Ad-1

Showing posts with label বাংলা (লিখিত পরীক্ষা). Show all posts
Showing posts with label বাংলা (লিখিত পরীক্ষা). Show all posts

Wednesday, October 31, 2018

শুদ্ধ ও অশুদ্ধির প্রয়োগ-০১

শব্দ ও বাক্যে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ
ব্যাকরণ ভাষাকে সুন্দর, মার্জিত ও শৃংখলাবদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই ব্যাকরণ ঠিক রাখলে ভাষার অপ্রয়োগ হয় না। ব্যাকরণজ্ঞান থাকলে ভাষার অপপ্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়। বিভিন্ন কারণে ভাষার অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে। যেমন : বানান, শব্দ রূপান্তর, শব্দদ্বিত্ব, বচনজাত, নির্দেশক, সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, বিভক্তি, প্রত্যয়,চিহ্ন, পক্ষ, কারক, বাচ্য, বাগধারা ইত্যাদি।
১.বিশেষ্য ও বিশেণের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. অ: লোকটা নির্দোষী।
শু: লোকটা নির্দোষ।
২. অঃ- সদা সর্বদা তোমার উপস্থিত প্রার্থনীয়।
শুঃ- সদাসর্বদা তোমার উপস্থিতি প্রার্থনীয়।
৩. দুর্বলবশত তিনি আসিতে পারেন নাই।
শুঃ- দুর্বলতাবশত তিনি আসিতে পারেন নাই।


২. সাধু চলিত ভাষারীতির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

১. তাহার কথা মতো চলা ঠিক নয়।
শুদ্ধবাক্য : তার কথা মতো চলা ঠিক নয়।
২. যা বলিব সত্যবলিব।
শুদ্ধবাক্য : যাহা বলিব সত্য বলিব/ যা বলব সত্য বলব।
৩. তাহাকে কলেজে যাইতে হবে।
শুদ্ধবাক্যঃ-  তাকে কলেজে যেতে হবে।
৪. তাহারে যেন সবাই ভূল করিবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
শুদ্ধবাক্যঃ- তারা যেন সবাই ভুল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।


৩.বানানের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. পাষান হৃদয়ও ভালোবাসায় গলে যায়।
শুদ্ধবাক্য : পাষাণ হৃদয়ও ভালোবাসায় গলে যায়।
 ২. নিরোগ লোক প্রকৃত সুখী।
শুঃ- নীরোগ লোক প্রকৃত সুখী।
৩. অভাবগ্রস্থ ছাত্রটি তাহার দুরাবস্থার কথা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বর্ণনা করিল।
শুঃ- অভাবগ্রস্ত ছাত্রটি তাহার দুরবস্থার কথা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বর্ণনা করিল।
৪. অতিরিক্ত খাটুনিতে তার স্বাস্থ ভেঙে গেছে। 
শুঃ- অতিরিক্ত খাটুনিতে তার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। 
৫. অল্পজ্ঞান লোক বিপদজনক। 
শুঃ- অল্পজ্ঞান লোক বিপজ্জনক। 
৬.আজ অপরাহ্নে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ইরান ও জার্মানের মধ্যে প্রতিযোগীতা হবে।
শুঃ- আজ অপরাহ্ণে ঢাকা স্টেডিয়ামে ইরান ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে।
৭. আমার এ কাজে মনযোগ নেই।
শুঃ- আমার এ কাজে মনোযোগ নেই।
৮. আদ্যান্ত শুনিয়া তিনি চমকিয়া উঠিলেন।
শুঃ- আদ্যন্ত শুনিয়া তিনি চমকিয়া উঠিলেন।
৯. তাহাকে শান্তনা দেওয়ার সামর্থ আমার নেই।
শুঃ- তাহাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।
১০. দারিদ্রতা আমদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। 
শুঃ- দরিদ্রতা/দারিদ্র্য আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য। 


৪. অতিশায়নের মাধ্যমে ভাষায় অশুদ্ধ প্রয়োগ:
১. রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠতম/তর।
শুদ্ধ : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠ।
২. শুনেছি আপনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
শুদ্ধ:শুনেছি আপনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন।
৩. বাসের ধাক্কায় তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
শুদ্ধ : বাসের ধাক্কায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
৪. শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
শুদ্ধ : শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষ/উৎকৃষ্টতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
৫. সে ক্যান্সারজনিত কারণে মারা গিয়েছে।
শুদ্ধ : সে ক্যান্সার/ক্যান্সারজনিক রোগে মারা গিয়েছে।

৬. বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।

শুঃ- বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

৭. সমগ্র জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল ভালো।

শুঃ- সমগ্র জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল শ্রেষ্ঠ।


৫.বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
শুদ্ধয : সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর/যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
২. লক্ষ লক্ষ জনতারা সব সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
শুদ্ধ: লক্ষ লক্ষ জনতা সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
৩. যেসব ছাত্রদের নিয়ে কথা তারা বখাটে।
শুদ্ধ : যেসব ছাত্রকে নিয়ে কথা তারা বখাটে।
৪ আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি, যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
শু : আমরা এমন কিছু মানুষকে চিনি যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
৫. কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
শু: কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
৬. নতুন নতুন ছেলেগুলো কলেজে বড়ো উৎপাত করে।
শুঃ- নতুন ছেলেগুলো কলেজে বড়ো উৎপাত করে।
৭. সব মাছগুলোর দাম কত?
শুঃ- সব মাছের দাম কত?
৮. যাবতীয় লোকসমূহ সভায় উপস্থিত ছিল।
শুঃ- যাবতীয় লোক সভায় উপস্থিত ছিল।


৬.নির্দেশকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
টা/টি/খানা/খানিব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে এইবা ব্যবহার করে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :
১. ঐ লোকটি খুব সৎ।
শুদ্ধবাক্য : লোকটি খুব সৎ।
২. আমি এই মানুষটিকে চিনি।
শুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষকে চিনি।/আমি মানুষটিকে চিনি।

৭.সন্ধির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জাস্কর।
শুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জা কর বা লজ্জাজনক।
৩. এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরাবস্থায় আছেন।
শুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরবস্থায় আছেন।
৪. ইত্যাবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।
শুদ্ধবাক্য : ইত্যবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।

৮.সমাসের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ঘি মাখা ভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
শুদ্ধবাক্য : ঘিভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
২. আগে সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রাজা দেশ চালাতেন।
শুদ্ধবাক্য : আগে সিংহাসনে বসেরাজা দেশ চালাতেন।
৩. রীতিকে অতিক্রম না করেও যথারীতি সে বড়লোক।
শুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও সে বড়লোক।

৯.বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

বহুবচনজাতীয় শব্দে কেবসে না। যেমন: তাদেরকে, আমাদেরকে, পাগোলগুলোকে। 
১. ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও।
শুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।/ ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।
২. তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না। 

আবার এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন: বুকেতে, চোখেতে। 

বস্তুবাচক বা প্রাণিবাচক শব্দের কে, রেবসে না। যেমন: ঘড়িকে, কলমকে, ছগলকে, বইকে, পাখিরা, মেঘরা, গানকে, সাপকে, মাছকে। 

তবুও বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :

শুদ্ধবাক্য : তাদের দিয়ে একাজ করিও না।
৩. ভর দুপুর একটু ঘুমোয়।
শুঃ- ভর দুপুরে একটু ঘুমোয়।
৪. তাহার কথা বিশ্বাস কী?
শুঃ- তাহার কথায় বিশ্বাস কী? 
৫. বাঁশ ঝাড়ে রাতে জোনাকী জ্বলে।
শুঃ- বাঁশের ঝাড়ে রাতে জোনাকি জ্বলে।

১০.প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
অতিরিক্ত প্রত্যয় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন :
১. দারিদ্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
শুদ্ধবাক্য : দারিদ্র্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
২. বিকার লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।
শুদ্ধবাক্য : বিকৃত লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।


১১.উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
শুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
২. অক্লান্তিহীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
শুদ্ধবাক্য : ক্লান্তিহীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
চিহ্নের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. রহিমা খুব সুন্দরী।
শুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দর।
২. সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখিকা।
শুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখক। /সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখিকা।
পক্ষের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ
পক্ষের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।
শুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে না।
২. এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হবে না।
শুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হয় না।

 

 

