Ad-1

Showing posts with label জেনে রাখা ভালো. Show all posts
Showing posts with label জেনে রাখা ভালো. Show all posts

Wednesday, October 16, 2019

রবীন্দ্রনাথের 'নৌকাডুবি '- উপন্যাসের সার সংক্ষেপ

নৌকাডুবি (১৯০৬)
চরিত্র ও তথ্য সমূহ
১. রমেশঃকলকাতা/Law/বাবার চিঠি/
২. হেমনলিনীঃমাতৃহীন/
৩. কমলাঃ
৪. ডাক্তার নলিনাক্ষঃ
* গঙ্গার প্রবল ঘুর্ণিঝড় 
Oh what a climax! ধীরে ধীরে চরম উত্তেজনায় পৌঁছে দিতে রবী ঠাকুর অনবদ্য।নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের সামাজিক উপন্যাস নৌকা ডুবি(১৯০৬)।
.
উপন্যাসের নায়ক রমেশ কলকাতায় Law পড়তে গিয়ে পরিচয় ঘটে নায়িকা হেমনলিনীর সাথে। সংস্কৃতিমনা, শিক্ষিত, রুচিশীল মাতৃহীনা নারী হেম বাবার অতি আশকারার দুলালী।রবীন্দ্রনাথ হেমের বাবাকে বন্ধুর আসনে বসিয়ে তৎকালিন মার্জিত পিতার চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
.
হঠাৎ বাবার চিঠি পেয়ে নায়ক রমেশ বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো অশিক্ষিত দরিদ্র্য এক গ্রাম্য মেয়ের সাথে তার বিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। হেমকে ভালবাসে এমন কথা রমেশ তার বাবাকে বললেও, পরিস্থিতি অতটাই জটিল হলো যে রমেশ ঐ নিরক্ষর মেয়েকেই বিয়ে করতে বাধ্য হলো। উপন্যাসের ক্লাইমেক্স শুরু এখান থেকেই। বিয়ে শেষে বরযাত্রী যখন কনে নিয়ে গঙ্গার পার হচ্ছিলো তখনই গঙ্গার প্রবল করাল ঘূর্ণিপাকে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। রমেশ নিজেকে এবং পাশে তীরে পরে থাকা এক নববধূকে আবিষ্কার করে কলকাতায় গিয়ে সংসার শুরু করলো।
.
নায়কের নবপরিণীতার নাম কমলা। স্বল্পভাষী কমলার দাবি সে সংসারে রমেশের কাছ থেকে কখনো ভালবাসা পায়নি, পেয়েছে স্নেহ। সংসার জগতে ভালবাসা আর স্নেহের পার্থক্য উপন্যাসকে এক রহস্যের দিকে ধাবিত করে।
রমেশের হৃদয়পটে হেমের উপস্থিতি এতটাই গভীর যে কমলার সংসারে মনোযোগী হতে পারছিল না। রমেশ এক সময় বুঝতে পারে কমলা তার বাবার ইচ্ছেতে বিয়ে করা সে গ্রাম্য মেয়েটি না। গঙ্গার সেদিনের উত্তাল ঝড়ে সবাই ভেসে যায়।কমলারও সেদিন এক ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়েছিল।
.
কমলা রমেশের সাতপাকে বাধা স্ত্রী নয় বুঝতে পেরে চাতকের ন্যায় প্রহর কাটানো হেমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং কমলার কথা গোপন রাখে। এদিকে হেমকে পছন্দ করা তার ভাইয়ের বন্ধু জানতে পারে রমেশ বিবাহিত। এই সংবাদ জানাজানি হয়ে গেলে রমেশ কমলাকে নিয়ে কলকাতা ত্যাগ করে। এমন সংবাদে হেম বাকরুদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
.
কমলা এক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানতে পারলো রমেশ তার স্বামী নয়। নিজের জীবন উৎসর্গে গঙ্গায় ঝাঁপ দিলে জেলেরা তাকে উদ্ধার করে এক বাড়িতে দাসী হিসেবে রেখে আসে।
.
হেমনলিনীকে তার ভাই বন্ধুর সাথে বিয়ে দিতে চেষ্টা করলে বাবা হেমের পক্ষাবলম্বন করেন। আসাধারণ সব যুক্তির সমাবেশ রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ এই অংশে। হেমকে নিয়ে বাবা সফরে বের হলে পরিচয় ঘটে ডাক্তার নলিনাক্ষের সাথে। রমেশের জন্য হেমের প্রাণ অতিসয় বিয়োগগ্রস্ত। এদিকে ডা: নলীনাক্ষ হেমের অশান্ত মনে কিছুটা প্রণয়ের সুর তুলে। হেমের বিষাদ অসুস্থ মনের দায়িত্ব নিতে ডাক্তারবাবুকে হেম সম্মতি দেয়। উপন্যাসের এমত ক্ষণে পাঠক হৃদয়ে ভালোবাসার ভগ্ন চিত্র দৃশ্যত হয়। বিয়ের কথাও পাকাপাকি হয়ে গেল ডাক্তার আর হেমের। কি হবে রমেশের!
.
কি নিয়তি! কমলা আজ দাসী তার নিজ স্বামীর ঘরে। আর এদিকে রমেশ ব্যাকুলে হেমের জন্যে। রমেশ হঠাৎ করেই হেমের গৃহে হাজির হলে হেম সব কিছু ত্যাগ করে ভালবাসাকে নিরবধি চিত্তে সম্মান দেখিয়ে রমেশের পাণিগ্রহণ করে। রমেশ ডাক্তারবাবুকে কমলার পরিচয় দিলে বুঝতে পারে কমলাই ডাক্তারের সেই গঙ্গায় হারিয়ে যাওয়া বউ।
.
এক নৌকা ডুবি মানুষকে সামাজিকভাবে কতটা বৈচিত্রময় করে তুলে তার নিদারুণ কাহিনীই জায়গা করে নিয়েছে রবী ঠাকুরের এই নৌকা ডুবি উপন্যাসে।

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপান্ডব ত্রিশের দশকের বিশিষ্ট ৫ জন কবি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁদের ৫ জনকে বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপান্ডব বলা হয়।
১.জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)।
২.অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৭)।
৩.বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪)।
৪.বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২)।
৫.সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০)।

Tuesday, October 1, 2019

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-সময়ের চেয়ে আধুনিক বাঙ্গালি!

‘নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে, ক্লীবে চ পতিতে পতৌ’

অর্থাৎ, স্বামী নিখোঁজ বা মৃত্যুবরণ করলে কিংবা নপুংসক বা পতিত হলে স্ত্রী আবার বিয়ে করতে পারেন।

বিদ্যাসাগর সংস্কৃত এই বাক্যটি পেয়েই বলে উঠেছিলেন, ‘পেয়েছি পেয়েছি’। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যিনি ঊনিশ শতকের সমাজ সংস্কারক, যিনি নিজ সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন – তার অন্যতম এক সংস্কারকাজ ছিল বিধবা বিবাহ প্রচলনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

সেসময় তিনি রাত দিন একাকার করে শাস্ত্র পড়তেন। বীরসিংহ গ্রামে একদিন বিদ্যাসাগরের মা ভগবতীদেবী প্রতিবেশী এক কিশোরী কন্যার অকালে বিধবা হয়ে যাওয়া দেখে, আকুল হয়ে পুত্রের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বিধবাদের বাঁচার কি কোনো উপায় আছে?

বিদ্যসাগর জানান, বিধবাদের বিয়ে শাস্ত্র সিদ্ধ। তিনি এই বিষয়ে লিখবেন কিন্তু সমাজে বেশ একটা হট্টগোল হতে পারে এনিয়ে। কারণ, বিধবারা আবার বিয়ে করবে, কোনো পুরুষ বিধবা নারীকে বিয়ে করবে- একথা সেইসময়কার সমাজে কেউ ভাবা দূরে থাক, কল্পনাতেও বোধহয় আনতে পারত না।

বিধবা বিবাহ প্রচলনের প্রতি বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত উপলব্ধি জন্মায় সম্ভবত আরো আগে। ছোট বেলায় গ্রামে রাইমনি নামে এক সঙ্গী ছিল তার। রাইমনির বিয়ে হয়ে গেল খুব অল্প বয়সেই৷ স্বামীর বাড়ি চলে যায় সে। কিছু বছর বাদে রাইমনি বিধবা হয়ে গ্রামে ফিরে আসে একমাত্র ছেলে গোপালকে সাথে নিয়ে।

বিদ্যাসাগরও একদিন গ্রামে ফিরে দেখলেন রাইমনি ফিরে এসেছে কিন্তু তার সারা মুখে যেন স্থায়ী বিষণ্ণতার ছাপ। সেদিন একাদশী, রাইমনি উপবাস করছিল। তার দিকে যেন তাকানোই যায় না। কি যে কষ্ট চোখে মুখে…বিদ্যাসাগর তখন উপলব্ধি করলেন, হিন্দু বিধবা নারীদের বৈধব্য থেকে মুক্তি দিতে হলে, পুনর্বিবাহ দেয়া ছাড়া গতি নেই।

বিদ্যাসাগর সেসব দিনে রাত দিন পড়তেন। শাস্ত্র পড়তে গিয়েই তিনি সেই সংস্কৃত বাক্যটি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটা ১৮৫৩ সালের কথা।

বিদ্যাসাগর

পরের বছর, সময়টা যখন ১৮৫৪ সাল, ডিসেম্বর মাসে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে “সমাজোন্নতি বিধায়িনী সুহৃদ সমিতি” নামক সভা হয়। এই সভায় হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ, বহুবিবাহ রোধ ও বাল্যবিবাহ বর্জন নিয়ে কিশোরীচাঁদ মিত্রের প্রস্তাব উঠে। অক্ষয়কুমার দত্ত প্রস্তাব সমর্থন করেন। প্রস্তাবের প্রতিলিপি পাঠানো হয় বৃটিশ লিগ্যাল কাউন্সিলে।

১৮৫৫ সালে বের হয় বিদ্যাসাগরের বইটি। বিধবা বিবাহ নিয়ে লেখা তার প্রথম বইয়ের দুই হাজার কপি অল্পসময়ে শেষ হয়ে গেল। এই বই নিয়ে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়। সংস্কারবিরুদ্ধ সমাজ থেকে প্রতিবাদ আসে। সমালোচনা আসে। বিদ্যাসাগরও পালটা জবাব চালিয়ে যেতে থাকেন।

সেবছরই অক্টোবরে ৯৮৬ জনের সই নিয়ে বিদ্যাসাগর সরকারের কাছে বিধবা বিবাহ প্রচলনের দাবি তুলেন। সমাজ যেন দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও বিদ্যাসাগরের বিপক্ষে ছিলেন তখন। সবদিক থেকে সমালোচনার তীর ধেয়ে আসছিল বিদ্যাসাগরের দিকে।

