Ad-1

Wednesday, October 31, 2018

শুদ্ধ ও অশুদ্ধির প্রয়োগ-০১

শব্দ ও বাক্যে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ
ব্যাকরণ ভাষাকে সুন্দর, মার্জিত ও শৃংখলাবদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই ব্যাকরণ ঠিক রাখলে ভাষার অপ্রয়োগ হয় না। ব্যাকরণজ্ঞান থাকলে ভাষার অপপ্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়। বিভিন্ন কারণে ভাষার অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে। যেমন : বানান, শব্দ রূপান্তর, শব্দদ্বিত্ব, বচনজাত, নির্দেশক, সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, বিভক্তি, প্রত্যয়,চিহ্ন, পক্ষ, কারক, বাচ্য, বাগধারা ইত্যাদি।
১.বিশেষ্য ও বিশেণের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. অ: লোকটা নির্দোষী।
শু: লোকটা নির্দোষ।
২. অঃ- সদা সর্বদা তোমার উপস্থিত প্রার্থনীয়।
শুঃ- সদাসর্বদা তোমার উপস্থিতি প্রার্থনীয়।
৩. দুর্বলবশত তিনি আসিতে পারেন নাই।
শুঃ- দুর্বলতাবশত তিনি আসিতে পারেন নাই।


২. সাধু চলিত ভাষারীতির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

১. তাহার কথা মতো চলা ঠিক নয়।
শুদ্ধবাক্য : তার কথা মতো চলা ঠিক নয়।
২. যা বলিব সত্যবলিব।
শুদ্ধবাক্য : যাহা বলিব সত্য বলিব/ যা বলব সত্য বলব।
৩. তাহাকে কলেজে যাইতে হবে।
শুদ্ধবাক্যঃ-  তাকে কলেজে যেতে হবে।
৪. তাহারে যেন সবাই ভূল করিবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
শুদ্ধবাক্যঃ- তারা যেন সবাই ভুল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।


৩.বানানের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. পাষান হৃদয়ও ভালোবাসায় গলে যায়।
শুদ্ধবাক্য : পাষাণ হৃদয়ও ভালোবাসায় গলে যায়।
 ২. নিরোগ লোক প্রকৃত সুখী।
শুঃ- নীরোগ লোক প্রকৃত সুখী।
৩. অভাবগ্রস্থ ছাত্রটি তাহার দুরাবস্থার কথা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বর্ণনা করিল।
শুঃ- অভাবগ্রস্ত ছাত্রটি তাহার দুরবস্থার কথা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বর্ণনা করিল।
৪. অতিরিক্ত খাটুনিতে তার স্বাস্থ ভেঙে গেছে। 
শুঃ- অতিরিক্ত খাটুনিতে তার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। 
৫. অল্পজ্ঞান লোক বিপদজনক। 
শুঃ- অল্পজ্ঞান লোক বিপজ্জনক। 
৬.আজ অপরাহ্নে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ইরান ও জার্মানের মধ্যে প্রতিযোগীতা হবে।
শুঃ- আজ অপরাহ্ণে ঢাকা স্টেডিয়ামে ইরান ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।
৭. আমার এ কাজে মনযোগ নেই।
শুঃ- আমার এ কাজে মনোযোগ নেই।
৮. আদ্যান্ত শুনিয়া তিনি চমকিয়া উঠিলেন।
শুঃ- আদ্যন্ত শুনিয়া তিনি চমকিয়া উঠিলেন।
৯. তাহাকে শান্তনা দেওয়ার সামর্থ আমার নেই।
শুঃ- তাহাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।
১০. দারিদ্রতা আমদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। 
শুঃ- দরিদ্রতা/দারিদ্র্য আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। 


৪. অতিশায়নের মাধ্যমে ভাষায় অশুদ্ধ প্রয়োগ:
১. রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠতম/তর।
শুদ্ধ : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠ।
২. শুনেছি আপনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
শুদ্ধ:শুনেছি আপনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন।
৩. বাসের ধাক্কায় তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
শুদ্ধ : বাসের ধাক্কায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
৪. শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
শুদ্ধ : শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষ/উৎকৃষ্টতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
৫. সে ক্যান্সারজনিত কারণে মারা গিয়েছে।
শুদ্ধ : সে ক্যান্সার/ক্যান্সারজনিক রোগে মারা গিয়েছে।