Tuesday, October 30, 2018

শুদ্ধ-অশুদ্ধির প্রয়োগ-০২

 ১১.কারকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

বস্তুর প্রাণিবাচক শব্দে ‘কে’ বসে না। ব্যক্তির নামের সঙ্গেও ‘কে’ বসে না।কারকের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. সাপুড়ে সাপকে খেলায়।
শুদ্ধবাক্য : সাপুড়ে সাপ খেলায়।
২. একসময় আমের কাননে মিটিং বসেছিল।
শুদ্ধবাক্য : একসময় আম্রকাননে মিটিং বসেছিল।/একসময় আমের বাগানে মিটিং বসেছিল।
১২.সমোচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
সমোচ্চারিত শব্দের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : তারা আমড়াতলায় বসে আমড়া খাওয়ার সময় মালির তাড়া খেয়েছে।
২. সে ভুড়ি ভুড়ি খেয়ে ভুরিটি বাড়িয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : সে ভুরি ভুরি খেয়ে ভুঁড়িটি বাড়িয়েছে।
১৩.শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
ফলাফল/ফলে শব্দটি ঠিক ব্যবহার কিন্তু এর প্রতিশব্দ হিসেবে লেখা হয় ফলশ্রুতিতে’ তাহলে শব্দটি হবে ভুল। কারণ ‘ফলশ্রুতি’র ‘শ্রবণ’ কোন বিষয়ের ফল নয়। শব্দদ্বিত্বের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. ঘামজলে তার শার্ট ভিজে গেছে।
শুদ্ধবাক্য : ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে।
২. অশ্রুজলে তার কপল ভিজে গেছে।
শুদ্ধবাক্য : অশ্রুতে তার কপল ভিজে গেছে।
৩. ঘরটি ছিমছিমে অন্ধকার।
শুদ্ধবাক্য : ঘরটি ঘুটঘুটে অন্ধকার।

১৪.ভুল শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
শব্দের পরে আরো শব্দ বসে শব্দেকে সঠিক করে অথবা বেশি শব্দ বসালে বাক্যটি ভুল হয়ে যায়। এভাবে অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন:
১. পরবর্তীতে আপনি আসবেন।
শুদ্ধবাক্য : পরবর্তিকালে /পরবর্তী সময়ে আপনি আসবেন।
২. আমি অপমান হয়েছি।
শুদ্ধবাক্য : আমি অপমানিত হয়েছি।
৩. সূর্য উদয় হয়নি।
শুদ্ধবাক্য : সূর্য উদিত হয়নি।
৪. সত্য প্রমাণ হোক।
শুদ্ধবাক্য : সত্য প্রমাণিত হোক।
৬ তার কথার মাধুর্যতা নাই।
শুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্য/মধুরতা নাই।
৫. রাধা দেখতে খুব সুন্দরী ছিল।
শুদ্ধবাক্য : রাধা দেখতে খুব সুন্দর ছিল।
৬. এটি অপক্ক হাতের কাজ।
শুদ্ধবাক্য : এটি অপটু হাতের কাজ।
৭. স্বল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
শুদ্ধবাক্য : অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
৮. অভাবে চরিত্র নষ্ট।
শুদ্ধবাক্য : অভাবে স্বভাব নষ্ট।
৯. বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
শুদ্ধবাক্য : বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
১০. ছেলেটি শুধুমাত্র /কেবলমাত্র ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।
শুদ্ধবাক্য : ছেলেটি শুধু /মাত্র /কেবল ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।
১১. রবীন্দ্রনাথ ভয়ঙ্কর কবি ছিলেন।
শুদ্ধবাক্য : রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত কবি ছিলেন।
১৫. বাচ্যের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:

১. সূর্য পূর্বদিকে উদয় হয়।
শুদ্ধবাক্য : সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়।
২. আপনার কি মনে হয় না, বিধি লঙ্ঘন হয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : আপনার কি মনে হয় না, বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।
৩. আপনার কাজের জন্য দেশের গৌরব লোপ পেয়েছে।
শুদ্ধবাক্য : আপনার কাজের জন্য দেশের গৌরব লুপ্ত হয়েছে।
১৬.এককথায় প্রকাশের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. পারলে চারিদিকে প্রদক্ষিণ করো।
শুদ্ধবাক্য : পারলে চারিদিকে ঘোরো।/পারলে প্রদক্ষিণ করো।
১. সে হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
শুদ্ধবাক্য : সে হাতেকলমে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। /সে ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
১৭.প্রবাদের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. স্বল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।
শুদ্ধবাক্য : অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।
২. আমি বাঁচলে বাপের নাম।
শুদ্ধবাক্য : আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
৩. অনেক সন্ন্যাসিতে গাজন নষ্ট।
শুদ্ধবাক্য : অধিক সন্ন্যাসিতে গাজন নষ্ট।
৪. বেশি চালাকের গলায় দড়ি।
শুদ্ধবাক্য : অতি চালাকের গলায় দড়ি।
১৮.বাগধারার মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ:
১. পরীক্ষায় নকল করাও নদী চুরি।
শুদ্ধ : পরীক্ষায় নকল করাও পুকুর চুরি।
২. এমন লেখাপড়া করলে পরীক্ষায় মুরগির ডিম পাবা।
শুদ্ধ : এমন লেখাপড়া করলে পরীক্ষায় ঘোড়ার ডিম পাবা।
৩. গরুর ঘাস কাটো, পরীক্ষায় ভালো করতে পারলে না।
শুদ্ধ: ঘোড়ার ঘাস কাটো, পরীক্ষায় ভালো করতে পারলে না।
৪. একের লাঠি দশের বোঝা। 
শুঃ- দশের লাঠি একের বোঝা।
৫. দশচক্রে ঈশ্বর ভূত।
শুঃ- দশ চক্রে ভগবান ভূত।
৬. ঊনো ভাতে কুনো বল,ভরা পেটে জগদ্দল।
শুঃ- উন ভাতে দুনা বল, ভরা পেটে রসাতল।
৭. আমি তখনই বলেছিলাম যে কাঙালের কথা দেরিতে ফলে।
শুঃ- আমি তখনই বলেছিলাম যে কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে।
৮. করিম স্বচ্ছ জলে মাছ শিকার করতে চায়।
শুঃ- করিম ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চায়।
৯. কথায় বলে মোটা বাঁশ ঘুন ধরে।
শুঃ- কথায় বলে কাঁচা বাঁশ ঘুন ধরে।
১০. সারা জীবন ভূতের মজুরি খেটে মরলাম।
শুঃ- সারা জীবন ভূতের বেগার খেটে মরলাম।
১১. মনে রেখো,এক পৌষে শীত যায় না।
শুঃ- মনে রেখো, এক মাঘে শীত যায় না।

Saturday, February 10, 2018

বানান শুদ্ধিকরণ

 অশুদ্ধ______শুদ্ধ

০১) শ্বাশত_______শাশ্বত[স.শশ্বত+অ]

০২) শশুর________শ্বশুর

০৩) শাশুরি_______শাশুড়ি

০৪) নূন্যতম_______ন্যূনতম

০৫) স্বাস্থ_________স্বাস্থ্য

০৬) মাহাত্ম_______মাহাত্ম্য[স.মহাত্মন+য]

০৭) দারিদ্র_______দারিদ্র্য

০৮) প্রতিদ্বন্দ্বি_____প্রতিদ্বন্দ্বী 

০৯) প্রতিদ্বন্দ্বীতা___প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১০) প্রতিযোগীতা__প্রতিযোগিতা

১১) উচ্ছাস_______উচ্ছ্বাস

১২) অপরাহ্ন______অপরাহ্ণ

১৩) নিশিথীনি_____নিশীথিনী

১৪) মনকষ্ট_______মন:কষ্ট

১৫) দ্বন্দ_______দ্বন্দ্ব

১৬) পিপিলিকা____পিপীলিকা 

১৭) মণিষী____মনীষী

১৮) মূমূর্ষু_____মুমূর্ষু

১৯) আমাবশ্যা____অমাবস্যা

২০) অত্যাধিক____অত্যধিক

২১) কটুক্তি_____কটূক্তি

২২) ভূল________ভুল

২৩) ভূবন_______ভুবন[স.ভূ+অন]

২৪) সান্তনা______সান্ত্বনা

২৫) পক্ক______পক্ব

২৬) বিদূষী_____বিদুষী[স. বিদ্বস+ঈ]