কিন্তু এই আন্দোলনও থেমে ছিল না। ১৮৫৬ সালে বর্ধমান থেকেও বিধবা বিবাহের সমর্থকদের আবেদন গেল সরকারের কাছে। বর্ধমানের রাজা মহতাব সিং বিদ্যাসাগরের পক্ষে সই করলেন। দীনবন্ধু মিত্র, প্যারিচাঁদ মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখও বিদ্যাসাগরের পক্ষে প্রস্তাব সমর্থন দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন।

কিন্তু, প্রতিবাদে বিরোধী পক্ষের সই পড়লো আরো বেশি। সতর্ক করা হলো এই বলে, বিধবা বিবাহ চালু হলে ভারতে ধর্মদ্রোহ হবে।
কিন্তু, তারপরেও ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই সরকার বিধবা বিবাহ অনুমোদন দিয়ে আইন পাশ করলো! লর্ড ডালহৌসি আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন।

এবার দেখা দিলো, নতুন ফ্যাঁকড়া। বিধবাদের বিয়ে দিতে কেউ চাচ্ছে না, বিধবাদের বিয়ে করার মতো আগ্রহী কাউকেও দেখা যাচ্ছে না।

বিধবা বিবাহ, বিদ্যাসাগর
এগিয়ে এলেন বিদ্যাসাগরই। তিনি দৃঢ় ছিলেন, বলেছিলেন, “বিধবার বিয়ে হবে, আমিই দিব।”
*
১৮৫৬ সালেরই ৭ ডিসেম্বর। কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের রাজকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রিত ৮০০ জন মানুষ। এলাহী কান্ড একেবারে। বিধবা বিবাহ হবে। পাত্র সংস্কৃত কলেজের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি, তারপর মুর্শিদাবাদের জজ। পাত্রী দশ বছরের বিধবা মেয়ে যার বিয়ে হয়েছিল চার বছর বয়সে! বিদ্যাসাগর নিজের অর্থ খরচ করে জমকালো আয়োজন করে প্রথম বিধবা বিবাহ দেন।

এরপর বিধবা বিবাহ দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরকেই যেন সমাজ সব ভার দিয়ে দিয়েছে। আর কেউ এগিয়ে না এলেও বিধবা বিবাহ দেয়ার ক্ষেত্রে পাওয়া যায় বিদ্যাসাগরকে। তিনি নিজে ঋণে জর্জরিত হন। কিন্তু বিধবাদের বিয়ে দিতে কখনো পিছু হটেননা। ষাটজন বিধবার বিবাহ একাই দিয়েছিলেন তিনি।

এমনকি অনেকের মতের৷ বিরুদ্ধে গিয়ে নিজ পুত্র নারায়ণচন্দ্রকেও বিয়ে দেন বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীর সাথে। ১৮৭০ সালের কথা। এই বিয়ে বিদ্যাসাগরের স্ত্রী, মা কেউই মানতে চাননি। কিন্তু, তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মুখে যা বলতেন ঠিক সেটাই করে দেখাতেন। যা অন্যের জন্যেও সমান, তার থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখতেন না। তাই নিজের পুত্রকেও বিধবা নারীর সাথে বিবাহ দিতে তার একটুও হীনমন্যতা জাগেনি। এমনই মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর।
*
তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রেও সংস্কার আনেন নিজ উদ্যোগে। একটা মানুষ তার সমস্ত সম্পত্তি বন্ধক রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে পারে, এমন ক্ষ্যাপাটে লোকের কথা এই যুগেও ভাবা যায় না। কিন্তু, একজন বিদ্যাসাগর ছিলেন যিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষ। তিনি৷ নিজের সমস্ত সম্পত্তি বন্ধক রেখে শংকর ঘোষ লেনে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউট তৈরি করেছিলেন, যা প্রথম বেসরকারি বাংলা কলেজ এবং একই সাথে প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ কলেজও বটে!

তিনি হিন্দুশাস্ত্রবিদ হলেও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা তার স্বপ্ন ছিল। সংস্কৃত কলেজে থাকাকালীন সময়ে ওই কলেজের দ্বার তিনি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন শুদ্রদের জন্যে, যারা নিচুজাত বলে সেই কলেজে ঢোকার অনুমতি পেতো না। তিনি চেয়েছিলেন মাতৃভাষায় শিখবে, শিক্ষিত হবে বাঙ্গালি। তাই, বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা ভাবেন তিনি। তাই তিনি লিখেন বর্ণপরিচয় নামক গ্রন্থ। যে গ্রন্থের লিপিসংস্কার পরবর্তীতে বাংলা লিপির আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়।
*
সাহিত্যকেও তিনি সমৃদ্ধ করেন, সাহিত্যেও তিনি সংস্কার আনেন। মধ্যযুগীয় রীতি থেকে বেরিয়ে বাংলাকে আধুনিক করতে তার যত প্র‍য়াস। তিনি বাংলাতে সহজ ও আধুনিক ভাষারীতি চর্চা করেন। সহজবোধ্য গদ্যে তার লেখাগুলো।

তিনি পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য লিখেছেন বর্ণ পরিচয়, বোধোদয়, কথামালা, আখ্যানমঞ্জরী, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি বই। আবার গদ্যে শৃঙ্খলা, বিন্যাস ও সাহিত্যের বাহন করে তুলবার জন্য লেখেন শকুন্তলা, সীতার বনবাস, মহাভারত, ভ্রান্তিবিলাস প্রভৃতি বই।

বর্ণপরিচয়

বাংলায় যতি চিহ্ন বা বিরাম চিহ্নের ব্যবহার প্রথম শুরু করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থ ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’তে তিনি প্রথম যতিচিহ্নের ব্যবহার শুরু করেন। এর আগে বাংলায় যতিচিহ্নের প্রচলন ছিল না।

এই চিহ্নের ব্যবহারের ফলে ভাষা লিখন এবং বোঝার ক্ষেত্রে অনেক সহজ হয়। বাংলাকে আরেকটু এগিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এটা ছিল অনন্য সংযোজন।
*
রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগরকে খুব বড় মানুষ বলে কদর করতেন। তিনি বলেন, “তাঁহার প্রধান কীর্তি বঙ্গভাষা। বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন।”

রবীন্দ্রনাথ এও লিখেছিলেন যে, “আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না।”

অর্থাৎ, ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এই মাপের একজন মানুষের জন্ম বঙ্গদেশে হয়েছে এটা বেশ বিস্ময়কর। জীবদ্দশায় তিনি প্রতিকূলতা স্বত্তেও, সমাজের বিরুদ্ধেও গিয়েও যে সংস্কার করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, এমন সাহস বিরল।

আত্না বড় না হলে, বড় মনের মানুষ না হলে এতো বেশি স্বচ্ছতা আর স্পষ্টতা কারো মধ্যে থাকে না, যা ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যে। তাই বলি, তিনি এমন এক সময়ের প্রতিনিধি, যখন তার সমাজ প্রস্তুত ছিল না, কিন্তু তিনি একাই সমাজকে প্রস্তুত করে তুলেছেন, সমাজের গতিপথ বদলে দিয়েছেন, ভাষাকে পূর্ণতা দিয়েছেন। তিনি তাই একজন সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা মহাপুরুষ!
সংগৃহীত : অনলাইন থেকে সংগৃহীত।

Monday, September 30, 2019

কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দার্থ জেনে নিই

*অজ-ছাগল,মেষ।
*অশীতিপর--আশিরও অধিক বয়সবিশিষ্ট।
*কিন্নর দল- দেবলোকের সুকণ্ঠ গায়ক।ঘোড়ার মতো মুখ ও মানুষের মতো দেহবিশিষ্ট স্বর্গীয় গায়ক।
*কুলটা- অসতী স্ত্রী,কুল বা স্বামীগৃহ ত্যাগ করে যে রমণী।
*খুড়ো- চাচা,কাকা,পিতৃব্য।
*গতাসু- মৃত।
*গানের পসরা- পণ্যদ্রব্য,আলো,কিরণ,প্রভা।
*চক্রবাক-- চকা,হাঁসজাতীয় পাখি।
*চার্বাক- একজন নাস্তিক মুনি,জড়বাদী।
*ডিস্টিংশন - প্রতি বিষয়ে ৮০ নাম্বারের উপরে পাওয়া।
*পৌরুষ -- পুরুষজনোচিত ভাব ধর্ম বা আচার-ব্যবহার,তেজ,বীর্য।
*বীপ্সা-- যা পুন:পুন ঘটে,ব্যাপ্তি।
*মৌরিফুল- মসলা রুপে ব্যবহৃত এক প্রকার শস্য। {স.মধুরিকা>মধুরি>মহুরি>মৌরি}
*রজক- ধোপা,রংকারক।
*শূর--- শৌর্যবান,বীর্যশালী,শক্তিমান।
*শ্যামা --(১)পরম রুপবতী যুবতী-শীতকালে যার স্পর্শ আরামপ্রদ উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকালে সুখদায়ক শীতল-(২)হিন্দুদেবী কালি,(৩) মধ্যযৌবনা নারী(৪) শ্যামা নামক পাখি- শ্যামাসঙ্গীত।
*স্থিতপ্রজ্ঞ--১. বুদ্ধির পরিপক্বতা অর্জিত হয়েছে এমন। ২. গভীর চিন্তায় মগ্ন।

Thursday, September 12, 2019

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ

আইনস্টাইনের যিনি ড্রাইভার ছিলেন,
তিনি একদিন আইনস্টাইনকে বললেন - আপনি প্রতিটি সভায় যে ভাষণ দেন সেইগুলো শুনে শুনে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে ।" -আইনস্টাইন তো অবাক!!!
উনি তখন বললেন "বেশ তাহলে এর পরের মিটিংয়ে যেখানে যাবো তারা আমাকে চেনেন না, তুমি আমার হয়ে ভাষণ দিও আর আমি ড্রাইভার হয়ে বসে থাকবো ।"
-এরপরে সেই সভায় তো ড্রাইভার হুবহু আইনস্টাইন-এর ভাষণ গড় গড় করে বলে গেলেন । উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা তুমুল করতালি দিলেন । এরপর তাঁরা ড্রাইভারকে আইনস্টাইন ভেবে গাড়িতে পৌঁছে দিতে এলেন ।
-সেই সময়ে একজন অধ্যাপক ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন "স্যার, ঐ আপেক্ষিক এর যে সঙ্গাটা বললেন, আর একবার সংক্ষেপে বুঝিয়ে দেবেন ?"
-আসল আইনস্টাইন দেখলেন বিপদ, এবার তো ড্রাইভার ধরা পড়ে যাবে । কিন্তু তিনি ড্রাইভার-এর উত্তর শুনে তাজ্জব হয়ে গেলেন । ড্রাইভার উত্তর দিল।।
-"এই সহজ জিনিসটা আপনার মাথায় ঢোকেনি ? আমার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করুন সে বুঝিয়ে দেবে ।"

বিঃদ্রঃ- জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা করলে আপনিও জ্ঞানী হবেন।আপনি যেমন মানুষের সাথে ঘুরবেন তেমনই হবেন।
এই জন্যে কথায় আছে,
"সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস,
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"।
collected

Monday, September 2, 2019

ছেড়ে দে নৌকা মাঝি যাব মদিনা

গীতিকার ও সুরকার : আব্দুর রাহমান বয়াতি

দে দে পাল তুলে দে
মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা
অামি যাবো মদিনা

দুনিয়ায় নবী এলো
মা অামিনার ঘরে
হাসিলে হাজার মানিক
কাঁদিলে মুক্তা ঝড়ে

ও দয়াল মুর্শিদ যার সখা
তার কিসের ভাবনা
অামার হৃদয় মাঝে কাবা
নয়নে মদিনা...

