বাংলাদেশের শহরে-গ্রামে উত্তরাধিকার সম্পত্তি নিয়ে এরকম বিবাদ-বিসংবাদ অহরহ ঘটে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে সম্পত্তির বৈধ হকদার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দাখিল করে সম্পত্তির অংশ বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি আদালতে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়ের করতে পারেন। বাটোয়ারা মামলায় বিজ্ঞ আদালত ইসলামি শরিয়া ও ফারায়েজ আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করে দেন।
'বাটোয়ারা মামলা' কী?
ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে যার যার প্রাপ্ত স্বত্ব বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে 'বণ্টন'। স্থানীয় বা পারিবারিকভাবে বণ্টনের আইনগত ভিত্তি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা অনেক কমে। এ জন্য সব শরিককে এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করতে হয় যা 'বণ্টন মোকদ্দমা' বা 'বাটোয়ারা মামলা' নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে 'পার্টিশন স্যুট' বলা হয়।
সম্পত্তির শরিক দুই প্রকার।
ক) উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স
খ) খরিদ সূত্রে শরিক বা কো-শেয়ারার বাই পারচেজ।
বন্টনের মামলা করার সময় সকল শরিকগণ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে। কোন একজন শরিক বাদ থাকলে বন্টননামা শুদ্ধ হবেনা। যদি শরিকগণ আপোষ মতে বন্টন করতে রাজী না হন তাহলে যে কোন শরিক বন্টনের জন্য আদালতে উক্ত সম্পত্তির বন্টন চেয়ে মামলা করতে পারেন।
★ বন্টন মামলা করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
প্রথমেই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। পাশাপাশি সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ পত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে হবে।
মামলা করার জন্য কোর্ট ফি দিতে হয় ১০০ টাকা কিন্তু ছাহাম চাইলে প্রতি ছাহামের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ফি জমা দিতে হয়।
বন্টনের শর্ত সমূহ:
বন্টনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জড়িত; যেমন-
-পরিমাপ করে শরীকদের ভূমির বা জমির সীমানা চিহ্নিতকরণ করতে হবে। এবং
-বন্টন তালিকায় প্রত্যেক সহ-মালিকের বরাদ্দকৃত সম্পত্তির উল্লেখ থাকতে হবে;
-তালিকায় মালিকানার বিভাজন সকল সহ-মালিক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে;
-বন্টনের বিবরণ সুস্পষ্ট হতে হবে;
-প্রত্যেকটি তালিকা সহ-মালিকবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে;
-যথাযথভাবে স্ট্যাম্প শুল্ক দিয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে;
-সহ-শরীকগণ আপোষ বন্টন করে পরবর্তীতে তাদের কেউ তা না মানলে দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যায় ৷
* বন্টন দলিল কি?
১৮৯৯ সালেরস্ট্যাম্প এক্টের ২ (১৫) ধারায় বলা হয়েছে বণ্টন দলিল ও বণ্টক দলিল অর্থ একই ৷ যখন কোন সম্পত্তির সহ-শরিকগণ তাদের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়ে কোন দলিল করে তাকেই বণ্টন দলিল বলে।
* বন্টননামার রেজিষ্ট্রি ফি:
রেজিষ্ট্রেশন (সংশোধন) আইন ২০০৪ আইনের ১৭(১) ধারার বিধান অনুসারে বাটোয়ারা বা আপোস-বন্টননামা রেজিস্ট্রি করতে হবে, অর্থাৎ রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলক।
সকল সহ-শরিকের মধ্যে জমি হিস্যানুযায়ী (স্ট্যাম্প এর উপর) বন্টন করে সাব-রেজিস্ট্রিঅফিসে দাখিল করে বন্টননামা দলিল রেজিষ্ট্রি করা যায় ৷ এ দলিল রেজিস্ট্রির জন্যস্ট্যাম্প খরচ লাগবে স্ট্যাম্প এর গায়ে জমির যে মূল্য লেখা হবে তার ২% হারে ৷ এছাড়া অন্যান্য ফিস কবলা দলিল রেজিস্ট্রিতে যেমন লাগে অনুরূপ লাগবে ৷ (তবে এই হার সরকার কর্তৃক সময় সময় পরিবর্তনযোগ্য)
বাটোয়ারামামলায় সাধারণত প্রত্যেক দাগের জমি সকল সহ-শরীক এর মধ্যে বণ্টিত হয়ে থাকে ৷ এমামলায় ২ বার ২টি ডিক্রী হয় ৷
প্রাথমিক ডিক্রী: এ ডিক্রীতে হিস্যানুযায়ী বন্টন আদেশ দেয়া হয় ৷
চূড়ান্তডিক্রী: এ ডিক্রীতে প্রয়োজনে আমিন কমিশন পাঠিয়ে সরে জমিনেসম্পত্তির দখল দেয়া হয় এবং সীমানা পীলার দ্বারা বিভাজন (জমির ভাগ) চিহ্নিত করারমাধ্যমে চূড়ান্ত ডিক্রী প্রচার করা হয় ৷ আদালত প্রয়োজনে আইন শৃংখলা বাহিনী নিয়োগকরে সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে ডিক্রী প্রাপককে সম্পত্তির দখল দেয়ার ব্যবস্থাকরে থাকেন ৷
* বন্টন হওয়ার পর করণীয় কি?
আদালতের মাধ্যমে বন্টন হওয়ার পর এবং বন্টন দলিল রেজিষ্ট্রি পর অবশ্যই নিজ নামে নামজারি, জমাভাগ খতিয়ান করে নিতে হবে। পাশাপাশি খাজনা প্রদান করতে হবে। মনে রাখবেন, নামজারি হচ্ছে সরকারিভাবে সম্পত্তিকে নিজ নামে রেকর্ড করা।
বণ্টনের পরও দখল না পেলে
আদালত থেকে বাটোয়ারা মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও সেই মোতাবেক দখল বুঝিয়ে দেয়া না হলে 'উচ্ছেদের মামলা' করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়।
No comments:
Post a Comment