২৭) সমীচিন____সমীচীন

২৮) মূহুর্ত______মুহূর্ত

২৯) ব্রাক্ষণ_____ব্রাহ্মণ

৩০) প্রাণীবিদ্যা___প্রাণিবিদ্যা

৩১) ইতিপূর্বে____ইতঃপূর্বে

৩২) ইতিমধ্যে____ইতোমধ্যে

৩৩) ইংরেজী____ইংরেজি

৩৪) ইষৎ______ঈষৎ

৩৫) অহরাত্রি___অহোরাত্র

৩৬) অপাঙতেয়____অপাঙ্ক্তেয়

৩৭) অন্তঃস্বত্ত্বা_____অন্তঃসত্ত্বা

৩৮) আদ্যাক্ষর_____আদ্যক্ষর

৩৯) অনুসূয়া_____অনসূয়া[স. অন+অসূয়+আ]

৪০) আকাংখা____আকাঙ্ক্ষা

৪১) আশ্বস্থ______আশ্বস্ত

৪২) আত্বস্থ______আত্মস্থ

৪৩) আশীষ_____আশিস

৪৪) আয়ত্ব_____আয়ত্ত

৪৫) আত্মৎসর্গ___আত্মোৎসর্গ

৪৬) উপরোক্ত____উপর্যুক্ত

৪৭) উদ্বৃত______উদ্বৃত্ত

৪৮) উপযোগীতা____উপযোগিতা

৪৯) উর্ধ্বশ্বাস______ঊর্ধ্বশ্বাস

৫০) উদিচী_______উদীচী

৫১) উর্ধ্ব_______ঊর্ধ্ব

৫২) ঐক্যতান____ঐকতান

৫৩) কাংখিত____কাঙ্ক্ষিত

৫৪) ক্ষীণজীবি____ক্ষীণজীবী

৫৫) ক্ষুদপিপাসা____ক্ষুৎপিপাসা

৫৬) কৌতূক______কৌতুক[স. কুতুক+অ]

৫৭) কথপোকথন____কথোপকথন

৫৮) কর্ণেল______কর্নেল

৫৯) কুপমণ্ডুক_____কূপমণ্ডূক

৬০) খোজাখোজি____খোজাখুঁজি

৬১) গীতাঞ্জলী______গীতাঞ্জলি

৬২) গ্রামীন_____গ্রামীণ

৬৩) গড্ডালিকা____গড্ডলিকা

৬৪)গার্হস্থ______গার্হস্থ্য

৬৫) ঘূর্নিঝর_____ঘূর্ণিঝড়

৬৬) চতুস্কোন____চতুষ্কোণ

৬৭) জগত_____জগৎ

৬৮) জেষ্ঠ_____জ্যেষ্ঠ

৬৯) জোতিষ্ক____জ্যোতিষ্ক

৭০) ঝরণা_____ঝরনা

৭১) ডাষ্টবিন____ডাস্টবিন

৭২) পোষ্ট______পোস্ট

৭৩) ত্রিভূজ____ত্রিভুজ

৭৪) ততক্ষণাত___তৎক্ষণাৎ

৭৫) দূর্গাপূজা____দুর্গাপূজা [স. দুঃ+√গম+আ=দুর্গা]

৭৬) দূরাবস্থা_____দুরবস্থা

৭৭) দুঃস্ত_______দুস্থ/দুঃস্থ

৭৮) দীর্ঘজীবি____দীর্ঘজীবী

৭৯) দূর্ঘটনা______দুর্ঘটনা

৮০) দাসত্ত______দাসত্ব

৮১) শিরচ্ছেদ______শিরশ্ছেদ

৮২) স্বরস্বতী______সরস্বতী

৮৩) বিভিষিকা_____বিভীষিকা

৮৪) দৈন্যতা_____দৈন্য/দীনতা

৮৫) সন্যাসী_____সন্ন্যাসী

৮৬) দুরুহ_____দুরূহ

৮৭) দুর্বৃত্ত্ব____দুর্বৃত্ত

৮৮) দৌরাত্ম____দৌরাত্ম্য[স. দুরাত্মন+য]

৮৯) দধিচি_____দধীচি

৯০) ধরনী_____ধরণি

৯১) ধুলিসাৎ____ধূলিসাৎ

৯২) ধারনা_____ধারণা

৯৩) নূন্যতম____ন্যূনতম[স. নি+ঊন+অ]

৯৪) নৈপুন্য____নৈপুণ্য

৯৫) নিগুঢ়____নিগূঢ়

৯৬) নিশিথিনি____নিশীথিনী

৯৭) পিপিলিকা____পিপীলিকা

৯৮) পোষ্টমাষ্টার____পোস্টমাস্টার

৯৯) প্রাতঃরাশ_____প্রাতরাশ

১০০) প্রোজ্জ্বলন____প্রজ্বলন

১০১) প্রতিদন্দ্বি_____প্রতিদ্বন্দ্বী

১০২) পানিনি______পাণিনি

১০৩) ফটোষ্ট্যাট____ফটোস্ট্যাট

১০৪) ব্রাহ্মন______ব্রাহ্মণ

১০৫) ব্যাতিত_____ব্যতীত

১০৬) ব্যাথা_____ব্যথা[স. √ব্যথ+অ+আ]

১০৭) বাল্মিকি_____বাল্মীকি

১০৮) বশিভুত_____বশীভূত

১০৯) বুৎপত্তি_____ব্যুৎপত্তি[স. বি+উৎপত্তি ]

১১০) ভৌগলিক____ভৌগোলিক

১১১) ভুমিষাৎ_____ভূমিসাৎ

১১২) ভৎসনা_____ভর্ৎসনা

১১৩) মূহুর্ত_______মুহূর্ত

১১৪) মনিষি______মনীষী

১১৫) মরীচীকা____মরীচিকা

১১৬) মনযোগ_____মনোযোগ

১১৭) মনুষ্যত্য_____মনুষ্যত্ব

১১৮) যক্ষা_______যক্ষ্মা

১১৯) লজ্জাস্কর____লজ্জাকর

১২০) লক্ষ্যনীয়_____লক্ষণীয়

১২১) শান্তনা______সান্ত্বনা

১২২) শারিরীক____শারীরিক

১২৩) শুভাশীষ____শুভাশিস

১২৪) শায়ত্ত্বশাসন____স্বায়ত্তশাসন

১২৫) শিরধার্য্য______শিরোধার্য

১২৬) শশ্রূসা________শুশ্রূষা

১২৭) ষাম্মাষিক_____ষাণ্মাসিক

১২৮) সম্বর্ধনা______সংবর্ধনা

১২৯) সহযোগীতা___সহযোগিতা

১৩০) সুষ্ঠ________সুষ্ঠু

১৩১) ব্যবহারিক____ব্যাবহারিক/ব্যবহারিক

১৩২) পোষাক_____পোশাক

১৩৩) ধরণ_____ধরন/ধরণ[√ধৃ+অন=ধরণ>ধরন]

১৩৪) ধারণ____ধারণ

১৩৫) উষা____ঊষা

১৩৬) দুর্ণীতি____দুর্নীতি

১৩৭) মধ্যাকর্ষণ ____মাধ্যাকর্ষণ[মধ্য+আকর্ষণ+অ]

১৩৮) শিহরণ_____শিহরণ/শিহরন

১৩৯) দধিচী_____দধীচি

১৪০) ইদানিং______ইদানীং

১৪১) জ্ঞানভুসিত____জ্ঞানভূষিত

১৪২) সুসম_____সুষম

১৪৩) কনিষ্ট_____কনিষ্ঠ

১৪৪) দুষণীয়_____দূষণীয়

১৪৫) পুণর্মিণনি____পুনর্মিলনী

১৪৬) সুধি____সুধী

১৪৭) বীবতস্য____বীভৎস

১৪৮) অদ্ভূত____অদ্ভুদ

১৪৯) শ্বশ্রু_____শ্বশ্রূ(অর্থ - স্বামী বা স্ত্রীর মা,শাশুড়ি) [স. শ্বশুর+ঊ]

