Ad-1

Tuesday, August 6, 2019

অংশীদারী ব্যবসা

অংশীদারি ব্যবসায় হলো চুক্তির দ্বারা দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে যে ব্যবসায় গড়ে উঠে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে, সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ২জন ও সর্বোচ্চ ২০জন হবে এবং ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ২জন থেকে সর্বোচ্চ ১০জন হবে। চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। চুক্তি ছাড়া কোনো অংশীদারি ব্যবসায় হতে পারে না।

১.অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।

একটি মাঝারি ধরনের সংগঠন হিসেবে অংশীদারি সংগঠনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা উক্ত সংগঠনকে ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। নিম্নে অংশীদারি ব্যবসায়ের উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সহজ গঠন : এ সংগঠনের অন্যতম সুবিধা হলো এটি গঠন করা খুবই সহজ। সদস্যগণ নিজেরা পুঁজি সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অংশীদারি সংগঠন গঠন করতে পারে।
২. অধিক পুঁজি : অংশীদারি সংগঠনে একাধিক সদস্য থাকার কারণে একমালিকানা সংগঠনের তুলনায় এর মূলধন বেশি।
৩. যৌথ ব্যবস্থাপনা : অংশীদারি সংগঠনের সদস্যগণ নিজস্ব দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব ভাগাভাগি করে যৌথভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে পারেন।
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত : সদস্য সংখ্যা সীমিত থাকায় যে কোন জটিল পরিস্থিতিতে সদস্যগণ একত্রিত হয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৫. নতুন অংশীদার গ্রহণ : ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অংশীদারি সংগঠনে নতুন অংশীদার গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে সকল অংশীদারের সম্মতিক্রমে চুক্তিসম্পাদন করতে হয়।
৬. গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত : অংশীদারি সংগঠনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৭. ঝুঁকি বণ্টন : অংশীদারি সংগঠনে চুক্তি অনুযায়ী লোকসান ও দায় সকলের মধ্যে বণ্টিত হয়। ফলে ঝুঁকি হ্রাস পায়।
৮. মিতব্যয়িতা : অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্যরা সরাসরি জড়িত থেকে ব্যবসায় পরিচালনা করে বলে মিতব্যয়িতা অর্জন করা সম্ভব।
৯. অধিক গণসংযোগ : অংশীদারি সংগঠনে অধিক সদস্য থাকায় ব্যবসায়ের প্রয়োজনে অধিক গণসংযোগ সম্ভব।
১০. দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ : একমালিকানার তুলনায় অংশীদারি সংগঠনের মূলধন বেশি এবং পরিধি ব্যাপক হওয়ায় অধিক বেতন দিয়ে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগ করা যায়।
১১. ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়ন : অংশীদারি সংগঠনে বিভিন্ন বিভাগে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমাবেশ ঘটে বলে ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়ন সম্ভব হয়।
১২. স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস : এ ব্যবসায়ে যৌথ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয় বলে একক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকে না এবং সবাই একে অপরের মতামতকে গুরম্নত্ব দেয়।
১৩. ঋণ সুবিধা : অধিক লোক যৌথভাবে সংগঠনের দায় বহন করে বলে ব্যক্তিগতভাবে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অংশদারি ব্যবসায় সহজেই অধিক ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকে।
১৪. উত্তোলনের সুযোগ : অংশীদারি সংগঠনের সদস্যগণ চুক্তি অনুযায়ী কারবার থেকে নির্ধারিত পরিমান অর্থ উত্তোলন করতে পারে।
১৫. সহজ বিলোপসাধন : অংশীদারি সংগঠন গঠন করা যেমন সহজ তেমনি প্রয়োজনে বিলোপসাধনও সহজে করা যায়।
উপরিউক্ত সুবিধাগুলো ছাড়াও একটি অর্থনৈতিক সংগঠন হিসেবে অংশীদারি সংগঠন আরো নানাবিধ সামাজিক, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে।

২. অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর।

অংশীদারি সংগঠনের অনেকগুলো সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. অসীম দায় : অংশীদারি সংগঠনের অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে অংশীদারদের অসীম দায়। সংগঠনের যে কোন দায়ের জন্য অংশীদারের ব্যক্তিগত স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পত্তি দায়বদ্ধ থাকে।
২. স্থায়িত্বের অনিশ্চয়তা : অংশীদারি সংগঠনের আইনগত পৃথক কোন সত্তা নেই বলেই এর স্থায়িত্ব কম।
৩. সীমিত মূলধন : অংশীদারি সংগঠনের সদস্য সংখ্যা একটি পর্যায় পর্যনত্ম সীমাবদ্ধ এবং যৌথ কোম্পানির তুলানায় কম বলেই এর মূলধন সীমিত।
৪. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব : যদিও পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস হচ্ছে অংশীদারি সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। বাসত্মবে অংশীদারি সংগঠনে এর প্রচুর ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।
৫. পৃথক সত্তার অভাব : অংশীদারি সংগঠনে পৃথক কোন সত্তা নেই, মালিকের সত্তাই ব্যবসায়ের সত্তা। তাই মালিকের অবর্তমানে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রসত্ম হয়।
৬. যৌথ দায়িত্বের ঝুঁকি : অংশীদারি সংগঠনে দায়িত্ব যৌথভাবে থাকায় অনেক সময় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন হয় না। তখন সকলের দায়িত্ব যেন কারো দায়িত্ব নয়-এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
৭. গোপনীয়তার অভাব : অংশীদারি সংগঠন যৌথভাবে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা হয় বলে ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বিনষ্ট হয়।
৮. শেয়ার হসত্মানত্মর নয় : অংশীদারি সংগঠনের শেয়ার অন্যের নিকট বিক্রয় ও হসত্মানত্মর করা যায় না।
৯. সিদ্ধানত্ম গ্রহণে বিলম্ব : অংশীদারি সংগঠনে সকলের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধানত্ম নিতে হয় বলেই সিদ্ধানত্ম গ্রহণে বিলম্ব হয়।
১০. দলবদ্ধ প্রচেষ্টার অভাব : অংশীদারি সংগঠন যদিও একদল সদস্যের সংগঠন কিন্তু বাসত্মবে দলবদ্ধ প্রচেষ্টার অভাব থাকায় অংশীদারি সংগঠন সর্বদা সফল হতে পারে না।
১১. গণ আস্থার অভাব : অংশীদারি সংগঠনের আইনগত সত্তা না থাকায় এর ওপর জনসাধারণের আস্থা অনেক ক্ষেত্রে কম।
১২. অসম মুনাফা বণ্টন : অংশীদারি সংগঠনে অনেক সময় অসম হারে মুনাফা বণ্টন হয়। তাই অনেক সদস্যের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

পরিশেষে বলা যায়, সুবিধার পাশপাশি অংশীদারি সংগঠনে অনেক অসুবিধা রয়েছে। অংশীদারদেরকে ব্যবসায়িক অসুবিধাসমূহ দুর করে ব্যবসায় কার্যে গতি আনতে হয়।

৩. অংশীদারি ব্যবসায় গঠন প্রণালী আলোচনা কর।

চুক্তি সম্পাদানে যোগ্য কতিপয় ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তাদের সংগৃহীত মূলধন একত্রিত করে অংশীদারি সংগঠন গঠন করতে পারে। এ গঠন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদেরকে কতগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. নির্দিষ্ট সংখ্যক অংশীদার সংগ্রহ : একটি অংশীদারি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হলে উদ্যোক্তাগণকে প্রথমেই অংশীদারি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক যোগ্য সদস্য সংগ্রহ করতে হবে।
২. চুক্তি সম্পাদন : দ্বিতীয় পর্যায়ে অংশীদারি সংগঠন প্রতিষ্ঠায় একত্রিত ব্যক্তি নিজেদের করণীয় এবং স্বার্থ সংশিস্নষ্ট ভবিষ্যত বিষয়াবলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করবেন।
৩. নিবন্ধ : এ পর্যায়ে উদোক্তাগণ সরকার অনুমোদিত নিবন্ধকের দপ্তরে নির্ধারিত ফি প্রদানপূর্বক ব্যবসায়ের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন। নিবন্ধক দাখিলকৃত কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট হলে সংগঠনের নাম তালিকাভুক্ত করবেন।
৪. ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ : এ পর্যায়ে উদ্যোক্তগণ সংশিস্নষ্ট সরকারি অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করবেন।
৫. অন্যান্য সরকারি দপ্তরের অনুমতি : এ পর্যায়ে উদ্যোক্তাগণ ব্যবসায়ের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশিস্নষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়।
৬. ব্যবসায়ের কার্যারম্ভ : উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হলেই উদ্যোক্তাগণ কার্যারম্ভ করতে পারেন। অর্থাৎ এ পর্যায়ে অংশীদারগণ প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরম্নর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে পারেন।

