Ad-1

Sunday, July 29, 2018

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে জীবনানন্দ দাশ

★জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।


★পিতার নাম: সত্যানন্দ দাশ, মাতা: কুসুমকুমারী দাশ,দাদার নাম : সর্বানন্দ দাশ
★জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ডাকনাম ছিল মিলু।
★পেশা : অধ্যাপক, ইংরেজি
★প্রথম কাব্যগ্রন্থ :'ঝরা পালক(১৯২৭)'। সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি 'দাশগুপ্তের' বদলে কেবল 'দাশ' লিখতে শুরু করেন।
★১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন।লাবণ্য ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন।জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
★এরপর থেকে টানা কয়েকবছর তিনি বেকার ছিলেন।সংসারে স্ত্রীর কাছে তিনি অবহেলিত ও উপেক্ষিত ছিল।বেকার অবস্থায় জন্ম হয় তার মেয়ে মঞ্জুশ্রীর।
★তিনজন নারীর প্রেমে তিনি আচ্ছন্ন ছিলেন
১. 'মনিয়া'- নামক কিশোরি।
২. 'লীলাময়ী'- মামাতো বোন।
৩. কাকা অতুলানন্দের মেয়ে 'শুভনা।'তার ডাক নাম ছিল 'বেবি'।ডায়রিতে লেখা তার নাম B~y।শেষে আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে হলো 'y'।
★বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা'- (১৯৩৫)পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা স্থান করে নেয়, যার নাম ছিল 'মৃত্যুর আগে'। কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে কবিতাটিকে 'চিত্ররূপময়' বলে মন্তব্য করেন।
★১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।
★মৃত্যু ১৯৫৪ সালের ২২ শে অক্টোবর।কিন্তু ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হয় ১৪ ই অক্টোবর।তাকে উদ্ধার করেন চায়ের দোকানের মালিক চূনিলাল।
লেখক পরিচিতি
আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশালে ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি। মায়ের কাছ থেকে তিনি কবিতা লেখার প্রেরণা লাভ করেছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করলেও মূলত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেই তিনি জীবন আতিবাহিত করেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতায় সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের এক জগৎ তৈরি করেন। বিশেষ করে গ্রাম বাংলার নিসর্গের যে ছবি তিনি এঁকেছেন, বাংলা সাহিত্যে তাঁর তুলনা চলে না। সেই নিসর্গের সঙ্গে অনুভব ও বোধের বহুতর মাত্রা যুক্ত হয়ে তাঁর হাতে অনন্য সাধারণ কবিতাশিল্প রচিত হয়েছে। এই অসাধারণ কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চিত্ররূপময়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়াও ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতা, আধুনিক জীবনের বিচিত্র যন্ত্রণা ও হাহাকার এবং সর্বোপরি জীবন ও জগতের রহস্য ও মাহাত্ম্য সন্ধানে তিনি এক অপ্রতিম কবিভাষা সৃষ্টি করেছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন ‘নির্জনতম কবি’ বলে। উপমা, চিত্রকল্প, প্রতীক সৃজন, আলো-আধারের ব্যবহার, রঙের ব্যবহার এবং অনুভবের বিচিত্র মাত্রার ব্যবহারে তার কবিতা লাভ করেছে অসাধারণত্ব। তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিশেষ স্থান রয়েছে। জবিনানন্দের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: ‘ঝড়া পালক’, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘বনলতা সেন’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘ বেলা অবেলা কালবেলা’, ‘রূপসী বাংলা’। ‘কবিতার কথা’ তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ এবং ‘মাল্যবান’ ও ‘সুতীর্থ’ তাঁর বিখ্যাত দুটি উপন্যাস।

জীবনান্দ দাশ ১৯৫৪ সালের ২২-এ আক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

মূলকবিতা
এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে-সবচেয়ে সুন্দর করুণ:

সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল

সেখানে গাছের না: কাঁঠাল অশ্বত্থ বট জারুল হিজল

সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ

সেখানে বারুণী তাকে গঙ্গা-সাগরের বুকে-সেখানে বরুণ

কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল

সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।

সেইখানে লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ

সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকার ঘাসের উপর

সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের পর-

শঙ্খমালা নাম তার : এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে

তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো-বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর

