Ad-1

Friday, January 26, 2018

মৃত ব্যক্তির হক ও জানাযার নামাযের নিয়ম

কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার উপর জীবিত ব্যক্তিদের চারটি কাজ ফরয হয়ে যায়।আর তা'হলো....
১. দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা।
২. অসিয়্যত পুরণ করা।
৩. ঋণ পরিশোধ করা।
৪. এবং তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা
। নিম্নে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো...

১.দাফন-কাফনের ব্যবস্থা :

কারও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশী মুসলমান মারা গেলে ওই এলাকার জীবিত পুরুষদের কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায় করা। জানাযার নামাজের মাধ্যমে তার জন্য দোয়া করা। পরকালীন মুক্তি কামনা করা করা। জানাযার নামাজ পড়লে নিজের মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়। স্মরণ হয় পরকালের কথা। এতেকরে পরবর্তীসময়ে অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা কমে যায়। বেশি বেশি ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তাই, সুযোগ থাকলে মৃতু ব্যক্তির জানাযায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হওয়া চাই।
জানাযার নামাজ শুরুর আগে পবিত্রা অর্জন করা আবশ্যক। অপবিত্র অবস্থায় জানাযা শুদ্ধ হবে না। ওজু কিংবা গোসল (যদি প্রয়োজন হয়) করে জানাযার নামাজে দাঁড়াতে হবে। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে।
আর জানাযার নামায চার তকবিরের সাথে পড়তে হয়।তকবির বলার সময় হাত উত্তোলন করা যাবে না এবং হাত ছেড়েও দেওয়া যাবে না।মনে রাখতে হবে,জানাযার নামায ঈদের নামাযের বিপরীত অর্থাৎ ঈদের নামাযে হাত তুলে ছেড়ে দিতে হয়।সংক্ষেপে জানাযার নামায..
১ নং তকবিরের পর ছানা পড়া।
২ নং তকবিরের পর দরুদ পড়া।
৩ নং তকবিরের পর দোয়া করা।
৪ নং তকবিরের পর সালাম ফিরাতে হবে।


বিস্তারিত নিয়মঃনামাজের তাকবির বলার আগে নিয়ত করতে হবে। যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন তাদের জন্য আরবিতে নিয়ত করা-ই ভালো। আরবি নিয়তটি হলো
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন, উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা, আরবাআ তাকরিরাতি ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতি, ওয়াচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবিয়্যি, ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যিতি ইকতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতে আল্লাহু আকবার।
তবে ইমাম সাহেব ‘ইকতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম’ এর বদলে ‘আনা ইমামু লিমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু’ বলবে। আর ‘লিহাযাল মাইয়্যিতে’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের ক্ষেত্রে বলতে হবে। মহিলা লাশ হলে ওই শব্দটির স্থলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যিত’ বলবে।
আর যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন না, তারা মনে মনে বা উচ্চস্বরে বাংলায় বলবে ‘আমি অতিরিক্ত চার তাকবিরে জানাযা নামাজ ফরজে কেফায়া ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম।’ তারপর আল্লাহু আকবার বলে ইমামের সাথে হাত বাঁধবে।
প্রথমেই ইমাম সাহেব ও মুক্তাদিগণ ছানা পড়বে। আরবি ছানা
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
ছানা পড়া শেষে ২য় তাকবির বলে দুরুদ শরিফ পড়বে। আরবি দুরুদ শরিফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দুরুদ শরিফ শেষে ৩য় তাকবির বলে জানাযার দোয়া পড়বে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়বে
اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
আর লাশ যদি নাবালক ছেলে হয় তবে এই দোয়া পড়বে
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
লাশ যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে এই দোয়া পড়বে
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
দোয়া শেষে ৪র্থ তাকবির বলে ইমাম সাহেব ডান ও বাম পাশে সালাম ফিরাবেন। সঙ্গে মুক্তাদিগণও সালাম ফিরাবেন। নামাজ শেষ করেই হাত উঠিয়ে দোয়া করা মাকরূহ। কারণ জানাযার নামাজ-ই মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোয়া। তবে দাফন সম্পন্ন করার পর দোয়া করতে পারবে। নবীজি (স) ও সাহাবীগণ এমনটা করতেন।

কবরে মাটি দেওয়ার সময় পড়ার দোয়া
রাসূল(সা) মেয়ে উম্মে কুলসুম রাঃ কে কবরে রাখার সময় এ দুআ পড়েছেন।হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ ابْنَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” {مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ، وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى} [طه: 55
সকল মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসকে জঈফ বলে মন্তব্য করলেও কেউ একে জাল বা বানোয়াট বলে মন্তব্য করেননি। তাই এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে রাসূল সাঃ থেকে সুনিশ্চিত প্রমাণিত সুন্নত না মনে করে এমনিতে আমল করাতে কোন সমস্যা নেই। এ আমলকে বিদআত বলা দ্বীনী বিষয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।

রচনায় ও সম্পাদনায়
জহির উদ্দীন

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post