ও নূরের রৌশনীতে
দুনিয়া গেছে ভরে
সে নূরের বাতি জ্বলে
মদিনার ঘরে ঘরে
দয়াল মুর্শিদ যার সখা
তার কিসের ভাবনা
অামার হৃদয় মাঝে কাবা
নয়নে মদিনা.......

দে দে পাল তুলে দে

কারো কারো মতে; কর্পোরেট বাউলগণ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকগণ কর্তৃক সত্যের অপলাপ করা হয়েছে।

এটা প্রথম লেখা হয় ১৯৯৮ সালে। এটি লিখেছেন চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার মাওলানা নিজাম উদ্দিন। প্রথম সুর গীতিকার নিজেই দেন। ৯৮ সালে চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের সংগঠন "মদীনা ইসলামী সাংস্কৃতিক ফোরাম" এর উদ্যোগে ক্যাসেটে এটি প্রকাশিত হয়। গেয়েছেন মাওলানা একরাম, যিনি এখন চট্টগ্রাম বন্দর মসজিদের ইমাম।

অবশ্য কর্পোরেট বাউলগণ কিছু কথা পরিবর্তন করে নিয়েছে।

Wednesday, August 28, 2019

ভালোবাসা রং বদলায়

সুবর্ণা মুস্তফার সাথে একবার হুমায়ুন ফরিদীর প্রচণ্ড ঝগড়া হলো, রাগ করে সুবর্ণা অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে শুয়ে পড়লেন।

সুবর্ণা সকালে উঠে দরজা খুলে দেখেন, যেই রুমে ঝগড়া হয়েছিল, সেই রুমের মেঝে থেকে ছাদের দেয়াল পর্যন্ত একটি কথাই লিখে পুরো রুমকে ভরে ফেলা হয়েছে, কথাটি হল- 'সুবর্ণা, আমি তোমাকে ভালোবাসি'|

এতো ভালোবাসাও তাদের বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারেনি, ২০০৮ সালে ডিভোর্স হয়। কারণ ভালোবাসা রং বদলায়..!

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন-
'প্রেম ধীরে মুছে যায়; নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।'

এই জীবনানন্দকে একবার দেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে লাবণ্যপ্রভা। সাহিত্যের ছায়া থেকে একশ হাত দূরে থেকেও সাহিত্যের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এই লাবণ্য।

সেও কিছুকাল পরে টের পায় তার স্বাধীনতা হারিয়ে যাচ্ছে। মুক্তির জন্য ছটফট করতে থাকে। দুর্বিষহ হয়ে উঠে দুজনের জীবন। প্রেম সত্যি একসময় মুছে যায়।

গুলতেকিন নামের ক্লাস টেনের সেই কিশোরী হুমায়ুনের প্রেমে অন্ধ হয়ে বিয়ে করে ফেলে।

বিয়ের পরে সে জানতে পারে যে লেখক হুমায়ুন আহমেদ মানুষ হিসেবে খুবই সাধারণ। বাস্তব জীবনে সে চাঁদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে না, কবিতা আওড়ায় না। তার মধ্যে আলাদা কিছু নেই। সে আর দশটা মানুষের মতোই সাধারণ।

স্বপ্ন ভঙ্গের মতো ব্যাপার"
গুলতেকিন বারবার বলতে থাকে- 'তোমার লেখাই ভালো, অন্যকিছু ভালো না।'

আসলেই ভালোবাসা রং বদলায়!
নন্দিতা রায়ের 'বেলাশেষে' সিনেমায় এই কঠিন ব্যাপারটা খুব সহজভাবে বুঝানো হয়েছে-

'হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ,
সারাজীবন বইতে পারা সহজ নয়!'

সহজ না হওয়ার কারণ ঐ একটাই-
'ভালোবাসা রং বদলায়' 🙃

আসলে প্রেম ভালবাসার সহজলভ্যতার এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বিরল দুটি জিনিস-
"মনের মানুষ" এবং "মানুষের মন"।

এই দু'টোর উপর বিশ্বাস থাকা ভাল এবং উচিতও বটে। তবে সেটা কেবলই নিজের মধ্যে। কখনোই এগুলো নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী বড়াই দেখানোও উচিত নয়।

কারণ হাওয়ার দিক পরিবর্তন হয়ে কখন কোনদিকে বয়ে যায় সেটা সর্বদাই অনিশ্চিত। হোক সেটা প্রকৃতির হাওয়া অথবা মনের।
আসলেই ভালবাসা রং বদলায়।
[কৃতজ্ঞতা স্বীকার: কুটিবাড়ি নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ]

Friday, August 23, 2019

৪০তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি
বিষয়: বাংলা
{বাংলায় আগে ৫টি/৩টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের লেখকের নামসহ গ্রন্থের নাম লিখতে বলতে, এখন ৩নম্বরের জন্য বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর সর্ট কাহিনী লিখতে হতে পারে}
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসঃ
.
১.রাইফেল রোটি আওরাত- আনোয়ার পাশা।
২.জাহান্নাম হইতে বিধায়- শওকত ওসমান।
৩.ওংকার- আহমদ ছফা।
৪.হাঙ্গর নদী গ্রেনেড- সেলিনা হোসেন।
৫.খাঁচায়- রশীদ হায়দার।
.
কবিতাঃ
১.মুক্তিযোদ্ধা- জসীমউদদীন।
২.দগ্ধগ্রাম- জসীমউদদীন।
৩.বন্দী শিবির থেকে- শামসুর রহমান।
৪.পুত্রদের প্রতি- আবুল হোসেন।
৫ প্রথম শহীদ বাংলাদেশের মেয়ে- সুফিয়া কামাল।
.
নাটকঃ
১.পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় - সৈয়দ শামসুল হক
২.বকুলপুরের স্বাধীনতা- মমতাজ
উদদীন আহমদ।
৩.নরকে লাল গোলাপ- আলাউদদীন আল আজাদ।
৪.আয়নায় বন্ধুর মুখ- আবদুল্লাহ আল মামুন।
৫.যে অরন্যে আলো নেই-নীলিমা ইব্রাহিম।
-
স্বাধীনতাপূর্ব ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ইঙ্গিতবাহী উপন্যাসঃ
১.ক্রতিদাসের হাসি (১৯৬২) - শওকত ওসমান।
২.কিষাণ (১৯৬৯) -ইন্দু সাহা।
৩.রাঙ্গা প্রভাত (১৯৫৭) -আবুল ফজল।
৪.নীড় সন্ধানী (১৯৬৮) - আনোয়ার পাশা।
৫.বিদ্রোহী কৈবর্ত (১৯৬৯) - সত্যেন সেন।
.
চলচ্চিত্রঃ
১.ওরা ১১ জন- চাষী নজরুল ইসলাম।
২.গেরিলা-নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
৩.লাল সবুজ- শহীদুল ইসলাম।
৪.আমার দেশের মাটি- অনন্ত হীরা।
৫.প্রত্যাবর্তন- মোস্তফা কামাল।
-
প্রামান্য চিত্রঃ
১.দুঃসময়ের বন্ধু- শাহরিয়ার কবির।
২.১৯৭১- তানভীর মোকাম্মেল।
৩.স্টপ জেনোসাইড- জহির রায়হান।
৪.মুক্তির গান- তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ।
৫.লিবারেল ফাইটার্স- আলমগীর কবির।
.
ছোটগল্পঃ
১.একাত্তরের যীশু-শাহরিয়ার কবির।
২.জন্ম যদি তব বঙ্গে- শওকত ওসমান।
৩.নামহীন গোত্রহীন-হাসান আজিজুল হক।
৪.মিলির হাতে স্টেনগান-আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
৫.বীরাঙ্গনার প্রেম-বিপ্রদাস বড়ুয়া।
.
স্মৃতিকথাঃ
১.আমি বিজয় দেখেছি-এম আর আখতার মুকুল।
২.একাত্তরের দিনগুলি-জাহানারা ইমাম।
৩,একাত্তরের ডায়েরী-সুফিয়া কামাল।
.
প্রবন্ধঃ
১.A search for identity-মেজর মো.আবদুল জলিল
২.The liberation of Bangladesh -মেজর.জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং।
৩.একাত্তরে ঢাকা-সেলিনা হোসেন।
৪.আমি বীরাঙ্গনা বলছি-ড.নীলিমা ইব্রাহিম।
-
বিদেশী ভাষার বইঃ
১.The rape of Bangladesh- অ্যান্থনি মাসকারেনহাস।
২.Legacy of Blood -অ্যান্থনি মাসকারেনহাস।
৩.The testimony of sixty;Oxfam
৪.A search for identity;
৫.The liberation of Bangladesh;
.
স্থাপত্যঃ
১.জাতীয় স্মৃতিসৌধ-সাভার.সৈয়দ মইনুল হোসেন।
২,বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ-মিরপুর.মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি।
৩.স্বোপার্জিত স্বাধীনতা-ঢাবি.
শামীম শিকদার;
৪.সংশপ্তক- জাবি.
৫.অপরাজেয় বাংলা-ঢাবি.সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ।
.
গানঃ
১.মোরা একটি ফুলকে বাচাব- গোবিন্দ হালদার।
২. জন্ম আমার ধন্য হল- নাঈম গহর।
৩.জনতার সংগ্রাম চলবেই- সিকান্দার আবু জাফর।
৪.শুনো একটি মুজিবুরের- গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার।
৫.নোঙ্গর তোলো তোলো-নাঈম গহর
/
সম্পাদিত
[কৃতজ্ঞতা স্বীকার fb page; zakir's bcs special ]

ভাইভা বোর্ডের শিষ্টাচারিতা

বিসিএস ভাইভা-সংক্রান্ত দরকারি টিপস
(অন্যান্য সরকারী চাকরীর ভাইভার জন্যও প্রয়োজ্য)
© রবিউল আলম লুইপা
দৈনিক কালের কন্ঠ
০৭ আগষ্ট, ২০১৯

ভাইভা বোর্ডে..