১৫০) রূপালী_____রুপালি

১৫১) মুহুর্মুহ _____ মুহুর্মুহু 

১৫২) উপরোক্ত _____ উপর্যুক্ত 

১৫৩) সমিরন _____ সমীরণ 



আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শুদ্ধ বানান শিখিঃ
 ১। ইতিমধ্যে নাকি  ইতোমধ্যে? 
= ইতোমধ্যে ( কিন্তু ইতিপূর্বে) 
২। সরকারি নাকি  সরকারী ?
= সরকারি
৩। ব্যথা নাকি ব্যাথা ?
= ব্যথা 
৪। হজ্ব, , হজ্জ  নাকি  হজ ?
= হজ ( অভিধান অনুসারে )
৫।নবী" নাকি " নবি?
= নবি 
৬। ইদানিং নাকি ইদানীং?
= ইদানীং
৭ । পূর্ণমিলনী নাকি  পুনর্মিলনী ?
=পুনর্মিলনী 
৮। মানষিক নাকি মানসিক?
= মানসিক
৯। বাড়ি নাকি বাড়ী?
= বাড়ি
১০। ব্যাখ্যা নাকি ব্যাখা?
= ব্যাখ্যা 
১১। চাল না  চাউল = উভয়ই ঠিক  
১২। আরও, আরো এবং কারও কারো -- সবগুলোই ঠিক 
১৩। উদ্‌যোগ’ না ‘উদ্যোগ’  ?
= উভয়ই  ঠিক 
১৪.প্রেষণা নাকি প্রেষনা?
=প্রেষণা
১৫.উদ্দেশ্য নাকি ঊদ্দেশ্য ?
= উদ্দেশ্য 
১৬। নাব্য সঙ্কট নাকি নাব্যতা সঙ্কট? 
= নাব্যতা সঙ্কট [বিণ. নৌ+য= নাব্য]
১৭। অভ্যন্তরীণ নাকি আভ্যন্তর ? 
= উভয়ই  ঠিক 

Monday, October 16, 2017

এ'- ধ্বনির স্বাভাবিক বা সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম লেখো।

উত্তর:

এ'- ধ্বনির স্বাভাবিক বা সংবৃত উচ্চারণের নিয়ম নিয়ম নিম্নরুপ.....
১. শব্দের গোড়ায় এ বা এ-কার থাকলে এবং তারপর অ / অা ছাড়া অন্য স্বরধ্বনি থাকলে এ-ধ্বনির স্বাভাবিক বা সংবৃত উচ্চারণ হয়।
যেমন:এতিম,বেলি,দেবী,নেতৃত্ব,মেরুদণ্ড ইত্যাদি।

২. শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর বা সিলেবলে ই-ধ্বনি(ই/ঈ), উ-ধ্বনি (উ/ঊ)কিংবা ঋ-ফলা থাকলে এ- ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত বা স্বাভাবিক হয়।
যেমন:
এক [এ্যাক] কিন্তু একটি [একটি],একটু [একটু]
এমন [অ্যামন] কিন্তু এমনি [এমনি]
বেটা [ব্যাটা ] কিন্তু বেটি
নেড়া [ন্যাড়া ] কিন্তু নেড়ি
 
৩. একাক্ষর সর্বনাম শব্দের গোড়ায় থাকলে এ বা এ-কারের স্বাভাবিক বা সংবৃত উচ্চারণ হয়।
যেমন: কে,যে,সে,কেউ ইত্যাদি।

৪. একাক্ষর বা এক সিলেবলের শব্দের গোড়ায় এ বা এ-কারের পর র,ল,শ ধ্বনির হলন্ত উচ্চারণ হলে এ-ধ্বনির স্বাভাবিক বা সংবৃত উচ্চারণ হয়।
যেমন: শেষ,দেশ,বেল,তেল,কেশ ইত্যাদি।

৫. আদ্য যুক্তব্যঞ্জনে এ-কার থাকলে এ-ধ্বনির স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়।
যেমন; শ্রেণি,প্রেরণ,স্নেহ,শ্বেত ইত্যাদি।

Sunday, July 9, 2017

অলঙ্কার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?শব্দালঙ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো

অলঙ্কার এর সংজ্ঞাঃ
অলঙ্কার কথাটি এসেছে সংস্কৃত 'অলম' শব্দ থেকে।অলম শব্দের অর্থ ভূষণ।ভূষণ অর্থ সজ্জা,গহনা ইত্যাদি। তাই আভিধানিক অর্থে যা দ্বারা সজ্জিত বা ভূষিত করা হয় তা'ই অলঙ্কার।
কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যার দ্বারা কাব্যভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয় তাকে অলঙ্কার বলে। এক কথায় কাব্যদেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে অলঙ্কার বলে।
সংস্কৃততে আছে,
'বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম'- অর্থাৎ রসাত্মক বাক্যই কাব্য।
ভারতচন্দ্রের ভাষায়ঃ
'যে হৌক সে হৌক ভাষা কাব্য রস লয়ে'- এই কাব্য বা কবিতার শরীর নির্মিত হয় বহু বাক্য নিয়ে।

অলংকার কাব্য শ্রুতি শিল্প বিশেষ।দুইভাবে আমরা কাব্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি, শুনে এবং বুঝে। কাব্যশুনে আমরা তার ধ্বনিরূপ উপলব্ধি করি,আর তার অর্থবুঝে আত্মারুপ অনুধাবন করি।ইংরেজিতে একটি হলো Sound অন্যটি হলো Sence। যার বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে ধ্বনিরূপ এবং অর্থরুপ।ধ্বনিরুপ হয় কর্ণগোচর আর অর্থ রূপ হয় মনোগোচর।
"কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো আকুল করিল মোর প্রাণ"- যেন এই দুইয়ের ওই মিলিত বাণীরুপ। সুন্দর সুমধুর সুসামঞ্জস্যময় ধ্বনিবিন্যাস যেমন আমাদের কানকে মুগ্ধ করে; কাব্যের অর্থের ব্যঞ্জনাও তেমনি আমাকে আমাদের মনকে আকুল করে।এই দুই মিলেই নির্মিত হয় সার্থক কাব্যাত্মা। কাব্যের অলংকার তাই একাধারে শব্দ ও অর্থ মিলিয়ে সামগ্রিক অলঙ্করণ। তাই যে সকল বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ ভূষণ আভরণ কাব্যের তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য সম্পাদন ও বৃদ্ধি এবং রসের উৎকর্ষ সাধন করে থাকে তাকে অলঙ্কার বলা হয়।

<html><script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-6143649439455000"
     crossorigin="anonymous"></script>
<ins class="adsbygoogle"
     style="display:block; text-align:center;"
     data-ad-layout="in-article"
     data-ad-format="fluid"
     data-ad-client="ca-pub-6143649439455000"
     data-ad-slot="1324595818"></ins>
<script>
     (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script></html>

