Ad-1

Monday, February 15, 2021

আল মাহমুদের সঙ্গে সামান্য তামাশা!


কবি শহীদ কাদরি বাথরুমে বেশ লম্বা সময় কাটাতেন। এটা ছিল তার অভ্যাস। তাই তিনি কমোডের পাশে একটা ছোট্ট টেবিলে নানারকম বইপত্র জমা করে রেখে ওই সময়টাতে পড়তেন। 


আল মাহমুদের প্রথম বই 'লোক লোকান্তর' সদ্য বেরিয়েছে তখন। প্রথম বই নিয়ে অন্য সবার মতো আল মাহমুদের মনেও একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করতো। তিনি বইয়ের একটা কপি শহীদ কাদরিকে দিয়েছিলেন পড়ে মন্তব্য করবার জন্য। বাথরুমে বসে শহীদ কাদরি তখন লোক লোকান্তর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন।


এমন সময় বাসায় আল মাহমুদ এসে হাজির। তিনি বেশ উত্তেজিত গলায় ডাক দিলেন: 'শহীদ, কই তুই দোস্ত?'

শহীদ কাদরি কথা দিয়ে রেখেছিলেন বাসায় এলে বইটা নিয়ে তিনি আল মাহমুদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। 

বাথরুম থেকেই গলা চড়িয়ে শহীদ কাদরি আল মাহমুদকে বললেন, 'তোর ল্যাখা পইড়া ফালাইছি দোস্ত! যা ল্যাখছোস না, বাংলা সাহিত্যে বহুৎ দিন এরকম কবিতা হয় নাই।'


নিজের কবিতা নিয়ে আল মাহমুদের ভেতর বরাবরই একটা উত্তেজনা ছিল। সুযোগ পেয়ে শহীদ কাদরি সেটা নিয়ে মজা করতে চান।


'কস কী?' লাফিয়ে উঠলেন আল মাহমুদ। 

শহীদ কাদরি টের পেলেন আল মাহমুদ ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে উত্তেজিতভাবে হাঁটাহাঁটি করছেন। শহীদ প্রশংসার মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিলেন।

'তোর কবিতা পইড়া পাগল হইয়া গেছি দোস্ত। পড়তে পড়তে ব্যাবাক কবিতা মুখস্তই কইরা ফালাইছি।'

আল মাহমুদ উত্তেজিতকণ্ঠে বলে উঠলেন, 'কস কী দোস্ত!'

'বিস্বাস করলি না? তুই চাইলে বইয়ের পরথম থেইকা শ্যাষ পর্যন্ত মুখস্ত সুনাইবার পারি।'

'শুনা দেখি!'

আল মাহমুদের গলায় সন্দেহপূর্ণ অবিশ্বাস। 

'সত্যি সুনবি?'

'শুনা না!'

'তাইলে সুন।'


শহীদ কাদরি 'লোক লোকান্তর' বইটা হাতে নিয়ে একের পর এক কবিতা আবৃত্তি করে যেতে লাগলেন। আনন্দে উত্তেজনায় আল মাহমুদের অবস্থা প্রায় পাগলের মতো। তিনি সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। আল মাহমুদের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময় বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন শহীদ কাদরি, হাতে 'লোক লোকান্তর'। আল মাহমুদের মুখের ওপর বই বাড়িয়ে ধরে বললেন, 'এই দ্যাখ সালা!'

বই দেখে আল মাহমুদের চোখ শাদা হয়ে গেল।

'বুঝছস অহন?'

শহীদ কাদরির ঠোটে প্রাণঘাতী হাসি।

শাদাসিধা সরল আল মাহমুদ মুহুর্তে করুণ হয়ে গেলেন। বিষণ্নমুখে বললেন, 'আমার সঙ্গে এইরকম তামাশা করলি দোস্ত?'


কবির প্রতি শ্রদ্ধা রইল। আল্লাহ কবিকে জান্নাত নসীব করুন। আমীন।


তথ্যসূত্র:

ভালোবাসার সাম্পান- আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ

মাওলা ব্রাদার্স, তৃতীয় মুদ্রণ (১৩৪-১৩৫ পৃ.)

ছবিতে তিন কিংবদন্তি কবি বন্ধু।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post