১. ভাইভা বোর্ডে ঢোকার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে জোরে নিঃশ্বাস নেবেন, এতে নার্ভাসনেস অনেকটাই কেটে যাবে।

২. অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন, নিকটতম দূরত্বে গিয়ে সালাম বা আদাব দেবেন।

৩. বসতে না বললে বসবেন না। অনেকক্ষণ হয়ে গেলে বা না বসতে বলেই ভাইভা শুরু করলে ‘আমি কি বসতে পারি স্যার’ বলে অনুমতি নিয়ে নেবেন, এরপর অবশ্যই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন।

৪. চেয়ারে হাতল থাকলে (সাধারণত থাকে না) হাতলে হাত রাখবেন না, পা নাচানো বা হাতের মুদ্রাদোষ থাকলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। সবচেয়ে ভালো হয় দুই হাতের আঙুলগুলো ক্রস করে, ঊরুর ওপর হাত রাখা।

৫. বাংলায় প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়া আপনার অতিরিক্ত পরিপক্বতা, আবার ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দেওয়া আপনার অদক্ষতা। তাই যে মিডিয়ামে প্রশ্ন করা হবে, সে মিডিয়ামেই উত্তর দিন।

৬. ভাইভা বোর্ডে আরগুমেন্ট করবেন না। ভাইভা বোর্ড ‘সর্বজান্তা’ চায় না, চায় ‘বিনয়ী মার্জিত’ অফিসার। কোনো প্রশ্নের উত্তর ‘আপনারটা সঠিক, বোর্ডেরটা ভুল’ হলেও প্রমাণ করতে যাবেন না। বিনীতভাবে বলবেন, ‘আমি এমনটাই জানি, স্যার। তবে আমার জানায় ভুল হতে পারে।’

৭. ভাইভা বোর্ডে একজনের উত্তর দেওয়ার সময় বোর্ডের অন্য কেউ প্রশ্ন করলে ‘আমি কি স্যারের উত্তর শেষ করে আপনার উত্তর দিতে পারি?’ বলে অনুমতি নিয়ে নেবেন।

৮. ভাইভা বোর্ডে রাজনৈতিক বা অন্য মতাদর্শকেন্দ্রিক প্রশ্ন হলে টেকনিক্যালি উত্তর দেবেন, যেন উত্তরটা এমনভাবে ধোঁয়াশা থাকে, যেন এটির মিনিং যেকোনো মতাদর্শকেন্দ্রিক হয়। বোর্ডকে খুশি করতে নিজেকে সরকারদলীয় বোঝাতে গেলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

৯. ভাইভায় আই কন্টাক্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বোর্ড মেম্বার প্রশ্ন করার সময় মনোযোগী শ্রোতার মতো শোনার চেষ্টা করুন। উত্তর দেওয়ার সময়ও আই কন্টাক্ট লক্ষ করবেন। গম্ভীর না থেকে হাসিমুখে থাকুন।

১০. ভাইভা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবেন। যেমন—প্রবেশের সময় ‘মে আই কাম ইন প্লিজ’ বললে বোর্ড ইংরেজি মিডিয়ামে প্রশ্ন করতে উত্সাহিত হয়। তাই বাংলা মিডিয়ামে ভাইভা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে ‘ভেতরে আসতে পারি স্যার’ বলে ভাইভা মিডিয়াম নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন (সাধারণ অর্থে, এর ব্যতিক্রমও হতে পারে)। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তীক্ষ�ভাবে উত্তরের শব্দগুলো নির্বাচন করবেন। কারণ এর উত্তর থেকেই পরের প্রশ্ন হতে পারে। সিটি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি ভাইভায় আমাকে বলেছিল, Say about Sundarbans। আমি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বলায়ই পরের প্রশ্ন ছিল, ‘ডিফাইন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’। আপনি যে টপিকগুলো ভালো পারেন বোর্ডকে টেকনিক্যালি সেদিকে ধাবিত করতে উত্তরে প্রাসঙ্গিক হলে আপনার জানা টপিকের ওয়ার্ডগুলো ঢুকিয়ে দিন। ওই ওয়ার্ডকে ধরেই পরের প্রশ্ন হতে পারে।

১১. চলে আসার সময় অবশ্যই ধন্যবাদ দিয়ে আসবেন। চেয়ার থেকে উঠে দুই-তিন স্টেপ পিছিয়ে টার্ন নেবেন। পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবেন না। বের হওয়ার সময় দরজা ঠাস করে বন্ধ করবেন না, ওই সময়েই কিন্তু আপনার মার্ক লেখা হচ্ছে।

১২. আপনি প্রিলি রিটেন উত্তীর্ণ হয়েই ভাইভা বোর্ডে এসেছেন, তাই নতুন করে আপনার মেধা যাচাইয়ের আবশ্যকতা নেই বোর্ডের কাছে। আপনার ভেতর অফিসারসুলভ আচরণ আছে কি না, আপনাকে ঘষেমেজে অফিসার বানানো যাবে কি না, এটাই ভাইভা বোর্ড লক্ষ করবে। সব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকার কথা নয়, আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর না পারলে, এটা যে পারেন না, এ কথাটা যত সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতে পারেন, এটাই আপনার দক্ষতা।

১৩. ওপরের কোনো কৌশলের কোনো কিছুই হয়তো ভাইভা বোর্ডের মনে থাকবে না। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভাইভা বোর্ডে জাস্ট উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। ভাইভা বোর্ডে একেবারে নার্ভাস হবেন না। নার্ভাস হলেই যে পাস করবেন, নার্ভাস না থেকে খোশ মেজাজে থাকলে আপনার জব হবে না, এমনটা তো নয়। সব প্রশ্নের উত্তর পারলেই ক্যাডার হবেন, না পারলে হবেন না, এটিও নয়।

ড্রেস কোড..

আপনাকে যে ড্রেস পরলে ফরমাল বা মার্জিত লাগে সেটাই পরবেন।

ছেলেদের জন্য..

১. ছেলেরা যেকোনো ফুলহাতা শার্ট পরতে পারেন হালকা রঙের, তবে সাদা হলে ভালো হয়। শার্টের নিচে ঘাম প্রতিরোধ ও গায়ের শেইপ যেন না দেখা যায় সে জন্য হাফ বা ফুলহাতা গেঞ্জি পরে নিতে পারেন।

২. প্যান্ট গাঢ় যেকোনো রং হতে পারে, তবে কালো রং ভালো হবে। বেল্ট কালো নরমাল হতে হবে, লেদার হলে ভালো, বেল্টে বকলেস না হয়ে আগের সময়ের ওল্ড স্টাইলের কাটা থাকলে ভালো।

৩. মোজা অবশ্যই কালো এবং লং হতে হবে, ভুলেও প্রাইভেট জব স্টাইলের শর্ট শকস পরবেন না। ভালো ব্র্যান্ডের হলে দুর্গন্ধ হওয়ার কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। মোজা ব্যবহারের আগে তাতে কিছু ট্যালকম পাউডার দিয়ে নেবেন ঘাম ও দুর্গন্ধ প্রতিরোধের জন্য।

৪. কালো রঙের শু পরবেন, বাটার ফিতা শু, যেটা পিএটিসিতে ট্রেনিংয়ের সময় দেওয়া হয় (অক্সফোর্ড শু), সেটা হলে ভালো হয়। শুর সোল রাবারের হওয়া বাঞ্ছনীয়, তাহলে ঠক ঠক শব্দ হবে না।

৫. টাই পরার বাধ্যবাধকতা নেই। পরলে সাদা শার্টের সঙ্গে মেরুন অথবা নেভি ব্লু টাই পরবেন। সরকারি অফিশিয়াল রুলস অনুযায়ী অক্টোবর থেকে মার্চ শীতকালীন ধরে স্যুট ব্যবহার করতে বলা হয়, অন্য সময় বাদ। তবে যাঁদের স্যুট পরলে একটা গর্জিয়াস লুক আসে, তাঁরা অন্য সময়ও স্যুট পরতে পারেন।

৬. ভাইভায় মার্জিত দেখে হাতঘড়ি পরা উচিত। যেহেতু পিএসসিতে প্রবেশের সময় মোবাইল জমা রাখা হয়, হাতঘড়ি আপনার সময় সম্পর্কে ধারণা দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হাতঘড়ি অফিসারসুলভ লুক এনে দেয় এবং এতে বোর্ড আপনাকে সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে বিব্রত হতে হবে না।

৭. ভাইভা দেওয়ার দুই সপ্তাহ আগে চুল কাটাবেন, যেন ভাইভায় আসতে আসতে চুল মাঝারি শেইপে আসে। ভাইভার আগের রাতে শেইভ করবেন, ভুলেও ভাইভার দিন সকালে করবেন না, দেখতে বাজে লাগবে।

মেয়েদের জন্য..