বাংলা অলঙ্কার প্রধানত দুই প্রকার।
১.শব্দালঙ্কার
২.অর্থালঙ্কার।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান অলঙ্কার রয়েছে যেমন: বিরোধমূলক অলঙ্কার, শৃঙ্খলামূলক অলঙ্কার,
ন্যায়মূলক অলঙ্কার, গূঢ়ার্থমূলক অলঙ্কার ইত্যাদি।
শব্দালঙ্কার:
শব্দের ধ্বনিরূপকে আশ্রয় করে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় শব্দালঙ্কার। অর্থাৎ শব্দকে ঘিরে এ
অলঙ্কারের সৃষ্টি। এর মূল সৌন্দর্য টুকু ফুটে উঠে শব্দের ধ্বনিরূপে। মনে রাখতে হবে শব্দালঙ্কারের অলঙ্কার
নির্ভর করে শব্দের ওপর। তাই ইচ্ছে মতো তাকে বদলে দেয়া যায় না।
প্রধান কয়েকটি শব্দালঙ্কার:
শব্দালঙ্কারের সংখ্যা কম নয়, তবে বাংলায় ব্যবহার উপযোগিতার দিক দিয়ে প্রধান হচ্ছে চারটি।
১.অনুপ্রাস(ধ্বনি বা বর্ণের বারবার আসা)
২.যমক(একই শব্দের বারবার উল্লেখ,ভিন্নার্থে ব্যাবহার)
৩.শ্লেষ(একই শব্দের একবার উল্লেখ,দুইটি অর্থে ব্যাবহার)
৪.বক্রোক্তি(বক্তা এক বলবে শ্রোতা অন্যটা বুঝবে)
১.অনুপ্রাস:
অনু শব্দের অর্থ পরে বা পিছনে আর প্রাস শব্দের অর্থ বিন্যাস, প্রয়োগ বা নিক্ষেপ। একই ধ্বনি বা ধ্বনি
গুচ্ছের একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে সুন্দর ধ্বনিসাম্যের সৃষ্টি হয় তার নাম অনুপ্রাস।
এর মূল বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
★এতে একই ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ একাধিক বার ব্যবহৃত হবে।
★একাধিক বার ব্যবহৃত ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ যুক্ত শব্দগুলো যথাসম্ভব পরপর বা কাছাকাছি বসবে।
★এর ফলে সৃষ্টি হবে একটি সুন্দর ধ্বনি সৌন্দর্যের।
অনুপ্রাস প্রধানত তিন প্রকার।
অন্ত্যানুপ্রাস, বৃত্ত্যনুপ্রাস এবং ছেকানুপ্রাস।
অন্ত্যানুপ্রাস:
কবিতার এক চরণের শেষে যে শব্দধ্বনি থাকে অন্য চরণের শেষে তারই পুনরাবৃ্ত্তিতে যে অনুপ্রাস অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম অন্ত্যানুপ্রাস। অর্থাৎ কবিতার দু’টি চরণের শেষে যে শব্দধ্বনির মিল থাকে তাকেই
অন্ত্যানুপ্রাস বলে। একে অন্ত্যমিলও বলা হয়ে থাকে।
যেমন: কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
            দাড়ি মুখে সারি গান লা-শরীক আল্লাহ।
বৃত্তানুপ্রাস:
একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে যে
অনুপ্রাসের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস।
যেমন: কাক কালো কোকিল কালো কালো কন্যার কেশ।
ছেকানুপ্রাস:
 দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত ভাবে একইক্রমে মাত্র দু’বার ধ্বনিত হলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়
তার নাম ছেকানুপ্রাস। একে শ্রুত্যনুপ্রাস, লাটানুপ্রাস, মালানুপ্রাস, গুচ্ছানুপ্রাস, আদ্যানুপ্রাস বা সর্বানুপ্রাস
হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মনে রাখা দরকার যে একক ব্যঞ্জনে কোন ক্রমেই ছেকানুপ্রাস হয় না।
উল্লেখ্য যে, এ ধরণের অনুপ্রাসের বাস্তব ব্যবহার বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না।
যেমন:
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (সুধীনদত্ত)
২.যমক:
একই শব্দ একই স্বরধ্বনিসমেত একই ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে একাধিক বার ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের
সৃষ্টি হয় তার নাম যমক। যমক শব্দের অর্থ হল যুগ্ম বা দুই। লক্ষনীয় যে, একই শব্দ দুই বা ততোধিক বার
ব্যবহৃত হওয়া এবং ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা এর বৈশিষ্ট্য।
যমক তিন প্রকার। যথা:
১.আদ্যযমক: চরণের শুরুতে যমক থাকলে তা আদ্য যমক।যেমন:
                       ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে।(ভারতচন্দ্র)
২.মধ্যযমক:  মাঝে থাকলে তা মধ্য যমক।যেমন: তোসার এ বিধি,বিধি, কে পারে বুঝিতে।(মধুসূ)
৩.অন্তযমক: শেষে থাকলে তা অন্ত্য যমক হয়। যেমন:
                       কবির রমণী বাঁধি কেশপাশ
                        বসি একাকিনী বাতায়ন পাশ।(রবি)
৩.শ্লেষ:
একটি শব্দ একাধিক অর্থে একবার মাত্র ব্যবহারের ফলে যে অলঙ্কারের সৃষ্টি হয় তার নাম শ্লেষ। শ্লেষ শব্দের অর্থ শ্লিষ্ট-মিলিত বা আলিঙ্গিত। এতে একবার মাত্রই শব্দটি ব্যবহৃত হয় কিন্তু তাতে ভিন্ন অর্থের ব্যঞ্জনা থাকে। এই শ্লেষ শব্দকেন্দ্রিক বলে কেউ কেউ একে শব্দ-শ্লেষ বলেন।যেমন:

শ্লেষকে কেউ কেউ দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা
১.অভঙ্গ শ্লেষ: শব্দকে না ভেঙ্গে অখণ্ড অবস্থায় রেখেই যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তা-ই অভঙ্গ শ্লেষ।যেমন:
মাথার উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে (নজরুল)
এখানে কবি ‘রবি' বলতে সূর্য ও রবীন্দ্রনাথকে বুঝিয়েছেন।
২.সভঙ্গ শ্লেষ: অখণ্ড অবস্থায় শব্দের শ্লেষ প্রকাশ না পেয়ে শব্দকে ভাঙ্গলে যে শ্লেষ প্রকাশ পায় তার নাম
সভঙ্গ শ্লেষ। যেমন:
শ্রীচরণেষু
‘শ্রীচরণেষু’ একটা জুতোর দোকানের নাম। ক্রেতার ‘শ্রীচরণ ভরসা করে জুতোর দোকানদারকে জীবনযাত্রা
নির্বাহ করতে হয়, তাই শ্রীচরণ শব্দের শেষে সপ্তমীর বহুচবন যুক্ত করে ‘শ্রীচরণেষু’ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু
শব্দটা ভাঙলে আরো গভীর তাৎপর্য উদ্ঘাটিত হয়- অর্থাৎ ‘শ্রীচরণে ‘ষু’(shoe বা জুতো পরার আহ্ববান), যা
শব্দ ভাঙায় পাওয়া গেল।
৪.বক্রোক্তি:
বক্রোক্তি এর অর্থ – বাঁকা কথা।বক্তা বা প্রশ্নকারী যদি কোনো কথাকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেন --- অথচ
শ্রোতা বা উত্তরদাতা সে অর্থ গ্রহণ না করে কথাটিকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন কিংবা সে অনুসারে উত্তর দেন,
তবে সেখানে বক্রোক্তি অলংকার হয়।যেমন:
বক্রোক্তি দুই প্রকারের।
১. শ্লেষবক্রোক্তি। যেমন:
আপনার ভাগ্যে রাজানুগ্রহ আছে
---তিন মাস জেল খেটেছি ; আর কতদিন খাটব।
২.কাকু-বক্রোক্তি। যেমন:
আমি কি ডরাই, সখি,ভিখারি রাঘবে? রচনায় ও সম্পাদনায় জহির উদ্দীন বি.এ (অনার্স) এম.এ (বাংলা) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক,বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।

Saturday, July 8, 2017

প্রশ্ন:অর্থালঙ্কার কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? আলোচনা কর।

অর্থালঙ্কার:
অর্থালঙ্কারের প্রকারভেদ:
অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকার।যথা:
১. সাদৃশ্যমূলক
২. বিরোধমূলক
৩. শৃঙ্খলামূলক
৪. ন্যায়মূলক
৫. গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক।
[কৌশল: একটি পরিবারে সাদৃশ্য,বিরোধ,শৃঙ্খলা,ন্যায়,থাকবে।তবে তার গূঢ়ার্থও আছে।]

১. সাদৃশ্যমূলক :
★ উৎপ্রেক্ষা:
উৎপ্রক্ষা কথাটি এসেছে উৎকট থেকে ; যার অর্থ দাঁড়ায় উদ্ভট,মিথ্যা বা সংশয় বা কল্পনা। কবি তার কবি শক্তির নৈপুণ্যে মিথ্যা বা সংশয় বা কল্পনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে,পাঠক সহজেই তার আবেদনকে গ্রহণ করেন।

মোটকথা; ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্যের কারণে উপমেয়কে উপমান বলে সংশয় হলে উৎপ্রেক্ষা অলঙ্কার বলে।

উৎপ্রেক্ষা দুই প্রকার:
১. বাচ্যোৎপ্রেক্ষা :
যে উৎপ্রক্ষায় সম্ভাবনাবাচক শব্দ (যেন,মনে হয়,বুঝি,মনে ইত্যাদি)  উল্লিখিত, তাকে বাচ্যোৎপ্রেক্ষা বলে।
যেমন:
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ(উপমেয়) যেন ঝলসানো রুটি(উপমান)।

২. প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা:
যে উৎপ্রেক্ষায় সম্ভাবনাবাচক শব্দ (যেন,মনে হয় ইত্যাদি) অনুপস্থিত অথচ অর্থ থেকে সম্ভাবনার ভাবটি
প্রতীয়মান হয়ে উঠে, তাকে বলে প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষা। 
যেমন:
* আগে পিছে পাঁচটি মেয়ে - পাঁচটি রঙের ফুল ; 
[জসীম উদদীন]
পাঁচটি মেয়ে তো আর প্রকৃত ফুল নয়,যেন পাঁচটি রঙের ফুল; 'যেন'- অনুক্ত, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না।

★ অতিশয়োক্তি:
আতিশয্যপূর্ণ বা সীমাতিরিক্ত কথা থেকে অতিশয়োক্তি কথাটি প্রচলন।তার অর্থ এখানে আতিশয্যপূর্ণ বা
সীমাতিরিক্ত কিছু থাকবে।মোটকথা, কবি কল্পনায় যখন উপমান উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে উপমানের চরম প্রতিষ্ঠা ঘোষিত হয় এবং সাধারণ উপমেয় উল্লিখিত হয় না,তখন অতিশয়োক্তি অলঙ্কারের সৃষ্টি হয়।যেমন;
       " বন থেকে এল এক টিয়ে মনোহর।
         সোনার টোপর শোভে মাথার উপর।"

