সময়ে সময়ে নারীকে নিজের মতো করে এঁকেছে পুরুষ। ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে নারী শরীরের অসংখ্য রূপ। তারই মধ্যে ৪টি শ্রেণি বেছে নিয়েছে পণ্ডিতবর্গ - পদ্মিনী, চিত্রিণী, শঙ্খিনী, হস্তিনী।
আমি - আপনি না। এই শ্রেণিবিন্যাস করে গেছেন স্বয়ং বাত্সায়ন। আর তার বর্ণনা করে গেছেন কবিরা যুগে যুগে। যেমন ধরুন কবি রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র। নারী মন ও শরীরকে নিপুণভাবে এঁকেছেন তাঁর লেখায়। রমণীকুলের এই চারটি প্রকার তুলে ধরেছেন ছবির মতো করে।
পদ্মিনী
নামেই যেন লুকিয়ে আছে এই রমণীর রহস্য। চোখ পদ্মের মতো। কোঁকড়ানো চুল। স্তন গভীর। স্মিত হাসি। পদ্মিনী নারীদের নাকের ফুটো নাকি খুব ছোটো হয়। কথা বলে ধীরে সুস্থে-মিষ্টি গলায়। নাচে-গানে পারদর্শী। পদ্মিনী নারী সচরাচর সত্য কথাই বলে।
নয়নকমল, কুঞ্চিত কুন্তল, ঘন কুচস্থল, মৃদু হাসিনী।
ক্ষুদ্র রন্ধ্রনাসা, মৃদু মন্দ ভাষা , নৃত্য গীতে আশা সত্যবাদিনী।
দেবদ্বিজে ভক্তি, পতি অনুরক্তি, অল্প রতিভক্তি, নিদ্রাভোগিনী।
সুললিত কায়, লোম নাহি হয়, পদ্মগন্ধ কয়, সেই পদ্মিনী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
অর্থাত্ ভারত চন্দ্র বলছেন - পদ্মিনী নারীর শরীর হয় আকর্ষণীয়। এরা ভক্তিমতীও বটে। ঠাকুর দেবতার পূজাপাঠ নিয়ে বেশ মগ্ন থাকতে ভালোবাসে। স্বামীর প্রতি অনুরক্ত হয়। শরীর হয় সুললিত, এককথায় সুন্দর। অতিরিক্ত যৌনতা এদের পছন্দ নয়। বরং বেশি ঘুমোতে পছন্দ করে পদ্মিনী নারীরা। শরীরে লোমের আধিক্য কম। শরীরের গোপনে পদ্মগন্ধের ঘ্রাণ মেলে। এই রমণীদের রমণীকুলের মধ্যে সর্বোত্তম ধরা হয়।
চিত্রিণী
না দীর্ঘ, না হ্রস্ব- প্রমাণ শরীরের অধিকারিণী হয় চিত্রিণী নারীরা। ধীরস্থির। যে কোনও কাজে অস্থিরতা দেখা যায় না এদের মধ্যে। নাভি হয় সুগভীর। মুখে একচিলতে মিষ্টি হাসি লেগে থাকে। স্তন হয় দৃঢ়। চুল মসৃণ, ঝলমলে। খাওয়া ও ঘুমোনোর ব্যাপারে এঁরা মধ্যচারিণী। ধীরেসুস্থে চলাফেরা করে চিত্রিণী নারীরা। শরীর হয় নরম। শরীরে লোম প্রায় থাকে না বললেই চলে। শরীরের গোপনাংশ থেকে ক্ষারের গন্ধ মেলে। পরপুরুষের প্রতি এদের আকর্ষণ থাকে না।
প্রমাণ শরীর, সর্ব্বকর্ম্মে স্থির, নাভি সুগভীর মৃদুহাসিনী।
সুকঠিন স্তন, চিকুর চিকণ, শয়ন ভোজন মধ্যচারিণী।
তিন রেখাযুত, কণ্ঠ বিভূষিত, হাস্য অবিরত মন্দগামিনী।
কমনীয় কায়, অল্প লোম হয়, ক্ষারগন্ধ কয় সেই চিত্রিণী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
শঙ্খিনী
নারী হয় দীর্ঘশরীরের। কান বড়ো, চোখ বড়ো, হাত-পা বড়ো। শরীরে লোম থাকে কম। গোপনাঙ্গের গন্ধ আঁশটে। চঞ্চল গতি। মধ্যম প্রকৃতির নারী শঙ্খিনী।
ভারতচন্দ্র লিখছেন-
দীঘল শ্রবণ, দীঘল নয়ন, দীঘল চরণ, দীঘল পাণি।
সুদীঘল কায়, অল্প লোম হয়, মীনগন্ধ কয়, শঙ্খিনী জানি।
হস্তিনী
স্থুলদেহ অর্থাত্ সাধারণত ভারী শরীরের অধিকারিণী হয় হস্তিনী নারী। স্তন হয় ভারী। গলার আওয়াজ হয় তীব্র। প্রচুর খেতে ভালোবাসে, ঘুমোতে ভালোবাসে। পরকীয়া সম্পর্কে নাকি আসক্ত হয় হস্তিনী নারী। ধর্মে-কর্মে মত থাকে না। মিথ্যা কথা বলতে নাকি পটু হয় হস্তিনী নারী। শরীরে প্রচুর লোম থাকতে পারে। গোপনাঙ্গ থেকে মদগন্ধ মেলে।
স্থুল কলেবর, স্থুল পয়োধর, স্থুল পদকর ঘোরনাদিনী।
আহার বিস্তর, নিদ্রা ঘোরতর, বিহারে প্রখর পরগামিনী।
ধর্ম্ম নাহি ডর, দন্ত ঘোরতর, কর্ম্মেতে তত্পর মিথ্যাবাদিনী।
সুপ্রশস্ত কায়, বহু লোম হয়, মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
এই হল রমণীকুলের চারপ্রকার। শরীরের বিবরণে নারীকে চেনা। (তাও সম্ভব ?) নেহাত গুরুজনে বলে গেছেন, তাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। কিন্তু, তাই বলে ৩৫০ কোটি নারীকে ৪ ভাগে ভাগ করা ? সে কি চাট্টিখানি কথা ? সদ্য দাড়ি গজানো ক্লাস নাইন-টেনের ছেলেরাও বলে দেবে এ সম্পাদ্য ভুল। কবি বলবে -
'বেদনা-মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর
অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না
তুমিই প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর
আবার কখনও ভাবি অপার্থিব কি না।'
No comments:
Post a Comment