১. হালকা রঙের সুতি শাড়ি পরবেন, কলার ব্লাউজ এবং হাতা কোয়ার্টার বা লং হতে হবে।

২. হালকা প্রসাধন থাকতে পারে। অলংকার থাকলে একেবারে নরমাল।

৩. স্যান্ডেল অবশ্যই পাতলা স্লিপার হতে হবে। হাঁটার সময় যেন শব্দ না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন অবশ্যই।

Saturday, August 17, 2019

প্রমথ চৌধুরী থেকে একরাম চৌধুরী

প্রমথ চৌধুরী থেকে একরাম চৌধুরী
ইংরেজি পরীক্ষা।
Ray শব্দের অর্থ পারছে না সবুজ । খুব বাজে ওয়ার্ড।সে তার সামনের টুলে বসা মিনহাজকে বলল, রে অর্থ কীরে?
উত্তর বঙ্গের ছেলে মিনহাজ বলল, রশ্মি (রোশশিঁ)। সিলটি পোলা সবুজ মনে করল অ আ ই; সে লিখল, Ray অর্থ ‘ই’ (হ্রস্ব-ই)। বাসায় গিয়ে দেখল ঠিক হয়নি। সবুজ বেটা রশমি-কে ‘রোশশিঁ’ বলে তার একটা নাম্বার কমিয়ে দিয়েছে। যত গন্ডগোল শালার ওই ম-তে। ম- মানে মরণ।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখকের নাম কিছুতেই মনে করতে পারছিল না সবুজ। বলল, এই মিনহাজ, ‘বীরবলের হালখাতা’ কে লিখেছে রে?
মিনহাজ বলল, “প্রমথ চৌধুরী”। প্রমথ চৌধুরী কারো নাম হতে পারে না, সবুজ ভাবল। নিশ্চয় ইংরেজি পরীক্ষার মতো শালা ‘ম’-টাকে উলটে দিয়েছে। সিলটি পোলার বুদ্ধি একটু বেশি কিনা। সবুজ প্রমথ চৌধুরী লিখল না। লিখল, বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক ‘প্রথম চৌধুরী’।
সবুজের পিছনে সুনামগঞ্জের পোলা রাকিব। সেও প্রশ্নটা পারছিল না। উঁকি দিয়ে দেখে নিল সবুজের খাতা। সবুজ লিখেছে, বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক “প্রথম চৌধুরী”।কিন্তু একই রকম লেখা যাবে না। সনৎ স্যার বলেছেন, “মেট্রিক পরীক্ষায় দুজনের উত্তর মিলে গেলে গোল্লা দেবে একজামিনার।” প্রথম চৌধুরী লিখলে একজামিনার মনে করবেন - নকল করে লিখেছে। অত বোকা নয়, রাকিব। সে লিখল বীরবলের হালখাতা গ্রন্থের লেখক “১ম চৌধুরী”।
রাকিবের পেছনে ছিল, চাটগাঁইয়া পোঁয়া সাঈদ। সে রাকিবের খাতা দেখে নিল; রাকিব লিখেছে ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক ১ম চৌধুরী। কিন্তু সে একই রকম লিখে নকলের ফাঁদে পড়তে চায় না। নকল করলে গোল্লা। চাটগাঁইয়া পোঁয়া, মেডিত পইল্যে লোয়া। সাঈদ লিখল, ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক এক ম চৌধুরী। সাঈদের পিছনে কক্সবাজারের মাইয়ো পোঁয়া রাজিয়া উঁকি দিয়ে দেখল, কিন্তু ভালোভাবে বুঝতে পারল না। ছেলেদের সঙ্গে তখন কথা বলা ছিল নিষিদ্ধ।রাজিয়া লিখল ‘বীরবলের হালখাতা’র লেখক একরাম চৌধুরী।
এই খাতাগুলো ঘটনাচক্রে মেট্রিক পরীক্ষার তৎকালীন প্রধান এক্সামিনার প্রমথ চৌধুরীর হাতে গিয়ে পড়ল। তিনি সিলটি ও চাটগাঁইয়া পোলাপানদের হাতে নিজের নামের এমন দুরবস্থা দেখে রাগে-ক্ষোভে মাথার সামনের সবগুলো চুল তুলে ফেলতে শুরু করেন।কিয়দংশ টাকু হবার পর বউ এসে বললেন, এমন পাগলামি করছ কেন? এমন করলে তোমাকে তো তোমার দেশের বাড়ি পাবনা পাঠিয়ে দিতে হবে।
না, আমি পাবনা যাব না, চিৎকার দিয়ে বললেন প্রমথ চৌধুরী, “আমি রবীন্দ্রনাথের বড়ো ভাই উপমহাদেশের প্রথম আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীর স্বামী, আশুতোষ চৌধুরী আমার বড়ো ভাই, আমি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক, আমি ব্যারিস্টার, আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম-- আমাকে কিনা; ছি ছি ছি!” আমার সঙ্গে বিদ্রুপ?
বউ বললেন, তুমি বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধের রচয়িতা। হয়তো এজন্য বিদ্রূপ করে তোমার স্বীকৃতি দিয়েছে।
অমন স্বীকৃতি আমি চাই না, আবার চুল ছিড়তে শুরু করেন প্রমথ চৌধুরী।
বউ বললেন, তুমি বাংলায় চলিত রীতির প্রবর্তক, তাই ওরা তোমার নামকেও চলিত ভাষায় অনুবাদ করেছে। তোমার তো খুশী হওয়ার কথা।এটা তোমার উপহার গো।
এমন উপহার আমি চাই না, চাই না; এ উপহার আমার নাহি সাজে- - -।
কী হয়েছে গো, বলো না?
প্রমথ চৌধুরী ব্যথাকাতর গলায় বললেন, “বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে আর নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে।”

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

Wednesday, May 29, 2019

বিদ্যুৎ শক খেলে কি করবেন?

আজ গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ এক বাড়ীতে চিল্লাচিল্লি, কান্নাকাটির আওয়াজ পেলাম। সবাই দৌড়াচ্ছে সেখানে। কি মনে করে আমিও গেলাম। ১৫/১৬ বছরের একটি মেয়ে বিদ্যুৎ শক খেয়েছে। তার পালস, শ্বাস প্রশ্বাস, নড়াচড়া সবই বন্ধ। মারা গেছে ভেবে কান্নাকাটি শুরু করেছে সবাই।

আমি দ্রুত পালস (এমনকি ক্যারোটিড), শ্বাস প্রশ্বাস, বুকে কান লাগিয়ে (যেহেতু স্টেথো ছিল না) হার্ট সাউন্ডও পেলাম না। সাথে সাথেই কার্ডিয়াক মেসেজ দিলাম, মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং একজনকে শিখিয়ে দিয়ে সেটা দিতে বললাম। ৫/৭ মিনিটের মধ্যে তার পালস, হার্ট সাউন্ড, শ্বাস ফিরে এল। জিহ্বা দেখাল, চোখও খুলল। বেঁচে গেল সে।

কি করবেন আপনি?

১। যদি বিদ্যুতের তারে লেগে থাকে তবে ভারী সেন্ডেল পায়ে শুকনা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সেটা সরিয়ে দিন। বিদ্যুতায়িত অবস্থায় সরাসরি তাকে ধরতে যাবেন না। নইলে আপনিও বিপদে পড়ে যাবেন।

২। দ্রুত তাকে বালিশ ছাড়া, কাপড় চোপড় খুলে (যথা সম্ভব) মাটিতে শুইয়ে দিন। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যাবে।

৩। মূখ, নাকে কোন ময়লা, থু থু আছে কিনা বা জিহ্বা উলটে গিয়েছে কিনা দেখে নিন। থাকলে হাতের কাছে যাই পান (কাপড়) দিয়ে পরিস্কার করে দিন, জিহ্বা উলটে থাকলে মূখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা সোজা করে দিন। এরপর দুই চোয়ালের মাঝে দুই দিকে চাপ দিয়ে মূখ খোলা অবস্থায় মূখ দিয়ে ফু দিতে থাকুন (আর্টিফিসিয়াল ব্রিদিং, মাউথ টু মাউথ)।

৪। একই সাথে বুকের ঠিক মাঝখানে একটু বায়ে (যেখানে হার্ট থাকে) হাতের তালুর গোড়ালি দিয়ে একটু ধাক্কা (ব্লো) দিন। এরপর ডান হাতের উপর বা হাত রেখে ১-২-৩.... ১-২-৩ এভাবে চাপ দিতে থাকুন। এটা মিনিটে ৭২ বারের মত করতে হয়। অর্থাৎ ঘড়ির কাটার টিক টিক এর চেয়ে একটু বেশি।

৫। ৩ ও ৪ পদ্ধতি ৫/৭ মিনিটের মত করে পালস, হার্ট সাউন্ড (যদি সম্ভব হয়), শ্বাস প্রশ্বাস দেখুন। যদি ফিরে আসে তবে বন্ধ করুন। আর ফিরে না এলে আবার ৩, ৪ রিপিট করুন।

৬। হাত, পা, শরীর হালকা মেসেজ করে দিতে পারেন।

৭। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে Hartsol saline 1000 ml ২৫/৩০ ফোটা প্রতি মিনিটে দিতে পারেন। খেতে পারলে পানি, খাবার স্যালাইন, দুধ, ডাবের পানি এসব খেতে দিন।

নিরাপদ থাকুন, সুস্থ্য থাকুন!!!

কার্টেসিঃ শ্রদ্ধেয় ডাঃ Hriday Ranjan Roy স্যার

Wednesday, February 6, 2019

ডিজিটাল মিটারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য


জেনে নিন ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের কিছু তথ্যঃ
==============================
প্রথম বার ১০০০ টাকা রিচার্জে আপনি পাবেন ৭৯২ টাকা।কারণঃ
১। আপনাকে প্রথমেই ১০০ টাকা মিটারের সাথে দেওয়া হয়ে ছিল। তাই ১০০ টাকা কাটবে।
২। ডিমান্ড চার্জ আগে প্রতি কিলো ছিল ২৫ টাকা এখন ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা।(প্রতি মাসে এক বার)
৩। মিটার ভাড়া ৪০ টাকা। (প্রতি মাসে এক বার)
৪। সরকারি ভ্যাট আগেও ছিল ৫% এখনো ৫%।
৫। সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা। (প্রতি মাসে একবার)
বিঃ দ্রঃ- এই সব কারণে ডিজিটাল মিটার প্রথম রিচার্জে টাকা ১০০০ টাকার স্থানে ৭৯২ টাকা দেখাইতেছে। কিন্তু আপনি ঐ মাসেই যদি আবার ১০০০ টাকা রিচার্জ করেন তাহলে শুধু সরকারি ভ্যাট ৫% টাকা কাটার পর বাকী টাকা মিটারে রিচার্জ হবে। তাই ডিজিটাল মিটার গ্রাহকগণ আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নাই।
আরও কিছু বিশেষ তথ্যঃ-
১। আপনি কত ইউনিট ব্যবহার করেছেন তা চেক করতে ৮০০ চাপুন।
২। আপনার ব্যালেন্স জানতে ৮০১ চাপুন।
* ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিতে - ৮১১
৩। ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স জানতে ৮১০ চাপুন।
৪। মিটার টি চালু বা অফ করতে ৮৬৮ চাপুন।
৫। আপনার মিটার টি কত কিলো ওয়ার্ডের তা জানতে ৮৬৯ চাপুন।
আশা করি ডিজিটাল মিটার আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