৪. চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি_ ব্যাখ্যা কর।

অংশীদারি আইনে চুক্তির যে অবস্থান এবং সংগঠন পরিচালনায় চুক্তির গুরম্নত্ব ও তাৎপর্য হতে জোরালোভাবে বলা যায় চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে চুক্তি থেকেই অংশীদারি ব্যবসায়ের জন্ম। কেবলমাত্র মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যক্তির মিলিত সংগঠনকে অংশীদারি সংগঠন বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যনত্ম তাদের মধ্যে কোন চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি না হবে। একটি অংশীদারি কারবারের নিরূপণে সর্বাগ্রেই বিবেচনায় নেয়া হয় অংশীদারি চুক্তিপত্রকে। অর্থাৎ চুক্তিপত্র ছাড়া বা
চুক্তি ব্যতীত অংশীদারী ব্যবসায় গঠন অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত দৃষ্টানত্মগুলো প্রণিধানযোগ্য :
১. জন্মগত অধিকার : পিতার মৃতুর পর সন্তান জন্মগত অধিকার বলে পিতার ব্যবসায় থেকে মুনাফা ভোগ করার অধিকারী। কিন্তু তাদেরকে অংশীদারি সংগঠনের অংশীদার বলা যায় না। কারণ তাদের মধ্যে কোন চুক্তিবদ্ধ সম্মতি নেই।
২. পারিবারিক বন্ধন : পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ একান্নবর্তী হিন্দুু পরিবারের সদস্যগণ পরিবারের সমুদয় সম্পত্তির ভাগীদার হলেও এরূপ ব্যবসায়কে অংশীদারি সংগঠন বলা যাবে না।
৩. পদমর্যাদা : পদমর্যাদা অনুযায়ী কারবারে অবদানের জন্য কর্মকর্তাদেরকে মুনাফার কিছু অংশ প্রদান করা হলেও তাদেরকে অংশীদার বলা যাবে না।
৪. পেশাদারি সংগঠন : পেশাদারী নর্তকী বা গায়িকা হিসেবে কয়েক জনের একটি দল উপার্জিত টাকা সমান ভাগ করে ভোগ করলেও চুক্তির অনুপস্থিতিতে এরূপ সংগঠনকে অংশীদারি সংগঠন বলা যাবে না।
৫. ঋণ চুক্তি : কারবারের ঋণদাতাকে সুদ ছাড়া মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হলেও তাকে অংশীদার বলা যাবে না। কারণ তার সাথে অংশীদারি চুক্তি হয়নি।
৬. নাবালক : একজন নাবালককে সুদ বা লাভ ভোগের জন্য সদস্য করা হলেও তাকে অংশীদার বলা যাবে না। এমনকি নাবালক সনত্মান মৃত পিতার সম্পদের অধিকারী হলেও ব্যবসায়ের অংশীদার হতে পারে না।
৭. সমাজসেবা : কতিপয় ব্যক্তি সমাজসেবার উদ্দেশ্যে ব্যবসায় গঠন করলে তাকে অংশীদারি সংগঠন বলা যাবে না। কারণ তাদের মধ্যে অংশীদারি চুক্তি নেই বরং সমাজসেবার উদ্দেশ্য রয়েছে।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক না থাকার কারণে উলেস্নখিত ব্যক্তিগণ অংশীদার নন এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট সংগঠন অংশীদারি সংগঠন নয়। আর এ থেকে বলা যায় চুক্তিই অংশীদারি সংগঠনের মূল ভিত্তি।

৫. অংশীদারি চুক্তিপত্র কী?

একটি সংগঠনের উদ্যোক্তাগণ কারবারের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য, মূলধন, কার্যপদ্ধতি, লাভ লোকসান বণ্টন ও পারস্পরিক স্বার্থ সংক্রানত্ম বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধানত্মে ঐকমত্য হলে তাকে চুক্তি বলে এবং উক্ত সিদ্ধানত্ম লিখিত আকারে প্রকাশ করলে তাকে চুক্তিপত্র বলে। অংশীদারি সংগঠনের নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, পুঁজি, সদস্যদের বিবরণ, লভ্যাংশ বণ্টন, ব্যবসায় ও হিসাব পরিচালনা, উত্তোলন, বিরোধ মীমাংসা পদ্ধতি, ব্যবসায়ের বিলোপসাধন ও সম্পত্তির মূল্য নিরূপণ ইত্যাদি বিষয়ে সকল অংশীদারের সম্মতি ও সিদ্ধানত্ম যে পত্রে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বলে।

পরিশেষে বলা যায়, অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের লক্ষ্যে অংশীদারগণ পারস্পরিক সম্মতিক্রমে ব্যবসায় সংক্রানত্ম বিভিন্ন বিষয় যে দলিলে লিপিবদ্ধ করে তাকেই অংশীদারি চুক্তিপত্র বলে।

