Ad-1

Friday, February 2, 2018

নিজেকে সুখী করি....

নিজেকেই সুখী করি......

অধর রায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।সামান্য বেতনে কেরানির চাকরি করেন শহরের একটা প্রতিষ্ঠানে। বিয়ে করেছে কয়েক মাস হলো।সেই সুবাধে পরিবারে আছে মা,ভাই,দুই বোন আর নতুন বউ।সারাদিন ডিউটি,তার উপর বাসায় এসে রান্না করা অনেকটা তার বিরক্তিকর মনে হয়,তাই সে হোটেলেই খাবার খেয়ে ফেলে।বিয়ের পর অধরের মনে পরিবারের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসা সৃষ্টি হয়,তাই সে কখনো কখনো হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে ভাবে,"আজ আমি মাছ-মাংস দিয়ে খাব না।আগামিকাল তো বাড়ি যাব, এ টাকা দিয়ে বরং বৌ,বাচ্ছা,মা-সহ পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাছ মাংস দিয়ে খাব।"তাই সে সবজি বা ভর্তা দিয়ে খাবার খেয়ে ফেলে।
এদিকে এখন অধরের মাথার উপর রয়েছে ঋণের বোঝা।বিয়ে করতে গিয়ে এবং বিয়েতে সামাজিকতা ও সম্মান রাখতে গিয়ে তাকে এ ঋণ নিতে হয়।মাঝে মাঝে অধর স্বপ্ন দেখে স্ত্রীকে নিয়ে অচেনা মনোরম কোন জায়গায় হানিমুন খেতে যাবে,দুজনে হাতে হাত ধরে হাঁটবে।সন্ধ্যায় পার্কের কোন এক বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে গল্প করবে।কিংবা কোন এক সমুদ্র পাড়ের সূর্যাস্তের মুহূর্তে হাঁটুগেড়ে স্ত্রীকে প্রথম প্রেমে পড়া কোন রমণীকে প্রেম নিবেদনের মতো করে গোলাপ ও প্রেম নিবেদন করবে,সূর্যাস্তের মতো করে স্ত্রীকে চুম্বনে লজ্জিত করবে আর একটা মুহূর্তে অন্ধকারের চাঁদরে আবৃত হয়ে দুজনে পৃথিবী থেকে আড়াল হবে।কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না।
একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে পাওনাদারদের তাগাদা তার উপর সুন্দরী বউয়ের নানাবিধ আবদার তার উপর আছে বিবাহযোগ্য অবিবাহিত দুই বোনের ব্যাপারে চিন্তা।সবকিছু ছেড়ে হানিমুনে গেলে সূর্যাস্তের মুহুর্তে বোনের চিন্তায় বেদনায় বিধুর হয়ে উঠবে তার হানিমুন।পাওনাদাররা তাগাদা দিচ্ছে বারবার।সে দিকে স্ত্রীর কোন খেয়াল নেই।এ ব্যাপারে তাঁর কোন খুঁজ খবরই নেই।তার ভাবটা অনেকটা এরকম যে,বিয়ে করছ কেন? আমি যা চাই তা তো দিতে হবেই।
বিয়ের পর দুজন যে দুজনার নয়,বরং যে এক,তা সে কোন মতে বুঝতে চায় না।ভাবটা এরকম যে,ঋণ তো তোমার,তাতে আমার কি???
তো সে স্বামীর কাছে আবদার করে বসেছে পাশের বাড়ির ভাবির মতো দামি শাড়ি কিনে দেওয়ার।কিন্তু অধর রায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা কিনে দিতে পারে না।
তার উপর বলে কী?মানুষ কত জায়গায় বিয়ের পর বেড়াতে যায়?আর তুমি?ঘরকোণো বউ পাগলা স্বামী।সারাদিন শুধু বাড়িতে বসে থাক,বউয়ের চারপাশেই ঘুরপাক খাও। কোথাও নিজেও যায় না,আর আমাকেও যেতে দাও না।
অধর জীবিকার তাগিদে শহরে আসলে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতো,কেমন আছে,কি করছে,কী খেয়েছে এটাসেটা জিজ্ঞেস করতো।আর স্ত্রীও মাঝে মাঝে মিস কল দিত। দুজনে এমনভাবে মধুর মধুর রসালাপে লিপ্ত থাকতো যেন স্বামী-স্ত্রী নয় কোন এক প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি যারা দীর্ঘ বিরহে কাতর।।
কিন্তু এখন সেই স্ত্রীকে অধর শাড়ি কিনে দেয় না বলে তার সঙ্গে আর কথা বলে না,মিসকল দেয় না,স্বামী অসুস্থ জেনেও তার খুঁজ খবর নেয় না,অন্তত কেমন আছে? সেটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে না।
অথচ স্ত্রীর সামান্য অসুস্থতায় অধর কত না খুঁজ খবর নিতো।ঔষধ খেয়েছে কিনা?ঠিকভাবে ঔষধ খাওয়া হচ্ছে কিনা?লাগানো হচ্ছে কি না? আরো কত কী?????
অধর রায় আজ খুব অভিমানী ও রাগী।তাই সে আজ হোটেলে খাবারের সময় মাছ-মাংস দুটো দিয়েই খাবার খেয়েছ।আর মনে মনে ভাবছে, কী হবে? এই স্ত্রী,বউ বাচ্ছা দিয়ে? সব জ্যুট হ্যায়।মানুষকে সুখী করতে চাওয়াটাই যেন,শোকের বিষয়।তাই তার আজ এক নতুন উপলব্ধি, কাউকে নয় ও কারো জন্য নয়।আগে নিজেকেই সুখী করো।

No comments:

Post a Comment

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post