Sunday, November 25, 2018

প্রবাসী ভাইয়ের দূর থেকে বোনের প্রতি বিয়েতে আশীর্বাদ ও উপদেশ


মাথায় হাত রেখে আশির্বাদ করিনি! তাতে কি ! কিছু কিছু আশির্বাদ দূর থেকেও করা যায়। আমি শুনেছি, ভাইয়ের আশির্বাদ কখনো বৃথা যায় না। জানি না , আমি সৎ কিনা এবং জানি না আমার আশির্বাদ তোমার মাথায় পৌঁছুবে কিনা ! তারপর ও দূর থেকে আশির্বাদ করি - BE HAPPY IN YOUR LIFE.
জীবনে এই প্রথম শ্বশুরালয়ে যাইতেছ বলে আমি তোমাকে কতিপয় উপদেশ দিলাম। ইচ্ছা করলে মেনে চলিও । স্বামীকে দেবতার আসনে স্হান দিবে।শ্বশুরকে নিজের পিতা এবং শাশুড়ীকে নিজের মাতা মনে করবে। দেবর কে ছোট ভাই মনে করে আদর করিও। যত সুশ্রী ও সুপুরুষ হোক স্বামী ছাড়া অন্য কারো প্রতি কুনজর দিও না। কথায় কথায় বাপের বাড়ীর কোন ব্যক্তি ও বিষয় নিয়ে অহংকার করো না। সবার শেষে ঘুমাতে যাবে এবং সবার আগে ঘুম থেকে জাগবে। মনে রাখবে, শ্বশুরবাড়ীই তোমার শেষ আশ্রয়স্থল। ফিরে আসার কথা কখনো মাথায় এনো না। সবার মন জয় করে চলতে চেষ্টা করবে, কারণ তুমি ভাল আচরণ করলে অন্যরাও তোমার প্রতি ভাল আচরণ করবে। খাবার এর পছন্দ -অপছন্দ নিয়ে কোন কথা বলবে না এবং সবসময় শালীন পোশাক পড়বে ও শালীন কথা বলবে।স্বামী - সন্তান নিয়ে কখনো একা থাকার চেষ্টা করোনা। কারণ যৌথ পরিবারেই প্রকৃত সুখ। সময় ও মন বুঝে স্বামীকে মনের কথা বলবে, কারণ অসময়ে অনেক ভাল কথার ও আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় না। কারো কথায় বা আচরণে মনে কষ্ট পেলে সাথে সাথে জবাব দিয়ে দিও না, ভেবে চিন্তে সময়বুঝে বিষয়টি স্বামীকে বলিও। যা করার বা বলার তিনিই বলবেন। ধর্ম-কর্ম থেকে মোটেও বিচ্যুত হয়ো না, কারণ ধর্ম- কর্ম তোমাকে পাপ থেকে মুক্তি দিবে।বাপের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য স্বামী ও শ্বাশুড়ীর অনুমতি নিবে। কখনো স্বামীকে ঠকাতে চেষ্টা করো না। কারণ, যে ঠকে সেই বোকা নয়, বিশ্বাসী ছিল। সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা তুমি করেছ। এমন কোন কাজ করো না, যাতে তোমার বাপের বাড়ীর সুনাম ক্ষুন্ন হয় এবং বাপের বাড়ীর অর্জিত জ্ঞান শ্বশুরবাড়ীতে প্রয়োগ করবে। তোমার বাবা - মার যেসব দূর্বলতা আছে সেগুলো গোপন রেখো, জানাজানি হয়ে গেলে তোমার ক্ষতি হবে। কথা বলার সময় খুব সাবধানে ও হুশিয়ারে বলবে। মনে রেখো, বন্দুকের গুলি ও মুখের বুলি একবার বের হলে তা আর ফিরে আসে না। নিজেকে সর্ব জান্তা মনে করিও না। সবাই কে বলবে আমি জানি না, আমাকে শেখান। স্বামীর স্বজন দের নিজের আপন জন মনে করো। মনে রাখবে, তোমার সুখ-দু্ঃখ প্রায় সম্পূর্ণ তোমার আচরণ এর উপর নির্ভর করবে তবে কিছুটা নিয়তি।তুচ্ছ বিষয় গুলোকে এড়িয়ে চলবে এবং যতটুকু সম্ভব সহ্য করবে। কারণ, সহ্যের গুণ আছে। মনে রাখবে মানুষের সব আশা পুরণ হয় না, সব আশা পূরণ হলে মানুষ কখনো ভগবান কে ডাকতো না। তোমার স্বামী তোমাকে অন্ধভাবে ভালবেসে জমি কিনে দিতে পারে, দোকান কিনে দিতে পারে, ব্যাংক ব্যালেন্স দিতে পারে। তুমি তোমার বাবার প্ররোচনায় এগুলো বিক্রি করে দিও না। এই রকম করলে বাকি জীবন স্বামীর সাথে না কাটিয়ে বাবার সাথে কাটাতে হবে।তুমি আত্মসাৎ করে আনলেও তোমার বাবা সেগুলো তোমাকে ভোগ করতে দিবে না। সেগুলো দিয়ে তোমার বোন আর একটা বিয়ে দিবে আর তোমকে ভিলেন বানিয়ে ব্রাক এ চাকরি করতে বলবে নতুবা বাধন বিউটি পার্লারে গিয়ে মানুষের চুল কাটতে দিবে । সবশেষে বলব - সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে।
[Collected]

Tuesday, March 13, 2018

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু

★কলম্বাস ভারতবর্ষ আবিষ্কার করতে গিয়ে ভুল করে আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন ১৪৯২ সালে।
★আর ভারতবর্ষে আসার পথ আবিষ্কার করেন ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে।
★পরবর্তীতে সুরাটে বাণিজ্য কুটি স্থাপনের প্রথম অনুমুতি দেয়- সম্রাট জাহাঙ্গীর।
★এরপর যুবরাজ শাহ সুজার ১৬৩২ সালে অনুমুতি পেয়ে ইংরেজরা সর্বপ্রথম হুগলিতে কারখানা স্থাপন করেন।
★একসময় সম্রাট ফররুখ শিয়র অসুস্থ হয়ে পড়েন,শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তুলেন ডাক্তার হ্যামিলটন।
★আলিবর্দি খাঁন।আসল নাম মির্জা মুহাম্মদ আলি।১৭৪০-১৭৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলা,বিহার, উড়িষ্যার নবাব ছিলেন।১০ই এপ্রিল ১৭৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।তাঁর কোন পুত্র ছিল না।তিন মেয়ে ছিল।
★ ১. ঘসেটি বেগম তথা মেহেরুন্নেসা।স্বামী নওয়াজিস মুহাম্মদ।তার স্বামী ভগ্ন স্বাস্থ্য ও দুর্বল চিত্তের অধিকারী ব্যক্তি।সেনাপতি হোসেন কুলি খাঁ -র সঙ্গে ঘসেটির অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।তাই আলিবর্দির নির্দেশে সিরাজ তাকে হত্যা করে।তাই ঘসেটি বেগম তার প্রতি প্রতিশোধ পরায়ণ ছিল।
তাছাড়া তার কোন ছেলে সন্তান ছিল না।সিরাজের ভাই একরামুদ্দৌলাকে পোষ্য পুত্র হিসেবে নিলেও বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।ফলে রাজমাতা হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
২. শাহ বেগম।
৩. আমিনা বেগম।স্বামী জয়েন উদ্দিন।তিন সন্তান ছিল।সিরাজউদ্দৌলা,একরামউদ্দৌলা ও মির্জা হামদি।
★মিরজাফর:
আসল নাম মীর জাফর আলি খাঁন।পলাশীর যুদ্ধে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্লাইভের গাধা বলে পরিচিত এই মিরজাফর ১৭৫৭ সালের ২৯ শে জুন ক্ষমতার মসনদে বসেন।ইংরেজরা তাকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী ভেবে পরে তার জামাতা মির কাসিমকে ক্ষমতায় বসান।১৭৬৫ সালে কোষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
★ইতিহাসে জানা যায়: নবাবের সৈন্য=৫০০০০,আর কামান ছিল =৫৩টি। আর ইংরেজদের ছিল- ৩০০০ সৈন্য,কামান -৮টি।
★অঙ্ক-০৪টি,দৃশ্য-১২টি,সিরাজের উপস্থিতি-৮টিতে।চরিত্র আছে - ৪০টি।
★শব্দার্থ জেনে নিই:
মারাঠা- মহারাষ্ট্রের একটি রাজ্য
মুৎসুদ্দি- প্রধান কেরানি,ভারপ্রাপ্ত কর্মচারি,বংশীয় পদবি।

সংগৃহীত তথ্য:
বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ইংলিশ লর্ড তার ডায়েরীতে লিখেছিলো, যেদিন আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সেদিন যতজন বাঙালি দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছিলো তারা যদি একটি করে ছোট পাথর নিয়ে আমাদের তাড়া করতো আমরা হেরে যেতাম...

পলাশীর যুদ্ধের খলনায়কদের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?
১) মীর জাফর : কুষ্ঠ রোগে সারা শরীর পঁচে মারা গেছে।
২) ঘসেডি বেগম : ইংরেজরা তাকে বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে মেরেছে।
৩) মোহাম্মেদী বেগ : জনগনের অপমান সহ্য করতে না পেরে কুপে আত্মহত্যা করেছে।
৪) রবাট ক্লাইভ : ইংরেজরা তার বিরুদ্ধে অভিসংসন করলে , তিনি টেমস নদীতে আত্মহত্যা করেন।
৫) মীরন : বিনা মেঘে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন।
৬) মহারাজা নন্দকুমার : ইংরেজরা তাকে ফাঁসি দিয়েছিল।
৭) জগৎশেঠ, রায়দুল্লভ, ইয়ার লতিফ : মীর কাসিম তাদের তিন জনকে অালাদা তিনটি বস্তায় বেঁধে জীবন্ত গঙ্গায় ফেলে দিয়েছিল।
৮) মীর কাসিম : শেষ জীবনে দিল্লির রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে করতে মরেছিলেন।
9 ) ওয়াটসন : জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভগ্ন স্বাস্থ্য রোগে ভুগেন কিন্তু কোন ঔষধেই কাজ না হয়ে শেষমেশ কঙ্কাল সার হয়ে মারা যান ।
10 ) শওকত (ঘসেটির ছেলে) পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি তাকে বরখাস্ত করে । সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে ইংল্যান্ড এর রাস্তায় হৃদযেন্ত্রর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ।
11) স্কাফটন : উনি বাংলার ধন সম্পদ জাহাজ ভরে লুটে নিয়ে যাওয়ার সময় গভীর সমুদ্রে জাহাজ ডুবে মারা যান ।
ইতিহাস কখনও কাউকে ক্ষমা করনি এবং করবেনও না । তাই কখনও কারো মনে কষ্ট দিবেন না । মানুষ ক্ষমা না করলে ভগবান কখনও ক্ষমা করবে না ।

Tuesday, February 13, 2018

ছাত্রজীবনে দোষ কী কী?