এখানে উপমেয় ' আনারস'- অবিদ্যমান, 'সোনার টোপর-পরা টিয়ে'- উপমানের উজ্জ্বল উপস্থিতি।
★★★ উৎপ্রক্ষায় উপমেয়কে উপমান বলে মনে হয়।আর অতিশয়োক্তিতে উপমানই উপমেয়কে সম্পূর্ণরুপে গ্রাস করে।

২. বিরোধমূলক অলঙ্কার:

★ বিরোধাভাসঃ (বিরোধের আভাস মনে হলেও বিরোধ নেই)
যেখানে দুইটি বস্তুকে আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী মনে হলেও তাৎপর্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এদের মধ্যে প্রকৃত
পক্ষে কোন বিরোধ নেই, তাকে বিরোধাভাস অলঙ্কার বলে।যেমন:
   ১. ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে-
       ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে।"[গোলাম মোস্তফা]

"শিশুদের অন্তরে " শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে,আপাতবিরোধী বক্তব্য।কিন্তু 'Child is the father of man' - এ
সত্য বিরোধের অবসান।

  ২. হেলা করি চলি গেলা
    বীর।বাঁচিতাম,  সে মুহূর্তে মরিতাম
    যদি..... [রবীঠাকুর ]

অর্জুন পুরুষবেশী-চিত্রাঙ্গদাকে উপেক্ষা করে চলে গেছে বন-অন্তরালে।রূপমুগ্ধা নারী (চিত্রাঙ্গদা) আহত হয়েছেন এ নীরব অবহেলায়।এখানে বাঁচিতাম"- নীরব উপেক্ষার অপমান থেকে মুক্তি পেতাম অর্থে গ্রহণ করলেই বিরোধের অবসান ঘটে।
★. অসঙ্গতি:
কারণ এবং কার্য যদি ভিন্ন স্থানে বা আশ্রয়ে থাকে, তবে অসঙ্গতি অলঙ্কার বলে।
* বিরোধাভাসে পরস্পরবিরোধী বস্তুদ্বয় থাকে একই আশ্রয়ে,
আর অসঙ্গতিতে -- এক আশ্রয়ে কার্য এবং অন্য আশ্রয়ে কারণ থাকে ; এ দুয়ের মৌল পার্থক্য এখানে। 
যেমন:
         তুই হাসলে সূয্যি হাসে ফুল ফোটে বনেও
          নেচে উঠে বিয়ে বাড়ির কনেও
          তুই কাঁদলে বিষ্টি নামে মিষ্টি মায়ের মনেও- 
[বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ]
এখানে তুই 'শিশু'। তার হাসিতে, সূর্যের হাসি (ওঠা), বনের ফুল ফোটা এবং বিয়েবাড়ির কনের আহ্লাদি হওয়া,
- কারণ- কার্যের পৃথক আশ্রয়ে অসঙ্গতি অলঙ্কার।
৩. শৃঙ্খলামূলক অলংকারঃ
যদি একটি কারণের কার্য পরবর্তী কার্যের কারণ হয় এবং একাধিক কার্যকারণ শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চলতে থাকে,তবে তাকে কারণমালা অলঙ্কার বলে।যেমনঃ
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু শাস্ত্রের বচন
অতএব কর সবে লোভ সম্বরণ

৪. ন্যায়মূলক অলঙ্কারঃ
শিল্পী যখন তার সৃষ্টিতে ন্যায়মূলক সূত্রের আশ্রয়ে অলঙ্কারের আকারে (শৈল্পিক সৌন্দর্যে) প্রকাশ করে, তাকে ন্যায়মূলক অলঙ্কার বলে।
অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত কোন কথাকে অলঙ্কারের সাহায্যে বর্ণনা করাকে বুঝায়।যেমনঃ
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।(রবীন্দ্রনাথ) 


৫. গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক অলঙ্কারঃ
কোন কথায় কিংবা কবিতায় যেমন একটা বাচ্যার্থ থাকে,তেমনি থাকে একটা গূঢ়ার্থ। কবি যখন বাচ্যার্থের ছদ্মবেশে, পাঠক কিংবা শ্রোতার কাছে উপস্থিত করেন তার আড়ালে গূঢ়ার্থটি, তাকে গূঢ়ার্থপ্রতীতিমূলক অলঙ্কার বলে।
যেমনঃ
কখন মিলন হবে শুধানু যখন 
হাসি প্রিয়া লীলাপদ্ম কৈল(রৈল) নিমীলন।

Monday, July 3, 2017

নাটক ও উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য

১.নাটক ও উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
উত্তর:
নাটক ও উপন্যাস উভয়ই মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি, তবু শিল্পরুপের দিক হইতে ইহাদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য
আছে।
১.(কাব্য) নাটক দৃশ্যকাব্য, উপন্যাস পাঠ্যকাব্য।
২.(ঘটনা) নাটকে প্রধান বস্তু ঘটনা - পারম্পর্য, উপন্যাসে ঘটনাবিন্যাস।
৩.(গতি) সাধারণত নাটক দ্রুত গতি,উপন্যাস ধীর - মন্থর।
৪.(আনন্দ পাওয়া) উপন্যাস পড়িয়া আমরা আনন্দ পাই,নাটক দেখিয়া আনন্দ পাই।
৫. ঔপন্যাসিক পাঠকের কল্পনার উপর বেশি দাবি করেন না,সকল কথায় তিনি সাজাইয়া বলেন ও পাঠকের
নিকট প্রত্যক্ষভাবে মূর্ত করিয়া তোলেন।আর নাট্যকার দর্শকের কল্পনাশক্তির উপর অধিকতর দাবি করেন।
৬.(আবেদন) ঔপন্যাসিকের আবেদন একজনমাত্র পাঠকের নিকট,আর নাট্যকারের আবেদন বহুর নিকট।
৭.(লাগাতার পড়া) এক খণ্ডহীন অবসর সময়ে একাসনে বসিয়া না দেখিলে নাটকের আনন্দ লাভ করা যায়
       না; কিন্তু উপন্যাস একাসনে বসিয়া আদ্যোপান্ত শেষ না করিলেও ক্ষতি হয় না।
৮.(প্রকাশ) ঔপন্যাসিক অধিকাংশ স্থলে যাহা বর্ণনার সাহায্যে প্রকাশ করেন,
     নাট্যকার তাহা দৃশ্যপট - সংযোজনায় ও রঙ্গমঞ্চ সজ্জার সাহায্যে রুপদান করেন।
৯. বুঝার পক্ষে উপন্যাস যত সহজ, নাটক ততটা সহজ নয়।
১০. ঔপন্যাসিক তাঁহার সৃষ্ট চরিত্রগুলির উত্থান - পতন ও পরিণতি সম্বন্ধে প্রকাশ্যভাবে আলোচনা করিতে
      পারেন,কিন্তু নাট্যকারের সুকঠিন নির্লিপ্ততা (Detachment)  অবলম্বন করিতে হয়।
১১. নাটকীয় বিষয়বস্তু রক্তমাংসের নর-নারীর কথা বার্তায় ব্যক্ত হয় বলিয়া উহা উপন্যাসের বিষয় বস্তু
       অপেক্ষা অধিকতর জীবন্তময়।

Sunday, May 7, 2017

ছন্দ কাকে বলে?কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর


বাংলা ছন্দ
ছন্দ:
কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে।
(বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়)
অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান
করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ
সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত,
বানানের সঙ্গে নয়।
অক্ষর
(বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই
অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত।
যতি বা ছন্দ-যতি :
 কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়,
তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত ২ প্রকার-
হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি।
অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়।
আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।
পর্ব
বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়।
পর্ব: কয়েকটা মাত্রা নিয়ে একটা পর্ব হয়।আর কয়েকটা পর্ব মিলে একটা চরণ হয়। চরণের শেষের পর্বটা
অপূর্ণ থাকতে পারে।যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ - হ্রস্ব যতি ও ∣∣ - দীর্ঘ যতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে
পর্ব।
মাত্রা:
একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়,
একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর
ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে।
শ্বাসাঘাত:
প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়।
এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন-
আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣
আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা
জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।
পদ ও চরণ:
দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির
মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ।
যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)
পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ।
এরকম-
যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥
করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
স্তবক:
অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়।
মিল:
একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে।
বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ:
বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩টি-
স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ।
তবে বিংশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস না
থাকলেও ধ্বনিমাধুর্যটুকু অটুট রয়ে গেছে, যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়।
নিচে সংক্ষেপে ছন্দ ৩টির বর্ণনা দেয়া হল।
স্বরবৃত্ত ছন্দ :
ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।
• মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়
• প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে
• সব অক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়
• দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়তে হয়
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়;
আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে  ২ মাত্রা হয়
• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত
উদাহরণ-
এইখানে তোর ∣ দাদির কবর ∣ ডালিম-গাছের ∣ তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর ∣ ভিজায়ে রেখেছি ∣ দুই নয়নের ∣ জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
(কবর; জসীমউদদীন)
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :




• মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়।
• মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়।
• বদ্ধাক্ষর শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে  থাকলে ১ মাত্রা হয়।
• একাক্ষর বিশিষ্ট বদ্ধাক্ষরটি  মাত্রা ২ হয়।
• কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি বদ্ধাক্ষর থাকে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে
• কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়
উদাহরণ-
হে কবি, নীরব কেন ∣ ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)
বসন্তে বরিয়া তুমি ∣ লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)
(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ :
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে-
পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-
সনেট :
• বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ
চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ
• ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়
• দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে
• সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)
• প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষটক বলে
• এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী,
তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে
• নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে
• দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা
অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই
সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়
• সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়
• সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট;
এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য
আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)।
নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-
পেত্রার্কীয় রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক
চ+ছ+জ চ+ছ+জ
শেক্সপীয়রীয় রীতি
ক+খ+ক+খ
গ+ঘ+গ+ঘ
চ+ছ+চ+ছ
জ+জ
ফরাসি রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক
গ+গ চ+ছ+চ+ছ
অমিত্রাক্ষর ছন্দ :





• বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে
একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে
প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে
• বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য
• অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না।
• মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট
(সাধারণত ৮++৬)
গদ্যছন্দ:
• এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম।
• গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার
জন্ম হয়।
• পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না।
• পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়;
এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়।
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়
উদাহরণ-
আমার পূর্ব-বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতে
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি।
(আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান)

Saturday, May 6, 2017

ভাব ও রস



বিষয়: ভাব ও রস
Filling -অনুভূতি
Emotion-আবেগ
Mood-ভাব-রস
(১)Filling -অনুভূতি : কোন ঘটনায় মনের মাঝে তাৎক্ষণিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাকে Filling -অনুভূতি
বলা হয়। যেমন- কোন বন্ধুর আপনজনের মৃত্যুতে তার প্রতি শান্তনা দেয়া/অনুভূতি দেখানো।
(২)Emotion -আবেগ : গভীর অবস্থা অর্থাৎ যে বন্ধুটি আপনজন হারিয়েছে নিজেকে তার স্থানে ভাবা এবং
নিজের মাঝে তেমন পরিস্থিতি তৈরি করা।
(৩)Mood- ভাব-রস : যে ঘটনার প্রতিক্রিয়া মনে থেকে যায় অর্থাৎ কোন কিছু দেখে বা উপভোগ করে তার
রেশটা মনের গভীরে গেথে যায়,তাই ভাব-রস।
দুটি বিষয় ভাবের সাথে জড়িত ভাব মূলত লৌকিক।আর রস মূলত অলৌকিক।
রস
শিল্প উপভোগের পর শ্রোতার মনে যে অনুভূতি জাগ্রত হয় তাকে রস বলে।
[উৎপাদক+পণ্য+ভোক্তা= ( ভোক্তার অনুভূতি) রস]
ভাব
ভাব: কবি বা নাট্যকারের মনোগত বিষয় সম্পর্কে বাক্য দ্বারা, অঙ্গভঙ্গি দ্বারা, মুখের অভিব্যক্তি দ্বারা কিংবা
অভিনয় দ্বারা দর্শক শ্রোতাকে যদি ভাবায় তবে তাকে ‘ভাব’ বলে।
ভাব ৪ প্রকার।যথা:
১. স্থায়ী ভাব
২. বিভাব
৩. অনুভাব
৪. অস্থায়ী ভাব
বি:দ্র:রস বিভাবের দ্বারা জাগ্রত,
অনুভাবের দ্বারা প্রকাশিত,
সঞ্চারী বা ব্যভিচারী দ্বারা অধিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠে।
স্থায়ীভাবের সামগ্রিক অভিব্যক্তিকে ‘রস’ বলে।
১.স্থায়ী ভাব
স্থায়ী ভাব: জৈবিক বা সামাজিক কতগুলো ভাব মানুষের মনে সুপ্তভাবে থাকে বাইরের উপযোগ বা
পরিবেশ পেলে তা জাগ্রত হয় তাকে স্থায়ীভাব বলে।
২.বিভাব:
বাইরের যে পারিপার্শ্বিক কারণ ভিতরে জাগ্রত হয় তাকে বিভাব বলে।
বিভাব প্রকাশিত হবার কারণ- ২ ধরনের
১. ব্যক্তি কারণ,      
২. পরিবেশতগত কারণ।
৩.অনুভাব
অনুভাব: যে আঙ্গিক বা বাচিক উপায়ে স্থায়ীভাব বাইরে প্রকাশ করে/ পায় তাকে অনুভাব বলে।
(অনুভাব শিল্পের প্রকাশ)
৪. অস্থায়ী ভাব
অস্থায়ী ভাব: অস্থায়ী ভাব স্থায়ীভাবকে জাগিয়ে দেয় বা ভাড়িয়ে দেয়।
অস্থায়ীভাব ২ প্রকার
১.সঞ্চারী ভাব/ব্যভিচারি ভাব।
২. সাত্ত্বিকভাব।

স্থায়ী ভাবের আলোচনা:

স্থায়ীভাব প্রকাশের উপায়: অঙ্গভঙ্গি দ্বারা বা কথার দ্বারা স্থায়ীভাব প্রকাশিত হয় (আঙ্গিক/বাচিক)।
স্থায়ীভাব ৯টি।যথা:
১. রতিভাব-------আদিরস (the erotic) : নায়ক-নায়িকার অনুরাগবিষয়ক ভাবকে আদিরস বলে।
২.উৎসাভাব------রীররস (the heroic) : দয়া, ধর্ম, দান, দেশভক্তি ও সংগ্রাম বিষয়ে উৎসাহবিষয়ক ভাবের নাম বীররস।
৩. শোকভাব ------করুণরস (the pathetic) : ইষ্টবিয়োগ বা অপ্রিয়সংযোগে যে শোকসঞ্চার হয় তাকে
করুণরস বলে।
৪. বিস্ময়ভাব------অদ্ভুত রস (the surprising) : আশ্চর্য বিষয়াদি দর্শনে যে বিস্ময়াত্মক ভাবের উদয় হয়,তাকে অদ্ভুত রস বলে।
৫. হাসভাব-------হাস্যরস (the comic) : বিকৃত আকার, বাক্য ও চেষ্টা দ্বারা যে ভাবের উদয় হয়, তা হাস্যরস নামে পরিচিত।
৬.ভয়ভাব-------ভয়ানক রস (the disgustful) : যা হতে মনে ভয় সৃষ্টি হয়, তাকে ভয়ানক রস বলে।
৭. জুগুপ্সাভাব--------বীভৎস রস (the surprising) : যা দ্বারা মনে ঘৃণাদায়ক ভাবের উদয় হয়, তাকে বীভৎস
রস বলে।
৮. ক্রোধভাব ---------রৌদ্র রস (the terrible) : ক্রোধজনক রসকে রৌদ্ররস বলে।
৯. শমভাব--------শান্ত রস (the quietistic) : তত্ত্বজ্ঞানের জন্য যে শান্তভাবের উদয় ও অনুরাগ জন্মায় তাকেশান্ত রস বলে।

কাব্য রসের ধর্ম:

রসের উৎকর্ষসাধক ধর্মের নাম গুণ বা স্টাইল। এই গুণ তিন প্রকার। যথা: মাধুর্য, ওজঃ এবং প্রসাদ।
১.মাধুর্য (elegance) : কাব্যের যে গুণ থাকলে শোনামাত্র চিত্ত ব্যাকুল ও বিগলিত হয়, তাকে মাধুর্য বলে।
২.ওজঃ (encitement) : যে গুণ দ্বারা চিত্ত উদ্দীপ্ত ও উজ্জ্বীবিত হয়, তাকে ওজঃ বলে।
৩.প্রসাদগুণ (perspicuity) : যে গুণ থাকলে শোনামাত্র অর্থপূর্ণ হয়, তাকে প্রসাদগুণ বলে।