তাই-সে-জন্মেছে নীল বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর।

শব্দার্থ ও টীকা
– এই পৃথিবীতে....সুন্দর করুণ-কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, মমতারসে সিক্ত, সহানুভূতিতে আর্দ্র ও বিষণ্ন দেশ বাংলাদেশ।

– নাটা-লতাকবঞ্চ; গোলাকার ক্ষুদ্র ফর বা তার বীজ।

– সেখানে ভোরের... জাগিছে অরুণ -বাংলার প্রভাতের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা আঁকতে গিয়ে ভোরে মেঘের আড়াল থেকে গাঢ় লাল সূর্যের আলো বিচ্ছুরণ যেন ধারণ করেছে করমচা বা করমচা ফুলের রং।

– বারুণী - বরুণানী। বরুণের স্ত্রী। জলের দেবী।

– সেখানে বারুণী থাকে.. অবিকল জল -জলে পরিপূর্ণ এদেদেশের অসংখ্য নদী-নালা স্রোত ধারার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্যের রূপ আঁকা হয়েছে এই পঙ্ক্তি দুটির মধ্যে।

– সেইখানে শঙ্গচিল... অস্ফুট, তরুণ-বাংলাদেশ প্রাণী আর প্রকৃতির ঐক্য ও সংহতিতে একাকার। পানের বনে হাওয়ায় যে চঞ্চলতা জেগে ওঠে সেই চঞ্চলতা সম্প্রসারিত হয় দূর আকাশের শঙ্খচিলে। আর মিষ্টি ম্রিয়মাণ তরুণ ধানের গন্ধের মতো লক্ষ্মীপেঁচাও মিলেমিশে থাকে প্রকৃতির পরিবেষ্টনীতে।

– বিশালাক্ষী - যে রমণীর চোখ আয়ত বা টানাটানা। আয়তলোচনা সুন্দরী নারী।

– সুদর্শন -এক ধরনের পোকা।

– বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর -এখানে আয়তলোচনা দেবী দুর্গার কথা বলা হয়েছে।

পাঠ-পরিচিতি
অসাধারণ সুন্দর এই দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যন। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি পৃথিবীর কোথাও নেই আর। অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ছড়িয়ে আছে এদেশের জনপদে-অরণ্যে। মধুকূপী, কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল তাদেরই কোনো কোনোটির নাম। এদেশের পূর্বকাশে যখন সূর্য ওঠে মেঘের আড়াল থেকে তার রং হয় করঞ্জা রঙিন। আর এদেশের প্রতিটি নদ-নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সেই জল ফুরায় না কখনই। জলের দেবতা অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে সোতস্বিনী রাখে এদেশের অসংখ্য নদীকে। প্রকৃতি আর প্রাণিকুলের বন্ধনে গড়ে উঠেছে চির-অবিচ্ছেদ্য এক সংহতি। তাই হাওয়া যখন পানের বনে চঞ্চলতা জাগায় তখন দূর আকাশের শঙ্খচিল যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট লক্ষ্মীপেঁচাও মিশে থাকে প্রকৃতির গভীরে, অন্ধকারের বিচিত্ররূপ এই দেশে। অন্ধকার ঘাসের ওপর নুয়ে থাকে লেবুর শাখা কিংবা অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায়। জন্ম দেয় শঙ্খমালা নামের রূপসী নারীর হলুদ শাড়ির বর্ণশোভা। কবির বিশ্বাস, পৃথিবীর অন্য কোথায় শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে না। কেননা বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই নীল-সবুজে মেশা বাংলার ভূপ্রকৃতির মধ্যে এই অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।
★করুণ বলা হয়েছে, কারণ- তীব্র দেশ প্রেমের কারণে তিনি দেশের জন্য মনে মনে করুণা অনুভব করেন তাই।
★বিশালাক্ষী হলো - পরমা সুন্দরী অরণ্যদেবী,যিনি সুন্দরবনের আশপাশের লোকদের দ্বারা পূজিত।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

সুভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর   জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ১. সুভার বাবার নাম কি? ২. সুভা কোথায় বসে থাকত? ৩. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? ৪. সুভার গ্রামের নাম কী? ৫...

Most Popular Post