ছাত্র-ছাত্রীর সাতটি দোষ।যথা:
১. অলসতা।
২. মাদকতা।
৩. মোহ/কাম।
৪. চঞ্চলতা।
৫. দাম্ভিকতা।
৬. যে কোন বিষয়ে ভোগময় জীবন গ্রহণ।
৭. বৃথা কথা বলা/বাচালতা/নোংরা কথা বলা ও শুনা।
★মানুষের দু:খের কারণ ৫টি
১. অবিদ্যা
২. রাগ
৩. দ্বেষ
৪. অস্মিতা
৫. অভিনিবেশ।
★মানব জীবনের পাঁচ জন গুরু আছে।যথা:
১.প্রথম গুরু: মাতা-পিতা।
২.দ্বিতীয় গুরু:শিক্ষাদাতা।
৩.তৃতীয় গুরু:অতিথি।
৪.চতুর্থ গুরু:বয়স্ক গুরুজনেরা।
৫.পঞ্চম গুরু:স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে গুরু।
★মানব দেহের ছয়টি রিপু:
১. কাম ২. ক্রোধ ৩. লোভ ৪. মোহ ৫. মাৎসর্য(পরশ্রীকাতরতা) ৬. মদ।
★পঞ্চভূতের বিবরণ:
১. মাটি ২. জল ৩. বাতাস ৪. আকাশ ৫. আলোক ও তাপ।

বি:দ্র:আরও কিছু ভাল ও খারাপ গুণাবলীর editing এর কাজ চলছে।

Tuesday, October 17, 2017

রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণ ও ইতিহাস...

রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণ ও ইতিহাস ....................­........
পৃথিবী নামক গ্রহটিতে দুই পরাশক্তির ক্ষমতার, মতাদর্শের লড়াই চলছে সেই 1945 থেকে। সমরের মাঠে সামনাসামনি লড়াই না। লড়াই কাগজে কলমে, ব্লকে ব্লকে, ঠান্ডা মাথায়। লোকে তাই এর নাম দিয়েছে ''ঠান্ডা লড়াই"/ "স্নায়ু যুদ্ধ" (Cold War)।
একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে "ক্যাপিটালিস্ট ব্লক", অন্য দিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে "কমিউনিস্ট ব্লক"। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র দেবে না ছাড়। অবস্থাটা এমন যে,রাষ্ট্রগুলোকে এ পক্ষে, কিংবা ও পক্ষে যেকোনো একদিকে থাকতে হবে। নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না।
1960 এর দশকের দিকে এসে কিছু রাষ্ট্র মনে করলো আমরা কারো সাথে থাকবো না। না সোভিয়েত, না আমেরিকা, কারো সাথে ঐক্যের দরকার নাই. সৃষ্টি হলো NAM (Non Alliance Movement)।
অন্যদিকে পৃথিবীর এ প্রান্তে, ও প্রান্তে Decolonization এর প্রভাবে কলোনি থেকে বের হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে এক একটা নতুন রাষ্ট্র।
কিন্তু ঠিক এ সময়ে গণতান্ত্রিক মায়ানমারে একটা উল্টা পরিবর্তনের হাওয়া বাতাস লাগে। রাষ্ট্র ক্ষমতা হঠাত চলে যায় সেনা শাসনের অধীনে। মাথা মোটা শাসক দলের নানা সময় নানা খায়েশ জাগে। সময়টা তখন 1970 এর দশকের মাঝামাঝি। কথিত আছে বার্মিজরা গনক ও গননায় খুবই বিশ্বাস করে।সামরিক জান্তা গনকদের ডাকলো। বার্মা এবং তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলো। গনকরা বললো, বার্মার পতন বা ক্ষতি সাধন হবে বাংলাদেশ এর দিক থেকে। মায়ানমারের তৎকালীন সামরিক সরকার গণকের কথা খুবই গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করলো। তখন শাসকের খায়েশ হলো মায়ানমারের বিভিন্ন জাতিকূলের নাম্বারিং করবেন। 1,2,3 এমন ট্যাগ দেওয়া আর কি!!! যারা মায়ানমারের প্রকৃত অধিবাসী তারা এক এক করে ট্যাগ পেয়ে যাচ্ছে। 135 এ গিয়ে থামলো সংখ্যাটা। কপালে ট্যাগ জুটলোনা একটা জাতির-তারা ধর্মে মুসলমান, থাকে আরকান রাজ্যে, নাম তাদের রোহিঙ্গা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা মায়ানমারের প্রকৃত অধিবাসী না। তারা নাকি অবাধ চলাচলের যুগে প্রতিবেশী দেশ থেকে ঢুকে পড়েছে তাদের"স্বর্গরাজ্যে"!!!! এসব পাগলামি দেখে বিশ্ববাসী হাসে, আর রোহিঙ্গারা আঁখিজলে ভাসে।
সময়ের কাটায় 1978 সাল। শাসকের ইচ্ছা হলো যারা নম্বর পায়নি (শাসকের চোখে প্রকৃত অধিবাসী নয়) তাদের দেশ থেকে বের করে দিয়ে দেশটাকে ধবধবে ফর্সা করবে!!! শুরু হলো "অপারেশন ড্রাগন কিং" (Operation Dragon King)।
অপারেশনের নামে নিজ ভূমি থেকে দলবেঁধে বিতাড়িত করা হলো 2 লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে। বিতাড়িত হয়ে কেউ নৌকা নিয়ে সাগরে ভাসছে, কেউ ভাসছে বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদীতে, কেউ আবার স্থল সীমান্তে। জাতিসংঘের টনক নড়ে। মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সীমান্ত খুলে দেয়। 2 লক্ষ রোহিঙ্গার বেশিরভাগ ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে।জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (UNHCR) বললো ভাই ওদের আশ্রয় দেও। আমরা ওদের খাওয়া-দাওয়া, যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিবো। আর মায়ানমার সরকার যাতে ওদের ফেরত নেয় সে ব্যবস্থা আমরা করবো। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প খোলা হলো। দেখা গেলো সেখানে আশ্রয় নিয়েছে হাজার পঁচিশেক লোকজন। তাহলে বাংলাদেশে ঢোকা বাকি লোক গেলো কই??? তাইতো কই গেলো সবাই??? খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো স্থানীয় প্রভাবশালী, বিভিন্ন চক্রের হাত ধরে এরা মিশে গেছে ঐ অঞ্চলসহ আশেপাশের অঞ্চলের স্থানীয় জনস্রোতে। বিয়ে করেছে, সংসার পেতেছে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছে নানা অপকর্মে। সুবিধা তাদের একটা-চেহারার ও ভাষার মিল আছে স্থানীয় লোকজনের সাথে। ফলে স্থানীয় না হয়েও বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাদের!!!
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মায়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও জাতিসংঘ লেভেল থেকে আলোচনা চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সেখানকার সামরিক শাসকের এক কথা ফেরত নিবে না একজনকেও!!! বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। 1989 সালে সমগ্র মায়ানমার জুড়ে আদমশুমারি হলো। এবার প্রকৃত নাগরিকের ট্যাগ পেলো রোহিঙ্গারা।
এভাবে দৃশ্যপটে কড়া নাড়লো 1992। আবার অস্থির সময়। আবার অত্যাচার চললো রোহিঙ্গাদের উপর, বিতাড়িত হলো নিজ ভূমি থেকে। এবার অভিযোগ তারা নাকি মায়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়!! তারা নাকি হাত মিলিয়েছে "কারেন" বিদ্রোহীদের সাথে। আবার সীমান্ত খুলে দিল প্রতিবেশী বাংলাদেশ। এবারও আশ্রয় পেলো দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। দুয়ে দুয়ে চার লাখ শরণার্থী আশ্রয় পেলো বাংলাদেশে। ফেরত নেবার কথা থাকলেও ফেরত নেওয়া আর হচ্ছে না। তিন চার বছর আগে কিংবা ২০১৬ সালে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে আবার শুরু হলো রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা। কিন্তু এবার আর সীমান্ত খুলতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ। মানবতা হয়তো বিবেককে নাড়া দেয় কিন্তু বাংলাদেশের ভাষ্য নিজের ক্ষতি করে আর কত আশ্রয় দেওয়া যায়?? জাতিসংঘতো আগে আশ্রয় দেওয়া মানুষ জনকে ফেরত পাঠানো কিংবা Third Party Settlement এর ব্যবস্থা করতে পারেনি।
এ যখন অবস্থা তখন "মানবতা নাকি বাস্তবতা" কোনটা প্রাধান্য পায় সেটা দেখার বিষয় ছিল। গত বছর বাস্তবতা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ বছর এসে আবার রোহিঙ্গা নিধন। এবার মানবতার কাছে হার মেনেছে বাংলাদেশ। আশ্রয় দিয়েছে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদেরকে।
[Collected from Facebook]

Monday, May 8, 2017

রাম ও রাবণের পরিচিতি এবং রাবণ কেন সীতার সতীত্ব হরণ করেনি?

রাম ও রাবণের বংশ পরিচিতি:
অযোধ্যার রাজা হলো দশরথ।আর সেই দশরথ হলো রামের পিতা।দশরথের তিনজন স্ত্রী ছিল।কিন্তু কোন সন্তান ছিল না।পরবর্তীতে যজ্ঞ করে তিনি সন্তান লাভ করেছিলেন।তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা হলোঃ 
১. কৌশল্য।এর ছেলে রাম।রামের স্ত্রী সীতা।
২. কৈকেয়ী। এর ছেলে ভরত।
৩. সুমিত্রা। এর ছেলে লক্ষ্মণ।লক্ষ্মণের স্ত্রীর নাম ঊর্মিলা।আরেক ছেলের নাম শত্রুঘ্ন।

অপরদিকে
ব্রহ্মার পুত্র পুলস্ত্য।
পুলস্ত্য এর পুত্র বিশ্রবা।
বিশ্রবা এর স্ত্রীর নাম কৈকসী।
বিশ্রবা ও কৈকসীর ঔরসজাত তিন পুত্র ও এক মেয়ে।
১. রাবণ।রাবণের দুই স্ত্রী।
★রাবণের স্ত্রী হলো মন্দোদরী। মন্দোদরী এর পুত্র মেঘনাদ
★চিত্রাঙ্গদা।চিত্রাঙ্গদা এর ছেলে বীরবাহু।
২. কুম্ভকর্ণ
৩. বিভীষণ।এর স্ত্রী সরমা।
৪. একটা মেয়ে। তার নাম শূর্পনখা