Friday, May 5, 2017

মেঘনাদবধ কাব্য

মেঘনাদবধ কাব্য দুখন্ড ও নয় সর্গে রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-৭৩) মহাকাব্য। প্রথম খন্ড ১৮৬১ সালের জানুয়ারি মাসে এবং দ্বিতীয় খন্ড একই বছরের আগস্ট মাসে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণগুলিতে মধুসূদন দত্তের নিজের নকশা করা একটি প্রতীকী চিত্র ছিল। এ চিত্রে ভারতের প্রতীক হিসেবে ছিল হাতির ছবি, ইউরোপের প্রতীক হিসেবে সিংহের ছবি, মধুসূদনের নিজের প্রতিভার প্রতীক সূর্য এবং মহাকাব্যের প্রতীক হিসেবে শতদল; অর্থাৎ ভারত, ইউরোপ এবং নিজের প্রতিভার সমন্বয়ে এ মহাকাব্য। এ চিত্রের নিচে ছিল একটি সংস্কৃত শ্লোক—শরীরম্ বা পাতযেযম্ কার্য্যম্ বা সাধযেযম্ (আমি যা করার জন্যে সংকল্প করেছি, তাতে ব্যর্থ হওয়ার বদলে আমি বরং মৃত্যুকে বরণ করব)। এ প্রতীকী চিত্র থেকে বোঝা যায়, মধুসূদনের লক্ষ্য ছিল এমন একটি কাব্য রচনা করা যাতে ভারতবর্ষ এবং ইউরোপের মহাকাব্যের ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটবে এবং যা স্থায়ী ধ্রুপদী সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করবে। এ কাব্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাস, বাল্মীকি, হোমার, ভার্জিল, দান্তে, মিল্টন এবং তাসোকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর এ কাব্য পুরোপুরি তাঁদের মান অর্জন করেছে। কেবল উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের গোটা আধুনিক সাহিত্যেই তাঁর এ কাব্যের সমকক্ষতা কেউ লাভ করতে পারেননি।

মহাকাব্য রচনার জন্যে মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দ নামে এক নতুন বাংলা ছন্দ নির্মাণ করেন। এ ছন্দে তিনি মধ্যযুগের চৌদ্দ মাত্রার পয়ার ছন্দ বজায় রেখেছেন, কিন্তু যতির সুনির্দিষ্ট স্থান বদল করে পঙ্ক্তির যেকোনো জায়গায় রাখার স্বাধীনতা নিয়েছেন, আর সেসঙ্গে নিয়েছেন এক পঙ্ক্তি থেকে আরেক পঙ্ক্তিতে অবলীলায় যাওয়ার প্রবহমানতা।

তিনি তাঁর মহাকাব্যের পরিকল্পনা করেছেন সুচিন্তিতভাবে। এর ঘটনাপ্রবাহে সময় এবং স্থানের সমন্বয় ঘটিয়েছেন এবং আগের ঘটনা নিয়ে এসেছেন অতীতকে প্রতিফলিত করার (ফ্লাশব্যাকের) মাধ্যমে। তিনি তাঁর বিষয়বস্ত্ত নিয়েছেন বাল্মীকির রামায়ণ থেকে, কিন্তু দৃষ্টির কেন্দ্রে রেখেছেন রামচন্দ্র এবং তাঁর সহযোগীদের হাতে রাবণের পরাজয়, বিশেষ করে চতুর্থ সর্গে বিভীষণের সহায়তা নিয়ে লক্ষমণের হাতে রাবণের পুত্র মেঘনাদের বধের দিকে। বাল্মীকির রামায়ণে দেখানো হয়েছে লক্ষ্মণ ও তাঁর বানরবাহিনীর আক্রমণে প্রহরীদের বিপর্যস্ত হতে দেখে যজ্ঞ ত্যাগ করে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিলেন মেঘনাদ, সেখানেই লক্ষ্মণের হাতে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু মধুসূদন এ ঘটনাকে এভাবে না দেখিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদ যখন অপরাজেয় হওয়ার জন্যে অগ্নির পূজো করছিলেন, তখন লক্ষ্মণের হাতে অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার দৃশ্য অঙ্কন করেন। এর মাধ্যমে রাক্ষসদের ট্র্যাজিক বীরে পরিণত করার যে-সংকল্প মধুসূদন নিয়েছেন, তা সার্থক হয়। এর সঙ্গে তুলনীয় হোমারের ইলিয়াড কাব্য যেমন করে গ্রিকদের হাতে ট্রয়ের পতন দেখানো হয়েছে।

তাঁর এ মহাকাব্যে গ্রিক প্রভাব আরো লক্ষ করা যায় উপমা ব্যবহারে এবং দেবতাদের বিভিন্ন ভূমিকা থেকে। এ মহাকাব্যে যে শৈব-প্রভাব দেখা যায়, তা এসেছে সম্ভবত কৃত্তিবাসের রামায়ণ থেকে, যাতে রাবণকে শিবের উপাসক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া দেবতাদের মানুষের মতো করে উপস্থাপনের ব্যাপারটিও (যেমন, দ্বিতীয় সর্গে দুর্গা তাঁর স্বামীকে তাঁর নিজের মতে আনার জন্যে তাঁর সৌন্দর্যকে কাজে লাগান) বিশেষভাবে গ্রিক প্রভাবজাত।

খ্রিস্টধর্মের একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি হিসেবে মধূসূদনের পাপবোধ বেশ প্রবল ছিল এবং তিনি মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট-এ কেবল তাঁর বাংলা অমিত্রাক্ষরের আদর্শ দেখতে পাননি, বরং সেসঙ্গে খুঁজে পেয়েছেন নৈতিকতার আদর্শ। যেমন তাঁর ইংরেজি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি রাম এবং তাঁর বানরবাহনীকে ঘৃণা করি; রাবণের ধারণা আমার ভাবনাকে উস্কে দেয় এবং আমার কল্পনাকে প্রজ্বলিত করে।’ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে রাক্ষসদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও শেষ পর্যন্ত দেবতাদের কার্যকলাপ তাঁকে মেনে নিতে হয়েছে, যেমন সীতাকে অপহরণ করার কর্মফলে রাবণ নিজেই নিজের পতন ডেকে এনেছেন।

অন্যান্য সফল ধ্রুপদী সাহিত্যের মতো মেঘনাদবধ কাব্যকে প্রতিটি প্রজন্ম নতুন করে ব্যাখ্যা করতে পারে। কারো কাছে রাবণ এবং মেঘনাদ হলেন ‘বঙ্গীয় রেনেসাঁসে’র মানবিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। অন্যরা আবার একে মধুসূদনের হাতে মেঘনাদবধের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হওয়ার বৈপ্লবিক দৃষ্টান্ত লক্ষ করেছেন, এমনকি, মার্কসীয় বার্তাও। মেঘনাদবধে আরো একটা লক্ষণীয় বিষয়-এতে লঙ্কার সৌন্দর্য যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে প্রতিফলিত হয়েছে উপমহাদেশের চিরকালীন সংস্কৃতি ও ধর্ম, মধুসূদন যাকে আখ্যায়িত করেছেন-‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐশ্বর্যমন্ডিত পৌরাণিক কাহিনী’ বলে। বর্তমানে বহু প্রাচীন ঐতিহ্য বিশ্বায়িত গণসংস্কৃতির মুখে হুমকির সম্মুখীন, এসময়ে তাঁর এ মহাকাব্য একটা ট্র্যাজিক চেতনা জাগিয়ে তোলে। সর্বোপরি মেঘনাদবধ কাব্য মধুসূদনের অসাধারণ আবেগঘন, উচ্ছ্বাসপূর্ণ, রসোজ্জ্বল, মননশীল এবং শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী ব্যক্তিত্বের অনুকরণীয় প্রতিফলন। মধুসূদনের মন্তব্য- ‘একজন প্রবল সাহিত্যিক বিপ্লবী’। তাঁর এ দুঃসাহসী ধ্রুপদী রচনা বাংলাদেশ, ভারত এবং তার বাইরে প্রতিটি নতুন প্রজন্মকে বিস্মিত করবে বারবার। [উইলিয়াম র‌্যাডিচি]

সংকলন ও সম্পাদনায়
জামশেদুল ইসলাম জেরি
সাবেক ইংরেজি প্রভাষক,
বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post