৬. অংশীদারি চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তুসমূহ বর্ণনা কর।

অংশীদারি চুক্তিপত্র এরূপ ব্যবসায় পরিচালনার ভবিষ্যৎ দিকদর্শন হিসেবে কাজ করে। তাই বিষয়বস্তু এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে সৃষ্ট হতে পারে এমন সকল সমস্যার সহজ সমাধান এতে পাওয়া যায়। এ লক্ষে চুক্তিপত্রে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের উলেস্নখ থাকা উচিত :
১. অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠনের নাম;
২. ব্যবসায়ের ঠিকানা;
৩. ব্যবসায়ের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও আওতা;
৪. সংগঠনের স্থান ও সম্ভাব্য এলাকা;
৫. ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব;
৬. অংশীদারদের নাম, ঠিকানা ও পেশা;
৭. ব্যবসায়ের মোট মূলধনের পরিমাণ;
৮. অংশীদারদের প্রত্যেকের প্রদত্ত পুঁজির পরিমাণ ও তা পরিশোধ পদ্ধতি;
৯. মূলধনের উপর সুদ দেয়া হবে কি না, হলে কী হারে;
১০. অংশীদারগণ ব্যবসায় হতে কোনো অর্থ উত্তোলন করতে পারবে কি না, পারলে কে কত বা কী হারে পারবে;
১১. উত্তোলিত অর্থের উপর সুদ ধরা হবে কি না, হলে কী হারে;
১২. ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান বণ্টন পদ্ধতি ও হার;
১৩. ব্যবসায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি;
১৪. ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণ ও হিসাব নিরীক্ষণ পদ্ধতি;
১৫. ব্যবসায়ের হিসাব বহি সংরক্ষণ ও পরিদর্শন সংক্রনত্ম নিয়ম;
১৬. যে ব্যাংকে হিসাব খোলা হবে তার নাম, ঠিকানা ও হিসাবের ধরন;
১৭. ব্যাংক হিসাব পরিচালনাকারীর নাম ও পদবি;
১৮. ব্যবসায়িক দলিলপত্রে স্বাক্ষর প্রদানকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নাম ও পদবী;
১৯. ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কোন অংশীদার ঋণ সরবরাহ করলে তার ওপর দেয় সুদের হার;
২০. ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অন্যত্র হতে ঋণ সংগ্রহ পদ্ধতি;
২১. অংশীদারগণের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা;
২২. অংশীদারগণের কোন বেতন বা পারিশ্রমিক দেয়া হবে কি না, হলে কী পরিমাণ;
২৩. ব্যবসায়িক সুনাম মূল্যায়ন সম্পর্কিত বিধিবিধান;
২৪. নতুন অংশীদার গ্রহণ ও প্রয়োজনে বর্তমান কোনো অংশীদারকে বহিষ্কারের নিয়ম;
২৫. কোনো অংশীদারের মৃতু্য বা অবসর গ্রহণকালে ব্যবসায়ের দায় ও সম্পত্তি নিরূপণ এবং পাওনা পরিশোধ পদ্ধতি;
২৬. ব্যবসায়ের আর্থিক বছরের শুরম্ন ও শেষ সময়;
২৭. ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি;
২৮. ব্যবসায়ের বিলোপকালে ব্যবসায়ের দায় ও সম্পত্তি মূল্যায়ন ও তা বণ্টন প্রণালী;
২৯. চুক্তিপত্রের কোনো পরিবর্তনের নিয়ম;
৩০. চুক্তিপত্রের বাইরে অংশীদারদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে তা মীমাংসার উপায় ইত্যাদি।

পরিশেষ বলা যায়, উপরিউক্ত বিষয়সমূহ অবশ্যই চুক্তিপত্রে থাকা উচিত। কারণ অংশীদারদের মধ্যকার গঠনকালীন বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বিশ্বাস ভবিষ্যতে নাও হতে পারে। তখন চুক্তিপত্র মীমাংসার প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আদালতে চুক্তিপত্রই প্রামাণ্য দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। তবে উক্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কারণে অংশীদারদের মধ্যে বিবাদ হলে তা ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে হয়।

1 comment:

  1. অসাধারণ হয়েছে...এই পোস্টের আকারের চেয়ে আরো তিন গুন বড় কমেন্ট করে ও এই পোস্টের গুন প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আপনার প্রতিনিয়ত পোস্টের মান দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যাই।
    আপনি সত্যিই একজন জিনিয়াস �� এরকম একটি ব্লগের নিয়মিত পাঠক হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। সত্যি আজ অসম্ভব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।

    ReplyDelete

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post