রাবণের পরিচয়:
রামায়ণে বর্ণিত আছে যে,রাবণের দশ মুণ্ড  কুড়ি হস্ত ও তাম্রবর্ণ বিংশতি লোচন ও চন্দ্রের মতো উজ্জ্বল দন্ত।রাজকীয় স্বভাব বর্তমান থাকলেও দেহের নানা স্থলে দেবতাদের সঙ্গে নানা প্রকার যুদ্ধের দরুন ক্ষতের চিহ্ন ছিল।তিনি পর্বতের চূড়াকে খণ্ডিত করতে বা সমুদ্রকে আলোড়ন করতে পারতেন।পর্বতের মতো লম্বা হওয়াতে তিনি হস্ত দ্বারা সূর্য বা চন্দ্রের গতিরোধ করতে পারতেন।তিনি এত গর্বিত ও অহঙ্কারী ছিলেন যে নিজের প্রতিরক্ষার জন্য কখনও মানুষের বা কোন জন্তুর সাহায্য চান নি।তাই বিষ্ণু রামচন্দ্র রুপে জন্মগ্রহণ করে রাবণকে নিহত করেন।
রাবণ কেন সীতার সতীত্ব হরণ করেনি;
নলকুবরের নিকট অভিসারে গমনকালে রম্ভাকে
সবলে ধর্ষণ করার জন্য নলকুবর রাবণকে অভিশাপ দেন,কোন স্ত্রীলোকের প্রতি বলপ্রয়োগ করলেই তৎক্ষণাৎ রাবণের মৃত্যু হবে।বলা হয়ে থাকে, এ অভিশাপের কারণেই রাবণ সীতাকে কাছে পেয়ে তার সতীত্বকে উপভোগে লিপ্ত হয়নি।
অপ্সরা পরিচিতি:
 অপ্(জল) থেকে তারা উৎপন্ন হয়েছিল বলে তাদের নাম অপ্সরা।যখন কোন মুনি বা ঋষি কঠোর তপস্যাবলে দেবতাদের চেয়েও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন,এই ভয়ে দেবতারা কখন কখন মুনি - ঋষিদের প্রলুব্ধ করে তপস্যা ভঙ্গ করবার জন্য অপ্সরাদের পাঠিয়ে দিতেন।....অপ্সরাদের সৌন্দর্য ও যৌন আবেদনের কথাই সব সময়ে বিশেষভাবে বলা হয়েছে।অপ্সরারা নিজেদের দেহের পরিবর্তন করতে পারত।....অপ্সরাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ উর্বশী,মেনকা,রম্ভা,তিলোত্তমা,ঘৃতাচী প্রভৃতি।

Friday, May 5, 2017

মেঘনাদবধ কাব্য

মেঘনাদবধ কাব্য দুখন্ড ও নয় সর্গে রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-৭৩) মহাকাব্য। প্রথম খন্ড ১৮৬১ সালের জানুয়ারি মাসে এবং দ্বিতীয় খন্ড একই বছরের আগস্ট মাসে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণগুলিতে মধুসূদন দত্তের নিজের নকশা করা একটি প্রতীকী চিত্র ছিল। এ চিত্রে ভারতের প্রতীক হিসেবে ছিল হাতির ছবি, ইউরোপের প্রতীক হিসেবে সিংহের ছবি, মধুসূদনের নিজের প্রতিভার প্রতীক সূর্য এবং মহাকাব্যের প্রতীক হিসেবে শতদল; অর্থাৎ ভারত, ইউরোপ এবং নিজের প্রতিভার সমন্বয়ে এ মহাকাব্য। এ চিত্রের নিচে ছিল একটি সংস্কৃত শ্লোক—শরীরম্ বা পাতযেযম্ কার্য্যম্ বা সাধযেযম্ (আমি যা করার জন্যে সংকল্প করেছি, তাতে ব্যর্থ হওয়ার বদলে আমি বরং মৃত্যুকে বরণ করব)। এ প্রতীকী চিত্র থেকে বোঝা যায়, মধুসূদনের লক্ষ্য ছিল এমন একটি কাব্য রচনা করা যাতে ভারতবর্ষ এবং ইউরোপের মহাকাব্যের ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটবে এবং যা স্থায়ী ধ্রুপদী সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করবে। এ কাব্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাস, বাল্মীকি, হোমার, ভার্জিল, দান্তে, মিল্টন এবং তাসোকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর এ কাব্য পুরোপুরি তাঁদের মান অর্জন করেছে। কেবল উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের গোটা আধুনিক সাহিত্যেই তাঁর এ কাব্যের সমকক্ষতা কেউ লাভ করতে পারেননি।

মহাকাব্য রচনার জন্যে মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দ নামে এক নতুন বাংলা ছন্দ নির্মাণ করেন। এ ছন্দে তিনি মধ্যযুগের চৌদ্দ মাত্রার পয়ার ছন্দ বজায় রেখেছেন, কিন্তু যতির সুনির্দিষ্ট স্থান বদল করে পঙ্ক্তির যেকোনো জায়গায় রাখার স্বাধীনতা নিয়েছেন, আর সেসঙ্গে নিয়েছেন এক পঙ্ক্তি থেকে আরেক পঙ্ক্তিতে অবলীলায় যাওয়ার প্রবহমানতা।

তিনি তাঁর মহাকাব্যের পরিকল্পনা করেছেন সুচিন্তিতভাবে। এর ঘটনাপ্রবাহে সময় এবং স্থানের সমন্বয় ঘটিয়েছেন এবং আগের ঘটনা নিয়ে এসেছেন অতীতকে প্রতিফলিত করার (ফ্লাশব্যাকের) মাধ্যমে। তিনি তাঁর বিষয়বস্ত্ত নিয়েছেন বাল্মীকির রামায়ণ থেকে, কিন্তু দৃষ্টির কেন্দ্রে রেখেছেন রামচন্দ্র এবং তাঁর সহযোগীদের হাতে রাবণের পরাজয়, বিশেষ করে চতুর্থ সর্গে বিভীষণের সহায়তা নিয়ে লক্ষমণের হাতে রাবণের পুত্র মেঘনাদের বধের দিকে। বাল্মীকির রামায়ণে দেখানো হয়েছে লক্ষ্মণ ও তাঁর বানরবাহিনীর আক্রমণে প্রহরীদের বিপর্যস্ত হতে দেখে যজ্ঞ ত্যাগ করে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছিলেন মেঘনাদ, সেখানেই লক্ষ্মণের হাতে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু মধুসূদন এ ঘটনাকে এভাবে না দেখিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদ যখন অপরাজেয় হওয়ার জন্যে অগ্নির পূজো করছিলেন, তখন লক্ষ্মণের হাতে অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার দৃশ্য অঙ্কন করেন। এর মাধ্যমে রাক্ষসদের ট্র্যাজিক বীরে পরিণত করার যে-সংকল্প মধুসূদন নিয়েছেন, তা সার্থক হয়। এর সঙ্গে তুলনীয় হোমারের ইলিয়াড কাব্য যেমন করে গ্রিকদের হাতে ট্রয়ের পতন দেখানো হয়েছে।

তাঁর এ মহাকাব্যে গ্রিক প্রভাব আরো লক্ষ করা যায় উপমা ব্যবহারে এবং দেবতাদের বিভিন্ন ভূমিকা থেকে। এ মহাকাব্যে যে শৈব-প্রভাব দেখা যায়, তা এসেছে সম্ভবত কৃত্তিবাসের রামায়ণ থেকে, যাতে রাবণকে শিবের উপাসক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া দেবতাদের মানুষের মতো করে উপস্থাপনের ব্যাপারটিও (যেমন, দ্বিতীয় সর্গে দুর্গা তাঁর স্বামীকে তাঁর নিজের মতে আনার জন্যে তাঁর সৌন্দর্যকে কাজে লাগান) বিশেষভাবে গ্রিক প্রভাবজাত।

খ্রিস্টধর্মের একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি হিসেবে মধূসূদনের পাপবোধ বেশ প্রবল ছিল এবং তিনি মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট-এ কেবল তাঁর বাংলা অমিত্রাক্ষরের আদর্শ দেখতে পাননি, বরং সেসঙ্গে খুঁজে পেয়েছেন নৈতিকতার আদর্শ। যেমন তাঁর ইংরেজি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি রাম এবং তাঁর বানরবাহনীকে ঘৃণা করি; রাবণের ধারণা আমার ভাবনাকে উস্কে দেয় এবং আমার কল্পনাকে প্রজ্বলিত করে।’ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে রাক্ষসদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও শেষ পর্যন্ত দেবতাদের কার্যকলাপ তাঁকে মেনে নিতে হয়েছে, যেমন সীতাকে অপহরণ করার কর্মফলে রাবণ নিজেই নিজের পতন ডেকে এনেছেন।

অন্যান্য সফল ধ্রুপদী সাহিত্যের মতো মেঘনাদবধ কাব্যকে প্রতিটি প্রজন্ম নতুন করে ব্যাখ্যা করতে পারে। কারো কাছে রাবণ এবং মেঘনাদ হলেন ‘বঙ্গীয় রেনেসাঁসে’র মানবিক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। অন্যরা আবার একে মধুসূদনের হাতে মেঘনাদবধের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হওয়ার বৈপ্লবিক দৃষ্টান্ত লক্ষ করেছেন, এমনকি, মার্কসীয় বার্তাও। মেঘনাদবধে আরো একটা লক্ষণীয় বিষয়-এতে লঙ্কার সৌন্দর্য যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাতে প্রতিফলিত হয়েছে উপমহাদেশের চিরকালীন সংস্কৃতি ও ধর্ম, মধুসূদন যাকে আখ্যায়িত করেছেন-‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐশ্বর্যমন্ডিত পৌরাণিক কাহিনী’ বলে। বর্তমানে বহু প্রাচীন ঐতিহ্য বিশ্বায়িত গণসংস্কৃতির মুখে হুমকির সম্মুখীন, এসময়ে তাঁর এ মহাকাব্য একটা ট্র্যাজিক চেতনা জাগিয়ে তোলে। সর্বোপরি মেঘনাদবধ কাব্য মধুসূদনের অসাধারণ আবেগঘন, উচ্ছ্বাসপূর্ণ, রসোজ্জ্বল, মননশীল এবং শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী ব্যক্তিত্বের অনুকরণীয় প্রতিফলন। মধুসূদনের মন্তব্য- ‘একজন প্রবল সাহিত্যিক বিপ্লবী’। তাঁর এ দুঃসাহসী ধ্রুপদী রচনা বাংলাদেশ, ভারত এবং তার বাইরে প্রতিটি নতুন প্রজন্মকে বিস্মিত করবে বারবার। [উইলিয়াম র‌্যাডিচি]

সংকলন ও সম্পাদনায়
জামশেদুল ইসলাম জেরি
সাবেক ইংরেজি প্রভাষক,
বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম।

Recent Post

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯

১. ‘ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ’ কবিতায় সালামের হাতে কেন অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে ? ক. সংগ্রামী চেতনার কারণে     খ. দুঃখিনী মাতার অশ্রুজল দেখে গ. বরকত...

Most Popular Post