১. শীতের সকাল
ছয়টি ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর মধ্যে শীতের অবস্থান হেমন্তের পর আর বসন্তের আগে। গাছের ঝরা পাতায় ঘটে শীতের আগমন আর বসন্তের নতুন পাতা জাগিয়ে ঘটে শীতের বিদায়। শীতকাল এ দেশের প্রকৃতির অন্য রকম রূপ, যা সম্পূর্ণভাবে ধারণ করে শীতের সকাল। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর পরিবেশকে করে মনোরম। যখন এই কুয়াশার চাদর ভেদ করে চারদিকে রুপালি আলো ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাড়িঘর, গাছপালা ও প্রকৃতি ঝলমল করে ওঠে। শীতের সকালে নানা ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। সকাল বেলার রোদে পিঠা খাওয়ার যে আনন্দ, তা সব আনন্দকেই ছাড়িয়ে যায়। এই আনন্দ চারপাশে উত্সবের সমারোহ তৈরি করলেও শীতের সকাল বেলাটা মানুষ লেপ-কাঁথার নিচেই কাটাতে ভালোবাসে। শীতের সকাল অলস আর উত্সবের আমেজে উপভোগ্য হলেও গরিবদের জন্য তা ঠিকই কষ্টের। সূর্যের আলোর তীব্রতা বাড়লে দূর হয় শীতের সকালের আমেজ। শীতের সকাল প্রকৃতিকে এক পবিত্র সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে, যা ছড়িয়ে থাকে সারা বেলা।২. একুশে ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সর্ববৃহত্ আন্দোলনের নাম। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির বেদনা, স্মৃতি, আনন্দ ও মহিমা আমাদের জাতীয় চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এ চেতনা আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা। ব্রিটিশ দুঃশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয় দুটি রাষ্ট্রে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথমেই আমাদের বাংলা ভাষাকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এ দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্রসমাজের দুর্বার আন্দোলনের ফলে পাকিস্তানিরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু দুর্জয় ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করলে পাকিস্তানি শাসকেরা মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। হত্যা করে সালাম, বরকত, রফিক, শফিকসহ নাম না জানা আরও অনেককে। জীবনের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে তাঁরা রক্ষা করেন। ফলে বাংলা ভাষা ১৯৫৬ সালে মর্যাদা পায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। এর পর থেকে এ দিনটির স্মরণে একুশ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই বিরল ঘটনাকে সম্মান দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়। এখন প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বের প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মুক্তির চেতনা।৩. বাংলা নববর্ষ:
পয়লা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ উত্সব। সম্রাট আকবরের সর্বপ্রথম বাংলা সনের প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের যাত্রা শুরু হয়। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে এই উত্সব সব বাঙালি উদ্যাপন করে থাকে প্রবল উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। একসময় জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পুণ্যাহ আয়োজন করতেন। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করায় সে আয়োজন দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড় এবং বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ। সংস্কৃতি সংগঠন ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে নববর্ষে রমনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ধারাবাহিকতায় আমরা আজও নববর্ষ উত্সব মন ও মননে লালন করছি। চারুকলা প্রতিবছর আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রার। এই দিনে ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি ও মেয়েরা নানা রঙের শাড়ি পরে পরিবেশ বর্ণিল করে তোলেন। এটি আমাদের জাতীয় উত্সব, সেহেতু আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এ উত্সবের গুরুত্ব ঠিকমতো বোঝা।৪. কম্পিউটার:
আভিধানিক অর্থে কম্পিউটার হলো এক ধরনের যন্ত্র । কিন্থ আজকাল কম্পিউটারকে কেবল গণনাকারী বলা চলে না। এখন তা এমন এক ইলেকট্রনিক যন্ত্রে র ধারণা দেয় যা অগণিত তথ্য বা উপাত্ত গ্রহণ করে অত্যন্থ দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সংরণ, গণনা বিশ্লেষণ ইত্যাদি করতে পারে। কম্পিউটার যন্ত্রে র মূল আবিষ্কারক চার্লস ব্যাবেজ। মানুষ যেমন মগজে রাখা, স্মৃতি অভিজ্ঞতা, তথ্য ও তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করে কম্পিউটারের কাজ ও তেমনি। কম্পিউটার এক বিস্ময়কর আবিষ্কার-যা ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে মহাশূন্য গবেষণায় কাজ করছে। কম্পিউটার জীবনের সর্বেেত্র সাড়া জাগিয়েছে। রোগীর রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। গবেষণার ক্ষেত্রে এবং পুস্তক প্রকাশনায় কম্পিউটার বিস্ময়কর অবদান রাখতে সম হয়েছে। আজকাল পরীার খাতাও দেখা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। কম্পিউটার মানুষের বিচিত্র কর্মকার যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধন করছে তার সুফল অবশ্যই জাতির জন্য সম্প্রসারণ করতে হবে। ১৯৫২ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানী জনডন নিউম্যান সর্বপ্রথম কম্পিউটারের আবিস্কারের পরিকল্পনা করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার তৈরীর কাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে।আধুনিক কম্পিউটারের জনক হচ্ছেন চার্লস ব্যাবেজ। কম্পিউটার মানব জীবনের নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে সর্বাধুনিক কল-কারখানা ও পারমানবিক চুল্লি কম্পিউটারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রি ত হচ্ছে। কম্পিউটারের সাহায্যে বর্তমানে বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি কম্পোজ ও মুদ্রণের কাজ নির্ভুল এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন। আমাদের দেশেও কম্পিউটারের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলছে। মানুষ হয়ে পড়ছে কম্পিউটার নির্ভর।৫. স্বাধীনতা দিবস:
স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এ দেশের সশস্ত্র স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ দিনটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদার অংশ। ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু গণমানুষের রায়কে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। এ দেশের মানুষ তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি আন্দোলন শুরু করে। এ দেশের মানুষের আন্দোলনে ভীত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। দেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায়। এ দেশের সাহসী বাঙালিও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল বলে ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবছর এ দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ মর্যাদায় পালিত হয়। স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরবের ও মর্যাদার।
No comments:
Post a Comment