিটি দেশ এগিয়ে চলছে।বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাবে সেসব দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির মূলে রয়েছে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন।মাতৃভাষাকে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তারা নিরক্ষরতা দূর করেছে, গড়ে তুলেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নত,দক্ষ ও শিক্ষিত জনসমাজ।মাতৃভাষার মাধ্যমে তারা অবদান রাখছে জ্ঞান,বিজ্ঞানে,সাহিত্যে,সংস্কৃতিতে।নানা কারণে অন্য যে কোন ভাষার চেয়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজন স্বীকৃত।নিচে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিষদ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো;
১. উপলব্ধি,ধারণা,মননের স্বাভাবিক সামর্থ্য গড়ে তুলে প্রথমত ও প্রধানত মাতৃভাষা।
২. মাতৃভাষা আয়ত্ত করা অন্ন যে কোন ভাষার চেয়ে সহজ।
৩. পরভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভে শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক শক্তির যথেষ্ট অপচয় হয়।সে শিক্ষার সাথে জীবনের ঘনিষ্ঠ যোগও থাকে না।
৪. দেশ কালের সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্য,শিক্ষা ও সংস্কৃতির যে যুগ রয়েছে তার সঙ্গে গভীর মেলবন্ধন রচনা করতে পারে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রধান।
৫. স্বদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ,তাদের প্রতি দায়বদ্ধতার চেতনা গড়ে ওঠে মাতৃভাষার মাধ্যমে।
৬. দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পরভাষায় শিক্ষিক করা সম্ভব নয়।বিদেশি ভাষার শিক্ষার সুযোগ ও সামর্থ্য কেবল মুষ্টিমেয় বিত্তশালী ও মধ্যবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
উল্লেখ্য বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারলেই সবাই জ্ঞাত হবে মাতৃভাষা কেন গুরুত্বপূর্ণ।আজকের জাপান,জার্মানি, ফ্রান্সের কথাই ধরা যাক এসব দেশে জ্ঞান অর্জন করতে গেলে প্রথমেই সেসব দেশের ভাষা শিখতে হয়। তাহলে সে দেশের ভাষায় কি তারা সমৃদ্ধ নয়? তারা কি সেখানে বিজ্ঞানে পিছিয়ে রয়েছে? মোটেও না।তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব অবশ্যই দেওয়া উচিত।

মা ও মাতৃভাষা:
মা আমাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র বিপদের সাথী,দু:খে আশ্রয়স্থল।মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হয়ে মানুষ মায়ের কাছেই ভাষা আয়ত্ত করতে শেখে।জন্ম হতে যে ভাষা উচ্চারণ করে মনের ভাব প্রকাশ করে,তাই মাতৃভাষা।ড:মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন,
"মাতৃভাষা মাতৃস্তনের ন্যায়।"
জননীর স্তন্যদুগ্ধে মাতৃভাষার ভাব দোহন করে মানুষ মানসিক পুষ্ঠি লাভ করে। আজন্ম যে ভাষার সাথে তার পরিচয়, যে ভাষার মধ্য দিয়ে শিশু মাতা-পিতা,আত্মীয় পরিজনদের হৃদয় বৃত্তির অভিব্যক্তি উপলব্ধি করে সে ভাষাই তার অস্থি মজ্জার সাথে মিশে থাকে।মাতৃভাষার মাধ্যমেই আমরা নিজেদের জীবনকে, কৃষ্টিকে এবং চিন্তধারাকে প্রসারিত করতে পারি।হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশের শতমুখী ভাবধারাকে আমরা পরিস্ফুট করতে পারি একমাত্র মাতৃভাষার সাহায্যেই।কবি নিধুবাবু তার কবিতায় লিখেন,
"নানান দেশের নানান ভাষা
বিনে স্বদেশী ভাষা,মিটে কি আশা?
নানা জলাশয়ের নানা নীর
বিনে ধারার জল মিটে কি চাতকীর?"

বিনে স্বদেশী ভাষা,মিটে কি আশা?
নানা জলাশয়ের নানা নীর
বিনে ধারার জল মিটে কি চাতকীর?"
বিনে স্বদেশী ভাষা,মিটে কি আশা?
নানা জলাশয়ের নানা নীর
বিনে ধারার জল মিটে কি চাতকীর?"
শিক্ষাদানে মাতৃভাষার উপযোগিতা:
মাতৃভাষার সঙ্গে শিশু মনের এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।সেই সম্পর্ক পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে লালিত হবার সুযোগ পায়।তাই মাতৃভাষার সাহায্যে স্বাভাবিক ও স্বত:স্ফূর্ত যে ভাবের আদান প্রদান ঘটে, তা হয়ে ওঠে সহজ ও অন্তরঙ্গ।এই অন্তরঙ্গতার পরিবেশে শিক্ষালাভ করলে শিক্ষাকে কৃত্রিম বলে মনে হয় না,বরং সহজ সরল ভাষা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আরম্ভ করে মাতৃভাষার মাধ্যমে পূর্ণজ্ঞান অল্প সময়ের মধ্যে শিশুমনে অধিগত হতে পারে।মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক জন্মগত না হলেও মনের গভীরে যেন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই আত্মলগ্নতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।একটা সহজাত প্রভৃত্তির মতোই তা মনের গভীরে স্থান লাভ করে।
মাতৃভাষা ও শিশু শিক্ষার পরিবেশ :
যথার্থ দৃষ্টিতে বিচার করলে দেখা যাবে যে,বাল্যশিক্ষার সঙ্গে মাতৃভাষার এতখানি নিবিড় যোগ থাকার ফলে শিক্ষার আলোক মনের দৃষ্টি উন্মুক্ত করে দেয়।জীবনকে ব্যবহারিক জগতের সঙ্গে সামঞ্জস্য লাভ করতে সহায়তা করে।
শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে মাতৃভাষা:
মাতৃভাষা মানব জীবনের অমৃত রসায়ন।তাই আজ পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দীক্ষা,রাষ্ট্র পরিচালনার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কোন দেশ পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা শিক্ষা না করে শুধু মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যমেও উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারে।শিল্পে বাণিজ্যে জ্ঞান গরিমায় উন্নতির মূলেও আছে এ মাতৃভাষা।
মাতৃভাষার মাধ্যমে বহু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে এবং সেসব দেশে সর্বক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে।মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে আজ পৃথিবীর মনীষীবৃন্দ একমত।যাদের মনে দেশাত্মবোধ আছে,তাঁরা সকলেই মাতৃভাষাকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করবে।

শিশু তার পারিপার্শ্বিক জগতে যা কিছু দেখে এবং অনুভব করে,তা তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে নিজের ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করে। এভাবে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা সহজ হয়ে ওঠে শিশু মনের কাছে।রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,"বাল্যকাল হইতে যদি ভাষা শিক্ষা হয় এবং ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জীবনযাত্রা নিয়মিত হইয়া থাকে,তবেই আমাদের সমস্ত জীবনের মধ্যে একটা যথার্থ সামঞ্জস্য স্থায়ী হইতে পারে,আমরা বেশ সহজ মানুষের মতো হইতে পারি।"

 

 

1 comment:

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post