৬. বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।

শুঃ- বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

৭. সমগ্র জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল ভালো।

শুঃ- সমগ্র জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল শ্রেষ্ঠ।


৫.বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
শুদ্ধয : সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর/যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
২. লক্ষ লক্ষ জনতারা সব সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
শুদ্ধ: লক্ষ লক্ষ জনতা সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
৩. যেসব ছাত্রদের নিয়ে কথা তারা বখাটে।
শুদ্ধ : যেসব ছাত্রকে নিয়ে কথা তারা বখাটে।
৪ আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি, যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
শু : আমরা এমন কিছু মানুষকে চিনি যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
৫. কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
শু: কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
৬. নতুন নতুন ছেলেগুলো কলেজে বড়ো উৎপাত করে।
শুঃ- নতুন ছেলেগুলো কলেজে বড়ো উৎপাত করে।
৭. সব মাছগুলোর দাম কত?
শুঃ- সব মাছের দাম কত?
৮. যাবতীয় লোকসমূহ সভায় উপস্থিত ছিল।
শুঃ- যাবতীয় লোক সভায় উপস্থিত ছিল।


৬.নির্দেশকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
টা/টি/খানা/খানিব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে এইবা ব্যবহার করে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :
১. ঐ লোকটি খুব সৎ।
শুদ্ধবাক্য : লোকটি খুব সৎ।
২. আমি এই মানুষটিকে চিনি।
শুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষকে চিনি।/আমি মানুষটিকে চিনি।

৭.সন্ধির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জাস্কর।
শুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জা কর বা লজ্জাজনক।
৩. এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরাবস্থায় আছেন।
শুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরবস্থায় আছেন।
৪. ইত্যাবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।
শুদ্ধবাক্য : ইত্যবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।

৮.সমাসের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ঘি মাখা ভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
শুদ্ধবাক্য : ঘিভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
২. আগে সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রাজা দেশ চালাতেন।
শুদ্ধবাক্য : আগে সিংহাসনে বসেরাজা দেশ চালাতেন।
৩. রীতিকে অতিক্রম না করেও যথারীতি সে বড়লোক।
শুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও সে বড়লোক।

৯.বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

বহুবচনজাতীয় শব্দে কেবসে না। যেমন: তাদেরকে, আমাদেরকে, পাগোলগুলোকে। 
১. ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও।
শুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।/ ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।
২. তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না। 

আবার এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন: বুকেতে, চোখেতে। 

বস্তুবাচক বা প্রাণিবাচক শব্দের কে, রেবসে না। যেমন: ঘড়িকে, কলমকে, ছগলকে, বইকে, পাখিরা, মেঘরা, গানকে, সাপকে, মাছকে। 

তবুও বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :

শুদ্ধবাক্য : তাদের দিয়ে একাজ করিও না।
৩. ভর দুপুর একটু ঘুমোয়।
শুঃ- ভর দুপুরে একটু ঘুমোয়।
৪. তাহার কথা বিশ্বাস কী?
শুঃ- তাহার কথায় বিশ্বাস কী? 
৫. বাঁশ ঝাড়ে রাতে জোনাকী জ্বলে।
শুঃ- বাঁশের ঝাড়ে রাতে জোনাকি জ্বলে।

১০.প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
অতিরিক্ত প্রত্যয় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :
১. দারিদ্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
শুদ্ধবাক্য : দারিদ্র্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
২. বিকার লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।
শুদ্ধবাক্য : বিকৃত লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।


১১.উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
শুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
২. অক্লান্তিহীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
শুদ্ধবাক্য : ক্লান্তিহীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
চিহ্নের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. রহিমা খুব সুন্দরী।
শুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দর।
২. সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখিকা।
শুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখক। /সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখিকা।
পক্ষের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
পক্ষের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।
শুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে না।
২. এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হবে না।
শুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হয় না।

 

 

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post